Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 66
Saheeh International
And We made it a deterrent punishment for those who were present and those who succeeded [them] and a lesson for those who fear Allah .
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
৬৫-৬৬ নং আয়াতের তাফসীর
চেহারা পরিবর্তনের ঘটনা
সুরা-ই-আ'রাফের মধ্যে এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তথায় এর তাফসীরও ইনশাআল্লাহ পূর্ণভাবে করা হবে। ঐলোকগুলো আইলা নামক গ্রামের অধিবাসী ছিল। শনিবার দিনের সম্মান করা তাদের উপর ফরয করা হয়েছিল। ঐদিনে শিকার করা তাদের জন্যে নিষিদ্ধ ছিল। আর মহান আল্লাহর হুকুমে সেই দিনেই নদীর ধারে মাছ খুব বেশী আসতো। তারা একটা কৌশল অবলম্বন করতো। একটা গর্ত খনন করে শনিবারে ওর মধ্যে রঞ্জু ও কাটা ফেলে দিতো। শনিবারে মাছসমূহ ঐ ফাদে পড়ে যেতো। রোববারের রাতে তারা ওগুলো ধরে নিতো। ঐ অপরাধের কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের রূপ বদলিয়ে দেন। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, তাদের আকার পরিবর্তিত হয়নি, বরং অন্তর পরিবর্তিত হয়েছিল। এটা শুধুমাত্র দৃষ্টান্ত স্বরূপ আনা হয়েছে। যেমন আল্লাহ রাব্বল আলামীন আমলহীন আলেমের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন গাধার সঙ্গে। কিন্তু একথাটি দুর্বল। তা ছাড়া এটা কুরআন কারীমের প্রকাশ্য শব্দেরও বিপরীত। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যুবকেরা বানর হয়েছিল এবং বুড়োরা শূকর হয়েছিল। হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, নারী পুরুষ সবাই তারা লেজযুক্ত বানর হয়ে গিয়েছিল। আকাশবাণী হয়ঃ “তোমরা সব বানর হয়ে যাও।" আর তেমনই সব বানর হয়ে যায়। যেসব লোক তাদেরকে ঐ কৌশল অবলম্বন করতে নিষেধ করেছিল তারা তখন তাদের নিকট এসে বলতে থাকেঃ “আমরা কি তোমাদেরকে পূর্বেই নিষেধ করিনি?" তখন তারা মাথা নেডে সম্মতি জানায়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, অল্প সময়ের মধ্যে তারা সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এবং তাদের বংশ বৃদ্ধি হয়নি। দুনিয়ায় কোন আকার পরিবর্তিত গোত্র তিন দিনের বেশী বাঁচেনি। এরাও তিন দিনের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায়। নাক ঘসটাতে ঘসটাতে তারা সব মরে যায়। পানাহার ও বংশ বৃদ্ধি সবই বিদায় নেয়। যে বানরগুলো এখন আছে এবং তখনও ছিল, এরা তো জন্তু এবং এরা এভাবেই সৃষ্ট হয়েছে। আল্লাহ পাক যা চান এবং যেভাবে চান, তাই সৃষ্টি করে থাকেন এবং সেভাবেই সৃষ্টি করে থাকেন। তিনি মহান ক্ষমতাবান।
ঘটনার বিস্তারিত আলোচনাঃ
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, শুক্রবারের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করা তাদের উপর ফরয করা হয়, কিন্তু তারা শুক্রবারের পরিবর্তে শুনিবারকে পছন্দ করে। ঐ দিনের সম্মানার্থে তাদের জন্যে ঐদিনে শিকার ইত্যাদি হারাম করে দেয়া হয়। ওদিকে আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে ঐদিনই সমস্ত মাছ নদীর ধারে চলে আসতো এবং লাফা ঝাপা দিতো। অন্য দিনে ও গুলো দেখাই যেত না। কিছু দিন পর্যন্ত তো ঐসব লোক নীরবই থাকে এবং শিকার করা হতে বিরত থাকে। একদিন ওদের মধ্যে একটি লোক এই ফন্দি বের করে যে,শনিবার মাছ ধরে জালের মধ্যে আটকিয়ে দেয়া এবং তীরের কোন জিনিসের সঙ্গে বেঁধে রাখে। তারপরে রোববার দিন গিয়ে ওগুলো বের করে নেয় এবং বাড়ীতে এনে রেধে খায়। মাছের সুগন্ধ পেয়ে লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে“আমি তো আজ রোববারে মাছ শিকার করেছি। অবশেষে এ রহস্য খুলে যায়। লোকেরাও এ কৌশল পছন্দ করে এবং ঐভাবে তারা মাছ শিকার করতে থাকে। কেউ কেউ নদীর তীরে গর্ত খনন করে। শনিবারে মাছগুলো ঐ গর্তের ভিতরে জমা হলে তারা ওর মুখ বন্ধ করে দিতে। রোববারে ধরে নিতো। তাদের মধ্যে যারা খাঁটি মুমিন ছিল তারা তাদেরকে এ কাজে বাধা দিতো এবং নিষেধ করতো। কিন্তু তাদের উত্তর এই হলো আমরা তো শনিবারে শিকারই করি না, শিকার করি আমরা রোববারে।
শিকারকারী ও নিষেধকারীদের ছাড়া আরও একটি দল সৃষ্টি হয়ে যায়, যারা দুই দলকেই সন্তুষ্ট রাখতো। তারা নিজেরা শিকার করতো না বটে, কিন্তু যারা শিকার করতো তাদেরকে নিষেধও করতো না। বরং নিষেধকারীগণকে বলতোঃ “তোমরা এমন কওম'কে উপদেশ কেন দিচ্ছ যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ধ্বংস করবেন কিংবা কঠিন শাস্তি দেবেন? তোমরা তো তোমাদের কত পালন করেছো যেহেতু তাদেরকে নিষেধ করেছে। তারা যখন মানছে না তখন তাদেরকে তাদের কাজের উপর ছেড়ে দাও"। তখন নিষেধকারীগণ উত্তর দিতোঃ “একেতো এ জন্যে যে, আমরা আল্লাহ পাকের নিকট ওজর পেশ করতে পারবো। দ্বিতীয়তঃ এজন্যেও যে, তারা হয়তো আজ না হলে কাল কিংবা কাল হলে পরশু আমাদের কথা মানতে পারে এবং আল্লাহর কঠিন শাস্তি হতে মুক্তি পেয়ে যেতে পারে। অবশেষে এই মুমিন দলটি সেই কৌশলীদল হতে সম্পূর্ণ রূপে সম্পর্ক ছিন্ন করলো এবং তাদের থেকে পৃথক হয়ে গেল। গ্রামের মধ্যস্থলে একটি প্রাচীর দিয়ে দিল। একটি দরজা দিয়ে এরা যাতায়াত করে এবং অপর দরজা দিয়ে ঐ ফাঁকিবাজেরা যাতায়াত করে। এভাবেই দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়। হঠাৎ এক বিস্ময়জনক ঘটনা ঘটে। একদা রাত্রি শেষে দিন হয়েছে। মুমিনরা সব জেগে উঠেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত ঐ ফন্দিবাজেরা তাদের দরজা খুলেনি এবং কোন সাড়া শব্দও পাওয়া যায় না। মুমিনরা বিস্মিত হলো যে, ব্যাপার কি? শেষে অত্যাধিক বিলম্বের পরেও যখন তাদের কোন খোঁজ পাওয়া গেল না তখন তারা প্রাচীরের উপরে উঠে গেল। তথায় এক বিস্ময়কর দৃশ্য তারা অবলোকন করলো। তারা দেখলো যে, ঐ ফন্দিবাজেরা নারী ও শিশুসহ সবাই বানর হয়ে গেছে। তাদের ঘরগুলো রাত্রে যেমন বন্ধ ছিল ঐরূপ বন্ধই আছে। আর ভিতরে সমস্ত মানুষ বানরের আকার বিশিষ্ট হয়ে গেছে। এবং ওদের লেজও বেরিয়েছে। শিশুরা ছোট বানর, পুরুষেরা বড় বানর এবং নারীরা বানরীতে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেককেই চেনা যাচ্ছে যে, এ অমুক তোক সে অমুক নারী। এবং এ অমুক শিশু ইত্যাদি।
এতে যে শুধু মাছ শিকারকারীরাই ধ্বংস হয়েছিল তা নয়, বরং যারা তাদেরকে শুধু নিষেধ করেই চুপচাপ বসে থাকতো এবং তাদের সাথে মেলা মেশা বন্ধ করতো না তারাও ধ্বংস হয়েছিল। এ শাস্তি থেকে শুধুমাত্র তারাই মুক্তি পেয়েছিল যারা তাদেরকে নিষেধ করতঃ তাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক হয়েছিল।
এ সমুদয় কথা এবং কুরআন মাজীদের কয়েকটি আয়াত এটা প্রমাণ করে যে, তারা সত্য সত্যই বানর হয়েছিল, রূপক অর্থে নয়। অর্থাৎ তাদের অন্তর যে বানরের মত হয়েছিল তা নয়-যেমন মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ সঠিক তাফসীর এটাই যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শূকর ও বানর করেছিলেন এবং তাদের বাহ্যিক আকারও ঐ জন্তুদ্বয়ের মত হয়েছিল। আল্লাহই সবচেয়ে বেশী জানেন। (আরবি)-এর মধ্যে (আরবি) সর্বনামটির সম্বন্ধ হচ্ছে (আরবি) শব্দটির সঙ্গে অর্থাৎ ‘আমি ঐ বানরগুলোকে শিক্ষণীয় বিষয় করেছি।' কিংবা এর প্রত্যাবর্তন স্থল হচ্ছে (আরবি) অর্থাৎ মাছগুলোকে অথবা এর সম্বন্ধ হচ্ছে (আরবি)-এর সঙ্গে অথাৎ ঐ শাস্তিকে আমি শিক্ষণীয় বিষয় করেছি। আবার এও বলা হয়েছে যে, এর প্রত্যাবর্তন স্থল হচ্ছে (আরবি) অর্থাৎ ঐ গ্রামকে আমি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী লোকদের জন্যে উপদেশমূলক বিষয় করেছি (আরবি) ভাবার্থ হওয়াই সঠিক বলে মনে হচ্ছে। আর গ্রাম’ হতে ভাবার্থ হচ্ছে গ্রামবাসী।
(আরবি)-এর অর্থ হচ্ছে 'শাস্তি'। যেমন আল্লাহ পাক অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ আল্লাহ তাকে পরকাল ও ইহকালের শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করেন (৭৯:২৫)।' এর ভাবার্থ এটাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, ঐ সময়ে যারা বিদ্যমান ছিল তাদের জন্যে এবং পরে আগমনকারীদের জন্যে এটা শিক্ষনীয় বিষয় করেছেন। যদিও কেউ কেউ এটাও বলেছেন যে, এটা পূর্ববর্তী ও পরবতীদের জন্যে শিক্ষণীয় বিষয়, কিন্তু এটা স্পষ্ট কথা যে, পূর্বে অতীত লোকদের জন্যে এই ঘটনা দলীল হতে পারে না, এটা যত বড়ই শিক্ষণীয় বিষয় হোক না কেন। কেননা তারা তো অতীত হয়েছে। সুতরাং সঠিক কথা এই যে, এখানে ভাবার্থ হচ্ছে স্থান ও জায়গা-অর্থাৎ আশেপাশের গ্রামগুলো। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও হযরত সাঈদ বিন যুবাইরের (রঃ) তাফসীর এটাই। আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে বেশী জনেন।
আবার এ অর্থও করা হয়েছে যে, তাদের পূর্ববর্তী পাপ এবং তাদের পরে আগমনকারীদের এরকমই পাপের জন্যে এ শাস্তিকে আমি শিক্ষণীয় বিষয় করেছি। কিন্তু সঠিক কথা ওটাই যার সঠিকতা আমরা বর্ণনা করেছি। অর্থাৎ আশেপাশের গ্রামগুলো। মোটকথা, এ শাস্তি সে যুগে বিদ্যমান লোকদের জন্যে এবং তাদের পরে আগমনকারীদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়। এ জন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ ‘ওতে পরে আগমনকারীদের জন্যে নসীহত ও উপদেশের মূলধন রয়েছে। এমনকি হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর উম্মতের জন্যেও বটে। এরা যেন ভয় করে যে, কৌশল ও ফন্দির কারণে এবং প্রতারণা করে হারামকে হালাল করার কারণে যে শাস্তি তাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছিল, এখন যারা এরূপ করবে তাদের উপরও না জানি ঐ শাস্তি এসে যায়। ইমাম আবদুল্লাহ বিন বাত্তাহ (রঃ) একটি বিশুদ্ধ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইয়াহূদীরা যা করেছিল তোমরা তা করো না। ফন্দি করে হারামকে হালালরূপে গ্রহণ করো না। অর্থাৎ শরীয়তের নির্দেশাবলীতে ফন্দি ও কৌশল হতে বেঁচে থাক।' এ হাদীসটি সম্পূর্ণরূপে সঠিক। এর সমস্ত বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। আল্লাহই সবচেয়ে বেশী জানেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings