Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 27
Saheeh International
Who break the covenant of Allah after contracting it and sever that which Allah has ordered to be joined and cause corruption on earth. It is those who are the losers.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
২৭নং আয়াতের তাফসীর:
এ সমস্ত গুণাবলী হল কাফিরদের যা মু’মিনদের সম্পূর্ণ বিপরীত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যে ব্যক্তি সত্য বলে জানে সে আর অন্ধ কি সমান? উপদেশ গ্রহণ করে শুধু বিবেকশক্তিসম্পন্নগণই, যারা আল্লাহ প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে না, আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ণ রাখে, ভয় করে তাদের প্রতিপালককে এবং ভয় করে কঠোর হিসেবকে, যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়িম করে, আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভাল দ্বারা মন্দ দূরীভূত করে, এদের জন্য শুভ পরিণাম- স্থায়ী জান্নাত, এতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সস্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎ কর্ম করেছে তারাও এবং ফেরেশতাগণ তাদের নিকট উপস্থিত হবে প্রত্যেক দ্বার দিয়ে এবং বলবে, ‘তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; কত ভাল এ পরিণাম!’যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হবার পর সেটা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের জন্য আছে লা‘নত এবং তাদের জন্য আছে মন্দ আবাস।”(সূরা রা‘দ ১৩:১৯-২৫)
অত্র আয়াতে “যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে” এ ওয়াদা দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে সে বিষয়ে মুফাসসিরগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
১. একদল বলেন: এখানে অঙ্গীকারের অর্থ এই যে, আল্লাহ তা‘আলার সম্পূর্ণ নির্দেশ মেনে চলা এবং সমস্ত নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকা। তা ভঙ্গ করার অর্থ হচ্ছে তার ওপর আমল না করা।
২. কেউ বলেন: অঙ্গীকার ভঙ্গকারীরা হচ্ছে আহলে কিতাবের কাফির ও মুনাফিকরা। অঙ্গীকার হচ্ছে যা তাওরাতে তাদের কাছে নেয়া হয়েছিল, তারা তার সমস্ত কথা মেনে চলবে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য স্বীকার করবে, তাঁর নবুওয়াতে বিশ্বাস করবে এবং তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা সত্য মনে করবে। আর অঙ্গীকার ভঙ্গ করা এই যে, জেনে-শুনে তারা তাঁর নবুওয়াত ও আনুগত্য অস্বীকার করেছে এবং অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও তারা তা গোপন করেছে, আর পার্থিব স্বার্থের কারণে তার উল্টোটা করেছে। ইমাম ইবনে জারীর ও মুকাতিল ইবনে হিব্বানও এ কথা বলেছেন।
৩. কারো মতে, এর ভাবার্থে কোন নির্দিষ্ট দলকে বুঝায় না, বরং সমস্ত কাফির-মুশরিক ও মুনাফিককে বুঝায়, অঙ্গীকারের ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ ও তাঁর নাবীর নবুওয়াতকে স্বীকার করা- যার প্রমাণে প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী ও বড় বড় মু‘জিযাহ বিদ্যমান রয়েছে। আর তা ভেঙ্গে দেয়ার অর্থ হচ্ছে তাওহীদ ও সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং অস্বীকার করা। এ কথাটিই অধিক মজবুত ও যুক্তিযুক্ত। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
আল্লামা সা‘দী বলেন, এখানে অঙ্গীকার দ্বারা সকল অঙ্গীকার শামিল। যা মানুষ ও তাদের রবের মাঝে এবং তাদের ও সৃষ্টি জীবের মাঝে (অঙ্গীকার) বিদ্যমান। (তাফসীরে সা‘দী, পৃ. ২৪)
আবার কেউ বলেন: আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে সকল সন্তানদের বের করার পর যে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاِذْ اَخَذَ رَبُّکَ مِنْۭ بَنِیْٓ اٰدَمَ مِنْ ظُھُوْرِھِمْ ذُرِّیَّتَھُمْ وَاَشْھَدَھُمْ عَلٰٓی اَنْفُسِھِمْﺆ اَلَسْتُ بِرَبِّکُمْﺚ قَالُوْا بَلٰیﹱ شَھِدْنَا)
“স্মরণ কর! যখন তোমার প্রতিপালক আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তার বংশধরকে বের করলেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করলেন এবং বললেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’তারা বলল: ‘হ্যাঁ অবশ্যই আমরা সাক্ষী রইলাম।”(সূরা আ‘রাফ ৭:১৭২)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوآ أَرْحَامَكُمْ)
“এখন তোমাদের কাছে এ ছাড়া আর কিছু কি আশা করা যায় যে, যদি তোমরা জনগণের শাসক হও তাহলে দুনিয়াতে ফাসাদ করবে এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করবে?” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:২২)
সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার মধ্যে অন্যতম একটি দিক হল- সকল রাসূলদের প্রতি ঈমান আনা। তাই কতক রাসূলে প্রতি ঈমান আনা আর কতকের প্রতি ঈমান না আনা সম্পর্ক ছিন্ন করার শামিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللّٰهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا)
“এবং তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে ঈমানের ব্যাপারে তারতম্য করতে চায় এবং বলে ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অবিশ্বাস করি’; আর তারা মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়, এরাই প্রকৃত কাফির।”(সূরা নিসা ৪:১৫০-৫১)
তবে আল্লামা সা‘দী (রহঃ) বলেন: এতে অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁর প্রতি ঈমান ও তাঁর ইবাদত করার মধ্য দিয়ে তাঁর সাথে সম্পর্ক বহাল রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূলের প্রতি ঈমান, ভালবাসা, সম্মান প্রদর্শন ও তাঁর সকল অধিকার আদায় করার মাধ্যমে আমাদের তাঁর সাথে সম্পর্ক বহাল রাখতে এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সমস্ত সৃষ্টি জীবের যথার্থ হক আদায় করে আমাদের ও তাদের সাথে সম্পর্ক বহাল রাখতে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
অতএব মু’মিনদের আল্লাহ তা‘আলা যে সকল সম্পর্ক বহাল রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তারা তা যথাযথ বহাল রাখে আর ফাসিকরা তা ক্ষুণ্ণ করে; এটাই হল জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা। তারাই হল দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত। (তাফসীর সা‘দী পৃ: ২৪)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, যে সকল অন্যায়ের কথা আল্লাহ তা‘আলা অমুসলিমদের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, জালিম, পাপাচারী, ফাসিক ইত্যাদি- এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল কুফর। আর যা মুসলিমদের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন তার দ্বারা উদ্দেশ্য হল নিন্দা করা। (ফাতহুল কাদীর ১/৯৫-৯৬)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অঙ্গীকার ভঙ্গ করা মুনাফিক ও কাফিরদের বৈশিষ্ট্য। সেটা যেকোন প্রকার অঙ্গীকার হতে পারে।
২. কাফিররা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আর মু’মিনরা তা বহাল রাখে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings