Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 76
Saheeh International
And when they meet those who believe, they say, "We have believed"; but when they are alone with one another, they say, "Do you talk to them about what Allah has revealed to you so they can argue with you about it before your Lord?" Then will you not reason?
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জীবদ্দশায় ইয়াহুদীদের ঈমান ছিলো না
এই পথভ্রষ্ট ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের ঈমানের ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাঁর মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ও সাহাবীগণ (রাঃ)-কে নিরাশ করে দিচ্ছেন যে, এসব লোক যখন এতো বড় বড় নিদর্শন দেখেও তাদের অন্তরকে শক্ত করে ফেলেছে এবং মহান আল্লাহ্র কালাম শুনে বুঝার পরেও ওকে পরিবর্তন করে ফেলেছে তখন তোমরা তাদের কাছে আর কিসের আশা করতে পারো? ঠিক এরকমই আয়াত অন্য জায়গায় আছেঃ
﴿فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِّیْثَاقَهُمْ لَعَنّٰهُمْ وَ جَعَلْنَا قُلُوْبَهُمْ قٰسِیَةً١ۚ یُحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ عَنْ مَّوَاضِعِهٖ﴾
বস্তুত শুধু তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দরুণই আমি তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে দূর করে দিলাম এবং অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি। তারা কালামকে অর্থাৎ তাওরাত এর স্থানসমূহ হতে পরিবর্তন করে দেয়। (৫ নং সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং ১৩) ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে এখানে আল্লাহ তা‘আলা তার কালামকে শুনার কথা বলেছেন। এর দ্বারা মূসা (আঃ) এর ঐ সহচরদের বুঝনো হয়েছে, যারা মহান আল্লাহ্র কালাম নিজ কানে শোনার জন্য তার নিকট আবেদন করেছিলো। আর তারা পাক- সাফ হওয়ার পর সাওম রেখে মূসা (আঃ) এর সাথে তূর পাহাড়ে গিয়ে সিজদায় লুটে পড়লে মহান আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় কালাম শুনিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ফিরে আসার পর মূসা (আঃ) যখন মহান আল্লাহ্র কালাম বানী ইসরাইলের মধ্যে বর্ণনা করতে আরম্ভ করেন, তখন তারা তা পরিবর্তন করতে শুরু করে। সুদ্দী (রহঃ)-এর অভিমত হলো তারা তাওরাতের মধ্যে পরিবর্তন আনয়ন করেছিলো। সুদ্দী (রহঃ) এই অর্থটিই ইবনে ‘আব্বাস ও ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অপেক্ষা সাধারণ, যার মধ্যে তারাও শামিল হয়ে যাবে এবং এই বদ স্বভাবে অন্যান্য ইয়াহুদীরাও জড়িত থাকবে। যদিও ইবনে জারীর বাহ্যিক দিককেই পছন্দ করেছেন। কিন্তু এটা আবশ্যক নয় যে সরাসরি মহান আল্লাহ্র মুখ থেকেই তা শুনতে হবে। যেমনটি মূসা ইবনে ‘ইমরান (আঃ) সরাসরি মহান আল্লাহ্র কথা শুনেছেন। কেননা মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَاِنْ اَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِیْنَ اسْتَجَارَكَ فَاَجِرْهُ حَتّٰى یَسْمَعَ كَلٰمَ اللّٰهِ﴾
‘মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে তাকে আশ্রয় দাও যাতে সে মহান আল্লাহ্র বাণী শোনার সুযোগ পায়।’ (৯ নং সূরা আত তাওবাহ, আয়াত ৬) এখানে যেমন মহান আল্লাহ্র কালাম নিজের কানে শুনা নয়, তেমনি এখানে মহান আল্লাহ্র কালাম অর্থ তাওরাত।
ثُمَّ یُحَرِّفُوْنَه مِنْۢ بَعْدِ مَا عَقَلُوْهُ وَ هُمْ یَعْلَمُوْنَ আয়াতের তাফসীরে কাতাদাহ (রহঃ) বলেনঃ এই পরিবর্তন কারীরা হলো ইয়াহূদী সম্প্রদায়, যারা মহান আল্লাহ্র আদেশ শোনার পর জেনে শুনে তা পরিবর্তন করতো অথবা নতুন কিছু যোগ করতো। (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/২৩৬) আর মুজাহিদ (রহঃ) বলেনঃ তারা তাদের গ্রন্থে পরিবর্তন করতো এবং কিছু কিছু গোপন রাখতো, এরা ছিলো তাদের ধর্মীয় জ্ঞানে জ্ঞানী পণ্ডিতবর্গ। (তাফসীর তাবারী ২/২৪৫) ইবনে ওয়াহাব (রহঃ) বলেন যে, ইবনে যায়েদ (রহঃ) মন্তব্য করেছেনঃ ‘তারা মহান আল্লাহ প্রদত্ত ধর্মীয় গ্রন্থ তাওরাতের পরিবর্তন করেছে যেমন হালালকে হারাম সাব্যস্ত করেছে এবং হারামকে হালাল করেছে এবং সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য বলে প্রচার করেছে। যখন কোন ব্যক্তি সঠিক মীমাংসার জন্য ঘুষসহ আগমন করতো তখন তারা মহান আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করতো। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তি অন্যায় দাবীকে প্রতিষ্ঠিত করতে আসতো তখন তারা মহান আল্লাহ্র কিতাবকে বাদ দিয়ে বানোয়াট কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে ফাতাওয়া দিতো যে, সে সঠিক কাজই করেছে। যখন এমন কোন ব্যক্তি আসতো যে সত্যের অনুসন্ধানকারী নয় এবং ঘুষও প্রদান করতো না এবং তাকে মহান আল্লাহ্র কিতাব থেকে সঠিক কথা বলে সত্য ফাতাওয়া দিতো। এ কারণে মহান আল্লাহ তাদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ তোমরা কি লোকদের সৎ কাজে আদেশ করছো এবং তোমাদের নিজেদের সম্বন্ধে বিস্মৃত হচ্ছো? অথচ তোমরা গ্রন্থ পাঠ করোঃ তাহলে কি তোমরা হৃদয়ঙ্গম করছো না?’ (২ নং সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ৪৪। তাফসীর তাবারী ২/২৪৬)
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সত্য নবী জানা সত্ত্বেও ইয়াহুদীরা তাঁর প্রতি ঈমান আনেনি
মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿ وَ اِذَا لَقُوا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا قَالُوْۤا اٰمَنَّا١ۖۚ وَ اِذَا خَلَا بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ ﴾ এর ব্যাখ্যায় মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রহঃ) বলেন যে, ইয়াহুদীরা বিশ্বাস করতো যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহান আল্লাহ্র রাসূল, কিন্তু তিনি শুধু ‘আরবদের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। (তাফসীর তাবারী ২/২৫০) তারা মুসলিমদের সাথে মিলিত হয়ে বলতোঃ ‘তোমাদের নবী সত্য। তিনি সত্যই মহান আল্লাহ্র রাসূল।’ কিন্তু যখন তারা পরস্পরের বসতো তখন একে অপরকে বলতোঃ ‘তোমরা ‘আরববাসীকে এসব বলো না। কেননা এই সে নবী যে নবীর দোহাই দিয়ে তোমরা তাদের ওপর বিজয় কামনা করতে। অর্থাৎ তোমরা যে স্বীকার করছো যে, সে একজন সত্য নবী। আর তোমরা তোমাদের কিতাবেও এমনটি জেনেছো যে, শেষ নবীর প্রতি ঈমান আনার জন্যে তোমাদের থেকে প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছে। আর এই নবী তাদেরকে সেই সংবাদই দিচ্ছে যার আমরা অপেক্ষা করছিলাম এবং আমাদের কিতাবেও তা পেয়েছি। অতএব এটা জানা সত্তেও তোমরা এই নবীকে অস্বীকার করো। কখনো তাকে নবী হিসেবে স্বীকার করো না। নচেৎ তারা তোমাদেরকেও তাদের ধর্মে টেনে নিবে এবং মহান আল্লাহ্র কাছেও তোমাদেরকে লা-জবাব করে দিবে। তোমরাতো মহান আল্লাহ্র কাছে এই প্রার্থনা করতে যে, তিনি যেন তোমাদের মাঝে সেই নবীকে প্রেরণ করেন। কিন্তু তাঁকে তো তোমাদের পরিবর্তে ‘আরবদের মাঝেই প্রেরণ করা হয়েছে। এরই ফলে মহান আল্লাহ নিচের আয়াতটি অবতীর্ণ করে তাদের উত্তর দেনঃ اَوَ لَا یَعْلَمُوْنَ اَنَّ اللّٰهَ یَعْلَمُ مَا یُسِرُّوْنَ وَ مَا یُعْلِنُوْنَ ‘‘এই নির্বোধদের কি এতোটুকুও জ্ঞান নেই যে, মহান আল্লাহ তাদের প্রকাশ্য ও গোপনীয় সব কথাই জানেন?
‘আব্দুর রহমান ইবনু যায়দ ইবনু আসলাম একটি সূত্র উল্লেখ করে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "لا يدخلن علينا قصبة المدينة إلا مؤمن"
‘আমাদের কাছে যেন মু’মিন ছাড়া আর কেউ না আসে।’ (হাফিয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন, ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়দ ইবনে আসলাম একজন য ‘ঈফ রাবী ‘। আর একটি কারণ হলো এর সনদটি বিচ্ছিন্ন) তখন কাফির ও ইয়াহূদীরা পর¯পর বলাবলি করলো যে, তোমরা মুসলিমদের কাছে গিয়ে বলো যে আমরা ঈমান এনেছি, আবার এখানে যখন আসবে তখন ঐ রূপই থাকবে যেমন পূর্বে ছিলে। সুতরাং ঐ সব লোক সকালে এসে ঈমানের দাবি করতো এবং সন্ধ্যায় গিয়ে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতো। মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَقَالَتْ طَائِفَةٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ آمِنُوا بِالَّذِي أُنزلَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَجْهَ النَّهَارِ وَاكْفُرُوا آخِرَهُ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
‘কিতাবীদের একটি দল বলে মু’মিনদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে এর ওপর দিনের এক অংশে ঈমান আনো এবং ওপর অংশে কুফরী করো তা হলে স্বয়ং মু’মিনরাও ফিরে আসবে।’ (৩ নং সূরা আল ‘ইমরান, আয়াত নং ৭২) তারা এই প্রতারণা করার মাধ্যমে মুসলিমদের গোপন তথ্য জেনে নিয়ে তাদের দলের লোকদের নিকট তা সরবরাহ করতো। আর মুসলিমদেরকেও পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা পোষণ করতো। কিন্তু তাদের চতুরতায় কাজ হয়নি। কেননা মহান আল্লাহ তাদের এই গোপন কথা মু’মিনদেরকে জানিয়ে দেন। তারা মুসলিমদের কাছে এসে ইসলাম ও ঈমানের কথা প্রকাশ করলে তাঁরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করতেনঃ ‘তোমাদের কিতাবে কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শুভাগমন ইত্যাদির কথা নেই?’ তারা স্বীকার করতো। তারপর যখন তারা তাদের বড়দের কাছে যেতো তখন ঐ বড়রা তাদেরকে ধমক দিয়ে বলতোঃ أَتُحَدِّثُونَهُمْ بِمَا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ‘তোমরা কি নিজেদের কথা মুসলিমদেরকে বলে তোমাদের অস্ত্র তাদেরকে দিয়ে দিতে চাও?’
আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) بما فتح الله এর তাফসীরে বলেন তা হলো, ‘তোমাদের কিতাবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গুণ সম্বলিত যা অবতারিত হয়েছে।’
আর কাতাদাহ (রহঃ) বলেন, তারা বলতো যে, অচিরেই একজন নবী আগমন করবেন। অতঃপর তারা একজন অন্যজনের সাথে মিলিত হলে বলতো أَتُحَدِّثُونَهُمْ بِمَا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ‘তোমরা কি তাদের সাথে এমন বিষয়ে কথোপকথন করছো যা মহান আল্লাহ তোমাদেরকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন?’
মুজাহিদ (রহঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানু কুরাইযার ওপর আক্রমণের সময় ইয়াহুদীদের দুর্গের পাদদেশে দাঁড়িয়ে বলেনঃ
"يا إخوان القردة والخنازير، ويا عبدة الطاغوت"
‘হে বানর, শূকর ও শয়তানের পূজারীদের ভ্রাতৃমণ্ডলী!’ তখন তারা পরস্পর বলাবলি করতে থাকেঃ ‘তিনি আমাদের ভিতরের কথা কি করে জানলেন। খবরদার! তোমাদের পরস্পরের সংবাদ তাদেরকে দিয়ো না, দিলে তা মহান আল্লাহ্র সামনে দালীল হয়ে যাবে।’ (হাদীস সহীহ। তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/২৪০। মুসতাদরাক হাকিম ৩/৩৪, ৩৫, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ ৪/১১৮) তখন মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘তোমরা গোপন করলেও আমার কাছে কোন কথা গোপন থাকে না।’
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings