Surah Al Ahzab Tafseer
Tafseer of Al-Ahzab : 54
Saheeh International
Whether you reveal a thing or conceal it, indeed Allah is ever, of all things, Knowing.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৫৩-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:
(أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا......) শানে নুযূল:
আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যয়নব বিনতে জাহাশ (رضي الله عنها)-কে বিবাহ করলেন তখন লোকদেরকে দাওয়াত করলেন। তারা খাওয়া-দাওয়া শেষে বসে আলোচনা করছিল বা কথাবার্তা বলছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠার জন্য তৈরী হলেন কিন্তু তখনো তারা উঠল না। তা দেখে তিনি উঠে গেলেন এবং কিছু লোক তাঁর সাথে উঠে চলে গেল। কিন্তু এরপরেও তিনজন লোক বসে থাকল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়িতে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে আসলেন। তখনো তারা বসেছিল। এরপর তারা উঠে চলে গেল। আনাস বলেন: আমি আসলাম এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সংবাদ দিলাম যে, তারা চলে গেছে। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি তাঁর সাথে প্রবেশ করতে চাইলাম। কিন্তু তিনি আমার ও তাঁর মধ্যে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৯১ন৯৪, সহীহ মুসলিম হা: ৮৬, ১৪২৮)
এ আয়াতে কিছু সামাজিক বিধি-বিধান উল্লেখ করা হয়েছে তা হচ্ছে:
১. আয়াতের প্রথমাংশে দাওয়াত ও আপ্যায়ন সম্পর্কিত তিনটি রীতি-নীতি বর্ণিত হয়েছে। এগুলো সকল মুসলিমদের জন্য ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু যে ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গৃহে সংঘটিত হয়েছে, তাই শিরোনামে بُيُوْتَ النَّبِيِّ উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রথম রীতি হল-
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গৃহসহ অন্য যেকোন মু’মিন ব্যক্তির গৃহে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ না করা। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتّٰي تَسْتَأْنِسُوْا وَتُسَلِّمُوْا عَلٰٓي أَهْلِهَا ط ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ)
“হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ কর না। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, সম্ভবত তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।” (সূরা নূর ২৪:২৭)
দ্বিতীয় রীতি হলন প্রবেশের অনুমতি এমনকি খাওয়ার দাওয়াত হলেও সময়ের পূর্বে উপস্থিত হয়ে আহার্য প্রস্তুতির অপেক্ষায় বসে থেকো না।
(غَيْرَ نٰظِرِيْنَ إِنٰهُ)-ناظر
-শব্দের অর্থ এখানে অপেক্ষাকারী এবং انا শব্দের অর্থ খাদ্য রান্না করা। আয়াতে لَا تَدْخُلُوْا নিষেধাজ্ঞা থেকে দুটি ব্যতিক্রম প্রকাশ করা হয়েছে। একটি
(إِلَّآ أَنْ يُّؤْذَنَ لَكُمْ)
এর إِلَّآ শব্দ দ্বারা অপরটি غَيْرَ শব্দ দ্বারা। এর অর্থ এই যে, বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করো না এবং সময়ের পূর্বে এসে খাদ্য রান্নার অপেক্ষায় বসে থেকো না বরং যথাসময়ে আহ্বান করা হলে গৃহে প্রবেশ করবে। তাই বলা হয়েছে:
(وَلٰكِنْ إِذَا دُعِيْتُمْ فَادْخُلُوْا)
‘তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ কর’
তৃতীয় রীতি হলন খাওয়া শেষে নিজ নিজ কাজে ছড়িয়ে পড়। পরস্পর কথাবার্তা বলার জন্য গৃহে অনড় হয়ে বসে থেকো না। তাই বলা হয়েছে:
(فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانْتَشِرُوْا وَلَا مُسْتَأْنِسِيْنَ لِحَدِيْثٍ)
‘এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাও, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড় না।’
তবে এ রীতি সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেখানে খাওয়ার পর দাওয়াত প্রাপ্তদের বেশিক্ষণ বসে থাকা দাওয়াতকারীর জন্য কষ্টের কারণ হয়। যেমন সে এ কাজ সেরে অন্য কোন কাজে জড়িত হতে চায় কিংবা তাদেরকে বিদায় দিয়ে অন্য মেহমানদেরকে খাওয়াতে চায়। উভয় অবস্থায় দাওয়াত প্রাপ্তদের বসে থাকা তার জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সেখানে যদি পরিবেশ পরিস্থিতি এমন না হয় বরং বসে থাকার সুযোগ রাখা হয়েছে তাহলে ইচ্ছা করলে থাকতে পারবে যেমন এখনকার অধিকাংশ দাওয়াতী আয়োজনে ব্যবস্থা করা হয়।
(إِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ يُؤْذِي النَّبِيَّ)
অর্থাৎ দাওয়াত খাওয়ার পরেও অনর্থক বসে খোশগল্প করায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কষ্ট দেয়া হয়, কারণ তোমরা উঠে চলে যাও এ কথা বলতেও তিনি লজ্জা পান। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা সত্য প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না, তাই তিনি আয়াত নাযিল করে জানিয়ে দিলেন।
তাই মু’মিনদের উচিত বিনা অনুমতিতে কারো গৃহে প্রবেশ না করা এবং যদি অনুমতি দেয়া হয় তাহলে প্রয়োজন সেরে তৎক্ষণাৎ চলে যাওয়া।
ইবনে উমার (رضي الله عنهما) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তোমাদের কেউ যদি তার ভাইকে দাওয়াত করে তাহলে সে যেন তার ভাইয়ের ডাকে সাড়া দেয়। সেটি বিবাহের ওলিমা হোক বা অন্য কিছু হোক। (সহীহ মুসলিম হা: ১০৫৩)
অন্য একটি হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি আমাকে একটি হাড়ের জন্যও দাওয়াত করা হত আমি তার ডাকে সাড়া দিতাম। আমাকে যদি একটি খুরও হাদিয়া দেয়া হত আমি কবূল করতাম। যখন তোমাদের কাউকে দাওয়াত করা হয় তখন সে যেন খাবার শেষে সেখান থেকে সরে পড়ে। (সহীহ বুখারী হা: ৫১৭৮) অনুমতি চাওয়া সম্পর্কেও সূরা নূরে আলোচনা করা হয়েছে।
২. (وَإِذَا سَأَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَسْئَلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَا۬ءِ حِجَابٍ)
‘তোমরা যখন তাঁর স্ত্রীদের কাছ থেকে কোন কিছু চাও, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাও’ অত্র আয়াতে যদিও নাবী পত্নীদের কথা বলা হয়েছে যে, তোমরা যখন তাদের নিকট কোন কিছু চাও তখন পর্দার আড়াল থেকে চাও, কিন্তু এর দ্বারা সকল মু’মিনা নারীদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। আর এ বিধান উমার (رضي الله عنه)-এর বাসনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়। তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরজ করলেন যে, হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার নিকট সৎ অসৎ বিভিন্ন ধরণের লোক আসা যাওয়া করে। আপনি আপনার স্ত্রীগণকে পর্দা করার আদেশ দিলে খুবই ভাল হত। এই পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৯০১) এ পর্দার বিধান সম্পর্কে সূরা নূরে আলোচনা করা হয়েছে।
(لِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّ)
‘এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়’ অর্থাৎ পুরুষের মনে নারীর প্রতি যে আসক্তি আর নারীর মনে পুরুষের প্রতি যে আসক্তি তা থেকে পবিত্র থাকতে পারবে। ফলে উভয়ের মন পরিস্কার থাকবে কারো প্রতি কোন খারাপ ধারণা সৃষ্টি হবে না।
৩. তৃতীয় আরেকটি বিধান হল এই যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীগণকে কারো জন্য বিবাহ করা হালাল নয়। কেননা তারা হল মু’মিনদের জন্য মাতৃতুল্য। তবে পর্দা করা জরুরী। এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর স্ত্রীদের সম্মান।
এরপর বলেন যে, মানুষ যা কিছুই করুক না কেন। তা প্রকাশ্যে করুক অথবা অপ্রকাশ্যে করুক আল্লাহ তা‘আলা তা অবহিত আছেন।
সুতরাং গোপনে অপরাধ করে মনে করা যাবে না যে, কেউ জানে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা সকল কিছুই জানেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অনুমতি ব্যতীত কারো গৃহে প্রবেশ করা যাবে না।
২. কেউ কাউকে দাওয়াত দিলে তা কবূল করতে হবে।
৩. মহিলাদের সাথে তেমন জরুরী প্রয়োজন থাকলে পর্দার আড়াল থেকে প্রয়োজন মেটাতে হবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা সকল বিষয়ের ওপর খবর রাখেন, তা প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে হোক।
৫. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীগণ মু’মিনদের জন্য মাতৃতুল্য, তাই তাদেরকে বিবাহ করা হারাম।
৬. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কষ্ট পান এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings