Surah Al Ahzab Tafseer
Tafseer of Al-Ahzab : 34
Saheeh International
And remember what is recited in your houses of the verses of Allah and wisdom. Indeed, Allah is ever Subtle and Acquainted [with all things].
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৩২-৩৪ নং আয়াতের তাফসীর:
পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে পুণ্যবতী স্ত্রীগণকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমীপে এমনসব দাবী পেশ করতে বারণ করা হয়েছে তাঁর পক্ষে যা পূরণ করা কঠিন বা যা তাঁর মহান মর্যাদার পক্ষে অশোভনীয়। যখন তারা তা মেনে নিয়েছেন তখন সাধারণ নারীদের তুলনায় তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদের এক আমলকে দুয়ের সমতুল্য করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে তাদের কর্মের পরিশুদ্ধি এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সান্নিধ্য ও দাম্পত্য সম্পর্কের যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য কয়েকটি উপদেশ বাণী দিয়েছেন। এসব উপদেশ শুধু তাদের সাথে সীমাবদ্ধ নয় বরং সকল মু’মিন নারীদের জন্যই প্রযোজ্য। এখানে তাদেরকে বিশেষভাবে সম্বোধন করা হয়েছে তাদেরকে বিশেষ গুরুত্বারোপের জন্য।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يٰنِسَا۬ءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَا۬ءِ)
‘হে নাবীর স্ত্রীগণ! তোমরা কোন সাধারণ স্ত্রীলোকের মত নও’ অর্থাৎ মর্যাদা ও সম্মানে অন্যান্য সাধারণ মু’মিন নারীদের মত নও, বরং তাদের অনেক ঊবের্ধ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
وَإِنَّ فَضْلَ عَائِشَةَ عَلَي النِّسَاءِ كَفَضْلِ الثَّرِيدِ عَلَي سَائِرِ الطَّعَامِ
সকল নারীদের ওপর আয়িশাহ (رضي الله عنها) তেমন শ্রেষ্ঠ সারীদ (গোশত ও রুটি দিয়ে তৈরি করা খাবার) যেমন অন্যান্য খাবারের ওপর শ্রেষ্ঠ। (সহীহ মুসলিম হা: ২৪৩০) তবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের মত আরো অনেক স্ত্রী শ্রেষ্ঠ রয়েছেন। যেমন তিনি বলেন: অনেক পুরুষ পরিপূর্ণতার শিখরে পৌঁছেছে কিন্তু নারীদের মধ্যে কেবল মারইয়াম বিনতে ইমরান (ঈসা (عليه السلام)-এর মা) ও ফির‘আউনের স্ত্রী পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। (সহীহ বুখারী হা: ৩৪১১)
এখন আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীসহ সকল মু’মিন নারীদেরকে কয়েকটি অবশ্য পালনীয় নির্দেশ প্রদান করছেন:
(১) আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: (فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ) ‘কোমল কন্ঠে কথা বল না’
অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদেরকে সম্বোধন করে সকল মু’মিন নারীদেরকে বলছেন; যদি পর্দার অন্তরাল থেকে পর পুরুষের সাথে কথা বলার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে কোমল কন্ঠে কথা বলবে না, যদি বল তাহলে যাদের অন্তরে কৃপ্রবৃত্তির ব্যাধি রয়েছে তারা আসক্ত হয়ে যাবে। বরং ন্যায়সঙ্গতভাবে বলবে। মোট কথা নারীদের সম্মান রক্ষা ও পর পুরুষের কুপ্রবৃত্তি থেকে নিরাপদ রাখার জন্য এ ব্যবস্থা।
(২) আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ)
‘আর তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান কর’
অর্থাৎ প্রাক-ইসলামী যুগে মহিলারা যেমন দেহ সৌষ্ঠব ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ঘোরাফেরা করত তোমরা তাদের মত কর না। বরং তোমরা তোমাদের বাড়িতে অবস্থান কর। এ আয়াতে পর্দা সম্পর্কিত দুটি বিষয় জানা যায়ন প্রথমত: আল্লাহ তা‘আলার নিকট নারীদের বাড়িতে থাকাই কাম্য। গৃহকর্ম সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যেই তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাই এ কাজেই তারা আত্মনিয়োগ করবে। কারণ ইসলাম নারীদেরকে উপার্জনের নির্দেশ দেয়নি, যতদিন পিতার বাড়িতে থাকবে ততদিন পিতা দায়িত্ব বহণ করবে, আর যখন স্বামীর বাড়িতে চলে যাবে তখন স্বামী ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিবে। সুতরাং মহিলাদের বাইরে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
দ্বিতীয়ত: যদি একান্ত প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে বাইরে যেতে পারবে তবে জাহিলী যুগের নারীদের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করে নয় বরং আপদমস্তক ঢেকে মাথার ওপর থেকে চাদর দ্বারা আবৃত করে নিবে। এ সম্পর্কে অত্র সূরার ৫৯ নং আয়াতে আলোচনা করা হবে। ইনশাআল্লাহ।
ইবনু মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: নিশ্চয়ই মহিলারা হল পর্দায় থাকার বস্তু। যখন সে বাড়ি থেকে (বেপর্দায়) বের হয় তখন শয়তান তাদের প্রতি ওঁৎ পেতে থাকে। তারা আল্লাহ তা‘আলার খুব বেশি নিকটবর্তী হয় তখন যখন নিজেদের বাড়িতে অবস্থান করে। (তিরমিযী হা: ১১৭৩, ইবনু খুযায়মা হা: ১৬৮৫, সহীহ)
তাই মহিলাদের বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত নিজের বাড়ি থেকে বের না হওয়াটাই উত্তম। এমনকি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সালাত আদায় করার ব্যাপারে বলেনন নারীর অন্দর মহলের সালাত তার বাড়ির সালাত অপেক্ষা উত্তম এবং বাড়ির সালাত আঙ্গিনার সালাত হতে উত্তম। (আবূ দাঊদ হা: ৫৭০, ইবনু খুযায়মাহ হা: ১৬৯০, সহীহ)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে মহিলা আঁতর ব্যবহার করে কোন জাতির পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা সুঘ্রাণ পায় তাহলে সে মহিলা ব্যভিচারিণী। (নাসায়ী হা: ৫১২৬, হাসান)
সুতরাং নারীদের সম্ভ্রম, সম্মান রক্ষা করার জন্য ও ইভটিজিং এর হাত থেকে বাঁচার জন্য সারা পৃথিবীব্যাপীও যদি নারী দিবস, নারী মুক্তি আন্দোলন ও মিটিং-মিছিল করা হয় তাতে নারীদের সম্মান রক্ষা করা সম্ভব হবে না যদি আল্লাহ তা‘আলার এ বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ না করে। তাই প্রতিটি নারী বিশেষ করে মুসলিম নারীর উচিত বাড়ির বাইরে বের হলে পর্দার সাথে বের হওয়া। এতে নিজের সম্মান রক্ষা পাবে ও পরিবেশ স্থিতিশীল থাকবে।
আয়িশাহ (رضي الله عنها)-এর উষ্ট্রের যুদ্ধে ভূমিকা সম্পর্কে রাফিযীদের অসার ও অযৌক্তিক মন্তব্য:
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা প্রতিয়মান হয় যে, কুরআনের ভাষ্য ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমল ও সাহাবীদের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত যে, প্রয়োজনীয় স্থানসমূহ আয়াতের আওতা বহির্ভূত। হাজ্জ ও ওমরা প্রভৃতি ধর্মীয় প্রয়োজনে মহিলারা বাড়ির বাইরে যেতে পারবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইনতেকালের পর আয়িশাহ ও সাফিয়্যাহসহ অনেকে হাজ্জ সফরে গিয়েছেন। কিন্তু উষ্ট্রের যুদ্ধে আয়িশাহ (رضي الله عنها)-এর অংশ গ্রহণকে কেন্দ্র করে রাফিযীরা তাঁর ব্যাপারে অশালীন ও অসার কথা রটনা করেছে। মূলত তারা এসব করেছে তাঁর প্রতি হিংসা বিদ্বেষবশত। তিনি সে সব থেকে পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এসব অপবাদের জন্য ধ্বংস করুক।
(৩-৫) আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করছেন যে, তারা যেন সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য করে। কেননা এর দ্বারা তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর হয়ে যাবে এবং তারা পূতপবিত্র থাকতে পারবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَا يُرِيْدُ اللّٰهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ)
“আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান” (সূরা মায়িদাহ ৫:৬)
(إِنَّمَا يُرِيْدُ اللّٰهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ)
‘হে নাবীর পরিবার! আল্লাহ তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান’ এ আয়াতে আহলে বাইতকে পাপের পংকিলতা ও কলুষতা থেকে মুক্ত ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
رِجْسَ শব্দটি আরবি ভাষায় বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। কখনো প্রতিমা ও মূর্তি অর্থে, কখনা নিছক পাপ অর্থে, কখনো আযাব অর্থে আবার কখনো কলূষতা ও অপবিত্রতা অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ আয়াতে সে অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে। (বাহরুল মুহীত)
আহলে বাইত দ্বারা উদ্দেশ্য: উপরোক্ত আয়াতগুলোতে নাবী-স্ত্রীগণকে সম্বোধন করা হয়েছিল বলে স্ত্রীবাচক ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এখানে পুণ্যবতী স্ত্রীগণের সাথে সাথে তাঁদের সন্তান-সন্ততি এবং পিতা-মাতাও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। সে জন্যই পুংলিঙ্গ পদ ব্যবহার করা হয়েছে।
কোন কোন মুফাসসিরদের মতে আহলে বাইত দ্বারা কেবল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদেরকেই বুঝানো হয়েছে। ইবনু আব্বাস, সাঈদ বিন যুবাইর, ইকরিমা ও মুকাতির (رضي الله عنهم) এ মত পোষণ করেছেন। কিন্তু হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনায় যেগুলো ইবনু কাসীর স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেছেন তা একথার সাক্ষ্য বহন করে যে, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। যেমন মুসলিমের বর্ণনা, আয়িশাহ (رضي الله عنها) বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়ি থেকে বাইরে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তাঁর গায়ে একটি কালো রুমী চাদর জড়ানো ছিলেন। তখন সেখানে হাসান, হুসাইন, ফাতিমা ও আলী (رضي الله عنهم) সবাই একের পর এক আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সবাইকে চাদরের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিয়ে এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। (সহীহ মুসলিম হা: ২৪২৪)
উম্মু সালামাহ (رضي الله عنها) বলেন: এ আয়াতটি আমাদের বাড়ির ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন (رضي الله عنهم)-কে ডাকলেন, তারপর তার জামার নিচে প্রবেশ করিয়ে নিলেন এবং বললেন: এরা আমার আহলে বাইত। তারপর আয়াত তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলা! তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করুন ও পূর্ণরূপে পবিত্র করুন। উম্মু সালামাহ (رضي الله عنها) বললেন: আমিও তাদের সাথে হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তুমি আমার সাথে থাক, তুমি কল্যাণের ওপর রয়েছো। (তিরমিযী হা: ৩২০৫, সহীহ)
সুতরাং আহলে বাইত বলতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সেই পরিবার-পরিজন উদ্দেশ্য যাদের ওপর সাদকাহ হারাম। এরা হলেনন আলী, জাফর, আব্বাস (رضي الله عنه)-এর পরিবার ও সন্তান-সন্ততি এবং বনু হারেস বিন আবদুল মুত্তালিব এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সকল পবিত্রা স্ত্রীগণ ও কন্যাগণ।
ইবনু কাসীর (رحمه الله) এ সম্পর্কে আরো বর্ণনা এনে বলেন: কুরআন মাজীদ নিয়ে যে ব্যক্তি চিন্তা-গবেষণা করে সে কখনো এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে না যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীগণও উপরোক্ত আয়াতে শামিল। কেননা বাক্যের পূর্বাপর ধারা নাবীর স্ত্রীদের সাথে সম্পৃক্ত। এজন্য উপরোক্ত আয়াতের পর পরই আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘আর তোমাদের বাড়িতে আল্লাহর যে আয়াতসমূহ ও জ্ঞানের কথা যা পাঠ করা হয় তা তোমরা স্মরণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ খুব সূক্ষ্মদর্শী, সর্বজ্ঞ।’
কাতাদাহ ও আরো অনেকে বলেন: আয়াতের অর্থ হলন তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর যা সকল মানুষের মধ্য থেকে শুধু তোমাদের জন্যই নির্ধারণ করা হয়েছে। তা হলন তোমাদের ঘরেই ওয়াহী নাযিল করা হয়। আয়িশাহ তাদের মধ্যে প্রথম যিনি এ নেয়ামত লাভ করেছেন এবং এ ব্যাপক রহমত লাভে তিনি তাদের মধ্যে এক বিশেষ মর্যদার অধিকারিণী ছিলেন। কেননা তিনি ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আর কোন স্ত্রীর বিছানায় ওয়াহী নাযিল হয়নি, যেমন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন। এ জন্য আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত আহলে বাইতকে ভালবাসে ও মহব্বত করে থাকে। আর তাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসিয়তকে স্মরণ রাখে যা তিনি ‘গাদীরে খাম’ নামক স্থানে ব্যক্ত করেছেন।
أذكركم الله في أهل بيتي
আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। (সহীহ মুসলিম হা: ২৪০৮)
কিন্তু আহলে বাইতকে ভালবাসা ও মহব্বত করা হবে শর্তসাপেক্ষে। তারা সুন্নাতের অনুসারী হলে এবং মিল্লাতের আদর্শের ওপর স্থিতিশীল থাকলে, যেমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তী সালফে সালেহীন আব্বাস (رضي الله عنه) ও তাঁর সন্তানরা, আলী (رضي الله عنه) ও তাঁর সন্তানরা প্রমুখ আদর্শের ওপর ছিলেন। পক্ষান্তরে যারা সুন্নাতের বিরোধিতা করবে এবং দীনের ওপর স্থিতিশীল থাকবে না, তারা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হলেও তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা জায়েয হবে না।
অতএব আহলে বাইত সম্পর্কে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ভূমিকা ন্যায়পরায়ণ ও ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তারা দীনদার ও সঠিক পথের ওপর অবিচল থাকলে তাদেরকে ভালবাসতে হবে, আর দীন থেকে সরে গেলে ও সুন্নাতের বিরোধিতা করলে আহলে বাইতের অর্ন্তভুক্ত হওয়া, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আত্মীয় সম্পর্ক থাকা কোন কাজে আসবে না।
হাদীসে এসেছে:
وَمَنْ بَطَّأَ بِهِ عَمَلُهُ، لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ
আমল যাকে পেছনে ফেলে দেয় বংশ তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত সে সব রাফেজী-শিয়াদের পথ ও মত থেকে পূত-পবিত্র যারা কোন কোন আহলে বাইতের ব্যাপারে খুবই বাড়াবাড়ি করে থাকে এবং তাদেরকে মা‘সূম বলে দাবী করে থাকে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬৯৯)
অনুরূপ আহলুস সুন্নাহ সে সব নাসেবী লোকদের ভ্রান্ত পথ থেকে মুক্ত যারা দীনের প্রকৃত অনুসারী আহলে বাইতের প্রতি শত্র“তা পোষণ করে থাকে এবং তাদের প্রতি কটুক্তি আরোপ করে থাকে। এ সম্পর্কে সূরা শুরা ২৩ নং আয়াতে আলোচনা করা হবে। ইনশাআল্লাহ।
(اٰيٰتِ اللّٰهِ) অর্থ কুরআন আর الْحِكْمَةِ অর্থ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত। অধিকাংশ মুফাসসির এর তাফসীর সুন্নাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন। তবে শব্দের অর্থ দুটি হতে পারেন -
১. এসব বিষয় স্মরণ রাখা, যার ফলশ্র“তিতে এগুলোর ওপর আমল হবে।
২. কুরআনের যা কিছু তাদের গৃহে নাযিল হয়েছে বা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, উম্মাতের অন্যান্য লোকদের কাছে তা পৌঁছে দেয়া।
ইবনুল আরাবী আহকামুল কুরআনে বলেন: এ আয়াত প্রমাণ করেন যদি কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে কোন আয়াত বা হাদীস শুনে তাহলে তা অন্যের নিকট পৌঁছে দেয়া আবশ্যক এমনকি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীগণও পৌঁছে দিতে বাধ্য। সুতরাং এ আয়াতে যেরূপভাবে কুরআনের প্রচার-প্রসার ও শিক্ষা প্রদান করা উম্মাতের ওপর আবশ্যক করা হয়েছে তেমনি হেকমত শব্দের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীসসমূহের প্রচার এবং শিক্ষা দান করাও আবশ্যক।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নিজের স্বামী ব্যতীত অন্য কোন পরপুরুষের সঙ্গে মিষ্টি ভাষায় কোমল কণ্ঠে কথা বলা যাবে না।
২. মহিলারা সদা-সর্বদা ঘরের মধ্যে অর্থাৎ নিজ বাড়িতে অবস্থান করবে, বাইরে বের হলে পর্দার সাথে বের হবে ।
৩. পর্দা মহিলাদের সম্মান বৃদ্ধি করে, পর্দা নারীদের উন্নতির অন্তরায় নয় ।
৪. শীয়া ও তাদের চরমপন্থী দল রাফিযীদের ভ্রান্ত আকীদাহ ও অপপ্রচার থেকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
৫. কুরআনের প্রচার ও শিক্ষার পাশাপাশি হাদীস চর্চা ও শিক্ষা আবশ্যক, কারণ উভয়টি ইসলামী শরীয়তের উৎস।
৬. আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা ও মহব্বত থাকবে ন্যায়পরায়ণতা ও ইনফাসের ভিত্তিতে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings