Surah Ar Rum Tafseer
Tafseer of Ar-Rum : 32
Saheeh International
[Or] of those who have divided their religion and become sects, every faction rejoicing in what it has.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৩০-৩২ নং আয়াতের তাফসীর:
(فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًا)
অর্থাৎ যখন জানা গেল শির্ক অযৌক্তিক ও মহা অন্যায়। সুতরাং যাবতীয় শির্ক জাতীয় চিন্তাধারা ও আমল পরিত্যাগ করে শুধু ইসলামের দিকে মুখ কর অর্থাৎ সর্বাবস্থায় তাওহীদের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَأَنْ أَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًا ج وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ)
“আর তোমাকে এও নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, ‘তুমি একনিষ্ঠভাবে দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত হও এবং কখনই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না” (সূরা ইউনূস ১০:১০৫)
الدِّيْنِ অর্থাৎ ইসলাম, ঈমান ও ইহসান। তোমার অন্তর, শরীর ও ইচ্ছাকে দীনের বাহ্যিক যাবতীয় ইবাদত যেমন সালাত, সিয়াম, হাজ্জ, যাকাত ও অন্যান্য এবং আভ্যন্তরীণ ইবাদত যেমন ভালবাসা, ভয় করা, আশা করা, আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করা ইত্যাদির প্রতি মনোনিবেশ কর। আর শরীয়তে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ইহসান হলন তুমি এমনভাবে ইবাদত করবে যেন তুমি আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাচ্ছ আর যদি দেখতে না পাও তাহলে জেনে রেখ আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে দেখছেন।
حَنِيْفًا অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে, সব মা‘বূদ ও তাগুতকে বর্জন করে ইবাদত করবে। কোন পীর, অলী-আওলিয়া ও দরগার অভিমুখী হয়ে নয়। এভাবে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করাকেই (فِطْرَتَ اللّٰهِ) বলা হয়েছে। এ ফিতরাতের ওপর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
কুরআন ও হাদীসে ফিতরাত দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে:
১. ইসলাম। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: প্রত্যেক সন্তান ফিতরাতের ওপর জন্ম গ্রহণ করে। অর্থাৎ ইসলামের ওপর জন্ম গ্রহণ করে। অতঃপর পিতা-মাতা তাকে ইয়াহূদী বানায় অথবা খ্রিস্টান বানায় অথবা অগ্নিপূজক বানায়। (সহীহ বুখারী হা: ১৩৫৮, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৫৮)
২. রাসূলদের সুন্নাত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছেন যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: পাঁচটি কাজ করা ফিতরাতের অন্তর্ভুক্তন খাতনা করা, নাভির নিচের পশম পরিস্কার করা, বগলের পশম তোলা, নখ খাট করা ও গোঁফ খাট করা। (সহীহ বুখারী হা: ৫৮৮৯, সহীহ মুসলিম হা: ২৫৭)
অর্থাৎ এ ফিতরাত ও দীনের আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কোন পরিবর্তন নেই। এর বিপরীত কোন নির্দেশ আসবে না। কিয়ামত পর্যন্ত সকলকে ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার নির্দেশ বহাল থাকবে। এটাই হল মজবুত দীন। এ দীন দিয়েই আল্লাহ তা‘আলা সকল নাবী-রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন, এ দীনের অনুসরণ করলেই তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে পৌঁছে দিবে। কিন্তু এ সঠিক দীন সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের জ্ঞান নেই, ফলে আল্লাহ তা‘আলাকে পাওয়ার জন্য পীর-ফকিরের অসিলা ধরে। আর কতক জনের জ্ঞান থাকলেও তা মেনে চলে না।
(مُنِيْبِيْنَ إِلَيْهِ) – اناب، ينيب
অর্থ অভিমুখী হওয়া, অর্থাৎ তুমি নিজেকে আল্লাহ তা‘আলার দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখ তাঁর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে। অন্তর এবং শরীর একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার দিকেই অভিমুখী হবে, তাঁর দিকেই মুতাওজ্জুহ হবে। কোন বাবা, পীর ও দরগার দিকে মুতাওজ্জুহ হওয়া যাবে না। এতে শরীয়তের বাহ্যিক-আভ্যন্তরীণ সকল ইবাদত শামিল। তা দেখা যাক আর না দেখা যাক। যেমন সালাত আদায় করা একটি বাহ্যিক ইবাদত, তা দেখা যায়। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার অভিমুখী হয়ে তাঁর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য সালাত আদায় করতে হবে। ভয় করা একটি ইবাদত যা দেখা যায় না। ভয় একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকেই করতে হবে, যে ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ কোন ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না সে ক্ষেত্রে কোন পীর, বাবা বা অন্য কেউ ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে এ বিশ্বাস করা যাবে না, এটা শির্ক।
(وَاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ)
সালাত কায়েম কর, আর আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের ধর্মীয় অবস্থা বর্ণনা করে বলেন: তারা তাদের দীনকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছে অথচ পৃথিবীর বুকে দীন মাত্র একটি, তাহল সবাই এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। কিন্তু এ মুশরিকরা কেউ প্রতিমার পূজা করে, কেউ আগুনের পূজা করে, কেউ চন্দ্র-সূর্যের পূজা করে, কেউ সৎ ব্যক্তিদের পূজা করে। এভাবে তারা দীনকে বিভক্ত করে নিয়েছে। উচ্চ বংশের লোকেরা যার ইবাদত করবে নিচু বংশের লোকেরা তার ইবাদত করতে পারবে না একশ্রেণির লোকদের ইবাদত করতে হয় না, তারা মারেফতের জগতে চলে গেছে আরেক শ্রেণি যারা ততদূর পৌঁছতে পারেনি তাদের ইবাদত করতে হয়। এটা দীনকে বিভক্ত করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হওয়া ছাড়া কিছুই নয়। পূর্বে ইয়াহূদী-খ্রিস্টানেরা তাদের ধর্মে মনমত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করে দলে দলে বিভক্ত হয়েছিল। মূলত আল্লাহ তা‘আলা এসব বাণী দ্বারা মুসলিমদেরকে সতর্ক করছেন যারা দীনকে বিভাজন করে নিয়ে নিজেরা বিভক্ত হয়ে গেছে তাদের মত তোমরাও হয়ো না। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ تَفَرَّقُوْا وَاخْتَلَفُوْا مِنْم بَعْدِ مَا جَا۬ءَهُمُ الْبَيِّنٰتُ ط وَأُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ)
“তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং তাদের কাছে প্রমাণ আসার পর মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” (সূরা আলি ইমরান ৩:১০৫)
شِيَعًا শব্দটি شيعة এর বহুবচন। অর্থ দল, মত ইত্যাদি।
فَرِحُوْنَ অর্থাৎ যে দলের কাছে যে সকল দলীল-প্রমাণ রয়েছে তা নিয়েই তারা সন্তুষ্ট। তারা তাদের দলীল-প্রমাণ দ্বারা মনে করে আমরাই হক অন্য সবাই বাতিল।
সুতরাং পৃথিবীর বুকে দীন একটাইন আর তা হল ইসলাম। সকলে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে এ দীন দিয়ে যুগে যুগে অসংখ্য নাবী-রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে। যারা এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত থেকে বের হয়ে গেছে তারাই বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয় তারা ইসলামের বাইরে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দীনে হানীফে তথা তাওহীদের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে।
২. প্রত্যেক মানুষ ইসলাম ও তাওহীদের ওপর জন্মগ্রহণ করে।
৩. আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি পদ্ধতির কোনই পরিবর্তন-পরিবর্ধন নেই।
৪. সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্যের মাপকাঠি না।
৫. একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকেই ভয় করতে হবে।
৬. দীনের ওপর সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে যার যার খেয়াল-খুশিমত দল বা তরীকা তৈরী করে বিভক্ত হওয়া যাবে না।
৭. সকল ইবাদতে মুতাওজ্জুহ হতে হবে আল্লাহ তা‘আলার দিকে; অন্য কারো দিকে নয়।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings