Surah Luqman Tafseer
Tafseer of Luqman : 19
Saheeh International
And be moderate in your pace and lower your voice; indeed, the most disagreeable of sounds is the voice of donkeys."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৩-১৯ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা লুকমান হাকীমের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে একজন আদর্শ পিতার সন্তানের প্রতি কী করণীয় সে সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরেছেন। লুকমান (عليه السلام) তাঁর পুত্রকে যে নসীহত করেছিলেন ও উপদেশ দিয়েছিলেন সে সকল উপদেশ যদি প্রতিটি পিতা তার সন্তানকে প্রদান করেন তাহলে প্রত্যেক পরিবার, সমাজ ও দেশ আদর্শ পরিবার, সমাজ ও দেশে পরিণত হবে। লুকমান হাকীম তাঁর পুত্রকে যে নসীহত ও উপদেশ দিয়েছিলেন সেগুলো হলন
প্রথম উপদেশ:
তিনি তাঁর ছেলেকে সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘আলার হক সম্পর্কে সচেতন করে বললেন: একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে, কখনো আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করবে না। কেননা শির্ক একটি বড় ধরনের জুলুম। হাদীসে এসেছে, ইবনু মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: যখন
(الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْآ إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ)
-এ আয়াতটি নাযিল হয় তখন সাহাবীদের নিকট বিষয়টি খুবই কঠিন মনে হল। তারা বলল: আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, তার ঈমানকে জুলুমের সাথে সংমিশ্রণ করেনি? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বিষয়টি এরূপ নয়। তোমরা লুকমান (عليه السلام)-এর কথা শুননি? সে তার সন্তানকে বলেছিলন
(إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ)
-নিশ্চয়ই শির্ক মহা জুলুম।।
অপর এক হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: সবচেয়ে বড় গুনাহ হল তিনটি, তার মধ্যে প্রথম হলো আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক করা। (সহীহ বুখারী হা: ৬৮৭০-৭১)
দ্বিতীয় উপদেশ:
আল্লাহ তা‘আলার হকের পর বান্দার মাঝে যারা বেশি হকদার তাদের হক সম্পর্কে সচেতন করছেন। তারা হলেন পিতা-মাতা। তিনি তাঁর ছেলেকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জন্য নসীহত করলেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জন্য জোরালো আদেশ করেছেন। এমনকি কুরআনে প্রত্যেক জায়গায় আল্লাহ তা‘আলার অধিকারের পর পিতা-মাতার অধিকারের কথা বলেছেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَقَضٰي رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوْآ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ط إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَآ أُفٍّ وَّلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا)
“তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারও ‘ইবাদত কর না ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর। তাদের একজন অথবা উভয়ে যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদেরকে ‘উফ্’ বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল।” (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:২৩)
এখানে পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালন এবং তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকারের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এর হিকমত ও অন্তর্নিহিত রহস্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, তার মা ধরাধামে তার আবির্ভাব ও অস্তিত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার ও অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট বরদাশত করেছেন। নয় মাস গর্ভ ধারণ, প্রসব বেদনা, লালন-পালন, দুধ পান ইত্যাদি ক্ষেত্রে মাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে।
তবে পিতা-মাতা যদি এমন কোন বিষয়ের নির্দেশ দেয় যা বাস্তবায়ন করলে আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক করা হয় সেক্ষেত্রে তাদের কথা মানা যাবে না। তবে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। এমনকি তাদের জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দু‘আ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا)
“এবং বল: ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’’ (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:২৩-২৪)
তৃতীয় উপদেশ:
তৃতীয় উপদেশ দানের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার সূক্ষ্মদর্শীতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন: হে বৎস! তুমি যে আমলই করা না কেন যদি তা সরিষার দানা পরিমাণও হয় আর তা যদি শিলাগর্ভে বা আকাশে কিংবা মৃত্তিকার নীচে থেকে থাকে তাহলেও তা হাযির করে তোমাকে তার প্রতিদান দেবেন। এর দ্বারা তিনি ছেলেকে সতর্ক করছেন যাতে কখনো আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য ও পাপ কাজে লিপ্ত না হয়। আল্লাহ তা‘আলা কারো প্রতি কোন জুলুম করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيٰمَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا ط وَإِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا ط وَكَفٰي بِنَا حٰسِبِيْنَ)
“এবং কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণ ওজনেরও হয় তবুও সেটা আমি উপস্থিত করব; হিসেব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।” (সূরা আম্বিয়াহ ২১:৪৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(فَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَّرَه۫ - وَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّرَه۫)
“অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে, এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।” (সূরা যিলযালা ৯৯:৭-৮)
সুতরাং মানুষ গোপনে বা প্রকাশ্যে যত ভাল আর খারাপ কাজ করুক না কেন আল্লাহ তা‘আলা তা কিয়ামতের দিন অবশ্যই উপস্থিত করবেন।
কেউ কেউ বলেন: صَخْرَةٌ হল যা সাত জমিনের নীচে থাকে। তবে এগুলোর ব্যাপরে সঠিক কথা আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
চতুর্থ উপদেশ:
চতুর্থ উপদেশ হল কর্ম পরিশুদ্ধতা সম্পর্কে। মানুষ যত আমল করে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল সালাত। তাই তিনি তাঁর ছেলেকে বললেন, তুমি সালাত কায়েম কর। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ
সাত বছর বয়সে উপনীত হলে তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের নির্দেশ দাও, আদায় না করা অবস্থায় দশ বছর বয়সে পৌঁছলে প্রহার কর এবং বিছানা আলাদা করে দাও। (আবূ দাঊদা হা: ৪৯৫, সহীহ)
পঞ্চম উপদেশ:
পঞ্চম উপদেশ হল চরিত্র সংশোধন। ইসলাম একটি সমষ্টিগত ধর্ম, ব্যক্তির সাথে সমষ্টির সংশোধন ও জীবনব্যবস্থার প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ অংগ। এজন্য সালাতের ন্যায় অবশ্য পালনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজ থেকে বাধা দেয়া। সে জন্য লুকমান (عليه السلام) বললেন: হে বৎস! তুমি সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকতে বলবে।
ষষ্ঠ উপদেশ:
ষষ্ঠ উপদেশ হল, যখন তুমি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজে বাধা দিবে তখন মানুষের পক্ষ হতে অনেক কষ্ট, বিপদ তোমাকে আঘাত করবে। আর তখন তোমার কাজ হল তুমি বিচলিত না হয়ে ধৈর্যধারণ করবে। কেননা এটা দৃঢ় সঙ্কল্পের একটি কাজ।
সপ্তম উপদেশ:
তুমি অহঙ্কারের বশবর্তী হয়ে মানুষকে অবজ্ঞা কর না। এবং উদ্ধতভাবে জমিনে বিচরণ কর না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা উদ্ধত, অহঙ্কারীকে ভালবাসেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ج إِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُوْلًا)
“ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ কর না; তুমি তো কখনই পদভরে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত সমান হতে পারবে না।” (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:৩৭)
হারিস বিন ওয়াহাব খুযা’য়ী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতবাসীদের পরিচয় বলে দিব না? তারা কোমল স্বভাবের লোক, মানুষের কাছেও কোমল বলে পরিগণিত। যদি তারা কোন বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করে আল্লাহ তা‘আলা তা অবশ্যই পূর্ণ করেন। আর আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামবাসীদের পরিচয় বলে দিব না? তারা কঠোর স্বভাবের লোক, দাম্ভিক ও অহংকারী। অপর সনদে আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) বলেন: মদীনাবাসীদের ক্রীতদাসীদের মধ্যে একজন ক্রীতদাসী ছিল। সে তার প্রয়োজনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাত ধরে যেখানে চাইতো নিয়ে যেত। (অর্থাৎ তার উদ্দিষ্টস্থলে হাত ধরে নিয়ে যেত। আর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তার সাথে সাথে চলে যেতেন এবং তার প্রয়োজনীয় কাজ করে দিতেন। এমনই কোমল স্বভাবের ছিলেন তারা। অথচ তিনি তখনও রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন।) (সহীহ বুখারী হা: ৬০৭০, সহীহ মুসলিম হা: ২৮৫৩)
অষ্টম উপদেশ:
তুমি সংগতভাবে জমিনে তোমার পা ফেলবে। খুব ধীরে ধীরেও নয় আবার দম্ভভরেও নয়। বরং মধ্যম পন্থায় চলবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলার বান্দারা জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَعِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِيْنَ يَمْشُوْنَ عَلَي الْأَرْضِ هَوْنًا وَّإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجٰهِلُوْنَ قَالُوْا سَلَامًا)
‘রাহমান’-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে তখন তারা বলে, ‘সালাম’। (সূরা ফুরকান ২৫:৬৩)
নবম উপদেশ:
তুমি কথা বলার সময় নীচু স্বরে কথা বলবে। কেননা সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বর হচ্ছে গাধার স্বর। তাই তুমি গাধার মত উচ্চ স্বরে কথা বল না। বরং তোমরা কথায় নম্রতা বজায় রাখবে। হাদীসে এসেছে, আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে তখন আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ কামনা কর। আর যখন গাধার ডাক শুনবে তখন আল্লাহ তা‘আলার কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর। (সহীহ বুখারী হা: ৩৩০৩, সহীহ মুসলিম হা: ৮২)
সুতরাং প্রত্যেক পিতা-মাতার উচিত তার সন্তানকে এ সকল উপদেশ প্রদান করা। ফলে সন্তান আদর্শবান হবে এবং পিতা-মাতার বৃদ্ধ অবস্থায় সেবাযত্ন করবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পিতা-মাতার উচিত তাদের সন্তানদেরকে লুকমান (عليه السلام)-এর মত উপদেশ প্রদান করা।
২. আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না। কেননা শির্ক হল সবচেয়ে বড় গুনাহ।
৩. আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার পাশাপাশি পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে।
৪. কিয়ামতের মাঠে মানুষের সমস্ত আমল উপস্থিত করা হবে এবং সেই অনুপাতে তাকে প্রতিদান দেয়া হবে। কারো প্রতি কোন প্রকার জুলুম করা হবে না।
৫. প্রতিটি পিতা-মাতা সন্তানকে সালাত কায়েম করার, সৎ কাজের আদেশ করার, অসৎ কাজে বাধা এবং বিপদে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দিবে।
৬. অহংকার পতনের মূল, তাই কোন প্রকার অহঙ্কার করা যাবে না।
৭. আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিকে অবজ্ঞা করা যাবে না।
৮. সংযতভাবে চলা ফেরা করতে হবে।
৯. উচ্চকণ্ঠে নয় বরং নম্রভাবে কথা বলতে হবে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings