Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 229
Saheeh International
Divorce is twice. Then, either keep [her] in an acceptable manner or release [her] with good treatment. And it is not lawful for you to take anything of what you have given them unless both fear that they will not be able to keep [within] the limits of Allah . But if you fear that they will not keep [within] the limits of Allah, then there is no blame upon either of them concerning that by which she ransoms herself. These are the limits of Allah, so do not transgress them. And whoever transgresses the limits of Allah - it is those who are the wrongdoers.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
তালাক দিতে হবে তিন মাসে তিনবার
ইসলামের পূর্বে প্রথা ছিলো এই যে, স্বামী যতো ইচ্ছা স্ত্রীকে তালাক দিতো এবং ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নিতো। ফলে স্ত্রীগণ সংকটপূর্ণ অবস্থায় পতিত হয়েছিলো। স্বামী তাদেরকে তালাক দিতো এবং ইদ্দত অতিক্রান্ত হওয়ার নিকটবর্তী হতেই ফিরিয়ে নিতো। পুনরায় তালাক দিতো। কাজেই স্ত্রীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিলো। ইসলাম এই সীমা নির্ধারণ করে দেয় যে, এভাবে মাত্র দু’টি তালাক দিতে পারবে। الطَّلَاقُمَرَّتَانِ তৃতীয় তালাকের পর ফিরিয়ে নেয়ার আর কোন অধিকার থাকবে না। আবূ দাঊদে রয়েছে যে,তিন তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া রহিত হয়ে গেছে। (সনদ হাসান। সুনান আবু দাঊদ-২/১৮৫/২২৮১, সুনান নাসাঈ -৬/৫২২/৩৫৫৬)
সুনান নাসাঈ তেও এই বর্ণনাটি উদ্ধৃত করা হয়েছে যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এটাই বলেন। (সুনান নাসাঈ ২/২১২) মুসনাদ ইবনু আবী হাতিম গ্রন্থে রয়েছে যে, এক ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীকে বলেঃ ‘আমি তোমাকে রাখবোও না এবং ছেড়েও দিবো না।’ স্ত্রী বলেঃ ‘কি রূপে?’ সে বলেঃ ‘তোমাকে তালাক দিবো এবং ইদ্দত শেষ হওয়ার আগেই ফিরিয়ে নিবো। আবার তালাক দিবো এবং ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বে পুনরায় ফিরিয়ে নিবো। এরূপ করতেই থাকবো।’ এ মহিলাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে তার এই দুঃখের কথা বর্ণনা করে। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম২/৭৫৪, তাফসীর তাবারী ৪/৫৩৯) অতএব তৃতীয় তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর কোন অধিকার থাকলো না এবং তাদেরকে বলা হলো দুই তালাক পর্যন্ত তোমাদের অধিকার রয়েছে যে, সংশোধনের উদ্দেশে তোমরা তোমাদের স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিবে যদি তারা ইদ্দতের মধ্যে থাকে এবং তোমাদের এটাও অধিকার রয়েছে যে, তোমরা তাদের ইদ্দত অতিক্রান্ত হতে দিবে এবং তাদেরকে ফিরিয়ে নিবে না, যাতে তারা নতুনভাবে বিয়েরযোগ্য হয়ে যায়। আর যদি তৃতীয় তালাক দেয়ারই ইচ্ছা করো তাহলে সদ্ভাবে তালাক দিবে। তাদের কোন হক নষ্ট করবে না, তাদের ওপর অত্যাচার করবে না এবং তাদের কোন ক্ষতি করবে না।
‘আলী ইবনু আবী তালহা (রহঃ) বর্ণনা করেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ যখন কেউ তার স্ত্রীকে দ্বিতীয় বার তালাক দেয় সে যেন তৃতীয় তালাক প্রদানের সময় মহান আল্লাহ্কে ভয় করে। হয় সে তাকে তার কাছে রেখে দিবে এবং তার প্রতি দয়ার্দ্র হবে, অন্যথায় তার প্রতি দয়া পরবশ হবে এবং তার কোন অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করবে না। (তাফসীর তাবারী ৪/৫৪৩)
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করেঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! এই আয়াতে তো দুই তালাকের কথা বর্ণিত হয়েছে,তৃতীয় তালাকের বর্ণনা কোথায় রয়েছে?’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﴿اَوْتَسْرِبْحٌبِاِحْسَانٍ﴾‘সদ্ভাবে পরিত্যাগ করতে হবে।’ (২ নং সূরাহ বাকারাহ, আয়াত নং২২৯) এর মধ্যে রয়েছে।’ (হাদীস টি মুরসাল। তাফসীর তাবারী -৪/৫৪৫/৪৭৯২, ৪৭৯৩, তাফসীরে ‘আব্দুর রাযযাক-১/১০৬/২৮৩, মুসান্নাফ ‘আব্দুর রাযযাক-৬/৩৩৭, ৩৩৮, সুনান বায়হাক্বী-৭/৩৪০)
মোহর ফিরিয়ে নেয়া
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿وَ لَا یَحِلُّ لَكُمْ اَنْ تَاْخُذُوْا مِمَّاۤ اٰتَیْتُمُوْهُنَّ شَیْـًٔا﴾ ‘আর তোমাদের পক্ষে তাদের দেয়া মালের কিছুই ফিরিয়ে নেয়া জায়িয হবে না।’ অর্থাৎ যখন তৃতীয় তালাক দেয়ার ইচ্ছা করবে তখন স্ত্রীকে তালাক গ্রহণে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে তার জীবন সংকটময় করা এবং তার প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করা স্বামীর জন্য হারাম। যেমন কুর’আন মাজীদে রয়েছেঃ
﴿وَ لَا تَعْضُلُوْهُنَّ لِتَذْهَبُوْا بِبَعْضِ مَاۤ اٰتَیْتُمُوْهُنَّ اِلَّاۤ اَنْ یَّاْتِیْنَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَیِّنَةٍ﴾
‘আর প্রকাশ্য অশ্লীলতা ব্যতীত তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছো এর কিয়দাংশ গ্রহণের জন্য তাদেরকে প্রতিরোধ করো না।’ (৪ নং সূরাহ নিসা, আয়াত নং ১৯)
তবে স্ত্রী যদি খুশি মনে কিছু দিয়ে তালাক প্রার্থনা করে সেটা অন্য কথা। যেমন অন্য স্থানে রয়েছেঃ ﴿فَاِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَیْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوْهُ هَنِیْٓـًٔا مَّرِیْٓـًٔا ﴾
‘কিন্তু যদি তারা সন্তুষ্ট চিত্তে কিয়দাংশ প্রদান করে তাহলে সঠিক বিবেচনা মতে তৃপ্তির সাথে ভোগ করো।’ (৪নং সূরাহ নিসা, আয়াত নং৪৫)
‘খোলা তালাক’ এবং মোহর ফিরিয়ে দেয়া
যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতানৈক্য বেড়ে যায় এবং স্ত্রী স্বামীর প্রতি সন্তুষ্ট না থাকে এবং তার হক আদায় না করে, এরূপ অবস্থায় যদি সে তার স্বামীকে কিছু প্রদান করে তালাক গ্রহণ করে তাহলে তার দেয়াতে এবং স্বামী কর্তৃক তা গ্রহণ করে নেয়াতে কোন পাপ নেই। এটাও মনে রাখার বিষয় যে, স্ত্রী যদি বিনা কারণে তার স্বামীর নিকট ‘খোলা তালাক’ প্রার্থনা করে তাহলে সে অত্যন্ত পাপী হবে।
কখনো কখনো এমন হয় যে, মহিলারা কোন যথাযথ কারণ ছাড়াই বিয়ে ভেঙ্গে দিতে চায় এবং তালাকের জন্য বলতে থাকে। এ ব্যাপারে ইবনু জারীর (রহঃ) সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلَاقَهَا مِنْ غَيْرِ بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْجَنَّةِ.
‘যে স্ত্রী বিনা কারণে তার স্বামীর নিকট তালাক প্রার্থনা করে তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধিও হারাম। (হাদীসটি সহীহ। তাফসীর তাবারী -৪/৫৬৯/৪৮৪৩, ৪৮৪৪, সুনান আবূ দাউদ-২/২৬৮/২২২৬, জামি‘তিরমিযী ৩/৪৯৩/১১৮৭, মুসনাদ আহমাদ - ৫/২৭৭, সুনান ইবনু মাজাহ-১/৬৬২/২০৫৫, সুনান দারিমী-২/২১৬/২২৭০, সহীহ ইবনু হিব্বান-৬/১৯১) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। একটি বর্ণনায় রয়েছেঃ
لَا تسألُ امْرَأَةٌ زَوْجَهَا الطَّلَاقَ فِي غَيْرِ كُنْهِه فَتَجِدَ رِيحَ الْجَنَّةِ، وَإِنَّ رِيحَهَا لُيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أَرْبَعِينَ عَامًا.
‘কোন স্ত্রী যেন তার স্বামীর নিকট বিনা প্রয়োজনে তালাক কামনা না করে। করলে সে জান্নাতের সুগন্ধি পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব হতেও এসে থাকে।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। সুনান ইবনু মাজাহ-১/৬৬২/২০৫৪) অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, এরূপ স্ত্রী বিশ্বাসঘাতিনি। (সনদটি য‘ঈফ। তাফসীর তাবারী -৪/৫৬৮/৪৮৪২, আল মাজমা‘উযযাওয়ায়িদ-৫/৫) পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইমামগণের একটা বিরাট দলের ঘোষণা এই যে, খোলা‘ শুধু মাত্র ঐ অবস্থায় রয়েছে যখন অবাধ্যতা ও দুষ্টমি শুধুমাত্র স্ত্রীর পক্ষ থেকে হবে। ঐ সময় স্বামী মুক্তিপণ নিয়ে ঐ স্ত্রীকে পৃথক করে দিতে পারে। যেমন আল কুর’আনের এই আয়াতটির মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থায় ছাড়া অন্য কোন অবস্থায় খোলা‘ বৈধ নয়। এমনকি ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন যে, যদি স্ত্রীকে কষ্ট দিয়ে এবং তার হক কিছু নষ্ট করে স্বামী তাকে বাধ্য করে তার নিকট হতে কিছু গ্রহণ করে তবে তা ফিরিয়ে দেয়া ওয়াজিব। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন যে, মতানৈক্যের সময় যখন কিছু গ্রহণ করা বৈধ তখন মতৈক্যের সময় বৈধ হওয়ায় কোন অসুবিধার কারণ থাকতে পারে না। বাকর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন যে, কুর’আন মাজীদের নিম্নের আয়াতটি দ্বারা খোলা‘ রহিত হয়ে গেছে। আর তা হলোঃ واتيتم احداهن قنطارا فلا تا خذوا منه شيئا অর্থাৎ, তোমরা যদি তাদের কাউকে ধনভাণ্ডারও দিয়ে থাকো তথাপি তা হতে কিছু গ্রহণ করো না। (৪ নং সূরাহ আন নিসা, আয়াত-২০) কিন্তু এই উক্তিটি দুর্বল ও বর্জনীয়। (তাফসীর তাবারী)
সবাবুন নুযূল
আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার কারণ এই যে, মুওয়াত্তা ইমাম মালিকে রয়েছেঃ ‘হাবীবা বিনতি সাহল আনসারিয়া’ (রাঃ) সাবিত ইবনু কায়িস ইবনু শামাস (রাঃ) -এর স্ত্রী ছিলেন। একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাতের জন্য অন্ধকার থাকতেই বের হোন। দরজার ওপর হাবীবা বিনতি সাহল (রাঃ) -কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করেন, ‘কে তুমি?’ তিনি বলেনঃ ‘আমি সাহলের কন্যা হাবীবা’। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘খবর কি?’ তিনি বলেনঃ ‘আমি সাবিত ইবনু কায়িস (রাঃ) -এর স্ত্রী রূপে থাকতে পারি না।’ এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব হয়ে যান। অতঃপর তার স্বামী সাবিত ইবনু কায়িস (রাঃ) আগমন করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ ‘হাবীবা বিনতি সাহল (রাঃ) কিছু বলেছে।’ হাবীবা (রাঃ) বলেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি আমাকে যা কিছু দিয়েছেন তা সবই আমার নিকট বিদ্যমান রয়েছে এবং আমি ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত রয়েছি।’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাবিত (রাঃ) -কে বলেন, ‘ঐ গুলো গ্রহণ করো।’ সাবিত ইবনু কায়িস (রাঃ) সেগুলো গ্রহণ করেন এবং হাবীবা (রাঃ) মুক্ত হয়ে যান।’ (হাদীসটি সহীহ। মুওয়াত্তা ইমাম মালিক-২/৫৬৪/৩১, মুসনাদ আহমাদ -৬/৪৩৩, সুনান আবু দাঊদ-২/৬৬৮/২২২৭, সুনান নাসাঈ -৬/৪৮১/৩৪৬২, সুনান দারিমী-২/২১৬/২২৭১, সুনান বায়হাক্বী-৭/৩১২-৩১৩)
অন্য একটি হাদীসে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হাবীবা বিনতি সাহল (রাঃ) সাবিত ইবনু কায়িস ইবনু শামাস (রাঃ) -এর স্ত্রী ছিলেন। সাবিত (রাঃ) তাঁকে প্রহার করেন, ফলে তার কোন একটি হাড় ভেঙে যায়। তখন তিনি ফজরের পরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাবিত (রাঃ) -কে ডেকে পাঠিয়ে বলেন, তোমার স্ত্রীর কিছু মাল গ্রহণ করো এবং তাকে পৃথক করে দাও। সাবিত (রাঃ) বলেন, হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! এটা আমার জন্য বৈধ হবে কি? তিনি বলেন হ্যাঁ। সাবিত (রাঃ) বলেন, আমি তাকে দু’টি বাগান দিয়েছি এবং সেগুলো তার মালিকানাধীনই রয়েছে। তখন মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি ঐ দু’টো গ্রহণ করে তাকে পৃথক করে দাও। তিনি তাই করেন। (হাদীসটি সহীহ। সুনান আবূ দাউদ-২/২৬৯/২২২৮, তাফসীর তাবারী -৪/৫৫৪/৪৮০৮)
অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, সাবিত (রাঃ) -এর স্ত্রী হাবীবা (রাঃ) এ কথাও বলেছেন, ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমি তাকে চরিত্র ও ধর্মভীরুতার ব্যাপারে দোষারোপ করছি না, কিন্তু আমি তাকে ইসলামের মধ্যে কুফরী করাকে অর্থাৎ হাবীবার প্রতি সাবিতের দায়িত্ব পালন না করা অপছন্দ করি।’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি কি তোমাকে দেয়া তার বাগান তাকে ফিরত দিবে? মহিলাটি বললোঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাবিত (রাঃ) -কে বললেনঃ বাগানটি ফেরত নাও এবং তালাক দাও।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী-৬/৩০৬-৩০৭/৫২৭৩-৫২৭৭, ফাতহুল বারী -৯/৩০৬, সুনান নাসাঈ -৯/৪৮১/৩৪৬৩)
মোহর হিসেবে স্বামী যা দিয়েছে তার চেয়ে বেশি নেয়ার হুকুম
কোন কোন বর্ণনায় তার নাম জামিলাও এসেছে। কোন বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, তিনি বলেন, এখন আমার ক্রোধ সম্বরণের শক্তি নেই। একটি বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাবিত (রাঃ) -কে বলেন, যা দিয়েছো, তাই নাও, বেশি নিয়ো না। একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, হাবীবা (রাঃ) বলেছিলেন, তিনি দেখতেও সুন্দর নন। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উবাইয়ের ভগ্নি ছিলেন ও ইসলামের এটাই সর্বপ্রথম খোলা‘ তালাক ছিলো।
হাবীবা (রাঃ) -এর একটি কারণ এটাও বর্ণনা করেছেন, একবার আমি তাঁবুর পর্দা উঠিয়ে দেখতে পাই যে, আমার স্বামী কয়েকজন লোকের সাথে আসছেন। এদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বাপেক্ষা কালো, বেঁটে ও কুৎসিত। (হাদীসটিহাসান। তাফসীর তাবারী -১/৫৫২/৪৮০৭) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক ‘তাকে তার বাগান ফিরিয়ে দাও।’ এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে হাবীবা (রাঃ) বলেছিলেন, হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! মহান আল্লাহ্র ভয় না থাকলে আমি তার মুখে থুথু দিতাম। (সুনান ইবনু মাজাহ-১/৬৬৩/২০৫৭, মুসনাদ আহমাদ -৪/৩, ফাতহুল বারী -৯/৩১০)
জামহূরে মাযহাব এই যে, খোলা তালাকে স্বামী তার প্রদত্ত মাল হতে বেশি নিলেও বৈধ হবে। কেননা কুর’আন মাজীদে فيماافتدتبه ‘সে মুক্তি লাভের জন্য যা কিছু বিনিময় দেয়।’ (২ নং সূরাহ আল বাকারাহ, আয়াত-২২৯) বলা হয়েছে।
একজন স্ত্রীলোক স্বামীর সাথে মনোমালিন্য হয়ে ‘উমার (রাঃ) -এর নিকট আগমন করে। ‘উমার (রাঃ) তাকে আবর্জনাযুক্ত একটি ঘরে বন্দী করার নির্দেশ দেন। অতঃপর তাকে কয়েদখানা হতে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অবস্থা কিরূপ? সে বলে , আমার জীবনে আমি এই একটি রাত্রি আরামে কাটিয়েছি তখন তিনি তার স্বামীকে বলেন, তার চুল বাধার সূতার বিনিময়ে হলেও তার সাথে খোলা‘ তালাক করে নাও। (তাফসীর তাবারী -১/৫৭৬/৪৮৬০-৪৮৬২)
একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, তাকে তিন দিন পর্যন্ত কয়েদখানায় রাখা হয়েছিলো। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি তার স্বামীকে বলেছিলেন, একগুচ্ছ চুলের বিনিময়ে হলেও তুমি তা গ্রহণ করে তাকে পৃথক করে দাও। ‘উসমান (রাঃ) বলেন, চুলের গুচ্ছ ছাড়া সব কিছু নিয়েই খোলা তালাক হতে পারে। (হাদীসটি য‘ঈফ। মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক-৬/৫০৪/১১৮৫০, তাফসীর তাবারী -৪/৫৭৮/৪৮৭০, সুনান বায়হাক্বী-৭/৩১৫) রাবী‘ বিনতি মু‘আওয়াজ ইবনু আফতাব (রাঃ) বলেন, আমার স্বামী বিদ্যমান থাকলেও আমার সাথে আদান প্রদানে ত্রুটি করতেন এবং বিদেশে চলে গেলে তো সম্পূর্ণ রূপে বঞ্চিত করতেন। একদিন ঝগড়ার সময় আমি বলে ফেলি আমার অধিকারে যা কিছু রয়েছে সবই নিন এবং আমাকে খোলা‘ তালাক প্রদান করুন। তিনি বলেন ঠিক আছে, এটাই ফায়সালা হয়ে গেলো। কিন্তু আমার চাচা মু‘আয ইবনু ‘আফরা (রাঃ) এই ঘটনাটি ‘উসমান (রাঃ) -এর নিকট বর্ণনা করেন। ‘উসমান (রাঃ) -ও এটাই ঠিক রাখেন এবং বলেন চুলের খোঁপা ছাড়া সব কিছু নিয়ে নাও। কোন কোন বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, এর চেয়ে ছোট জিনিসও নিয়ে নাও। মোট কথা সব কিছু নিয়ে নাও। এসব ঘটনা দ্বারাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, স্ত্রীর নিকট যা কিছু রয়েছে সব দিয়েই সে খোলা‘ তালাক করিয়ে নিতে পারে এবং স্বামী তার প্রদত্ত মাল হতে বেশি নিয়েও খোলা‘ করতে পারে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) , ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) , ইবরাহীম নাখ‘ঈ (রহঃ) , কাবীসা ইবনু যাবীব (রহঃ) , হাসান ইবনু সালিহ (রহঃ) এবং ‘উসমান (রহঃ) -ও এটাই বলেন। ইমাম মালিক (রহঃ) , লায়িস (রহঃ) এবং আবূ সাউর (রহঃ) -এরও মাযহাব এটাই। ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) ও এটাই পছন্দ করেন।
ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) -এর সহচরদের উক্তি এটাই যে, যদি অন্যায় ও ত্রুটি স্ত্রীর পক্ষ হতে হয় তবে স্বামী তাকে যা দিয়েছে তা ফিরিয়ে নেয়া তার জন্য বৈধ। কিন্তু তাঁর চেয়ে বেশি নেয়া জায়িয নয়। আর বাড়াবাড়ি যদি পুরুষের পক্ষ হতে হয় তবে তার জন্য কিছুই নেয়া বৈধ নয়। ইমাম আহমাদ (রহঃ) , ‘উবাইদ (রহঃ) , ইসহাক (রহঃ) এবং রাহওয়াহ্ (রহঃ) বলেন যে, স্বামীর জন্য তার প্রদত্ত বস্তু হতে অতিরিক্ত নেয়া কোন ক্রমেই বৈধ নয়। সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রহঃ) , ‘আতা (রহঃ) , ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) , যুহরী (রহঃ) , তাউস (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , শা‘বী (রহঃ) , হাম্মাদ ইবনু আবূ সুলাইমান (রহঃ) এবং রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) -এরও অভিমত এটাই। মু‘আম্মার (রহঃ) এবং হাকিম (রহঃ) বলেন যে, ‘আলী (রাঃ) -এর ফায়সালা এটাই। আওযা‘ঈ (রহঃ) -এর ঘোষণা এই যে, কাযীগণ স্বামীর প্রদত্ত বস্তু বেশি গ্রহণ করা তার জন্য বৈধ মনে করেন না। এই মতের প্রবক্তাদের দলীল ঐ হাদীসটিও যা ওপরে বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে, তোমার বাগান নিয়ে নাও কিন্তু বেশি নিয়ো না।
‘আবদ ইবনু হুমাইদ ‘আতা (রহঃ) থেকে একটি মারফূ‘ হাদীস উল্লেখ করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খোলা‘ গ্রহণকারিণী স্ত্রীকে প্রদত্ত বস্তু থেকে বেশি গ্রহণ করাকে খারাপ মনে করেছেন। (হাদীস টি মুরসাল। মুসনাদ ‘আবদইবনুহুমাইদ) ‘ঐ অবস্থায় যা কিছু মুক্তির বিনিময়ে সে দিবে’ কুর’আন মাজীদের এই কথার অর্থ হবে এই যে, প্রদত্ত বস্তু থেকে যা কিছু দিবে। কেননা, এর পূর্বে ঘোষণা বিদ্যমান রয়েছে যে, তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছো তা হতে কিছুই গ্রহণ করো না। রাবী‘ (রহঃ) -এর পঠনে به শব্দের পরে منه শব্দটিও রয়েছে।
অতঃপর বলা হচ্ছেঃ تِلْكَحُدُوْدُاللّٰهِ ‘এগুলো মহান আল্লাহ্র সীমাসমূহ।’ অতএব তোমরা এই সীমাগুলো অতিক্রম করো না। নতুবা পাপী হয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ কোন কোন মনীষী খোলা‘কে তালাকের মধ্যে গণ্য করেন না। তাঁরা বলেন যে, যদি এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে দু’তালাক দিয়ে দেয়, অতঃপর ঐ স্ত্রী খোলা‘ করিয়ে নেয় তবে ঐ স্বামী ইচ্ছে করলে পুনরায় ঐ স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারে। তাঁরা দলীল রূপে এই আয়াতটিকেই এনে থাকেন। এটা হচ্ছে ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) -এর উক্তি। ইকরামাহ (রহঃ) ও বলেন যে, এটা তালাক নয়। দেখা যাচ্ছে যে, আয়াতটির প্রথমে তালাকের বর্ণনা রয়েছে। প্রথমে দু’তালাকের, শেষে তৃতীয় তালাকের নয়। আর এটা দ্বারা বিয়ে বাতিল করা হয়। আমিরুল মু’মিনীন ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) , ইবনু ‘উমার (রাঃ) , তাউস (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) , আহমাদ (রহঃ) , ইসহাক ইবনু রাহওয়াহ্ (রহঃ) , আবূ সাউর (রহঃ) এবং দাউদ ইবনু আলী যাহিরী (রহঃ) -এর মাযহাব এটাই। এটা ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) -এরও পূর্ব উক্তি। আয়াতটিরও প্রকাশ্য শব্দ এটাই। অন্যান্য কয়েকজন মনীষী বলেন যে, খোলা‘ হচ্ছে তালাকে বায়িন এবং একাধিক তালাকের নিয়ত করলেও তা বিশ্বাসযোগ্য। একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, উম্মু বাকর আসলামিয়া (রহঃ) নাম্নী একটি স্ত্রীলোক তার স্বামী ‘আবদুল্লাহ ইবনু খালিদ (রহঃ) থেকে খোলা‘ তালাক গ্রহণ করেন এবং ‘উসমান (রহঃ) সেটাকে এক তালাক হওয়ার ফাতাওয়া দেন। সাথে সাথে এটা বলে দেন যে, যদি কিছু নাম নিয়ে থাকে তবে যা নাম নিয়েছে তাই হবে। কিন্তু এই বর্ণনাটি দুর্বল। ‘উমার (রাঃ) , ‘আলী (রাঃ) , ইবনু মাস‘উদ (রহঃ) , ইবনু ‘উমার (রাঃ) সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , শুরাইহ্ (রহঃ) , শা‘বী (রহঃ) , ইবরাহীম (রহঃ) , জাবির ইবনু যায়দ (রহঃ) , ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) , তাঁর সাথী ইমাম সাওরী (রহঃ) , আওযা‘ঈ (রহঃ) এবং আবূ ‘উসমান বাত্তী (রহঃ) -এরও এটাই অভিমত। তবে হানাফীগণ বলেন যে, খোলা‘ প্রদানকারী যদি দু’তালাকের নিয়ত করে তবে দু’টোই হয়ে যাবে। আর যদি কোনই শব্দ উচ্চারণ না করে এবং সাধারণ খোলা‘ হয় তবে একটি তালাকে বায়িন হবে। যদি তিনটির নিয়ত করে তবে তিনটিই হয়ে যাবে। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) -এর অন্য একটি উক্তিও রয়েছে যে, যদি তালাকের শব্দ না থাকে এবং কোন দলীল প্রমাণও না থাকে তবে কোন কিছুই হবে না।
জিজ্ঞাস্যঃ ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) , ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) , ইমাম আহমাদ (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু রাহওয়াইহ্ (রহঃ) -এর মাযহাব এই যে, তালাকের ইদ্দত হচ্ছে খোলা‘ এর ইদ্দত। ‘উমার (রাঃ) , ‘আলী (রাঃ) , ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) , সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রহঃ) , সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) , ‘উরওয়া (রহঃ) , সালিম (রহঃ) , আবূ সালামাহ (রহঃ) , ‘উমার ইবনু ‘আব্দুল ‘আযীয (রহঃ) , ইবনু শিহাব (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , শা‘বী (রহঃ) , ইবরাহীম নাখ‘ঈ (রহঃ) , আবূ আইয়ায (রহঃ) , খালাস ইবনু ‘আমর (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , সুফইয়ান সাওরী (রহঃ) , আওযা‘ঈ (রহঃ) , লায়িস ইবনু সা‘দ (রহঃ) এবং আবূ সুফইয়ান এরও এটাই উক্তি। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন যে, অধিকাংশ ‘আলিম এদিকেই গিয়েছেন।
খোলা‘ তালাকের ইদ্দত প্রসঙ্গ
অধিকাংশ ‘আলিমের উক্তি হলো, যেহেতু খোলা‘ও তালাক, সুতরাং এর ইদ্দত তালাকের ইদ্দতের মতোই। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এর ইদ্দত শুধুমাত্র একটি ঋতু। ‘উসমান (রাঃ) -এর এটাই ফায়সালা। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিন ঋতুর ফাতাওয়া দিতেন বটে কিন্তু সাথে সাথে তিনি বলতেন, ‘উসমান (রাঃ) আমাদের অপেক্ষা উত্তম এবং আমাদের চেয়ে বড় ‘আলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে একটি ঋতুর ইদ্দত বর্ণিত আছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) , ‘আব্বাস ইবনু ‘উসমান (রহঃ) এবং ঐ সমস্ত লোক যাদের নাম ওপরে বর্ণিত হয়েছে, তাদেরও এই উক্তি হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
সুনানে আবূ দাউদ এবং জামি‘ তিরমিযীতেও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাবিত ইবনু কায়িস (রাঃ) -এর স্ত্রীকে ঐ অবস্থায় এক হায়িয ইদ্দত পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। (হাদীসটি সহীহ। সুনান আবূ দাউদ-২/২৬৯/২২২৯, জামি‘তিরমিযী -৩/৪৯১/১১৮৫, সুনান বায়হাক্বী-৭/৪৫০)
অন্য একটি বর্ণনা রয়েছে যে, রাবী‘ বিনতি মুআওয়ায (রাঃ) -কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খোলা‘ তালাকের পর একটি ঋতুর ইদ্দত রূপে পালন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (হাদীসটি সহীহ। জামি‘তিরমিযী -৩/৪৯১/১১৮৫) ‘উসমান (রাঃ) খোলা‘ গ্রহণকারী স্ত্রীলোকটিকে বলেছিলেন, তোমার ওপরে কোন ইদ্দতই নেই। তবে যদি খোলা‘ গ্রহণেরপূর্বক্ষণেই স্বামীর সাথে মিলিত হয়ে থাকো তবে একটি ঋতু আসা পর্যন্ত তার নিকটেই অবস্থান করবে। মারইয়াম মুগালাবা (রাঃ) -এর সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যা ফায়সালা ছিলো ‘উসমান (রাঃ) তারই অনুসরণ করেন। (হাদীসটি সহীহ। সুনান ইবনু মাজাহ-১/৬৬৩/২০৫৮, সুনান নাসাঈ -৬/৪৯৮/৩৪৯৮)
জিজ্ঞাস্যঃ জামহূর ‘উলামা এবং ইমাম চতুষ্টয়ের মতে খোলা‘ গ্রহণকারী স্ত্রীকে স্বামীর ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার নেই। কেননা, সে সম্পদের বিনিময়ে নিজেকে মুক্ত করেছে। আবদ ইবনু উবাই, ‘আওফী, মাহানুল হানাফী, সা‘ঈদ এবং যুহরী (রহঃ) -এর উক্তি এই যে, স্বামী তার নিকট হতে যা গ্রহণ করেছে তা ফিরিয়ে দিলে স্ত্রীকে রাজ‘আত করতে পারবে। স্ত্রীর সম্মতি ছাড়াও ফিরিয়ে নিতে পারবে। সুফইয়ান সাওরী (রহঃ) বলেন যে, যদি খোলা‘র মধ্যে তালাকের শব্দ না থাকে তবে এটা শুধু বিচ্ছেদ। সুতরাং ফিরিয়ে নেয়ার তার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। দাউদ যাহিরী (রহঃ) -ও এ কথাই বলেন। তবে সবাই এর ওপর একমত যে, যদি দু’জনই সম্মত থাকে তবে ইদ্দতের মধ্যে নতুনভাবে বিয়ে করতে পারবে। ইবনু ‘আব্দুল বার (রহঃ) একটি দলের এই উক্তিও বর্ণনা করেন যে, ইদ্দতের মধ্যে যখন অন্য কেউ তাকে বিয়ে করতে পারবে না। তেমনই স্বামীও পারবে না। কিন্তু এই উক্তিটি বিরল ও বর্জনীয়।
জিজ্ঞাস্যঃ ঐ স্ত্রীর ওপর ইদ্দতের মধ্যেই দ্বিতীয় তালাকও পড়তে পারে কি না এ ব্যাপারে ‘আলিমগণের তিনটি উক্তি রয়েছে। প্রথম উক্তি এই যে, ইদ্দতের মধ্যে দ্বিতীয় তালাক পতিত হবে না। কেননা স্ত্রীটি নিজের অধিকারিণী এবং সে তার স্বামী হতে পৃথক হয়ে গেছে। ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) , ইবন যুবাইর (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) , জাবির ইবনু যায়দ (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) , ইমাম আহমাদ (রহঃ) , ইসহাক (রহঃ) এবং আবূ সাওর (রহঃ) -এর উক্তি এটাই। দ্বিতীয় উক্তি হচ্ছে ইমাম মালিক (রহঃ) -এর উক্তি। আর তা এই যে, খোলা‘র সাথে সাথেই যদি নীরব না থাকে বরং তালাকও দিয়ে দেয় তবে তালাক হয়ে যাবে, নচেৎ হবে না। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে যা ‘উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। তৃতীয় উক্তি এই যে, ইদ্দতের মধ্যে তালাক হয়ে যাবে। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) , তার সহচর ইমাম সাওরী (রহঃ) আওযা‘ঈ (রহঃ) , সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রহঃ) , শুরাইহ্ (রহঃ) , তাউস (রহঃ) , ইবরাহীম (রহঃ) , যুহরী (রহঃ) এবং হাকীম (রহঃ) -এর উক্তি এটাই। ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) এবং আবূদ দারদা (রাঃ) হতেও এটা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণিত নয়।
মহান আল্লাহ্র দেয়া সীমালঙ্ঘন করা হলো অত্যাচার
এরপরে বলা হচ্ছেঃ ﴿وَ تِلْكَ حُدُوْدُ اللّٰهِ﴾ ‘এগুলো মহান আল্লাহ্র সীমাসমূহ।’ সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
إِنِ اللَّهَ حَدَّ حُدُودًا فَلَا تَعْتَدُوهَا، وَفَرَضَ فَرَائِضَ فَلَا تُضَيِّعُوهَا، وَحَرَّمَ مَحَارِمَ فَلَا تَنْتَهِكُوهَا، وَسَكَتَ عَنْ أَشْيَاءَ رَحْمَةً لَكُمْ مِنْ غَيْرِ نِسْيَانٍ، فَلَا تَسْأَلُوا عَنْهَا.
‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন অতএব তোমরা মহান আল্লাহ্র উক্ত সীমা অতিক্রম করো না, তোমরা তার ফরযসমূহ বিনষ্ট করো না, তার নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের অসম্মান করো না, শারী‘আতের যেসব বিষয়ের উল্লেখ নেই, তোমরাও সেগুলো সম্পর্কে নীরব থাকবে। (হাদীসটি য‘ঈফ। মুসতাদরাক হাকিম-৪/১১৫, হিলইয়াতুল আওলিয়া-৯/১৭, ফাতহুল বারী -১৩/২৮০, সুনান দারাকুতনী- ৪/১৮৪)
একই বৈঠকে তিন তালাক দেয়া অবৈধ বা হারাম
বর্ণিত এই আয়াত দ্বারা ঐসব মনীষীগণ দলীল গ্রহণ করছেন যে, একই সময় তিন তালাক দেয়াই হারাম। ইমাম মালিক (রহঃ) ও তাঁর অনুসারীদের এটাই মাযহাব। তাদের মতে সুন্নাত পন্থা এই যে, তালাক একটি একটি করে দিতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ্ বলেনঃ اَلطَّلَاقُمَرَّتَانِ অর্থাৎ ‘তালাক দু’বার। এরপরেই তিনি বলেছেন- ‘এগুলো মহান আল্লাহ্র সীমা, অতএব সেগুলো অতিক্রম করো না। মহান আল্লাহ্র এই নির্দেশকে সুনান নাসাঈ তে বর্ণিত নিম্নের হাদীস দ্বারা জোরদার করা হয়েছে। হাদীসটি এই যেঃ
أُخْبِرَ رَسُولُ اللَّهِ # عَنْ رَجُلٍ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلَاثَ تَطْلِيقَاتٍ جَمِيعًا فَقَامَ غَضْبَانَ، ثُمَّ قَالَ: أَيُلْعَبُ بِكِتَابِ اللَّهِ وَأَنَا بَيْنَ أَظْهُرِكُمْ؟" حَتَّى قَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَلَا أَقْتُلُهُ؟
‘কোন এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে একই সাথে তিন তালাক দিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এই সংবাদ পৌঁছলে তিনি অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং বলেনঃ ‘আমি তোমাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কি মহান আল্লাহ্র কিতাবের সাথে খেল-তামাশা শুরু করলে? তখন একটি লোক দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমি কি তাকে হত্যা করবো?’ (সুনান নাসাঈ -৬/৪৫৩, ৪৫৪/৩৪০১। সনদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে । যেমনটি মুসান্নিফ ও বলেছেন) সনদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।
তৃতীয় তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া যাবে না
এরপরে বলা হচ্ছেঃ ﴿فَاِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهٗ مِنْۢ بَعْدُ حَتّٰى تَنْكِحَ زَوْجًا غَیْرَهٗ ﴾ তারপর যদি সে তাকে চূড়ান্ত তালাক দেয়, তবে এরপর সেই পুরুষের পক্ষে সেই স্ত্রী বিবাহ হালাল হবে না, যে পর্যন্ত না সে অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে।’ অর্থাৎ যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে দু’তালাক দেয়ার পরে তৃতীয় তালাক দিয়ে ফেলবে তখন সে তার ওপর হারাম হয়ে যাবে, যে পর্যন্ত না অন্য কেউ নিয়মিতভাবে তাকে বিয়ে করে। বিয়ে করে সহবাস করার পর তালাক দিবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, সে যদি কোন লোকের সাথে সহবাস করে থাকে অথবা সে যদি দাসী হয় এবং তার মালিকের সাথে যৌন মিলন করে থাকে তথাপিও তার পূর্ব স্বামীর সাথে অর্থাৎ যে তাকে তিন তালাক দিয়েছে তার সাথে বিবাহ বন্ধন শারী‘আত কর্তৃক সমর্থিত হবে না। কারণ যার সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হয়েছে সে তার বিয়ে করা স্বামী নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস না করা পর্যন্ত সে পূর্ব স্বামীর জন্য হালাল হবে না। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে রয়েছে যে, মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ ‘একটি লোক এক মহিলাকে বিয়ে করলো এবং সহবাসের পূর্বেই তিন তালাক দিয়ে দিলো। অতঃপর সে অন্য স্বামীর সাথে বিবাহিতা হলো, সেও তাকে সহবাসের পূর্বে তালাক দিয়ে দিলো। এখন কি তাকে বিয়ে করা তার পূর্ব স্বামীর জন্য হালাল হবে?’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ
لَا حَتَّى تَذُوقَ عُسَيْلَتَهُ وَيَذُوقَ عُسَيْلَتَهَا.
‘না, না। যে পর্যন্ত না তারা একে অপরের মধুর স্বাদ গ্রহণ করে। (তাফসীর তাবারী -৪/৫৯৬/৪৯০২, ৪/৪৯০৩-৪৯০৪, ফাতহুল বারী -৯/২৮৪। সহীহ মুসলিম-২/১০৫৭, মুসনাদ আহমাদ -২/২৫, ৬২, ৮৫, সুনান নাসাঈ -৩/৩৫৩, ৩৫৪/৫৬০৭, ৫৬০৮, সুনান ইবনু মাজাহ-১/৬২২/১৯৩৩)
এই বর্ণনাটি স্বয়ং ইমাম সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এটা কিরূপে সম্ভব যে তিনি বর্ণনাও করবেন আবার নিজে বিরোধিতাও করবেন। মহান আল্লাহ্ই ভালো জানেন।
একটি বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসিত হোন, একটি লোক তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছিলো। অতঃপর সে অন্যের সাথে বিবাহিত হলো। এরপর দরজা বন্ধ করে এবং পর্দা ঝুলিয়ে দিয়ে যৌন মিলন না করেই দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দিল। এখন কি স্ত্রীটি তার পূর্ব স্বামীর জন্য হালাল হবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে পর্যন্ত না সে মধুর স্বাদ গ্রহণ করে। (হাদীস সহীহ। তাফসীর তাবারী -৪/৫৯৩/৪৮৯৮, ৪৮৯৯)
একটি বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেনঃ রিফা‘আহ আল-কারাজী (রাঃ) -এর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে উপস্থিত হয় যখন আমি এবং আবূ বাকর (রাঃ) সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সে বলতে লাগলোঃ আমি রিফা‘আহর স্ত্রী ছিলাম, কিন্তু সে আমাকে তালাক দেয়, যা ছিলো অপরিবর্তনযোগ্য অর্থাৎ তিন তালাক। অতঃপর আমি ‘আবদুর রহমান ইবনু যুবাইর (রাঃ) -কে বিয়ে করি। কিন্তু তার গোপনাঙ্গ যেন একটি ছোট রশি অর্থাৎ তার স্ত্রীর আকাঙ্খা পূরণ করার ক্ষমতা নেই। অতঃপর মহিলাটি তার কাপড়ের ভিতর থেকে একটি ছোট রশি বের করে দেখায় এটা বুঝানোর জন্য সে কতো অক্ষম। খালিদ ইবনু সা‘ঈদ ইবনুল ‘আস (রাঃ) পাশে দরজার কাছে ছিলেন, যাকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি, তিনি বলেনঃ হে আবূ বাকর (রাঃ) ! আপনি কেন ঐ মহিলাকে নিবৃত্ত করছেন না, যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে এ ধরনের খোলামেলা কথা বলছে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটু মুচকি হাসলেন এবং মহিলাকে বললেনঃ তুমি কি রিফা‘আহকে আবার বিয়ে করতে চাও? কিন্তু তা তো সম্ভব নয়, যতোক্ষণ না তুমি তোমার বর্তমান স্বামীর স্বাদ গ্রহণ করছো এবং সে তোমার স্বাদ গ্রহণ করছে। (সহীহুল বুখারী-৯/৩৭৪/৫৩১৭, ১০/৫১৮/৬০৮৪, মুসনাদ আহমাদ -৬/৩৪, ফাতহুল বারী -১০/৫১৮, সহীহ মুসলিম-২/১১৩/১০৫৭, সুনান নাসাঈ -৬/৪৫৭/৩৪০৯)
হিলা বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের ওপর মহান আল্লাহ্র অভিশাপ
দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করার ভাবার্থ হচ্ছে ঐ স্ত্রীর প্রতি দ্বিতীয় স্বামীর আগ্রহ থাকতে হবে এবং চিরস্থায়ীভাবে তাকে স্ত্রীরূপে রাখার উদ্দেশ্যে হতে হবে। যদি উদ্দেশ্য থাকে এই যে, দ্বিতীয় বিয়ে করা হবে শুধুমাত্র প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাবার জন্য, তাহলে এ ধরনের বিয়ে অবৈধ এবং হাদীসে এ ধরনের বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি অভিশাপ বর্ষিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এ ধরনের কথা উল্লেখ করে যদি কোন চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয় তাহলে সেই চুক্তিও বাতিল বলে অধিকাংশ ‘আলিম মতামত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম মালিক (রহঃ) -এর মতে এটাও শর্ত রয়েছে যে, এই সহবাস বৈধ পন্থায় হতে হবে। যেমন স্ত্রী যেন সাওম অবস্থায়, ইহরামের অবস্থায়, ই‘তিকাফের অবস্থায় এবং হায়িয ও নিফাসের অবস্থায় না থাকে। অনুরূপভাবে স্বামীও যেন সাওম, ইহরাম ও ই‘তিকাফের অবস্থায় না থাকে। যদি স্বামী-স্ত্রীর কোন একজন উল্লিখিত কোন এক অবস্থায় থাকে এবং এই অবস্থায় সহবাসও হয়ে যায় তথাপিও সে তার পূর্ব মুসলমান স্বামীর জন্য হালাল হবে না। কেননা, ইমাম মালিক (রহঃ) -এর মতে কাফিরদের পর¯পরের বিয়ে বাতিল। ইমাম হাসান বাসরী (রহঃ) এই শর্তও আরোপ করেন যে, বীর্যও নির্গত হতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বাণীঃ ‘যে পর্যন্ত না সে তোমার এবং তুমি তার মধুর স্বাদ গ্রহণ করবে’ এর দ্বারা এটাই বুঝা যাচ্ছে। হাসান বাসরী (রহঃ) যদি এই হাদীসটিকে সামনে রেখেই এই শর্ত আরোপ করে থাকেন তবে স্ত্রীর ব্যাপারেও এই শর্ত হওয়া উচিত। কিন্তু হাদীসের عسيله শব্দটির ভাবার্থ বীর্য নয়। কেননা, মুসনাদ আহমাদ ও সুনান নাসাঈ র মধ্যে হাদীস রয়েছে যে, عسيله শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে সহবাস। (মুসনাদ আহমাদ -৬/৬২, সুনান দারাকুতনী-৩/২৯/২৫১, হিলইয়াতুল আওলিয়া-৯/২২৬) যদি এই বিয়ের দ্বারা প্রথম স্বামীর জন্য ঐ স্ত্রীকে হালাল করাই দ্বিতীয় স্বামীর উদেশ্যে হয় তবে এই রূপ লোক যে নিন্দনীয় এমনকি অভিশপ্ত তা হাদীসসমূহে ¯পষ্ট ভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। হাদীসে বর্ণিত রয়েছেঃ
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ # الْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ وَالْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ، وَالْمُحَلِّلَ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ، وَآكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ.
‘যে স্ত্রী লোক উলকী করে এবং যে স্ত্রী লোক উলকী করিয়ে দেয়, যে স্ত্রী লোক চুল মিলিয়ে দেয় এবং যে মিলিয়ে নেয়, যে হালাল করে এবং যার জন্য হালাল করা হয়, যে সুদ প্রদান করে এবং যে সুদ গ্রহণ করে এদের ওপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ দিয়েছেন।’ (মুসনাদ আহমাদ -১/৪৪৮, ৪৬২, জামি‘তিরমিযী ৪/২৬৮, সুনান নাসাঈ -৬/৪৬০/৩৪১৬) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন যে, সাহাবীগণের ‘আমল এর ওপরেই রয়েছে। ‘উমার (রাঃ) , ‘উসমান (রাঃ) এবং ইবনু উমার (রাঃ) -এর এটাই মাযহাব। তাবি‘ঈ ধর্ম শাস্ত্রবিদগণও এটাই বলেন। ‘আলী (রাঃ) , ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর অভিমত এটাই। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, সুদের স্বাক্ষ্যদানকারী এবং লেখকের প্রতিও অভিসম্পাত। যারা যাকাত প্রদান করে না এবং যারা যাকাত আদায় করার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে তাদের ওপরও অভিসম্পাত।
একটি হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ধার করা ষাঁড় কে?’ তা কি আমি তোমাদেরকে বলবো?’ জনগণ বললো, ‘হ্যাঁ বলুন।’ তিনি বলেছেন, ‘যে ‘হালাল’ করে অর্থাৎ যে তালাক প্রাপ্তা নারীকে এজন্য বিয়ে করে যেন সে তার পূর্ব স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়।’ যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করে তার ওপরও মহান আল্লাহ্র লা‘নত এবং যে ব্যক্তি নিজের জন্য এটা করিয়ে নেয় সেও অভিশপ্ত।’ (সনদ টি য‘ঈফ। সুনান ইবনু মাজাহ-১/৬২৩/১৯৩৬, মুসতাদরাক হাকিম-২/১৯৮, সুনান বায়হাক্বী কুবরা-৭/২০৮, সুনান দারাকুতনী-৩/২৫১/২৮) একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, এরূপ বিয়ে সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন, ‘এটা বিয়েই নয় যাতে উদ্দেশ্য থাকে এক এবং বাহ্যিক হয় অন্য এবং যাতে মহান আল্লাহ্র কিতাবকে নিয়ে খেল-তামাশা করা হয়। বিয়ে তো শুধুমাত্র এটাই যা আগ্রহের সাথে হয়ে থাকে।’ মুসতাদরাক হাকিমে রয়েছে, এক ব্যক্তি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘একটি লোক তার স্ত্রীকে তৃতীয় তালাক দিয়ে দেয়। এরপর তার ভাই তাকে এই উদ্দেশ্যে বিয়ে করে যে, সে যেন তার ভাইয়ের জন্য হালাল হয়ে যায়। এই বিয়ে কি শুদ্ধ হয়েছে? তিনি উত্তরে বলেনঃ ‘কখনো নয়। আমরা এটাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে ব্যভিচারের মধ্যে গণ্য করতাম। বিয়ে ওটাই যাতে আগ্রহ থাকে।’ এ হাদীসটি মাওকূফ হলেও এর শেষের বাক্যটি একে মারফূ‘র পর্যায়ে এনে দিয়েছে। এমন কি অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, আমীরুল মু’মিনীন ‘উমার (রাঃ) বলেছেনঃ ‘যদি কেউ এই কাজ করে বা করায় তাহলে আমি উভয়কে ব্যভিচারের শাস্তি দিবো অর্থাৎ রজম করে দিবো। (ইবনুআবীশায়বা-৪/২৯৪, সুনান বায়হাক্বী-৭/২০৮)
তিন তালাকপ্রাপ্ত মহিলা কথন তার প্রথম স্বামীরকাছে ফিরে যেতে পারবে
ঘোষণা দেয়া হচ্ছেঃ ﴿فَاِنْ طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَیْهِمَاۤ اَنْ یَّتَرَاجَعَاۤ﴾ দ্বিতীয় স্বামী যদি বিয়ে ও সহবাসের পর তালাক দেয় তাহলে পূর্ব স্বামী পুনরায় ঐ স্ত্রীকে বিয়ে করলে কোন পাপ নেই, ﴿اِنْ ظَنَّاۤ اَنْ یُّقِیْمَا حُدُوْدَ اللّٰهِ ﴾ যদি তারা সদ্ভাবে বসবাস করে এবং এটাও জেনে নেয় যে, ঐ দ্বিতীয় বিয়ে প্রতারণা ও প্রবঞ্চনা ছিলো না, বরং প্রকৃতই বিয়ে ছিলো। (তাফসীর তাবারী -৪/৫৯৮) এটাই হচ্ছে মহান আল্লাহ্র বিধান যা তিনি জ্ঞানীদের জন্য প্রকাশ করে দিয়েছেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings