2:17

مَثَلُهُمۡ كَمَثَلِ ٱلَّذِى ٱسۡتَوۡقَدَ نَارًا فَلَمَّآ أَضَآءَتۡ مَا حَوۡلَهُۥ ذَهَبَ ٱللَّهُ بِنُورِهِمۡ وَتَرَكَهُمۡ فِى ظُلُمَٰتٍ لَّا يُبۡصِرُونَ١٧

Saheeh International

Their example is that of one who kindled a fire, but when it illuminated what was around him, Allah took away their light and left them in darkness [so] they could not see.

Tafsir "Ibn Kathir Partial" (Bengali)

মুনাফিকদের লক্ষণ مثال কে ‘আরবীতে مثيل বলে। এর বহুবচন أمثال আসে। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ﴿وَ تِلْكَ الْاَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ١ۚ وَ مَا یَعْقِلُهَاۤ اِلَّا الْعٰلِمُوْنَ﴾মানুষের জন্য এসব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে থাকি, কিন্তু শুধু জ্ঞানী ব্যক্তিরাই এটা বুঝে (২৯ নং সূরাহ্ ‘আনকাবূত, আয়াত নং ৪৩) আয়াতটির ভাবার্থ এই যে, যে মুনাফিকরা সঠিক পথের পরিবর্তে ভ্রান্ত পথ এবং দৃষ্টির পরিবর্তে দৃষ্টিহীনতাকে ক্রয় করে থাকে, তাদের দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে অন্ধকারে আগুন জ্বালিয়েছে, তার ফলে আশে পাশের জিনিস তার চোখে পড়েছে। মনের উদ্বিগ্নতা দূর হয়ে উপকার লাভের আশার সঞ্চার হয়েছে, এমন সময়ে হঠাৎ আগুন নিভে গেছে এবং চারিদিক ভীষণ অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। কাজেই সে রাস্তা দেখতে পাচ্ছে না। এছাড়া লোকটি বধির, সে কারো কথা শুনতে পায় না; সে বোবা, তার কথা রাস্তার কেউ শুনতে পায় না এবং সেও রাস্তার কোন লোককে জিজ্ঞেস করতে পারে না; সে অন্ধ, আলোতেও সে কাজ চালাতে পারে না। এখন তাহলে সে পথ পাবে কি করে? মুনাফিকরা ঠিক তারই মতো। সঠিক পথ ছেড়ে তারা পথ হারিয়ে ফেলেছে এবং ভালো ছেড়ে মন্দের কামনা করছে। এই উদাহরণে বুঝা যাচ্ছে যে, ঐসব লোক ঈমান কবূল করার পরে কুফরী করেছিলো। যেমন কুর’আনুল কারীমের অনেক জায়গায় তা স্পষ্টভাবে বিদ্যমান আছে। মহান আল্লাহই ভালো জানেন।ইমাম রাযী (রহঃ) স্বীয় তাফসীরের মধ্যে সুদ্দী (রহঃ) হতে এরূপ বর্ণনা করে বলেছেন যে, এই তুলনা সম্পূর্ণরূপে সঠিক। কেননা মুনাফিকরা ইমানের আলো লাভ করার পর তাদের মুনাফিকির কারণে তা নিভে গিয়েছে এবং এর ফলে তারা অস্থির হয়ে পড়েছে। ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন, যাদের সম্পর্কে এ উপমা প্রদান করা হয়েছে তাদের ভাগ্যে কখনও ইমান লাভ সম্ভব হয়নি। কেননা ইতোপূর্বে মহান আল্লাহ বলেছেনঃ وما هم بمؤمنين অর্থাৎ যদিও তারা মুখে মহান আল্লাহর ওপর এবং কিয়ামতের ওপর ইমান আনার কথা বলছে, কিন্তু প্রকৃতঅর্থে তারা ঈমানদার নয়। তবে বাস্তব কথা হলো এই পবিত্র আয়াতে তাদের অস্বীকৃতি ও কপটতার সময়কার সংবাদ দেয়া হয়েছে। এর দ্বারা এ অস্বীকৃতি বুঝায়না যে, এই অস্বীকৃতি ও কপটতার পূর্বে তারা ঈমান এনেছিলো। বরং হতে পারে যে, তারা ঈমান আনার পর তা হতে সরে পড়েছিলো। অতঃপর তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا فَطُبِعَ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ فَهُمْ لَا یَفْقَهُوْنَ.‘তার কারণ এই যে, তারা ঈমান আনে, তারপর কুফরী করে। এজন্য তাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। যার ফলে তারা কিছুই বুঝে না।’ (৬৩ নং সূরাহ আল মুনাফিকূন, আয়াত নং ৩)এই কারণেই কোন কোন উপমাতে আলো ও অন্ধকার এর উল্লেখ আছে। অর্থাৎ ঈমানের কালিমা প্রকাশ করার কারণে দুনিয়ায় আলো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অন্তরে অস্বীকৃতি থাকার কারণে আখিরাতের অন্ধকার তাদেরকে ঘিরে নিয়েছে। একটি দলের উপমা একটি লোকের সাথে প্রায়ই এসে থাকে। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেনঃ رَاَیْتَهُمْ یَنْظُرُوْنَ اِلَیْكَ تَدُوْرُ اَعْیُنُهُمْ كَالَّذِیْ یُغْشٰى عَلَیْهِ مِنَ الْمَوْتِ.‘তুমি দেখবে মৃত্যু ভয়ে অচেতন ব্যক্তির ন্যায় চোখ উল্টিয়ে তারা তোমার দিকে তাকাচ্ছে।’ (৩৩ নং সূরাহ আল আহযাব, আয়াত ১৯) অন্য এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃمَا خَلْقُكُمْ وَلَا بَعْثُكُمْ اِلَّا كَنَفْسٍ وَّاحِدَةٍ‘তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একজন মানুষের সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের মতোই।’ (৩১ নং সূরাহ লুকমান, আয়াত ২৮)যারা তাওরাত শিক্ষা করে কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ করে না তাদের উপমা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿كَمَثَلِ الْحِمَارِ یَحْمِلُ اَسْفَارًا﴾‘তাদের দৃষ্টান্ত হলো গাধার মতো, যে বহু কিতাবের বোঝা বহন করে কিন্তু তা বুঝে না।’ (৬২ নং সূরাহ আল জুমু‘আহ, আয়াত ৫) এ সব আয়াতে দলের উপমা একের সাথে দেয়া হয়েছে।অনুরূপভাবে উপরোক্ত আয়াতে মুনাফিক দলের উপমা একটি লোকের সাথে দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলেন অনুমতি বাক্য হবে নিম্নরূপঃ مثل قصتهم كمثل قصة الذين استوقدوا نارا.‘তাদের ঘটনার উপমা ঐ সব লোকের ঘটনার মতো যারা আগুন জ্বালিয়েছে। কেউ কেউ বলেন আগুন জ্বালায় তো একজন, কিন্তু এমন একটি দলের জন্য জ্বালিয়ে থাকে যে দল তার সাথে রয়েছে। মহান আল্লাহ তাদের আলো ছিনিয়ে নিয়েছেন, এর অর্থ এই যে, যে আলো তাদের জন্য উপকারী ছিলো তা সরিয়ে নিয়েছেন এবং যেমনভাবে আগুন নিভে যাবার পর তা ধুঁয়া এবং অন্ধকার থেকে যায় তদ্রুপ তাদের কাছে ক্ষতিকর জিনিস যেমন সন্দেহ, কুফর এবং নিফাক রয়ে গেছে, সুতরাং তারা নিজেরাও পথ দেখতে পায় না, অন্যের ভালো কথাও শুনতে পায় না এবং কারো কাছে প্রশ্নও করতে পারে না। এখন পুনরায় সঠিকপথে আসা অসম্ভব হয়ে গেছে। এর সমর্থনে মুফাস্সিরগণের অনেক পর্যালোচনা রয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস, ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) সহ কতিপয় সাহাবীগণের মতে ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাদীনায় আগমনের পর কতকগুলো লোক ইসলাম গ্রহণ করে, কিন্তু পরে আবার মুনাফিক হয়ে যায়। তাদের উপমা ঐ লোকটির মতো যে অন্ধকারে রয়েছে। অতঃপর আগুন জ্বালিয়ে আলো লাভ করেছে এবং আশে পাশের ভালোমন্দ দেখতে পেয়েছে। আর কোন পথে কি আছে তার সবই জানতে পেরেছে। এমন সময় হঠাৎ আগুন নিভে গিয়েছে ফলে আলো হারিয়ে গিয়েছে। এখন পথে কি আছে না আছে তা আর সে জানতে পারে না। মুনাফিকরা ঠিক এরকমই শিরক ও কুফরের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলো। অতঃপর ঈমান এনে ভালো মন্দ তথা হালাল-হারাম অনুধাবন করতে পারে। কিন্তু পুনরায় কুফরী করার কারণে হালাল-হারাম ও ভালো-মন্দের মাঝে কোন পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে না।“তারা বধির, মুক, অন্ধ” প্রসঙ্গে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তারা হিদায়াতের কথা শোনা হতে বধির, হিদায়াতের কথা বলা হতে মুক তথা বোবা, আর হিদায়াতের কথা বোঝার ক্ষেত্রে তারা অন্ধ। ফলে তারা হিদায়াতের দিকে ফিরে আসবে না। আর কাতাদাহ (রহঃ) বলেন, ফলে তারা তাওবাহ করবে না এবং তারা মহান আল্লাহকে স্মরণও করবে না।

Arabic Font Size

30

Translation Font Size

17

Arabic Font Face

Help spread the knowledge of Islam

Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.

Support Us