Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 191
Saheeh International
And kill them wherever you overtake them and expel them from wherever they have expelled you, and fitnah is worse than killing. And do not fight them at al-Masjid al- Haram until they fight you there. But if they fight you, then kill them. Such is the recompense of the disbelievers.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
যারা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে এবং যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই তাদেরকে হত্যা করতে আদেশ করা হয়েছে
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿وَ قَاتِلُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ الَّذِیْنَ یُقَاتِلُوْنَكُمْ ﴾
‘আর যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তোমরাও তাদের সাথে মহান আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করো।’ আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) বলেন যে, এটাই প্রথম অবতীর্ণ আয়াত যাতে জিহাদের নির্দেশ দিয়ে মাদীনায় নাযিল করা হয়। এই আয়াতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুধুমাত্র ঐ লোকদের সাথে যুদ্ধ করতেন যারা তাঁর সাথে যুদ্ধ করতো। যারা তাঁর সাথে যুদ্ধ করতো না তিনিও তাদের সাথে যুদ্ধ করতেন না। অবশেষে সূরাহ্ বারা’আত অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর তাবারী ৩/৫৬১) ‘আবদুর রহমান ইবনু যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) এ কথা পর্যন্ত বলেন যে, এই আয়াতটি রহিত হয়েছে। এটিকে রহিত করার আয়াত হচ্ছে নিম্নের আয়াতটিঃ
﴿فَاقْتُلُواالْمُشْرِكِیْنَحَیْثُوَجَدْتُّمُوْهُمْ﴾
‘অতঃপর মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা করো। (৯ নং সূরাহ্ তাওবাহ, আয়াত নং ৫) কিন্তু এটি বিবেচ্য বিষয়। কেননা এটিতো শুধু মুসলিমদেরকে উৎসাহিত করা এবং তাদেরকে উত্তেজিত করা যে, তারা তাদের শত্রুদের সাথে জিহাদ করছে না কেন যারা তাদের ও তাদের ধর্মের প্রকাশ্য শত্রু? ঐ মুশরিকরা যেমন মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করছে তেমনি মুসলিমদেরও উচিত তাদের সাথে যুদ্ধ করা। যেমন অন্য স্থানে মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿وَ قَاتِلُوا الْمُشْرِكِیْنَ كَآفَّةً كَمَا یُقَاتِلُوْنَكُمْ كَآفَّةً﴾
‘আর মুশরিকদের বিরুদ্ধে সকলে একযোগে যুদ্ধ করো, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সকলে একযোগে যুদ্ধ করে।’ (৯ নং সূরাহ্ তাওবাহ, আয়াত নং ৩৬) এ জন্যেই এখানে বলা হয়েছেঃ ‘তাদেরকে যেখানেই পাবে সেখানেই হত্যা করো এবং তাদেরকে সেখান হতে বের করে দাও যেখান হতে তারা তোমাদেরকে বের করে দিয়েছে।’ ভাবার্থ এই যে, হে মুসলিমগণ! তাদের উদ্দেশ্য যেমন তোমাদেরকে হত্যা করা ও নির্বাসন দেয়া তেমনি এর প্রতিশোধ হিসাবে তোমাদেরও এরূপ উদ্দেশ্য থাকা উচিত।
যুদ্ধে নিহতদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ না কাটা এবং যুদ্ধলব্ধমালামাল থেকে চুরি না করার নির্দেশ
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿وَلَاتَعْتَدُوْااِنَّاللّٰهَلَایُحِبُّالْمُعْتَدِیْنَ﴾‘কিন্তু সীমা অতিক্রম করো না। সীমা অতিক্রমকারীদেরকে মহান আল্লাহ্ ভালোবাসেন না।’ অর্থাৎ হে মু’মিনগণ! তোমরা মহান আল্লাহ্র বিরুদ্ধাচরণ করো না। নাক, কান ইত্যাদি কেটোনা, বিশ্বাসঘাতকতা ও চুরি করো না এবং শিশুদেরকে হত্যা করো না। ঐ বয়ঃবৃদ্ধদেরকেও হত্যা করো না যাদের যুদ্ধ করার যোগ্যতা নেই এবং যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না। সংসার ত্যাগীদেরকেও হত্যা করো না। বিনা কারণে তাদের বৃক্ষাদি কেটে ফেলো না এবং তাদের জীব-জন্তুগুলো ধ্বংস করো না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) , ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) , মুকাতিল ইবনু হিব্বান (রহঃ) প্রমুখ মনীষীগণ এই আয়াতের তাফসীরে এই কথা বলেছেন। সহীহ হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলিম সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেনঃ
اغْزُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ، قَاتِلُوا مَنْ كَفَرَ بِالْلَّهِ، اغْزُوا وَلَا تَغُلّوا، وَلَا تَغْدروا، وَلَا تُمَثِّلُوا، وَلَا تَقْتُلُوا وَلِيدًا، وَلَا أَصْحَابَ الصَّوَامِعِ
‘মহান আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করবে, বিশ্বাস ঘাতকতা করবে না, চুক্তি ভঙ্গ হতে বিরত থাকবে, নাক-কান ইত্যাদি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে নিবেনা, শিশুকে ও সংসার বিরাগীদেরকে হত্যা করবে না, আর যারা উপাসনা গৃহে পরে থাকে।’ (সহীহ মুসলিম ৩/৩/১৩৫৭, মুসনাদ আহমাদ -৫/৩৫৮, সুনান আবূ দাউদ-৩/৩৭/২৬১৩, জামি‘ তিরমিযী-৪/১৩৮,১৩৯/১৬১৭) সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে, একবার এক যুদ্ধে এক মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা অত্যন্ত খারাপ মনে করেন এবং মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করেন। (সহীহুল বুখারী-৬/১৭২/৩০১৫,ফাতহুল বারী ৬/১৭২, সহীহ মুসলিম ৩/১৩৬৪)
ফিতনা হত্যা অপেক্ষাও জঘন্য
মহান আল্লাহ্ অত্যাচার ও সীমা অতিক্রমকে ভালোবাসেন না এবং এই প্রকার লোকের প্রতি তিনি অসন্তুষ্ট হোন। যেহেতু জিহাদের নিদের্শাবলীর মধ্যে বাহ্যত হত্যা ও রক্তা-রক্তি রয়েছে, এ জন্যই তিনি বলেন যে, এদিকে যদি খুনাখুনি ও কাটাকাটি হতে থাকে তাহলে ঐ দিকে রয়েছে শিরক ও কুফর এবং সেই মালিকের পথ থেকে তাঁর সৃষ্টজীবকে বিরত রাখা এবং এটা হচ্ছে সরাসরি অশান্তি সৃষ্টি করা।
﴿وَالْفِتْنَةُاَشَدُّمِنَالْقَتْلِ﴾ হত্যা অপেক্ষা অশান্তি বা ফিতনা সৃষ্টি করা আরো গুরুতর। এর অর্থ হলো সাধারণ অবস্থায় যে সমস্ত পাপ কাজ করে কিংবা বাড়াবাড়ি করে তা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর খারাপ কাজ। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৪১২) আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , যাহহাক (রহঃ) এবং রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) বলেন যে, আলোচিত আয়াতে ফিতনা বলতে শিরককে বুঝানো হয়েছে যা হত্যা অপেক্ষা আরো গুরুতর অপরাধ।
আত্মরক্ষার উদ্দেশ্য ছাড়া ‘হারাম এলাকায়’ যুদ্ধ করা নিষেধ
অতঃপর বলা হচ্ছেঃ ‘মহান আল্লাহ্র ঘরের মধ্যে তাদের সাথে যুদ্ধ করো না।’ যেমন সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
إِنَّ هَذَا الْبَلَدَ حَرَّمَهُ اللَّهُ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ، فَهُوَ حَرَامٌ بِحُرْمَةِ اللَّهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَلَمْ يَحِلَّ لِي إِلَّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ، وَإِنَّهَا سَاعَتِي هَذِهِ، حَرَام بِحُرْمَةِ اللَّهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، لَا يُعْضَد شَجَرُهُ، وَلَا يُخْتَلى خَلاه. فَإِنْ أَحَدٌ تَرَخَّصَ بِقِتَالِ رَسُولِ اللَّهِ (রাঃ) فَقُولُوا: إِنَّ اللَّهَ أَذِنَ لِرَسُولِهِ وَلَمْ يَأْذَنْ لَكُمْ
‘এটা মর্যাদাসম্পন্ন শহর। আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে কিয়ামত পর্যন্ত এটি সম্মানিত শহর হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকবে। শুধু সামান্য সময়ের জন্য এটাকে মহান আল্লাহ্ আমার জন্য হালাল করেছিলেন। কিন্তু এটা আজ এ সময়েও মহা সম্মানিতই রয়েছে। আর কিয়ামত পর্যন্ত এই সম্মান অবশিষ্ট থাকবে। এর বৃক্ষরাজি কাটা হবে না, এর কাঁটাসমূহ উপড়িয়ে ফেলা হবে না। যদি কোন ব্যক্তি এর মধ্যে যুদ্ধকে বৈধ বলে এবং আমার যুদ্ধকে প্রমাণরূপে গ্রহণ করে তাহলে তাকে বলে দিবে যে, মহান আল্লাহ্ শুধুমাত্র তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন,কিন্তু তোমাদের জন্য কোন অনুমতি নেই।’ (সহীহুল বুখারী-১/২৪৮/১১২, ৩/২৫৩/১৩৪৯, সহীহ মুসলিম-২/৯৮৬/৪৪৫, ফাতহুল বারী ৬/৩২৭) তাঁর এই নির্দেশটি ছিলো মাক্কা বিজয়ের দিন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিস্কারভাবে ঘোষণা করেছিলেনঃ
مَنْ أَغْلَقَ بَابَهُ فَهُوَ آمِنٌ، وَمَنْ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَهُوَ آمِنٌ، وَمَنْ دَخَلَ دَارَ أَبِي سُفْيَانَ فَهُوَ آمِنٌ
‘যে ব্যক্তি তার দরজা বন্ধ করে দিবে সে নিরাপদ, যে মাসজিদে চলে যাবে সেও নিরাপদ, যে আবূ সুফিয়ানের গৃহে চলে যাবে সেও নিরাপদ।’ (সহীহ মুসলিম-৩/১৪০৭/৮৬, সুনান আবূ দাউদ-৩/১৬৩/৩০২৪, মুসনাদ আহমাদ -২/২৯২/৭৯০৯)
তবে ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন যে, মাসজিদে হারামে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষেধাজ্ঞাটি রহিত হয়েছে। কাতাদাহ (রহঃ) ও মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) বলেনঃ রহিতকারী আয়াতটি হলোঃ
﴿فَاِذَا انْسَلَخَ الْاَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِیْنَ حَیْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ وَخُذُوْهُمْ﴾
‘তারপর এই নিষিদ্ধ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা করো, তাদের পাকড়াও করো।’ (৯নং সূরাহ আত তাওবাহ, আয়াত-৫)
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿حَتّٰى یُقٰتِلُوْكُمْ فِیْهِ فَاِنْ قٰتَلُوْكُمْ فَاقْتُلُوْهُمْ كَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكٰفِرِیْنَ﴾
‘যে পর্যন্ত তারা তোমাদের সাথে সেখানে যুদ্ধ না করে। কিন্তু যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তবে তোমরাও তাদের হত্যা করো, এটাই কাফিরদের প্রতিদান।’ অর্থাৎ তারা যদি বায়তুল্লাহতে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তাহলে তোমাদেরকেও অনুমতি দেয়া হচ্ছে যে, তোমরাও তাদের সাথে যুদ্ধ করো, যাতে এ অত্যাচার দূর হয়। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়ায় স্বীয় সাহাবীগণের নিকট যুদ্ধের বায়’আত গ্রহণ করেন, যখন কুরাইশরা এবং তাদের সাথীরা সম্মিলিতভাবে মুসলিমদের ওপর আক্রমণের ষড়যন্ত্র করেছিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বৃক্ষের নীচে সাহাবীগণের নিকট বায়’আত নিয়েছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ্ এই যুদ্ধ প্রতিহত করেন। (সহীহ মুসলিম-৩/৬৮/১৪৮৩, জামি‘ তিরমিযী-৪/১৫৯৪, সুনান নাসাঈ -৭/৪১৬৯, মুসনাদ আহমাদ -৩/২৯২,৩৫৫, সীরাতে ইবনু হিশাম-৩/২৮৯) এই নি‘য়ামতের বর্ণনা মহান আল্লাহ্ নিম্নের এই আয়াতে দিয়েছেনঃ
﴿وَ هُوَ الَّذِیْ كَفَّ اَیْدِیَهُمْ عَنْكُمْ وَ اَیْدِیَكُمْ عَنْهُمْ بِبَطْنِ مَكَّةَ مِنْۢ بَعْدِ اَنْ اَظْفَرَكُمْ عَلَیْهِمْ﴾
‘মাক্কাহ উপত্যকায় তিনিই তাদের হাত তোমাদের থেকে আর তোমাদের হাত তাদের থেকে বিরত রেখেছিলেন তোমাদেরকে তাদের ওপর বিজয়ী করার পর।’ (৪৮ নং সূরাহ্ ফাতাহ, আয়াত নং ২৪) আরো বলা হয়েছেঃ
﴿وَ لَوْ لَا رِجَالٌ مُّؤْمِنُوْنَ وَ نِسَآءٌ مُّؤْمِنٰتٌ لَّمْ تَعْلَمُوْهُمْ اَنْ تَطَـُٔوْهُمْ فَتُصِیْبَكُمْ مِّنْهُمْ مَّعَرَّةٌۢ بِغَیْرِ عِلْمٍ١ۚ لِیُدْخِلَ اللّٰهُ فِیْ رَحْمَتِهٖ مَنْ یَّشَآءُ١ۚ لَوْ تَزَیَّلُوْا لَعَذَّبْنَا الَّذِیْنَ كَفَرُوْا مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِیْمًا﴾
‘তোমাদের যুদ্ধের আদেশ দেয়া হতো, যদি না থাকতো এমন কতকগুলো মু’মিন নর-নারী যাদেরকে তোমরা জানো না, তাদেরকে তোমরা পদদলিত করতে অজ্ঞাতসারে। ফলে তাদের কারণে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে। যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়নি এজন্য যে, তিনি যাকে ইচ্ছা নিজ অনুগ্রহ দান করবেন, যদি তারা পৃথক হতো, আমি তাদের মধ্যেস্থিত কাফিরদেরকে মর্মদন্ত শাস্তি দিতাম।’ (৪৮নং সূরাহ্ ফাতাহ, আয়াত নং ২৫)
অতঃপর বলা হচ্ছেঃ ﴿فَاِنِانْتَهَوْافَاِنَّاللّٰهَغَفُوْرٌرَّحِیْمٌ﴾ যদি এই কাফিররা বায়তুল্লাহতে যুদ্ধ করা হতে বিরত থাকে এবং ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাহলে মহান আল্লাহ্ তাদের পাপ ক্ষমা করে দিবেন। যদিও তারা মুসলিমদেরকে ‘হারাম’ এলাকায় হত্যা করেছে তবুও মহান আল্লাহ্ এতো বড় পাপকেও ক্ষমা করে দিবেন, যেহেতু তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
ফিতনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে
এরপর মহান আল্লাহ্ কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার সময়-সীমা বেধে দিয়ে নির্দেশ দিচ্ছেন যেঃ وَ قٰتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّیَكُوْنَ الدِّیْنُ لِلّٰه ‘ফিত্না দূরীভূত না হওয়া পর্যন্ত এবং দ্বীন মহান আল্লাহ্র জন্য নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।’ অর্থাৎ ঐ মুশরিকদের সাথে জিহাদ চালু রাখো যাতে শিরকের অশান্তি দূর হয় এবং মহান আল্লাহ্র দ্বীন জয়যুক্ত হয়ে উচ্চমর্যাদায় সমাসীন হয় এবং সমস্ত ধর্মের ওপর কর্তৃত্ব লাভ করে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) , আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) , মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) , সুদ্দী (রহঃ) এবং যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) এই মত পোষণ করতেন যে, ‘ফিতনা দূর না হওয়া পর্যন্ত তোমরা যুদ্ধ করো’ আয়াতাংশে ‘ফিতনা’ এর অর্থ হলো শিরক। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৪১৫-৪১৬)
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ
سُئِلَ النَّبِيُّ عَنِ الرَّجُلِ يُقَاتِلُ شُجَاعَةً وَيُقَاتِلُ حَمِيَّةً وَيُقَاتِلُ رِيَاءً، أَيُّ ذَلِكَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ فَقَالَ: «مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ
‘এক ব্যক্তি বীরত্ব দেখানোর জন্য যুদ্ধ করে, এক ব্যক্তি গোত্রীয় মর্যাদা রক্ষার জন্য ও জিহাদের বশবর্তী হয়ে যুদ্ধ করে এবং এক ব্যক্তি শুধু মানুষকে দেখানোর জন্য জিহাদ করে, এদের মধ্যে মহান আল্লাহ্র পথে জিহাদকারী কে? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘মহান আল্লাহ্র পথে জিহাদকারী শুধু ঐ ব্যক্তি যে, এজন্যই যুদ্ধ করে যেন মহান আল্লাহ্র কথা সুউচ্চ হয়।’ (সহীহুল বুখারী-১/২৬৮/১২৩, ৬/৩৩/২৮১০, ফাতহুল বারী ১৩/৪৫০, সহীহ মুসলিম-৩/১৫১৩/১৫০, ১৫১, সুনান ইবনু মাজাহ-২/৯৩১/২৭৮৩ মুসনাদ আহমাদ -৪/৩৯২, ৩৯৭, ৪০২, ৪১৭) অন্য একটি হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَإِذَا قَالُوهَا عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلَّا بِحَقِّهَا، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللَّهِ
‘আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, আমি যেন মানুষের সাথে যুদ্ধ করতে থাকি যে পর্যন্ত না তারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে। যখনই তারা তা বলবে তখন তারা আমার নিকট হতে নিজেকে বাঁচিয়ে নিবে এবং তাদের ভিতরের হিসাব মহান আল্লাহ্র দায়িত্বে থাকবে।’ (সহীহুল বুখারী-১/৯৩/৯৫/২৫, ফাতহুল বারী ১/৫৯২, সহীহ মুসলিম-১/৫৩/৩৬, ১/৫১-৫৩)
এরপরে মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ‘যদি এই কাফিররা শিরক ও কুফর হতে এবং তোমাদেরকে হত্যা করা হতে বিরত থাকে তাহলে তোমরা তাদের থেকে বিরত থাকো।’ এরূপ যে যুদ্ধ করবে সে অত্যাচারী হবে এবং অত্যাচারীদেরকে অত্যাচারের প্রতিদান দেয়া অবশ্য কর্তব্য। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, ‘যে যুদ্ধ করে শুধু তার সাথেই যুদ্ধ করতে হবে’ এই উক্তির ভাবার্থ এটাই। কিংবা ভাবার্থ এটাও হতে পারে যে, যদি তারা এসব কাজ হতে বিরত থাকে তাহলে তো তারা যুলম ও শিরক থেকে বিরত থাকলো। সুতরাং তাদের সাথে যুদ্ধ করার আর কোন প্রয়োজন নেই। এখানে عُدُْوَانَ শব্দটি শক্তি প্রয়োগের অর্থে এসেছে। তবে এটা শক্তি প্রয়োগের প্রতিদ্বন্দ্বীতায় শক্তি প্রয়োগ। প্রকৃতপক্ষে এটা শক্তি প্রয়োগ নয়। যেমন মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿فَمَنِ اعْتَدٰى عَلَیْكُمْ فَاعْتَدُوْا عَلَیْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدٰى عَلَیْكُمْ﴾
‘অতঃপর যে কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করে, তাহলে সে তোমাদের প্রতি যেরূপ অত্যাচার করবে তোমরাও তার প্রতি সেরূপ অত্যাচার করো।’ (২নং সূরাহ্ বাকারাহ, আয়াত নং ১৯৪)
অন্য জায়গায় আছেঃ ﴿وَ جَزٰٓؤُا سَیِّئَةٍ سَیِّئَةٌ مِّثْلُهَا﴾
‘মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ দ্বারা।’ (৪২নং সূলা শুরা, আয়াত নং ৪০)
অন্য স্থানে মহান আল্লাহ্ আরো বলেনঃ ﴿وَ اِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوْا بِمِثْلِ مَا عُوْقِبْتُمْ بِهٖ﴾
‘যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ করো তাহলে ঠিক ততোখানি করবে যতোখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে।’ (১৬নং সূরাহ্ নাহল, আয়াত নং ১২৬)
সুতরাং এই তিন জায়গায় বাড়াবাড়ি, অন্যায় এবং শাস্তির কথা বিনিময় হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে এটা বাড়াবাড়ি, অন্যায় এবং শাস্তি নয়। ইকরামাহ (রহঃ) এবং কাতাদাহর (রহঃ) উক্তি এই যে, প্রকৃত অত্যাচারী ঐ ব্যক্তি যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালিমাকে অস্বীকার করে। (তাফসীর তাবারী ৩/৫৭৩) যখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) -এর ওপর জনগণ আক্রমণ চালিয়েছিলো সে সময় দুই ব্যক্তি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর নিকট আগমন করে বলেনঃ
ِنَّ النَّاسَ صَنَعُوا وَأَنْتَ ابْنُ عُمَرَ وَصَاحِبُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَخْرُجَ؟ قَالَ: يَمْنَعُنِي أَنَّ اللَّهَ حَرَّمَ دَمَ أَخِي. قَالَا أَلَمْ يَقُلِ اللَّهُ: {وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ} ؟ قَالَ: قَاتَلْنَا حَتَّى لَمْ تَكُنْ فِتْنَةٌ وَكَانَ الدِّينُ لِلَّهِ، وَأَنْتُمْ تُرِيدُونَ أَنْ تُقَاتِلُوا حَتَّى تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لغير الله.
‘মানুষতো কাটাকাটি মারামারি করতে রয়েছে। আপনি ‘উমার (রাঃ) -এর পুত্র এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবী। আপনি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছেনা না কেন?’ তিনি বলেনঃ ‘জেনে রেখো যে, মহান আল্লাহ্ মুসলিম ভাইয়ের রক্ত হারাম করে দিয়েছেন।’ তারা বলেনঃ ‘এই নির্দেশ কি মহান আল্লাহ্র নয় যে, তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকো যে পর্যন্ত অশান্তি অবশিষ্ট থাকে?’ তিনি উত্তরে বলেনঃ ‘আমরা তো যুদ্ধ করতে থেকেছি, শেষ পর্যন্ত অশান্তি দূর হয়ে গেছে এবং মহান আল্লাহ্র পছন্দনীয় ধর্ম জয়যুক্ত হয়েছে। এখন তোমরা চাচ্ছো যে, তোমরা যুদ্ধ করতে থাকবে যেন আবার অশান্তি সৃষ্টি হয় এবং অন্যান্য ধর্মগুলো প্রকাশিত হয়ে পড়ে।’ (সহীহুল বুখারী- ৮/৩২/৪৫১৩)
অন্য একটি বর্ণনায় ‘উসমান ইবনু সালিহ (রহঃ) আরো অতিরিক্ত যোগ করে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করেনঃ হে আবূ ‘আবদুর রহমান! কি কারণে আপনি এক বছর হাজ্জ করেছেন এবং অন্য বছর ‘উমরাহ্ করেছেন এবং কোন কারণে আপনি মহান আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকছেন, অথচ এসব বিষয় পালন করার জন্য মহান আল্লাহ্ যে তাঁর বান্দাদেরকে উৎসাহিত করেছেন সেই বিষয়ে নিশ্চয়ই আপনি জ্ঞাত আছেন? উত্তরে তিনি বলেনঃ হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত (১) মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনা (২) প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা (৩) যাকাত প্রদান করা (৪) রামাযানে সিয়াম পালন করা এবং (৫) মহান আল্লাহ্র ঘরে গিয়ে হাজ্জ পালন করা। তখন লোকটি বললোঃ আপনি কি মহান আল্লাহ্র এ আদেশ শুনেননিঃ
﴿وَ اِنْ طَآىِٕفَتٰنِ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اقْتَتَلُوْا فَاَصْلِحُوْا بَیْنَهُمَا١ۚ فَاِنْۢ بَغَتْ اِحْدٰىهُمَا عَلَى الْاُخْرٰى فَقَاتِلُوا الَّتِیْ تَبْغِیْ حَتّٰى تَفِیْٓءَ اِلٰۤى اَمْرِ اللّٰهِ﴾
‘মু’মিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে; অতঃপর তাদের একদল অপর দলকে আক্রমণ করলে আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যতোক্ষণ না তারা মহান আল্লাহ্র নির্দেশের দিকে ফিরে আসে।’ (৪৯নং সূরাহ্ হুজুরাত, আয়াত নং ৯) এবং ﴿وَ قٰتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ﴾ ‘অশান্তি দূর হয়ে মহান আল্লাহ্র দীন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো।’ (২নং সূরাহ্ বাকারাহ, আয়াত নং ১৯৩) উত্তরে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেনঃ ‘ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে আমরা এর ওপর ‘আমল করেছি। তখন ইসলাম দুর্বল ছিলো এবং মুসলিমদের সংখ্যা অল্প ছিলো। যে ইসলাম গ্রহণ করতো তার ওপর অশান্তি এস পড়তো। তাকে হয় হত্যা করা হতো, না হয় কঠিন শাস্তি দেয়া হতো। অবশেষে এই পবিত্র ধর্ম বিস্তার লাভ করেছে এবং অনুসারীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে ও অশান্তি সম্পূর্ণরূপে দূর হয়েছে।’ লোকটি তখন বলেন, ‘আচ্ছা তাহলে বলুন যে, ‘আলী (রাঃ) ও ‘উসমান (রাঃ) সম্বন্ধে আপনার ধারণা কি?’ তিনি বলেনঃ ‘উসমান (রাঃ) -কে তো মহান আল্লাহ্ ক্ষমা করেছেন যদিও তোমরা এটা পছন্দ করো না। আর ‘আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আপন চাচাতো ভাই ও জামাতা ছিলেন। অতঃপর আঙ্গুলের ইশারায় বলেন, এই হচ্ছে তাঁর বাড়ী যা তোমাদের সামনে রয়েছে।’ (সহীহুল বুখারী-৮/৩২/৪৫১৪, ফাতহুল বারী ৮/৩২)
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings