Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 22
Saheeh International
[He] who made for you the earth a bed [spread out] and the sky a ceiling and sent down from the sky, rain and brought forth thereby fruits as provision for you. So do not attribute to Allah equals while you know [that there is nothing similar to Him].
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
তাওহীদ আল উলুহিয়াহ
এখান থেকে মহান আল্লাহর তাওহীদ বা একাত্মবাদ ও তাঁর উলুহিয়াতের বর্ণনা শুরু হচ্ছে। তিনি স্বীয় বান্দাগণকে অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্বের দিকে টেনে এনেছেন, তিনিই প্রত্যেক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নি‘য়ামত দান করেছেন, তিনিই যমীনকে বিছানা স্বরূপ বানিয়েছেন এবং আকাশকে ছাদ করেছেন। যেমন অন্য আয়াতে আছেঃ
﴿وَ جَعَلْنَا السَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوْظًا١ۖۚ وَّ هُمْ عَنْ اٰیٰتِهَا مُعْرِضُوْنَ﴾
আর আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ ; কিন্তু তারা আকাশস্থিত নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (২১ নং সূরাহ্ আম্বিয়া, আয়াত নং ৩২)
আকাশ থেকে বারিধারা বর্ষণ করার অর্থ হচ্ছে মেঘমালা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করা এমন সময়ে যখন মানুষ এর পূর্ণ মুখাপেক্ষী থাকে। অতঃপর ঐ পানি থেকে বিভিন্ন প্রকারের ফলমূল উৎপন্ন করা, যা থেকে মানুষ এবং জীবজন্তু উপকৃত হয়, যেমন কুর’আন মাজীদের বিভিন্ন জায়গায় এর বর্ণনা এসেছে। এক স্থানে মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿الَّذِیْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ قَرَارًا وَّ السَّمَآءَ بِنَآءً وَّ صَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْ وَ رَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ١ؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمْ١ۖۚ فَتَبٰرَكَ اللّٰهُ رَبُّ الْعٰلَمِیْنَ﴾
তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বাসোপযোগী এবং আকাশকে করেছেন ছাদ এবং তোমাদের আকৃতি করেছেন উৎকৃষ্ট এবং তোমাদেরকে দান করেছেন উৎকৃষ্ট রিয্ক। এই তো মহান আল্লাহ, তোমাদের রাব্ব। কত মহান জগতসমূহের রাব্ব আল্লাহ তা‘আলা! (৪০ নং সূরাহ্ মু’মিন, আয়াত নং ৬৪)
উপরোক্ত আয়াতের মর্ম হচ্ছে এই যে, মহান আল্লাহই হলেন সবকিছুর স্রষ্টা, আহারদাতা, মালিক ও সংরক্ষণকার; বর্তমানে, অতীতে এবং ভবিষ্যতেও। অতএব একমাত্র তিনিই ‘ইবাদত পাবার যোগ্য এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে কিংবা কোন কিছুকে শরীক করা যাবেনা। এ কারণেই মহান আল্লাহ বর্ণনা করেন ‘অতএব তোমরা মহান আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করো না।’
এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ﴿فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّ اَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾
আল্লাহ তা‘আলার জন্য অংশীদার স্থাপন করো না, তোমরা তো বিলক্ষণ জানো ও বুঝো। (২ নং সূরাহ্ বাকারাহ, আয়াত নং ২২)
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে, ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ
أي الذنب أعظم؟ قال: "أن تجعل لله ندا، وهو خلقك"
‘হে মহান আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি?’ তিনি উত্তরে বলেনঃ ‘সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশীদার স্থাপন করা।’ (সহীহুল বুখারী, ৮/৪৪৭৭, ফাতহুল বারী ৮/৩৫০, সহীহ মুসলিম ১/১৪১/৯০)
আর একটি হাদীসে আছে, মু‘আয (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ أتدري ما حق الله على عباده؟ أن يعبدوه لا يشركوا به شيئًا
‘বান্দার ওপর মহান আল্লাহর হক কি তা কি তুমি জানো? তা হচ্ছে এই যে, তাঁর ‘ইবাদত করবে এবং তাঁর ‘ইবাদতে অন্য কাউকেও অংশীদার করবে না।’ (সহীহুল বুখারী, ৬/২৮৫৬, ফাতহুল বারী ১৩/৩৫৯, সহীহ মুসলিম ১/৪৮-৫১, ৫৮, ৫৯)
অন্য একটি হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ
لا يقولن أحدكم: ما شاء الله وشاء فلان، ولكن ليقل ما شاء الله، ثم شاء فلان.
‘তোমাদের মধ্যে যেন কেউ এ কথা না বলে যে, যা মহান আল্লাহ একা চান ও অমুক চায়।’ বরং যেন এই কথা বলে যে, যা কিছু আছে মহান আল্লাহ একাই চান তারপর অমুক চায়। (হাদীস হাসান। সুনান আবূ দাউদ ৪/৪৯৮০, মুসনাদ আহমাদ ৫/৩৮৪, ৩৯৪, ৩৯৮। সুনান বায়হাকী ৪/৫২২২)
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বৈমাত্রেয় ভাই তুফাইল ইবনু সাখবারাহ (রাঃ) বলেন, আমি স্বপ্নে কতকগুলো ইয়াহূদকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কে? তারা বললো, আমরা ইয়াহূদী। আমি বললাম, আফসোস! তোমাদের মধ্যে একটি বড় অন্যায় কাজ রয়েছে। আর তা হলো, তোমরা ‘উযায়ির (আঃ)-কে মহান আল্লাহর পুত্র বলে দাবী করে থাকো। তারা বললো, তোমরা খুব ভালো লোক, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তোমরা বলে থাকো যে, ‘মহান আল্লাহ যা চান এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা চান।’ অতঃপর আমি খ্রিষ্টানদের দলের নিকট গিয়ে অনুরূপ জিজ্ঞেস করলে তারাও উত্তরে তাই বললো, যা ইয়াহূদীরা বলেছিলো। পরদিন প্রভাতের পর কতিপয় লোকের সাথে বিষয়টি আলোচনা করলাম এবং একপর্যায়ে মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গিয়েও উক্ত ঘটনার বিবরণ দিলাম। মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,তুমি আর কারো কাছে স্বপ্নের বিবরণ বর্ণনা করেছো কি? আমি বললাম হ্যাঁ। তখন তিনি দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর হামদ-সানা বর্ণনা করে বললেনঃ
فَإن طُفيلا رأى رؤيا أخبر بها من أخبر منكم، وإنكم قلتم كلمة كان يمنعني كذا وكذا أن أنهاكم عنها، فلا تقولوا: ما شاء الله وشاء محمد، ولكن قولوا: ما شاء الله وحده.
‘তোফাইল (রাঃ) একটি স্বপ্ন দেখেছে এবং তোমাদের কারো কারো কাছে তা বর্ণনাও করেছে। আমি তোমাদেরকে একথাটি বলা হতে বিরত রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক কাজের কারণে এখন পর্যন্ত বলতে পারিনি। অতএব শোন, এখন থেকে তোমরা ‘মহান আল্লাহ যা চান এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা চান’ এমন কথা বলবেনা। বরং তোমরা বলবে ‘মহান আল্লাহ একাই যা চান।’ (হাদীস সহীহ। সুনান ইবনু মাজাহ ১/২১১৮, মুসনাদ আহমাদ ৫/৭২, ফাতহুল কাদীর ১/৭৪)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললো, মহান আল্লাহ যা চান এবং তুমি যা চাও। তখন মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ أجعلتني لله ندا ؟ قل: ما شاء الله وحده.
তুমি কি আমাকে মহান আল্লাহর অংশীদার করছো? তুমি বলো, ‘মহান আল্লাহ একাই যা চান।’ (হাদীস সহীহ। সহীহুল বুখারী ২/৭৮৩, সুনান বায়হাকী, ৩/২১৭, সুনান নাসাঈ কুবরা, ৬/২৪৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১০৮২৫, মুসনাদ আহমাদ ১/২১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১৮৩৯) এ সব কথা সরাসরি একত্ববাদের বিপরীত। মহান আল্লাহই ভালো জানেন।
মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক (রহঃ) একটি সূত্র উল্লেখ করে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ‘ইবাদত করো’ এর দ্বারা কাফির-মুনাফিক উভয় দলকেই সম্মোধন করে বলা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের একত্ববাদ ঘোষণা করো যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন।’ আর ‘জেনে বুঝে কাউকেও মহান আল্লাহ্র সমকক্ষ স্থির করো না।’ অর্থাৎ মহান আল্লাহর সাথে এমন কোন মূর্তি বা প্রতিমাকে সমকক্ষ স্থির করো না যারা তোমাদের না পারবে কোন উপকার করতে আর না পারবে কোন ক্ষতি করতে। তাছাড়া তোমরা তো জানো মহান আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন প্রতিপালক নেই যে, সে তোমাদের খাদ্য দিবে। আবার তোমরা এটাও জানো যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের যে তাওহীদের পথে আহ্বান করছেন তাই বাস্তব সত্য, এতে কোন সন্দেহ নেই। অনুরূপ তাফসীর কাতাদাহ (রহঃ)-ও করেছেন।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, الأنداد দ্বারা উদ্দেশ্য শিরক। যা অন্ধকার রাতে কালো পাথরের ওপর চলমান পিঁপড়ার চেয়েও সূক্ষ। যেমন কেউ বললো, হে অমুক! মহান আল্লাহর শপথ এবং তোমার হায়াত তথা জীবনের শপথ অথবা বললো আমার জীবনের শপথ। এটাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত যে, কেউ বলা যদি কুকুর না থাকতো তাহলে চোর এসে যেতো। যদি হাস না থাকতো তাহলে আমাদের নিকট চোর আসতো। এমনিভাবে কেউ তার সাথীকে বলা ‘মহান আল্লাহ যা চান এবং তুমি যা চাও’। তেমনিভাবে কোন ব্যক্তির একথা বলা যে, ‘মহান আল্লাহ এবং অমুক যদি না থাকতো’। এখানে ‘অমুক যা চায়’ বলা যাবে না। এ সবই শিরক। হাদীসে এসেছে জনৈক ব্যক্তি মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললো, মহান আল্লাহ যা চান এবং তুমি যা চাও। তখন মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ أجعلتني لله ندا؟
তুমি কি আমাকে মহান আল্লাহর অংশীদার করছো? (হাদীস সহীহ। সহীহুল বুখারী ২/৭৮৩, সুনান বায়হাকী, ৩/২১৭, সুনান নাসাঈ কুবরা, ৬/২৪৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১০৮২৫, মুসনাদ আহমাদ ১/২১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১৮৩৯) অন্য একটি হাদীসে রয়েছেঃ
نعم القوم أنتم، لولا أنكم تنددون، تقولون: ما شاء الله، وشاء فلان
তোমরা কতোই না উত্তম লোক হতে যদি তোমরা শিরক না করতে! তোমরা বলছো যে, মহান আল্লাহ যা চান এবং অমুক যা চায়।
মুজাহিদ (রহঃ) ‘তোমরা জানো’ এর তাফসীরে বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তোমরা তাওরাত ও ইনজীল পড়ছো এবং জেনেছো যে, মহান আল্লাহ অংশীদার মুক্ত। এটা জানা সত্তেও তোমরা তাঁর সমকক্ষ স্থির করছো কেন?
এ বিষয়ে হাদীসমূহ
ইমাম আহমাদ (রহঃ) হারিস আল আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَمَرَ يَحْيَى بْنَ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهِنَّ وَأَنْ يَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهِنَّ وكان يبطئ بها، فَقَالَ لَهُ عِيسَى إِنَّكَ قَدْ أُمِرْتَ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ تَعْمَلَ بِهِنَّ وَأَنْ تَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهِنَّ فَإِمَّا أَنْ تُبَلِّغَهُنَّ وَإِمَّا أُبَلِّغَهُنَّ فَقَالَ لَهُ يَا أَخِي إِنِّي أَخْشَى إِنْ سَبَقْتَنِي أَنْ أُعَذَّبَ أَوْ يُخْسَفَ بِي قَالَ فَجَمَعَ يَحْيَى بَنِي إِسْرَائِيلَ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ حَتَّى امْتَلَأَ الْمَسْجِدُ وَقُعِدَ عَلَى الشُّرَفِ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَمَرَنِي بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ أَعْمَلَ بِهِنَّ وَآمُرَكُمْ أَنْ تَعْمَلُوا بِهِنَّ أَوَّلُهُنَّ أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ مَثَلُ رَجُلٍ اشْتَرَى عَبْدًا مِنْ خَالِصِ مَالِهِ بِوَرِقٍ أَوْ ذَهَبٍ فَجَعَلَ يَعْمَلُ وَيُؤَدِّي عَمَلَهُ إِلَى غَيْرِ سَيِّدِهِ فَأَيُّكُمْ يَسُرُّهُ أَنْ يَكُونَ عَبْدُهُ كَذَلِكَ وَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ خَلَقَكُمْ وَرَزَقَكُمْ فَاعْبُدُوهُ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَأَمَرَكُمْ بِالصَّلَاةِ فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَنْصِبُ وَجْهَهُ لِوَجْهِ عَبْدِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ فَإِذَا صَلَّيْتُمْ فَلَا تَلْتَفِتُوا وَأَمَرَكُمْ بِالصِّيَامِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ مَعَهُ صُرَّةٌ مِنْ مِسْكٍ فِي عِصَابَةٍ كُلُّهُمْ يَجِدُ رِيحَ الْمِسْكِ وَإِنَّ خُلُوفَ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ وَأَمَرَكُمْ بِالصَّدَقَةِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَسَرَهُ الْعَدُوُّ فَشَدُّوا يَدَيْهِ إِلَى عُنُقِهِ وَقَرَّبُوهُ لِيَضْرِبُوا عُنُقَهُ فَقَالَ هَلْ لَكُمْ أَنْ أَفْتَدِيَ نَفْسِي مِنْكُمْ فَجَعَلَ يَفْتَدِي نَفْسَهُ مِنْهُمْ بِالْقَلِيلِ وَالْكَثِيرِ حَتَّى فَكَّ نَفْسَهُ وَأَمَرَكُمْ بِذِكْرِ اللهِ كَثِيرًا وَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ طَلَبَهُ الْعَدُوُّ سِرَاعًا فِي أَثَرِهِ فَأَتَى حِصْنًا حَصِينًا فَتَحَصَّنَ فِيهِ وَإِنَّ الْعَبْدَ أَحْصَنَ مَا يَكُونُ مِنْ الشَّيْطَانِ إِذَا كَانَ فِي ذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ وَقَالَ رَسُولُ اللهِ (রাঃ) أَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ بِالْجَمَاعَةِ وَبِالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَالْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ فِي سَبِيلِ اللهِ فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنْ الْجَمَاعَةِ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ إِلَى أَنْ يَرْجِعَ وَمَنْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَهُوَ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى قَالَ وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ فَادْعُوا الْمُسْلِمِينَ بِمَا سَمَّاهُمْ الْمُسْلِمِينَ الْمُؤْمِنِينَ عِبَادَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ.
মহান আল্লাহ ইয়াহ্ইয়া ইবনু যাকারিয়া (আঃ)-কে পাঁচটি বিষয় বাস্তবায়ন করার আদেশ দেন এবং বানী ইসরাঈলকেও তা পালনের জন্য তাগাদা দিতে আদেশ করেন। কিন্তু ইয়াহ্ইয়া (আঃ) সেই আদেশ পালন করতে একটু দেরী করেন। ‘ঈসা (আঃ) ইয়াহ্ইয়া (আঃ)-কে বলেনঃ আপনাকে এবং বানী ইসরাঈলকে পাঁচটি বিষয় পালন করার জন্য মহান আল্লাহ আদেশ করেছিলেন, সুতরাং হয় আপনি তাদের আদেশ করুন, না হয় আমিই সেই আদেশ পালন করি। ইয়াহ্ইয়া (আঃ) বললেনঃ হে আমার ভাই! আপনি যদি আমার আগে তা পালন করেন তাহলে আমি আশঙ্কা করছি যে, মহান আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিবেন অথবা আমার পায়ের নিচের মাটি ধ্বসে যাবে। অতঃপর ইয়াহ্ইয়া (আঃ) বানী ইসরাঈলকে বায়তুল মুকাদ্দাসে একত্রিত করলেন, যতোক্ষণ না মাসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ হলো। তিনি মাসজিদের বারান্দায় এসে মহান আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং বললেনঃ মহান আল্লাহ আমাকে পাঁচটি বিষয় বাস্তবায়নের আদেশ করেছেন এবং তোমাদেরকেও তা পালন করতে বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। প্রথমটি হলো একমাত্র মহান আল্লাহর ‘ইবাদত করবে এবং তাঁর সাতে কাউকে শরীক করবে না। এর উদাহরণ হলো, যেমন কোন এক লোক তার নিজ উপার্জিত অর্থ দ্বারা একটি গোলাম ক্রয় করলো, গোলামটি তার মালিকের জন্য কাজ করতে শুরু করলো, কিন্তু পরিশ্রমের ফসল অন্য লোককে দিয়ে দিলো। তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে তার গোলামের এরূপ কাজকে সমর্থন করবে? মহান আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই তোমাদের আহার যোগান দিচ্ছেন। অতএব তাঁরই ‘ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না। আর আমি তোমাদেরকে সালাত আদায় করার নির্দেশ দিচ্ছি, কারণ মহান আল্লাহ তাঁর মুখমণ্ডল তোমাদের মুখমণ্ডলের দিকে ফিরিয়ে রেখেছেন, যতোক্ষণ না তাঁর গোলাম বা বান্দারা তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়। অতএব যখন তোমরা সালাত আদায় করবে তখন তোমরা এদিক ওদিক তাকাবেনা। আমি তোমাদেরকে আরো নির্দেশ দিচ্ছি সিয়াম পালন করার। এর উদাহরণ হলো এমন যে, একদল লোকের মাঝে এক লোকের কাছে একটি কাপড়ের টুকরায় মৃগ-নাভীর সুগন্ধি লাগানো ছিলো, ফলে ঐ দলের সবাই সুগন্ধির ঘ্রাণ পাচ্ছিলো। অবশ্যই মহান আল্লাহর কাছে সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ মৃগ-নাভীর সুগন্ধির চেয়ে উত্তম। আমি তোমাদেরকে আরো নির্দেশ দিচ্ছি যাকাত প্রদান করতে। এর উদাহরণ হলো ঐ ব্যক্তির মতো যে শত্রুর হাতে বন্দী হয়েছে, অতঃপর তার হাত দু’টি তার ঘাড়ের সাথে বেঁধে হত্যা করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সে তাদেরকে বললোঃ আমি কি তোমাদেরকে এর পরিবর্তে মুক্তি-পণ দিতে পারি? সে তার মুক্তি-পণ বাবদ ছোট-বড় সবকিছু দিতে থাকলো যতোক্ষণ না তারা তাকে ছেড়ে দিলো। আমি তোমাদেরকে আরো নির্দেশ দিচ্ছি যে, সব সময় মহান আল্লাহকে স্মরণ করবে। এর ফায়দা হলো ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে তার শত্রু বিরামহীনভাবে পিছু ধাওয়া করছে, অবশেষে সে একটি পরিত্যক্ত দূর্গে আশ্রয় নিলো। বান্দা যখন মহান আল্লাহকে স্মরণে রাখে তখন সে সবচেয়ে উত্তম আশ্রয়প্রাপ্ত হয়।
অতঃপর হারিস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আরো বর্ণনা করেনঃ আমিও তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নাসীহাত করছি। তোমরা সবাই মিলে জামা‘আতবদ্ধ হয়ে থাকবে, তোমাদের নেতাদের কথা শুনবে এবং মান্য করবে, হিজরত করবে এবং মহান আল্লাহর উদ্দেশে জিহাদ করবে। যে এক হাত পরিমাণও জামা‘আত থেকে দূরে সরে যাবে সে যেন ইসলামী জামা‘আতের বন্ধন থেকে সরে গেলো, যতোক্ষণ না সে জামা‘আতের সাথে আবার মিলিত হবে। যে জাহিলিয়াতের কোন বাক্য উচ্চারণ করলো সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সাহাবীগণ (রাঃ) বললেনঃ হে মহান আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যদি তারা যাকাত প্রদান করে এবং সিয়াম পালন করে তবুও? তিনি বললেনঃ যদিও তারা সালাত কায়িম করে, সিয়াম পালন করে এবং নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করে। সুতরাং মুসলিমদেরকে তাদের নামে ডাকবে যেমনটি মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘মুসলিম’ মহান আল্লাহর বিশ্বাসী বান্দা। (হাদীস সহীহ। জামি‘ তিরমিযী ৫/২৮৬৩, মুসতাদরাক হাকিম ১/১১৭,১১৮, মুসনাদ আহমাদ- ৪/১৩০, ২০২, ১৭১৭০, ১৭৮০১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮/৬২০০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্- ৩/১৯৫, ১৮৯৫)
এ হাদীসটি হাসান। এই আয়াতের মধ্যেও এটাই বর্ণিত। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই তোমাদেরকে আহার্য দিচ্ছেন। সুতরাং তাঁরই ‘ইবাদত করো। তাঁর সাথে কাউকেও অংশীদার করো না। এ আয়াত সাব্যস্ত হচ্ছে যে, ‘ইবাদতের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদের পূর্ণ খেয়াল রাখা উচিত। সমগ্র ‘ইবাদতের যোগ্য একমাত্র তিনিই।
মহান আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ
ইমাম রাযী (রহঃ) প্রভৃতি মনীষীগণ আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্বের ওপরেও এই আয়াত দ্বারা প্রমাণ করেছেন এবং প্রকৃতপক্ষে এই আয়াতটি আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্বের ওপরে খুব বড় দালীল। আকাশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন আকার, বিভিন্ন রং, বিভিন্ন স্বভাব এবং বিভিন্ন উপকারের প্রাণীসমূহ, ওদের সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব, তাঁর ব্যাপক ক্ষমতা ও নৈপুণ্য এবং তাঁর বিরাট সাম্রাজ্যের সাক্ষ্য বহন করেছে।
কোন এক বেদুঈনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলোঃ ‘মহান আল্লাহ যে আছে তার প্রমাণ কি?’ সে উত্তরে বলেছিলোঃ ‘সুবহানাল্লাহু! উটের বিষ্ঠা দেখে উট আছে এর প্রমাণ পাওয়া যায়, পায়ের চিহ্ন দেখে পথিকের পথ চলার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাহলে এই যে বড় বড় নক্ষত্র বিশিষ্ট আকাশ, বহু পথ বিশিষ্ট যমীন, বড় বড় ঢেউ বিশিষ্ট সমুদ্র কি সেই মহাজ্ঞানী ও সূক্ষ্মদর্শী মহান আল্লাহর প্রমাণ দেয় না? (আর রাযী ২/৯১)
ইমাম রাযী (রহঃ) বলেন, খলীফা হারূনুর রশিদ ইমাম মালিক (রহঃ) কে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেনঃ ‘ভাষা ভিন্ন হওয়া, শব্দ পৃথক হওয়া, স্বর মাধুর্য আলাদা হওয়াই প্রমাণ করে যে, মহান আল্লাহ আছেন।
ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-কে কতিপয় নাস্তিক মহান আল্লাহর অস্তিত্ব প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেনঃ
دعوني فإني مفكر في أمر قد أخبرت عنه ذكروا لي أن سفينة في البحر موقرة فيها أنواع من المتاجر وليس بها أحد يحرسها ولا يسوقها، وهي مع ذلك تذهب وتجيء وتسير بنفسها وتخترق الأمواج العظام حتى تتخلص منها، وتسير حيث شاءت بنفسها من غير أن يسوقها أحد. فقالوا: هذا شيء لا يقوله عاقل، فقال: ويحكم هذه الموجودات بما فيها من العالم العلوي والسفلي وما اشتملت عليه من الأشياء المحكمة ليس لها صانع!! فبهت القوم ورجعوا إلى الحق وأسلموا على يديه.
‘আমাকে তোমরা একটু অবকাশ দাও, কেননা আমি এখন একটি বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত রয়েছি। জনগণ আমাকে সংবাদ দিয়েছে যে, একটি বড় নৌকা আছে যাতে বিভিন্ন ব্যবসায়ের মাল আছে। অথচ উক্ত নৌকাটির কোন রক্ষক ও চালক কিছুই নেয়। এতদসত্তেও নৌকাটি একাকী নদীতে যাতায়াত করছে। আর বড় বড় ঢেউ গুলো নিজে নিজেই চিরে ফিরে চলে যাচ্ছে। কোন প্রকার মাঝি বা নিয়ন্ত্রক ছাড়াই থামবার জায়গায় থামছে, চলবার জায়গায় চলছে। তখন প্রশ্নকারী নাস্তিকরা বললো, এমন কথা কোন বিবেকবান ব্যক্তি বলতে পারে না। তিনি বললেন, আফসোস! তোমাদের বিবেকের প্রতি। একটি নৌকা চালক ব্যতীত চলতে পারে না, কিন্তু সারা দুনিয়া, আসমান-যমীন এর সমুদয় জিনিস আপন আপন কাজে লেগে রয়েছে অথচ এর কোন মালিক নেই, পরিচালক ও সৃষ্টিকর্তা নেই? উত্তর শোনে তারা হতভম্ব হয়ে গেলো এবং সত্য জেনে নিয়ে তারা মুসলমান হলো।
ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, তুঁত গাছের একই পাতা একই স্বাদ। যা পোকা, মৌমাছি, গরু, ছাগল, হরিণ ইত্যাদি সবাই খেয়ে থাকে ও চরে থাকে। আর তা খাওয়ার ফলেই পোকা হতে রেশম বের হয়, মৌমাছি থেকে মধু হয়, হরিণের মধ্যে মৃগনাভি জন্মলাভ করে এবং গরু-ছাগল গোবর ও লাদি দেয়। এগুলো কি প্রমাণ করে না যে, একই পাতার মধ্যে বিভিন্ন প্রকৃতির সৃষ্টিকারী একজন আছেন। আর তাকেই আমরা আল্লাহ মেনে থাকি। তিনি আবিস্কারক এবং তিনিই শিল্পী।
ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ)-এর নিকট মহান আল্লাহর অস্তিত্ব প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেনঃ জেনে রেখো, এখানে একটি মযবূত দূর্গ রয়েছে। তাতে কোন দরজা নেই, কোন পথ নেই এমনকি কোন ছিদ্রও নেই। যার বাহিরটা চকচক করছে এবং ভিতরটা সোনার মতো জ্বল জ্বল করছে, আর ওপর নিচ, ডান-বাম চারদিক সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। বাতাস পর্যন্ত ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। হঠাৎ এর একটি প্রাচীর ভেঙ্গে পড়লো এবং তার ভিতর থেকে চোখ-কান বিশিষ্ট চলৎ শক্তি সম্পন্ন সুন্দর আকৃতির একটি জীবন্ত প্রাণী বেরিয়ে আসলো। আচ্ছা বলতো এই রুদ্ধ ও নিরাপদ ঘরে এ প্রাণীটির সৃষ্টিকারী কেউ আছে-কি নেই? সেই স্রষ্টার অস্তিত্ব মানবীয় অস্তিত্ব হতে উচ্চতর এবং তার ক্ষমতা অসীম কি-না? তার উদ্দেশ্য ছিলো এই যে, ‘ডিমকে দেখো, তার চারদিকে বন্ধ রয়েছে, তা সত্ত্বেও সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তার ভিতর জীবন্ত মুরগীর বাচ্চা সৃষ্টি করেছেন। আর এটাই মহান আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর একত্ববাদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ।
আবূ নুয়াস (রহঃ) এই জিজ্ঞাস্য বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেছিলেনঃ ‘আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হওয়া তা হতে বৃক্ষরাজি সৃষ্টি হওয়া এবং তরতাজা শাখার ওপর সুস্বাদু ফলের অবস্থান আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্ব এবং তাঁর একাত্মবাদের দালীল হওয়ার জন্য যথেষ্ট। ইবনু মু‘আয (রহঃ) বলেনঃ ‘আফসোস! আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা এবং তাঁর সত্ত্বাকে অবিশ্বাস করার ওপর মানুষ কি করে সাহসিকতা দেখাচ্ছে অথচ প্রত্যেক জিনিসই সেই বিশ্ব রবের অস্তিত্ব এবং তাঁর অংশীবিহীন হওয়ার ওপর সাক্ষ্য প্রদান করছে!’ অতএব যারা আকাশের দিকে তাকিয়ে এর বিশালতা, প্রশস্ততা এবং বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করে, যার কিছু স্থির এবং কিছু চলনশীল ,যারা সমুদ্রের প্রতি লক্ষ্য করে যার উভয় দিক ভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত, যার পাহাড়সমূহ ভূমিকে স্থির রাখার জন্য মাটিতে প্রোথিত তাদের জন্য এতে রয়েছে উপদেশ। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
﴿وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌۢ بِیْضٌ وَّحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهَا وَغَرَابِیْبُ سُوْدٌ۲۷ وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَ الْاَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ كَذٰلِكَ١ؕ اِنَّمَا یَخْشَى اللّٰهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمٰٓؤُا﴾
পাহাড়ের মধ্যে আছে বিচিত্র বর্ণের ফল- শুভ্র, লাল ও নিকষ কালো। এভাবে রং বেরংয়ের মানুষ, জানোয়ার ও চতুস্পদ জন্তু রয়েছে। মহান আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই তাঁকে ভয় করে। (৩৫ নং সূরাহ্ ফাতির, আয়াত নং ২৭-২৮)
অন্যান্য বিজ্ঞজনের বাক্য হচ্ছেঃ ‘তোমরা আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করো, এর উচ্চতা, প্রশস্ততা, এর ছোট বড় উজ্জ্বল তারকারাজির প্রতি লক্ষ্য করো, এগুলোর ঔজ্জ্বল্য ও জাঁকজমক, এদের আবর্তন ও স্থিরতা এবং এদের প্রকাশ পাওয়া ও গোপন হওয়ার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করো। অতঃপর সমুদ্রের দিকে চেয়ে দেখো যার ঢেউ খেলতে রয়েছে ও পৃথিবীকে ঘিরে আছে। তারপর উঁচু নীচু পাহাড়গুলোর দিকে দেখো যা যমীনের বুকে প্রোথিত রয়েছে এবং একে নড়তে দেয় না, এদের রং ও আকৃতি বিভিন্ন। বিভিন্ন প্রকারের সৃষ্ট বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করো, আবার ক্ষেত্র ও বাগানসমূহকে সবুজ সজীবকারী প্রবাহমান সুদৃশ্য নদীগুলোর দিকে তাকাও, ক্ষেত্র ও বাগানের সবজীগুলো এবং এদের নানা প্রকার ফল, ফুল এবং সুস্বাদু মেওয়াগুলোর কথা চিন্তা করো যে, মাটিও এক এবং পানিও এক, কিন্তু আকৃতি, গন্ধ, রং এবং স্বাদ এবং উপকার দান পৃথক পৃথক। এসব কারিগরী কি তোমাদেরকে বলে দেয় না যে, এদের একজন কারিগর আছেন? এসব আবিষ্কৃত জিনিস কি উচ্চস্বরে বলে না যে, এদের আবিষ্কারক কোন একজন আছেন? এ সমুদয় সৃষ্টজীব কি স্বীয় সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব, তাঁর সত্ত্বা ও একাত্মবাদের সাক্ষ্য প্রদান করে না? এ হচ্ছে দালীল যা মহা সম্মানিত ও মহা মর্যাদাবান মহান আল্লাহ স্বীয় সত্ত্বাকে স্বীকার করার জন্য প্রত্যেক চক্ষুর সামনে রেখে দিয়েছেন যা তাঁর ব্যাপক ক্ষমতা, পূর্ণ নৈপুন্য, অদ্বিতীয় রহমত, অতুলনীয় দান এবং অফুরন্ত অনুগ্রহের ওপর সাক্ষ্য দান করার জন্য যথেষ্ট। আমরা স্বীকার করছি যে, তিনি ছাড়া অন্য কোন পালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা এবং রক্ষাকর্তা নেই। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং নিঃসন্দেহে তিনি ছাড়া সাজদার হকদারও আর কেউ নেই। হে দুনিয়ার লোকেরা! তোমরা শোনে রেখো যে, আমার আস্থা ও ভরসা তাঁরই ওপর রয়েছে, আমার যাবতীয় আবেদন তাঁরই নিকট, তাঁরই সামনে আমার মস্তক অবনত হয়, তিনিই আমার আশ্রয়স্থল, অতএব আমি তাঁরই নাম উঁচ্চারণ করছি।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings