Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 97
Saheeh International
Say, "Whoever is an enemy to Gabriel - it is [none but] he who has brought the Qur'an down upon your heart, [O Muhammad], by permission of Allah, confirming that which was before it and as guidance and good tidings for the believers."
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
ফিরিশতাগণের সাথে শত্রুতা পোষণের পরিণতি
ইমাম আবূ জাফর তাবারী (রহঃ) বলেনঃ ‘মুফাসসিরগণ এতে একমত যে, যখন ইয়াহুদীরা জিবরাঈল (আঃ)-কে তাদের শত্রু এবং মীকাঈল (আঃ) কে তাদের বন্ধু বলেছিলো তখন তাদের এ কথার উত্তরে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর তাবারী ২/৩৭৭) কিন্তু কেউ কেউ বলেন যে, নবুওয়াতের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে তাদের যে কথোপকথন হয়েছিলো তার মধ্যে তারা এ কথা বলেছিলো।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নবুওয়াতের ওপর কতোগুলো প্রমাণ
ইবনে ‘আব্বাস (রহঃ) বলেন যে ইয়াহুদীদের একটি দল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলে, আমরা আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করছি যার সঠিক উত্তর নবী ছাড়া অন্য কেউ দিতে পারেনা। আপনি সত্য নবী হলে এর উত্তর দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আচ্ছা ঠিক আছে যা ইচ্ছা তাই প্রশ্ন করো। কিন্তু অঙ্গিকার করো যদি আমি ঠিক ঠিক উত্তর দেই তবে তোমরা আমার নাবুওয়াতকে স্বীকার করে আমার অনুসারী হবে তো? তারা অঙ্গিকার করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন ইয়া‘কূব (আঃ) এর মতো মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তাদের নিকট হতে সু-দৃঢ় প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে তাদেরকে প্রশ্ন করার অনুমতি প্রদান করেন। তারা বলে, প্রথমে এটা বলুন তো ইয়া‘কূব (আঃ) নিজের ওপরে কোন জিনিসটি হারাম করে নিয়েছিলেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন, শোন! যখন ইয়া‘কূব (আঃ) ভীষণভাবে ‘আরকুনসিনা’ রোগে আক্রান্ত হোন, তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে মহান আল্লাহ যদি তাকে এ রোগ হতে আরোগ্য দান করেন তবে তিনি উটের গোস্ত খাওয়া ও উষ্ট্রীর দুধ পান করা পরিত্যাগ করবেন। আরএ দু’টি ছিলো তার খুবই লোভনীয় ও প্রিয় বস্তু। অতঃপর তিনি সুস্থ হয়ে গেলে এ দুটো জিনিস নিজের ওপর হারাম করে নেন। তোমাদের ওপর সেই মহান আল্লাহ্র শপথ দিয়ে বলছি, যিনি মূসা (আঃ) এর ওপর তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলেন, সত্য করে বলতো এটা সঠিক নয় কি? তারা শপথ করে বললো, হ্যাঁ, নিশ্চিয়ই তা সত্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বললেন, হে মহান আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর তারা বলে, আচ্ছা বলুন তো তাওরাতের মধ্যে যে নিরক্ষর নবীর সংবাদ রয়েছে তার বিশেষ একটি নিদর্শন কি আর তার কাছে কোন্ ফিরিশতা ওয়াহী নিয়ে আসেন? তিনি বললেন তার বিশেষ নিদর্শন এই যে "تنام عيناه ولا ينام قلبه" যখন তার চক্ষু ঘুমিয়ে থাকে তখন তার অন্তর জাগ্রত থাকে। তোমাদেরকে সেই প্রভুর শপথ যিনি মূসা (আঃ) এর ওপর তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলেন, বলতো এটা সঠিক উত্তর নয় কি? তারা সবাই শপথ করে বললো, আপনি সম্পূর্ণ সঠিক উত্তর দিয়েছেন তিনি বলেন, হে মহান আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। তারা বলে এবার আমাদেরকে দ্বিতীয় অংশের উত্তর দিন।এটাই আলোচনার সমাপ্তি টানবো। তিনি বলেন আমার বন্ধু জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট ওয়াহী নিয়ে আসেন এবং তিনি সমস্ত নবীর ওপরও ওয়াহী নিয়ে আসতেন। সত্য করে বলো এবং শপথ করে বলো আমার এ উত্তরটিও সঠিক নয় কি? তারা শপথ করে বললো, হ্যাঁ, উত্তর সঠিকই বটে, কিন্তু তিনি আমাদের শত্রু। কেননা তিনিই কঠোরতা ও হত্যাকাণ্ডের কারণসূমহ ইত্যাদি নিয়ে আসেন। এজন্য আমরা তাকে মানি না এবং আপনাকে ও মানবো না। তবে হ্যাঁ, যদি আপনার নিকট আমাদের বন্ধু মীকাইল (আঃ) ওয়াহী নিয়ে আসতেন তবে আমরা আপনার সত্যতা স্বীকার করতাম আপনার অনুসারী হতাম। তাদের একথার উত্তরে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কোন কোন বর্ণনায় এও আছে যে তারা এটাও প্রশ্ন করেছিলো যে, বজ্র কি জিনিস? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন তিনি একজন ফিরিশতা। তিনি মেঘের ওপর নিযুক্ত রয়েছেন এবং মহান আল্লাহ্র আদেশেই মেঘকে এদিক ওদিক হাকিয়ে নিয়ে যান। তারা বলে এ গর্জনের শব্দ কি? তিনি বলেন, এটা ঐ ফিরিশতারই শব্দ। (মুসনাদ আহমাদ ইত্যাদি)
সহীহুল বুখারীর একটি বর্ণনায় আছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় আগমন করেন সেই সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) স্বীয় বাগানে অবস্থান করছিলেন এবং তিনি ইয়াহুদী ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন সংবাদ শুনেই তিনি তাঁর নিকট উপস্থিত হোন এবং বলেনঃ ‘জনাব, আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করছি যার উত্তর নবী ছাড়া কেউই জানে না। বলুন, কিয়ামতের প্রথম লক্ষণ কি? জান্নাতবাসীদের প্রথম খাবার কি? এবং কোন জিনিস সন্তানকে কখনো মায়ের দিকে আকৃষ্ট করে এবং কখনো বাপের দিকে?’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর এখনই জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বলে গেলেন।’ ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম বলেনঃ ‘জিবরাঈল তো আমাদের শত্রু।’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াতটি পাঠ করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ
"أما أول أشراط الساعة فنار تحشر الناس من المشرق إلى المغرب، وأما أول طعام يأكله أهل الجنة فزيادة كبد الحوت، وإذا سبق ماء الرجل ماء المرأة نزع الولد، وإذا سبق ماء المرأة [ماء الرجل] (2) نزعت".
‘কিয়ামতের প্রথম লক্ষণ এই যে, এক আগুন বের হবে যা জনগণকে পূর্ব দিক হতে পশ্চিম দিকে নিয়ে একত্রিত করবে। জান্নাতবাসীদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা। আর যখন স্বামীর বীর্য স্ত্রীর বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, আর যখন স্ত্রীর বীর্য স্বামীর বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।’ এ উত্তর শুনেই ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) মুসলিম হয়ে যান এবং পাঠ করেনঃ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ الله
‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি মহান আল্লাহ্র রাসূল।’
অতঃপর তিনি বলেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ইয়াহুদীরা খুবই নির্বোধ ও অস্থির প্রকৃতির লোক। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করার পূর্বেই যদি তারা আমার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ জেনে নেয় তাহলে তারা আমার সম্বন্ধে খারাপ মন্তব্য করবে। সুতরাং আপনি তাদেরকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করুন।’ অতঃপর ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আগমন করলে তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘তোমাদের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলেঃ তিনি আমাদের মধ্যে উত্তম লোক ও উত্তম লোকের ছেলে, তিনি আমাদের নেতা ও নেতার ছেলে।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘তিনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তাহলে তোমাদের মত কি?’ তারা বলেঃ ‘মহান আল্লাহ তাঁকে এটা হতে রক্ষা করুন।’ অতঃপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বের হয়ে আসেন তিনি এতোক্ষণ আড়ালে ছিলেন এবং পাঠ করেনঃ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রাসূল।’ তখনই তারা বলে উঠেঃ ‘সে আমাদের মধ্যে খারাপ লোক এবং খারাপ লোকের ছেলে, সে অত্যন্ত নিম্ন স্তরের লোক।’ ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) তখন বলেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি এই ভয়ই করছিলাম।’ (সহীহুল বুখারী ৮/৪৪৮০, ফাতহুল বারী ৭/৩১৯, ৮/১৫) একমাত্র ইমাম বুখারী (রহঃ) এ হাদীসটি বর্ণনাকারীদের ক্রমধারাসহ বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) ও মুসলিম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে আরো একটি সূত্রে বর্ণনা করেছেন। (সহীহুল বুখারী ৩৩২৯, ৩৯১১, ৩৯৩৮; সহীহ মুসলিম ৩১৫)
জিবরাঈল এর অর্থ
ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘ইকরামাহ থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, إيل শব্দের অর্থ হলো ‘আল্লাহ’ আর إسرا শব্দের অর্থ হলো বান্দা। অতএব জিবরাঈল শব্দের অর্থ হলো عبد الله তথা মহান আল্লাহ্র বান্দা। আর মীকাঈলের নাম عبيد الله। ইমাম আহমাদ (রহঃ) ও ‘আলী ইবনে হুসাইন (রহঃ)-এর সূত্রে এমনটি বর্ণনা করেছেন।
কেউ কেউ বলেন, إِيْل শব্দের অর্থ ‘দাস’ এবং এর পূর্বের শব্দগুলো মহান আল্লাহ্র নাম। যেমন ‘আরবী ভাষায় عَبْدُ اللهِ، عَبْدُ الرَّحْمٰن، عَبْدُ الْمَلِكِ، عَبْدُ الْقُدُّوْسِ، عَبْدُ السَّلَامِ، عَبْدُ الْكَافِى، عَبْدُ الْجَلِيْلِ ইত্যাদি। عَبْد শব্দটি সব জায়গায় একই থাকছে এবং মহান আল্লাহ্র নাম পরিবর্তিত হচ্ছে। এরকমই إِيْل প্রত্যেক স্থলে ঠিক আছে, আর মহান আল্লাহ্র উত্তম নামগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। ‘আরবী ভাষা ছাড়া অন্যান্য ভাষায় مُضَاف إِلَيْهِ পূর্বে এবং مُضًاف পরে এসে থাকে। এ নিয়ম এখানেও রয়েছে। যেমনঃ جِبْرَائِيْل، مِيْكَائِيْل، إِسْرَافِيْل، عَزْرَائِيْل ইত্যাদি।
উক্ত ঘটনাবলী প্রসঙ্গে দ্বিতীয় উক্তি
এখন মুফাসসিরগণের দ্বিতীয় দলের দালীল দেয়া হচ্ছে, যারা বলেন যে এ আলোচনা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর সাথে হয়েছিলো। শা‘বী (রহঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ) ‘রাওহা’ নামক স্থানে এসে দেখেন যে জনগণ দৌড়াদৌড়ি করে একটি পাথরের ঢিবির পার্শে গিয়ে সালাত আদায় করছে। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ ব্যাপার কি? উত্তর আসে যে, এখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করেছিলেন। এতে তিনি অসন্তুষ্ট হোন এই জন্য যে, যেখানেই সময় হতো সেখানেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত পড়ে নিতেন, আর তারপর সেখান হতে চলে যেতেন। এখন ঐ স্থানগুলোকে বরকতময় মনে করে অযথা সেখানে গিয়ে সালাত পড়তে কে বলেছে? অতঃপর তিনি অন্য প্রসঙ্গ উত্থাপ করেন তিনি বলেন, আমি মাঝে মাঝে ইয়াহুদীদের সভায় যোগদান করতাম এবং দেখতাম যে কিভাবে কুর’আন তাওরাতের এবং তাওরাত কুরআনের সত্যতা স্বীকার করে থাকে। ইয়াহুদীরাও আমার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে থাকে এবং প্রায়ই তাদের সাথে আমার আলোচনা হতো। একদিন আমি তাদের সাথে কথা বলছি এমন সময় দেখি যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ পথ দিয়ে চলে যাচ্ছেন। তারা আমাকে বললো ঐ যে তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলে যাচ্ছেন। আমি বললাম, আচ্ছা আমিও যাই। কিন্তু তোমাদের এক আল্লাহ্র শপথ দিয়ে বলছি তোমরা মহান আল্লাহ্র সত্যতাকে স্মরণ করে, তাঁর নি‘য়াতরাযীর প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ্র যে কিতাব বিদ্যমান রয়েছে এর প্রতি খেয়াল করে সেই মহান প্রতিপালকের নামে শপথ করে বলতো তোমরা কি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আল্লাহ্র রাসূল বলে স্বীকার করো না? তারা সবাই নীরব হয়ে যায়। তাদের বড় ‘আলেম যে তাদের মধ্যে পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলো এবং তাদের নেতাও ছিলো, তাদেরকে সে বলে, তোমাদের এই রূপ কঠিন কসম দেয়ার পরও তোমরা স্পষ্ট ও সঠিক উত্তর দিচ্ছো না কেন? তারা তাদের জ্ঞানী লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললো, জনাব! আপনি আমাদের প্রধান, সুতরাং আপনিই এর উত্তর দিন। পাদরী তখন বললো, তাহলে শুনুন জনাব ! আপনি খুব বড় শপথ দিয়েছেন। এটা তো সত্যিই যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে মহান আল্লাহ্র রাসূল তা আমরা অন্তর থেকেই জানি। আমি বললাম, আফসোস ! জানো তবে মানো না কেন? সে বলে, এর একমাত্র কারণ এই যে, তার নিকট যে বার্তাবাহক আসেন, তিনি হচ্ছেন জিবরাঈল (আঃ)। আর তিনি অত্যন্ত কঠোর, সংকীর্ণমনা, কঠিন শাস্তি ও কষ্টের ফিরিশতা। তিনি আমাদের শত্রু আর আমরা তার শত্রু। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যদি মীকাঈল (আঃ) আসতেন, যিনি দয়া, নম্রতা ও শান্তির ফেরেশতা তবে আমরা তাকে স্বীকার করতে কোন দ্বিধা বোধ করতাম না। তখন আমি বললাম, আচ্ছা বলতো মহান আল্লাহ্র নিকট এই দু’জনের কোন সম্মান ও মর্যাদা আছে কি? সে বলে, একজন মহান আল্লাহ্র ডান দিকে আছেন এবং অন্য জন তাঁর বাম দিকে আছেন। আমি বললাম, সেই মহান আল্লাহ্র শপথ! যিনি ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই। যে তাদের কোন একজনের শত্রু সে আল্লাহ পাকের শত্রু এবং অপর ফেরেশতারও শত্রু। জিবরাঈল (আঃ) এর শত্রু কখনো মীকাঈল (আঃ) এর বন্ধু হতে পারে না আবার মীকাইল (আঃ) এর শত্রুও জিবরাঈল (আঃ) এর বন্ধু হতে পারে না। তাদের দু’জনের কেউই মহান আল্লাহ্র অনুমতি ছাড়া পৃথিবীতে আসতে পারেন না বা কোন কাজ করতে পারেন না। মহান আল্লাহ্র শপথ ! তোমাদের প্রতি আমার কোনো লোভ এবং ভয়ও নেই। জেনে রেখো, যে মহান আল্লাহ্র শত্রু, তাঁর রাসূলগণের শত্রু, ফিরিশতাগণের শত্রু, জিবরাঈল (আঃ) ও মীকাঈল (আঃ)-এর শত্রু,স্বয়ং মহান আল্লাহও এরূপ কাফিরদের শুত্র“। এ বলে আমি চলে আসি। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি আমাকে দেখেই বললেন, হে খাত্তাব এর পুত্র! আমার ওপর নতুন ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছে। আমি বললাম, হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তা আমাকে শুনিয়ে দিন। তিনি তখন উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করে শুনিয়ে দেন। আমি তখন বলি হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার বাপ মা আপনার প্রতি কুরবান হোক! এখনই ইয়াহুদীদের সাথে আমার এ কথাগুলো নিয়েই আলোচনা চলছিলো। আপনাকে এ সংবাদ দেয়ার জন্যই আমি হাজির হয়েছি। কিন্তু আমার আগমনের পূর্বেই সেই সূক্ষ্ম দর্শী ও সর্ব বিদিত মহান আল্লাহ আপনার নিকট সংবাদ পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। (হাদীসটি য‘ঈফ। তাফসীরে ত্বাবারী-১/১৬১১, মুসনাদে ইবনে আবি হাতিম) কিন্তু এ বর্ণনাটি মুনকাতা‘ এবং মুত্তাসিল নয়। কেননা শা‘বী (রহঃ) ‘উমার (রাঃ) এর যুগ পাননি।
কোন ফিরিশতাকে অন্য ফিরিশতার ওপর অগ্রাধিকার দেয়া, কোন নবীকে অন্য নবীগণের ওপর অগ্রাধিকার দেয়ার মতই, যা ঈমান না আনার পর্যায়ভুক্ত
আয়াতটির ভাবার্থ এই যে, জিবরাঈল (আঃ) মহান আল্লাহ্র একজন বিশ্বস্ত ফেরেশতা। মহান আল্লাহ্র নির্দেশক্রমে তিনি তাঁর বাণী নবীগণের নিকট পৌঁছানোর কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ফেরেশতার মধ্যে তিনি মহান আল্লাহ্র বার্তাবাহক। কোন একজন রাসূলের প্রতি শত্রুতা পোষণকারী সমস্ত রাসূলের প্রতি শত্রুতা পোষণকারীর অনুরূপ। যেমন একজন রাসূলের ওপর ঈমান আনলেই সব রাসূলের ওপর ঈমান আনা হয়, অনুরূপভাবে একজন রাসূলকে অস্বীকার করা মানেই সব রাসূলকেই অস্বীকার করা। যারা কোন কোন রাসূলকে অস্বীকার করে থাকে, স্বয়ং মহান আল্লাহই তাদেরকে কাফের বলেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ
﴿اِنَّ الَّذِیْنَ یَكْفُرُوْنَ بِاللّٰهِ وَ رُسُلِه وَ یُرِیْدُوْنَ اَنْ یُّفَرِّقُوْا بَیْنَ اللّٰهِ وَ رُسُلِه وَ یَقُوْلُوْنَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَّ نَكْفُرُ بِبَعْضٍ﴾
‘নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি অবিশ্বাস করে এবং মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে ইচ্ছা করে এবং বলে, আমরা কতিপয়কে বিশ্বাস করি ও কতিপয়কে অবিশ্বাস করি। (৪ নং সূরা নিসা, আয়াত নং ১৫০)
অতএব এমন আরো অনেক আয়াতে ঐ ব্যক্তিকে স্পষ্টভাবে কাফির বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোন একজন নবীকে অমান্য করে থাকে। এরকমই যে ব্যক্তি জিবরাঈল (আঃ) এর শত্রু সে মহান আল্লাহ্রও শত্রু। কেননা তিনি স্বেচ্ছায় আসেন না। কুর’আনুল কারীমে ঘোষিত হচ্ছেঃ
﴿وَ مَا نَتَنَزَّلُ اِلَّا بِاَمْرِ رَبِّكَ﴾ ‘আমরা আপনার রবের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না।’ (১৯ নং সূরা মারইয়াম, আয়াত নং ৬৪)
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَ اِنَّه لَتَنْزِیْلُ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَؕ۱۹۲ نَزَلَ بِهِ الرُّوْحُ الْاَمِیْنُۙ۱۹۳ عَلٰى قَلْبِكَ لِتَكُوْنَ مِنَ الْمُنْذِرِیْنَ﴾
‘নিশ্চয়ই এই আল কুর’আন জগতসমূহের রাব্ব হতে অবতারিত। জিবরাঈল এটা নিয়ে অবতরণ করেছে, যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পারো।’ (২৬ নং সূরা শু ‘আরা, আয়াত নং ১৯২-১৯৪)
সহীহুল বুখারীর ‘হাদীসে কুদুসীতে আছে, মহান আল্লাহ বলেনঃ
"من عادى لي وليا فقد بارزني بالحرب"
‘আমার বন্ধুদের প্রতি শত্রুতা পোষণকারী আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী।’ (ফাতহুল বারী ১১/৩৪৮) কুর’আনুল কারীমের এটিও একটি বিশেষত্ব যে, এটি পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে এবং ঈমানদারগণের জন্য এটি হিদায়াত স্বরূপ, আর তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে থাকে। মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَ نُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِیْنَ﴾
‘আমি অবতীর্ণ করি কুর’আন, যা বিশ্বাসীদের জন্য সুচিকিৎসা ও দয়া।’ (১৭ নং সূরা ইসরাহ, আয়াত নং ৮২)
রাসূলগণের মধ্যে মানুষ রাসূল ও ফিরিশতা রাসূল সবাই জড়িত রয়েছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿اَللّٰهُ یَصْطَفِیْ مِنَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ رُسُلًا وَّ مِنَ النَّاسِ﴾
‘মহান আল্লাহ ফিরিশতাদের মধ্যে হতে মনোনীত করেন বাণীবাহক এবং মানুষের মধ্যে হতেও।’ (২২ নং সূরা হাজ্জ, আয়াত নং ৭৫)
জিবরাঈল (আঃ) ও মীকাঈল (আঃ) ফেরেশতারই অন্তর্ভুক্ত। তথাপি বিশেষভাবে তাঁদের নাম নেয়ার কারণ হচ্ছে যেন এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে, যে জিবরাঈল (আঃ) এর শত্রু সে মীকাঈল (আঃ)-এরও শত্রু, এমনকি মহান আল্লাহ্রও শত্রু।
মাঝে মাঝে মীকাঈল (আঃ) ও নবীগণের কাছে এসেছেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে প্রথম প্রথম এসেছিলেন। কিন্তু ঐ কাজে নিযুক্ত রয়েছেন জিবরাঈল (আঃ)। যেমন মীকাঈল (আঃ) নিযুক্ত রয়েছেন গাছপালা উৎপাদন ও বৃষ্টি বর্ষণ ইত্যাদি কাজে। আর ইসরাফীল (আঃ) নিযুক্ত রয়েছেন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়ার কাজে।
একটি বিশুদ্ধ হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জেগে নিম্নের দু‘আটি পাঠ করতেনঃ
اَللّٰهُمَّ رَبَّ جَبْرَائِيلَ، وَمِيكَائِيلَ، وَإِسْرَافِيلَ، فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ، اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ، إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ.
‘হে মহান আল্লাহ, হে জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের রাব্ব! হে আকাশ ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টিকর্তা এবং প্রকাশ্য ও গোপনীয় বিষয়সমূহের জ্ঞাতা! আপনার বান্দাদের মতভেদের ফয়সালা আপনিই করে থাকেন। হে মহান আল্লাহ! মতভেদপূর্ণ বিষয়ে আপনার হুকুমে আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আপনি যাকে চান তাকে সরল-সঠিক পথ দেখিয়ে থাকেন।’ (সহীহ মুসলিম ১/৫৩৪)
এরূপ বলা হচ্ছেঃ ‘যে মহান আল্লাহ্র বন্ধুর সাথে শত্রুতা করলো সে মহান আল্লাহ্র সাথে শত্রুতা করলো এবং যে মহান আল্লাহ্র শত্রু, মহান আল্লাহও তার শত্রু। আর স্বয়ং মহান আল্লাহ যার শত্রু তার কুফরী ও ধ্বংসের মধ্যে কোন সন্দেহ থাকতে পারে কি? সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, যা পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন আল্লাহ বলেনঃ "من عادى لي وليًّا فقد بارزني بالحرب".
‘আমার বন্ধুর সাথে শত্রুতাকারীর বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করছি। (ফাতহুল বারী ১১/৩৪৮) অন্য একটি হাদীসে আছেঃ "إني لأثأر لأوليائي كما يثأر الليث الحرب". আমি আমার বন্ধুদের প্রতিশোধ গ্রহণ করে থাকি। (হাদীসটি য‘ঈফ। আবূ না‘ঈম ফিল হিলইয়াহ- ১/১০) আর একটি হাদীসে আছেঃ "وَمَن كنتُ خَصْمَه خَصَمْتُه". ‘যার শত্রু স্বয়ং আমি হই তার ধংস অনিবার্য।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী-৪/২২৭, সুনান ইবনু মাজাহ-২/৪২৪২)
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings