2:83
وَإِذۡ أَخَذۡنَا مِيثَٰقَ بَنِىٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ لَا تَعۡبُدُونَ إِلَّا ٱللَّهَ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَانًا وَذِى ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَقُولُواۡ لِلنَّاسِ حُسۡنًا وَأَقِيمُواۡ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواۡ ٱلزَّكَوٰةَ ثُمَّ تَوَلَّيۡتُمۡ إِلَّا قَلِيلاً مِّنكُمۡ وَأَنتُم مُّعۡرِضُونَ٨٣
Saheeh International
And [recall] when We took the covenant from the Children of Israel, [enjoining upon them], "Do not worship except Allah ; and to parents do good and to relatives, orphans, and the needy. And speak to people good [words] and establish prayer and give zakah." Then you turned away, except a few of you, and you were refusing.
মহান আল্লাহ বানী ইসরাঈলের নিকট হতে যে প্রতিশ্রতি গ্রহণ করেছিলেন অত্র আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বানী ইসরাঈলের ওপর আরোপিত নির্দেশাবলী এবং তাদের নিকট হতে গ্রহণকৃত প্রতিশ্রুতির বর্ণনা তুলে ধরেছেন এবং তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যে, তারা যেন মহান আল্লাহ্র একাত্মবাদ মেনে নেয় এবং মহান আল্লাহ ছাড়া আর কারো ‘ইবাদত না করে। শুধুমাত্র বানী ইসরাঈল নয়, বরং সমস্ত মাখলূকের প্রতিই এ নির্দেশ রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ﴿وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِیْۤ اِلَیْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدُوْنِ﴾‘আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি তার প্রতি এই ওয়াহী ব্যতীত যে, আমি ছাড়া অন্য কোন মা ‘বূদ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ‘ইবাদত করো। (২১ নং সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং ২৫) তিনি আরো বলেনঃ ﴿وَ لَقَدْ بَعَثْنَا فِیْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ اجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ﴾‘প্রত্যেক জাতির কাছে আমি রাসূল পাঠিয়েছি এ সংবাদ দিয়ে যে, মহান আল্লাহ্র ‘ইবাদত করো আর তাগুতকে বর্জন করো। (১৬ নং সূরা নাহল, আয়াত নং ৩৬) সবচেয়ে বড় হক মহান আল্লাহ্রই, আর তাঁর যতোগুলো হক আছে তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে এই যে, তাঁরই ‘ইবাদত করতে হবে এবং তিনি ছাড়া আর কারো ‘ইবাদত করা যাবে না।মহান আল্লাহ্র হকের পর এখন বান্দাদের হকের কথা বলা হচ্ছে। বান্দাদের মধ্যে মা-বাবার হক সবচেয়ে বড় বলে প্রথমে এরই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ﴿اَنِ اشْكُرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیْكَ اِلَیَّ الْمَصِیْرُ﴾‘সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার মাতাপিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।’ (৩১ নং সূরা লুকমান, আয়াত নং ১৪) অন্যত্র তিনি বলেনঃ ﴿وَقَضٰى رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا﴾ ‘তোমার রাব্ব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ‘ইবাদত করবে না এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে।’ (১৭ নং সূরা ইসরাহ, আয়াত নং ২৩)﴿وَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰى حَقَّهٗ وَ الْمِسْكِیْنَ وَ ابْنَ السَّبِیْلِ﴾ ‘আত্মীয়-স্বজনকে দিবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও পর্যটককেও অর্থাৎ মুসাফিরকেও। (১৭ নং সূরা ইসরাহ, আয়াত নং ২৬)সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আছেঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রহঃ) জিজ্ঞেস করেনঃيا رسول الله، أي العمل أفضل؟ قال: "الصلاة على وقتها". قلت: ثم أي؟ قال: "بر الوالدين". قلت: ثم أيّ؟ قال: "الجهاد في سبيل الله"‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সর্বোত্তম ‘আমল কোনটি? তিনি বলেনঃ যথা সময়ে সালাত আদায় করো। জিজ্ঞেস করেনঃ তারপর কোনটি? তিনি বলেনঃ মা-বাবার খিদমত করা। জিজ্ঞেস করেনঃ এরপর কোনটি? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মহান আল্লাহ্র পথে জিহাদ করা। (সহীহুল বুখারী ২/৫২৭, সহীহ মুসলিম ১/১৩৭/৮৯। ফাতহুল বারী ৬/৫, সহীহ মুসলিম ১/৮৯) আর একটি সহীহ হাদীসে আছে, একটি লোক জিজ্ঞেস করেনঃيا رسول الله، من أبر؟ قال: "أمك". قال: ثم من ؟ قال: "أمك". قال: ثم من؟ قال: "أباك . ثم أدناك أدناك"‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কার সাথে সৎ ব্যবহার করবো?’ তিনি বলেনঃ ‘তোমার মায়ের সাথে।’ আবার জিজ্ঞেস করেনঃ ‘তারপর কার সাথে?’ তিনি বলেনঃ ‘তোমার বাবার সাথে এবং তারপরে অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের সাথে।’ (সহীহুল বুখারী- ১০/৫৯৭১, সহীহ মুসলিম ৪/২/১৯৭৪, সুনান ইবনে মাজাহ-২/৩৬৫৮, সুনান বায়হাক্বী-৮/২, মুসনাদে আহমাদ-২/৩২৭,৩২৮,৩৯১) সূরা নিসার নিম্ন আয়াতের তাফসীরে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।﴿ وَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْـًٔا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا﴾‘আর তোমরা মহান আল্লাহ্রই ‘ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কোন বিষয়ে অংশী স্থাপন করো না এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। (৪ নং সূরা নিসা, আয়াত নং ৩৬)হাসান বাসরী (রহঃ) বলেনঃ এর ভাবার্থ হচ্ছে তোমরা ভালো কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ হতে বিরত রাখো। আর সহনশীলতা ও ক্ষমা করার নীতি গ্রহণ করো। এটাই উত্তম চরিত্র যা গ্রহণ করা উচিত। (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/২৫৮)আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ"لا تحقرن من المعروف شيئًا، وإن لم تجد فَالْقَ أخاك بوجه منطلقকোন ভালো জিনিসকে ঘৃণা করো না, কিছু করতে না পারলেও অন্ততঃ তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাৎ করো। (সহীহ মুসলিম ৪/১৪৪/২০২৬, মুসনাদে আহমাদ ৫/১৭৩, তিরমিযী ৪/১৮৩৩) সুতরাং মহান আল্লাহ প্রথমে তাঁর ‘ইবাদতের নির্দেশ দেন, তারপর পিতা মাতার খিদমত করা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীনদের প্রতি সু-দৃষ্টি দেয়া এবং জনসাধারণের সাথে উত্তমভাবে কথা বলা ইত্যাদির নির্দেশ দেন। এরপর কতোগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরও আলোচনা করেন। যেমন বলেনঃ ‘সালাত আদায় করো, যাকাত দাও।’ তারপর এ সংবাদ দেন যে, তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং অল্প লোক ছাড়া তাদের অধিকাংশই অবাধ্য হয়ে যায়। এ উম্মাতকেও এই নির্দেশই দেয়া হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ﴿وَاعْبُدُوا اللّٰهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْـًٔا وَّبِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّبِذِی الْقُرْبٰى وَالْیَتٰمٰى وَالْمَسٰكِیْنِ وَالْجَارِ ذِی الْقُرْبٰى وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَابْنِ السَّبِیْلِ١ۙ وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَا﴾আর তোমরা মহান আল্লাহ্রই ‘ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কোন বিষয়ে অংশী স্থাপন করোনা এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করো এবং আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, দরিদ্র, সম্পর্কবিহীন প্রতিবেশী, পাশ্ববর্তী সহচর ও পথিক এবং তোমাদের দাস-দাসীদের সাথেও সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ অহঙ্কারী আত্মাভিমানীকে ভালোবাসেন না। (৪ নং সূরা নিসা, আয়াত নং ৩৬)এই উম্মাত অন্যান্য উম্মাতের তুলনায় এ সব নির্দেশ মানার ব্যাপারে এবং এর ওপর ‘আমল করার ব্যাপারে অনেক বেশি দৃঢ় প্রমাণিত হয়েছে।আসাদ ইবনে অদা‘আহ (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে সালাম দিতেন। ফলে তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো যে আপনি ইয়াহূদী-খ্রিষ্টানদেরকে সালাম দেন কেন? তিনি এর উত্তরে মহান আল্লাহ্র এ নির্দেশটি দালীল রূপে পেশ করে বলেন যেঃ وقولوالن س حسن ‘তোমরা জন সাধারণের সাথে উত্তম রূপে কথা বলো।’ এখানে উত্তম কথা দ্বারা সালামই উদ্দেশ্য। কিন্তু এ বর্ণনাটি গারীব। আমি (ইবনে কাসীর) বলবো এ হাদীসটি সহীহ হাদীসের সম্পূর্ণ উল্টো। কেননা সহীহ হাদীসে স্পষ্ট রূপে বিদ্যমান আছে যে সাহাবারা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের প্রথমত السلم عليكم বলতেন না। (আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীস রয়েছে যে, لاَ تَبْدَءُوا الْيَهُودَ وَلاَ النَّصَارَى بِالسَّلاَمِ فَإِذَا لاَ تَبْدَءُوا الْيَهُودَ وَلاَ النَّصَارَى بِالسَّلاَمِ فَإِذَا لَقِيتُمْ أَحَدَهُمْ فِى طَرِيقٍ فَاضْطَرُّوهُ إِلَى أَضْيَقِهِ ‘তোমরা প্রথমেই ইয়াহুদী-নাসারাদের সালাম দিয়ো না। বরং রাস্তায় তাদের সাথে সাক্ষাত ঘটলে রাস্তার এক পার্শ্ব দিয়ে সংকীর্ণ অবস্থায় যেতে বাধ্য করো। এ হাদীসটি রয়েছে সহীহ মুসলিম ৪/১৩/১৭০৭, সুনান আবূ দাউদ-৪/৫২০৫, জামি‘ তিরমিযী-৫/২৭০০, মুসনাদে আহমাদ ২/২৬৩, ২৬৬, ৩৪৬) আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
Arabic Font Size
30
Translation Font Size
17
Arabic Font Face
Help spread the knowledge of Islam
Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.
Support Us