Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 57
Saheeh International
And We shaded you with clouds and sent down to you manna and quails, [saying], "Eat from the good things with which We have provided you." And they wronged Us not - but they were [only] wronging themselves.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
মহান আল্লাহর নি‘য়ামত স্বরূপ মেঘের ছায়া, মান্না ও সালওয়া দান
ওপরে বর্ণিত হয়েছিলো যে, মহান আল্লাহ তাদেরকে অমুক অমুক বিপদ থেকে রক্ষা করেছিলেন। এখানে বর্ণিত হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ তাদেরকে অমুক অমুক সুখ সম্ভোগ দান করেছেন।
একটা সাদা রংয়ের মেঘ ছিলো যা ‘তীহের’ মাঠে তাদের ওপর ছায়া দান করছিলেন যেমন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি সুদীর্ঘ হাদীসে রয়েছে। (সুনান নাসাঈ ৬/৪০৫) ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) বলেন যে, ইবনু ‘উমার (রাঃ), রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ), আবূ মুযলিজ (রহঃ), যাহ্হাক (রহঃ) এবং সুদ্দী (রহঃ) এটাই বলেছেন। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/১৭৪এ) হাসান বাসরী (রহঃ) এবং কাতাদাহ (রহঃ)-ও এ কথাই বলেন। ইবনু জারীর এবং অন্যান্য লোক বলেন যে, এ মেঘ সাধারণ মেঘ হতে বেশি ঠাণ্ডা ও উত্তম ছিলো। (তাফসীর তাবারী ২/৯১) মুজাহিদ (রহঃ) বলেন যে, এটা ঐ মেঘ ছিলো যার মধ্যে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন আগমন করবেন। আবূ হুযাইফা (রহঃ)-এর এটাই উক্তি।
‘মান্না’ ও ‘সালাওয়া’ এর বিবরণ
যে ‘মান্না’ তাদেরকে দেয়া হতো তা গাছের ওপর অবতারণ করা হতো।তারা সকালে গিয়ে তা জমা করতো এবং ইচ্ছা মতো খেয়ে নিতো। হাসান বাসরী (রহঃ) ও কাতাদাহ (রহঃ) বলেন যে, শিলার মতো ‘মান্না’ তাদের ঘরে নেমে আসতো, যা দুধের চেয়ে সাদা ও মধু অপেক্ষা বেশি মিষ্ট ছিলো। সুবহি সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবতারিত হতে থাকতো। প্রত্যেক লোক তার বাড়ীর জন্য ঐ পরিমাণ নিয়ে নিতো যা ঐ দিনের জন্য যথেষ্ট হতো। কেউ বেশি নিলে তা পচে যেতো। শুক্রবারে তারা শুক্র ও শনি এ দু’দিনের জন্য গ্রহণ করতো। কেননা শনিবার ছিলো তাদের জন্য সাপ্তাহিক খুশির দিন। সে দিন তারা জীবিকা অন্বেষণ করতো না। রাবী‘ ইবনু আনাস (রাঃ) বলেন যে, ‘মান্না’ ছিলো মধু জাতীয় জিনিস যা তারা পানি দিয়ে মিশিয়ে পান করতো। ইমাম বুখারীর (রহঃ) হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
‘মান্না’ ব্যাঙ-এর ছাতার অন্তর্গত এবং এর পানি চক্ষু রোগের ঔষধ। (ফাতহুল বারী ৮/১৪, সহীহ মুসলিম ৩/১৬১৯, জামি‘ তিরমিযী ৬/২৩৫, সুনান নাসাঈ ৪/৩৭০, ইবনু মাজাহ ২/১১৪৩, মুসনাদ আহমাদ ১/১৮৭) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) একে হাসান বলেছেন। জামি‘উত তিরমিযীতে আছেঃ
আজওয়াহ নামক মাদীনার এক প্রকার খেজুর হচ্ছে জান্নাতী খাদ্য ও বিষক্রিয়া নষ্টকারী এবং ব্যাঙের ছাতা ‘মান্না’ এর অন্তর্গত ও চক্ষুরোগে আরোগ্যদানকারী। (জামি‘ তিরমিযী ৬/২৩৩, ২৩৫)
‘সালওয়া’ এক প্রকার পাখি, চড়–ই পাখি হতে কিছু বড়, রং অনেকটা লাল। দক্ষিণা বায়ু প্রবাহিত হতো এবং ঐ পাখিগুলোকে জমা করে দিতো। বানী ইসরাঈল নিজেদের প্রয়োজন মতো ওগুলো ধরতো এবং যবেহ করে খেতো। একদিন খেয়ে বেশি হলে তা পচে যেতো। শুক্রবার তারা দুই দিনের জন্য জমা করতো। কেননা শনিবার তাদের জন্য সাপ্তাহিক খুশির দিন ছিলো। সেই দিন তারা ‘ইবাদতে মশগুল থাকতো এবং ঐদিন শিকার করা তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিলো। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/১৭৯) কোন কোন লোক বলেছেন যে, ঐ পাখিগুলো কবুতরের সমান ছিলো। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে এক মাইল জায়গা ব্যাপী ঐ পাখিগুলো বর্শা পরিমাণ উঁচু স্তুপ হয়ে জমা হতো। ঐ তীহের মাঠে ঐ দু’টি জিনিস তাদের খাদ্যরূপে প্রেরিত হতো, যেখানে তারা তাদের নবীকে বলেছিলোঃ ‘এ জঙ্গলে আমাদের আহারের ব্যবস্থা কিরূপে হবে?’ তখন তাদের ওপর ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ অবতারিত হয়েছিলো। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ﴿كُلُوْا مِنْ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقْنٰكُمْ﴾
“তোমাদেরকে যা কিছু জীবিকা দান করা হয়েছে তা আহার করো।” (৭ নং সূরাহ্ আ‘রাফ, আয়াত নং ১৬০)
এ আয়াতে অতি সহজ সরল ভাষায় আদেশ করা হয়েছে যে, যা হালাল তা থেকে যেন মানুষ তাদের আহার্য গ্রহণ করে। তারপর মহান আল্লাহ বলেন, তারা আমার কোনই ক্ষতি করেনি, বরং নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থাৎ তিনি যে হালাল আহার্য দিয়েছেন তা থেকে খাদ্য গ্রহণ এবং তাঁর ‘ইবাদত করার আদেশ করলে লোকেরা তা পালন না করে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেমনটি অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ ﴿كُلُوْا مِنْ رِّزْقِ رَبِّكُمْ وَ اشْكُرُوْا لَهٗ﴾
তোমরা তোমাদের রাব্ব প্রদত্ত রিয্ক ভোগ করো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (৩৪ নং সূরাহ্ সাবা, আয়াত নং ১৫)
কিন্তু বানী ইসরাঈলরা অবাধ্য হলো। তারা ঈমান আনলো না এবং নিজেদের প্রতি যুল্ম করলো। তারা নিজেদের চোখে মু’জিযাহ প্রত্যক্ষ করলো এবং বিভিন্ন ঘটনার স্বাক্ষী হওয়া সত্ত্বেও ঈমান এনে ধন্য হতে পারলোনা।
অন্যান্য নবীর (আঃ) সহচর থেকে সাহাবীগণের (রাঃ) মর্যাদা
বানী ইসরাঈলের এ আচার-আচরণকে সামনে রেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণের (রাঃ) অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, তাঁরা কঠিন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েও এবং সীমাহীন দুঃখ কষ্ট সহ্য করেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্যের ওপর ও আল্লাহ তা‘আলার ‘ইবাদতের ওপর অটল ছিলেন। না তারা মু’জিযা দেখতে চেয়েছিলেন, না দুনিয়ার কোন আরাম চেয়েছিলেন। তাবূকের যুদ্ধে তারা ক্ষুধার জ্বালায় যখন কাতর হয়ে পড়েন, তখন যার কাছে যেটুকু খাবার ছিলো সব জমা করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির করে বলেনঃ ‘হে মহান আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের এ খাবারের বরকতের জন্য প্রার্থনা করুন।’ মহান আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তা‘আলা সে প্রার্থনা মঞ্জুর করে তাতে বরকত দান করেন। তারা খেয়ে পরিতৃপ্ত হন এবং খাবারের পাত্র ভর্তি করে নেন। পিপাসায় তাদের প্রাণ শুকিয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দু‘আর বরকতে এক খণ্ড মেঘ এসে পানি বর্ষিয়ে দেয়। তারা নিজেরা পান করেন, পশুকে পান করান এবং মশক, কলস ইত্যাদি ভর্তি করে নেন। সুতরাং সাহাবীগণের এই অটলতা, দৃঢ়তাপূর্ণ আনুগত্য এবং খাঁটি একাত্মবাদী তাদেরকে মূসা (আঃ)-এর সহচরদের ওপর নিশ্চিতরূপে মর্যাদা দান করেছে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings