Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 277
Saheeh International
Indeed, those who believe and do righteous deeds and establish prayer and give zakah will have their reward with their Lord, and there will be no fear concerning them, nor will they grieve.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
২৭৫-২৭৭ নং আয়াতের তাফসীর:
পূর্বের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা দানের প্রতি উৎসাহ, দানের ফযীলত ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ আয়াতে যারা সুদ খায় কিয়ামতের দিন তাদের কী অবস্থা হবে, সুদের বিধি-বিধান ও যারা সুদের বিধান জানার পরেও বর্জন করে না তাদের বিধান সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
সুদ দারিদ্র বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের প্রধান অন্তরায়। এটি মানব জীবনে এমন একটি মারাত্মক ব্যাধি যা দরিদ্রকে নিঃসম্বল করে আর সম্পদশালীদের সম্পদ বেশী করে। এটি সমাজের একশ্রেণির পুঁজিবাদী লোকেদের অন্যের সম্পদ শোষণের হাতিয়ার। পূর্ববর্তী জাতিকে যেসকল অপরাধের কারণে লা‘নত করা করা হয়েছে তাদের অন্যতম একটি হল সুদ (সূরা নিসা ৪:২৬৯)। যারা জেনেশুনে সুদ খায়, সুদ বৈধতার লাইসেন্স প্রদান করে তারা মূলত আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। সুতরাং এমন জঘন্য অপরাধ থেকে সকলকে সতর্ক হওয়া উচিত।
সুদের পরিচয়: সুদের আরবি হল- রিবা (الربا) যার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, অতিরিক্ত। উদ্দেশ্য হল যা মূল ধনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়।
শরীয়তের পরিভাষায় সুদ:
প্রধানত সুদ দু’প্রকারে হয়- (১) বাকীতে সুদ ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতা সময়ের তারতম্যে মূল ধনের অতিরিক্ত যা গ্রহণ করে থাকে। যেমন এক টাকায় এক বছর পর দুই টাকা গ্রহণ করা।
(২) একই জাতীয় দ্রব্য বা পণ্য লেনদেনে কম-বেশি করা যদিও দ্রব্য বা পণ্যের মানে তারতম্য হয়। যেমন এক কেজি চাউলের বিনিময়ে দু’কেজি চাউল গ্রহণ করা।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে খায়বারের কর্মচারী নিয়োগ দিলেন। সে ভাল ভাল খেজুর নিয়ে আসল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: খায়বারের সব খেজুর কি এরূপ? সে বলল: না, দু’সা‘ (এক সা‘ প্রায় আড়াই কেজি) নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে এক সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি, আবার তিনি সা‘ নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে দু’সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এরূপ করো না, (নিম্নমানের খেজুর) সব দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে তারপর দিরহাম দ্বারা ভাল খেজুর ক্রয় কর। (সহীহ বুখারী হা:২০৮৯)
প্রথমেই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সুদখোরদের ভয়ানক অবস্থা ও লাঞ্ছনা-বঞ্ছনার একটি উপমা তুলে ধরেছেন। যারা সুদ খায় তারা হাশরের দিন কবর থেকে ঐ ব্যক্তির মত উঠবে যে ব্যক্তিকে কোন শয়তান-জিন আছর করে উন্মাদ ও পাগল করে দেয়। তাদের এ ভয়ানক ও লাঞ্ছনার কারণ হল, তারা সুদকে ব্যবসার মত হালাল মনে করে। তাদের বক্তব্য হলো ব্যবসায় যেমন হালাল, ব্যবসা করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় তেমনি সুদ সম্পদ বৃদ্ধি করে, তাই ব্যবসার মত সুদও হালাল, উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এখান থেকে জানা গেল, জিন ও শয়তানের আছরের ফলে মানুষ অজ্ঞান কিংবা উন্মাদ হতে পারে। এর বাস্তবতা রয়েছে, চিকিৎসাবিদ ও দার্শনিকরাও স্বীকার করেন। মৃত্যুকালীন সময় শয়তানের আছর থেকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাইতেন। (নাসায়ী হা: ৫৫৩১, সহীহ)
প্রথমেই সুদখোরদের এ ভয়ানক অবস্থা আলোচনার কারণ হল, যাতে মানুষ সুদ থেকে বিরত থাকে। আয়াতে ‘সুদ খাওয়া’র (یَاْکُلُوْنَ) কথা বলা হয়েছে। এ অর্থ হল- সুদ গ্রহণ করা ও সুদী লেন-দেন করা। খাওয়ার জন্য ব্যবহার করুক, কিংবা পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি অথবা আসবাবপত্র নির্মাণে ব্যবহার করুক। কিন্তু বিষয়টি ‘খাওয়া’শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করার কারণ হল- যে বস্তু খেয়ে ফেলা হয়, তা আর ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকে না। অন্যরকম ব্যবহারে ফেরত দেয়ার সুুযোগ থাকে। তাই পুরোপুরি আত্মসাৎ করার কথা বুঝাতে ‘খেয়ে ফেলা’শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
(لَا یَقُوْمُوْنَ اَلاَّ...)
‘দণ্ডায়ামন হবে’এখানে দণ্ডায়মান হওয়ার অর্থ হল- কবর থেকে হাশরের উদ্দেশ্যে উঠা। সুদখোর যখন কবর থেকে উঠবে তখন ঐ পাগল বা উন্মাদের মত উঠবে যাকে কোন শয়তান-জিন আছর করে দিশেহারা করে দেয়।
(فَمَنْ جَا۬ءَھ۫ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّھ۪ فَانْتَھٰی)
‘সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসবে’অর্থাৎ যে ব্যক্তির কাছে ‘সুদ হারাম’- আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী পৌঁছল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে সুদ খাওয়া ও সকল প্রকার সুদী লেন-দেন বর্জন করল এমন ব্যক্তির পূর্ববর্তী সুদী লেন-দেনের জন্য পাকড়াও করবেন না। আর যে ব্যক্তি জানার পরও বিরত থাকবে না তার ঠিকানা জাহান্নাম।
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: সুদ সম্পর্কে সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের নিকট তা পাঠ করে শোনালেন। তারপর সুদের ব্যবসায় নিষিদ্ধ করে দিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৪০)
সুদখোরদের শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
যেমন তিনি বলেন:
الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ
সুদের ৭০টি অপরাধ রয়েছে আর সর্বনিম্ন অপরাধ হল সুদখোর যেন তার মাকে বিবাহ করল। (সহীহুত তারগীব হা: ১৮৫৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَعَنَ اللَّهُ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَشَاهِدَهُ وَكَاتِبَهُ
আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, সাক্ষ্য দানকারী ও লেখকের প্রতি। (নাসাঈ হা: ৫০১৪, সহীহ)
যে সাতটি কারণে জাতির ধ্বংস অনিবার্য তার অন্যতম একটি হল সুদ। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬)
(یَمْحَقُ اللہُ الرِّبٰوا)
‘আল্লাহ তা‘আলা সুদকে মিটিয়ে দেন’অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে সুদী লেন-দেন করে যতই লাভ আসুক, পরিমাণে যতই বেশি দেখা যাক প্রকৃতপক্ষে তা বেশি না, তাতে কোন বরকত নেই। আল্লাহ তা‘আলা তার অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ اٰتَیْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّیَرْبُوَا فِیْٓ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرْبُوْا عِنْدَ اللہِ)
“মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের সম্পদবৃদ্ধি পাবে এ আশায় যা কিছু তোমরা সুদ ভিত্তিক দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না।”(সূরা রূম ৩০:৩৯)
অবশেষে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য ও দান-সদকার প্রতিদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি হালাল অর্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদাকাহ করবে (আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করেন) এবং আল্লাহ তা‘আলা কেবল পবিত্র বস্তু কবুল করেন আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ডান হাত দ্বারা তা কবূল করেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদাক্বাহ পাহাড় সমপরিমাণ হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ১৪১০)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদখোরদের ভয়ানক পরিণতি বিশেষ করে যারা সুদ হারাম হবার কথা জানার পরেও বিরত থাকবে না।
২. সকল প্রকার সুদ হারাম।
৩. সুদে সম্পদ বৃদ্ধি হয় না।
৪. ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদ।
৫. আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে তার প্রমাণ পেলাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings