Surah Al Ahzab Tafseer
Tafseer of Al-Ahzab : 28
Saheeh International
O Prophet, say to your wives, "If you should desire the worldly life and its adornment, then come, I will provide for you and give you a gracious release.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
২৮-২৯ নং আয়াতের তাফসীর
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি যেন তাঁর সহধর্মিণীদেরকে দুটি জিনিসের একটি বেছে নেয়ার স্বাধীনতা প্রদান করেন। যদি তারা পার্থিব জগতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, সৌন্দর্য ও আঁক-জমক পছন্দ করে তবে তিনি যেন তাদেরকে তাঁর বিবাহ-সম্পর্ক হতে বিচ্ছিন্ন করে দেন। আর যদি দুনিয়ার অভাব অনটনে ধৈর্য ধারণ করতঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর সন্তুষ্টি এবং আখিরাতের সুখ-শান্তি কামনা করে তবে যেন তারা তাঁর সাথে ধৈর্য অবলম্বন করে জীবন অতিবাহিত করে। আল্লাহ তা'আলা সমস্ত নিয়ামত দ্বারা তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখবেন। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের মাতা নবী (সঃ)-এর সমস্ত সহধর্মিণীর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। তাঁরা সবাই আল্লাহকে, তাঁর রাসূল (সঃ)-কে এবং আখিরাতকেই পছন্দ করে নেন। ফলে মহান আল্লাহ তাদের সবারই উপর খুশী হন। অতঃপর তিনি তাদেরকে আখিরাতের সাথে সাথে দুনিয়ার আনন্দ ও সুখ-শান্তিও দান করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সহধর্মিণী হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর নবী (সঃ) তাঁর নিকট আগমন করেন এবং বলেনঃ “আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই। তুমি তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করো না। বরং পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ করে উত্তর দাও।” তিনি বলেনঃ “তিনি তো অবশ্যই জানেন যে, আমার পিতা-মাতা যে তার বিবাহ বন্ধন হতে বিচ্ছিন্ন হবার পরামর্শ আমাকে দেবেন এটা অসম্ভব। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করে আমাকে শুনিয়ে দেন। আমি উত্তরে তাকে বললাম, এ ব্যাপারে আমার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ করার কিছুই নেই। আমার আল্লাহ কাম্য, তাঁর রাসূল (সঃ) কাম্য এবং আখিরাতের সুখ-শান্তিই কাম্য। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অন্যান্য সমস্ত স্ত্রী আমার মতই কথা বলেন।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, তিনবার রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বলেনঃ “দেখো, তোমার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ করা ছাড়া তুমি নিজেই কোন ফায়সালা করে ফেললা না।” অতঃপর আমার জবাব শুনে তিনি অত্যন্ত খুশী হয়ে যান এবং হেসে ওঠেন। তারপর তিনি তাঁর অন্যান্য স্ত্রীদের কাছে যান এবং তাদেরকে পূর্বেই বলেছেন যে, আয়েশা (রাঃ) এ কথা বলেছে। তারা তখন বলেন যে, তাদেরও জবাব এটাই।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “এই ইখতিয়ার প্রদানের পর আমরা যে তাঁকেই গ্রহণ করলাম, সুতরাং এটা তালাকের মধ্যে গণ্য হলো না।”
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে হাযির হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন। জনগণ তাঁর দরযার উপর উপবিষ্ট ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) ভিতরে অবস্থান করছিলেন। তিনি প্রবেশের অনুমতি পাননি এমতাবস্থায় হযরত উমার (রাঃ) এসে পড়েন।
তিনিও অনুমতি প্রার্থনা করলেন। কিন্তু অনুমতি পেলেন না। কিছুক্ষণ পর দু’জনকেই অনুমতি দেয়া হলো। তাঁরা ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পান যে, তার স্ত্রীরা তার পার্শ্বে বসে আছে এবং তিনি নীরব হয়ে আছেন। হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “দেখো, আমি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-কে হাসিয়ে দিচ্ছি।” অতঃপর তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যদি আপনি দেখতেন যে, আজ আমার স্ত্রী আমার কাছে টাকা-পয়সা চাইলো। আমার কাছে টাকা-পয়সা ছিল না। যখন কঠিন জিদ করতে লাগলো তখন আমি উঠে গিয়ে গর্দান মাপলাম।” এ কথা শুনেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) হেসে উঠলেন এবং বলতে লাগলেনঃ “এখানেও এ ব্যাপারই ঘটেছে। দেখুন, এরা সবাই আমার কাছে ধন-মাল চাইতে শুরু করেছে!” এ কথা শুনে হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর দিকে এবং হযরত উমার (রাঃ) হযরত হাফসা (রাঃ)-এর দিকে ধাবিত হলেন এবং বললেনঃ “বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, তোমরা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর কাছে এমন কিছু চাচ্ছ যা তাঁর কাছে নেই?””ভাগ্য ভাল যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদের দু’জনকে থামিয়ে দিলেন। নতুবা তাঁরা যে নিজ নিজ কন্যাকে প্রহার করতেন এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই। তখন তার সব স্ত্রীই বলতে লাগলেনঃ “আমাদের অপরাধ হয়েছে। আর কখনো আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এমনভাবে বিব্রত ও ব্যতিব্যস্ত করে তুলবো না।” অতঃপর এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হলো। সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ)-এর নিকট গমন করলেন। তিনি আখিরাতকেই পছন্দ করলেন যেমন উপরে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হলো। সাথে সাথে হযরত আয়েশা (রাঃ) আবেদন জানালেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি যে আপনাকে গ্রহণ করলাম এ কথাটি আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীকে বলবেন না।” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আল্লাহ আমাকে গোপনকারী রূপে প্রেরণ করেননি। বরং আমাকে শিক্ষাদাতা ও সহজকারী রূপে প্রেরণ করা হয়েছে। আমাকে যে যা বলবে, আমি তাকে সঠিক ও পরিষ্কারভাবেই উত্তর দেবো।
হযরত আলী (রাঃ) বলেন, তালাক গ্রহণের স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। বরং দুনিয়া বা আখিরাতকে প্রাধান্য দেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এর সনদেও বিচ্ছিন্নতা রয়েছে এবং এটা প্রকাশ্য আয়াতের বিপরীতও বটে। কেননা, প্রথম আয়াতের শেষে স্পষ্টভাবে রয়েছেঃ ‘এসো, আমি তোমাদের ভোগ-সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদেরকে বিদায় দিই।”
এতে উলামায়ে কিরামের মতভেদ রয়েছে যে, যদি তিনি স্বীয় স্ত্রীদেরকে তালাক প্রদান করেন তবে তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা জায়েয হবে কি কিন্তু সঠিক কথা এই যে, এটা জায়েয হবে, যাতে এই তালাকের ফল তারা পেয়ে যায় অর্থাৎ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ ও সৌন্দর্য কামনা এবং দুনিয়ার সুখ-শান্তি লাভ। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ হুকুম স্বীয় সহধর্মিণীদেরকে শুনিয়ে দেন তখন তার নয়জন স্ত্রী ছিলেন। পাঁচজন ছিলেন কুরায়েশ বংশের। তাঁরা হলেনঃ হযরত আয়েশা (রাঃ), হযরত হাফসা (রাঃ), হযরত উম্মে হাবীবাহ (রাঃ), হযরত সাওদাহ (রাঃ) এবং হযরত উম্মে সালমা (রাঃ)। আর বাকী চারজন হলেনঃ হযরত সাফিয়া বিনতে হুওয়াই (রাঃ), তিনি ছিলেন নাযার গোত্রের নারী। হযরত মাইমূনা বিনতে হারিস (রাঃ), তিনি ছিলেন হালালিয়্যাহ গোত্রের নারী। হযরত যয়নব বিনতে জহশ (রাঃ), তিনি ছিলেন আসাদিয়্যাহ গোত্রের নারী। যুওয়াইরিয়্যাহ বিনতে হারিস (রাঃ), তিনি ছিলেন মুসতালিক গোত্রের নারী।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings