Surah Ar Rum Tafseer

Surah
Juz
Page
1
Al-Fatihah
The Opener
001
2
Al-Baqarah
The Cow
002
3
Ali 'Imran
Family of Imran
003
4
An-Nisa
The Women
004
5
Al-Ma'idah
The Table Spread
005
6
Al-An'am
The Cattle
006
7
Al-A'raf
The Heights
007
8
Al-Anfal
The Spoils of War
008
9
At-Tawbah
The Repentance
009
10
Yunus
Jonah
010
11
Hud
Hud
011
12
Yusuf
Joseph
012
13
Ar-Ra'd
The Thunder
013
14
Ibrahim
Abraham
014
15
Al-Hijr
The Rocky Tract
015
16
An-Nahl
The Bee
016
17
Al-Isra
The Night Journey
017
18
Al-Kahf
The Cave
018
19
Maryam
Mary
019
20
Taha
Ta-Ha
020
21
Al-Anbya
The Prophets
021
22
Al-Hajj
The Pilgrimage
022
23
Al-Mu'minun
The Believers
023
24
An-Nur
The Light
024
25
Al-Furqan
The Criterion
025
26
Ash-Shu'ara
The Poets
026
27
An-Naml
The Ant
027
28
Al-Qasas
The Stories
028
29
Al-'Ankabut
The Spider
029
30
Ar-Rum
The Romans
030
31
Luqman
Luqman
031
32
As-Sajdah
The Prostration
032
33
Al-Ahzab
The Combined Forces
033
34
Saba
Sheba
034
35
Fatir
Originator
035
36
Ya-Sin
Ya Sin
036
37
As-Saffat
Those who set the Ranks
037
38
Sad
The Letter "Saad"
038
39
Az-Zumar
The Troops
039
40
Ghafir
The Forgiver
040
41
Fussilat
Explained in Detail
041
42
Ash-Shuraa
The Consultation
042
43
Az-Zukhruf
The Ornaments of Gold
043
44
Ad-Dukhan
The Smoke
044
45
Al-Jathiyah
The Crouching
045
46
Al-Ahqaf
The Wind-Curved Sandhills
046
47
Muhammad
Muhammad
047
48
Al-Fath
The Victory
048
49
Al-Hujurat
The Rooms
049
50
Qaf
The Letter "Qaf"
050
51
Adh-Dhariyat
The Winnowing Winds
051
52
At-Tur
The Mount
052
53
An-Najm
The Star
053
54
Al-Qamar
The Moon
054
55
Ar-Rahman
The Beneficent
055
56
Al-Waqi'ah
The Inevitable
056
57
Al-Hadid
The Iron
057
58
Al-Mujadila
The Pleading Woman
058
59
Al-Hashr
The Exile
059
60
Al-Mumtahanah
She that is to be examined
060
61
As-Saf
The Ranks
061
62
Al-Jumu'ah
The Congregation, Friday
062
63
Al-Munafiqun
The Hypocrites
063
64
At-Taghabun
The Mutual Disillusion
064
65
At-Talaq
The Divorce
065
66
At-Tahrim
The Prohibition
066
67
Al-Mulk
The Sovereignty
067
68
Al-Qalam
The Pen
068
69
Al-Haqqah
The Reality
069
70
Al-Ma'arij
The Ascending Stairways
070
71
Nuh
Noah
071
72
Al-Jinn
The Jinn
072
73
Al-Muzzammil
The Enshrouded One
073
74
Al-Muddaththir
The Cloaked One
074
75
Al-Qiyamah
The Resurrection
075
76
Al-Insan
The Man
076
77
Al-Mursalat
The Emissaries
077
78
An-Naba
The Tidings
078
79
An-Nazi'at
Those who drag forth
079
80
Abasa
He Frowned
080
81
At-Takwir
The Overthrowing
081
82
Al-Infitar
The Cleaving
082
83
Al-Mutaffifin
The Defrauding
083
84
Al-Inshiqaq
The Sundering
084
85
Al-Buruj
The Mansions of the Stars
085
86
At-Tariq
The Nightcommer
086
87
Al-A'la
The Most High
087
88
Al-Ghashiyah
The Overwhelming
088
89
Al-Fajr
The Dawn
089
90
Al-Balad
The City
090
91
Ash-Shams
The Sun
091
92
Al-Layl
The Night
092
93
Ad-Duhaa
The Morning Hours
093
94
Ash-Sharh
The Relief
094
95
At-Tin
The Fig
095
96
Al-'Alaq
The Clot
096
97
Al-Qadr
The Power
097
98
Al-Bayyinah
The Clear Proof
098
99
Az-Zalzalah
The Earthquake
099
100
Al-'Adiyat
The Courser
100
101
Al-Qari'ah
The Calamity
101
102
At-Takathur
The Rivalry in world increase
102
103
Al-'Asr
The Declining Day
103
104
Al-Humazah
The Traducer
104
105
Al-Fil
The Elephant
105
106
Quraysh
Quraysh
106
107
Al-Ma'un
The Small kindnesses
107
108
Al-Kawthar
The Abundance
108
109
Al-Kafirun
The Disbelievers
109
110
An-Nasr
The Divine Support
110
111
Al-Masad
The Palm Fiber
111
112
Al-Ikhlas
The Sincerity
112
113
Al-Falaq
The Daybreak
113
114
An-Nas
Mankind
114

Ar-Rum : 2

30:2
غُلِبَتِٱلرُّومُ ٢

Saheeh International

The Byzantines have been defeated

Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)

১-৭ নং আয়াতের তাফসীর

এই আয়াতগুলো ঐ সময় অবতীর্ণ হয় যখন পারস্য সম্রাট সাবুর সিরিয়া রাজ্য ও জযীরার আশে পাশের শহরগুলোর উপর বিজয় লাভ করে এবং রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াস পরাজিত হয়ে কনস্টান্টিনোপলে অবরুদ্ধ হন। দীর্ঘদিন ধরে অবরোধ চলতে থাকে। পরিশেষে পরিবর্তন হয় এবং হিরাক্লিয়াসের বিজয় লাভ হয়। বিস্তারিত বর্ণনা সামনে আসছে।

এই আয়াতের ব্যাপারে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রোমকদেরকে পরাজয়ের উপর পরাজয় বরণ করতে হয় এবং এতে মুশরিকরা খুবই আনন্দিত হয়। কেননা, তাদের মত পারস্যবাসীরাও ছিল মূর্তিপূজক। আর মুসলমানরা কামনা করতো যে, যেন রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করে। কেননা, কমপক্ষে তারা আহলে কিতাব তো ছিল।

হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এ ঘটনাটি বর্ণনা করলে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ “রোমকরা সত্বরই বিজয় লাভ করবে।” হযরত আবু বকর (রাঃ) এ খবর মুশরিকদের নিকট পৌছালে তারা বলেঃ “এসো, একটি সময়কাল নির্ধারণ কর। যদি এই সময়ের মধ্যে রোমকরা বিজয় লাভ না করে তবে তোমরা আমাদেরকে এতো এতো দিবে। আর যদি তোমাদের কথা সত্যে পরিণত হয় তবে আমরা তোমাদেরকে এতো এতো দিবো।” সুতরাং পাঁচ বছরের মেয়াদ নির্ধারিত হলো। এই মেয়াদও পূর্ণ হয়ে গেল, কিন্তু রোমকরা বিজয় লাভে সমর্থ হলো না। হযরত আবু বকর (রাঃ) নবী (সঃ)-এর খিদমতে এ খবরও পৌঁছিয়ে দিলেন। তিনি বললেনঃ “দশ বছরের মেয়াদ কেন নির্ধারণ করনি?”

হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, কুরআন কারীমে মেয়াদের জন্যে (আরবি) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যার প্রয়োগ হয়ে থাকে দশ হতে কমের উপর। হয়েছিলও তাই। দশ বছরের মধ্যেই রোমকরা জয়যুক্ত হয়েছিল। এরই কারণ এ আয়াতে রয়েছে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে দুর্বল বলেছেন)

হযরত সুফইয়ান (রঃ) বলেন যে, বদরের যুদ্ধের পর রোমকরাও পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করেছিল।

হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন যে, পাঁচটি জিনিস গত হয়ে গেছে। (আরবি) ধোয়া, (আরবি) শাস্তি, (আরবি) আক্রমণ, চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়া, এবং (আরবি) রোমকদের বিজয়।

অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর শর্ত ছিল সাত বছর। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “(আরবি) শব্দের অর্থ তোমাদের কাছে কি?” জবাবে তিনি বললেনঃ ‘দশের কম।' রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তখন বললেনঃ “যাও, সময় আরো দু বছর বাড়িয়ে নাও।” সুতরাং ঐ সময়ে রোমকরা বিজয় মাল্যে ভূষিত হয়। ফলে মুসলমানরা আনন্দে মেতে ওঠে। এ আয়াতে এগুলোই উল্লিখিত হয়েছে।

অন্য এক রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, মুশরিকরা এ আয়াত শুনে হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেঃ “এ ব্যাপারেও কি তুমি তোমাদের নবী (সঃ)-কে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস কর?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যা, তিনি সত্য কথাই বলেছেন।” অতঃপর শর্ত করা হলো এবং মেয়াদ নির্ধারিত হলো। এরপর মেয়াদ শেষ হয়ে গেল। কিন্তু রোমকরা বিজয় লাভ করতে পারলো না। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই শর্তের কথা জানতে পেরে মনঃক্ষুন্ন হন এবং হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে বলেনঃ “তুমি কেন এ কাজ করতে গেলে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সত্যবাদিতার উপর ভরসা করেই আমি একাজ করেছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাঁকে বললেনঃ “যাও, সময় বাড়িয়ে দশ বছর করে নাও। যদি তাতে শর্তের মূল্য বাড়াতে হয় তবুও।” তিনি গেলেন। মুশরিকরা তা মেনে নিলো এবং সময় বাড়িয়ে দশ বছর করে দিলো। অতঃপর দশ বছর পূর্ণ না হতেই রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করলো। মাদায়েন পর্যন্ত তাদের সেনাবাহিনী পৌঁছে গেল। সেখানে তারা তাদের বিজয় পতাকা উড়িয়ে দিলো।

হযরত আবু বকর (রাঃ) কুরায়েশদের নিকট হতে শর্তের সম্পদ নিয়ে রাসুলল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হাযির হলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে ঐ সম্পদ সাদকা করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।

আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, এটা বাজি ধরা হারাম হওয়ার পূর্বের ঘটনা। এতে ছয় বছর সময় ধার্য করা হয়েছিল। এতে আরো আছে যে, যখন এ ভবিষ্যদ্বাণী সফল হয় তখন বহু মুশিরক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। এটা জামেউত তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে।

ইমাম সুনায়েদ ইবনে দাউদ (রঃ) স্বীয় তাফসীরে একটি অতি বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ঘটনাটি এই যে, হযরত ইকরামা (রাঃ) বলেনঃ পারস্যে একটি স্ত্রীলোক ছিল যার পুত্রেরা ছিল বড় বড় বীরপুরুষ। তারা যেন দেশের বাদশাহই ছিল। কোন এক সময় পারস্য সম্রাট কিসরা স্ত্রীলোকটিকে ডেকে পাঠিয়ে বলেঃ “আমি রোমকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানের ইচ্ছা করেছি এবং তোমার পুত্রদের কোন একজনকে আমার সেনাবাহিনীতে সেনাপতি করতে চাচ্ছি। এখন কাকে সেনাপতি করা যায় তা তুমিই বলে দাও।” একথা শুনে স্ত্রীলোকটি বললো: “আমার অমুক ছেলেটি তো শৃগাল অপেক্ষা বেশী ধোঁকাবাজ এবং শিকারী বাজপাখী হতে বেশী বুদ্ধিমান। আমার এই দ্বিতীয় ছেলেটির নাম ফারখান। সে ধনুকের তীরের ন্যায় ক্ষুরধার। আমার তৃতীয় ছেলেটি হলো শহরবারায। সে আমার তিনটি ছেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ধৈর্যশীল। এখন আপনি যাকে ইচ্ছা সেনাপতি নিযুক্ত করতে পারেন। বাদশাহ বহুক্ষণ চিন্তাভাবনা করার পর শহরবারাযকে সেনাপতি নিযুক্ত করলেন।

সে সৈন্যবাহিনী নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল এবং রোমকদের সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করে জয়লাভ করলো। শত্রু পক্ষীয় সৈন্যরা নিহত হলো এবং শহর একেবারে জনশূন্য হয়ে গেল। তাদের ফলবান বৃক্ষাদি ধ্বংস করে দেয়া হলো এবং তাদের সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামল দেশ বিজনে পরিণত হলো।

আযরেআ’ত ও বসরাতে যে দুটি শহর ছিল তা আরব-এলাকা সংলগ্ন ছিল। সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হলো এবং পারসিকরা রোমকদের উপর জয়লাভ করলো। এতে কুরায়েশরা খুবই আনন্দ উপভোগ করতে লাগলো। মুসলমানরা। এতে দুঃখিত হলো। কুরায়েশরা মুসলমানদেরকে ঠাট্ট-বিদ্রুপ করতে লাগলো। তারা মুসলমানদেরকে বলতে লাগলো: “তোমরা ও খৃষ্টানরা আহলে কিতাব, আর আমরা ও পারসিকরা অজ্ঞ, মূখ। আমাদের লোকেরা তোমাদের লোকদের উপর জয়লাভ করেছে। এভাবে আমরাও তোমাদের উপর জয়লাভ করবে। এখন যদি আবার যুদ্ধ বেঁধে যায় তাহলে আমরা পারসিকদের ন্যায় জিতে যাবো এবং তোমরা রোমকদের ন্যায় হবে পরাজিত।” এসব কথার পরিপ্রেক্ষিতে কুরআনের (আরবি) এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়।

এ আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার পর হযরত আবু বকর (রাঃ) মুশরিকদের নিকট গমন করেন এবং তাদেরকে বলেনঃ “এ বিজয়ে গর্ব করো না, অতিসত্বরই এ বিজয় পরাজয়ে পরিবর্তিত হবে। আমাদের ভাই আহলে কিতাবরা তোমাদের ভাইদের উপর জয়লাভ করবে। আমার এ কথাগুলো তোমরা বিশ্বাস করে নাও, যেহেতু এগুলো আমার কথা নয়, বরং এগুলো হলো আমাদের নবী (সঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী।” তাঁর একথা শুনে উবাই ইবনে খালফ দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো: “হে আবুল ফযল (রাঃ)! তুমি মিথ্যা বলছো।” হযরত আবু বকর (রাঃ) তৎক্ষণাৎ প্রত্যুত্তরে বললেনঃ “রে আল্লাহর দুশমন! আমি আমার একথার উপর দশটি উষ্ট্রী বাজি রাখলাম। যদি তিন বছরের মধ্যে রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভে সমর্থ না হয় তবে আমি এ দশটি উষ্ট্রী তোমাদেরকে দিয়ে দিবে। আর যদি তারা জয়লাভ করে তবে তোমাদেরকে দশটি উষ্ট্ৰী দিতে হবে। উভয়ের মধ্যে এ শর্ত হয়ে গেল। অতঃপর হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এ ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “আমি তো তোমাকে তিন বছরের কথা বলিনি। কুরআন কারীমে (আরবি) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যার দ্বারা তিন হতে নয় বছর সময়কে বুঝায়। সুতরাং যাও, ফিরে যাও। উন্ত্রীর সংখ্যাও বাড়িয়ে দাও এবং সময়ও কিছু বাড়িয়ে নাও।”

হযরত আবু বকর (রাঃ) তখন উবাই-এর কাছে গেলেন। উবাই তাঁকে বললো: “সম্ভবত তুমি অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়েছে।” তিনি বললেনঃ “না, বরং আমি পূর্বের চেয়ে আরো শক্ত মন নিয়ে এসেছি।” এসো, সময়ও কিছু বাড়িয়ে নেয়া যাক এবং বাজির মালের পরিমাণও কিছু বাড়িয়ে দেয়া হালে।” সুতরাং বাজির মালের সংখ্যা নির্ধারিত হলো একশটি উট এবং সময়কাল নির্ধারিত হলো ৯ (নয় বছর)। ঐ সময়ের মধ্যে রোমকরা পারসিকদের উপর জয়লাভ করলো। ফলে মুসলমানরা মুশরিকদের উপর প্রভাব বিস্তার করে ফেললেন।

রোমকদের বিজয় লাভের ঘটনা এই যে, পারসিকরা যখন রোমকদের উপর জয়লাভ করে তখন শহর বারাযের ভাই ফারখান মদ্যপানরত অবস্থায় বলেঃ “আমি দেখি যে, আমি যেন কিসরার সিংহাসনে উপবিষ্ট হয়েছি এবং পারস্যের বাদশাহ হয়ে গেছি।” এ খবর পারস্য সম্রাট কিসরার নিকট পৌছা মাত্রই সে শহরবারাযের কাছে চিঠি লিখলো: “আমার এ পত্র পাওয়া মাত্রই তুমি তোমার ভাই ফারখানের মাথা কেটে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে।” শহরবারা উত্তরে কিসরাকে লিখলো: “হে বাদশাহ! এতো তাড়াতাড়ি করবেন না। ফারখানের মত এতো বড় সাহসী পুরুষ এবং শত্রুবাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়ার মত শক্তিশালী যুবক আর কেউই নেই।” সম্রাট পুনরায় লিখলো: “ফারখানের ন্যায় সাহসী বীর পুরুষ আমার দরবারে আরো বহু রয়েছে। এজন্যে তোমাকে চিন্তা করতে হবে। আমার আদেশ তাড়াতাড়ি কার্যকর কর।” শহরবরায আবার উত্তর দিলো এবং সম্রাটকে বুঝালো। এতে সম্রাট ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলো। সে ঘোষণা করলো: “শহরবারাযকে সেনাপতির পদ হতে বরখাস্ত করা হলো এবং তার স্থলে তার ভাই ফারখানকে সেনাপতি নিযুক্ত করা হলো। এভাবে একটি পত্র লিখে দূত মারফত তা শহরবারাযের নিকট পাঠিয়ে দিলো এবং তাকে বলা হলো: “তুমি আজ থেকে সেনাপতির পদ হতে অপসারিত হলে। তুমি তোমার দায়িত্ব ফারখানকে বুঝিয়ে দাও।” সম্রাট এর সাথে আর একটি গোপনীয় পত্র দূতের হাতে দিয়ে বলেছিল যে, শহরবারা যখন তার দায়িত্ব ফারখানকে বুঝিয়ে দেবে তখন এই গোপনীয় পত্রটি যেন সে তার হাতে দিয়ে দেয়।

শহরবারা পত্র পাওয়া মাত্রই সম্রাটের আদেশ মেনে নিলো এবং ফারখানের হাতে ক্ষমতা তুলে দিলো। অতঃপর ফারখান সেনাপতির দায়িত্ব নিলো। তারপর দূত দ্বিতীয় পত্রটি ফারখানের হাতে দিলো। ঐ পত্রে শহরবারাযকে হত্যা করে তার মাথা শাহী দরবারে পাঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ ছিল। পত্র পড়ে ফারখান শহরবারাযকে ডেকে নিলো এবং তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলো। শহরবারা তাকে বললো: “এতো তাড়াতাড়ি করো না, আমাকে একটু সময় দাও। কমপক্ষে অসিয়তের সময়টুকু তো দেবে?” ফারখান তার আবেদন মঞ্জুর করলো এবং তাকে কিছু সময় দিলো। অতঃপর শহরবারায় তার পুরাতন কাগজ-পত্রগুলো আনিয়ে নিলো যেগুলো কিসরা (পারস্য সম্রাট) তার কাছে পাঠিয়েছিল এবং যেগুলোতে ফারখানকে হত্যা করার নির্দেশ ছিল। কাগজগুলো ফারখানের সামনে রেখে দিলো এবং বললো: “দেখো, তোমার ব্যাপারে ম্রাটের সাথে আমার কত কথা কাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু আমি আমার জ্ঞানের সাহায্য নিয়েছি, তাড়াতাড়ি করিনি। আর তুমি একটিমাত্র পত্র পেয়েই আমাকে হত্যা করার জন্যে উঠে পড়ে লেগে গেলে? এ পত্রগুলো দেখে একটু চিন্তা-ভাবনা কর।” পত্রগুলো দেখে ফারখানের চোখ খুলে গেল। সে সাথে সাথে সেনাপতির পদ হতে নেমে গেল। এবং পুনরায় শহরবারাযকে সেনাপতির পদে অধিষ্ঠিত করলো।

শহরবারা তৎক্ষণাৎ রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে পত্র লিখে তার সাথে গোপন সাক্ষাতের আবেদন জানালো। সে সম্রাটকে জানালো যে, তার সাথে তার একটি বিশেষ কাজের জন্য পরামর্শের প্রয়োজন আছে। একথাগুলো কোন দূত মারফত বলা সম্ভব নয়। তাই সে কথাগুলো মৌখিকভাবে তাঁর কাছে পেশ করতে চায়। সে আরো লিখলো: “পঞ্চাশটি লোক সাথে নিয়ে আপনি স্বয়ং চলে আসুন, আর পঞ্চাশজন লোক আমার সাথে থাকবে।” রোমক সম্রাট কায়সারের কাছে যখন এ খবর পৌছলো তখন তিনি তার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলেন। কিন্তু সতর্কতা হিসেবে তিনি নিজের সাতে পাঁচ হাজার লোক নিলেন। পূর্বেই তিনি গুপ্তচরদেরকে পাঠিয়ে দিলেন যাতে ভিতরে কোন প্রতারণা বা ষড়যন্ত্র থাকলে তা ধরা পড়ে যায়। গুপ্তচররা গেল এবং রিপোর্ট দিলো যে, ভয়ের কোন কারণ নেই। শহরবারায় মাত্র পঞ্চাশজন সওয়ার নিয়ে যথাস্থানে হাযির হলো। তার সাথে অন্য কেউ থাকলো না। সুতরাং রোমক সম্রাট নিশ্চিন্ত হয়ে অতিরিক্ত ঘোড় সওয়ারদেরকে ফিরিয়ে দিলেন। সাথে পঞ্চাশজন মাত্র লোক রাখলেন। অতঃপর তিনি নির্ধারিত স্থানে পৌঁছলেন। সেখানে একটি রেশমী মঞ্চ ছিল। উভয়ের পঞ্চাশ পঞ্চাশজন লোককে পৃথক পৃথক করে দেয়া হলো। উভয় দলই সেখানে নিরস্ত্র অবস্থায় ছিল। সাথে থাকলো ছুরি চাকু। অতঃপর শহরবারায় বললো: “হে রোমক সম্রাট! আপনার দেশকে বিরান এবং আপনার সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছি আমরা দু’ভাই। আমরা দু'ভাই চতুরতা ও বীরত্বের মাধ্যমে আপনার দেশকে জয় করেছি। কিন্তু আমাদের সম্রাট কিসরা আমাদের প্রতি হিংসা পোষণ করতে শুরু করেছে। সে আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। আমার কাছে সে আমার ভাইকে হত্যা করার ফরমান পাঠিয়েছে। এ ফরমান আমি অমান্য করলে এরই অপরাধে সে চালাকী করে আমার ভাই-এর কাছে আমাকে হত্যা করার ফরমান পাঠিয়েছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দু’ভাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা আপনার বাহিনীভুক্ত হয়ে কিসরার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবো।” রোমক সম্রাট তার এ প্রস্তাব সানন্দে সমর্থন করলেন। অতঃপর দু’জনের মধ্যে ইঙ্গিত ইশারায় কিছু কথাবার্তা হলো। আর এর অর্থ হলো এই যে, দু’জন দোভাষীকে হত্যা করে দেয়া হালে, যাতে এ দু’জনের কারণে এ গোপন তথ্য প্রকাশ না হয়ে পড়ে। কারণ দুয়ের পর তিনের কানে কোন কথা গেলে তা প্রকাশ হয়েই যায়। উভয়ে একথায় একমত হলো এবং দু’জন, দাঁড়িয়ে নিজ নিজ দোভাষীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ফেললো। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা কিসরাকে খতম করে দিলেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কানে এ সংবাদ পৌঁছলো। তাঁর সঙ্গীরা এ সংবাদে খুবই আনন্দিত হলেন। এ ঘটনাটি সত্যিই বিস্ময়করই বটে।

এখন আয়াতের শব্দগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। হুরূফে মুকাত্তাআ'ত যেগুলো সূরার প্রথমে এসে থাকে, এগুলো সম্পর্কে আমি সূরায়ে বাকারার তাফসীরের শুরুতে আলোচনা করেছি। রোমকরা সবাই আয়স ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশোদ্ভূত। এরা বানী ইসরাঈলের চাচাতো ভাই। রোমকদেরকে বানু আসফারও বলা হয়। এরা ইউনানীয়দের মাযহাবের উপর ছিল। ইউনানীরা ছিল ইয়াফাস ইবনে নূহ (আঃ)-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত। এরা তুর্কীদের চাচাতো ভাই। এরা ছিল তারকার পূজারী। সাতটি তারকার উপাসনা করতো। এদেরকে মুতাহাইয়ারাহও বলা হয়। এরা উত্তরমুখী হয়ে নামায পড়তো। এদের দ্বারাই দামেশক শহরের পত্তন হয়েছিল। তারা সেখানে উপাসনালয় তৈরী করে। ওর মেহরাব উত্তরমুখী আছে। হযরত ঈসা (আঃ)-এর নবুওয়াতের পর তিন বছর পর্যন্ত রোমকরা তাদের পূর্ব মতবাদে অটল ছিল। তাদের মধ্যে যে কেউই সিরিয়া অথবা জযীরার (উপদ্বীপের) বাদশাহ হতো তাকেই কায়সার বলা হতো। সর্বপ্রথম রোমকদের বাদশাহ কুতুনতীন ইবনে কিসতাস খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে। তার মাতা ছিল মারইয়াম হাইলানিয়্যাহ গানদাকানিয়্যাহ। সে ছিল হিরানের অধিবাসিনী। সেই সর্বপ্রথম খষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে। অতঃপর তার কথায় তার ছেলেও এই মাযহাব অবলম্বন করে। এ লোকটিও ছিল বড় দার্শনিক, বুদ্ধিমান ও প্রতারক। এ কথাও প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে যে, সে আসলে আন্তরিকতার সাথে এ ধর্ম গ্রহণ করেনি।

একদা বহু খৃষ্টান তার দরবারে একত্রিত হয়। তাদের পরস্পরের মধ্যে ধর্ম সম্বন্ধে আলোচনা-সমালোচনা, মতানৈক্য এবং তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আরইউসের সাথে বড় মুনাযারা ও তর্ক-বিতর্ক হয়। ফলে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি হয়ে যায় এবং তা এমন চরমে পৌঁছে যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ৩১৮ জন পাদরী মিলিতভাবে একখানা পুস্তক রচনা করেন যা বাদশাহুকে প্রদান করা হয়। এতে বাদশাহর আকীদা ও মতাদর্শকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এটাকে আমানতে কুবরা বা বৃহত্তম আমানত বলা হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এটা খিয়ানতে হাকীরাহ (ঘৃণ্য খিয়ানত)। এ সময় তাদের ফিকহর কিতাব লিখা হয় এবং তাতে হারাম হালালের মাসআলা বর্ণনা করা হয়। তাদের আলেমরা মনের আনন্দে যা খুশী তাই লিখেছে। দ্বীনে মসীহকে তারা মন খুলে কম বেশী করেছে। আসল দ্বীন পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত ও পরিকল্পিত হয়ে গেছে। তারা পূর্বদিকে মুখ করে নামায পড়া শুরু করে দেয়। শনিবারের পরিবর্তে রবিবারকে তারা বড় দিন ধার্য করে। তারা ক্রুসের উপাসনা শুরু করে। শূকরকে তারা হালাল করে নেয়। বহু নতুন নতুন উৎসব তারা আবিষ্কার করে ফেলেছে। যেমন ঈদ, ক্রুশ, ঈদে কাদাসন, ঈদে গাতাস ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর ঐ আলেমদের মর্যাদার স্তর তারা নির্ধারণ করে নিয়েছে। একজন বড় পাদরী হয়ে থাকে। তার অধীনে ছোট ছোট পাদরীদের ক্রমিক পর্যায়ে মর্যাদার স্তর বন্টন করে দেয়া হয়। তারা রুহবানিয়্যাত ও বৈরাগ্যের নতুন বিদআত আবিষ্কার করে নিয়েছে। বহু সংখ্যক গীর্জা ও মন্দির তারা তৈরী করে নিয়েছে। কুসতুনতুনিয়া শহরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। বাদশাহর নামে এই শহরের নামকরণ করা হয়েছে। বাদশাহ সেখানে বারো হাজার গীর্জা নির্মাণ করিয়েছে। বায়তে-লাহমে তিনটি মেহরাব তৈরী করা হয়েছে। তার মাতাও কামাকিমা তৈরী করে দিয়েছে। এই লোকদেরকে মালেকিয়্যাহ বলা হয়। কেননা, তারা বাদশাহর দ্বীনের উপর ছিল। তারপর আসে ইয়াকুবিয়্যাহ ও নাসরিয়্যাহ। এরা সব নাসরের অনুসারী ছিল। তাদের বহু দল সৃষ্টি হয়েছিল। এদের ছিল ৭২টি ফিরকা। তাদের রাজত্ব ও আধিপত্য বরাবর চলে আসছিল। একের পর এক কায়সার হতো। শেষ পর্যন্ত হিরাক্লিয়াস কায়সার হন। ইনিই ছিলেন সমস্ত বাদশাহর মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক বুদ্ধিমান। তিনি একজন বড় আলেম ছিলেন। তিনি ছিলেন বড় জ্ঞান ও দূরদর্শী লোক। এ ব্যাপারে তাঁর কোন জোড়া ছিল না। তাঁর রাজ্য বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়েছিল। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পারস্য সম্রাট কিসরা উঠে পড়ে লাগে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোও তার সাথে মিলিত হয়। তার রাজ্য কায়সারের রাজ্য অপেক্ষাও বড় ছিল। সে ছিল অগ্নি উপাসক। উপরে বর্ণিত রিওয়াইয়াত দ্বারা জানা যায় যে, তার সেনাপতি কায়সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল। কিন্তু বাস্তব কথা এই যে, স্বয়ং কিসরা কায়সারের মুকাবিলা করেছিল। কায়সার যুদ্ধে পরাজিত হলেন। এমনকি তিনি কুসতুনতুনিয়ায় অবরুদ্ধ হলেন। দীর্ঘদিন ধরে অবরোধ চলতে থাকলো। খৃষ্টানরা তার খুব সম্মান করতো। বহু দিন অবরোধ করে রাখার পরেও তারা রাজধানী দখল করতে পারলো না। কারণ এই শহরের অর্ধাংশ সমুদ্রের দিকে ছিল। আর বাকী অংশ ছিল স্থলভাগ সংলগ্ন। সামুদ্রিক পথে খাদ্য ও রসদ কায়সারের নিকট বরাবরই পৌঁছতে থাকে। অবশেষে কায়সার এক কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি কিসরাকে বলে পাঠালেনঃ “আপনি যা ইচ্ছা আমার নিকট হতে গ্রহণ করুন এবং যে শর্তের উপর ইচ্ছা সন্ধি করুন। আপনি যা চাইবেন আমি তাই দিতে প্রস্তুত আছি।” কিসরা এ প্রস্তাবে সানন্দে সম্মত হলো। অতঃপর সে এতো বেশী মাল চেয়ে বসলো যে, এ দুই বাদশাহ মিলে চেষ্টা করলেও তা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু কায়সার এটাও মেনে নিলেন। কারণ এর দ্বারা তিনি কিসরার নির্বুদ্ধিতার পরিচয় পেলেন। তিনি ভালরূপেই বুঝতে পারলেন যে, কিসরা অত্যন্ত নির্বোধ বাদশাহ। সে যে মাল চেয়েছে তা কোন দুনিয়াবাসীর পক্ষে জমা করা সম্ভব নয়। তিনি তার কাছে আবেদন করলেন যে, সে যেন তাঁকে সিরিয়া গিয়ে সময় মত এ মাল আদায় করে দেয়ার ব্যাপারে সুযোগ দেয়।

কিসরা তাঁর এই আবেদন মঞ্জুর করে। সুতরাং রোমক সম্রাট তথায় গিয়ে এক বিরাট বাহিনী গঠন করলেন এবং বললেনঃ “আমি আমার কতিপয় বিশিষ্ট বন্ধুর সাথে কোথাও যাচ্ছি। যদি আমি এক বছরের মধ্যে ফিরে আসি তবে এদেশ আমার। আর যদি এক বছরের মধ্যে ফিরে আসতে না পারি তবে তোমরা যাকে খুশী বাদশাহ নির্বাচিত করবে।” তাঁর প্রজাবর্গ উত্তরে বললো: “আমাদের বাদশাহ তো আপনিই। দশ বছর যাবতও যদি আপনি ফিরে না আসেন তাহলেও আপনিই আমাদের বাদশাহ থাকবেন।” প্রাণ নিয়ে খেলা করে এরূপ অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন। গোপন রাস্তা দিয়ে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে অতি সপ্তর্পণে পারস্যের শহরে পৌঁছে গেলেন এবং আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে বসলেন। সেখানকার সৈন্যরা সব রোম চলে গিয়েছিল বলে জনগণ বেশীক্ষণ মুকাবিলা করতে সক্ষম ছিল না। কায়সারী সৈন্যরা হত্যাযজ্ঞ শুরু করে দিলো। যে সামনে পড়ে তাকেই শেষ করে দেয়। কায়সার সামনের দিকে এগিয়েই চললেন। অবশেষে তিনি মাদায়েনে পৌঁছে গেলেন। সেখানে কিসরার সিংহাসন অবস্থিত ছিল। তথাকার রক্ষীবাহিনীর উপর জয়লাভ করলেন এবং চারদিক হতে ধন-দৌলত সংগ্রহ করতে লাগলেন। তথাকার সমস্ত মহিলাকে বন্দী করলেন এবং যুদ্ধপপাযোগী লোকদেরকে হত্যা করে ফেললেন। কিসরার ছেলেকে জীবন্ত বন্দী করলেন। অন্দরবাসিনী মহিলাদের পাকড়াও করলেন। তার ছেলের মস্তক মুণ্ডন করে গাধায় চড়িয়ে মহিলাদেরসহ কিসরার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। যখন এ দলটি কিসরার কাছে পৌঁছলো তখন সে অত্যন্ত মর্মাহত হলো। তখনো সে কুসতুনতুনিয়া অবরোধ করেই আছে ও কায়সারের ফিরে আসার অপেক্ষা করছে। এমতাবস্থায় তার পরিবারবর্গ ও অন্যান্য লোকেরা অত্যন্ত অপমানজনক অবস্থায় তার কাছে পৌঁছলো। সে অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলো ও কঠিনভাবে আক্রমণ করে বসলো। কিন্তু সে কৃতকার্য হতে পারলো না। তখন সে জীজু নদীর দিকে অগ্রসর হলো। কেননা, এটাই ছিল কুসতুনতুনিয়া যাবার পথ। এ পথে কায়সার বাহিনীকে বাধা দেয়াই ছিল তার উদ্দেশ্য। কায়সার এটা জানতে পেরে পূর্বেই বড় রকমের কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি তাঁর কিছু সংখ্যক সৈন্যকে নদীর মোহনায় মোতায়েন করেন এবং বাকীগুলোকে নিয়ে নদীর চড়াও-এ চলে যান। প্রায় এক দিন এক রাত চলার পর তিনি নিজের সাথে যে খড়কুটা, জন্তুর গোবর ইত্যাদি এনেছিলেন সবই পানিতে ভাসিয়ে দিলেন। এগুলো ভাসতে ভাসতে কিসরার সেনাবাহিনীর সম্মুখ দিয়ে চলতে লাগলো। তখন তারা বুঝতে পারলো যে, কায়সার এখান থেকে চলে গিয়েছেন। কারণ, সে বুঝতে পারলো যে, এগুলো কায়সারের জন্তুর খাদ্য, গোবর ইত্যাদির অবশিষ্টাংশ। অতঃপর কায়সার আবার তার সেনাবাহিনীর নিকট ফিরে আসলেন। এদিকে কিসরা তাঁর সন্ধানে সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। কায়সার জীজু নদী অতিক্রম করে পথ পরিবর্তন করতঃ কুসতুনতুনিয়ায় পৌঁছে গেলেন। যেদিন তিনি রাজধানীতে পৌঁছলেন সেই দিন খৃষ্টানরা অত্যন্ত আনন্দোৎসবে মেতে উঠলো। কিসরা যখন এ খবর জানতে পারলো তখন তার বিস্ময়কর অবস্থা হলো। বসার জায়গাটুকুও চলে গেল এবং চলার স্থানটুকুও শেষ হয়ে গেল। না রোম বিজিত হলো, না পারস্য টিকে থাকলো। সুতরাং সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো। রোমকরা জয়লাভ করলো। পারস্যের নারীরা এবং ধন-সম্পদ তাদের অধিকারে এসে গেল। এসব ঘটনা নয় বছরের মধ্যে সংঘটিত হলো। রোমকরা তাদের হারানো দেশ পারসিকদের হাত হতে পুনরুদ্ধার করে নিলো। পরাজয়ের পর পুনরায় তারা বিজয় মাল্যে ভূষিত হলো। আরেআত ও বসরার যুদ্ধে পারসিকরা জয়লাভ করেছিল। এটা সিরিয়ার ঐ অংশ ছিল যা হিজাযের সাথে মিলিত ছিল। এটাও উক্তি আছে যে, জযীরায় এ পরাজয় ঘটেছিল যা রোমকদের সীমান্তে অবস্থিত ছিল এবং পারস্যের সাথে মিলিত ছিল। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

মোটকথা, ৯ বছরের মধ্যে রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করে। কুরআন কারীমের (আরবি) শব্দ রয়েছে। এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় তিন হতে নয় বছর মেয়াদের জন্যে। জামেউত তিরমিযী ও ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর তাফসীরে বর্ণিত হাদীসে এই তাফসীরই বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে বলেছিলেনঃ “সতর্কতার জন্যে এই বাজি তোমার রাখা উচিত ছিল দশ বছরের জন্যে। কেননা, (আরবি) শব্দের প্রয়োগ হয় তিন হতে নয় বছরের উপর।” তারপর (আরবি) ও (আরবি) ইযাফাতের পেশ উড়িয়ে দেয়ার কারণে তার পরের ও আগের হুকুম আল্লাহর মর্জির উপর ন্যস্ত।

মহান আল্লাহ বলেনঃ “আর সেই দিন মুমিনরা হর্ষোৎফুল্ল হবে, আল্লাহর সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।”

অধিকাংশ আলেমের মতে বদরের যুদ্ধের দিন রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করেছিল। ইবনে আব্বাস (রাঃ), সুদ্দী (রঃ), সাওরী (রঃ) এবং আবু সাঈদ (রঃ) একথাই বলেন। অন্য একটি দলের মত এই যে, এ বিজয়

হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন সংঘটিত হয়েছিল। ইকরামা (রঃ), যুহরী (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ)-এর উক্তি এটাই। অন্যান্যরা বলেছেনঃ রোমক সম্রাট কায়সার মানত করেছিলেন যে, যদি তিনি পারস্য জয় করতে পারেন তবে তিনি পায়ে হেঁটে বায়তুল মুকাদ্দাস যিয়ারত করবেন। সুতরাং তিনি তাঁর এ মানত পূর্ণ করেছিলেন। তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছে সেখানেই আছেন এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পবিত্র পত্র তাঁর হাতে আসে, যা তিনি দাহ্ইয়া কালবী (রাঃ)-এর মাধ্যমে বসরার শাসনকর্তার নিকট পাঠিয়েছিলেন এবং সে তা সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছিল। পত্রটি তাঁর হস্তগত হওয়া মাত্রই তিনি ঐ সময় সিরিয়ায় অবস্থানরত হিজাযী আরবদেরকে তাঁর কাছে ডেকে পাঠান। তাদের মধ্যে আবু সুফিয়ান সাখর ইবনে হারব উমুভীও ছিলেন। কুরায়েশদের অন্যান্য বড় বড় নেতৃবর্গও হাযির ছিল। সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাদের সবকেই নিজের সামনে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমাদের মধ্যে তাঁর (রাসূলুল্লাহর সঃ) সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয় কে আছে?” আবু সুফিয়ান (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ ‘নবুওয়াতের দাবীদারের আমিই সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়।” সম্রাট তখন তাঁকে সামনে বসালেন এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে তার পিছনে বসিয়ে দিলেন এবং তাদেরকে বললেনঃ “আমি একে নবুওয়াতের দাবীদার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করবো। সে যদি উত্তরে কোন মিথ্যা কথা বলে তবে তোমরা সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করবে।” আবু সুফিয়ান (রাঃ) বলেনঃ “আমার যদি এ ভয় না থাকতো যে, আমি মিথ্যা বললে এরা তা ধরিয়ে দেবে এবং মিথ্যাগুলো আমার গাড়ে চাপিয়ে দেবে তবে আমি অবশ্যই মিথ্যা কথা বলতাম।”

হিরাক্লিয়াস রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বংশ ও স্বভাব চরিত্র ইত্যাদি সম্পর্কে অনেকগুলো প্রশ্ন করেন,। প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি প্রশ্ন এও ছিলঃ “তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেন কি?” উত্তরে আবু সুফিয়ান (রাঃ) বলেনঃ “আজ পর্যন্ত তো তিনি কখনো চুক্তিভঙ্গ, ওয়াদা খেলাফী, বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি করেননি। বর্তমানে আমাদের সাথে তাঁর একটি চুক্তি রয়েছে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত তিনি কি করেন?” আবু সুফিয়ান (রাঃ) তাঁর এ কথার দ্বারা হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। এই সন্ধির একটি শর্ত ছিল এই যে, দশ বছর পর্যন্ত কুরায়েশ ও নবী (সঃ)-এর মধ্যে কোন যুদ্ধ হবে না। এ ঘটনাটি এই কথারই বড় দলীল যে, রোমকরা পারসিকদের উপর হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর জয়লাভ করেছিল। কেননা, কায়সার হুদায়বিয়ার সন্ধির পরে তাঁর মানত পূর্ণ করেছিলেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। কিন্তু যারা বলে যে, রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করেছিল বদরের যুদ্ধের বছর, তারা জবাবে এ কথা বলতে পারে যে, যেহেতু রোমের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছিল এবং উৎপাদন হ্রাস ও অনাবাদ বেড়ে গিয়েছিল, সেই হেতু হিরাক্লিয়াস দেশের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চার বছর পর্যন্ত তাঁর পূর্ণ চেষ্টা ও মনোযোগ কাজে লাগিয়ে ছিলেন। এর পর দেশের সুখ-শান্তি ফিরে আসলে তিনি তার মানত পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। এ মতানৈক্য এমন বড় কথা কিছু নয়। অবশ্যই রোমকদের বিজয়ে মুসলমানরা খুশী হয়েছিলেন। কেননা, আর যাই হালে না কেন তারা আহলে কিতাব তো ছিল। পক্ষান্তরে তাদের প্রতিপক্ষ পারসিকরা ছিল অগ্নি উপাসক। কিতাবের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। কাজেই মুসলমানরা যে পারসিকদের বিজয় লাভে অসন্তুষ্ট হবেন এবং রোমকদের বিজয় লাভে খুশী হবেন এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “অবশ্য মুমিনদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইয়াহুদী ও মুশরিকদেরকেই তুমি সর্বাধিক উগ্র দেখবে এবং যারা বলে, আমরা খৃষ্টান, মানুষের মধ্যে তাদেরকেই তুমি মুমিনদের নিকটতর বন্ধুরূপে দেখবে, কারণ তাদের মধ্যে বহু পণ্ডিত ও সংসারবিরাগী আছে, আর তারা অহংকারও করে। রাসূল (সঃ)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যখন তারা শ্রবণ করে তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্যে তুমি তাদের চক্ষু অশ্রু বিগলিত দেখবে। তারা বলে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্যবহদের তালিকাভুক্ত করুন।” (৫:৮২-৮৩) তাই মহান আল্লাহ এখানে বলেছেনঃ সেই দিন মুমিনরা হর্ষোৎফুল্ল হবে আল্লাহর সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, দয়ালু।

হযরত যুবায়ের কালাবী (রাঃ) বলেনঃ “আমি রোমকদের উপর পারসিকদের বিজয়, আবার পারসিকদের উপর রোমকদের বিজয়, অতঃপর রোমক ও পারসিক উভয়ের উপর মুসলমানদের বিজয় মাত্র পনেরো বছরের মধ্যে সংঘটিত হতে স্বচক্ষে দেখেছি।”এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন।

আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আল্লাহ শত্রুদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে পরাক্রমশালী এবং প্রিয় বান্দাদের ভুল-ভ্রান্তিকে উপেক্ষা করার ব্যাপারে পরম দয়ালু।

মুসলমানদেরকে খবর দেয়া হয়েছে যে, রোমকরা সত্বরই পারসিকদের উপর জয়লাভ করবে, এটা আল্লাহ প্রদত্ত খবর ও ওয়াদা। এটা আল্লাহর ফায়সালা। এটা মিথ্যা হওয়া অসম্ভব। যারা হকের নিকটবর্তী, তাদেরকে আল্লাহ হক হতে দূরে অবস্থানকারীদের উপর সাহায্য দান করে থাকেন। অবশ্য আল্লাহর কর্মপন্থা মানুষ স্বল্প জ্ঞানে বুঝতে পারে না।

অনেক লোলে আছে যারা বৈষয়িক জ্ঞান খুব ভাল রাখে। এক মিনিটেই সে সবকিছু হৃদয়ঙ্গম করে নেয়। আবার তা নিয়ে গবেষণা করে, ওর ভাল-মন্দ, লাভ-লোকসান ভালরূপে উপলব্ধি করে। এক নজরে ওর উঁচু-নীচু দেখে নিতে পারে। দুনিয়ার কাজ-কারবার ও হিসাব-নিকাশ খুব ভাল করে দেখে নেয়। কিন্তু তারা দ্বীনী কাজে এবং আখিরাতের কাজে অত্যন্ত বোেকা ও মূর্খ হয়ে থাকে। সহজ সরল হলেও তা তার বুঝে আসে না। আখিরাত সম্পর্কে না সে চিন্তা ভাবনা করে, না তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার অভ্যাস করে। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেছেন যে, অনেক লোক আছে যারা ঠিকমত নামাযও পড়তে পারে না, অথচ টাকা পয়সা হাতে নেয়া মাত্র ওজন বলে দিতে পারে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবি)-এ আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছেঃ কাফিররা দুনিয়ার সমৃদ্ধি ও আঁকজমক সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখে, কিন্তু দ্বীন সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞ এবং আখিরাত হতে উদাসীন।

Quran Mazid
go_to_top
Quran Mazid
Surah
Juz
Page
1
Al-Fatihah
The Opener
001
2
Al-Baqarah
The Cow
002
3
Ali 'Imran
Family of Imran
003
4
An-Nisa
The Women
004
5
Al-Ma'idah
The Table Spread
005
6
Al-An'am
The Cattle
006
7
Al-A'raf
The Heights
007
8
Al-Anfal
The Spoils of War
008
9
At-Tawbah
The Repentance
009
10
Yunus
Jonah
010
11
Hud
Hud
011
12
Yusuf
Joseph
012
13
Ar-Ra'd
The Thunder
013
14
Ibrahim
Abraham
014
15
Al-Hijr
The Rocky Tract
015
16
An-Nahl
The Bee
016
17
Al-Isra
The Night Journey
017
18
Al-Kahf
The Cave
018
19
Maryam
Mary
019
20
Taha
Ta-Ha
020
21
Al-Anbya
The Prophets
021
22
Al-Hajj
The Pilgrimage
022
23
Al-Mu'minun
The Believers
023
24
An-Nur
The Light
024
25
Al-Furqan
The Criterion
025
26
Ash-Shu'ara
The Poets
026
27
An-Naml
The Ant
027
28
Al-Qasas
The Stories
028
29
Al-'Ankabut
The Spider
029
30
Ar-Rum
The Romans
030
31
Luqman
Luqman
031
32
As-Sajdah
The Prostration
032
33
Al-Ahzab
The Combined Forces
033
34
Saba
Sheba
034
35
Fatir
Originator
035
36
Ya-Sin
Ya Sin
036
37
As-Saffat
Those who set the Ranks
037
38
Sad
The Letter "Saad"
038
39
Az-Zumar
The Troops
039
40
Ghafir
The Forgiver
040
41
Fussilat
Explained in Detail
041
42
Ash-Shuraa
The Consultation
042
43
Az-Zukhruf
The Ornaments of Gold
043
44
Ad-Dukhan
The Smoke
044
45
Al-Jathiyah
The Crouching
045
46
Al-Ahqaf
The Wind-Curved Sandhills
046
47
Muhammad
Muhammad
047
48
Al-Fath
The Victory
048
49
Al-Hujurat
The Rooms
049
50
Qaf
The Letter "Qaf"
050
51
Adh-Dhariyat
The Winnowing Winds
051
52
At-Tur
The Mount
052
53
An-Najm
The Star
053
54
Al-Qamar
The Moon
054
55
Ar-Rahman
The Beneficent
055
56
Al-Waqi'ah
The Inevitable
056
57
Al-Hadid
The Iron
057
58
Al-Mujadila
The Pleading Woman
058
59
Al-Hashr
The Exile
059
60
Al-Mumtahanah
She that is to be examined
060
61
As-Saf
The Ranks
061
62
Al-Jumu'ah
The Congregation, Friday
062
63
Al-Munafiqun
The Hypocrites
063
64
At-Taghabun
The Mutual Disillusion
064
65
At-Talaq
The Divorce
065
66
At-Tahrim
The Prohibition
066
67
Al-Mulk
The Sovereignty
067
68
Al-Qalam
The Pen
068
69
Al-Haqqah
The Reality
069
70
Al-Ma'arij
The Ascending Stairways
070
71
Nuh
Noah
071
72
Al-Jinn
The Jinn
072
73
Al-Muzzammil
The Enshrouded One
073
74
Al-Muddaththir
The Cloaked One
074
75
Al-Qiyamah
The Resurrection
075
76
Al-Insan
The Man
076
77
Al-Mursalat
The Emissaries
077
78
An-Naba
The Tidings
078
79
An-Nazi'at
Those who drag forth
079
80
Abasa
He Frowned
080
81
At-Takwir
The Overthrowing
081
82
Al-Infitar
The Cleaving
082
83
Al-Mutaffifin
The Defrauding
083
84
Al-Inshiqaq
The Sundering
084
85
Al-Buruj
The Mansions of the Stars
085
86
At-Tariq
The Nightcommer
086
87
Al-A'la
The Most High
087
88
Al-Ghashiyah
The Overwhelming
088
89
Al-Fajr
The Dawn
089
90
Al-Balad
The City
090
91
Ash-Shams
The Sun
091
92
Al-Layl
The Night
092
93
Ad-Duhaa
The Morning Hours
093
94
Ash-Sharh
The Relief
094
95
At-Tin
The Fig
095
96
Al-'Alaq
The Clot
096
97
Al-Qadr
The Power
097
98
Al-Bayyinah
The Clear Proof
098
99
Az-Zalzalah
The Earthquake
099
100
Al-'Adiyat
The Courser
100
101
Al-Qari'ah
The Calamity
101
102
At-Takathur
The Rivalry in world increase
102
103
Al-'Asr
The Declining Day
103
104
Al-Humazah
The Traducer
104
105
Al-Fil
The Elephant
105
106
Quraysh
Quraysh
106
107
Al-Ma'un
The Small kindnesses
107
108
Al-Kawthar
The Abundance
108
109
Al-Kafirun
The Disbelievers
109
110
An-Nasr
The Divine Support
110
111
Al-Masad
The Palm Fiber
111
112
Al-Ikhlas
The Sincerity
112
113
Al-Falaq
The Daybreak
113
114
An-Nas
Mankind
114
Settings