Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 278
Saheeh International
O you who have believed, fear Allah and give up what remains [due to you] of interest, if you should be believers.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
আল্লাহ্ভীরুতা অর্জন এবং সুদ পরিহার করা
মহান আল্লাহ্ তাঁর ঈমানদার বান্দাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন তাঁকে ভয় করে ও ঐ কার্যাবলী হতে দূরে থাকে যেসব কাজে তিনি অসন্তুষ্ট থাকেন। তাই তিনি বলেনঃ
﴿ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ ﴾
‘হে মু’মিননগণ! তোমরা সাবধান থেকো, প্রতিটি কাজে মহান আল্লাহ্কে ভয় করে চলো এবং মুসলিমদের ওপর তোমাদের যে সুদ অবশিষ্ট রয়েছে, সাবধান! যদি তোমরা মুসলিম হও তাহলে তা নিবে না!’ কেননা এখন তা হারাম হয়ে গেছে।
যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) , ইবনু যুরাইয (রহঃ) , মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) এবং সুদ্দী (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, এই আয়াতটি সাকিফ গোত্রের উপগোত্র ‘আমর ইবনু ‘উমায়ির এবং মাখজুম গোত্রের বানী মুগীরার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। তাদের উভয় গোত্রের মধ্যে জাহিলিয়াত যামানা থেকে সুদের লেনদেন চলে আসছিলো। উভয় গোত্রের লোকেরা যখন ইসলাম কবূল করে তখন মুগীরাহ গোত্রের লোকদের কাছে সাকিফ গোত্রের লোকদের সুদের টাকা পাওনা ছিলো। মুগীরাহ গোত্রের লোকদের কাছে সুদের টাকা চাইতে গেলে তারা সাকিফ গোত্রের লোকদেরকে বলেঃ ইসলাম কবূল করার পর আমরা আর সুদ প্রদান করতে পারি না। অবশেষে তাদের মাঝে ঝগড়া বেধে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাক্কার প্রতিনিধি আত্তাব ইবনু উসাইদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে একটি চিঠি লেখেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা লিখে পাঠিয়ে দেন এবং তাদের জন্য সুদ গ্রহণ অবৈধ ঘোষণা করেন। ফলে বানূ আমর তাওবাহ করে তাদের সুদ সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেয়। এই আয়াতে ঐ লোকদের ভীষণভাবে ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে যারা সুদের অবৈধতা জানা সত্ত্বেও তার ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
সুদের অপর নাম মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে যুদ্ধ করা
﴿ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ﴾ এ আয়াতের ব্যাপারে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ‘কিয়ামতের দিন সুদখোরকে বলা হবেঃ
خُذْسِلَاحَكَلِلْحَرْبِ.
‘তোমরা অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহান আল্লাহ্র সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও।’ (তাফসীর তাবারী -৬/২৬) তিনি বলেনঃ ‘যে সময়ে যিনি ইমাম থাকবেন তার জন্য এটা অবশ্য কর্তব্য যে, যারা সুদ পরিত্যাগ করবে না তাদেরকে তাওবাহ করাবেন। যদি তারা তাওবাহ না করে তাহলে তিনি তাদেরকে হত্যা করবেন।’ (তাফসীর তাবারী -৬/২৫) হাসান বাসরী (রহঃ) ও ইবনু সীরীন (রহঃ) এরও এটাই উক্তি। কাতাদাহ (রহঃ) বলেনঃ দেখো মহান আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করার ভয় প্রদর্শন করেছেন এবং তাদেরকে লাঞ্ছিত হওয়ার যোগ্য বলে সাবধান করেছেন। অতএব সুদ থেকে ও সুদের ব্যবসা থেকে দূরে থাকবে। হালাল জিনিস ও হালাল ব্যবসা অনেক রয়েছে। না খেয়ে থাকবে তথাপি মহান আল্লাহ্র অবাধ্য হবে না। পূর্বের বর্ণনাটিও স্মরণ থাকতে পারে যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সুদযুক্ত লেনদেনের ব্যাপারে যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) -এর সম্বন্ধে বলেছিলেনঃ তার জিহাদ নষ্ট হয়ে গেছে। কেননা, জিহাদ হচ্ছে মহান আল্লাহ্র শত্রুদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নাম,অথচ সুদখোর নিজেই মহান আল্লাহ্র সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কিন্তু এর ইসনাদ দুর্বল। (তাফসীর তাবারী -৬/২৬/৬২৯৬)
অতঃপর ইরশাদ হচ্ছেঃ ﴿ وَ اِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْۚ لَا تَظْلِمُوْنَ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ﴾ ‘যদি তাওবাহ করো তাহলে তোমার আসল মাল যার নিকট রয়েছে তা তুমি অবশ্যই আদায় করবে। আরো বলা হয়েছে وَلَاتُظْلَمُوْنَ বেশি নিয়ে তুমিও তার ওপর অত্যাচার করবে না এবং সেও তোমাকে কম দিয়ে অথবা মূলধন না দিয়ে তোমার ওপর অত্যাচার করবে না।’ বিদায় হাজ্জের গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
أَلَا إِنَّ كُلَّ رِبًا كَانَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ عَنْكُمْ كُلُّهُ، لَكُمْ رُؤُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ، وَأَوَّلُ رِبًا مَوْضُوعٍ رِبَا الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، مَوْضُوعٌ كُلُّهُ.
‘অজ্ঞতার যুগের সমস্ত সুদ আমি ধ্বংস করে দিলাম। মূল সম্পদ গ্রহণ করো। বেশি নিয়ে তোমরাও কারো ওপর অত্যাচার করবে না এবং কেউই তোমাদের মাল আত্মসাৎ করে তোমাদের ওপর অত্যাচার করবে না। আমি প্রথমেই যার সুদ বাতিল ঘোষণা করছি তা হচ্ছে ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) -এর পাওনা সমস্ত সুদ।’ (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম-৩/১১৪৭, সহীহ মুসলিম-২/১৪৭/৮৮৬, সুনান আবু দাঊদ-২/১৮২/১৯০৫, সুনান ইবনু মাজাহ-২/১০২২/৩০৭৪, মুসনাদ আহমাদ -৫/৭৩)
আর্থিক অনটনে জর্জরিত দেনাদারের প্রতি স্বচ্ছলতা পর্যন্ত অবকাশ দেয়া উচিত
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿ وَ اِنْ كَانَ ذُوْ عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ اِلٰى مَیْسَرَةٍ وَ اَنْ تَصَدَّقُوْا خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾ যদি কোন অস্বচ্ছল ব্যক্তির নিকট তোমার প্রাপ্য থাকে এবং সে তা পরিশোধ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে তাহলে তাকে কিছুদিন অবকাশ দাও যে, সে আরো কিছুদিন পর তোমাকে তোমার প্রাপ্য পরিশোধ করবে। সাবধান! দ্বিগুণ-ত্রিগুণ হারে সুদ বৃদ্ধি করবে না। বরং ঐ সব দরিদ্রের ঋণ ক্ষমা করে দেয়াই মহা উত্তম কাজ। ইমাম তাবারানী (রহঃ) -এর হাদীসে রয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُظِلَّهُ اللهُ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ، فَلْيُيَسِّر عَلَى مُعْسِرٍ أَوْ لِيَضَعْ عَنْهُ.
‘যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্র ‘আরশের ছায়া লাভ কামনা করে সে যেন এই প্রকারের দরিদ্রদেরকে অবকাশ দেয় বা ঋণ সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা করে দেয়।’ (আল মাজমা‘উযযাওয়ায়িদ-৪/১৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ-২/৮০৮/২৪১৯, সহীহ মুসলিম-৪/৭৪/২৩০১, ২৩০৪) মুসনাদ আহমাদে রয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا فَلَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ مِثْلَاهُ صَدَقَةٌ. قُلْتُ: سَمِعْتُكَ -يَا رَسُوْلَ اللهِ- تَقُولُ: مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا فَلَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ مِثْلُهُ صَدَقَةٌ. ثُمَّ سَمِعْتُكَ تَقُولُ: مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا فَلَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ مِثْلَاهُ صَدَقَةٌ؟ قَالَ: "لَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ مِثْلُهُ صَدَقَةٌ قَبْلَ أَنْ يَحِلَّ الدَّيْنُ فَإِذَا حَلَّ الدَّيْنُ فَأَنْظَرَهُ، فَلَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ مِثْلَاهُ صَدَقَةٌ.
‘যে ব্যক্তি কোন দরিদ্র লোকের ওপর স্বীয় প্রাপ্য আদায়ের ব্যাপারে নম্রতা প্রকাশ করে এবং তাকে অবকাশ দেয়; অতঃপর যতোদিন পর্যন্ত সে তার কাছে প্রাপ্য পরিশোধ করতে না পারবে ততোদিন পর্যন্ত সে প্রতিদিন সেই পরিমাণ দান করার সাওয়াব পেতে থাকবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘সে প্রতিদিন এর দ্বিগুণ পরিমাণ দানের সাওয়াব পেতে থাকবে।’ এ কথা শুনে বুরাইদাহ (রাঃ) বলেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! পূর্বে আপনি ঐ পরিমাণ দানের সাওয়াব প্রাপ্তির কথা বলেছিলেন। আর এখন এর দ্বিগুণ পরিমাণ সাওয়াব প্রাপ্তির কথা বললেন?’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন’ হ্যাঁ, যে পর্যন্ত মেয়াদ অতিক্রান্ত না হবে সে পর্যন্ত এর সমপরিমাণ দানের সাওয়াব লাভ করবে এবং যখন মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়ে যাবে তখন এর দ্বিগুণ পরিমাণ দানের সাওয়াব লাভ করবে।’ (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদ আহমাদ -৫/৩৬০) ইমাম আহমাদ (রহঃ) বর্ণনা করেন, মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব আল-কারাযী (রহঃ) বলেছেন যে, এক লোকের কাছে আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) -এর কিছু টাকা পাওনা ছিলো। তিনি ঐ ঋণ আদায়ের তাগাদায় তার বাড়ী যেতেন; কিন্তু সে লুকিয়ে থাকতো এবং তার সাথে দেখা করতো না। একবার তিনি তার বাড়ী এলে একটি ছেলে বেরিয়ে আসে। তিনি তাকে তার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেন। সে বলেঃ ‘হ্যাঁ, তিনি বাড়ীতেই আছেন এবং খাবার খাচ্ছেন।’ তখন আবূ কাতাদাহ (রাঃ) তাকে উচ্চস্বরে ডাক দিয়ে বলেনঃ ‘আমি জেনেছি যে, তুমি বাড়ীতেই আছো; সুতরাং বাইরে এসো এবং উত্তর দাও। ঐ বেচারা বাইরে এলে তিনি তাকে বললেনঃ ‘লুকিয়ে থাকছো কেন?’ লোকটি বললোঃ ‘জনাব! প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আমি একজন দরিদ্র লোক। এখন আমার নিকট আপনার ঋণ পরিশোধ করার মতো অর্থ নেই। তাই, লজ্জায় আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারি না।’ তিনি বলেনঃ ‘শপথ করো।’ সে শপথ করলো। এ অবস্থা দেখে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন এবং বললেনঃ ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মুখে শুনেছিঃ
مَنْ نَفَّسَ عَنْ غَرِيمِهِ -أَوْ مَحَا عَنْهُ -كَانَ فِي ظِلِّ الْعَرْشِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
‘যে ব্যক্তি দরিদ্র ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দেয় কিংবা তার ঋণ ক্ষমা করে দেয় সে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্র ‘আরশের ছায়ার নীচে থাকবে।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহ মুসলিম-৩/৩২/১১৯৪, মুসনাদ আহমাদ -৫/৩০৮)
আবূ ইয়া‘লা (রহঃ) বর্ণনা করেন, হুযাইফা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন একটি লোককে মহান আল্লাহ্র সামনে আনা হবে। তাকে মহান আল্লাহ্ জিজ্ঞেস করবেনঃ ‘বলো, তুমি আমার জন্য কি সাওয়াব কামাই করেছো?’ সে বলবেঃ হে মহান আল্লাহ্! আমি এমন একটি অণু পরিমাণ সাওয়াবেরও কাজ করতে পারিনি যার প্রতিদান আমি আপনার নিকট যাঞ্চা করতে পারি।’ মহান আল্লাহ্ পুনরায় এটাই জিজ্ঞেস করবেন এবং সে একই উত্তর দিবে। মহান আল্লাহ্ আবার জিজ্ঞেস করবেন। এবার লোকটি বলবেঃ হে মহান আল্লাহ্! একটি সামান্য কথা মনে পড়েছে। আপনি দয়া করে কিছু মালও আমাকে দিয়েছিলেন। আমি ব্যবসায়ী লোক ছিলাম। লোকেরা আমার নিকট হতে ধার কর্য নিতো। আমি যখন দেখতান যে, এই লোকটি দরিদ্র এবং পরিশোধের নির্ধারিত সময়ে সে কর্য পরিশোধ করতে পারছে না তখন আমি তাকে আরো কিছুদিন অবকাশ দিতাম। ধনীদের ওপরও পীড়াপীড়ি করতাম না। অত্যন্ত দরিদ্র ব্যক্তিকে ক্ষমাও করে দিতাম।’ তখন মহান আল্লাহ্ বলবেনঃ তাহলে আমি তোমার পথ সহজ করবো না কেন? আমি তো সর্বাপেক্ষা বেশি সহজকারী। যাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তুমি জান্নাতে চলে যাও।’ (সহীহুল বুখারী-৪/৩৬০/২০৭৭, ফাতহুল বারী ৬/৫৭০, সহীহ মুসলিম-৩/২৭-২৯/১১৯৫, সুনান ইবনু মাজাহ২/৮০৮/২৪২০)
মুসতাদরাক হাকিম গ্রন্থে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ্র পথে যুদ্ধকারী যোদ্ধাকে সাহায্য করে বা দরিদ্র ঋণগ্রস্তকে সাহায্য দেয় অথবা মুকাতাব গোলাম (যে গোলাম কে তার মনিব বলে দিয়েছেন, তুমি আমাকে এতো টাকা দিলে তুমি আযাদ হয়ে যাবে) কে সাহায্য দান করে, তাকে মহান আল্লাহ্ ঐ দিন ছায়া দান করবেন যেই দিন তার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। মুসনাদ আহমাদ ' গ্রন্থে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কামনা করে যে, তার প্রাথনা কবূল করা হোক এবং তার কষ্ট ও বিপদ দূর করা হোক সে যেন অস্বচ্ছল লোকদের ওপর স্বচ্ছলতা আনয়ন করে। ‘আব্বাস ইবনু ওয়ালিদ (রহঃ) বলেনঃ আমি ও আমার পিতা বিদ্যানুসন্ধানে বের হই এবং আমরা বলি যে, আনসারদের নিকট হাদীস শিক্ষা করবো। সর্বপ্রথম আবুল ইয়াসার (রাঃ) আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করে। তার সাথে তার একটি গোলাম ছিলো, যার হাতে একখানা খাতা ছিলো। গোলাম ও মনিব একই পোশাক পরিহিত ছিলেন। আমার পিতা তাঁকে বলেনঃ হ্যাঁ,অমুক ব্যক্তির ওপর আমার কিছু ঋণ ছিলো। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। ঋণ আদায়ের জন্য আমি তার বাড়িতে গমন করি। সালাম দিয়ে সে বাড়িতে আছে কি না জিজ্ঞেস করি। বাড়িতে নেই এই উত্তর আসে। ঘটনাক্রমে তার ছোট ছেলে বাইরে আসে। তাঁকে জিজ্ঞেস করি, তোমার আব্বা কোথায় রয়েছে? সে বলে, আপনার শব্দ শুনে খাটের নিচে লুকিয়ে গেছেন। আমি আবার ডাক দেই এবং বলি, তুমি যে ভিতরে রয়েছো তা আমি জানতে পেরেছি। সুতরাং লুকিয়ে থেকো না বরং এসে উত্তর দাও। সে আসে আমি বলি, লুকিয়ে ছিলে কেন? সে বলে, আমার নিকট এখন অর্থ নেই। সুতরাং সাক্ষাৎ করলে আমাকে মিথ্যা ওযর পেশ করতে হবে, না হয় মিথ্যা অঙ্গীকার করতে হবে। তাই আমি আপনার সামনে আসতে লজ্জাবোধ করছিলাম। আপনি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবী। সুতরাং আপনাকে মিথ্যা কথা কি করে বলি? আমি বলি, তুমি মহান আল্লাহ্র শপথ করে বলতো যে, তোমার নিকট অর্থ নেই। তিনবার আমি তাকে শপথ করিয়ে নেই, সে তিনবার শপথ করে। আমি খাতা থেকে তার নাম কাটিয়ে নেই এবং ঋণের অর্থ পরিশোধ লিখে নেই। অতঃপর তাকে বলি, যাও তোমার নাম হতে এই অংক কেটে দিলাম। এরপর যদি অর্থ পেয়ে যাও তবে আমার এই ঋণ পরিশোধ করে দিবে। নচেৎ তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। জেনে রেখো, আমার এই চক্ষু যুগল দেখেছে, আমার এই কর্ণদ্বয় শুনেছে এবং আমার অন্তকরণ বেশ মনে রেখেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا، أَوْ وَضَعَ عَنْهُ أَظَلَّهُ اللهُ فِي ظِلِّهِ.
‘যে ব্যক্তি কোন দরিদ্রকে অবকাশ দেয় কিংবা ক্ষমা করে দেয়, মহান আল্লাহ্ তাকে নিজের ছায়ায় স্থান দিবেন।’ (সহীহ মুসলিম-৪/৭৪/পৃষ্ঠা-২৩০১-২৩০৪)
মুসনাদ আহমাদের অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে আগমন করেন। মাটির দিকে মুখ করে তিনি বলেনঃ
مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ لَهُ، وَقَاهُ اللَّهُ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ، أَلَا إِنَّ عَمَلَ الْجَنَّةِ حَزْنٌ بِرَبْوَةٍ -ثَلَاثًا -أَلَا إِنَّ عَمَلَ النَّارِ سَهْلٌ بِسَهْوَةٍ، وَالسَّعِيدُ مَنْ وُقِيَ الْفِتَنَ، وَمَا مِنْ جَرْعَةٍ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنْ جَرْعَةِ غَيْظٍ يَكْظِمُهَا عَبْدٌ، مَا كَظَمَهَا عَبْدٌ لِلَّهِ إِلَّا مَلَأَ اللَّهُ جَوْفَهُ إِيمَانًا.
‘যে ব্যক্তি কোন নিঃস্ব ব্যক্তির পথ সহজ করবে বা তাকে ক্ষমা করে দিবে, মহান আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের প্রখরতা হতে রক্ষা করবেন। জেনে রেখো যে, জান্নাতের কাজ দুঃখজনক ও প্রবৃত্তির প্রতিকূল এবং জাহান্নামের কাজ সহজ ও প্রবৃত্তির অনুকূল। ঐ লোকরাই পুণ্যবান যারা ফিতনা ও গণ্ডগোল হতে দূরে থাকে। মানুষ ক্রোধের যে চুমুক পান করে নেয় ঐ চুমুক মহান আল্লাহ্র নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয়। যারা এরূপ করে তাদের অন্তর মহান আল্লাহ্ ঈমান দ্বারা পূর্ণ করে দেন। (হাদীসটি য‘ঈফ। মুসনাদ আহমাদ -১/৩২৭, আল মাজমা‘উযযাওয়ায়িদ-৪/১৩৩, ১৩৪)
তাবারানীর হাদীসের মধ্যে রয়েছে যেঃ
مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا إِلَى مَيْسَرَتِهِ أَنْظَرَهُ اللهُ بِذَنْبِهِ إِلَى تَوْبَتِهِ.
‘যে ব্যক্তি কোন দরিদ্র ব্যক্তির ওপর দয়া প্রদর্শন করতঃ স্বীয় ঋণ আদায়ের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করে না, মহান আল্লাহ্ তাকে তার পাপের জন্য ধরেন না, শেষ পর্যন্ত সে তাওবাহ করে।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। আল মাজমা‘উযযাওয়ায়িদ-৪/১৩৫, তাবারানী- ১/৯১)
﴿ وَ اتَّقُوْا یَوْمًا تُرْجَعُوْنَ فِیْهِ اِلَى اللّٰهِ١۫ۗ ثُمَّ تُوَفّٰى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا یُظْلَمُوْنَ﴾
অতঃপর মহান আল্লাহ্ স্বীয় বান্দাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন এবং তাদেরকে দুনিয়ার লয় ও ক্ষয়, মালের ধ্বংসশীলতা, পরকালের আগমন, মহান আল্লাহ্র নিকট প্রত্যাবর্তন, মহান আল্লাহ্কে নিজেদের কাজের হিসাব প্রদান এবং সমস্ত কাজের প্রতিদান প্রাপ্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ও তার শাস্তি থেকে ভয় প্রদর্শন করছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে এটাও বর্ণিত আছে যে, কুর’আনুল হাকীমে এটাই সর্বশেষ আয়াত। (সহীহুল বুখারী-৮/৫২/৪৫৪৪, সুনান নাসাঈ -৬/৩০৭/১১০৫৭, তাফসীর তাবারী -৬/৪০)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর একটি বর্ণনায় এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর একত্রিশ দিন জীবিত থাকার কথা বর্ণিত হয়েছে। ইবনু জুরাইয (রহঃ) বলেনঃ পূর্ববর্তী মনীষীদের উক্তি এই যে, এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নয়দিন জীবিত ছিলেন। শনিবার হতে আরম্ভ হয় এবং তিনি সোমবারে ইন্তিকাল করেন। মোট কথা, কুর’আন মাজীদে সর্বশেষ এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings