Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 269
Saheeh International
He gives wisdom to whom He wills, and whoever has been given wisdom has certainly been given much good. And none will remember except those of understanding.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
২৬৭ থেকে ২৬৯ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
বারা বিন আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: এ আয়াতটি আমাদের আনসারদের ব্যাপারে নাযিল হয়। আমরা ছিলাম খেজুরের মালিক। যার যেমন সাধ্য ছিল সে অনুযায়ী কম-বেশি দান করার জন্য নিয়ে আসত। কিছু মানুষ ছিল যাদের কল্যাণমূলক কাজে কোন উৎসাহ ছিল না। তাই তারা খারাপ ও নিম্নমানের খেজুর নিয়ে এসে মাসজিদে নাববীর খুঁটির সাথে ঝুলিয়ে দিত। ফলে
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا..... مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ)
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিস দান কর’নাযিল হয়। (সহীহ, তিরমিযী হা: ২৯৮৭) এ আয়াতের শানে নুযুলের ব্যাপারে এছাড়া আরো বর্ণনা পাওয়া যায়। (লুবাবুন নুকূল, পৃঃ ৫৭)
দান-সদাকাহ আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হওয়ার জন্য যেমন শর্ত হল দান-সদাকাহ করার পর খোঁটা বা কষ্ট দেয়া যাবে না, তেমনি আরো দু’টি শর্ত রয়েছে: (১) হালাল ও পবিত্র উপার্জন হতে দান করতে হবে। হালাল উপার্জন ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে হতে পারে অথবা কায়িম শ্রম ও চাকুরীর মাধ্যমেও হতে পারে। সেদিকেই ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন ‘তোমরা যা উপার্জন করেছ।’আবার জমি থেকে উৎপাদিত পবিত্র ফসল হতেও দান করা যাবে। সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন ‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে’। হারাম পন্থায় উপার্জন করে দান-সদাকাহ করলে, হজ্জ করলে কোন উপকারে আসবে না।
(২) যে দান-সদাকাহ করবে তাকেও সদুদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে হবে। কোন খারাপ নিয়তে কিংবা নাম-যশ অর্জনের উদ্দেশ্যে দান-সদাকাহ করলে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবুল হবে না। এ ব্যক্তি ঐ অজ্ঞ কৃষক সদৃশ, যে বীজকে অনুর্বর মাটিতে বপন করে, ফলে তা নষ্ট হয়ে যায়।
(أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْأَرْضِ)
‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি’অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা জমিন থেকে যা উৎপন্ন করেন যেমন: শস্য, গুপ্তধন ইত্যাদি। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ব্যতীত উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের ওপর উশর (দশ ভাগের একভাগ) ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের ওপর অর্ধ উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৮৩)
الْخَبِيْثُ বা ‘মন্দ জিনিস’এর দু’টি অর্থ হতে পারে:
(১) এমন জিনিস যা অবৈধ পথে উপার্জন করা হয়েছে। তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إِنَّ اللّٰهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না।
(২) খারাপ ও অতি নিম্নমানের জিনিস যা তাকে দেয়া হলে সে নিজেও নেবে না। এমন নষ্ট খারাপ জিনিস যা নিজে পছন্দ করে না তা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহ তা‘আলাও গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّي تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ﹽ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللّٰهَ بِهِ عَلِيمٌ)
“তোমরা নেকী পাবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে খরচ কর। আর তোমরা যা কিছুই দান কর আল্লাহ তা জানেন।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৯২)
এসব খারাপ জিনিস তোমরাও তো চক্ষু বন্ধ না করে গ্রহণ করতে চাও না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّي يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ
তোমাদের কেউ ততক্ষণ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের জন্য যা পছন্দ করো তা অপর ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করো। (সহীহ বুখারী হা: ১৩)
আল্লাহ তা‘আলা এসব দান-সদাকাহ থেকে অনেক বড়, অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলার এসব নির্দেশ শুধু পরীক্ষা করার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ يَنَالَ اللّٰهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَي مِنْكُمْ)
“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্ওয়া।”(সূরা হাজ্জ ২২:৩৭)
পরবর্তী আয়াতে শয়তানের কুমন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে। সৎ পথে ব্যয় করতে চাইলে শয়তান নিঃস্ব ও দরিদ্র হওয়ার ভয় দেখায়। পক্ষান্তরে অন্যায় অশ্লীল বেহায়াপনাপূর্ণ কাজে উৎসাহ দেয় এবং এমনভাবে চাকচিক্য করে তুলে ধরে যে, মানুষ তাতে ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
মহান আল্লাহ তা‘আলা তার ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন। যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে ফেরেশতা তাদের জন্য দু‘আ করে বলে, হে আল্লাহ! তোমার পথে যারা ব্যয় করে তুমি তাদের মাল আরো বৃদ্ধি করে দাও। আর যারা ব্যয় করে না তাদের মাল ধ্বংস করে দাও। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৪২)
(وَمَنْ یُّؤْتَ الْحِکْمَةَ)
‘আর যাকে হিকমত দান করা হয়’হিকমাতের অর্থ কী তা অনেকে অনেক প্রকারে ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ বলেছেন: কুরআন; কেউ বলেছেন, নাসেখ, মানসূখ, হালাল, হারাম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান। কেউ বলেছেন, কুরআন ও তার বুঝ। কেউ বলেছেন, কথায় ও কাজে সঠিকতা। কেউ বলেছেন, শরীয়তের রহস্য জানা ও বুঝা এবং কুরআন ও সুন্নাহ হিফজ করা ইত্যাদি। তবে মূল কথা হলো হিকমাতের মধ্যে সবকিছু শামিল।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’ব্যক্তির সাথে ঈর্ষা করা বৈধ: ১. যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দান করেছেন। আর সে তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। ২. যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন সে তা দ্বারা মানুষের মাঝে ফায়সালা করে এবং মানুষকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নিয়্যত খালেস রেখে আল্লাহ তা‘আলার পথে কেবল হালাল ও উত্তম জিনিস দান করতে হবে। হারাম ও নষ্ট বস্তু দান করে নেকীর আশা করা যায় না।
২. নিজের জন্য যা পছন্দ করি না তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করলে কবুল হবে না।
৩. শয়তান সর্বদা মানুষকে খারাপ কাজে উৎসাহ দেয় আর দরিদ্রতার ভয় দেখায়।
৪. মানুষ যতই সম্পদশালী হোক সবচেয়ে বড় সম্পদ হল দীনের জ্ঞান, সকল সম্পদের ওপর জ্ঞানের মর্যাদা অনেক বেশি।
৫. আল্লাহ তা‘আলার ডাকে সাড়া দান ও প্রদর্শিত পথে আমল করা প্রশংসনীয় কাজ।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings