Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 227
Saheeh International
And if they decide on divorce - then indeed, Allah is Hearing and Knowing.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
‘ইলা’ সম্পর্কে আলোচনা
যদি কোন লোক কিছুদিন পর্যন্ত স্বীয় স্ত্রীর সহবাস না করার শপথ করে তাহলে এরূপ শপথকে ايلاء বলা হয়। এর দু’টি রূপ রয়েছে। এই সময় চার মাসের কম হবে বা বেশি হবে। যদি কম হয় তাহলে চার মাস পুরা করবে এবং এই সময়ের মধ্যে স্ত্রীও ধৈর্যধারণ করবে। এর মধ্যে সে স্বামীর নিকট আবেদন জানাতে পারবে না। এই চার মাস পুরা হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী পরস্পর মিলিত হবে। যেমন মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মাসের জন্য শপথ করেছিলেন এবং পূর্ণ ঊনত্রিশ দিন পৃথক থাকেন এবং বলেন, ‘মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।’ (সহীহুল বুখারী-৯/১৮৭/৫১৯১, ৯/২১১/৫২০২, ফাতহুল বারী ৮/৩৮০, সহীহ মুসলিম-২/২২/৭৬৩, ৭৬৪, ২/৩৪, ৩৫/১১১১-১১১৩) ‘উমার (রাঃ) থেকে আরো একটি অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। (ফাতহুল বারী -৪/১৪৩, সহীহ মুসলিম-২/১১১০)
আর যদি চার মাসের বেশি সময়ের জন্য শপথ করে তাহলে চার মাস পূর্ণ হওয়ার পর স্বামীর নিকট আবেদন জানানোর অধিকার স্ত্রীর রয়েছে যে, হয় মিলিত হবে, না হয় তালাক দিবে। চার মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাদেরকে বাধ্য করা হবে যে, হয় তারা স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে, না হয় তালাক দিবে। শাসনকর্তা স্বামীকে এ দু’য়ের মধ্যে একটি করতে বাধ্য করবেন যেন স্ত্রী কষ্ট না পায়। এখানে এই বর্ণনাই হচ্ছে যে, যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ايلاء করবে, অর্থাৎ তাদের সাথে সহবাস না করার শপথ করবে তাদের জন্য চার মাস সময় রয়েছে। চার মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাদেরকে বাধ্য করা হবে যে, হয় তারা স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে, না হয় তালাক দিবে।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) , মাসরুক (রহঃ) , আশ শা‘বী (রহঃ) , সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) এবং ইবনু জারীর (রহঃ) -ও এরূপ তাফসীর করেছেন। (তাফসীর তাবারী -৪/৪৬৬-৪৬৭) এর দ্বারা বুঝা গেলো যে, اِيْلَاء স্ত্রীদের জন্যই নির্দিষ্ট করা হয়েছে, দাসীদের জন্য নয়। এটাই জামহূর ‘উলামার মতামত। স্বামীর জন্য উচিত নয় যে, চার মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও স্ত্রী হতে পৃথক থাকবে। এখন যদি তারা ফিরে আসে, অর্থাৎ সহবাস করে তবে তার পক্ষ থেকে স্ত্রীর যে কষ্ট হয়েছে মহান আল্লাহ্ তা ক্ষমা করে দিবেন। এতে ঐ ‘আলিমদের জন্য দলীল রয়েছে যাঁরা বলেন যে, এই অবস্থায় স্বামীর ওপর কোন কাফ্ফারা নেই। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) -এরও প্রথম উক্তি এটাই। এর সমর্থনে ঐ হাদীস ও রয়েছে যা পূর্বের আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে। তা এই যে, শপথকারী শপথ ভেঙ্গে দেয়ার মধ্যেই যদি মঙ্গল বুঝতে পারে তবে তা ভেঙ্গে দিবে এবং এটাই তার কাফ্ফারা। কিন্তু ‘আলিমদের অন্য একটি দলের অভিমত এই যে, ঐ শপথের কাফ্ফারা দিতে হবে। এর স্বপক্ষের হাদীস গুলোও ওপরে বর্ণিত হয়েছে। জামহুরের মাযহাবও এটাই।
অতঃপর ঘোষণা হচ্ছে ‘চার মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর যদি সে তালাক দেয়ার ইচ্ছা করে’ এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, চার মাস অতিবাহিত হলেই তালাক হয়ে যায়না। পরবর্তী জামহূরের এটাই মাযহাব। তবে অন্য একটি দল এটাও বলেন যে, চার মাস অতিবাহিত হলেই তালাক হয়ে যাবে। ‘উমার (রাঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) এবং কোন কোন তাবি‘ঈ (রহঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। অতঃপর কেউ বলেন যে, এটা তালাকে রাজ‘ঈ হবে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, তালাকে বায়িন হবে। যারা তালাক হয়ে যাওয়ার মত পোষণ করেন তারা বলেন যে, এর পরে স্ত্রীকে ইদ্দতও পালন করতে হবে। তবে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এবং আবুশ শা‘শা (রহঃ) বলেন যে, যদি এই চার মাসের মধ্যে ঐ স্ত্রী লোকটির তিনটি হায়িয এসে গিয়ে থাকে তবে তার ওপর ইদ্দতও নেই। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) -এরও এটাই উক্তি।
কিন্তু পরবতী জামহূর ‘উলামার ঘোষণা এই যে, ঐ সময় অতিবাহিত হলেই তালাক হয়ে যাবে। এমন কি তখন শপথকারীকে বাধ্য করা হবে যে, হয় সে শপথ ভেঙ্গে দিবে, না হয় তালাক দিয়ে দিবে। নাফি (রহঃ) হতে মালিক (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেনঃ স্বামী যদি তার স্ত্রীর ব্যাপারে ‘ইলা’ তথা সহবাস না করার সংকল্প করে তাহলে চার মাস অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে আপনা আপনি স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে না, চার মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর সে তালাক দিবে অথবা ফিরিয়ে নিবে। (সহীহুল বুখারী-৯/৩৩৫/৫২৯১, মুওয়াত্তা-২/১৮/৫৫৬, ফাতহুল বারী ৯/৩৩৫) ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) স্বীয় সনদে সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণনা করেনঃ আমি দশজনের বেশি সাহাবী (রাঃ) হতে শুনেছি, তারা বলেছেন যে, চার মাসের পরে শপথকারীকে দাঁড় করানো হবে। (ফাতহুল বারী -৯/৩৩৮) অতঃপর তাকে বলা হবেঃ তুমি মিলিত হও অথবা তালাক দাও। সুতরাং কমপক্ষে তেরোজন সাহাবী (রাঃ) বলেনঃ ‘আলী (রাঃ) এটা নকল করা হয়েছে। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেনঃ এটাই আমাদের মাযহাব, এটাই ‘উমার (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ‘উসমান ইবনু যায়দ ইবনু সাবিত (রহঃ) এবং দশের ওপরে অন্যান্য সাহাবা-ই- কিরাম হতে বর্ণিত আছে।
ইবনু জারীর (রহঃ) বর্ণনা করেন, সুহাইল ইবনু আবূ সালিহ (রহঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেনঃ আমি ১২ জন সাহাবীকে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ‘ইলা’ করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি। তারা সবাই বলেছেন যে, চার মাস অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছুই করতে হবে না, এরপর হয় সে রেখে দিবে অথবা তালাক দিবে। (তাফসীর তাবারী -৪/৪৯৩) সুহাইল (রহঃ) থেকে দারাকুতনীও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (হাদীসটি সহীহ। সুনান দারাকুতনী-৪/৬১/১৪৭, ফাতহুল বারী -৯/৩৩৮, ৩৩৯)
‘উমার (রাঃ) , ‘উসমান (রাঃ) , ‘আলী (রাঃ) , আবুদ দারদা (রাঃ) , উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) , ইবনু ‘উমার (রাঃ) ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও এটাই বলেছেন। তাবি‘ঈগণের মধ্যে সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রহঃ) , ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , তাঊস (রহঃ) , মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব (রহঃ) এবং কাসিম (রহঃ) -এর উক্তিও এটাই। এই মনীষীগণ বলেন যে, যদি চার মাসের পরে সে ফিরে না আসে তবে তাকে তালাক দেয়াতে বাধ্য করা হবে। যদি তালাক না দেয় তবে শাসনকর্তা তার পক্ষ থেকে তালাক দিবেন এবং এটা হবে তালাকে রাজ‘ঈ। ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার স্বামীর রয়েছে। শুধুমাত্র ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন যে, স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া জায়িয নয় যে পর্যন্ত না ইদ্দতের মধ্যে সহবাস করে। কিন্তু এই উক্তিটি অত্যন্ত গারীব। এখানে যে চার মাস বিলম্বের অনুমতি দেয়া হয়েছে এই ব্যাপারে মুওয়াত্তা মালিকের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনারের বর্ণনায় ‘উমার (রাঃ) একটি ঘটনা ধর্মশাস্ত্রবিদগণ সাধারণতঃ বর্ণনা করে থাকেন। তা হচ্ছে এই যে, ‘উমার ফারুক (রাঃ) সাধারণতঃ রাত্রি বেলায় মাদীনার অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াতেন। একবার রাতে বের হয়ে তিনি শুনতে পান যে, একটি স্ত্রী লোক সফরে গমনকৃত তার স্বামীর স্মরণে একটি কবিতা পাঠ করছেঃ
تطاوَلَ هَذَا الليلُ وَاسْوَدَّ جانِبُهْ ... وَأَرَّقَنِي أَلَّا خليلَ ألاعِبُهْ ...
فَوَاللَّهِ لَوْلَا اللَّهُ أَنِّي أراقبهْ ... لحرِّكَ مِنْ هَذَا السَّرِيرِ جَوَانِبُهْ ...
‘হায় এই কৃষ্ণ ও সুদীর্ঘ রাত্রিসমূহে আমার স্বামী নেই। তিনি থাকলে তাঁর সাথে হাসি ও রং তামাশা করতাম। আল্লাহ্র শপথ! যদি আল্লাহ্র ভয় আমার না থাকতো তবে অবশ্যই এই সময়ে চৌকির পায়া নড়ে উঠতো।’ ‘উমার (রাঃ) স্বীয় কন্যা উম্মুল মু’মিনীন হাফসা (রাঃ) -এর নিকটে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, স্ত্রী তার স্বামীর অনুপস্থিতিতে কতোদিন ধৈর্য ধরে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ছ’মাস বা চার মাস। তিনি বলেন, এখন থেকে আমি নির্দেশ জারী করবো যে, কোন মুসলমান সৈন্য যেন সফরে এর চেয়ে অধিক দিন অবস্থান না করে। (হাদীসটি সহীহ। সুনান বায়হাক্বী-৯/২৯) কোন কোন বর্ণনায় কিছু বেশিও রয়েছে এবং এর অনেক সনদ রয়েছে এবং এই ঘটনাটি প্রসিদ্ধ হয়ে আছে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings