Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 205
Saheeh International
And when he goes away, he strives throughout the land to cause corruption therein and destroy crops and animals. And Allah does not like corruption.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
মুনাফিকদের চরিত্র
সুদ্দী (রহঃ) বলেন যে, এই আয়াতগুলো আখনাস ইবনু শারীক সাকাফীর সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়। এই লোকটি মুনাফিক ছিলো। প্রকাশ্যে সে মুসলিম ছিলো বটে, কিন্তু ভিতরে সে মুসলিমদের বিরোধী ছিলো। (সনদটি য‘ঈফ, মুরসাল। তাফসীর তাবারী -৪/২২৯/৩৯৬১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ﴿وَ مِنَ النَّاسِ مَنْ یَّشْرِیْ نَفْسَهُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللّٰهِ﴾ আয়াতগুলো ঐ মুনাফিকদের সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে যারা খুবাইব (রাঃ) ও তাঁর সাথীদের দুর্নাম করেছিলো, ‘যাঁদেরকে’ রাজী‘ নামক স্থানে শহীদ করা হয়েছিলো। এই শহীদগণের প্রশংসায় শেষের আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং পূর্বের আয়াতগুলো মুনাফিকদের নিন্দা করে অবতীর্ণ হয়। (সনদটি য‘ঈফ। তাফসীর তাবারী -৫/২৩০/৩৯৬২) কেউ কেউ বলেন যে, আয়াতগুলো ব্যাপক। প্রথম তিনটি আয়াত সমস্ত মুনাফিকদের সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয় এবং চতুর্থ আয়াতটি সমুদয় মুসলিমের প্রশংসায় অবতীর্ণ হয়। কাতাদাহ (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) প্রমুখ মনীষীর উক্তি এটাই এবং এটাই সঠিক।
নাওফ বাককালী (রহঃ) যিনি তাওরাত ও ইনজীলেরও পণ্ডিত ছিলেন এর সূত্রে বলেনঃ ‘আমি এই উম্মাতের কতোগুলো লোকের মন্দ-গুণ মহান আল্লাহ্র অবতারিত গ্রন্থের মধ্যেই পেয়েছি। কতোগুলো লোক প্রতারণা করে দুনিয়া কামাচ্ছে। তাদের কথা তো মধুর চেয়েও মিষ্টি, কিন্তু তাদের অন্তর নিম অপেক্ষাও তিক্ত। মানুষকে দেখানোর জন্য তারা ছাগলের চামড়া পরিধান করে,কিন্তু তাদের অন্তর নেকড়ে বাঘের ন্যায়। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘আমার ওপর সে বীরত্ব প্রকাশ করে এবং আমার সাথে প্রতারণা করে। আমার সত্ত্বার শপথ! আমি তার প্রতি এমন পরীক্ষা পাঠাবো যে, সহিষ্ণু লোকেরাও হতভম্ব হয়ে যাবে।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। তাফসীর তাবারী -৪/২৩১/৩৯৬৪)
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, ‘আমি খুব চিন্তা-গবেষণা করে বুঝতে পারলাম যে, এগুলো মুনাফিকদের বিশেষণ। কুর’আনুল হাকীমেও এটা বিদ্যমান রয়েছে।’ অতঃপর তিনি ﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ یُّعْجِبُكَ قَوْلُه فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ یُشْهِدُ اللّٰهَ عَلٰى مَا فِیْ قَلْبِهۙ وَ هُوَ اَلَدُّ الْخِصَامِ﴾ এই আয়াতগুলো ( নং সূরাহ আল বাকারাহ, আয়াত-২০৪) পাঠ করেন।’(তাফসীর তাবারী ৪/২৩২)
তারা জনসাধারণের সামনে নিজেদের মনের দুষ্টমি গোপন করলেও মহান আল্লাহ্র সামনে তাদের অন্তরের কুফরী প্রকাশমান।’ যেমন মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿اِذَا جَآءَكَ الْمُنٰفِقُوْنَ قَالُوْا نَشْهَدُ اِنَّكَ لَرَسُوْلُ اللّٰهِ١ۘ وَ اللّٰهُ یَعْلَمُ اِنَّكَ لَرَسُوْلُه وَاللّٰهُ یَشْهَدُ اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ لَكٰذِبُوْنَ﴾
‘মুনাফিকরা যখন তোমার কাছে আসে তখন তারা বলে- ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি অবশ্যই মহান আল্লাহ্র রাসূল।’ মহান আল্লাহ্ জানেন, অবশ্যই তুমি তাঁর রাসূল। আর মহান আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।’ (৬৩ নং সূরাহ আল মুনাফিকূন, আয়াত-১) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
﴿یَّسْتَخْفُوْنَ مِنَ النَّاسِ وَ لَا یَسْتَخْفُوْنَ مِنَ اللّٰهِ﴾
‘তারা মানব হতে গোপন করতে চায়, কিন্তু মহান আল্লাহ্ হতে গোপন করতে পারে না।’ (৪নং সূরাহ্ নিসা, আয়াত নং ১০৮) এটা হলো ইবনু ইসহাক ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে যা বর্ণনা করেছেন তার ভাবার্থ।
অবশ্য কেউ কেউ এর অর্থ করেছেনঃ ‘মানুষের সামনে তারা ইসলাম প্রকাশ করে এবং মহান আল্লাহ্র শপথ করে বলে যে,তারা মুখে যা বলছে তাই তাদের অন্তরেও রয়েছে।’ আয়াতের সঠিক অর্থ এটাই বটে। ‘আবদুর রহমান ইবনু যায়দ (রহঃ) এবং মুজাহিদ (রহঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) -ও এই অর্থই পছন্দ করেছেন। (তাফসীর তাবারী ৪/২৩৩) সঠিকটি সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ই ভালো জানেন।
মহান আল্লাহ্র বাণীঃ وَهُوَاَلَدُّالْخِصَامِ ‘সে ব্যক্তি খুবই ঝগড়াটে।’ اَلَدُّ বা ঝগড়াটের আভিধানিক অর্থ হলো ‘বক্রতা’। যেমন অন্য জায়গায় আছেঃ ﴿وَ تُنْذِرَ بِه قَوْمًا لُّدًّا﴾
‘যাতে তুমি এর দ্বারা বক্রতা প্রবণ সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারো।’ (১৯নং সূরাহ্ মারইয়াম, আয়াত নং ৯৭)
মুনাফিকদের অবস্থাও এরূপ। তারা প্রমাণ স্থাপনে মিথ্যা বলে, সত্য হতে সরে যায়, সরল ও সঠিক কথা ছেড়ে দিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং গালি দিয়ে থাকে। বিশুদ্ধ হাদীসে রয়েছেঃ
آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ.
‘মুনাফিকদের অবস্থা তিনটি। (১) কথা বললে মিথ্যা বলে। (২) অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করে। (৩) কোন বিষয়ে বিবাদ হলে গালাগালি করে।’ (সহীহুল বুখারী-১/১১১/৩৪, ফাতহুল বারী ১/১১১, সহীহ মুসলিম-১/১০৬/৭৮) অন্য একটি হাদীসে রয়েছেঃ أَبْغَضُ الرِّجَالِ إِلَى اللهِ الْأَلَدُّ الْخَصِمُ.
‘মহান আল্লাহ্র নিকট অতি মন্দ ঐ ব্যক্তি যে অত্যন্ত ঝগড়াটে।’ (সহীহুল বুখারী-৮/৩৬/৪৫২৩, ফাতহুল বারী ৮/৩৬, তাফসীরে ‘আব্দুর রায্যাক-১/৯৭/২৪০)
অতঃপর ইরশাদ হচ্ছেঃ
﴿وَ اِذَا تَوَلّٰى سَعٰى فِی الْاَرْضِ لِیُفْسِدَ فِیْهَا وَ یُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ وَاللّٰهُ لَا یُحِبُّ الْفَسَادَ﴾
‘যখন তোমার কাছ থেকে সে ব্যক্তি ফিরে যায়, তখন দেশের মধ্যে অনিষ্ট ঘটাতে এবং শস্যাদি ও পশুসমূহকে ধবংস করতে চেষ্টা করে কিন্তু মহান আল্লাহ্ সন্ত্রাস পছন্দ করেন না।’ অর্থাৎ এরা যেমন কটু ও কর্কশ ভাষী তেমনি এদের কার্যাবলীও অতি জঘন্য। তাদের কাজ তাদের কথার সম্পূর্ণ বিপরীত। তাদের ‘আক্বীদা বা বিশ্বাস একেবারেই অসৎ। এখানে سَعٰى শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘ইচ্ছা করা’। এ শব্দটি ফির‘আউনের বেলায়ও ব্যবহৃত হয়েছেঃ
﴿ثُمَّ اَدْبَرَ یَسْعٰى٘ۖ۲۲ فَحَشَرَ فَنَادٰى٘ۖ۲۳ فَقَالَ اَنَا رَبُّكُمُ الْاَعْلٰى٘ۖ۲۴ فَاَخَذَهُ اللّٰهُ نَكَالَ الْاٰخِرَةِ وَالْاُوْلٰىؕ اِنَّ فِیْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّمَنْ یَّخْشٰى﴾
‘অতঃপর সে পশ্চাৎ ফিরে প্রতিবিধানে সচেষ্ট হলো। যে সকলকে সমবেত করলো এবং উচ্চস্বরে ঘোষণা করে বললোঃ আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ রাব্ব। ফলে মহান আল্লাহ্ তাকে ধৃত করলেন আখিরাতের ও ইহকালের দণ্ডের নিমিত্ত। যে ভয় করে তার জন্য অবশ্যই এতে শিক্ষা রয়েছে।’ (৭৯নং সূরাহ্ নাযি‘আত, আয়াত নং ২২-২৬)
এছাড়াও এ শব্দটি নিম্ন আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছেঃ
﴿یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا نُوْدِیَ لِلصَّلٰوةِ مِنْ یَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللّٰهِ ﴾
‘হে মু’মিনগণ! জুমু‘আর দিন যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা মহান আল্লাহ্র স্মরণে ধাবিত হও।’ (৬২নং সূরাহ্ জুমু‘আহ, আয়াত নং ৯)
অর্থাৎ সালাতের জন্য যখন আহ্বান করা হয় তখন মন স্থির করো এবং জুমু‘আর সালাত আদায় করার জন্য অগ্রসর হও। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি যে, সালাত আদায় করার জন্য ধাবিত হওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করাকে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব এখানে سَعِىْ শব্দটির অর্থ দৌড়ান নয়। কেননা সালাতের জন্য দৌড়িয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। হাদীসে রয়েছেঃ
إِذَا أَتَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَلَا تَأْتُوهَا وَأَنْتُمْ تَسْعَوْن، وَأْتُوهَا وَعَلَيْكُمُ السكينةُ وَالْوَقَارُ.
‘যখন তোমরা সালাতের জন্য আগমন করো তখন আরাম ও স্বস্তির সাথে এসো।’ (সহীহুল বুখারী-২/৪৫৩/৯০৮, ২/১৩৮/৬৩৬, সহীহ মুসলিম-১/১৫১/৪২০, মুসনাদ আহমাদ -২/৪২৭) অতএব অর্থ এই যে, মুনাফিকদের উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীর বুকে অশান্তি সৃষ্টি করা এবং শস্যক্ষেত্র ও জীব-জন্তু বিনষ্ট করা। মুনাফিকরা পৃথিবীতে কিছুই করতে পারে না একমাত্র ক্ষতির কারণ ছাড়া। তাদের কার্যাবলীর জন্য ফসলের ক্ষতি হয় এবং মানব-সন্তান ও পশু পাখি ধ্বংস প্রাপ্ত হয়, ফলে মানুষ পশুর সাহায্যে যে সমস্ত খাদ্য প্রাপ্ত হয় তা থেকেও বঞ্চিত হয়। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, মুনাফিকরা যখন পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে তখন মহান আল্লাহ্ বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেন, ফলে ফল-ফসল এবং বংশ বিস্তার ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। মুজাহিদ (রহঃ) হতে এই অর্থও বর্ণিত যে, ঐ মুনাফিকদের শঠতা ও অন্যায় কার্যকলাপের ফলে মহান আল্লাহ্ বৃষ্টি বন্ধ করে দেন, ফলে শস্যক্ষেত্রও জীব-জন্তুর ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ্ এই ধরনের ‘বিবাদ ও অশান্তি সৃষ্টিকারীদের মোটেই ভালোবাসেন না।’
মুনাফিকরা উপদেশ গ্রহণ করে না
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿وَاِذَا قِیْلَ لَهُ اتَّقِ اللّٰهَ اَخَذَتْهُ الْعِزَّةُ بِالْاِثْمِ﴾
‘যখন তাকে বলা হয়, মহান আল্লাহ্ কে ভয় করো, তখন অহঙ্কার তাকে গুনাহ্রে দিকে আকর্ষণ করে’ অত্র আয়াতাংশ থেকে জানা যাচ্ছে যে, দুষ্ট ও অসদাচরণকারীদেরকে যখন উপদেশের মাধ্যমে বুঝানো হয় তখন তারা আরো উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং বিরোধিতার উত্তেজনায় পাপ কাজে আরো বেশি লিপ্ত হয়ে পড়ে। আর এরই সাদৃশ্য হলো নিচের আয়াতটিঃ
﴿وَ اِذَا تُتْلٰى عَلَیْهِمْ اٰیٰتُنَا بَیِّنٰتٍ تَعْرِفُ فِیْ وُجُوْهِ الَّذِیْنَ كَفَرُوا الْمُنْكَرَ١ؕ یَكَادُوْنَ یَسْطُوْنَ بِالَّذِیْنَ یَتْلُوْنَ عَلَیْهِمْ اٰیٰتِنَا١ؕ قُلْ اَفَاُنَبِّئُكُمْ بِشَرٍّ مِّنْ ذٰلِكُمْ١ؕ اَلنَّارُ١ؕ وَعَدَهَا اللّٰهُ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا١ؕ وَ بِئْسَ الْمَصِیْرُ﴾
‘আর তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হলে তুমি কাফিরদের মুখমণ্ডলে অসন্তোষের লক্ষণ দেখবে; যারা তাদের নিকট আমার আয়াত আবৃত্তি করে তাদেরকে তারা আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। তুমি বলোঃ তাহলে কি আমি তোমাদেরকে এটি অপেক্ষা অন্য কিছুর সংবাদ দিবো? এটা আগুন; এ বিষয়ে মহান আল্লাহ্ প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন কাফিরদেরকে এবং এটা কতো নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল।’ (২২নং সূরাহ্ হাজ্জ, আয়াত নং ৭২)
এ জন্যই মহান আল্লাহ্ অত্র আয়াতেও বলেছেন যেঃ فَحَسْبُه جَهَنَّمُ وَلَبِئْسَ الْمِهَادُ ‘মুনাফিকদের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট এবং নিশ্চয়ই এটা নিকৃষ্ট আশ্রয় স্থল।’
মু’মিনরা মহান আল্লাহ্কে খুশি করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿وَ مِنَ النَّاسِ مَنْ یَّشْرِیْ نَفْسَهُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللّٰهِ﴾
‘মানুষের মধ্যে এমনো কতেক মানুষ আছে, যে মহান আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনে নিজের প্রাণ দিয়ে থাকে।’ মুনাফিকদের জঘন্য চরিত্রের বর্ণনা দেয়ার পর এখন মু’মিনদের প্রশংসা করা হচ্ছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) , আনাস (রাঃ) , সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়িব (রহঃ) , আবূ ‘উসমান আন নাহদী (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) এবং অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন যে, এ আয়াতটি সুহাইব ইবনু সিনান আর-রুমীর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি মাক্কায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি মাদীনায় হিজরত করতে চাইলে মাক্কার কাফিররা তাঁকে বলে, ‘আমরা তোমাকে ধন-সম্পদ নিয়ে মাদীনায় যেতে দিবো না। তুমি ধন-সম্পদ ছেড়ে গেলে যেতে পারো। তিনি সমস্ত সম্পদ পৃথক করেন এবং কাফিররা তাঁর ঐ সম্পদ অধিকার করে নেয়। সুতরাং তিনি ঐ সব সম্পদ ছেড়ে দিয়েই মাদীনায় হিজরত করেন। ‘উমার (রাঃ) ও সাহাবীগণের একটি বিরাট দল তাঁর অভ্যর্থনার জন্য ‘হুররা’ নামক স্থান পর্যন্ত এগিয়ে আসেন এবং তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেনঃ আপনি বড়ই উত্তম ও লাভজনক ব্যবসা করেছেন।’ এ কথা শুনে তিনি বলেনঃ ‘আপনাদের ব্যবসায়েও যেন মহান আল্লাহ্ আপনাদের ক্ষতিগ্রস্ত না করেন। আচ্ছা বলুন তো, এই অভিনন্দনের কারণ কি? ঐ মহান ব্যক্তিগণ বলেনঃ ‘আপনার সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ওপর এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে।’ তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট পৌঁছলে তিনিও তাঁকে সুসংবাদ প্রদান করে বলেনঃ তোমার ব্যবসা সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে হে সুহাইব! (হাদীসটি সহীহ। তাফসীর তাবারী ৪/২৪৮, মুসতাদরাক হাকিম-৩/৩৯৮, হিলইয়া-১/১৫১, ১৫৩, ত্বাবাকাতু ইবনু সা‘দ-৩/২২৭, সীরাতে ইবনু হিশাম-২/৮৪, ৮৫)
অধিকাংশ মুফাসসিরের এটাও উক্তি রয়েছে যে, এই আয়াতটি সাধারণ প্রত্যেক মুজাহিদের ব্যাপারেই প্রযোজ্য। যেমন অন্য স্থানে মহান আল্লাহ্ বলেছেনঃ
﴿اِنَّ اللّٰهَ اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اَنْفُسَهُمْ وَ اَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ١ؕ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ فَیَقْتُلُوْنَ وَ یُقْتَلُوْنَ١۫ وَعْدًا عَلَیْهِ حَقًّا فِی التَّوْرٰىةِ وَ الْاِنْجِیْلِ وَ الْقُرْاٰنِ١ؕ وَ مَنْ اَوْفٰى بِعَهْدِهٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَیْعِكُمُ الَّذِیْ بَایَعْتُمْ بِهٖ١ؕ وَ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ﴾
‘নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ্ মু’মিনদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন সম্পদসমূহকে এ বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন যে, তাদের জন্য জান্নাত রয়েছে, তারা মহান আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা কখনো হত্যা না করে কখনো নিহত হয়, এর কারণে জান্নাত প্রদানের সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইনজীলে এবং কুর’আনে। নিজের অঙ্গীকার পালনকারী মহান আল্লাহ্ অপেক্ষা অধিক আর কে আছে? অতএব তোমরা আনন্দ করতে থাকো তোমাদের এই ক্রয়-বিক্রয়ের, যা তোমরা সম্পাদন করেছো, আর এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা।’ (৯নং সূরাহ্ তাওবাহ, আয়াত নং ১১১)
হিশাম ইবনু ‘আমর (রাঃ) যখন কাফিরদের বুহ্য ভেদ করে তাদের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং একাকীই তাদের ওপর আক্রমণ চালান তখন কতোগুলো মুসলিম তাঁর এই আক্রমণকে শারী‘আত বিরোধী মনে করেন। কিন্তু ‘উমার (রাঃ) এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণ এর প্রতিবাদ করেন এবং وَ مِنَ النَّاسِ مَنْ یَّشْرِیْ نَفْسَهُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللّٰهِ وَاللّٰهُ رَءُوْفٌۢ بِالْعِبَادِ এই আয়াতটি পাঠ করে শোনান।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings