Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 14
Saheeh International
And when they meet those who believe, they say, "We believe"; but when they are alone with their evil ones, they say, "Indeed, we are with you; we were only mockers."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৪ ও ১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
এটাও মুনাফিকদের একটি মুখের কথা যা তাদের অন্তরে নেই। যখন তারা মু’মিনদের সাথে একত্রিত হয় তখন নিজেদেরকে ঈমানদার দাবি করে, আবার যখন তাদের শয়তান সাথীদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা তাদেরকে বলে আমরা তোমাদের সঙ্গেই আছি।
বিশিষ্ট তাবেয়ী সুদ্দী ইমাম মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, এখানে شَیٰطِیْنِھِمْ (শয়তান) দ্বারা উদ্দেশ্য হল- মুশরিক, মুনাফিক ও ইয়াহূদীদের নেতা ও সর্দার। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/১৩৮)
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন, প্রত্যেক পথভ্রষ্টকারী ও অবাধ্যকে শয়তান বলা হয়। তারা জিন ও মানব উভয় জাতি থেকে হতে পারে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَکَذٰلِکَ جَعَلْنَا لِکُلِّ نَبِیٍّ عَدُوًّا شَیٰطِیْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ یُوْحِیْ بَعْضُھُمْ اِلٰی بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًا)
“অনুরূপভাবে আমি মানব ও জিনের মধ্যে যারা শয়তান তাদেরকে প্রত্যেক নাবীর শত্র“ করেছি, প্রতারণার উদ্দেশ্যে তাদের একে অন্যকে চমকপ্রদ কথা অতি গোপনীয়ভাবে জানিয়ে দেয়।”(সূরা আন‘আম ৬:১১২)
সুতরাং মুনাফিকরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অথবা অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যখন ঈমানের কথা বলা দরকার তখন ঈমানের কথা বলে আর যখন কুফরী করা প্রযোজন হবে তখন কুফরী করে।
(إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ)
‘নিশ্চয়ই আমরা তো শুধু ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে থাকি’অর্থাৎ মুনাফিকরা তাদের শয়তান সাথীদের বলে: আমরা মু’মিনদের সাথে ঈমানের কথা বলে ঠাট্টা করি। মু’মিনদের সাথে ঠাট্টার বদলাস্বরূপ আল্লাহ তা‘আলাও তাদের সাথে ঠাট্টা করেন। আল্লাহ তা‘আলার ঠাট্টা করা হল: তারা যে দুর্ভাগা ও খারাপ অবস্থায় আছে তা তাদের কাছে চাক্যচিক্য করে তুলে ধরেছেন, ফলে তাদের ধারণা যে তারা মু’মিনদের শামিল। আবার কিয়ামতের দিন তাদের সাথে ঠাট্টা করবেন এভাবে যে, মু’মিনদের মত তাদেরকেও পথ চলার জন্য বাহ্যিক নূর দেবেন কিন্তু যখন পথ চলতে শুরু করবে তখন তাদের নূর নিভে যাবে, ফলে অন্ধকারে নিরাশ হয়ে পড়ে থাকবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ یَقُوْلُ الْمُنٰفِقُوْنَ وَالْمُنٰفِقٰتُ لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوا انْظُرُوْنَا نَقْتَبِسْ مِنْ نُّوْرِکُمْﺆ قِیْلَ ارْجِعُوْا وَرَا۬ءَکُمْ فَالْتَمِسُوْا نُوْرًاﺚ فَضُرِبَ بَیْنَھُمْ بِسُوْرٍ لَّھ۫ بَابٌﺚ بَاطِنُھ۫ فِیْھِ الرَّحْمَةُ وَظَاھِرُھ۫ مِنْ قِبَلِھِ الْعَذَابُ)
“সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী মু’মিনদেরকে বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর, যাতে আমরা তোমাদের নূর হতে কিছু গ্রহণ করতে পারি। বলা হবেঃ তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যাও ও আলোর সন্ধান কর। অতঃপর উভয়ের মাঝামাঝি স্থাপিত হবে একটি প্রাচীর। সেখানে একটি দরজা থাকবে, যার অভ্যন্তরে রহমত এবং বহির্ভাগে আযাব।”(সূরা হাদীদ ৫৭:১৩)
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন:
‘‘المكر و الخداع والسخرية
‘‘ অর্থাৎ ষড়যন্ত্র করা, ধোঁকা দেয়া ও ঠাট্টা করা ইত্যাদি স্বভাবসমূহ বিনা কারণে আল্লাহ তা‘আলার শানে ব্যবহার করা সমীচীন নয়।
তবে শাস্তি ও বদলাস্বরূপ ব্যবহৃত হলে কোন নিষেধ নেই। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) মূলতঃ কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলার জন্য ঐ জাতীয় শব্দগুলো ব্যবহার হয়েছে শাস্তি ও প্রতিফল প্রদানের ক্ষেত্রে। অতএব ঐ স্বভাবগুলো আল্লাহ তা‘আলার জন্য ব্যবহার হলে মাখলুকের ন্যায় ধারণা করা বৈধ হবে না।
(وَيَمُدُّهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ)
‘তাদেরকে (তাদের) নিজেদের অবাধ্যতার মধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে ফেরার জন্য ঢিল দেন’ইবনু আব্বাস, ইবনু মাসউদ (রাঃ) ও কতক সাহাবী হতে বর্ণিত তারা বলেন: يمدهم এর অর্থ হচ্ছে يملي عليهم অর্থাৎ তাদেরকে অবকাশ দেন। মুজাহিদ বলেন: يمدهم এর অর্থ বৃদ্ধি করে দেয়া। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَیَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّھُمْ بِھ۪ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِیْنَﮆﺫ نُسَارِعُ لَھُمْ فِی الْخَیْرٰتِﺚ بَلْ لَّا یَشْعُرُوْنَ)
“তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্যস্বরূপ যে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দান করি, তা দ্বারা তাদের জন্য সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, বরং তারা বুঝে না।”(সূরা মু’মিনুন ২৩:৫৫-৫৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ)
“এমনভাবে ক্রমে ক্রমে তাদেরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারবে না।”(সূরা আ‘রাফ ৭:১৮২)
কেউ কেউ বলেছেন: যখনই তারা নতুন নতুন পাপকাজ করেছে আল্লাহ তা‘আলা তখনই তাদের দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্য আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে তা ছিল নেয়ামত; প্রকৃতপক্ষে তা ছিল শাস্তি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُکِّرُوْا بِھ۪ فَتَحْنَا عَلَیْھِمْ اَبْوَابَ کُلِّ شَیْءٍﺚ حثج اِذَا فَرِحُوْا بِمَآ اُوْتُوْٓا اَخَذْنٰھُمْ بَغْتَةً فَاِذَا ھُمْ مُّبْلِسُوْنَ)
“তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হল তখন আমি তাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম; অবশেষে তাদেরকে যা দেয়া হল যখন তারা তাতে উল্লসিত হল, অতঃপর হঠাৎ তাদেরকে ধরলাম; ফলে তখনি তারা নিরাশ হল।”(সূরা আন‘আম ৬:৪৪)
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন: সঠিক কথা হল তাদের ঔদ্ধত্যতার অবকাশ দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَنُقَلِّبُ اَفْئِدَتَھُمْ وَاَبْصَارَھُمْ کَمَا لَمْ یُؤْمِنُوْا بِھ۪ٓ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّنَذَرُھُمْ فِیْ طُغْیَانِھِمْ یَعْمَھُوْنَ)
“তারা যেমন প্রথমবারে তাতে ঈমান আনেনি আমিও তাদের মনোভাবের ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে দেব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে দেব।”(সূরা আন‘আম ৬:১১০)
ইবনু আব্বাস (রাঃ), কাতাদাহ, মুজাহিদ, আবুল আলিয়া (রহঃ) প্রমুখ বলেন:
(فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ)
এর অর্থ হচ্ছে তারা তাদের কুফরীতে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, হীনতায় উদভ্রান্ত। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/১৪০)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুনাফিকরা নিজেদের ঘৃণ্য চরিত্র চরিতার্থ করার জন্য দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করে, সুতরাং তারা কখনও ঈমানদার নয় প্রকৃতপক্ষে তারা মিথ্যুক।
২. আল্লাহ তা‘আলা বে-ঈমানদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে কুফরীর অবকাশ প্রদান করেন তাদের পরকালীন শাস্তি আরো বৃদ্ধি করার জন্য।
৩. মানুষ শয়তানরা জিন শয়তান থেকে অধিক ক্ষতিকর, মুনাফিকরাই মানুষ শয়তান।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings