Surah Al Baqarah Tafseer

তালাক দেয়া স্ত্রীর প্রতি সদয় ব্যবহার করতে হবে

পুরুষদের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যে তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার থাকে এই তালাক প্রদানের পর যখন ইদ্দত শেষ হবে তখন হয় তাদেরকে সদ্ভাবে ফিরিয়ে নিবে অর্থাৎ ফিরিয়ে নেয়ার ওপর সাক্ষী রাখবে এবং সদ্ভাবে বসবাস করার নিয়ত করবে অথবা সদ্ভাবে পরিত্যাগ করবে। আর ইদ্দত শেষ হওয়ার পর কোন ঝগড়া-বিবাদ, মতবিরোধ এবং শত্রুতা না করেই বিদায় দিবে। অজ্ঞতা যুগের জঘন্য প্রথাকে ইসলাম উঠিয়ে দিয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , মাসরুক (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , যাহহাক (রহঃ) , রাবী‘ (রহঃ) , এবং মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) বলেছেন যে, এক লোক তার স্ত্রীকে তালাক দিতো এবং যখন তার ইদ্দতের সময় প্রায় শেষ হয়ে আসতো তখন সে আবার ফিরিয়ে নিতো। তার এ রকম করার উদ্দেশ্য ছিলো স্ত্রীকে কষ্ট দেয়া এবং অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে না দেয়া। এভাবে সে তালাক দিতে থাকলো এবং ইদ্দত শেষ হওয়ার আগেই ফিরিয়ে নিতে থাকে। মহান আল্লাহ্‌ তার এ আচরণকে নিষিদ্ধ করে আয়াত নাযিল করেন এবং জানিয়ে দেন, যারা এরূপ করে তারা অত্যাচারী।

অতঃপর মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ ﴿وَلَاتَتَّخِذُوْۤااٰیٰتِاللّٰهِهُزُوًا﴾‘তোমরা মহান আল্লাহ্‌র নির্দেশাবলীকে বিদ্রƒপ করো না।’ একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশ‘আরী গোত্রের ওপর অসন্তুষ্ট হোন। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘তোমাদের এক লোক কেন বলেঃ আমি তালাক দিয়েছি, আবার ফিরিয়ে নিয়েছি? জেনে রেখো যে, এগুলো তালাক নয়। স্ত্রীদেরকে তাদের ইদ্দত অনুযায়ী তালাক প্রদান করো।’ (হাদীসটি সহীহ। তাফসীর তাবারী -৫/১৪/৪৯২৫, ৪৯২৬, সুনান বায়হাক্বী-৭/৩২৩) মাসরুক (রহঃ) বলেন যে, এই আয়াত ঐ লোকদের উদ্দেশ্য করে নাযিল হয়েছে যারা তাদের স্ত্রীদের কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে তালাক দিয়ে আবার ফিরিয়ে নেয়, যাতে তাদের ইদ্দতকাল দীর্ঘায়িত হয়। (সনদ টি য‘ঈফ। তাফসীর তাবারী -৫/১৩/৪৯২৩) হাসান বাসরী (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , ‘আতা আল খুরাসানী (রহঃ) , রাবী‘ (রহঃ) এবং মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) বলেছেনঃ সে হলো ঐ লোক যে তার স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং বলেঃ আমি তো তোমার সাথে কৌতুক করছিলাম! অথবা যে তার দাসীকে মুক্ত করে অথবা বিয়ে করে এবং বলেঃ আমি তো হাসি-ঠাট্টা করছিলাম মাত্র! মহান আল্লাহ্‌ তাদের ব্যাপারে বলেনঃ মহান আল্লাহ্‌র নির্দেশাবলীকে বিদ্রƒপাচ্ছলে গ্রহণ করো না। (২নং সূরাহ বাকারাহ, আয়াত নং ২৩১) একটি হাদীসে রয়েছে যেঃ

ثَلَاثٌ مَنْ قَالَهُنَّ لَاعِبًا أَوْ غَيْرَ لَاعِبٍ، فَهُنَّ جَائِزَاتٌ عَلَيْهِ: الطَّلَاقُ وَالْعِتَاقُ وَالنِّكَاحُ.

‘তিনটি বিষয়ে মানুষ খেলা করে বলুক আর মনের থেকেই বলুক তার ওপর হুকম প্রয়োগ হবে। আর সেই তিনটি বিষয় হলো ‘তালাক, আযাদ ও বিবাহ’। (সনদ টি হাসান)

অতঃপর মহান আল্লাহ্‌ বলেন, তোমরা মহান আল্লাহ্‌র নি‘য়ামতসমূহ স্মরণ করো যে, তিনি তোমাদের নিকট রাসূল পাঠিয়েছেন, হিদায়াত ও দলীল অবতীর্ণ করেছেন, কিতাব ও সুন্নাত শিখিয়েছেন, নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিষেধও করেছেন ইত্যাদি। তোমরা যে কাজ এবং যে কাজ হতে বিরত থাকো সব সময়ই মহান আল্লাহ্‌কে ভয় করো এবং জেনে রেখো যে মহান আল্লাহ্‌ প্রত্যেক প্রকাশ্য ও গোপনীয় বিষয় খুব ভালোভাবেই জানেন।