Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 181
Saheeh International
Then whoever alters the bequest after he has heard it - the sin is only upon those who have altered it. Indeed, Allah is Hearing and Knowing.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
উত্তরাধিকারীদের জন্য ওয়াসীয়াত বাতিল করা হয়েছে
অত্র আয়াতে মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজনের জন্য ওয়াসীয়াত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উত্তরাধিকার বিধানের পূর্বে এটা ওয়াজিব ছিলো। সঠিক উক্তি এটাই। কিন্তু উত্তরাধিকারের নির্দেশাবলী এই ওয়াসীয়াতের হুকুমকে মানসূখ করে দিয়েছে। প্রত্যেক উত্তরাধিকারী তার জন্য নির্ধারিত অংশ ওয়াসীয়াত ছাড়াই নিয়ে নিবে। ‘সুনান’ ইত্যাদির মধ্যে ‘আমর ইবনে খারিজাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খুতবার মধ্যে এ কথা বলতে শুনেছিঃ إِنِ اللَّهَ قَدْ أَعْطَى كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ، فَلَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ
‘মহান আল্লাহ প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর জন্য তার হক পৌঁছে দিয়েছেন। এখন উত্তরাধিকারীর জন্য কোন ওয়াসীয়াত নেই। (হাদীসটি সহীহ। জামি‘ তিরমিযী-৪/৩৭৭/২১২১, সুনান নাসাঈ- ৬/৫৭৭/৩৬৪৩-৩৬৪৫, সুনান ইবনে মাজাহ- ২/৯০৫/২৭১২, সুনান দারিমী-২/৫১১/৩৬৬০, মুসনাদে আহমাদ-৪/১৮৬,২৩৭) মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন বলেন, ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) সূরা বাকারাহ পাঠ করে ﴿اِنْ تَرَكَ خَیْرَا١ۖۚ اِ۟لْوَصِیَّةُ لِلْوَالِدَیْنِ وَ الْاَقْرَبِیْنَ﴾ এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলে বলেনঃ ‘এই আয়াতটি মানসূখ।’ (হাদীসটি সহীহ। সুনান আবূ দাউদ-৩/১১৪/২৮৬৯) তিনি এটাও বর্ণনা করেছেন যে, পূর্বে মা-বাবার সাথে অন্য কেউ উত্তরাধিকারী ছিলো না, অন্যদের জন্য শুধু ওয়াসীয়াত করা হতো। অতঃপর উত্তরাধিকারের আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয় এবং সম্পদের এক তৃতীয়াংশ ওয়াসীয়াত করার স্বাধীনতা দেয়া হয়। এই আয়াতের নতুন মানসূখকারী হচ্ছে নিম্নের আয়াতটি।
﴿لِلرِّجَالِ نَصِیْبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدٰنِ وَالْاَقْرَبُوْنَ١۪ وَلِلنِّسَآءِ نَصِیْبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدٰنِ وَالْاَقْرَبُوْنَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ اَوْ كَثُرَ١ؕ نَصِیْبًا مَّفْرُوْضًا﴾
‘পুরুষদের জন্য মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত বিষয়ে অংশ রয়েছে- অল্প বা অধিক, তা নির্দিষ্ট পরিমাণ।’ (৪ নং সূরা নিসা, আয়াত নং ৭)
ইবনে ‘উমার (রাঃ), আবূ মূসা (রাঃ), হাসান বাসরী (রহঃ), মুজাহিদ (রহঃ), ‘আতা (রহঃ), সা‘ঈদ ইবনে যুবাইর (রহঃ), মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রহঃ), ইকরামাহ (রহঃ), যায়দ ইবনে আসলাম (রহঃ), বারী ইবনে আনাস (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ), সুদ্দী (রহঃ), মুকাতিল ইবনে হিব্বান (রহঃ), তাউস (রহঃ), ইবরাহীম নাখ‘ঈ (রহঃ), শুরাইহ্ (রহঃ), যাহহাক (রহঃ) এবং যুহরী (রহঃ)এরা সবাই এই আয়াতটিকে মানসূখ বলেছেন। (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/৩০১-৩০৩, তাফসীর তাবারী ৩/৩৮৯, ৩৯১)
কিন্তু এতদসত্ত্বেও বড়ই আশ্চর্যজনক ব্যাপার এই যে, ইমাম রাযী স্বীয় তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে কাবীর এর মধ্যে আবূ মুসলিম ইস্পাহানি হতে এটা কিরূপে নকল করেছেন যে, এই আয়াতটির ভাবার্থ এই যে, তোমাদের ওপর ঐ ওয়াসীয়াত ফরয করা হয়েছে যার বর্ণনা يوصيكم الله فى اولادكم এই আয়াতটির মধ্যে রয়েছে। অধিকাংশ মুফাস্সির এবং বিশ্বস্ত বিদ্বানগণের এটাই উক্তি।
ওয়াসীয়াত তাদের জন্য যারা উত্তরাধিকারী আইনের আওতায় পড়ে না
কেউ কেউ বলেন যে, ওয়াসীয়াতের হুকুম উত্তরাধিকারীদের ব্যাপারে মানসূখ হয়েছে। কিন্তু যাদের ‘মীরাস’ নির্ধারিত নেই তাদের ব্যাপারে সাব্যস্ত রয়েছে। ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ), হাসান বাসরী (রহঃ) মাসরূক (রহঃ), তাঊস (রহঃ), যাহ্হাক (রহঃ), মুসলিম ইবনে ইয়াসার (রহঃ)এবং আ’লা ইবনে যিয়াদ (রহঃ) এরও মাযহাব এটাই। আমি বলি যে, সা‘ঈদ ইবনে যুবাইর (রহঃ), রাবী‘ ইবনে আনাস (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ) এবং মুকাতিল ইবনে হিব্বান (রহঃ)-ও এ কথাই বলেন।
কিন্তু এই মনীষীদের এই কথার ওপর ভিত্তি করে পূর্বের ফকীহগণের পরিভাষায় এই আয়াতটি মানসূখ হওয়া সাব্যস্ত হচ্ছে না। কেননা মীরাসের আয়াত দ্বারা ওরা তো এই হুকুম হতে বিশিষ্ট হয়ে গেছে, যাদের অংশ স্বয়ং শারী‘আত নির্ধারিত করে দিয়েছে এবং তারাও-যারা এর পূর্বে এই আয়াতের নির্দেশ অনুযায়ী ওয়াসীয়াতের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। কেননা আত্মীয় সাধারণ তাদের উক্তরাধিকার নির্ধারিত থাক আর নাই থাক। তাহলে এখন ওয়াসীয়াত তাদের জন্য রইল যারা উক্তরাধিকারী নয়, এবং যারা উক্তরাধিকারী তাদের জন্য রইলো না। এই কথাটি এবং অন্যান্য কয়েকজন মনীষীর এই উক্তি যে ওয়াসীয়াতের নির্দেশ ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিলো এবং এটাও নিষ্প্রয়োজন ছিলো। এই দুটোর ভাবার্থ প্রায় একই হয়ে গেলো। কিন্তু যারা ওয়াসীয়াতের এই হুকুমকে ওয়াজিব বলে থাকেন এবং রচনার বাক রীতি দ্বারাও বাহ্যত এটাই বুঝা যাচ্ছে, তাদের নিকট তো এই আয়াতটি মানসূখ হওয়াই সাব্যস্ত হবে। যেমন অধিকাংশ মুফাসসির এবং বিশ্বস্ত ফকীহগণের উক্তি রয়েছে। অতএব পিতা মাতা ও মীরাস প্রাপক আত্মীয় স্বজনদের জন্য ওয়াসীয়াত করা সবসম্মতিক্রমেই মানসূখ এমনকি নিষিদ্ধ। পূর্বোক্ত হাদীসও এরূপ ইঙ্গিত করে। যাতে বলা হয়েছে ‘মহান আল্লাহ প্রত্যেক হকদারকে হক দিয়ে ফেলেছেন, এখন উক্তরাধিকারীর জন্য কোন ওয়াসীয়াত নেই।’
মীরাসের আয়াতের হুকুমটি পৃথক এবং মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে এটা ফরয। যেসব উত্তরাধিকারীর অংশ নির্ধারিত রয়েছে তাদের ওপর হতে এই আয়াতের নির্দেশ সম্পূর্ণ রূপে উঠে গেছে। এখন বাকি থাকলো ঐ আত্মীয়গণ যাদের জন্য কোন উত্তরাধিকার নির্ধারিত নেই। তাদের জন্য মালের এক তৃতীয়াংশ ওয়াসীয়াত করা মুস্তাহাব। এর আংশিক হুকম তো এই আয়াত দ্বারাও বের হচ্ছে। দ্বিতীয়ত সহীহ হাদীসে পরিস্কারভাবে এর হুকম বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَهُ شَيْءٌ يُوصِي فِيهِ، يَبِيتُ لَيْلَتَيْنِ إِلَّا وَوَصِيَّتُهُ مَكْتُوبَةٌ عِنْدَهُ
‘যে ব্যক্তির নিকট কিছু জিনিস রয়েছে এবং সে ওয়াসীয়াত করতে ইচ্ছা পোষণ করে তার জন্য উচিত নয় যে, সে ওয়াসীয়াত লিখে না দিয়ে দু’টি রাতও অতিবাহিত করা।’ (হাদীস সহীহ। সহীহুল বুখারী ৫/৪১৯/২৭৩৮, সহীহ মুসলিম ৩/১/১২৪৯, সুনান আবূ দাউদ ৩/১১২/২৮৬২, জামি‘ তিরমিযী ৪/৩৭৫/২১১৮, সুনান নাসাঈ ৬/৫৪৮/৩৬১৭, সুনান ইবনে মাজাহ ২/৯০১/২৬৯৯, সুনান দারিমী ২/৪৯৫/৩১৭৫, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক ২/১/৭৬১, মুসনাদ আহমাদ ২/১০/৫৭, ৮০) হাদীসটির বর্ণনাকারী ইবনে ‘উমার (রাঃ) বলেনঃ ‘এই নির্দেশ শোনার পর বিনা ওয়াসীয়াতে আমি একটি রাতও কাটাইনি। (ফাতহুল বারী- ৫/৪১৯, সহীহ মুসলিম-৩/১২৪৯, ১২৫০) আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সৎ ব্যবহার করা এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা সম্বন্ধে বহু আয়াত এবং হাদীস এসেছে।
যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে ওয়াসীয়াত করতে হবে
একটি হাদীসে রয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
يَا ابْنَ آدَمَ، ثِنْتَانِ لَمْ يَكُنْ لَكَ وَاحِدَةٌ مِنْهُمَا: جَعَلْتُ لَكَ نَصِيبًا فِي مَالِكَ حِينَ أَخَذْتُ بِكَظْمِكَ؛ لِأُطَهِّرَكَ بِهِ وَأُزَكِّيَكَ، وَصَلَاةُ عِبَادِي عَلَيْكَ بَعْدَ انْقِضَاءِ أَجَلِكَ.
‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার পথে যে অর্থ ব্যয় করবে আমি তারই কারণে তোমাকে পবিত্র করবো এবং তোমার মৃত্যুর পরেও আমার সৎ বান্দাদের দু‘আর কারণ করে দিবো।’ (হাদীস য‘ঈফ। মুসনাদে আবদ ইবনে হুমাইদ-৭৭১, সুনান ইবনে মাজাহ ২/৯০৪/২৭১০)
خيرا এর ভাবার্থ হচ্ছে এখানে মাল। অধিকাংশ বড় বড় মুফাসসির এই তাফসীরই করেছেন। কোন কোন মুফাসসিরের উক্তি এই যে মাল অল্পই হোক বা অধিকই হোক তার জন্য শারী‘আতে ওয়াসীয়াতের নির্দেশ রয়েছে। যেমন অল্প ও বেশী উভয় মালেই মীরাস রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে ওয়াসীয়াতের হুকুম শুধুমাত্র বেশি মালে রয়েছে। ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন কুরাইশী মারা যায় এবং সে তিন চারশ’ স্বর্ণ মুদ্রা রেখে যায়। সে কোন ওয়াসীয়াত করেনি। ‘আলী (রাঃ) বলেন যে, এই মাল ওয়াসীয়াতের যোগ্যই নয়। মহান আল্লাহ তো ان تر ك خيرا বলেছেন। (সনদ বিচ্ছিন্ন মুনকাতি‘) আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, ‘আলী (রাঃ) তাঁর গোত্রের এক রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে যান। তাকে কেউ ওয়াসীয়াত করতে বললে ‘আলী (রাঃ) তাকে বলেন, ওয়াসীয়াত তো خير অথাৎ অধিক মালে হয়ে থাকে। তুমি তো অল্প মাল ছেড়ে যাচ্ছো। তুমি এ মাল তোমার সন্তানদের জন্য রেখে যাও।
ইবনে ‘আব্বাস (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ষাটটি স্বর্ণমুদ্রা ছেড়ে যায়নি সে خير ছেড়ে যায়নি। অথাৎ ওয়াসীয়াত করা তার দায়িত্বে নেই। ত্বা‘উস (রহঃ) আশিটি স্বর্ণ মুদ্রার কথা বলেছেন। কাতাদাহ (রহঃ) এক হাজারের কথা বলে থাকেন।
ন্যায়ানুগ ওয়াসীয়াত হওয়া উচিত
معروف এর অর্থ হচ্ছে নম্রতা এবং অনুগ্রহ। হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন যে, ওয়াসীয়াত করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। ওয়াসীয়াতের ব্যাপারে উত্তম পন্থা অবলম্বন করা উচিত, অন্যায় পন্থা অবলম্বন করা উচিত নয়। যেন উত্তরাধিকারীদের কোন ক্ষতি না হয়। মাত্রাধিক্য ও বাজে খরচ মোটেই শোভনীয় নয়। সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে, সা‘দ (রাঃ) বলেনঃ
يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ لِي مَالًا وَلَا يَرِثُنِي إِلَّا ابْنَةٌ لِي، أَفَأُوصِي بثُلُثَيْ مَالِي؟ قَالَ: "لَا" قَالَ: فبالشَّطْر؟ قَالَ: "لَا" قَالَ: فَالثُّلُثُ؟ قَالَ: "الثُّلُثُ، وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ؛ إِنَّكَ أن تذر ورثتك أغنياء خير من أن تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ.
‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি একজন ধনী লোক এবং আমার উত্তরাধিকারীণী শুধুমাত্র একটি মেয়ে। সুতরাং আপনি আমাকে দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ ওয়াসীয়াত করার অনুমতি দিন।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘না।’ তিনি বললেনঃ ‘অর্ধেকের অনুমতি দিন।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘না।’ তিনি বলেনঃ ‘এক-তৃতীয়াংশের অনুমতি দিন।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ ওয়াসীয়াত করো, তবে এটাও বেশি। তোমার উত্তরাধিকারীণীকে তুমি যে দরিদ্র ও অস্বচ্ছল অবস্থায় ছেড়ে যাবে এবং তারা অন্যের নিকট হাত পাতবে এর চেয়ে বরং তাদেরকে সম্পদশালী রূপে ছেড়ে যাওয়াই উত্তম।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী ৩/১৯৬/১২৯৫, ৫/৪৩৪/২৭৪৩, ফাতহুল বারী ৫/৭২৪, সহীহ মুসলিম ৩/৫১৩/১২৫০, ৩/১০/১২৫৩, সুনান নাসাঈ ৬/৫৫৪/৩৬৩৬, সুনান ইবনে মাজাহ ২/৯০৫/২৭১১, মুসনাদ আহমাদ ১/২৩০,২৩৩) ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, ‘মানুষ যদি এক তৃতীয়াংশকে ছেড়ে এক চতুর্থাংশের ওপর আসতো। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক তৃতীয়াংশের অনুমতি প্রদান করে এটাও বলেছেন যে, এক-তৃতীয়াংশও বেশি।’ (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদে আহমাদ ৫/৬৭, ৬৮, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ৪/২১০, ২১১, সহীহুল বুখারী ২৭৪৩)
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, হানযালা (রাঃ) এর দাদা হানীফা (রাঃ) তাঁর বাড়িতে প্রতিপালিত একটি পিতৃহীন ছেলের জন্য একশ’টি উট ওয়াসীয়াত করেন। তাঁর সন্তানদের নিকট এটা কঠিন বলে মনে হয়। ব্যাপারটা তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেন। অতঃপর হানীফা (রহঃ) বলেন: আমি আমার একটি ইয়াতীমের জন্য একশ’টি উট ওয়াসীয়াত করছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ না, না, না,। সাদাকায় পাঁচটি দাও, নচেৎ দশটি। তা না হলে পনেরটি, তা না হলে বিশটি, না হলে পঁচিশটি, না হলে ত্রিশটি তা না হলে পঁয়ত্রিশটি। তুমি যদি আরও বেশি কর তবে চল্লিশটি। দীর্ঘতার সাথে হাদীসটি বর্ণনা করেন। অতঃপর বলা হচ্ছেঃ
﴿فَمَنْۢ بَدَّلَهٗ بَعْدَ مَا سَمِعَهٗ فَاِنَّمَاۤ اِثْمُهٗ عَلَى الَّذِیْنَ یُبَدِّلُوْنَهٗ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ﴾ যে ব্যক্তি ওয়াসীয়াতকে পরিবর্তন করবে, তাতে কম-বেশি করবে কিংবা গোপন করবে, এর পাপের বোঝা সেই পরিবর্তনকারীকেই বইতে হবে। ওয়াসীয়াতকারীর প্রতিদান মহান আল্লাহ্র নিকট সাব্যস্ত হয়েই গেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ওয়াসীয়াতকারীর ওয়াসীয়াতের বিশুদ্ধতার কথাও জানেন এবং পরিবর্তকারীর পরিবর্তনও জানেন। কোন কথা ও রহস্য তাঁর নিকট গোপন থাকে না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ), আবুল ‘আলিয়া (রহঃ), মুজাহিদ (রহঃ), যাহ্হাক (রহঃ), রাবী‘ ইবনে আনাস (রহঃ) এবং সুদ্দী (রহঃ) جَنَفٌ শব্দটির অর্থ করেছেন ‘ভুল।’ যেমন কোন উত্তরাধিকারীকে কোনও প্রকারের বেশি দেয়ার ব্যবস্থা করা। যেমন বলা হলো যে, অমুক জিনিস অমুকের হাত এতো এতো দামে বিক্রি করে দেয়া হোক ইত্যাদি। এটা ভুল করে হোক অথবা অত্যধিক ভালোবাসার কারণে অনিচ্ছাকৃতই হোক কিংবা এই অপরাধের কারণে পরবর্তী সময়ে আখিরাতে শাস্তির কথা না জানার কারণেই হোক। এরূপ হলো ওয়াসীয়াতকারী যার নিকট ওয়াসীয়াতের কথা প্রকাশ করে গেলো, সে যদি ওয়াসীয়াতকে রদবদল করে যেভাবে ওয়াসীয়াত করা উচিত সেইভাবে সম্পদের পুনঃ বন্টন করে দেয়। তাহলে তাতে তার কোন পাপ হবে না। ওয়াসীয়াতকে শারী‘আতের নির্দেশ অনুযায়ী চালু করা উচিত, যেন মৃত ব্যক্তিও মহান আল্লাহ্র শাস্তি হতে বাঁচতে পারে, হকদারগণও তাদের হক পেয়ে যায় এবং ওয়াসীয়াতও শারী‘আত অনুযায়ী সম্পন্ন হয়। এ অবস্থায় পরিবর্তনকারীর কোন পাপ হবে না।’
ওয়াসীয়াতকে শারী‘আতের নির্দেশ অনুযায়ী চালু করা উচিত, যেন মৃত ব্যক্তিও মহান আল্লাহ্র শাস্তি থেকে বাঁচতে পারে, হকদারগণও তাদের হক পেয়ে যায় এবং ওয়াসীয়াতও শরী‘আত অনুযায়ী পুরো হয়। এই অবস্থায় পরিবর্তনকারীর কোন পাপ হবে না।
মুসনাদ ইবনে আবি হাতিম গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জীবনে অত্যাচার করে সাদাকাহ প্রদানকারীর সাদাকাহ ঐ ভাবেই অগ্রাহ্য করা হয়। যে ভাবে মৃত্যুর সময় ভুলকারীর ওয়াসীয়াত অগ্রাহ্য করা হয়।
তাফসীরে ইবনে মিরদুওয়াই গ্রন্থেও এই হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। ইবনে আবি হাতিম বলেন যে, এই হাদীসের বর্ণনাকারী, ওয়ালিদ ইবনে ইয়াযীদ এতে ভুল করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এটা ‘উরওয়ার কথা। ওয়ালীদ ইবনে মুসলিম এটা আওযা‘ঈ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন এবং ‘উরওয়ার পরে সনদ গ্রহণ করা হয়নি। ইবনে মিরদুওয়াইও ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) এর বর্ণনার উদ্বৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে, ওয়াসীয়াত কম বেশি করা কাবীরাহ গুনাহ। কিন্তু এই হাদীসটির মারফূ‘ হওয়ার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে।
সঠিকভাবে বা ন্যায়ানুগ ওয়াসীয়াত করার উপকারিতা
মুসনাদ ‘আবদুর রাজ্জাকে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘মানুষ সত্তর বছর পর্যন্ত ভালো লোকের কাজের মতো কাজ করতে থাকে; কিন্তু ওয়াসীয়াতের ব্যাপারে অত্যাচার করে, কাজেই পরিণাম খারাপ কাজের ওপর হওয়ায় সে জাহান্নামী হয়ে যায়। পক্ষান্তরে মানুষ সত্তর বছর ধরে অসৎ কাজ করতে থাকে কিন্তু ওয়াসীয়াতের ব্যাপারে ন্যায় ও ইনসাফ করে, কাজেই তার শেষ ‘আমল ভালো হওয়ায় সে জান্নাতী হয়ে যায়।’ অতঃপর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, যদি তোমরা চাও তাহলে কুর’আনুল হাকীমের এই আয়াতটি পাঠ করে নাও ﴿تِلْكَ حُدُوْدُ اللّٰهِ فَلَا تَقْرَبُوْهَا﴾ অর্থাৎ ‘এটা মহান আল্লাহ্র সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তা অতিক্রম করো না। (মুসনাদ ‘আব্দুর রাজ্জাক ৯/৮৮)
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings