Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 7
Saheeh International
Allah has set a seal upon their hearts and upon their hearing, and over their vision is a veil. And for them is a great punishment.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
মুফাসসির হযরত সুদ্দী (রঃ) বলেছেন যে, (আরবি)-এর অর্থ মোহর করে দেয়া। হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেনঃ ‘অর্থাৎ শয়তান তাদের উপর বিপুলভাবে জয়লাভ করেছে এবং তারা তারই আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত তাদের অন্তরে ও কানে আল্লাহর মোহর লেগে গেছে এবং চোখের উপর পর্দা পড়ে গেছে। সুতরাং তারা হিদায়াতকে দেখতেও পাচ্ছে না, শুনতেও পাচ্ছে না। এবং তা বুঝতেও পারছে না!' হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ ‘পাপ মানুষের অন্তরে চড়ে বসে এবং তাকে চারদিক থেকে ঘিরে নেয়। এটাই হচ্ছে মোহর। অন্তর ও কানের জন্যে প্রচলিত অর্থে মোহর ব্যবহৃত হয়।' মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ “পবিত্র কুরআনে (আরবি) এবং (আরবি) এই তিন প্রকারের শব্দ এসেছে (আরবি) শব্দটি (আরবি) হতে কম এবং (আরবি) (আরবি) শব্দটি হতে কম (আরবি) সবচেয়ে বেশী।' মুজাহিদ (রঃ তাঁর হাতটি দেখিয়ে বললেনঃ ‘অন্তর হাতের তালুর মত। বান্দার পাপের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। বান্দা একটা পাপ করলে তখন তার কনিষ্ঠ অঙ্গুলিটি বন্ধ হয়ে গেল। দুটো পাপ করল তখন তার দ্বিতীয় অঙ্গুলিও বন্ধ হয়ে গেল। এভাবে সমস্ত অঙ্গুলি বন্ধ হয়ে গেল। এখন মুষ্টি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেল এবং ওর ভিতরে কোন জিনিস অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। এভাবেই নিরন্তর পাপের ফলে অন্তরের উপর কালো পর্দা পড়ে যায় এবং মোহর লেগে যায়। তখন আর সত্য তার মধ্যে ক্রিয়াশীল হয় না। একে ও (আরবি) বলা হয়। ভাবার্থ হলো এই যে, তার অহমিকা, এবং সত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। যেমন বলা হয় যে, অমুক ব্যক্তি এ কথা শুনা হতে বধির হয়ে গেছে। উদ্দেশ্য হয় এই যে, অহংকার করে সে এ কথার দিকে কান দেয়নি।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেছেন যে, এ অর্থ ঠিক হতে পারে না। কেননা, এখানে তো স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা বলছেন যে, তিনি তাদের অন্তরে মোহর করে দিয়েছেন। যামাখশারী (রঃ) এ খণ্ডনের অনেক কিছু খণ্ডন করেছেন এবং পাঁচটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কিন্তু সবগুলোই নিরর্থক, বাজে এবং মু'তাযেলী হওয়ার ফলে তাকে কল্পনার আশ্রয়ে এগুলো বানিয়ে নিতে হয়েছে। কেননা তার কাছে এটা খুবই খারাপ কথা যে, মহান আল্লাহ কারও অন্তরে মোহর করে দেবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, তিনি অন্যান্য পরিষ্কার ও স্পষ্ট আয়াতগুলির উপর আদৌ কোন চিন্তা গবেষণা করেননি। পবিত্র কুরআনের এক জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ যখন তারা বক্রই রইলো তখন আল্লাহ তাদের অন্তরকে আরও বক্র করে দিলেন। তিনি আরও বলেছেনঃ “আমি তাদের অন্তর ও চক্ষুকে এমনভাবে ফিরিয়ে দেই, যেন তারা প্রথম থেকেই ঈমান আনেনি এবং তাদেরকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেই যে, তারা অবাধ্যতার মধ্যে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ফিরতে থাকে। এ ধরনের আরও আয়াত রয়েছে যা স্পষ্টভাবে বলে দেয় যে, তাদের সত্যকে পরিত্যাগ ও মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরে থাকার কারণে আল্লাহ তা'আলা তাদের অন্তরের উপর মোহর করে দিয়েছেন এবং তাদের অন্তর থেকে হিদায়াত বিদূরিত করেছেন। এটা একটা সরাসরি ও প্রত্যক্ষ সুবিচার আর সুবিচার ভাল বই কোন দিন মন্দ হয় না। যদি যামাখশারীও চিন্তাদৃষ্টি দ্বারা এ আয়াতগুলির প্রতি লক্ষ্য করতেন তবে তিনি ঐ ব্যাখ্যা দিতেন না। আল্লাহ তা'আলাই এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জানেন।
ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেনঃ “উম্মতের ইজমা আছে যে, মহান আল্লাহ মোহর করাকেও নিজের একটি বিশেষ গুণ রূপে বর্ণনা করেছেন যে, মোহর কাফিরদের কুফরীর প্রতিদান স্বরূপ হয়ে থাকে। যেমন তিনি বলেছেনঃ বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তার উপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন। হাদীসেও আছে। যে, আল্লাহ তা'আলা অন্তরকে পরিবর্তন করে থাকেন। প্রার্থনায় আছেঃ “হে অন্তরের পরিবর্তন আনয়নকারী! আমাদের অন্তরকে আপনার ধর্মের উপর অটল রাখুন।' হযরত হুজাইফা (রাঃ) হতে ফিত্রার অধ্যায়ে, একটি সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘অন্তরের মধ্যে ফিত্না এমনভাবে উপস্থিত হয় যেমন ছেড়া মাদুরের একটা খড়কুটা। যে অন্তর তা গ্রহণ করে নেয় তাতে একটা কালো দাগ পড়ে যায় এবং যে অন্তরের মধ্যে এই ফিৎনা ক্রিয়াশীল হয় না তাতে একটা সাদা দাগ পড়ে যায়, আর সেই শুভ্রতা বাড়তে বাড়তে সম্পূর্ণ সাদা হয়ে গিয়ে সমস্ত অন্তরকে আলোকে উদ্ভাসিত করে দেয়। অতঃপর ফিৎনা এই অন্তরের কোন ক্ষতি করতে পারে না। পক্ষান্তরে, অন্য অন্তরে কৃষ্ণতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায় এবং শেষে সমস্ত অন্তরকে কালো মসিময় করে দেয়। তখন তা উল্টানো কলসের মত হয়ে যায়, ভাল কথাও তার ভাল লাগে না এবং মন্দ কথাও খারাপ লাগে না।
ইমাম ইবনে জারীরের (রঃ) ফায়সালা এই যে, হাদীসে এসেছেঃ মুমিন যখন পাপ করে তখন তার অন্তরে একটা কালো দাগ হয়ে যায়। যদি সে পাপ কার্য হতে ফিরে আসে ও বিরত হয়, তবে ঐ দাগটি আপনি সরে যায় এবং তার অন্তর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। আর যদি সে গুনাহ করতেই থাকে তবে সেই পাপও ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত তার সমস্ত অন্তরকে ছেয়ে ফেলে। এটাই সেই মরিচা যার বর্ণনা এই আয়াতে রয়েছেঃ “নিশ্চয় তাদের খারাপ কাজের কারণে তাদের অন্তরে মরিচা পড়ে গেছে' (সুনান-ই-নাসাঈ, জামেউত তিরমিযী, তাফসীর-ই-ইবেন জারীর)। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাহলে জানা গেল যে, পাপের প্রাচুর্য অন্তরের উপর পর্দা ফেলে দেয় এবং এর পরে আল্লাহর মোহর হয়ে যায়। একেই বলে খাম এবং তবা'। এরূপ অন্তরের মধ্যে ঈমান প্রবেশ করার ও কুফর বের হওয়ার আর কোন পথ থাকে না। এই মোহরের বর্ণনাই এই আলোচ্য আয়াতে করা হয়েছে। আর এটা আমাদের চোখের দেখা যে, যখন। কোন জিনিসের মুখে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়, তখন যে পর্যন্ত মোহর ভেঙ্গে না যায় সে পর্যন্ত তার ভিতরে কিছু যেতেও পারে না এবং তা থেকে কিছু বেরও হতে পারে না। এ রকমই কাফিরদের অন্তরে ও কানে আল্লাহর মোহর লেগে গেছে, সেই মোহর না সরা পর্যন্ত তার ভিতরে হিদায়াত প্রবেশ করতে পারবে এবং তা থেকে কুফরও বেরিয়ে আসতে পারবে না। (আরবি)-এর উপর পূর্ণ বিরতি আছে এবং (আরবি) পৃথক পৃথক বাক্য (আরবি) ও (আরবি) অন্তর ও কানের উপর হয় এবং (আরবি) অর্থাৎ পর্দা চোখের উপর পড়ে। যেমন এটা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) প্রমুখ গণ্যমান্য সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। পবিত্র কুরআনে আছেঃ (৪২:২৪) (আরবি)
অন্য স্থানে আছেঃ (৪৫:২৩) (আরবি) এই আয়াতগুলোতে অন্তরের ও কানের উপর (আরবি)-এর উল্লেখ আছে এবং চোখের উপর আছে পর্দার উল্লেখ। তাহলে সম্ভবতঃ তাদের নিকট (আরবি) ক্রিয়াপদ উহ্য আছে এবং (আরবি)-এর অনুসরণে (আরবি) শব্দটিকে (আরবি) হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। কুরআন কারীমের আয়াত (আরবি)-এর মধ্যেও তাই এসেছে। প্রসঙ্গক্রমে আরব কবির একটি কবিতা নিম্নরূপঃ (আরবি) এখানে (আরবি) উহ্য থেকে শব্দকে (আরবি) দিয়েছে। অনুরূপভাবে আরও একটি কবিতার চরণঃ (আরবি) অর্থাৎ ‘আমি তোমার স্বামীকে রণপ্রান্তরে দেখেছি গলায় তলোয়ার লটকানো অবস্থায় এবং কটি দেশে বর্শা বাঁধা অবস্থায়। এখানেও (আরবি) শব্দটি উহ্য থেকে (আরবি) শব্দকে (আরবি) দিয়েছে।
সূরার প্রথম চারটি আয়াতে মুমিনদের বিশেষণ বর্ণিত হয়েছে, অতঃপর এই দু’টি আয়াতে কাফিরদের বর্ণনা দেয়া হলো। এখন কপটাচারী মুনাফিকদের বিস্তারিত আলোচনা হতে যাচ্ছে যারা বাহ্যতঃ ঈমানদাররূপে প্রকাশ পায়, কিন্তু প্রকতপক্ষে ও গোপনে গোপনে তারা কাফির। সাধারণতঃ তাদের চতুরতা গোপন থেকে যায় বলে তাদের আলোচনা কিছুটা বিস্তারিতভাবে হয়েছে এবং তাদের অনেক কিছু নিদর্শনও বর্ণনা করা হয়েছে। তাদেরই সম্বন্ধে সূরা-ইবারাআত অবতীর্ণ হয়েছে এবং সূরা-ই-নূর প্রভৃতিতে তাদের সম্বন্ধেই আলোচনা রয়েছে যাতে তাদের থেকে পূর্ণভাবে রক্ষা পাওয়া যায় এবং মুসলমানেরা তাদের জঘন্য ও নিন্দনীয় স্বভাব থেকে দূরে সরে থাকতে পারে। তাই মহান আল্লাহ বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছেনঃ
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings