Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 144
Saheeh International
We have certainly seen the turning of your face, [O Muhammad], toward the heaven, and We will surely turn you to a qiblah with which you will be pleased. So turn your face toward al-Masjid al-Haram. And wherever you [believers] are, turn your faces toward it [in prayer]. Indeed, those who have been given the Scripture well know that it is the truth from their Lord. And Allah is not unaware of what they do.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৪২ থেকে ১৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
সাহাবী বারা বিন আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মদীনায় আগমণ করার পর) বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতেন আর বারবার আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের অপেক্ষা করতেন। (কখন বাইতুল্লাহর দিকে ফিরে সালাত আদায় করার নির্দেশ আসবে) তখন
قَدْ نَرَي .... يَعْمَلُونَ এ আয়াত নাযিল হয়। (ইবনু কাসীর)
এরপর বাইতুল্লাহ কেবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়। এ সময় সাহাবাগণ বলতে লাগলেন, কেবলা পরিবর্তনের পূর্বে যারা মারা গেছে তাদের অবস্থা কী হবে? যদি আমরা জানতে পারতাম এবং আমরা যে এতদিন বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেছি তার কী হবে? তখন وَمَا كَانَ اللّٰهُ.... আয়াত নাযিল হয়।
যখন কেবলা পরিবর্তন হয়ে গেল তখন আহলে কিতাবের নির্বোধ লোকেরা বলতে লাগল কিসে তাদেরকে পূর্বের কেবলা থেকে ফিরিয়ে নিল? তখন
(سَيَقُولُ السُّفَهَاء مِنَ النَّاسِ... )
আয়াত নাযিল হয়।
বারা বিন আযিব (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় হিজরত করার পর ১৬-১৭ মাস পর্যন্ত বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেন। কিন্তু তিনি পছন্দ করতেন কাবার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে। তখন
(قَدْ نَرَي . يَعْمَلُونَ....)
আয়াত নাযিল হয়।
এ আয়াত অবতীর্ণের পর থেকে মুসলিমগণ কাবামুখী হয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় ইয়াহূদী নির্বোধেরা বলতে লাগল-
(مَا وَلّٰهُمْ عَنْ قِبْلَتِهِمُ الَّتِيْ كَانُوْا عَلَيْهَا)
“কিসে তাদেরকে সেই কেবলা হতে ফিরিয়ে দিল যার দিকে তারা ছিল?” তখন
(قُلْ لِّلّٰهِ الْمَشْرِقُ ...... مُّسْتَقِیْمٍ)
নাযিল হয়। এছাড়া আরো বর্ণনা রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮৬, ইবনু কাসীর ১খণ্ড, পৃঃ ৪০৬)
কেবলা পরিবর্তন কোন্ সালাতে হয়েছিল তা নিয়ে বেশ মতামত পাওয়া যায়, তবে সঠিক কথা হল, আসর সালাতে (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮৬)। অন্যান্য বর্ণনা এর বিপরীত নয়। কারণ যারা যে সালাতের সময় পরিবর্তন পেয়েছিলেন তারা সে সালাতের কথা বলেছেন।
আয়াতে أمة وسطا এর অর্থ أمة خياراً وعدولاً বা সর্বশ্রেষ্ঠ, ন্যায়পরায়ণ ও মধ্যমপন্থী জাতি। যেমন বলা হয়
قريش أوسط العرب نسباً وداراً
বা কুরাইশগণ বংশ ও ঘর বাড়ির দিক দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ আরব। আরো বলা হয়:
صلاة العصر صلاة الوسطي
আসরের সালাত উৎকৃষ্ট ও মধ্যম সালাত। তাই আল্লাহ তা‘আলা এ উৎকৃষ্ট ও মধ্যমপন্থী জাতিকে একটি পরিপূর্ণ শরীয়ত ও সুপ্রতিষ্ঠিত দীন দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ھُوَ اجْتَبٰٿکُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَیْکُمْ فِی الدِّیْنِ مِنْ حَرَجٍﺚ مِلَّةَ اَبِیْکُمْ اِبْرٰھِیْمَﺚ ھُوَ سَمّٰٿکُمُ الْمُسْلِمِیْنَﺃ مِنْ قَبْلُ وَفِیْ ھٰذَا لِیَکُوْنَ الرَّسُوْلُ شَھِیْدًا عَلَیْکُمْ وَتَکُوْنُوْا شُھَدَا۬ئَ عَلَی النَّاسِﺊ)
“তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত। তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’এবং এ কিতাবেও; যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরা সাক্ষী হও মানব জাতির জন্য।”(সূরা হজ্জ ২২:৭৮)
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কিয়ামত দিবসে নূহ (আঃ)-কে ডাকা হবে, তিনি বলবেন, হে প্রভু! আমি উপস্থিত। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি কি তোমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছিলে? তিনি বলবেন: হ্যাঁ পৌঁছে দিয়েছিলাম। তখন তাঁর উম্মাতকে জিজ্ঞাসা করা হবে। নূহ তোমাদের নিকট (নবুওয়াতের বাণী) পৌঁছে দিয়েছে কি? তারা বলবে: আমাদের কাছে কোন ভীতি প্রদর্শনকারী আসেনি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার সাক্ষী কে? নূহ (আঃ) বলবেন: মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর উম্মাত। তখন (উম্মাতে মুহাম্মাদী) সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, তিনি দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত পাঠ করলেন:
(وَكذٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَّسَطًا)
(সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮৭)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَکَیْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ کُلِّ اُمَّةٍۭ بِشَھِیْدٍ وَّجِئْنَا بِکَ عَلٰی ھٰٓؤُلَا۬ئِ شَھِیْدًا)
“যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব তখন কী অবস্থা হবে?”। (সূরা নিসা ৪:৪১)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মু’মিনের মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করেছেন।
এ কেবলা পরিবর্তন এ জন্য করা হয়েছে যাতে আল্লাহ তা‘আলা জেনে নেন কারা প্রকৃতপক্ষে রাসূলের অনুসারী আর কারা মুনাফিক।
ইসলামের কোন আদেশ পালন বা নিষেধকৃত বিষয় বর্জন করা মু’মিন ছাড়া অন্যদের জন্য বড়ই কঠিন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَاِذَا مَآ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْھُمْ مَّنْ یَّقُوْلُ اَیُّکُمْ زَادَتْھُ ھٰذِھ۪ٓ اِیْمَانًاﺆ فَاَمَّا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْھُمْ اِیْمَانًا وَّھُمْ یَسْتَبْشِرُوْنَوَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ مَّرَضٌ فَزَادَتْھُمْ رِجْسًا اِلٰی رِجْسِھِمْ)
“যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে ‘এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করলো?’যারা মু’মিন এটা তাদেরই ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারাই আনন্দিত হয়। এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, এটা তাদের কলুষের সাথে আরও কলুষ যুক্ত করে।”(সূরা তাওবাহ ৯:১২৪-২৫)
(وَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيُضِيْعَ إِيْمَانَكُمْ)
‘আল্লাহ এরূপ নন যে, তোমাদের ঈমান (সালাত) বিনষ্ট করে দিবেন’এখানে ঈমান সালাত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সালাতকে ঈমান বলার কারণ হল সালাত ঈমানের পরিচায়ক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
الْفَرْقُ بَيْنَ الْعَبْدِ وَالْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ
আল্লাহ তা‘আলার দাসত্ব ও কুফরীর মাঝে পার্থক্য হল সালাত বর্জন করা। (সহীহ মুসলিম হা:৮২)
(فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا)
‘তাই আমি তোমাকে ঐ কেবলামুখীই করব যা তুমি কামনা করছ’এ অংশটুকুর তাফসীর হল
(فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ)
“তুমি মাসজিদে হারামের দিকে (কা‘বার দিকে) তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও।”
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষকে সালাতে কাবামুখী হবার নির্দেশ দিচ্ছেন। সে ব্যক্তি পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর বা দক্ষিণ দিকের অর্থাৎ পৃথিবীর যে কোন দিকের অধিবাসীই হোক না কেন।
সালাতের কেবলা হল বাইতুল্লাহ, তবে সফরে নফল সালাত ও যুদ্ধের ময়দানের ফরয সালাত ব্যতীত। কেননা তাতে কেবলামুখী হওয়া কঠিন বিধায় জরুরী নয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৪১৫)
আহলে কিতাব বিশেষ করে ইয়াহূদীরা জানে যে, এ কেবলা পরিবর্তন সত্য এবং আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে। কিন্তু অহঙ্কারবশত তা প্রত্যাখ্যান করে।
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কেন এ বিধান দিলেন বা কেন পূর্বের বিধান বাতিল করলেন ইত্যাদি প্রশ্ন করা ঈমানদারদের সমীচীন নয়। বরং ঈমানের পরিচয় হল আল্লাহ তা‘আলা যখন যে বিধান দেবেন তা মাথা পেতে মেনে নেয়া।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলামে বিধান রহিতকরণ শরীয়তসিদ্ধ। যেমন এখানে বাইতুল মুকাদ্দাসের কেবলা রহিত করে বাইতুল্লাহকে নির্ধারণ করা হল।
২. কেবল মুনাফিক ও কাফিররাই শরীয়তের বিধি-বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে থাকে।
৩. সকল উম্মাতের ওপর উম্মাতে মুহাম্মাদীর শ্রেষ্ঠত্ব সর্ম্পকে জানলাম।
৪. বিভিন্ন সময় বিধি-বিধানের বদল করে আল্লাহ তা‘আলা পরীক্ষা করেন কারা প্রকৃত ঈমানদার।
৫. শরীয়তের বিধান যত বড়ই হোক না কেন মু’মিনের কাছে তা সহজসাধ্য; পক্ষান্তরে মুনাফিক ও কাফিরের কাছে আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ার মত কঠিন।
৬. অজানার কারণে কেবলার ভিন্নদিকে সালাত আদায় করলে সালাত পুনরাবৃত্তি করতে হবে না।
৭. সারা পৃথিবীবাসীর জন্য একমাত্র কেবলা কাবা, কেউ স্বেচ্ছায় অন্য কেবলা গ্রহণ করলে তা প্রত্যাখ্যাত।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings