Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 179
Saheeh International
And there is for you in legal retribution [saving of] life, O you [people] of understanding, that you may become righteous.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৭৮ ও ১৭৯ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় আরবের দু’টি গোত্রকে কেন্দ্র করে। যার একটিকে অপেক্ষাকৃত বেশি মর্যাদাবান ও সম্মানি মনে করা হত। যার কারণে সম্মানের দাবিদার গোত্রের কোন কৃতদাস হত্যা করলে অপর গোত্রের স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করত, কোন মহিলাকে হত্যা করলে তার পরিবর্তে পুরুষকে হত্যা করত।
এরূপ হতাহতের ঘটনা দু’টি মুসলিম গোত্রে ঘটে গেল যা জাহেলী যুগ থেকে চালু ছিল। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অভিযোগ জানালো। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়ে জাহিলী প্রথা বাতিল করে দেয়। (আয়সারুত তাফাসীর, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১২৯)
জাহিলী যুগ যেখানে ছিল না কোন সুষ্ঠু আইন-কানুন, ছিল না কোন মানবতা। ছিল শুধু অন্যায় অবিচার, তাদের বিধান ছিল ‘জোর যার মুল্লুক তার’। তাদের এক প্রকার জুলুম ছিল এ রকম যে, যদি সবল ও সম্মানিত গোত্রের কোন পুরুষ লোক হত্যা করা হত, তাহলে কেবল হত্যাকারীকেই তারা হত্যা করত না, কখনো কখনো পুরো পরিবার ধ্বংশ করে দিত। মহিলার পরিবর্তে পুরুষকে, কৃতদাসের পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করত।
আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম সমাজকে এহেন অবস্থা থেকে মুক্ত করে ন্যায় ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ার বিধান দিলেন ‘কিসাস’-এর মাধ্যমে। হত্যাকারী পুরুষ, মহিলা, স্বাধীন ও ক্রীতদাস যেই হোক, নিহত ব্যক্তির কিসাসস্বরূপ তাকে হত্যা করা হবে। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
الْمُسْلِمُونَ تَتَكَافَأُ دِمَاؤُهُمْ
মুসলিমরা রক্তে সবাই সমান। (আবূ দাঊদ হা: ২৭৫১, মুসনাদ আহমাদ হা: ৬৭১৭, হাদীসটি সহীহ)।
আয়াতের সরল অনুবাদে বলা হয়েছে- স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস ও নারীর বদলে নারী হত্যা করা হবে। এমতাবস্থায় যদি স্বাধীন ব্যক্তি ক্রীতদাসকে হত্যা করে বা পুরুষ মহিলাকে হত্যা করে তাহলে কি ক্রীতদাসের বদলে স্বাধীন ব্যক্তিকে আর মহিলার পরিবর্তে পুরুষকে হত্যা করা হবে না? উত্তর আয়াতটির এ শব্দগুলো যেভাবে এসেছে সেভাবে সাজানোর কারণ হল- অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট। অর্থাৎ জাহিলী যুগের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যেমন কৃতদাসের পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করত বা মহিলার পরিবর্তে পুরুষকে হত্যা করত এমন করা যাবে না। বরং কিসাসে হত্যাকারীকেই হত্যা করা হবে। তাতে সে পুরুষ হোক অথবা মহিলা হোক, সবল হোক আর দুর্বল হোক, উঁচু বংশের হোক আর নীচু বংশের হোক। এটাই হলো মুসলিমরা রক্তে সবাই সমান।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَکَتَبْنَا عَلَیْھِمْ فِیْھَآ اَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِﺫ وَالْعَیْنَ بِالْعَیْنِ وَالْاَنْفَ بِالْاَنْفِ وَالْاُذُنَ بِالْاُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّﺫ وَالْجُرُوْحَ قِصَاصٌ)
“আমি তাদের জন্য তাতে ফরয করে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং জখমের বদলে অনুরূপ জখম।”(সূরা মায়িদা ৫:৪৫)
(فَمَنْ عُفِیَ لَھ۫) ক্ষমা করে দেয়া দু’ভাবে হতে পারে:
১. বিনিময় ছাড়া আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ক্ষমা করা।
২. কিসাসের পরিবর্তে রক্তপণ গ্রহণ করা।
দ্বিতীয় পদ্ধতি অবলম্বন করলে ভালভাবে আদায় করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
(أَخِيْهِ) “তার ভাই” অর্থাৎ হত্যাকারী কাফির হবে না। কারণ এখানে ভাই দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দীনি ভাই। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, এ অপরাধ করলে একজন মুসলিম কাফির হতে পারে না, যদি সে ঐ অপরাধ করা বৈধ মনে না করে।
(ذٰلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُم)
অর্থাৎ কিসাস না আদায় করে দিয়াত গ্রহণ করা অথবা সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দেয়ার বিধান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তোমাদর প্রতি শাস্তি হ্রাস ও বিশেষ অনুগ্রহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্র্ণিত, তিনি বলেন: বানী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মধ্যে কিসাস প্রথা চালু ছিল, কিন্তু দিয়াত তাদের মধ্যে চালু ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতের জন্য এ আয়াত অবতীর্ণ করে তাদের উপর বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন। আর তা হলোঃ হত্যার ক্ষেত্রে কিসাস বা খুনের বদলে খুন তোমাদের জন্য ফরয করা হয়েছে। স্বাধীন মানুষের বদলে স্বাধীন মানুষ, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং স্ত্রীলোকের বদলে স্ত্রীলোকের কিসাস নেয়া হবে। হ্যাঁ, কোন হত্যাকারীর সঙ্গে তার কোন (মুসলিম) ভাই নম্রতা দেখাতে চাইলে উল্লিখিত আয়াতে ক্ষমা এর অর্থ ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে দিয়াত গ্রহণ করে কিসাস ক্ষমা করে দেয়া।
(فَاتِّبَاعٌۭ بِالْمَعْرُوْفِ وَأَدَآءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ)
অর্থাৎ এ ব্যাপারে যথাযথ বিধি মেনে চলবে এবং নিষ্ঠার সাথে দিয়াত আদায় করে দেবে। তোমাদের পূর্বের লোকেদের ওপর আরোপিত কিসাস হতে তোমাদের প্রতি দিয়াত ব্যবস্থা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তোমাদের প্রতি শাস্তি হ্রাস ও বিশেষ অনুগ্রহ। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৯৮)
তবে কিসাস আদায় করা, দিয়াত গ্রহণ করা অথবা সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দেয়া নিহত পরিবারের ইখতিয়ারাধীন, তাদেরকে কোনটাতে বাধ্য করা যাবেনা। এতে হত্যাকারী সন্তুষ্ট থাকুক আর নাই থাকুক।
মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কোন ব্যক্তির (অধীনস্থ) কাউকে হত্যা করা হয়ে থাকলে তার দু’টি অবকাশ রয়েছে: এক. সে ইচ্ছা করলে দিয়াত গ্রহণ করতে পারবে। দুই. ইচ্ছা করলে কিসাস আদায় করতে পারবে। (সহীহ বুখারী হা: ১১২, ২৪৩৪, সহীহ মুসলিম হা: ১৩৫৫)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে: তাকে ক্ষমা করেও দিতে পারবে এ অধিকার রয়েছে। (ইরওয়া হা: ২২২০)
আর একজন ব্যক্তিকে হত্যার কারণে আক্রোশমূলক একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না। তবে একাধিক ব্যক্তি একজনকে হত্যা করার কাজে সম্পৃক্ত থাকলে তাদের সবাইকে হত্যা করা যাবে। (ইমাম বুখারী সহীহ বুখারীর দিয়াত অধ্যায়ে সনদবিহীন বর্ণনা করেছেন: উমার (রাঃ) একজন সানআ ব্যক্তিকে হত্যা করার কারণে সাতজনকে হত্যা করেছেন)। অনুরূপ পিতা সন্তানকে হত্যা করলে সন্তানের বদলে পিতাকে হত্যা করা যাবেনা। কারণ পিতা মূল আর সন্তান হল শাখা। (তিরমিযী হা: ১৪০০, ইবনু মাযাহ হা: ২৬৪৬, সহীহ) আবার কোন কাফিরকে মুসলিম হত্যা করলে তার বদলে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না। (সহীহ বুখারী হা: ১১১)
(ذٰلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُم)
‘এটা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে হালকা বিধান’অর্থাৎ কিসাস না আদায় করে দিয়াত গ্রহণ করা অথবা সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দেয়ার বিধান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তোমাদের প্রতি শাস্তি হ্রাস ও বিশেষ অনুগ্রহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্র্ণিত, তিনি বলেন: বানী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মধ্যে কিসাস প্রথা চালু ছিল, কিন্তু দিয়াত তাদের মধ্যে চালু ছিল না। আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতের জন্য এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ হত্যার ক্ষেত্রে কিসাস বা খুনের বদলে খুন তোমাদের জন্য ফরয করা হয়েছে। স্বাধীন মানুষের বদলে স্বাধীন মানুষ, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং স্ত্রীলোকের বদলে স্ত্রীলোকের কিসাস নেয়া হবে। হ্যাঁ, কোন হত্যাকারীর সঙ্গে তার কোন (মুসলিম) ভাই নম্রতা দেখাতে চাইলে উল্লিখিত আয়াতে ক্ষমা এর অর্থ ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে দিয়াত গ্রহণ করে কিসাস ক্ষমা করে দেয়া।
দিয়াত বা রক্তপণ গ্রহণ করার পর অথবা ক্ষমা করার পরও যদি কেউ হত্যাকারীকে হত্যা করে তাহলে তা সীমালংঘন হবে। তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, এ কিসাসে তোমাদের জীবন রয়েছে। অর্থাৎ যখন হত্যাকারীর এ ভয় থাকবে যে, হত্যা করলে তাকেও হত্যা করা হবে তখন সে অবশ্যই হত্যা করা থেকে বিরত থাকবে। তাই যে সমাজে কিসাস বলবত থাকবে, সে সমাজ হত্যা, খুন-খারাবী ও অন্যায় থেকে মুক্ত থাকবে। ফলে সমাজে আসবে শান্তি ও নিরাপত্তা। এটাই হল কিসাসের মাঝে জীবন এর ব্যাখ্যা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সমাজে কুরআন-সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত হলে অন্যায় অবিচার, হত্যার ছড়াছড়ি ও অশ্লীলতা বেহায়াপনা থেকে মুক্ত থাকবে।
২. ইসলাম নারী-পুরুষ, স্বাধীন ও ক্রীতদাস, ধনী-গরীব সকলের জীবনের সমান মূল্যায়ণ করেছে।
৩. শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ার একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings