Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 8
Saheeh International
And of the people are some who say, "We believe in Allah and the Last Day," but they are not believers.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৮-১০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা সূরার শুরুতে মু’মিন-মুত্তাকীদের সম্পর্কে আলোচনা করার পর তাদের বিপরীতে কাফিরদের কথা তুলে ধরেছেন, অতঃপর এ আয়াত থেকে পনের নং আয়াত পর্যন্ত যারা বাহ্যিক ঈমানের দাবিদার কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কাফির তাদের কথা আলোচনা করেছেন। এদেরকেই বলা হয় মুনাফিক। ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য এ মুনাফিকরাই কাফিরদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের বর্ণনা দিয়ে বলেন:
(وَمِمَّنْ حَوْلَكُمْ مِنَ الْأَعْرَابِ مُنَافِقُوْنَ وَمِنْ أَهْلِ الْمَدِيْنَةِ مَرَدُوا عَلَي النِّفَاقِ)
“মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক এবং মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ কপটতায় সিদ্ধহস্ত।”(সূরা তাওবাহ ৯:১০১)
আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের ব্যাপারে আরো বলেন:
(يَحْذَرُ الْمُنَافِقُوْنَ أَنْ تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُوْرَةٌ تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ)
“মুনাফিকেরা ভয় করে যে, তাদের সম্পর্কে এমন এক সূরা অবতীর্ণ হবে, যা তাদের অন্তরের কথা প্রকাশ করে দেবে।”(সূরা তাওবাহ ৯:৬৪)
مُنَافِق শব্দটি نفاق মূলধাতু থেকে গৃহীত হয়েছে, যার অর্থ কপটতা, দ্বিমুখিতা, মুনাফিকী ইত্যাদি।
শরয়ী পরিভাষায় মুনাফিক বলা হয়- যারা অন্তরে কুফরী গোপন রাখে এবং বাহ্যিক ঈমান প্রকাশ করে।
ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন: نفاق হল ভাল প্রকাশ করা ও মন্দ গোপন করা। ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন: মুনাফিক তারা যাদের কথা কাজের বিপরীত এবং অভ্যন্তরীণ অবস্থা বাহ্যিক অবস্থার বিপরীত। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
أسَاسُ النِّفَاقِ:
কপটতার মূল ভিত্তি: কপটতার মূল ভিত্তি হল কুফর ও কাপুরুষতা। কুফর-মুনাফিক যা গোপন করে রাখে, আর কাপুরুষতা হল যে কারণে অভ্যন্তরীণের বিপরীত বাহ্যিক প্রকাশ করে থাকে। এ কারণে মুনাফিকরা কাপুরুষ ও দুর্বল মনের হয়ে থাকে। (উসূলুদ দাওয়াহ ৩৯৭ পৃ:)
মুনাফিক দু’প্রকার। যথা:
১. منافق اعتقادي
বা বিশ্বাসগত মুনাফিক, এরা নিজেদের সম্মান ও জান-মাল রক্ষা করার জন্য অথবা নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য মুখে ইসলামের কথা বলে, প্রকৃতপক্ষে তাদের অন্তর কুফরী দ্বারা পরিপূর্ণ। এরা ইসলামের গণ্ডির বাইরে। এদের ব্যাপারেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ)
“মুনাফিকরা তো জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে।”(সূরা নিসা ৪:১৪৫)
এ প্রকার মুনাফিকদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা এ সূরার মধ্যে আলোচনা করেছেন।
২. منافق عملي
বা আমলগত মুনাফিক। যেমন আবদুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصَلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّي يَدَعَهَا: إِذَا حَدَّثَ كَذِبَ، وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ
“যার মাঝে চারটি বৈশিষ্ট্য থাকবে সে খাঁটি মুনাফিক এবং যার মাঝে এগুলোর একটি পাওয়া যাবে তার মাঝে সেরূপ মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তা পরিত্যাগ করে- যখন কথা বলে তখন মিথ্যা কথা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, আমানত রাখলে তার খিয়ানত করে, এবং ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে।”(সহীহ বুখারী হা: ৩৪)
কোন মু’মিন ব্যক্তির আমলে বাহ্যিকভাবে এ স্বভাবগুলো পাওয়া গেলে তিনি অপরাধী বলে গণ্য হবেন। ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন না। কিন্তু যার অন্তরে এবং আমলে এ স্বভাবগুলো পাওয়া যাবে তিনি প্রকৃতপক্ষে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন।
আল্লাহ তা‘আলা সূরা বাকারাহসহ অন্যান্য যে সকল সূরাতে মুনাফিকদের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন সে সবের মধ্যে রয়েছে
منافق اعتقادي
বা বিশ্বাসগত মুনাফিক, যারা ইসলামের গণ্ডির বাইরে। (তাফসীরে সা‘দী পৃ.: ১৯)
মাদানী সূরাগুলোতে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হয়েছে। কেননা মক্কায় কোন মুনাফিক ছিল না; বরং সেখানে ছিল ঈমানদারদের বিপরীত কাফির ও মুশরিক, তবে কিছু লোক এমন ছিলেন যারা বাহ্যত ও আপাত দৃষ্টিতে কাফিরদের সঙ্গে থাকতেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ছিলেন মুসলিম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করলেন তখন মদীনাবাসী আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয় আনসার উপাধি লাভ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী হবার সৌভাগ্য লাভ করেন। কিন্তু ইয়াহূদীরা স্বীয় মতবাদে বহাল থাকল। তাদের মধ্যে শুধু আবদুল্লাহ বিন সালাম সত্য ধর্মের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করলেন। তখন পর্যন্ত মুনাফিকদের জঘন্যতম দল সৃষ্টি হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসব ইয়াহূদী ও আরবের অন্যান্য কতকগুলো গোত্রের সঙ্গে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ ছিলেন। এ দলের সূচনা এভাবে হয় যে, মদীনায় ইয়াহূদীদের তিনটি গোত্র ছিল: ১. বানু কাইনুকা ২. বানু নাযীর এবং ৩. বানু কুরাইযা।
বনূ কাইনুকা ছিল খাযরাজের মিত্র এবং বাকি দু’টি গোত্র ছিল আউসের মিত্র। যখন বদর যুদ্ধ সংঘটিত হল এবং আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের জয়যুক্ত করলেন, ইসলামের জয়ডংকা চারিদিকে বেজে উঠল ও তার অপূর্ব দীপ্তি চতুর্দিকে বিকশিত হয়ে উঠল, মুসলিমদের শক্তি প্রতিষ্ঠিত হল ও কাফিরদের গর্ব খর্ব হয়ে গেল, তখনই এ খবীস দলের গোড়া পত্তন হয়। আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সালূল খাযরাজ গোত্রের লোক হলেও আউস ও খাযরাজ উভয় দলের লোকই তাকে খুব সম্মান করত।
এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বাদশা বলে ঘোষণা দেয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। এমতাবস্থায় আকস্মিকভাবে এ গোত্রের মন ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হল। ফলে তার বাদশাহ হবার আশায় গুড়েবালি পড়ল। এ দুঃখ-পরিতাপ তো তার অন্তরে ছিলই, এদিকে ইসলামের অপ্রত্যাশিত ক্রমোন্নতি আর ওদিকে যুদ্ধের উপর্যুপরি বিজয় তাকে একেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিল।
এখন সে চিন্তা করল যে, এভাবে কাজ হবে না। সুতরাং সে ঝট করে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করে নিল এবং অন্তরে কাফির থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। দলের কিছু লোক তার অধীনে ছিল তাদেরকেও সে এ গোপন পন্থা বাতলে দিল। এভাবে মদীনা ও তার আশেপাশে কপটাচারীদের একটি দল রাতারাতি কায়িম হয়ে গেল। আল্লাহ তা‘আলার ফযলে এ কপটদের মধ্যে মক্কার মুহাজিরদের একজনও ছিলেন না, আর থাকবেই বা কেন? এ সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ তো নিজেদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও ধনসম্পদ সবকিছু আল্লাহ তা‘আলা রাহে কুরবান করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এসেছিলেন।
পবিত্র কুরআনের আলোকে মুনাফিকদের কিছু আলামত ও বৈশিষ্ট্য:
১. مرض القلب বা অন্তরের ব্যাধি:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌﺫ فَزَادَھُمُ اللہُ مَرَضًاﺆ وَلَھُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌۭﺃ بِمَا کَانُوْا یَکْذِبُوْنَ)
“তাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, উপরন্তু আল্লাহ তাদের রোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে যেহেতু তারা মিথ্যা বলতো।”(সূরা বাকারাহ ২:১০)
২. الإفساد في الأرض বা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা:
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
وَاِذَا قِیْلَ لَھُمْ لَا تُفْسِدُوْا فِی الْاَرْضِﺫ قَالُوْٓا اِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُوْنَﭚاَلَآ اِنَّھُمْ ھُمُ الْمُفْسِدُوْنَ وَلٰکِنْ لَّا یَشْعُرُوْنَﭛ
“আর যখন তাদেরকে বলা হয়- তোমরা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি কর না তখন তারা বলে, আমরা তো শুধু শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান! তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী; কিন্তু তারা বুঝে না।”(সূরা বাকারাহ ২:১১-১২)
৩. رميهم المؤمنين بالسفه বা মু’মিনদেরকে নির্বোধ বলে অপবাদ দেয়া:
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاِذَا قِیْلَ لَھُمْ اٰمِنُوْا کَمَآ اٰمَنَ النَّاسُ قَالُوْٓا اَنُؤْمِنُ کَمَآ اٰمَنَ السُّفَھَا۬ئُﺚ اَلَآ اِنَّھُمْ ھُمُ السُّفَھَا۬ئُ وَلٰکِنْ لَّا یَعْلَمُوْنَ)
“এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, লোকেরা যেরূপ ঈমান এনেছে তোমরাও অনুরূপ ঈমান আন। তখন তারা বলে, নির্বোধেরা যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরূপ ঈমান আনব? সাবধান! নিশ্চয়ই তারাই নির্বোধ কিন্তু তারা জানে না।”(সূরা বাকারাহ ২:১৩)
৪. الخداع والرياء والتكاسل عن أداءالعبادات বা প্রতারণা করা, লোক দেখানো ইবাদত করা এবং ইবাদাতে শৈথিল্যতা প্রকাশ করা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يُخَادِعُونَ اللّٰهَ وَالَّذِيْنَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّآ أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ)
“তারা আল্লাহ ও মু’মিনদের সাথে প্রতারণা করে। প্রকৃত অর্থে তারা নিজেদের ব্যতীত আর কারও সাথে প্রতারণা করে না; অথচ তারা এটা অনুভব করতে পারে না।”(সূরা বাকারাহ ২:৯)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ یُخٰدِعُوْنَ اللہَ وَھُوَ خَادِعُھُمْﺆ وَاِذَا قَامُوْٓا اِلَی الصَّلٰوةِ قَامُوْا کُسَالٰیﺫ یُرَا۬ءُوْنَ النَّاسَ وَلَا یَذْکُرُوْنَ اللہَ اِلَّا قَلِیْلًاﯝﺬ مُّذَبْذَبِیْنَ بَیْنَ ذٰلِکَﺣ لَآ اِلٰی ھٰٓؤُلَا۬ئِ وَلَآ اِلٰی ھٰٓؤُلَا۬ئِﺚ وَمَنْ یُّضْلِلِ اللہُ فَلَنْ تَجِدَ لَھ۫ سَبِیْلًاﯞ)
“নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে; বস্তুত তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন, আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সঙ্গে দাঁড়ায়- কেবল লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে; দোটানায় দোদুল্যমান- না এদের দিকে, না ওদের দিকে! এবং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি তার জন্য কখনও কোন পথ পাবে না।”(সূরা নিসা ৪:১৪২-৪৩)
৫. الاستهزاء باللّٰه واياته و رسوله বা আল্লাহ, রাসূল ও দীনের বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা:
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(قُلْ أَبِاللّٰهِ وَآيَاتِه۪ وَرَسُولِه۪ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ)
“বল, তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রূপ করছিলে?” (সূরা তাওবাহ ৯:৬৫)
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلٰي شَيَاطِينِهِمْ قَالُوآ إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ)
“এবং যখন তারা মু’মিনদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি এবং যখন তারা নিজেদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তোমাদের সঙ্গেই আছি, আমরা তো শুধু ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে থাকি।”(সূরা বাকারাহ ২:১৪)
৬. مؤالاة الكافرين والتربص بالمؤمين বা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখা ও মু’মিনদের ক্ষতির প্রতীক্ষা করা:
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “মুনাফিকদেরকে শুভ সংবাদ দাও যে, তাদের জন্য মর্মান্তিুক শাস্তি রয়েছে। মু’মিনগণের পরিবর্তে যারা কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারা কি তাদের নিকট ইযযত চায়? বরং সমস্ত ইযযত তো আল্লাহরই। কিতাবে তোমাদের প্রতি তিনি তো অবতীর্ণ করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে, আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং তাকে বিদ্রূপ করা হয়েছে, তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে তোমরা তাদের সঙ্গে বসো না; অন্যথায় তোমরাও তাদের মত হবে। মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই আল্লাহ তো জাহান্নামে একত্র করবেন। যারা তোমাদের অমঙ্গলের প্রতীক্ষায় থাকে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের জয় হলে বলে, ‘আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না?’আর যদি কাফিরদের কিছু বিজয় হয়, তবে তারা বলে ‘আমরা কি তোমাদের পরিবেষ্টন করে রেখেছিলাম না এবং আমরা কি তোমাদের মু’মিনদের হাত হতে রক্ষা করিনি?’আল্লাহ কিয়ামাতের দিন তোমাদের মধ্যে বিচার মীমাংসা করবেন এবং আল্লাহ কখনই মু’মিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদের জন্য কোন পথ রাখবেন না।”(সূরা নিসা ৪:১৩৮-১৪১)
৭. اللد في الخصومة والعزة بالإثم বা অধিক ঝগড়াটে ও পাপ কাজে সম্মান খুঁজে:
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَمِنَ النَّاسِ مَنْ یُّعْجِبُکَ قَوْلُھ۫ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَیُشْھِدُ اللہَ عَلٰی مَا فِیْ قَلْبِھ۪ﺫ وَھُوَ اَلَدُّ الْخِصَامِﰛ وَاِذَا تَوَلّٰی سَعٰی فِی الْاَرْضِ لِیُفْسِدَ فِیْھَا وَیُھْلِکَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَﺚ وَاللہُ لَا یُحِبُّ الْفَسَادَﰜ وَاِذَا قِیْلَ لَھُ اتَّقِ اللہَ اَخَذَتْھُ الْعِزَّةُ بِالْاِثْمِ فَحَسْبُھ۫ جَھَنَّمُﺚ وَلَبِئْسَ الْمِھَادُﰝ)
“আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যার পার্থিব জীবন সংক্রান্ত কথা তোমাকে অবাক করে তোলে। আর সে তার মনের বিষয়ের ওপর আল্লাহকে সাক্ষী বানায়। মূলত সে হচ্ছে ভীষণ ঝগড়াটে ব্যক্তি। আর যখন সে ফিরে যায় তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি ছড়াতে এবং শস্য-ক্ষেত্র ও জীবজন্তু বিনাশের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ অশান্তি ভালবাসেন না। যখন তাকে বলা হয়, তুমি আল্লাহকে ভয় কর, তখন সম্মানের গরীমা তাকে অনাচারে লিপ্ত করে দেয়। অতএব জাহান্নামই তার জন্য যথেষ্ট, তা কতইনা নিকৃষ্ট বাসস্থান!” (সূরা বাকারাহ ২:২০৪-২০৬)
৮. الإفساد بين المؤمنين বা মু’মিনদের মাঝে ফাসাদ সৃষ্টি করা:
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(لَوْ خَرَجُوا فِيكُمْ مَا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا وَلَأَوْضَعُوا خِلَالَكُمْ يَبْغُونَكُمُ الْفِتْنَةَ وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ وَاللّٰهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ)
“তারা তোমাদের সাথে বের হলে তোমাদের বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি করতো এবং তোমাদের মধ্যে ফিত্না সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে ছুটাছুটি করতো। তোমাদের মধ্যে তাদের জন্য কথা শোনার লোক আছে। আল্লাহ যালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।”(সূরা তাওবাহ ৯:৪৭)
৯. الغدر وعدم الوفاء بالعهد বা বিশ্বাসঘাতকতা ও অঙ্গীকার পূর্ণ না করা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمِنْھُمْ مَّنْ عٰھَدَ اللہَ لَئِنْ اٰتٰٿنَا مِنْ فَضْلِھ۪ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَکُوْنَنَّ مِنَ الصّٰلِحِیْنَﮚفَلَمَّآ اٰتٰٿھُمْ مِّنْ فَضْلِھ۪ بَخِلُوْا بِھ۪ وَتَوَلَّوْا وَّھُمْ مُّعْرِضُوْنَﮛفَاَعْقَبَھُمْ نِفَاقًا فِیْ قُلُوْبِھِمْ اِلٰی یَوْمِ یَلْقَوْنَھ۫ بِمَآ اَخْلَفُوا اللہَ مَا وَعَدُوْھُ وَبِمَا کَانُوْا یَکْذِبُوْنَﮜ)
“তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করেছিল, ‘আল্লাহ নিজ কৃপায় আমাদেরকে দান করলে আমরা নিশ্চয়ই সদাকাহ দেবো এবং অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’অতঃপর যখন তিনি নিজ কৃপায় তাদেরকে দান করলেন, তখন তারা এ বিষয়ে কার্পণ্য করলো এবং বিরুদ্ধভাবাপন্ন হয়ে মুখ ফিরালো। পরিণামে তিনি তাদের অন্তরে কপটতা বদ্ধমূল করে দিলেন করলেন আল্লাহর সাথে তাদের সাক্ষাৎ-দিবস পর্যন্ত, কারণ তারা আল্লাহর নিকট যে অঙ্গীকার করেছিল সেটা ভঙ্গ করেছিল এবং তারা ছিল মিথ্যাচারী।”(সূরা তাওবাহ ৯:৭৫-৭৭)
১০. الأمر بالمنكر و النهي عن المعروف বা অসৎ কাজের নির্দেশ ও সৎ কাজে বাধা প্রদান করা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلْمُنٰفِقُوْنَ وَالْمُنٰفِقٰتُ بَعْضُھُمْ مِّنْۭ بَعْضٍﺭ یَاْمُرُوْنَ بِالْمُنْکَرِ وَیَنْھَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوْفِ وَیَقْبِضُوْنَ اَیْدِیَھُمْﺚ نَسُوا اللہَ فَنَسِیَھُمْﺚ اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ ھُمُ الْفٰسِقُوْنَ)
“মুনাফিক নর ও মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ, তারা অসৎ কর্মের নির্দেশ দেয় এবং সৎ কর্মে নিষেধ করে, তারা হাত বন্ধ করে রাখে, তারা আল্লাহকে বিস্মৃত হয়েছে, ফলে তিনিও তাদেরকে বিস্মৃত হয়েছেন; মুনাফিকেরা তো পাপাচারী।”(সূরা তাওবাহ ৯:৬৭)
১১. التحاكم الي الطاغوت: বা তাগুতের কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া:
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(اَلَمْ تَرَ اِلَی الَّذِیْنَ یَزْعُمُوْنَ اَنَّھُمْ اٰمَنُوْا بِمَآ اُنْزِلَ اِلَیْکَ وَمَآ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِکَ یُرِیْدُوْنَ اَنْ یَّتَحَاکَمُوْٓا اِلَی الطَّاغُوْتِ وَقَدْ اُمِرُوْٓا اَنْ یَّکْفُرُوْا بِھ۪ﺚ وَیُرِیْدُ الشَّیْطٰنُ اَنْ یُّضِلَّھُمْ ضَلٰلًۭا بَعِیْدًا)
“তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে, অথচ তারা তাগূতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়।”(সূরা নিসা ৪:৬০)
১২. الصدود عن الله ورسوله বা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়া:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاِذَا قِیْلَ لَھُمْ تَعَالَوْا اِلٰی مَآ اَنْزَلَ اللہُ وَاِلَی الرَّسُوْلِ رَاَیْتَ الْمُنٰفِقِیْنَ یَصُدُّوْنَ عَنْکَ صُدُوْدًاﮌﺆفَکَیْفَ اِذَآ اَصَابَتْھُمْ مُّصِیْبَةٌۭ بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْھِمْ ثُمَّ جَا۬ءُوْکَ یَحْلِفُوْنَﺣ بِاللہِ اِنْ اَرَدْنَآ اِلَّآ اِحْسَانًا وَّتَوْفِیْقًا)
“আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে আস, তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার নিকট হতে মুখ একেবারে ফিরিয়ে নিতে দেখবে। তাদের কৃতকর্মের জন্য যখন তাদের কোন মুসীবত হবে তখন তাদের কী অবস্থা হবে। অতঃপর তারা আল্লাহর নামে শপথ করতে করতে তোমার নিকট এসে বলবে, ‘আমরা কল্যাণ এবং সম্প্রীতি ব্যতীত অন্য কিছুই চাইনি।’(সূরা নিসা ৪:৬১-৬২)
১৩. الكذب والخوف وكره المسلمين বা মিথ্যা, ভয় ও মুসলিমদের অপছন্দ করা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَیَحْلِفُوْنَ بِاللہِ اِنَّھُمْ لَمِنْکُمْﺚ وَمَا ھُمْ مِّنْکُمْ وَلٰکِنَّھُمْ قَوْمٌ یَّفْرَقُوْنَﮇلَوْ یَجِدُوْنَ مَلْجَاً اَوْ مَغٰرٰتٍ اَوْ مُدَّخَلًا لَّوَلَّوْا اِلَیْھِ وَھُمْ یَجْمَحُوْنَ)
“তারা আল্লাহর নামে শপথ করে যে, তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, বস্তুত তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা ভয় করে থাকে। তাদের মধ্যে এমন লোক আছে, যে সদাকাহ বণ্টন সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে, অতঃপর এটার কিছু তাদেরকে দেয়া হলে তারা পরিতুষ্ট হয়, আর এটার কিছু তাদেরকে না দেয়া হলে তৎক্ষণাৎ তারা বিক্ষুব্ধ হয়।”(সূরা তাওবাহ ৯:৫৬ - ৫৭)
১৪. الإضرار بالمؤمنين বা মু’মিনদের ক্ষতিসাধন করা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِیْنَ اتَّخَذُوْا مَسْجِدًا ضِرَارًا وَّکُفْرًا وَّتَفْرِیْقًۭا بَیْنَ الْمُؤْمِنِیْنَ وَاِرْصَادًا لِّمَنْ حَارَبَ اللہَ وَرَسُوْلَھ۫ مِنْ قَبْلُﺚ وَلَیَحْلِفُنَّ اِنْ اَرَدْنَآ اِلَّا الْحُسْنٰیﺚ وَاللہُ یَشْھَدُ اِنَّھُمْ لَکٰذِبُوْنَ)
“এবং যারা মাসজিদ নির্মাণ করেছে ক্ষতিসাধন, কুফরী ও মু’মিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ইতোপূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি সংগ্রাম করেছে তার গোপন ঘাঁটিস্বরূপ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে, তারা অবশ্যই শপথ করবে, ‘আমরা সদুদ্দেশ্যেই সেটা করেছি’; আল্লাহ সাক্ষী, তারা তো মিথ্যাবাদী।”(সূরা তাওবাহ ৯:১০৭)
প্রথম দুই আয়াতে তাদের ঈমানের দাবিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছে যে, তাদের এ দাবিও মূলত প্রতারণামূলক। এটা বাস্তব সত্য যে, আল্লাহ তা‘আলাকে কেউ ধোঁকা দিতে পারে না এবং তারাও হয়তো এ কথা ভাবে না যে, তারা আল্লাহ তা‘আলাকে ধোঁকা দিতে পারবে না, বরং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং মুসলিমদের সাথে ধোঁকাবাজি করার দরুণই বলা হয়েছে যে, তারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে ধোঁকাবাজি করছে।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاِنْ یُّرِیْدُوْٓا اَنْ یَّخْدَعُوْکَ فَاِنَّ حَسْبَکَ اللہُﺚ ھُوَ الَّذِیْٓ اَیَّدَکَ بِنَصْرِھ۪ وَبِالْمُؤْمِنِیْنَ)
“যদি তারা তোমাকে প্রতারিত করতে চায় তবে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি তোমাকে স্বীয় সাহায্য ও মু’মিনদের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন।”(সূরা আনফাল ৮:৬২)
তারা আল্লাহ তা‘আলাকে ধোঁকা দিতে পারবে না, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মু’মিনদেরকেও নয় বরং তারা ধোঁকা দিতে গিয়ে নিজেরাই ধোঁকায় পতিত হয়। কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يُخَادِعُونَ اللّٰهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّآ أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ)
“তারা আল্লাহ ও মু’মিনদের সাথে প্রতারণা করে। প্রকৃত অর্থে তারা নিজেদের ব্যতীত আর কারও সাথে প্রতারণা করে না; অথচ তারা এটা অনুভব করতে পারে না।”(সূরা বাকারাহ ২:৯)
তারা আল্লাহ তা‘আলাকে ধোঁকা দিতে পারে না বরং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের ধোঁকায় ফেলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ یُخٰدِعُوْنَ اللہَ وَھُوَ خَادِعُھُمْﺆ وَاِذَا قَامُوْٓا اِلَی الصَّلٰوةِ قَامُوْا کُسَالٰیﺫ یُرَا۬ءُوْنَ النَّاسَ وَلَا یَذْکُرُوْنَ اللہَ اِلَّا قَلِیْلًا)
“নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে; বস্তুত তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন, আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে দাঁড়ায়- কেবল লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে।”(সূরা নিসা ৪:১৪২)
এজন্যই বলা হয়েছে যে, এসব লোক প্রকৃতপক্ষে আত্ম-প্রবঞ্চনায় লিপ্ত। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত ধোঁকা ও প্রতারণার ঊর্ধ্বে। অনুরূপ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং মু’মিনগণও ওয়াহীর মাধ্যমে অবগত হয়ে সমস্ত ধোঁকা-প্রতারণা থেকে নিরাপদ ছিলেন।
(فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌ)
“তাদের অন্তরে রোগ রয়েছে” ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: مرض বা ব্যাধি এর অর্থ হচ্ছে شك বা সংশয়। এরূপ মত পোষণ করেছেন- মুজাহিদ, ইকরিমা, হাসান বসরী, আবুল আলিয়া ও কাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম) । ত্বাওস (রহঃ) বলেন: مرض বা ব্যাধির অর্থ হচ্ছে رياء বা লোক দেখানোর জন্য কাজ করা।
আবদুর রহমান বিন যায়িদ (রহঃ) বলেন: مرض অর্থ হচ্ছে “দীনের ব্যাপারে তাদের অন্তরের ব্যাধি” শারীরিক ব্যাধি নয়। ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহঃ) বলেন: ব্যাধি দুই প্রকার। উভয় প্রকারের কথা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে।
১. مرض الشكوك والشبهات বা সংশয় ও সন্দেহের ব্যাধি:
যেমন কুফরী, মুনাফিকী, বিদ‘আতী বিশ্বাস ইত্যাদি এ প্রকার ব্যাধির কোন চিকিৎসা নেই। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা যদি এ ব্যাধির আরোগ্য দান না করেন তাহলে তা থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই। এখানে এ ব্যাধির কথাই বলা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌﺫ فَزَادَھُمُ اللہُ مَرَضًاﺆ وَلَھُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌۭﺃ بِمَا کَانُوْا یَکْذِبُوْنَ)
“তাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, উপরন্তু আল্লাহ তাদের রোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে যেহেতু তারা মিথ্যা বলতো।”
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(فَتَرَی الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌ یُّسَارِعُوْنَ فِیْھِمْ یَقُوْلُوْنَ نَخْشٰٓی اَنْ تُصِیْبَنَا دَا۬ئِرَةٌ)
“আর আপনি তাদের দেখবেন যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে যে, তারা দৌড়ে গিয়ে ওদেরই মধ্যে ঢুকে এ বলে যে, আমরা ভয় করছি আমাদের ওপর না জানি কোন মুসিবত পতিত হয়।”(সূরা মায়িদাহ ৫: ৫২)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِذْ یَقُوْلُ الْمُنٰفِقُوْنَ وَالَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌ غَرَّ ھٰٓؤُلَا۬ئِ دِیْنُھُمْﺚ وَمَنْ یَّتَوَکَّلْ عَلَی اللہِ فَاِنَّ اللہَ عَزِیْزٌ حَکِیْمٌ)
“স্মরণ কর, মুনাফিক ও যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা বলে, ‘এদের দীন এদেরকে বিভ্রান্ত করেছে।’কেউ আল্লাহর ওপর নির্ভর করলে আল্লাহ তো পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়।”(সূরা আনফাল ৮:৪৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌ فَزَادَتْھُمْ رِجْسًا اِلٰی رِجْسِھِمْ وَمَاتُوْا وَھُمْ کٰفِرُوْنَ)
“এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, এটা তাদের কলুষের সাথে আরও কলুষ যুক্ত করে এবং তাদের মৃত্যু ঘটে কাফির অবস্থায়।”(সূরা তাওবাহ ৯:১২৫)
এ ব্যাপারে কুরআনুল কারীমে আরোও অসংখ্য আয়াত রয়েছে। যেমন: সূরা মায়িদার ৫২ নং, সূরা আনফালের ৪৯ নং ও সূরা তাওবার ১২৫ নং আয়াত।
২. مرض الشهوات বা প্রবৃত্তির ব্যাধি:
যেমন অন্যায়-অশ্লীল, আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানী কাজের প্রতি লালসা ইত্যাদি। এ প্রকার ব্যাধি দূরিকরণে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আরোগ্য লাভ করা যায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَیَطْمَعَ الَّذِیْ فِیْ قَلْبِھ۪ مَرَضٌ وَّقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا)
“কথা বলার সময় এমনভাবে কোমল কন্ঠে কথা বল না যাতে অন্তরে যার (কুপ্রবৃত্তির) রোগ রয়েছে- সে লালায়িত হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।”(সূরা আহযাব ৩৩:৩২) (“আত-তিব্বু আন-নব্বী”- লি ইবনিল কায়্যিম) আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দু’প্রকার ব্যাধি ও মুনাফিকী থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন, আমীন।
আল্লাহ তা‘আলা তাদের পূর্বের পাপের দরুন তাদের পরিণতির জন্য বিভিন্ন অবাধ্য কাজ দিয়ে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(فَلَمَّا زَاغُوا أَزَاغَ اللّٰهُ قُلُوْبَهُمْ وَاللّٰهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ)
“অতঃপর তারা যখন বক্রপথ অবলম্বন করলো তখন আল্লাহ তাদের হৃদয়কে বক্র করে দিলেন। আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।”(সূরা সাফ ৬১:৫) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌ فَزَادَتْھُمْ رِجْسًا اِلٰی رِجْسِھِمْ وَمَاتُوْا وَھُمْ کٰفِرُوْنَ)
“এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, এটা তাদের কলুষের সাথে আরও কলুষ যুক্ত করে এবং তাদের মৃত্যু ঘটে কাফির অবস্থায়।”(সূরা তাওবাহ ৯:১২৫)
পাঠকদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুনাফিকদেরকে চেনা সত্ত্বেও কেন তাদেরকে হত্যা করেননি? উমারও (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি চেয়ে বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে ছেড়ে দিন! আমি তাদেরকে হত্যা করে ফেলি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন:
دَعْهُ، لَا يَتَحَدَّثُ النَّاسُ أَنَّ مُحَمَّدًا يَقْتُلُ أَصْحَابَهُ
তাকে ছেড়ে দাও! মানুষ যাতে সমালোচনা করতে না পারে (এই বলে) যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথীদের হত্যা করে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৯০৫, ৪৯০৭, সহীহ মুসলিম হা:২৫৮৪)
অর্থাৎ বেদুঈন আরবরা মুনাফিকদের হত্যার কারণ না জেনে শুধু বাহ্যিকভাবে অপপ্রচার শুনে ইসলাম গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে, আর বলবে মুহাম্মাদ তার সাথীদের হত্যা করে। এ অপপ্রচারের আশংকায় তাদেরকে হত্যা করা হয়নি।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা নিজেদের সম্মান, সম্পদ ও অসৎ স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্তরে কুফরী রেখে বাহ্যিক ঈমানের পরিচয় দেয় তারাই মুনাফিক। এরাই ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য কাফিরদের থেকে বেশি ক্ষতিকর।
২. বিশ্বাসগত মুনাফিকরা কাফির। কিন্তু আমলগত মুনাফিকরা কাফির নয়, তবে বড় ধরনের অপরাধী।
৩. সংশয় ও সন্দেহ ব্যাধির কোন চিকিৎসা নেই। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা যদি এ ব্যাধি থেকে মুক্ত না করেন। তাই বেশি বেশি
يا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلٰي دِيْنِكَ
“হে অন্তরের পরিবর্তনকারী আমার অন্তরকে তোমার দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখ” এ দু‘আটি পড়া উচিত।
৪. কুরআনের আলোকে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য জানতে পারলাম। সুতরাং আল্লাহভীরু মু’মিন ব্যক্তিকে ঐ সব কর্ম হতে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings