2:184

أَيَّامًا مَّعۡدُودَٰتٍ‌ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَ‌ۚ وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٌ طَعَامُ مِسۡكِينٍ‌ۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرًا فَهُوَ خَيۡرٌ لَّهُۥ‌ۚ وَأَن تَصُومُواۡ خَيۡرٌ لَّكُمۡ‌ۖ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ١٨٤

Saheeh International

[Fasting for] a limited number of days. So whoever among you is ill or on a journey [during them] - then an equal number of days [are to be made up]. And upon those who are able [to fast, but with hardship] - a ransom [as substitute] of feeding a poor person [each day]. And whoever volunteers excess - it is better for him. But to fast is best for you, if you only knew.

Tafsir "Ibn Kathir Partial" (Bengali)

সিয়াম পালন করার আদেশ মহান আল্লাহ এই উম্মাতের ঈমানদারগণকে সম্বোধন করে বলেন যে, তারা যেন সিয়াম পালন করে। সিয়ামের অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে খাঁটি নিয়াতে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস হতে বিরত থাকা। এর উপকারিতা এই যে, এর ফলে মানবাত্মা পাপ ও কালিমা থেকে সম্পূর্ণ রূপে পরিস্কার ও পবিত্র হয়ে যায়। এর সাথে সাথেই মহান আল্লাহ বলেন যে, এই সিয়ামের হুকুম শুধুমাত্র তাদের ওপরেই হচ্ছে না, বরং তাদের পূর্ববর্তী উম্মাতের প্রতিও সিয়ামের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। এই বর্ণনার উদ্দেশ্য এটাও যে, উম্মাতে মুহাম্মাদী যেন এই কর্তব্য পালনে পূর্বের উম্মাতদের পিছে না পড়ে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ﴿لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَّ مِنْهَاجًا١ؕ وَ لَوْ شَآءَ اللّٰهُ لَجَعَلَكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّ لٰكِنْ لِّیَبْلُوَكُمْ فِیْ مَاۤ اٰتٰىكُمْ فَاسْتَبِقُوا الْخَیْرٰتِ﴾‘তোমাদের প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আমি নির্দিষ্ট শারী‘আত এবং নির্দিষ্ট পন্থা নির্ধারণ করেছিলাম; আর যদি মহান আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে তোমাদের সকলকে একই উম্মাত করে দিতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি এ কারণে যে, যে ধর্ম তিনি তোমাদেরকে প্রদান করেছেন তাতে তোমাদের সকলকে পরীক্ষা করবেন, সুতরাং তোমরা কল্যাণকর বিষয়সমূহের দিকে ধাবিত হও।’ (৫ নং সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং ৪৮)এই বর্ণনাই এখানেও করা হচ্ছে যে, ‘এই সিয়াম তোমাদের ওপর ঐ রকমই ফরয, যেমন ফরয ছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। সিয়াম পালনের দ্বারা শরীরের পবিত্রতা লাভ হয় এবং শায়তানের পথে বাধার সৃষ্টি হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃيَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ.‘হে যুবকবৃন্দ! তোমাদের মধ্যে যার বিয়ে করার সামর্থ্য রয়েছে সে বিয়ে করবে, আর যার সামর্থ্য নেই সে সিয়াম পালন করবে। এটা তার জন্য রক্ষা কবয হবে।’ (সহীহুল বুখারী ৪/১৪২/১৯০৫, ফাতহুল বারী ৯/৮, সহীহ মুসলিম ২/১-৩/১০১৮, ১০১৯)অতঃপর সিয়ামের জন্য দিনের সংখ্যা বর্ণনা করা হচ্ছে যে ‘এটি কয়েকটি দিন মাত্র’ যাতে কারো ওপর বোঝা স্বরূপ না হয় এবং কেউ আদায়ে অসমর্থ হয়ে না পড়ে; বরং আগ্রহের সাথে তা পালন করে। বিভিন্ন প্রকার সিয়ামের বর্ণনা প্রথমে প্রতি মাসে তিনটি সাওম রাখার নির্দেশ ছিলো। অতঃপর রামাযানের সাওমের নির্দেশ হয় এবং পূর্বের নির্দেশ উঠে যায়। এর বিস্তারিত বিবরণ ইনশা’আল্লাহ সামনে আসছে। মু‘আয (রাঃ), ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ), ‘আতা (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ) এবং যাহহাক (রহঃ)-এর অভিমত এই যে নূহ (আঃ) এর যুগে প্রতি মাসে তিনটি সাওমের নির্দেশ ছিলো, যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উম্মাতের জন্য পরিবর্তিত হয় এবং তাদের ওপর এই বরকতময় মাসে সাওম ফরয করা হয়। হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন যে, পূর্ববর্তী উম্মাতদের ওপরও পূর্ণ একমাস সাওম ফরয ছিলো। একটি মারফূ‘ হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃصِيَامُ رَمَضَانَ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَى الْأُمَمِ قَبْلَكُمْ রামাযানের সাওম তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতদের ওপর ফরয ছিলো।’ (ইবনে হাজার ফাতহুল বারী-৮/২৭ উল্লেখ করে বলেছেন অত্র হাদীসের সনদটি অপরিচিত। অতএব হাদীস য‘ঈফ) সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, পূর্বে ‘আশুরার সিয়াম পালন করা হতো। যখন রামাযানের সিয়াম ফরয করা হয় তখন আর ‘আশুরার সিয়াম বাধ্যতামূলক থাকে না; বরং যিনি ইচ্ছা করতেন পালন করতেন এবং যিনি চাইতেন না, পালন করতেন না। (সহীহুল বুখারী ৪/২৮৭/২০০২, ৮/২৬/৪৫০১, ৪৫০৩, ফাতহুল বারী ৮/২৬, সহীহ মুসলিম ২/১১৩/৭৯২) পূর্ববর্তী উম্মাতের সাওম পালনের পদ্ধতি ইবনে ‘উমার (রাঃ) বলেনঃ পূর্ববর্তী উম্মাতের প্রতি এই নির্দেশ ছিলো যে, ‘ঈশার সালাত আদায় করার পর যখন তারা শুয়ে যেতো তখনই তাদের ওপর পানাহার ও স্ত্রী সহবাস হারাম হয়ে যেতো। ‘পূর্ববর্তী’ হতে ভাবার্থ হচ্ছে আহলে কিতাব। এরপর বলা হচ্ছে রমযান মাসে যে ব্যক্তি রুগ্ন হয়ে পড়ে ঐ অবস্থায় তাকে কষ্ট করে সাওম পালন করতে হবে না। পরে যখন সে সুস্থ হবে তখন তা আদায় করে নিবে। তবে ইসলামের প্রাথমিক যুগে যে ব্যক্তি সুস্থ থাকতো এবং মুসাফিরও হতো না তার জন্যও এই অনুমতি ছিলো যে, হয় সে সাওম রাখবে বা সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে ভোজ্য দান করবে এবং একজনের বেশি মিসকীনকে খাওয়ানো উত্তম ছিলো। কিন্তু মিসকীনকে ভোজ্য দান অপেক্ষা সাওম রাখাই বেশি মঙ্গলজনক কাজ ছিলো। ইবনে মাস‘উদ (রাঃ), ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রহঃ) ত্বা‘উস (রহঃ), মুকাতিল (রহঃ) প্রমুখ মনীষীগণ এটাই বলে থাকেন। সালাত ও সাওম তিনটি অবস্থায় পরিবর্তিত হয় মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেনঃ সালাত ও সাওম পর্যায়ক্রমে তিনটি অবস্থায় পরিবর্তিত হয়। সালাতের তিনটি অবস্থা হচ্ছেঃ (১) মদীনায় এসে ষোল সতেরো মাস ধরে বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা, অতঃপর মহান আল্লাহ্‌র নির্দেশক্রমে মাক্কার দিকে মুখ করা হয়। (২) পূর্বে সালাতের জন্য একে অপর কে ডাকতেন এবং একত্রিত হতেন, অবশেষে এতে তাঁরা অসমর্থ হয়ে পড়েন। অতঃপর ‘আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ ইবনে ‘আবদি রব্বিহী (রাঃ) নামক একজন আনসারী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করেনঃ হে মহান আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিদ্রিত ব্যক্তির স্বপ্ন দেখার মতোই আমি স্বপ্ন দেখছি, কিন্তু যদি বলি যে, আমি নিদ্রিত ছিলাম না তবে আমার সত্য কথাই বলা হবে। স্বপ্নটি এই যে, সবুজ রঙের হিল্লা বা লুঙ্গি ও চাদর পরিহিত এক ব্যক্তি কিবলার দিকে মুখ করে বলছেনঃالا الله الله اكبر الله اكبر-- اشهد ان لا اله দু’বার। এভাবে তিনি আযান শেষ করেন। কিছুক্ষণের বিরতির পর তিনি পূর্বের কথাগুলো আবার উচ্চারণ করেন। কিন্তু এবারেقد قامت الصلوة কথাটি দু’বার অতিরিক্ত বলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন বিলাল (রাঃ) কে এটা শিখিয়ে দাও। সে আযান দিবে। সুতরাং সর্বপ্রথম বিলাল (রাঃ) আযান দেন। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, ‘উমার (রাঃ) ও এসে এই স্বপ্ন বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর পূর্বেই যায়দ (রাঃ) এসে গিয়েছিলেন। (৩) পূর্বে প্রচলন ছিলো এই যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত পড়াচ্ছেন, তাঁর কয়েক রাক‘আত পড়া হয়ে গেছে এমন সময় কেউ আসছেন। কয় রাক‘আত পড়া হয়েছে এটা তিনি ইঙ্গিতে কাউকে জিজ্ঞেস করছেন। তিনি বলেছেন, এক রাক‘আত বা দু’ রাক‘আত। তিনি তখন ঐ রাক‘আত গুলো পড়ে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মিলিত হচ্ছেন। একবার মু‘আয (রাঃ) আসছেন এবং বলছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে যে অবস্থাতেই পাবো সেই অবস্থাতেই তাঁর সাথে মিলিত হয়ে যাবো। আর যে সালাত ছুটে গেছে তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাম ফিরাবার পর পড়ে নিবো। সুতরাং তিনি তাই করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরানোর পর তাঁর ছুটে যাওয়া রাক‘আত গুলো আদায় করার জন্য দাঁড়িয়ে যান। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ إِنَّهُ قَد سَنَّ لَكُمْ مُعَاذ، فَهَكَذَا فَاصْنَعُواমু‘আয (রাঃ) তোমাদের জন্য উত্তম পন্থা বের করেছেন। তোমরাও এখন হতে এরূপই করবে। এই তো হলো সালাতের তিনটি পরিবর্তন। সাওম এর পর্যায়ক্রমে তিনটি পরিবর্তন (১) যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আগমন করেন তখন তিনি প্রতি মাসে তিনটি সাওম রাখতেন এবং ‘আশূরার সাওম রাখতেন। অতঃপর মহান আল্লাহ كُتِبَ عَلَیْكُمُ الصِّیَامُ অবতীর্ণ করে রামাযানের সাওম ফরয করেন। (২) প্রথমতঃ এই নিদেশ ছিলো যে চাইবে সাওম রাখবে এবং যে চাইবে সাওমর পরিবর্তে মিসকীনকে ভোজ্য দান করবো। অতঃপর ﴿فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْیَصُمْهُ﴾ এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ তোমাদের মধ্যকার যে ব্যক্তি ঐ মাসে নিজ আবাসে উপস্থিত থাকে সে যেন তাতে সাওম পালন করে। সুতরাং যে ব্যক্তি বাড়িতে অবস্থানকারী হয় এবং মুসাফির না হয়, সুস্থ হয় রুগ্ন না হয়,তার ওপর সাওম বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। তবে রুগ্ন ও মুসাফিরের জন্য অবকাশ থাকে। আর এমন বৃদ্ধের জন্যও অবকাশ থাকে যে সাওম রাখার ক্ষমতাই রাখে না সে ফিদইয়াহ দেয়ার অনুমতি লাভ করে।(৩) পূর্বে রাতে নিদ্রা যাওয়ার আগে আগে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস বৈধ ছিলো বটে, কিন্তু ঘুমিয়ে যাবার পর রাত্রির মধ্যেই জেগে উঠলেও পানাহার ও সহবাস তাঁর জন্য নিষিদ্ধ ছিলো। অতঃপর একবার সুরমাহ নামক একজন আনসারী (রাঃ) সারাদিন কাজ কর্ম করে ক্লান্ত অবস্থায় রাতে বাড়ি ফিরে আসেন এবং ‘ঈশার সালাত আদায় করেই তাঁর ঘুম চলে আসে ফলে তিনি ঘুমিয়ে যান। পরদিন কিছু পানাহার ছাড়াই তিনি সাওম রাখেন। কিন্তু তাঁর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন হয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ ব্যাপার কি? তখন তিনি সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেন। এদিকে তাঁর ব্যাপারে তো এই ঘটনা ঘটে আর ওদিকে ‘উমার (রাঃ) ঘুমিয়ে যাওয়ার পর জেগে উঠে স্ত্রী সহবাস করে বসেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করে অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের সাথে এই দোষ স্বীকার করেন। ফলেঃأُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ ... ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ আয়াতাংশ বিশেষ অবতীর্ণ হয় এবং মাগরিব থেকে নিয়ে সুবহে সাদিক পর্যন্ত রামাযানের রাতে পানাহার ও স্ত্রী সহবাসের অনুমতি দেয়া হয়। (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদে আহমাদ ৫/২৪৬, ২৪৭, সুনান আবূ দাউদ ১/১৩৮/৫০৬, ৫০৭, সহীহ ইবনে খুযায়মাহ্ ১/১৯৮-২০০/৩৮২-৩৮৪) অসুস্থ ও অক্ষম ব্যক্তির সিয়ামের পরিবর্তে ফিদইয়া প্রদান ﴿وَعَلَى الَّذِیْنَ یُطِیْقُوْنَهٗ﴾ এর ভাবার্থে মু‘আয (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইচ্ছা করলে কেউ সিয়াম পালন করতেন আবার কেউ করতেননা। বরং মিসকীনকে খাদ্য দান করতেন। সালামাহ ইবনে আকওয়া (রাঃ) থেকে সহীহুল বুখারীতে একটি বর্ণনা এসেছে যে, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার সময় যে ব্যক্তি ইচ্ছা করতো সিয়াম ছেড়ে দিয়ে ‘ফিদইয়া’ দিয়ে দিতো। অতঃপর এর পরবর্তী আয়াত ﴿وَ عَلَى الَّذِیْنَ یُطِیْقُوْنَه فِدْیَةٌ طَعَامُ مِسْكِیْنٍ﴾ অবতীর্ণ হয় এবং এটি ‘মানসূখ’ বা রহিত হয়ে যায়। (হাদীস সহীহ। সহীহুল বুখারী ৮/২৯/৪৫০৬, সহীহ মুসলিম ২/১৪৯/৮০২, সুনান আবূ দাউদ ২/২৯২/২৩১৫, জামি‘ তিরমিযী ৩/১৬২/৭৯৮, সুনান নাসাঈ ৪/৫০৩/২৩১৫, সুনান দারিমী- ২/২৭/৬৭২৪, ফাতহুল বারী ৮/২৯) ‘উমার (রাঃ) ও এটিকে মানসূখ বলেছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এটা মানসূখ নয়, বরং এর ভাবার্থ হচ্ছে বৃদ্ধ পুরুষ বা মহিলা, যারা সিয়াম পালন করার ক্ষমতা রাখে না। (সহীহুল বুখারী ৮/২৮/৪৫০৫, ফাতহুল বারী ৮/২৮)ইবনে আবি লাইলা (রহঃ) বলেনঃ ‘আমি ‘আতা (রহঃ) এর নিকট রামাযান মাসে আগমন করি। আমি দেখতে পাই যে, তিনি খানা খাচ্ছেন। আমাকে দেখে তিনি বলেনঃ ‘ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) এর উক্তি আছে যে, এই আয়াতটি পূর্বের আয়াতটিকে মানসূখ করেনি, বরং এই হুকুম শুধুমাত্র শক্তিহীন, অচল বৃদ্ধদের জন্য রয়েছে।’ (ফাতহুল বারী ৮/২৮) মোট কথা এই যে, যে ব্যক্তি নিজ আবাসে আছে এবং সুস্থ ও সবল অবস্থায় রয়েছে তার জন্য এই নির্দেশ নয়। বরং তাকে সিয়ামই পালন করতে হবে। তবে হ্যাঁ, খুবই বয়স্ক, বৃদ্ধ এবং দুর্বল লোক যাদের সিয়াম পালন করার ক্ষমতা নেই, তারা সিয়াম পালন করবে না এবং তাদের ওপর সিয়াম কাযাও যরুরী নয়। কারণ তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই, ফলে ভবিষ্যতেও তারা সিয়াম পালন করতে সক্ষম হবে না। এমতাবস্থায় তাদেরকে প্রতিটি ছুটে যাওয়া সিয়ামের জন্য ফিদইয়া বা কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। কিন্তু যদি সে ধনী হয় তবে তাকে কাফ্ফারাও আদায় করতে হবে কি হবে না, এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) এর একটি উক্তি তো এই যে, যেহেতু তাঁর সাওম রাখার শক্তি নেই সুতরাং সে নাবালক ছেলের মতোই। তার ওপর যেমন কাফ্ফারা নেই তেমনই এর ওপরও নেই। কেননা মহান আল্লাহ কাউকেও ক্ষমতার অতিরিক্ত কষ্ট দেন না। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) এর দ্বিতীয় উক্তি এই যে তাঁর দায়িত্বে কাফ্ফারা রয়েছে। এটাই ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এবং বিভিন্ন ‘আলিমের অভিমত, যাদের মধ্যে সালাফি সালিহীনগণও রয়েছেন। (তাফসীর তাবারী ৩/৪৩১) ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এটাই পছন্দনীয় অভিমত। তিনি বলেন যে, খুব বেশি বয়স্ক যারা সিয়াম পালন করার শক্তি নেই সেই ‘ফিদইয়াই’ দিয়ে দিবে। যেমন আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) শেষ বয়সে অত্যন্ত বার্ধক্য অবস্থায় দু’বছর ধরে সিয়াম পালন করেন নি এবং তিনি প্রতিটি সিয়ামের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে গোশত-রুটি আহার করাতেন। (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী- ৮/২৮,ফাতহুল বারী ৮/১৭৯, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ৩/১৬৪)‘মুসনাদ আবূ ই‘য়ালা’ গ্রন্থে রয়েছে যে, যখন আনাস (রাঃ) সিয়াম পালন করতে অসমর্থ্য হয়ে পড়েন তখন রুটি ও গোশত তৈরী করে ত্রিশ জন মিসকীনকে আহার করান। (মুসনাদ আবূ ইয়ালা ৭/২০৪) অনুরূপভাবে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মহিলারা যখন তাদের নিজেদের ও সন্তানদের জীবনের ভয় করবে এদের ব্যাপারেও বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, তারা সিয়াম পালন করবে না, বরং ‘ফিদইয়া’ দিবে এবং যখন ভয় দূর হয়ে যাবে তখন সিয়াম কাযা করে নিবে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, শুধু ফিদ্ইয়া যথেষ্ট কাযা করার প্রয়োজন নেই। কেউ কেউ আবার বলেন যে, সিয়াম পালন করবে, ‘ফিদইয়া’ বা কাযা নয়। আমি [ইবনে কাসীর (রহঃ)] এ মাস’আলাটি ‘কিতাবুস সিয়াম’ নামক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।

Arabic Font Size

30

Translation Font Size

17

Arabic Font Face

Help spread the knowledge of Islam

Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.

Support Us