Surah As Sajda Tafseer
Tafseer of As-Sajdah : 27
Saheeh International
Have they not seen that We drive the water [in clouds] to barren land and bring forth thereby crops from which their livestock eat and [they] themselves? Then do they not see?
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
২৬-২৭ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলা বলছেনঃ এসব দেখার পরেও কি এই অবিশ্বাসকারীরা সত্য পথের অনুসারী হবে না? তাদের পূর্ববর্তী কত পথভ্রষ্টদেরকে তো আমি ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছি। আজ কেউ তাদের খোঁজ-খবরও নেয় না। তারাও রাসূলদেরকে অবিশ্বাস করেছিল এবং আল্লাহর কথা হতে বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল। সবাই তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তুমি কি তাদের কাউকেও দেখতে পাও অথবা ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাও কি?” (১৯:৯৮) এজন্যেই আল্লাহ তাআলা এখানে বলেনঃ যাদের বাসভূমিতে এরা বিচরণ করে থাকে। অর্থাৎ এই অবিশ্বাসকারীরা ঐ অবিশ্বাসকারীদের বাসভূমিতে চলাফেরা করে, কিন্তু তাদের কাউকেও এরা দেখতে পায় না। যারা তাদের বাসভূমিতে চলাফেরা করতো, বসবাস করতো। তারা সবাই ধ্বংস হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও এর থেকে এরা শিক্ষা গ্রহণ করছে না। এই কথাটিকেই কুরআন হাকীমে কয়েক জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “ঐ তো তাদের ঘরবাড়ীগুলো তাদের যুলুমের কারণে ধ্বংসস্থূপে পরিণত হয়েছে।” (২৭:৫২) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আমি ধ্বংস করেছি কত জনপদ যেগুলোর বাসিন্দা ছিল যালিম, এসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল এবং কত কূপ পরিত্যক্ত হয়েছিল এবং কত সুদৃঢ় প্রাসাদও! তারা কি দেশ ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারতো। বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।” (২২:৪৫-৪৬) এ জন্যেই এখানে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে; তবুও কি এরা শুনবে না?
এরপর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় স্নেহ, প্রেম-প্রীতি, দয়া, অনুগ্রহ, ইহসান ও ইনআমের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি ঊষর ভূমির উপর পানি প্রবাহিত করে ওর সাহায্যে উদগত করি শস্য, যা হতে আহার্য গ্রহণ করে তাদের চতুষ্পদ জন্তুগুলো এবং তারা নিজেরাও, তারা কি তবুও লক্ষ্য করবে না?
তাফসীরকারদের এও উক্তি আছে যে, জুর হচ্ছে মিসরের যমীন। কিন্তু এখানে উদ্দেশ্য তা নয়। মিসরেও যদি এরূপ ভূমি থাকে তো থাক। এই আয়াতে জুর দ্বারা এ সমুদয় ভূমিকে বুঝানো হয়েছে যা শুষ্ক হয়ে গেছে এবং পানির মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে ও শক্ত হয়ে গেছে। অবশ্য মিসরের জমিও এরূপই বটে। নীল নদের পানি দ্বারা ওকে সিক্ত করা হয়। আবিসিনিয়ার বৃষ্টির পানি নিজের সাথে লাল মাটিও বয়ে নিয়ে যায়। মিসরের মাটি কিছুটা লবণাক্ত ও বালুকাময়। কিন্তু ওটা এই পানি ও মাটির সাথে মিশে চাষাবাদের যোগ্য হয়ে ওঠে। এ কারণে তারা প্রতি বছর প্রতিটি ফসল পেয়ে থাকে। এ সবকিছুই এই বিজ্ঞানময়, করুণাময়, স্নেহময় এবং দয়ালু আল্লাহরই মেহেরবানী। তাঁর সত্তাই প্রশংসার যোগ্য।
বর্ণিত আছে যে, যখন মিসর বিজিত হলো তখন মিসরবাসীরা আজমের ‘বাউনাহ্’ মাসে হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলো এবং বললো: “আমাদের প্রাচীন প্রথা আছে যে, আমরা এ মাসে নীল নদে উৎসর্গ বা বলি দিয়ে থাকি। এটা না করলে নদীতে পানি থাকে না। আমাদের প্রথা এই যে, আমরা এ মাসের বারো তারিখে একটি কুমারী মেয়েকে সাথে নিই, যে মেয়েটি হবে তার পিতার একমাত্র কন্যা। তার পিতাকে টাকা পয়সা দিয়ে সম্মত করি। অতঃপর মেয়েটিকে সুন্দর পোশাক ও অলংকার পরিয়ে নীল নদে নিক্ষেপ করি। এর পর থেকে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। এরূপ না করলে নীল নদে পানি বাড়ে না। ইসলামের সেনাপতি মিসর বিজয়ী হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) তাদেরকে উত্তর দেনঃ “এটা একটি অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ প্রথা। ইসলামে এর অনুমতি নেই। ইসলাম তো এরূপ অভ্যাস ও প্রথাকে মিটিয়ে দেয়ার জন্যেই এসেছে। তোমরা আর এরূপ করতে পারবে না। তারা তখন একাজ থেকে বিরত থাকে। কিন্তু নীল নদের পানি বাড়লো না। পুরো মাস কেটে গেলো। কিন্তু নদী শুষ্কই রয়ে গেল। মিসরের জনগণ বিরক্ত হয়ে মিসর ছেড়ে চলে যেতে মনস্থ করলো। মিসর বিজয়ীর খেয়াল হলো যে, খলীফাতুল মুসলেমীন হযরত উমার ফারুক (রাঃ)-কে এ ঘটনা অবহিত করা হালে। তিনি তাই করলেন। ঘটনা অবহিত হওয়া মাত্রই হযরত উমার (রাঃ) আমর ইবনুল আস (রাঃ)-এর নিকট পত্র লিখলেন। পত্রে লিখা ছিল : “আপনি যা করেছেন ভালই করেছেন। এখন আমি একটি পত্র নীল নদের নামে পাঠাচ্ছি। আপনি ওটাকে নীল নদে নিক্ষেপ করবেন।” হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) পত্রটি বের করে পাঠ করলেন। তাতে লিখিত ছিলঃ “এ পত্রটি আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন উমার (রাঃ)-এর পক্ষ হতে মিসরবাসীর নীল নদের নিকট। হামদ ও দরূদের পর কথা এই যে, তুমি যদি নিজের পক্ষ হতে নিজের ইচ্ছামত চলে থাকো তবে বেশ, তুমি চলো না। আর যদি এক মহা-প্রতাপশালী আল্লাহ তোমাকে জারী রেখে থাকেন তবে আমি তাঁর নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করে দেন।" পত্রটি নিয়ে গিয়ে সেনাপতি ওটা নীল নদে নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর একটি রাত্রি অতিবাহিত না হতেই নীল নদে ষােল হাত গভীর হয়ে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করলো এবং ক্ষণেকের মধ্যেই মিসরের শুষ্কতা আদ্রর্তায় পরিবর্তিত হলো। বাজারের চড়া দর নিম্নমুখী হলো। পত্রের সাথে সাথেই সমগ্র মিসরভূমি উর্বরতা লাভ করলো এবং চারদিক সবুজ-শ্যামল হয়ে উঠলো। নীল নদ পূর্ণ গতিতে চলতে লাগলো। ইতিপূর্বে প্রতি বছর নীল নদে যে একটি করে জীবন বলি দেয়া হতো তা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। এটা হাফেয আবুল কাসেম লালকায়ী তাবারী (রঃ) তাঁর কিতাবুস সুন্নাহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
এই আয়াতের বিষয়ের অনুরূপ নিম্নের আয়াতটিওঃ (আারবি) অর্থাৎ “মানুষের তার খাদ্যের দিকে তাকানো উচিত যে, আমি বৃষ্টি বর্ষণ করি ও মাটি ফেরে শস্য ও ফল উৎপাদন করি।” (৮০:২৪-২৫) অনুরূপভাবে এখানেও বলেন যে, এর পরও কি তারা লক্ষ্য করবে না?
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, জুরূ হলো ঐ ধরনের জমি যা বৃষ্টির পানিতে সম্পূর্ণ সিক্ত হয় না। পরে নদী-নালার পানি দ্বারা জলপূর্ণ হয়। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ইয়ামনে এই ধরনের জমি রয়েছে। হাসান (রঃ) বলেন যে, এ ধরনের জমি ইয়ামন ও সিরিয়ায় আছে। ইবনে যায়েদ (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, এগুলো ঐ প্রকারের জমি যাতে ফসল উৎপাদিত হয় না এবং ধূলি-ধূসরিত হয়ে থাকে। আর এটা আল্লাহ তা'আলার নিম্নের উক্তির মত (আরবি) অর্থাৎ তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত ধরিত্রী, যাকে আমি সঞ্জীবিত করি।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings