Surah Al Ahzab Tafseer
Tafseer of Al-Ahzab : 4
Saheeh International
Allah has not made for a man two hearts in his interior. And He has not made your wives whom you declare unlawful your mothers. And he has not made your adopted sons your [true] sons. That is [merely] your saying by your mouths, but Allah says the truth, and He guides to the [right] way.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৪-৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা একজন ব্যক্তিকে দুটি অন্তর দান করেননি। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি একই সাথে দুটি কাজ করবে বা দুধরনের চিন্তা করবে তা কখনো সম্ভব হবে না। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: এভাবে ব্যক্ত করার কারণ হল কতক মুনাফিক বলতন মুহাম্মাদের দুটি অন্তর রয়েছেন কেননা কখনো কোন বিষয়ে মগ্ন থাকলেও অন্য বিষয়ে ফিরে আসে, তারপর আবার সে ঐ বিষয়ে ফিরে যায়। আল্লাহ তা‘আলা একথা দ্বারা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলেন। এ ছাড়াও অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। (কুরতুবী) অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যিহারের বিধান বর্ণনা করছেন ।
যিহারের পরিচয় ও বিধান:
ظهار এর শাব্দিক অর্থ: এটি আরবি শব্দ, অর্থ হল বিক্ষোভ প্রদর্শন করা, একে অপরকে সাহায্য বা সমর্থন করা, যিহার করা ইত্যাদি।
পরিভাষায় যিহার হল স্ত্রীকে বা স্ত্রীর কোন অঙ্গকে যাদের বিবাহ করা হারাম তাদের সাথে তুলনা করা। (সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ:৩/৩৬৯) স্ত্রীকে এরূপ বলা যে, তুমি আমার মায়ের পিঠের মত বা অমুক অঙ্গের মত ইত্যাদি। কেউ কেউ যিহারকে মায়ের পিঠের সাথে তুলনা করাকে সীমাবদ্ধ করেছেন।
যিহারের হুকুম হল যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে যিহার করে তাহলে স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলন করা তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। তবে কাফফারা দেয়ার পর দৈহিক মিলন করতে পারবে। কিন্তু কাফফারা আদায় না করা পর্যন্ত স্ত্রী তার জন্য হারাম। যিহারের কাফফারা হল:
(১) একজন গোলাম আযাদ করতে হবে।
(২) যদি সক্ষম না হয় তাহলে ধারাবাহিকভাবে দু মাস সিয়াম পালন করতে হবে।
(৩) যদি তাতেও সক্ষম না হয় তাহলে ষাটজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ يُظَاهِرُوْنَ مِنْ نِّسَآئِهِمْ ثُمَّ يَعُوْدُوْنَ لِمَا قَالُوْا فَتَحْرِيْرُ رَقَبَةٍ مِّنْ قَبْلِ أَنْ يَّتَمَآسَّا ط ذٰلِكُمْ تُوْعَظُوْنَ بِه۪ ط وَاللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ - فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَّتَمَآسَّا ط فَمَنْ لَّمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّيْنَ مِسْكِيْنًا ط ذٰلِكَ لِتُؤْمِنُوْا بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِه۪ ط وَتِلْكَ حُدُوْدُ اللّٰهِ ط وَلِلْكٰفِرِيْنَ عَذَابٌ أَلِيْمٌ)
“আর যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে, পরে তারা পরিত্যাগ করে যা তারা বলেছে, তাহলে তারা একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি গোলাম মুক্ত করবে। এ আদেশ দিয়ে তোমাদেরকে নসীহত করা যাচ্ছে। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত। তবে যার এ সামর্থ্য নেই, সে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে ধারাবাহিকভাবে দু’মাস রোযা রাখবে। আর যে ব্যক্তি এতেও অসমর্থ, সে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াবে। এ নির্দেশ এ জন্য যে, তোমরা যেন ঈমান আনয়ন কর আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি। আর এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা মুজাদালাহ ৫৮:৩-৪)
শুধু কাফফারা দিলেই হবে না সাথে সাথে মৌখিকভাবে উক্ত কথা প্রত্যাখ্যান করে নিতে হবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলছেন
(ثُمَّ يَعُوْدُوْنَ لِمَا قَالُوْا)
‘পরে তারা ফিরে আসে যা তারা বলেছে’।
হাদীসে এসেছে,
ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল: আমি আমার স্ত্রীর সাথে যিহার করেছি এবং কাফফারা দেয়ার পূর্বেই তার সাথে সহবাস করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার ওপর রহম করুন। এ কাজ করতে তোমাকে কিসে উদ্বুদ্ধ করেছে? লোকটি বলল: আমি চাঁদনী রাতে তার পায়ের মলের (গহনার) সৌন্দর্য দেখে (তার সাথে সহবাস করে ফেলি)। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা না আদায় করা পর্যন্ত তুমি তার নিকটবর্তী হয়ো না। (আবূ দাঊদ হা: ২২২৩, তিরমিযী হা: ১১৯৯, সহীহ)
যিহারের পদ্ধতি:
স্ত্রীকে স্বামী বলবে: তুমি আমার মায়ের পিঠের মত বা মায়ের অমুক অঙ্গের মত। অথবা যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন হারাম তাদের কারো কোন অঙ্গের সাথে তুলনা করবে। স্ত্রীকে মায়ের পিঠের মত বা অঙ্গের সাথে তুলনা করলেই স্ত্রী মা হয়ে যায় না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلَّذِيْنَ يُظَاهِرُوْنَ مِنْكُمْ مِّنْ نِّسَآئِهِمْ مَّا هُنَّ أُمَّهٰتِهِمْ ط إِنْ أُمَّهٰتُهُمْ إِلَّا الّٰ۬ئِيْ وَلَدْنَهُمْ)
“তোমাদের মধ্যে যারা স্বীয় স্ত্রীদের সাথে যিহার করে (তারা জেনে রাখুক), তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা তো কেবল তারাই যারা তাদেরকে জন্মদান করেছেন।” (সূরা মুযাদালাহ ৫৮:২) এ কথাই আল্লাহ তা‘আলা এখানে বলেছেন: এবং তোমাদের স্ত্রীদের মধ্য হতে যাদের সাথে তোমরা ‘যিহার’ কর তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি।
أَدْعِيَا۬ءَ শব্দটি دعي এর বহুবচন। অর্থ হলো: পালক পুত্র, পাতানো ছেলে। অর্থাৎ পালক পুত্র প্রকৃত পক্ষে তোমাদের পুত্র নয়। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা পালক পুত্রের আসল বাবার পরিচয়ে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই পালক পুত্রের সাথে পর্দা ফরয এবং পালক পুত্রের স্ত্রীকে পালক বাবা বিবাহ করতে পারবে। জাহিলী ও ইসলামের প্রথম যুগে যদি কোন ব্যক্তি অপর কারো পুত্রকে পোষ্য পুত্ররূপে গ্রহণ করত তবে এ পোষ্যপুত্র তার প্রকৃত পুত্র বলে পরিচিত হত এবং তারই পুত্র বলে সম্বোধন করা হতো। এ পোষ্যপুত্র সকল ক্ষেত্রে প্রকৃত পুত্রের মর্যাদাভুক্ত হতো। যথা তারা প্রকৃত সন্তানের ন্যায়ই মীরাসের অধিকারী হত এবং বংশ ও রক্ত সম্পর্কের ভিত্তিতে যেসব নারীদেরকে বিবাহ করা হারাম তাদেরকে বিবাহ করতে পারত না। অনুরূপভাবে পালক পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীও সেই পালক পিতার জন্য বিবাহ করা হারাম ছিল। এ প্রথা রহিত করে দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বিধান দিলেন পালক পুত্র তোমাদের প্রকৃত পুত্র নয় এবং পালক বাবা প্রকৃত বাবা নয়। সুতরাং যখন পালক পুত্রকে ডাকবে তখন তার প্রকৃত পিতার পরিচয় দিয়ে ডাকবে। আর পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কোন দোষের কারণ নয়।
(اُدْعُوْهُمْ لِاٰبَآئِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ....) শানে নুযূল:
আবদুল্লাহ বিন উমার (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, যায়েদ বিন হারিসা (رضي الله عنه) ছিল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পালক পুত্র। আমরা তাকে যায়েদ বিন মুহাম্মাদ বলেই ডাকতাম। তখন আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াতটি নাযিল করেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৮২, সহীহ মুসলিম হা: ২৪২৫)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা এখানে পালক পুত্রকে তাঁর পিতৃ পরিচয়ে ডাকার জন্যই নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর এটাই আল্লাহ তা‘আলার নিকট অধিক ন্যায়সঙ্গত বিষয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰكِنْ رَّسُوْلَ اللّٰهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَ ط وَكَانَ اللّٰهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا)
“মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষের পিতা নয়, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নাবী। আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।” (সূরা আহযাব ৩৩:৪০)
আর যদি কারো পিতৃ পরিচয় না পাওয়া যায় তাহলে তারা তোমাদের দীনি ভাই এবং বন্ধু বলে গণ্য হবে। তবে কিছুতেই সন্তান বলে গণ্য হতে পারে না। হাদীসে এসেছে:
সাদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অন্যকে পিতা বলে দাবী করবে অথচ সে জানে যে, এ ব্যক্তি তার পিতা নয় তার জন্য জান্নাত হারাম। (সহীহ বুখারী হা: ৬৭৬৬, সহীহ মুসলিম হা: ৬৩)
আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা তোমাদের পিতা (অর্থাৎ পিতার পরিচয় দেয়া) থেকে বিমুখ হয়ো না। যে ব্যক্তি তার পিতা থেকে বিমুখ হয়ে যায় সে কুফরী করল। (সহীহ বুখারী হা: ৬৭৬৮, সহীহ মুসলিম হা: ৬৯)
এরপর আল্লাহ দয়াদ্রতার কথা উল্লেখ করে বললেন, ইতোপূর্বে তোমরা যে সকল পাপ বা ভুল করেছ সেগুলোর জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করা হবে না। তবে যদি অন্তরে দৃঢ় সংল্পের সাথে করে থাক তাহলে সে কথা ভিন্ন অর্থাৎ এজন্য গুনাহগার হতে হবে আর এজন্য পাকড়াও করা হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللّٰهُ بِاللَّغْوِ فِيْٓ أَيْمَانِكُمْ وَلٰكِنْ يُّؤَاخِذُكُمْ بِمَا كَسَبَتْ قُلُوْبُكُمْ ط وَاللّٰهُ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ)
“অনর্থক কসমের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, তবে তিনি তোমাদেরকে গ্রেফতার করবেন তোমাদের অন্তর যা অর্জন করে তার জন্য। আর আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, ধৈর্যশীল।” (সূরা বাকারাহ ২:২২৫)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. একজন ব্যক্তির একটাই অন্তর থাকে কখনো দুটো অন্তর থাকতে পারে না।
২. স্ত্রীর সাথে যিহার করলে কাফফারা দেয়ার পূর্বে ঐ স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলন করতে পারবে না।
৩. পোষ্য পুত্রদের স্ত্রীকে বিবাহ করা বৈধ। এদেরকে নিজের পুত্র মনে করা যাবে না।
৪. নিজের পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে ডাকা যাবে না। যদি কেউ এমনটি করে তাহলে সে যেন কুফরী করল।
৫. পোষ্য পুত্রদের সম্মুখেও পর্দা করতে হবে। ছেলে মনে করে তাদের নিকট খোলা মেলা চলাফেরা করা ঠিক নয়।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings