Surah Ar Rum Tafseer
Tafseer of Ar-Rum : 6
Saheeh International
[It is] the promise of Allah . Allah does not fail in His promise, but most of the people do not know.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ:
الروم ‘রূম’ তৎকালীন পরাশক্তিসম্পন্ন একটি দেশ, যা বর্তমানে মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত ইতালি হিসেবে পরিচিত। যার প্রেসিডেন্ট ছিল হিরাকল। সেই রূম সম্পর্কে এ সূরাতে আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া সূরার দ্বিতীয় আয়াতে রূম শব্দটি উল্লেখ রয়েছে, সেখান থেকেই এ নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
ফযীলত:
আবূ রূহ জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেনন একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। উক্ত সালাতে সূরা রূম তেলাওয়াত করছিলেন। তেলাওয়াতকালে হঠাৎ তিনি ভ্রান্তিতে পড়ে গেলেন। সালাত শেষে বললেন: আমাদের কাছে কুরআন (তেলাওয়াত করা) সংমিশ্রণ হয়ে গেছে। তোমাদের মধ্যে কিছু লোক আমাদের সাথে সালাত আদায় করে কিন্তু ভাল করে ওযূ করে না। আমাদের সাথে যে ব্যক্তি সালাতে শরীক হবে সে যেন ভাল করে ওযূ করে। (আহমাদ ৩/৪৭১, ৪৭২ সনদ সহীহ)
অত্র সূরাতে অনেক বিষয়ের আলোচনা স্থান পেয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হচ্ছে: পরাশক্তিসম্পন্ন দেশ রোমের পরাজয়ের সুসংবাদ, সকল কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলার হাতে, তিনি প্রতিশ্র“তির ব্যতিক্রম করেন না, জমিনে ভ্রমণ করে পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতিদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হওয়া, কিয়ামতের দিন বাতিল মা‘বূদেরা তাদের ইবাদতকারীদেরকে অস্বীকার করবে, মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি এবং প্রশান্তি ও ভালাবাসার জন্য তাদের যুগল সৃষ্টিসহ আল্লাহ তা‘আলার কয়েকটি নির্দশনের বর্ণনা, সকল প্রকার শির্ক ও তাগুত বর্জন করে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা, বাতিল মা‘বূদের অক্ষমতার বিবরণ, হিদায়াতের একমাত্র মালিক আল্লাহ তা‘আলা, কিয়ামতের দিন প্রতিদানের দিন; কোন ওজর-আপত্তি ও আবেদনের দিন নয় ইত্যাদি।
১-৭ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় যখন পারস্যের বাদশা সাবুর রূম ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা বিজয় লাভ করে। এমনকি রূমের বাদশা হিরাকল পলায়ন করে কুসতুনতিনিয়ায় (বর্তমান ইস্তাম্বুল) আশ্রয় নেয়। সেখানে তাকে দীর্ঘ সময় আটক করে রাখা হয়। পরবর্তীতে হিরাকল রাজত্ব ফিরে পায়। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
রোম ও পারস্য তৎকালীন পৃথিবীর পরাশক্তি ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় অবস্থানকালে পারসিকরা রোমানদের ওপর হামলা চালায়। পারসিকরা ছিল অগ্নিপূজক মুশরিক। আর রোমানরা ছিল আহলে কিতাব, নিজেদেরকে তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবধারী মনে করত। এ যুদ্ধ চলাকালে মক্কার মুশরিকরা চাচ্ছিল পারসিকদের বিজয় হোক। কারণ পারসিকরাও মুশরিক আর মক্কার কুরাইশরাও মুশরিক, সেদিক থেকে তাদের সাথে একটি মিল ছিল। আর মুসলিমরা চাচ্ছিল রোমানদের বিজয় হয়। কারণ তারা আহলে কিতাব। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে মুসলিমদের অনেক মিল ছিল। কিন্তু ঘটনাক্রমে রোমানদের ওপর পারসিকদের জয় হয়। ফলে মক্কার মুশরিকরা খুব আনন্দিত হয় এবং মুসলিমরা একপ্রকার লজ্জা পায়। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলো নাযিল করে জানিয়ে দেন রোমানদের ওপর পারসিকদের জয় হলেও অচিরেই পারসিকরা রোমানদের কাছে পরাজয় বরণ করবে। এটা আল্লাহ তা‘আলার একটি ওয়াদা, আর আল্লাহ তা‘আলা কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।
ال۬مّ۬ (আলিফ-লাম-মীম) এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষর সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর সঠিক অর্থ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
(فِيْٓ أَدْنَي الْأَرْضِ)
‘এক নিকটবর্তী স্থানে’ পারসিকরা তাদের নিকটবর্তী এলাকার ওপর জয় লাভ করেছে। রোমানদের সম্পূর্ণ রাজ্য দখল করতে পারেনি। এ এলাকাটুকু ছিল শাম থেকে পারস্য পর্যন্ত। (তাফসীর মুয়াসসার)
(فِيْ بِضْعِ سِنِيْنَ)
‘তিন থেকে নয় বছরের মধ্যে।’ بِضْعٌ শব্দটি তিন থেকে নয় পর্যন্ত বুঝানো জন্য ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ তিন থেকে নয় বছরের মাঝেই রোমানরা পারসিকদের ওপর জয় লাভ করবে।
ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মুশরিকরা পছন্দ করতো যে, পারস্যবাসী রোমদের ওপর বিজয়ী হোক, কেননা পারস্যবাসী মূর্তিপূজক ছিল। আর মুসলিমরা কামনা করত যে, রোমানরা পারস্যদের ওপর বিজয়ী হোক। কেননা তারা ছিল আহলে কিতাব। (কুরতুবী)
এ বিষয়টি আবূ বকর (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আলোচনা করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন: অচিরেই রোমানরা বিজয় লাভ করবে। এ কথাটি আবূ বাকর কুরাইশদের বললে তারা বলল: আমাদের মধ্যে এবং তোমার মধ্যে একটি সময় নির্ধারণ করে দিন। তখন আবূ বকর পাঁচ বছর সময় নির্ধারণ করলেন এবং উভয়ের মাঝে একটি চুক্তি হয়। পাঁচ বছর অতিক্রম হয়ে গেল কিন্তু রোমানগণ বিজয় লাভ করল না। আবূ বাকর (رضي الله عنه) এ খবর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: কেন তুমি দশ বছর নির্ধারণ করনি। সাঈদ বিন যোবায়ের বলেন। بضع হল দশ থেকে কম একটি সংখ্যা। অতঃপর এ দশ বছরের ভিতরেই রোমানরা বিজয় লাভ করে। (তিরমিযী হা: ৩১৯৩, হাসান সহীহ)
জয়-পরাজয়, ক্ষমতা আদান-প্রদান আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ও ক্ষমতাধীন। তিনি ইচ্ছা করলে কাউকে বিজয় ও ক্ষমতা দান করেন আবার ইচ্ছা করলে পরাজিত করেন ও ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لِلّٰهِ الْأَمْرُ مِنْ قَبْلُ وَمِنْۭ بَعْدُ)
‘পূর্বের ও পরের সিদ্ধান্ত আল্লাহরই’ অর্থাৎ শুধু উপকরণ থাকলেই বিজয় অর্জন হয় না, যদি আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ও ফয়সালা না থাকে। যেদিন রোমানরা পারসিকদের ওপর জয় লাভ করবে সেদিন মুসলিমরা আনন্দিত হবে। যদিও উভয় দল কাফির, তবে পারসিকরা মুসিলমদের জন্য বেশি ক্ষতিকর। আর রোমানরা ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূলনীতিতে মুসলিমদের অনেক কাছাকাছি। সে জন্যই নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রোমের রাষ্ট্র প্রধানের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে পত্র প্রেরণ করেছিলেন তখন তাতে লিখে ছিলেন:
(قُلْ يٰٓأَهْلَ الْكِتٰبِ تَعَالَوْا إِلٰي كَلِمَةٍ سَوَا۬ءٍۭ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللّٰهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه۪ شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللّٰهِ ط فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِأَنَّا مُسْلِمُوْنَ)
“বলুন, হে আহলে কিতাবরা! তোমরা আস এমন একটি কালেমার দিকে যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে সমান; তা হল, আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করব না এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করব না এবং আমাদের কেউ অপর কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম।” (সূরা আলি ইমরান ৩:৬৪)
(يَعْلَمُوْنَ ظَاهِرًا مِّنَ الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا)
অর্থাৎ মক্কার মুশরিকরা শুধু দুনিয়ার বাহ্যিক ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নতি, ভোগ-বিলাস ও চাকচিক্য সম্পর্কেই জানে। পরকালের বিষয়াদি থেকে সম্পর্ণ অজ্ঞ। দুনিয়া থেকে একদিন চলে যেতে হবে, দুনিয়ার জয়-পরাজয় প্রকৃত জয়-পরাজয় নয় ইত্যাদি বিষয়ে তারা গাফেল।
সুতরাং পরকাল থেকে গাফেল হয়ে দুনিয়ার জ্ঞান-বিজ্ঞান, উন্নতি ও চাকচিক্য নিয়ে ব্যস্ত থাকা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয়। বরং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হল পরকালকে প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়ার অংশকে ভুলে না যাওয়া।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. খুশির সংবাদ শুনে আনন্দ উল্লাস করা বৈধ, তবে তা শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় হতে হবে।
২. আল্লাহ তা‘আলা কখনো তাঁর দেয়া ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।
৩. কোনো বিষয়ে মানুষ শুধু বাহ্যিক জানতে সক্ষম হয়, এর ভেতরটা জানতে পারে না যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘আলা ওটা মানুষকে জানান।
৪. জয়-পরাজয় মানুষের হাতে নয়, আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা জয় দিয়ে থাকেন।
৫. পরকালকে ভুলে দুনিয়া নিয়ে মত্ত থাকা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয়। যারা পরকালকে প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়ার অংশকে ধরে রাখে তারা প্রকৃত জ্ঞানী।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings