Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 162
Saheeh International
Abiding eternally therein. The punishment will not be lightened for them, nor will they be reprieved.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
ঐ সমস্ত লোকের ওপর মহান আল্লাহ্র অভিশাপ, যারা ধর্মীয় আদেশ নিষেধ গোপন করে
এটা একটি কঠিন ধমক তথা সতর্কবাণী ঐ সব লোকদের জন্য যারা মহান আল্লাহ্র কথাগুলো এবং শারী‘আতের বিষয়গুলো গোপন করতো। কিতাবীরা মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রশংসা বিষয়ক কথাগুলো গোপন রাখতো। এ জন্যই ইরশাদ হচ্ছে যে, সত্যকে গোপনকারীর প্রতি প্রত্যেক জিনিসই অভিশাপ দিয়ে থাকে। যেমন প্রত্যেক জিনিস ঐ ‘আলিমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে যিনি জনসাধারণের মধ্যে মহান আল্লাহ্র কথাগুলি প্রচার করেন। এমনকি পানির মাছ এবং আকাশের পাখিরাও তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। অতএব এ গোপনকারীরা এ সব ‘আলিমের বিপরীত। ফলে মহান আল্লাহ তাদের প্রতি অভিশাপ দেন এবং প্রত্যেক অভিশাপ কারীই তাকে অভিশাপ দিয়ে থাকেন। সহীহ হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "من سُئِل عن علم فكتمه، ألجم يوم القيامة بلجام من نار"
‘যে ব্যক্তি শারী‘আতের কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয় এবং সে তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পড়ানো হবে।’ (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদ আহমাদ ২/২৬৩/৭৫৬১, ২/৩০৫/৮০৩৫, ২/৩৪৪/৮৫১৪, ২/৩৫৩/৮৬২৩, সুনান আবূ দাউদ-৩/৩৬৫৮/৩২১, জামি‘ তিরমিযী-৫/২৯/২৬৪৯, সুনান ইবনে মাজাহ ১/৯৮/২৬৬, মুসনাদে আবূ দাউদ আত ত্বায়ালেসী-৩৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৫৩৪, মুসতাদরাক হাকিম-১/১০১)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেনঃ أن العالم يستغفر له كل شيء حتى الحيتان ‘নিশ্চয়ই যারা আমাদের অবতীর্ণ কোন দালীল এবং হিদায়াতকে গোপন করে।’ এই আয়াতটি না থাকলে আমি একটি হাদীসও বর্ণনা করতাম না। (সহীহুল বুখারী-১/২৫৮/১১৮, ফাতহুল বারী ১/২৫৮) বারা’ ইবনে ‘আযিব (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ
"إن الكافر يضرب ضربة بين عينيه، فيسمع كل دابة غير الثقلين، فتلعنه كل دابة سمعت صوته،فذلك قول الله تعالى: { أُولَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللاعِنُونَ } يعني: دواب الأرض".
‘আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘কাবরের মধ্যে কাফেরের কপালে এতো জোড়ে হাতুড়ী মারা হবে যে, মানব ও দানব ছাড়া সমস্ত প্রাণী এর শব্দ শুনতে পায় এবং তারা সবাই তার প্রতি অভিশাপ দেয়। ‘অভিসম্পাতকারীরা তাদের প্রতি অভিসম্পাত করে থাকে, এ কথার অর্থ এটাই। অর্থাৎ সমস্ত প্রাণীর অভিশাপ তাদের ওপর রয়েছে। (সুনান ইবনে মাজাহ- ২/১৩৩৪/৪০২১) ‘আতা (রহঃ) বলেন لاعنون শব্দের ভাবার্থে সমুদয় জীবন্ত এবং সমস্ত দানব ও মানবকে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, যে বছর ভূমি শুকিয়ে যায় এবং বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায় তখন চতুস্পদ জন্তুরা বলেঃ ‘এটা বানী আদম (আঃ)-এর পাপেরই ফল, মহান আল্লাহ আদম (আঃ)-এর সন্তানের মধ্যে থেকে যারা অবাধ্য তাদের ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করুন।’ (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/১৭৪) কাতাদাহ (রহঃ) বলেন যে, لاعنون দ্বারা ফেরেশতা এবং মু’মিনগণের অভিশাপকে বুঝানো হয়েছে। হাদীসে রয়েছে যে, أن العالم يستغفر له كل شيء حتى الحيتان
‘আলেমের জন্য প্রত্যেক জিনিসই ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি সমুদ্রের মাছও ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। (হাদীসটি সহীহ। সুনান আবূ দাউদ-৩/৩১৭/৩৬৪১, জমি‘ তিরমিযী-৫/৪৭/২৬৮২, সুনান ইবনে মাজাহ-১/৮৯/২২৩) আর এই আয়াতে রয়েছে যে, ‘যারা ‘ইলম’ কে গোপন করে মহান আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশতা, সমস্ত মানুষ ও প্রত্যেক অভিসম্পাতকারী করে থাকে।’ অর্থাৎ প্রত্যেক বাকশক্তিহীন জীব অভিসম্পাত করে থাকে। সেটা ভাষার মাধ্যমেই হোক অথবা ইঙ্গিত দ্বারাই হোক। কিয়ামত দিবসে সমস্ত জিনিস তাকে অভিসম্পাত করতে থাকবে।
এরপর মহান আল্লাহ ঐসব মানুষকে অভিশপ্তদের মধ্য হতে বের করে নেন। ফলে তিনি বলেনঃ ﴿اِلَّا الَّذِیْنَ تَابُوْا وَاَصْلَحُوْا وَبَیَّنُوْا﴾ যারা তাদের এ কাজ করতে বিরত হয় এবং সম্পূর্ণরূপে সংশোধিত হয়। আর পূর্বে যা গোপন করেছিলো তখন তা প্রকাশ করে দেয়। ﴿فَاُولٰٓىِٕكَ اَتُوْبُ عَلَیْهِمْ١ۚ وَ اَنَا التَّوَّابُ الرَّحِیْمُ﴾ সেই ‘তাওবাহ’ কবূলকারী দয়ালু মহান আল্লাহ এই সব মানুষের তাওবাহ কবূল করেন। এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, যে ব্যক্তি মানুষের কুফর ও বিদ‘আতের দিকে আহ্বান করে সে যদি খাঁটি অন্তরে তাওবাহ করে তাহলে তার আহ্বানও গৃহীত হয়ে থাকে। কোন কোন বর্ণনা দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, পূর্বের উম্মাতদের মধ্যে যারা এ রকম বড় বড় পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়তো তাদের তাওবাহ মহান আল্লাহ্র দরবারে গৃহীত হতো না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উম্মাতের ওপর মহান আল্লাহ্র একটি বিশেষ মেহেরবানী যে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবাহ শুনেন ও কবূল করেন।
অতঃপর ঐসব লোকের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যারা কুফরী ও অন্যায় করেছে এবং তাওবাহ করা তাদের ভাগ্যে জুটেনি। বরং কুফরী অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করেছেঃ
﴿اُولٰٓىِٕكَ عَلَیْهِمْ لَعْنَةُ اللّٰهِ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ وَ النَّاسِ اَجْمَعِیْنَۙ. خٰلِدِیْنَ فِیْهَا﴾ সুতরাং এদের ওপর বর্ষিত হয়েছে মহান আল্লাহ্র অভিসম্পাত, তাঁর ফিরিশতার এবং সমস্ত মানুষের অভিসম্পাত। এই অভিশাপ তাদের ওপর জারী থাকে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদের সাথেই সংযুক্ত থাকবে। অবশেষে এ অভিশাপ তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে নিয়ে যাবে। তারা চিরকাল সে শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। ﴿لَا یُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ یُنْظَرُوْنَ﴾ তাদের এই শাস্তি এতোটুকুও হ্রাস করা হবে না, পরিবর্তনও করা হবে না এমনকি কখনো তা বন্ধ করাও হবে না। বরং চিরকাল তাদের ওপর ভীষণ শাস্তি হতেই থাকবে। আমরা করুণাময় মহান আল্লাহ্র নিকট তাঁর এই শাস্তি হতে আশ্রয় চাচ্ছি।
অবিশ্বাসীদেরকে অভিশাপ দেয়া যাবে
কাফেরদের প্রতি অভিশাপ বর্ষণের ব্যাপারে কারো কোন মতবিরোধ নেই। ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এবং তাঁর পরের সম্মানিত ইমামগণ সবাই ‘কুনূত’ প্রভৃতির মাধ্যমে কাফিরদের ওপর অভিশাপ দিতেন। কিন্তু কোন নির্দিষ্ট কাফিরদের ওপর অভিসম্পাত বর্ষণের ব্যাপারে ‘উলামায়ি কিরামের একটি দল বলেন যে, এটা জায়িয নয়। কেননা তার পরিণাম কারো জানা নেই। তারা কোন নির্দিষ্ট কাফিরকে অভিশাপ না দেয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহ্র বাণীঃ وماتووهمكفار ‘কুফরী অবস্থায় তার মৃত্যু হলো’ এ কথাটি দালীলরূপে পেশ করে থাকেন।
‘আলেমগণের অন্য একটি দলের মতে নির্দিষ্ট কাফিরদের ওপরও লা‘নত বর্ষণ করা জায়িয। যেমন ধর্মশাস্ত্রবিদ আবূ বাকর ইবনে ‘আরবী মালেকী (রহঃ) এই মত পোষণ করেন এবং এর দালীলরূপে তিনি একটি দুর্বল হাদীসও পেশ করেন। এর দালীল রূপে কেউ কেউ এ হাদীসটিও এনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একটি লোককে বারবার মাতাল অবস্থায় আনা হয় এবং বার বারই তার ওপর ‘হদ্দ’ লাগানো হয়। এই সময়ে এক ব্যক্তি মন্তব্য করেঃ ‘তার ওপর মহান আল্লাহ্র লা‘নত বর্ষিত হোক। কতো বারই না তাকে ধরে নিয়ে আসা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ "لا تلعنه فإنه يحب الله ورسوله"
‘তুমি তাকে অভিম্পাত করো না। কেননা সে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে।’ (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদে ‘আব্দুর রাজ্জাক, ৭/৩৮১, সহীহুল বুখারী-১২/৭৭/৬৭৮০) এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ভালোবাসা রাখে না, তার ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করা জায়িয। মহান আল্লাহই ভালো জানেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings