Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 20
Saheeh International
The lightning almost snatches away their sight. Every time it lights [the way] for them, they walk therein; but when darkness comes over them, they stand [still]. And if Allah had willed, He could have taken away their hearing and their sight. Indeed, Allah is over all things competent.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
মুনাফিকদের আরেক পরিচয়
এটা দ্বিতীয় উদাহরণ যা দ্বিতীয় প্রকারের মুনাফিকদের জন্য বর্ণনা করা হয়েছে। এরা সেই সম্প্রদায় যাদের নিকট কখনো সত্য প্রকাশ পেয়ে থাকে এবং কখনো সন্দেহে পতিত হয়। সন্দেহের সময় তাদের দৃষ্টান্ত বৃষ্টির মতো। صَيِّبٌ-এর অর্থ হচ্ছে বৃষ্টিপাত। (তাফসীর তাবারী ১/৩৩৪) ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ), ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও অন্যান্যরা ‘কাসাইব’ এর অর্থ করেছেন বৃষ্টি। (তাফসীর তাবারী) এ ছাড়া আবুল ‘আলিয়া (রহঃ), মুজাহিদ (রহঃ), সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ), ‘আতা (রহঃ), হাসান বাসরী (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ), ‘আতিয়া আল আউফী (রহঃ), খুরাসানী (রহঃ), সুদ্দী (রহঃ) এবং রাবী‘ ইবনু আনাসও (রহঃ) অনুরূপ মতামত প্রকাশ করেছেন।(তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৬৬) যাহ্হাক (রহঃ) বলেন, এটা হলো মেঘ। (ইবনু আবী হাহিম ১/৬৭) যা হোক, অধিকাংশের মতের এটা হলো বৃষ্টি যা ওপর হতে নেমে আসে। কিন্তু খুব প্রসিদ্ধ অর্থ হচ্ছে বৃষ্টি। ظُلُمَاتٌ -এর ভাবার্থ হচ্ছে সন্দেহ, কুফর ও নিফাক। رَعْدٌ-এর অর্থ হচ্ছে বজ্র, যা ভয়ংকর শব্দের দ্বারা অন্তর কাঁপিয়ে তোলে। মুনাফিকদের অবস্থাও ঠিক এরূপ। সব সময় তার মনে ভয়, ত্রাস ও উদ্বেগ থাকে। যেমন কুর’আন মাজীদে আছেঃ
﴿یَحْسَبُوْنَ كُلَّ صَیْحَةٍ عَلَیْهِمْ ﴾
তারা যে কোন শোরগোলকে মনে করে তাদেরই বিরুদ্ধে। (৬৩ নং সূরাহ্ মুনাফিকূন, আয়াত নং ৪)
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿وَ یَحْلِفُوْنَ بِاللّٰهِ اِنَّهُمْ لَمِنْكُمْ وَ مَا هُمْ مِّنْكُمْ وَ لٰكِنَّهُمْ قَوْمٌ یَّفْرَقُوْنَ. لَوْ یَجِدُوْنَ مَلْجَاً اَوْ مَغٰرٰتٍ اَوْ مُدَّخَلًا لَّوَلَّوْا اِلَیْهِ وَ هُمْ یَجْمَحُوْنَ﴾
আর মুনাফিকরা মহান আল্লাহর শপথ করে বলে যে, তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত; অথচ তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং তারা হচ্ছে কাপুরুষের দল। যদি তারা কোন আশ্রয়স্থল পেতো, অথবা গুহা কিংবা লুকিয়ে থাকার একটু স্থান পেতো তাহলে তারা অবশ্যই ক্ষিপ্র গতিতে সেদিকে ধাবিত হতো। (৯ নং সূরাহ্ তাওবাহ, আয়াত নং ৫৬-৫৭)
বিজলীর সাথে সেই ঈমানের আলোর তুলনা করা হয়েছে যা কখনো কখনো তাদের অন্তরে উজ্জ্বল হয়ে উঠে, সে সময়ে তারা মরণের ভয়ে তাদের আঙ্গুলগুলো কানের মধ্যে ভরে দেয়, কিন্তু এটা মুনাফিকদের কোন উপকারে আসেনা। এরা মহান আল্লাহর ক্ষমতা ও ইচ্ছার অধীন রয়েছে। সুতরাং এরা বাঁচতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা এক জায়গায় বলেনঃ ‘তোমাদের নিকট ঐ সেনাবাহিনীর কাহিনী পৌঁছেছে, অর্থাৎ ফির‘আউন ও সামূদের? বরং কাফিররা অবিশ্বাস করার মধ্যে রয়েছে। আর মহান আল্লাহ তাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে রয়েছেন।
﴿هَلْ اَتٰىكَ حَدِیْثُ الْجُنُوْدِۙ۱۷ فِرْعَوْنَ وَ ثَمُوْدَؕ۱۸ بَلِ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا فِیْ تَكْذِیْبٍۙ۱۹ وَّ اللّٰهُ مِنْ وَّرَآىِٕهِمْ مُّحِیْطٌ﴾
তোমার নিকট কি পৌঁছেছে সৈন্য বাহিনীর বৃত্তান্ত ফির‘আউন ও সামূদের? তবুও কাফিররা মিথ্যা আরোপ করায় রত এবং মহান আল্লাহ তাদের পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। (৮৫ নং সূরাহ্ বুরূজ, আয়াত নং ১৭-২০)
বিদ্যুত চক্ষুকে কেড়ে নেয়ার অর্থ হচ্ছে তার শক্তি ও কাঠিন্য এবং ঐ মুনাফিকদের দৃষ্টিশক্তিকে দুর্বলতার অর্থ হচ্ছে তাদের ঈমানের দুর্বলতা।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ ‘এর ভাবার্থ এই যে, যখন ইসলামের বিজয় সাধিত হয়, তখন তাদের মনে কিছুটা স্থিরতা আসে, কিন্তু যখনই এর বিপরীত পরিলক্ষিত হয় তখনই তারা কুফরীর দিকে ফিরে যায়। (তাফসীর তাবারী ১/৩৪৯) যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
﴿وَ مِنَ النَّاسِ مَنْ یَّعْبُدُ اللّٰهَ عَلٰى حَرْفٍ١ۚ فَاِنْ اَصَابَهٗ خَیْرُ اِ۟طْمَاَنَّ بِهٖ﴾
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ মহান আল্লাহর ‘ইবাদত করে দ্বিধার সাথে; তার মঙ্গল হলে তাতে তার চিত্ত প্রশস্ত হয় এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। (২২ নং সূরাহ্ হাজ্জ, আয়াত নং ১১)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তাদের আলোতে চলার অর্থ হচ্ছে সত্যকে জেনে ইসলামের কালিমা পাঠ করা এবং অন্ধকারে থেমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া। (তাফসীর তাবারী ১/৩৪৬) আরো বহু মুফাস্সিরের এটাই অভিমত, আর সবচেয়ে বেশি সঠিক ও স্পষ্টও হচ্ছে এটাই। আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৭৫)
কিয়ামত দিবসেও তাদের এই অবস্থা হবে যে, যখন লোকদেরকে তাদের ঈমানের পরিমাপ অনুযায়ী আলো দেয়া হবে, কেউ পাবে বহু মাইল পর্যন্ত, কেউ কেউ তার বেশি, কেউ তার চেয়ে কম, এমনকি শেষ পর্যন্ত কেউ এতোটুকু আলো পাবে যে, কখনো আলোকিত হবে এবং কখনো অন্ধকার। কিছু লোক এমনও হবে যে, তারা একটু দূরে গিয়েই থেমে যাবে, আবার কিছু দূর পর্যন্ত আলো পাবে, আবার নিভে যাবে। আবার কতকগুলো লোক এমন দুর্ভাগাও হবে যে, তাদের আলো সম্পূর্ণ রূপে নিভে যাবে। এরাই হবে পূর্ণ মুনাফিক, যাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ
﴿یَوْمَ یَقُوْلُ الْمُنٰفِقُوْنَ وَالْمُنٰفِقٰتُ لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوا انْظُرُوْنَا نَقْتَبِسْ مِنْ نُّوْرِكُمْ١ۚ قِیْلَ ارْجِعُوْا وَرَآءَكُمْ فَالْتَمِسُوْا نُوْرًا﴾
সেদিন মুনাফিক নর-নারী মু’মিনদের বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্য একটু থামো, যাতে আমরা তোমাদের জ্যোতির কিছু গ্রহণ করতে পারি। বলা হবেঃ তোমরা তোমাদের পিছনে ফিরে যাও এবং আলোর সন্ধান করো। (৫৭ নং সূরাহ্ হাদীদ, আয়াত নং ১৩)
মু’মিন নারী ও পুরুষের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿یَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ یَسْعٰى نُوْرُهُمْ بَیْنَ اَیْدِیْهِمْ وَ بِاَیْمَانِهِمْ بُشْرٰىكُمُ الْیَوْمَ جَنّٰتٌ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ﴾
সেদিন তুমি দেখবে মু’মিন নর-নারীদেরকে তাদের সম্মুখ ভাগে ও দক্ষিণ পার্শ্বে তাদের জ্যোতি প্রবাহিত হবে। বলা হবেঃ আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ জান্নাতের,যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত।(৫৭ নং সূরাহ্ হাদীদ, আয়াত নং ১২) মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
﴿یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا تُوْبُوْۤا اِلَى اللّٰهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًا١ؕ عَسٰى رَبُّكُمْ اَنْ یُّكَفِّرَ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَیُدْخِلَكُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ١ۙ یَوْمَ لَا یُخْزِی اللّٰهُ النَّبِیَّ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ١ۚ نُوْرُهُمْ یَسْعٰى بَیْنَ اَیْدِیْهِمْ وَ بِاَیْمَانِهِمْ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا وَ اغْفِرْ لَنَا١ۚ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ﴾
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ্র কাছে তাওবাহ করো- আন্তরিক তাওবাহ। সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলোকে তোমাদের থেকে মুছে দিবেন। আর তোমাদের দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে ঝর্ণাধারা। সে দিন মহান আল্লাহ নবীকে আর তার সাথে যারা ঈমান এনেছিলো তাদের লজ্জিত করবেন না। সেদিনের ভয়াবহ অন্ধকার থেকে মু’মিনদের রক্ষার ব্যবস্থা হিসেবে তাদের নূর দৌড়াতে থাকবে তাদের সামনে আর তাদের ডান পাশে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের নূরকে আমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দাও। আর আমাদের ক্ষমা করো; তুমি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ (৬৬ নং সূরাহ্ তাহরীম, আয়াত নং ৮)
এ আয়াতসমূহের পর নিম্নের এ বিষয়ের হাদীসগুলোও উল্লেখযোগ্যঃ
মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মু’মিনদের কেউ কেউ মাদীনা হতে ‘আদন পর্যন্ত আলো পাবে। অথবা কেউ কেউ মাদীনা হতে সান‘আ বা তার চেয়ে কম দুরত্ব পথের আলো পাবে। এমনকি কোন কোন মু’মিন শুধুমাত্র তার দু’ পা রাখার জায়গা পরিমাণ আলো পাবে। (হাদীসটি য‘ঈফ। তাফসীরে ত্বাবারী)
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন যে, ‘আমল অনুযায়ী তারা আলো পাবে, সেই আলোতে তারা পুলসিরাত অতিক্রম করবে। কোন কোন লোকের নূর পাহাড়ের সমান হবে, কারো হবে খেজুর গাছের সমান, আর সবচেয়ে ছোট নূর ঐ লোকের হবে, যার শুধু বৃদ্ধাঙ্গুলির ওপর নূর থাকবে। এটা কখনো জ্বলে উঠবে এবং কখনো নিভে যাবে। (তাফসীর তাবারী ২৩/৩১৭৯)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কিয়ামতের দিন সমস্ত একাত্মবাদীকে নূর দেয়া হবে। যখন মুনাফিকদের নূর নিভে যাবে তখন একাত্মবাদীরা ভয় পেয়ে বলবেঃ ﴿رَبَّنَاۤ اَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا﴾
‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের নূরকে আমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দাও। (হাদীসটি য‘ঈফ। মুসতাদরাক হাকিম ২/৪৯৫)
যাহ্হাক ইবনু মাজাহিম (রহঃ) বলেনঃ কিয়ামত দিবসে প্রতিটি ঈমানদার ব্যক্তিকে একটি করে নূর বা আলো দেয়া হবে। যখন তারা পুলসিরাতের কাছে পৌঁছবে তখন মুনাফিকের আলো নিভে যাবে। ঈমানদার ব্যক্তিরা তা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়বে এবং মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেঃ
﴿رَبَّنَاۤ اَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا﴾
‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের নূরকে আমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দাও। (৬৬ নং সূরাহ আত তাহরীম, আয়াত নং ৮)
ঈমানদার ও কাফিরের শ্রেণীবিন্যাস
কিয়ামতের দিন কয়েক প্রকারের লোক হবেঃ (১) খাঁটি মু’মিন যাদের বর্ণনা পূর্বের চারটি আয়াতে হয়েছে। (২) খাঁটি কাফির, যার বর্ণনা তার পরবর্তী দু’টি আয়াতে হয়েছে। (৩) মুনাফিক, এদের আবার দু’টি ভাগ আছে। প্রথম হচ্ছে সেই মুনাফিক যারা সন্দেহের মধ্যে আছে। কখনো ঈমানের আলো জ্বলে, কখনো নিভে যায়। তাদের উপমা বৃষ্টির সাথে দেয়া হয়েছে। এরা প্রথম প্রকারের মুনাফিক হতে কিছু কম দোষী।
ঠিক এভাবেই সূরাহ্ নূরেও আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনের ও তার অন্তরের আলোর উপমা সেই উজ্জ্বল প্রদীপের সাথে দিয়েছেন যা উজ্জ্বল চিমনীর মধ্যে থাকে এবং স্বয়ং চিমনিও উজ্জ্বল তারকার মতো হয়। যেহেতু প্রথমতো স্বয়ং ঈমানদারের অন্তর উজ্জ্বল, দ্বিতীয়ত খাঁটি শারী‘আত দিয়ে তাকে সাহায্য করা হয়েছে। সুতরাং এ হচ্ছে নূরের উপমা নূর। এভাবেই অন্য স্থানে কাফিরদের উপমাও তিনি বর্ণনা করেছেন যারা মূর্খতাবশত নিজেদেরকে অন্য কিছু মনে করে, অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা কিছুই নয়। তিনি বলেনঃ
﴿وَالَّذِیْنَ كَفَرُوْۤا اَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍۭ بِقِیْعَةٍ یَّحْسَبُهُ الظَّمْاٰنُ مَآءً حَتّٰۤى اِذَا جَآءَه لَمْ یَجِدْهُ شَیْـًٔا﴾
‘আর যারা কুফরী করে তাদের কাজকর্ম হলো বালুকাময় মরুভূমির মরীচিকার মতো। পিপাসার্ত ব্যক্তি সেটাকে পানি মনে করে অবশেষে সে যখন তার নিকটে আসে, সে দেখে ওটা কিছুই না।’ (২৪ নং সূরাহ্ নূর. আয়াত নং ৩৯)
অতঃপর মহান আল্লাহ খাঁটি মূর্খতায় জড়িত কাফিরদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে বলেনঃ
﴿اَوْ كَظُلُمٰتٍ فِیْ بَحْرٍ لُّجِّیٍّ یَّغْشٰىهُ مَوْجٌ مِّنْ فَوْقِه مَوْجٌ مِّنْ فَوْقِه سَحَابٌ ظُلُمٰتٌۢ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ اِذَاۤ اَخْرَجَ یَدَه لَمْ یَكَدْ یَرٰىهَا وَ مَنْ لَّمْ یَجْعَلِ اللّٰهُ لَه نُوْرًا فَمَا لَه مِنْ نُّوْرٍ﴾
অথবা কাফিরদের অবস্থা বিশাল সমুদ্রে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে ঢেউয়ের ওপরে ঢেউ। তার ওপরে মেঘ, একের পর এক অন্ধকারের স্তর, কেউ হাত বের করলে সে তা একেবারেই দেখতে পায় না। মহান আল্লাহ যাকে আলো দান করেন না। তার জন্য কোন আলো নেই। (২৪ নং সূরাহ্ নূর, আয়াত নং ৪০) সুতরাং কাফিরদেরও দু’টি ভাগ হলো। প্রথম হলো তারা, যারা অন্যদেরকে কুফরীর দিকে আহ্বান করে এবং দ্বিতীয় হচ্ছে তারা, যারা উক্ত আহ্বানকারীদের অনুকরণ করে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿وَ مِنَ النَّاسِ مَنْ یُّجَادِلُ فِی اللّٰهِ بِغَیْرِ عِلْمٍ وَّ یَتَّبِعُ كُلَّ شَیْطٰنٍ مَّرِیْدٍ﴾
মানুষের মধ্যে কতক অজ্ঞতাবশতঃ মহান আল্লাহ সম্বন্ধে বাক-বিতণ্ডা করে এবং অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শায়তানের। (২২ নং সূরাহ্ হাজ্জ, আয়াত নং ৩)
অন্যত্র মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ یُّجَادِلُ فِی اللّٰهِ بِغَیْرِ عِلْمٍ وَّلَا هُدًى وَّلَا كِتٰبٍ مُّنِیْرٍ﴾
‘তবুও মানুষের মধ্যে এমন আছে যারা জ্ঞান, পথের দিশা ও কোন আলোক প্রদানকারী কিতাব ছাড়াই মহান আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে।’ (২২ নং সূরাহ্ হাজ্জ, আয়াত নং ৮) এ ছাড়া সূরাহ্ ওয়াকি‘আর প্রথমে ও শেষে এবং সূরাহ্ নিসায় মু’মিনদেরও দুই প্রকার বর্ণনা করা হয়েছে। তারা হচ্ছে সাবিকীন ও আসহাব-ই ইয়ামীন অর্থাৎ মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী এবং পরহেযগার ও সৎ ব্যক্তিগণ। সুতরাং এ আয়াতসমূহ দ্বারা জানা গেলো যে, মু’মিনদের দু’টি দল, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী ও সৎ। কাফিরদেরও দু’টি দল, কুফরের দিকে আহ্বানকারী ও তাদের অনুসরণকারী। মুনাফিকদেরও দু’টি ভাগ, খাঁটি ও পাক্কা মুনাফিক এবং সেই মুনাফিক যাদের মধ্যে নিফাকের এক আধটি শাখা আছে।
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيْهِ وَاحِدَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتىَّ يَدَعَهَا: مَنْ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ.
‘যার মধ্যে তিনটি অভ্যাস আছে সে নিশ্চিত মুনাফিক। আর যার মধ্যে এর একটি আছে তার মধ্যে নিফাকের একটি অভ্যাস আছে যে পর্যন্ত না সে তা পরিত্যাগ করে অর্থাৎ তিনটি অভ্যাস হচ্ছে কথা বলার সময় মিথ্যা বলা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা এবং গচ্ছিত দ্রব্য আত্মসাৎ করা। (ফাতহুল বারী ১/১১১ সহীহ মুসলিম ১/১০৬/৭৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর < থেকে উভয় কিতাবে ৩ এর স্থলে ৪ এর কথা রয়েছে। আর আবূ হুরায়রাহ্ < থেকে উভয় কিতাবে ৩ এর কথা রয়েছে)
এর দ্বারা সাব্যস্ত হলো যে, কখনো কখনো মানুষের মধ্যে নিফাকের কিছু অংশ থাকে তা কার্য সম্বন্ধীয়ই হোক অথবা বিশ্বাস সম্বন্ধীয়ই হোক। যেমন আয়াত ও হাদীস দ্বারা জানা গেলো।
হৃদয়ের প্রকারভেদ
মুসনাদ আহমাদে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘অন্তর চার প্রকারঃ (১) সেই পরিষ্কার অন্তর যা উজ্জ্বল প্রদীপের মতো ঝলমল করে। (২) ঐ অন্তর পর্দায় ঢাকা থাকে। (৩) উল্টো অন্তর এবং (৪) মিশ্রিত অন্তর। প্রথমটি মু’মিনের অন্তর যা পূর্ণভাবে উজ্জ্বল। দ্বিতীয়টি কাফিরের অন্তর যার ওপর পর্দা পড়ে রয়েছে। তৃতীয়টি খাঁটি মুনাফিকের অন্তর যা জেনে শুনে অস্বীকার করে এবং চতুর্থটা হচ্ছে মুনাফিকের অন্তর যার মধ্যে ঈমান ও নিফাক ও দু’টোর সংমিশ্রণ রয়েছে। ঈমানের দৃষ্টান্তে সেই সবুজ উদ্ভিদের মতো যা নির্মল পানি দ্বারা বেড়ে ওঠে। নিফাকের উপমা ঐ ফোঁড়ার ন্যায় যার মধ্যে রক্ত ও পুঁজ বাড়তে থাকে। এখন যে জিনিসের মূল বেড়ে যায়, তার প্রভাব অন্যের ওপর পড়ে থাকে। এই হাদীসটি সনদ হিসেবে খুবই মযবূত।(হাদীসটি য‘ঈফ। মুসনাদ আহমাদ ৩/১৭, তাবারানী সাগীর ২/১১০, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়িদ ১/৬৩,) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কান ও চক্ষু ধ্বংস করে দিবেন’ এর ভাবার্থ এই যে, তারা যখন সত্যকে জেনে ছেড়ে দিয়েছে তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত যে, মহান আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের ওপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। অর্থাৎ তিনি ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন অথবা ক্ষমা করবেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আরো বলেনঃ কাউকে শাস্তি দেয়া কিংবা ক্ষমা করা সম্পূণই মহান আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৭৬) ইবনু জারীর (রহঃ) বলেনঃ মহান আল্লাহ মুনাফিকদের সাবধান করার জন্য এখানে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, মুনাফিকসহ সবকিছুই তাঁর করায়ত্বে রয়েছে। যার কাছ থেকে খুশি তার শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি তিনি ছিনিয়ে নিতে পারেন, এতে বাধা দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। (তাফসীর তাবারী ১/৩৬১) যেমন মহান আল্লাহর বাণীঃ
﴿وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْۤا اَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍۭ بِقِیْعَةٍ﴾
যারা কুফরী করে, তাদের ‘আমলসমূহ মরুভূমির মরীচিকা সাদৃশ্য। (২৪ নং সূরাহ্ নূর, আয়াত নং ৩৯)
﴿ اَوْ كَظُلُمٰتٍ فِیْ بَحْرٍ لُّجِّیٍّ﴾
অথবা কাফিরদের কাজ প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়। (২৪ নং সূরাহ্ নূর, আয়াত নং ৪০)
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings