Surah Al Baqarah Tafseer

Surah
Juz
Page
1
Al-Fatihah
The Opener
001
2
Al-Baqarah
The Cow
002
3
Ali 'Imran
Family of Imran
003
4
An-Nisa
The Women
004
5
Al-Ma'idah
The Table Spread
005
6
Al-An'am
The Cattle
006
7
Al-A'raf
The Heights
007
8
Al-Anfal
The Spoils of War
008
9
At-Tawbah
The Repentance
009
10
Yunus
Jonah
010
11
Hud
Hud
011
12
Yusuf
Joseph
012
13
Ar-Ra'd
The Thunder
013
14
Ibrahim
Abraham
014
15
Al-Hijr
The Rocky Tract
015
16
An-Nahl
The Bee
016
17
Al-Isra
The Night Journey
017
18
Al-Kahf
The Cave
018
19
Maryam
Mary
019
20
Taha
Ta-Ha
020
21
Al-Anbya
The Prophets
021
22
Al-Hajj
The Pilgrimage
022
23
Al-Mu'minun
The Believers
023
24
An-Nur
The Light
024
25
Al-Furqan
The Criterion
025
26
Ash-Shu'ara
The Poets
026
27
An-Naml
The Ant
027
28
Al-Qasas
The Stories
028
29
Al-'Ankabut
The Spider
029
30
Ar-Rum
The Romans
030
31
Luqman
Luqman
031
32
As-Sajdah
The Prostration
032
33
Al-Ahzab
The Combined Forces
033
34
Saba
Sheba
034
35
Fatir
Originator
035
36
Ya-Sin
Ya Sin
036
37
As-Saffat
Those who set the Ranks
037
38
Sad
The Letter "Saad"
038
39
Az-Zumar
The Troops
039
40
Ghafir
The Forgiver
040
41
Fussilat
Explained in Detail
041
42
Ash-Shuraa
The Consultation
042
43
Az-Zukhruf
The Ornaments of Gold
043
44
Ad-Dukhan
The Smoke
044
45
Al-Jathiyah
The Crouching
045
46
Al-Ahqaf
The Wind-Curved Sandhills
046
47
Muhammad
Muhammad
047
48
Al-Fath
The Victory
048
49
Al-Hujurat
The Rooms
049
50
Qaf
The Letter "Qaf"
050
51
Adh-Dhariyat
The Winnowing Winds
051
52
At-Tur
The Mount
052
53
An-Najm
The Star
053
54
Al-Qamar
The Moon
054
55
Ar-Rahman
The Beneficent
055
56
Al-Waqi'ah
The Inevitable
056
57
Al-Hadid
The Iron
057
58
Al-Mujadila
The Pleading Woman
058
59
Al-Hashr
The Exile
059
60
Al-Mumtahanah
She that is to be examined
060
61
As-Saf
The Ranks
061
62
Al-Jumu'ah
The Congregation, Friday
062
63
Al-Munafiqun
The Hypocrites
063
64
At-Taghabun
The Mutual Disillusion
064
65
At-Talaq
The Divorce
065
66
At-Tahrim
The Prohibition
066
67
Al-Mulk
The Sovereignty
067
68
Al-Qalam
The Pen
068
69
Al-Haqqah
The Reality
069
70
Al-Ma'arij
The Ascending Stairways
070
71
Nuh
Noah
071
72
Al-Jinn
The Jinn
072
73
Al-Muzzammil
The Enshrouded One
073
74
Al-Muddaththir
The Cloaked One
074
75
Al-Qiyamah
The Resurrection
075
76
Al-Insan
The Man
076
77
Al-Mursalat
The Emissaries
077
78
An-Naba
The Tidings
078
79
An-Nazi'at
Those who drag forth
079
80
Abasa
He Frowned
080
81
At-Takwir
The Overthrowing
081
82
Al-Infitar
The Cleaving
082
83
Al-Mutaffifin
The Defrauding
083
84
Al-Inshiqaq
The Sundering
084
85
Al-Buruj
The Mansions of the Stars
085
86
At-Tariq
The Nightcommer
086
87
Al-A'la
The Most High
087
88
Al-Ghashiyah
The Overwhelming
088
89
Al-Fajr
The Dawn
089
90
Al-Balad
The City
090
91
Ash-Shams
The Sun
091
92
Al-Layl
The Night
092
93
Ad-Duhaa
The Morning Hours
093
94
Ash-Sharh
The Relief
094
95
At-Tin
The Fig
095
96
Al-'Alaq
The Clot
096
97
Al-Qadr
The Power
097
98
Al-Bayyinah
The Clear Proof
098
99
Az-Zalzalah
The Earthquake
099
100
Al-'Adiyat
The Courser
100
101
Al-Qari'ah
The Calamity
101
102
At-Takathur
The Rivalry in world increase
102
103
Al-'Asr
The Declining Day
103
104
Al-Humazah
The Traducer
104
105
Al-Fil
The Elephant
105
106
Quraysh
Quraysh
106
107
Al-Ma'un
The Small kindnesses
107
108
Al-Kawthar
The Abundance
108
109
Al-Kafirun
The Disbelievers
109
110
An-Nasr
The Divine Support
110
111
Al-Masad
The Palm Fiber
111
112
Al-Ikhlas
The Sincerity
112
113
Al-Falaq
The Daybreak
113
114
An-Nas
Mankind
114

Al-Baqarah : 125

2:125
وَإِذْجَعَلْنَاٱلْبَيْتَمَثَابَةًلِّلنَّاسِوَأَمْنًاوَٱتَّخِذُوا۟مِنمَّقَامِإِبْرَٰهِۦمَمُصَلًّىوَعَهِدْنَآإِلَىٰٓإِبْرَٰهِۦمَوَإِسْمَٰعِيلَأَنطَهِّرَابَيْتِىَلِلطَّآئِفِينَوَٱلْعَٰكِفِينَوَٱلرُّكَّعِٱلسُّجُودِ ١٢٥

Saheeh International

And [mention] when We made the House a place of return for the people and [a place of] security. And take, [O believers], from the standing place of Abraham a place of prayer. And We charged Abraham and Ishmael, [saying], "Purify My House for those who perform Tawaf and those who are staying [there] for worship and those who bow and prostrate [in prayer]."

Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)

ওটা প্রথম আল্লাহর ঘরঃ (আরবি)-এর ভাবার্থ হচ্ছে বার বার আগমন করা। হজ্বব্রত পালন করে বাড়ী ফিরে গেলেও অন্তর তার সাথে লেগেই থাকে। প্রত্যেক জায়গা হতে লোক দলে দলে এ ঘরের দিকে এসে থাকে। এটাই একত্রিত হবার স্থান, অর্থাৎ সবারই মিলন কেন্দ্র। এটা নিরাপদ জায়গা। এখানে অস্ত্র শস্ত্র উঠানো হয় না। অজ্ঞতার যুগেও এর আশে পাশে লুটতরাজ হতো বটে; কিন্তু এখানে নিরাপত্তা বিরাজ করতো। কাউকে কেউ গালিও দিত না। এ স্থান সদা বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ থেকেছে। সৎ আত্মাগুলো সদা এর দিকে উৎসুক নেত্রে চেয়ে থাকে। প্রতি বছর পরিদর্শন করলেও এর প্রতি লোকের আগ্রহ থেকেই যায়। এটা হযরত ইবরাহীমে (আঃ)-এর প্রার্থনারই ফল। তিনি আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা জানিয়েছিলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি জনগণের অন্তর ওদিকে ঝুঁকিয়ে দিন।' (১৪:৩৭) এখানে কেউ তার ভ্রাতার হন্তাকে দেখলেও নীরব থাকে। সুরা-ই-মায়েদার মধ্যে রয়েছে যে, এটা মানুষের অবস্থান স্থল। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, মানুষ যদি হজ্ব করা ছেড়ে দেয় তবে আকাশকে পৃথিবীর উপর নিক্ষেপ করা হবে। এ ঘরের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য করলে এর প্রথম নির্মাতা হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর কথা স্মরণ হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ যখন আমি ইবরাহীম (আঃ)-এর জন্যে বায়তুল্লাহ শরীফের স্থান ঠিক করে দিলাম, (এবং বলেছিলাম) আমার সাথে কাউকেও অংশীদার স্থাপন করবে।' (২২ ২৬) অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেন (আরবি)

অর্থাৎ-আল্লাহ তা'আলার প্রথম ঘর রয়েছে মক্কায়, যা বরকতময় ও সারা বিশ্বের হিদায়াত স্বরূপ। তাতে কতকগুলো প্রকাশ্য নিদর্শন রয়েছে যেমন, মাকামে ইবরাহীম (আঃ), যে কেউ তাতে প্রবেশ করবে সে নিরাপত্তা লাভ করবে।' (৩:৯৬) মাকামে ইবরাহীম বলতে সম্পূর্ণ বায়তুল্লাহ শরীফও বুঝায় বা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর বিশিষ্ট স্থানও বুঝায়। আবার হজ্বের সমুদয় করণীয় কাজের স্থানকেও বুঝায়। যেমন-আরাফাত, মাশআরে হারাম, মিনা, পাথর নিক্ষেপ, সাফা-মারওয়ার তওয়াফ ইত্যাদি। মাকামে ইবরাহীম প্রকৃতপক্ষে ঐ পাথরটি যা হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর সহধর্মিনী হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর মান কার্য সম্পাদনের জন্যে তাঁর পায়ের নীচে রেখেছিলেন। কিন্তু হযরত সাঈদ বিন যুবাইর (রঃ) বলেন যে, এটা ভুল কথা। প্রকৃত পক্ষে এটা ঐ প্রস্তর যার উপরে দাড়িয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ) কাবা ঘর নির্মাণ করতেন। হযরত জাবির (রাঃ)-এর একটি সুদীর্ঘ হাদীসে রয়েছে যে, যখন নবী (সঃ) তওয়াফ করেন তখন হযরত উমার (রাঃ) মাকামে ইবরাহীমের (আঃ) দিকে ইঙ্গিত করে বলেন ‘এটাই কি আমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর মাকাম?' রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন- হাঁ'। তিনি বলেনঃ তাহলে আমরা এটাকে কিবলাহ বানিয়ে নেই না কেন? তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত উমারের (রাঃ) প্রশ্নের অল্প দিন পরেই এ নির্দেশ অবতীর্ণ হয়। অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, মক্কা বিজয়ের দিন মাকামে ইবরাহীমের (আঃ) পাথরের দিকে ইঙ্গিত করে হযরত উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটাই কি মাকামে ইবরাহীম যাকে কিবলাহ্ বানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ হাঁ এটাই।

সহীহ বুখারী শরীফের মধ্যে হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) বলেনঃ “তিনটি বিষয়ে আমি আমার প্রভুর আনুকূল্য স্বীকার করেছি, অথবা বলেন- তিনটি বিষয়ে আমার প্রভু আমার আনুকূল্য করেছেন অর্থাৎ আল্লাহ যা চেয়েছিলেন তাই তাঁর মুখ দিয়ে বের হয়েছিল। হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম যে, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমরা মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থান করে নিতাম! তখন (আরবি) (২:১২৫) অবতীর্ণ হয়। আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! সৎ ও অসৎ সবাই আপনার নিকট এসে থাকে, সুতরাং যদি আপনি মু'মিনদের জননীগণকে নিবী (সঃ)-এর সহধর্মিনীগণকে] পর্দার নির্দেশ দিতেন! তখন পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়। যখন আমি অবগত হই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর কোনও কোনও স্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন, আমি তখন তাদের নিকট গিয়ে বলি- যদি আপনারা বিরত না হন (রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে দুঃখ দেয়া হতে] তবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবীকে (সঃ) আপনাদের চেয়ে উত্তম স্ত্রী প্রদান করবেন। তখন মহান আল্লাহ নিম্নের আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ যদি মুহাম্মদ (সঃ) তোমাদেরকে পরিত্যাগ করে তবে অতি সত্বরই আল্লাহ তা'আলা তাকে তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী দান করবেন।' (৬৬:৫) এ হাদীসটির বহু ইসনাদ রয়েছে এবং বহু কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। একটি বর্ণনায় বদরের বন্দীদের ব্যাপারেও হযরত উমারের (রাঃ) আনুকূল্যের কথা বর্ণিত আছে। তিনি বলেছিলেন যে, বন্দীদের নিকট হতে মুক্তিপণ না নিয়ে বরং তাদেরকে হত্যা করা হোক। আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছাও তাই ছিল। হযরত উমার (রাঃ) বলেন যে, আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সালুল নামক মুনাফিক যখন মারা যায় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার জানাযার নামায আদায় করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। তখন আমি বলি আপনি কি এই মুনাফিক কাফিরের জানাযার নামায আদায় করবেন? তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে ধমক দিলে আল্লাহ তা'আলা নিম্নের আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ (আরবি) অর্থাৎ তাদের মধ্যে যে মৃত্যু বরণ করেছে তুমি কখনও তার জন্যে নামায পড়বে না এবং তার সমাধি পার্শ্বে দাঁড়াবে না। (৯:৮৪)

হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কাবা শরীফ সদর্প পদক্ষেপে তিনবার প্রদক্ষিণ করেন এবং চারবার স্বাভাবিক পদক্ষেপে প্রদক্ষিণ করেন। অতঃপর মাকামে ইব্রাহীমের (আঃ) পিছনে এসে দু’রাকায়াত নামায আদায় করেন এবং (আরবি) পাঠ করেন।' হযরত জাবিরের (রাঃ) হাদীসে রয়েছে রাসূলুল্লাহ (সঃ) মাকামে ইব্রাহীমকে (আঃ) তাঁর ও বায়তুল্লাহ শরীফের মধ্যে করেছিলেন। এ হাদীসসমূহের দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, মাকামে ইব্রাহীমের (আঃ) ভাবার্থ ঐ পাথরটি যার উপর দাঁড়িয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ) কা'বা ঘর নির্মাণ করতেন। হযরত ইসমাঈল (আঃ) তাঁকে পাথর এনে দিতেন এবং তিনি কা'বা ঘরের ভিত্তি স্থাপন করে যেতেন। যেখানে প্রাচীর উঁচু করার প্রয়োজন হতো সেখানে পাথরটি সরিয়ে নিয়ে যেতেন।এভাবে কা'বার প্রাচীর গাঁথার কাজ সমাপ্ত করেন। এর পূর্ণ বিবরণ ইনশাআল্লাহ হযরত ইবরাহীমের (আঃ) ঘটনায় আসবে। ঐ পাথরে হ্যরত ইব্রাহীমের (আঃ) পদদ্বয়ের চিহ্ন পরিস্ফুট হয়েছিল। আরবের অজ্ঞতার যুগের লোকেরা তা দেখেছিল। আবু তালিব তার প্রশংসাসূচক কবিতায় বলেছিলেন ? (আরবি)

অর্থাৎ ‘ঐ পাথরের উপর হযরত ইব্রাহীমের (আঃ) পদদ্বয়ের চিহ্ন নতুন হয়ে রয়েছে, পদদ্বয় জুতো শূন্য ছিল। হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেনঃ “আমি মাকামে ইবরাহীমের (আঃ) উপর হযরত খলীলুল্লাহর (আঃ) পায়ের অঙ্গুলির ও পায়ের পাতার চিহ্ন দেখেছিলাম। অতঃপর জনগণের স্পর্শের কারণে তা মুছে গেছে। হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, বরকত লাভের উদ্দেশ্যে মাকামে ইবুরাহীমের (আঃ) দিকে মুখ করে নামায পড়ার নির্দেশ রয়েছে, তাকে স্পর্শ করার নির্দেশ নেই। এ উম্মতের লোকেরাও পূর্বের উম্মতের ন্যায় আল্লাহর নির্দেশ ছাড়াই কতকগুলো কাজ নিজেদের উপর ফর করে নিয়েছে, যা পরিণামে তাদের ক্ষতির কারণ। হবে। মানুষের স্পর্শের কারণেই ঐ পাথরের পদ চিহ্ন হারিয়ে গেছে।

এই মাকামে ইবরাহীম পূর্বে কাবার প্রাচীরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। কাবার দরজার দিকে হাজরে আসওয়াদ’র পার্শ্বে দরজা দিয়ে যেতে ডান দিকে একটি স্থায়ী জায়গায় বিদ্যমান ছিল যা আজও লোকের জানা আছে। খলীলুল্লাহ (আঃ) হয়তো বা ওটাকে এখানেই রেখেছিলেন কিংবা বাইতুল্লাহ বানানো অবস্থায় শেষ অংশ হয়তো এটাই নির্মাণ করে থাকবেন এবং পাথরটি এখানেই থেকে গেছে। হযরত উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) স্বীয় খিলাফতের যুগে ওটাকে পিছনে সরিয়ে দেন। এর প্রমাণ রূপে বহু বর্ণনা রয়েছে। অতঃপর একবার বন্যার পানিতে এ পাথরটি এখান হতেও সরে গিয়েছিল। দ্বিতীয় খলিফা পুনরায় একে পূর্বস্থানে রেখে দেন। হযরত সুফইয়ান (রঃ) বলেনঃ “আমার জানা নেই যে, এটাকে মূল স্থান হতে সরানো হয়েছে এবং এর পূর্বে কা'বার প্রাচীর হতে কত দূরে ছিল।” একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ পাথরটি তার মূল স্থান হতে সরিয়ে ওখানে রেখেছিলেন যেখানে এখন রয়েছে। কিন্তু এ বর্ণনাটি মুরসাল। সঠিক কথা এই যে, হযরত উমার (রাঃ) এটা পিছনে রেখেছিলেন।

এখানে (আরবি)-এর অর্থ হচ্ছে নির্দেশ। অর্থাৎ আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে নির্দেশ দিয়েছি।' পবিত্র রেখো’ অর্থাৎ কা'বা শরীফকে ময়লা, বিষ্ঠা এবং জঘন্য জিনিস হতে পবিত্র রেখো। (আরবি)-এর (আরবি) যদি (আরবি) দ্বারা হয় তবে অর্থ দাঁড়াবে ‘আমি ওয়াহী অবতীর্ণ করেছি এবং প্রথমেই বলে দিয়েছি যে, তোমরা উভয়ে ‘বায়তুল্লাহূকে প্রতিমা থেকে পবিত্র রাখবে, তথায় আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত হতে দেবে না, বাজে কাজ,অপ্রয়োজনীয় ও মিথ্যে কথা, শিরক , কুফর হাসি রহস্য ইত্যাদি হতে ওকে রক্ষা করবে।' শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে প্রদক্ষিণকারী। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে ‘বাহির হতে আগমনকারী’। এ হিসেবে (আরবি) শব্দের অর্থ হবে মক্কার অধিবাসী।' হযরত সাবিত (রঃ) বলেনঃ “আমরা হযরত আবদুল্লাহ বিন উবাইদ বিন উমাইর (রঃ) কে বলি যে, আমাদের কর্তব্য হবে বাদশাহুকে এ পরামর্শ দেয়া, তিনি যেন জনগণকে বায়তুল্লাহ শরীফে শয়ন করতে নিষেধ করে দেন। কেননা,এমতাবস্থায় অপবিত্র হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। রয়েছে, এবং এরও সম্ভাবনা আছে যে, তারা পরস্পরে বাজে কথা বলতে আরম্ভ করে দেয়। তখন তিনি বলেনঃ এরূপ করো না। কেননা, হযরত ইবনে উমার (রাঃ) তাদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ তারা ওরই অধিবাসী।' একটি হাদীসে রয়েছে যে,হযরত উমার ফারূকের (রাঃ) ছেলে হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) মসজিদে নববীতে (সঃ) শুয়ে থাকতেন, এবং তিনি যুবকও কুমার ছিলেন (আরবি) দ্বারা নামাযীদেরকে বুঝানো হয়েছে। এটা পবিত্র রাখার নির্দেশ দেয়ার কারণ এই যে, তখনও মূর্তি পূজা চালু ছিল। বায়তুল্লাহর নামায উত্তম কি তওয়াফ উত্তম এ বিষয়ে ধর্ম শাস্ত্রবিদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম মালিকের (রঃ) মতে বাইরের লোকদের জন্যে তওয়াফ উত্তম এবং জামহুরের মতে প্রত্যেকের জন্যে নামায উত্তম। তাফসীর এর ব্যাখ্যার জায়গা নয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মুশরিকদেরকে জানিয়ে দেয়া এবং তাদের দাবী খণ্ডন করা যে, বায়তুল্লাহ' তো খাস করে আল্লাহ তাআলার ইবাদতের জন্যেই নির্মিত হয়েছে। ওর মধ্যে অন্যদের পূজা করা এবং খাটি আল্লাহর পূজারীদেরকে ঐ ঘরে ইবাদত করা হতে বিরত রাখা সরাসরি অন্যায় ও আবচারপূণ কাজ। এজন্যেই কুরআন মাজীদে অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ এরূপ অত্যাচারীদেরকে আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো। এভাবে মুশরিকদের দাবীকে স্পষ্টভাবে খণ্ডন করার সাথে সাথে ইয়াহূদী ও খ্রীষ্টানদের দাবীও খণ্ডন করা হয়ে গেল। তারা যখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর মর্যাদা শ্রেষ্ঠত্ব ও নবুওয়াতের সমর্থক, তারা যখন জানে ও স্বীকার করে যে, এই মর্যাদাপূর্ণ ঘর এসব পবিত্র হস্ত দ্বারাই নির্মিত হয়েছে, তারা যখন একথারও সমর্থক যে, এ ঘরটি শুধুমাত্র নামায, তওয়াফ, প্রার্থনা এবং আল্লাহর উপাসনার জন্যেই নির্মিত হয়েছে, হজ্ব, উমরাহ, ইতিকাফ ইত্যাদির জন্যে বিশিষ্ট করা হয়েছে, তখন এই নবীগণের অনুসরণ দাবী সত্ত্বেও কেন তারা হজ্ব ও উমরা করা হতে বিরত রয়েছে? বায়তুল্লাহ শরীফে তারা উপস্থিত হয় না কেন? বরং স্বয়ং হযরত মূসা (আঃ) তো এই ঘরের হজ্ব করেছেন, যেমন হাদীসে পরিষ্কারভাবে বিদ্যমান রয়েছে। যেমন কুরআন মাজীদের অন্য জায়গায় আছে (আরবি)

অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা মসজিদগুলো উঁচু করার অনুমতি দিয়েছেন। ওর মধ্যে তাঁর নামের যিক্র করা হবে, ওর মধ্যে সকাল-সন্ধায় তার সৎ বান্দাগণ তাঁর নামের তাসবিহু পাঠ করে থাকে। (২৪:৩৬) হাদীস শরীফে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ মসজিদসমূহ যে কাজের জন্যে তা ঐ জন্যেই নির্মিত হয়েছে। আরও বহু হাদীসে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মসজিদসমূহ পবিত্র রাখার নির্দেশ রয়েছে।

বায়তুল্লাহ শরীফের নির্মাণ ও এর সর্বপ্রথম নির্মাতা

কেউ কেউ বলেন যে, কাবা শরীফ ফেরেশতাগণ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু এ কথাটি নির্ভরযোগ্য নয়। কেউ কেউ বলেন যে, হযরত আদম (আঃ) সর্বপ্রথম পাঁচটি পর্বত দ্বারা কা'বা শরীফ নির্মাণ করেন। পর্বত পাঁচটি হচ্ছেঃ (১) হেরা, (২) তুরে সাইনা, (৩) ভূরে যীতা, (৪) জাবাল-ই-লেবানন এবং (৫) জুদী। কিন্তু একথাটিও সঠিক নয়। কেউ বলেন যে, হযরত শীষ (আঃ) সর্বপ্রথম নির্মাণ করেন। কিন্তু এটাও আহলে কিতাবের কথা। হাদীস শরীফে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) মক্কাকে হারাম বানিয়েছিলেন। আমি মদীনাকে হারাম করলাম। এর শিকার খাওয়া হবে না, এখানকার বৃক্ষ কর্তন করা হবে না, এখানে অস্ত্র শস্ত্র উঠানো নিষিদ্ধ।

সহীহ মুসলিম শরীফে একটি হাদীস রয়েছে যে, জনগণ টাটকা খেজুর নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে হাযির হলে তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা জানিয়ে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের খেজুরে, আমাদের শহরে এবং আমাদের ওজনে বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! ইব্রাহীম (আঃ) আপনার বান্দা, আপনার দোস্ত এবং আপনার রাসূল ছিলেন। আমিও আপনার বান্দা ও আপনার রাসূল। তিনি আপনার নিকট মক্কার জন্যে প্রার্থনা জানিয়েছিলেন। আমিও আপনার নিকট মদীনার জন্যে প্রার্থনা জানাচ্ছি। যেমন তিনি মক্কার জন্যে প্রার্থনা জানিয়েছিলেন, বরং এরকমই আরও একটি। অতঃপর কোন ছোট ছেলেকে ডেকে ঐ খেজুর তাকে দিয়ে দিতেন। হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) একবার আবূ তালহা (রাঃ) কে বলেনঃ ‘তোমাদের ছোট ছোট বালকদের মধ্যে একটি বালককে আমার খিদমতের জন্যে অনুসন্ধান কর। আবূ আলহা (রাঃ) আমাকেই নিয়ে যান। তখন আমি বিদেশে ও বাড়ীতে তাঁর খিদমতেই অবস্থান করতে থাকি। একদা তিনি বিদেশ হতে আসছিলেন। সম্মুখে উহুদ পর্বত দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বলেনঃ ‘এ পর্বত আমাকে ভালবাসে এবং আমিও এ পর্বতকে ভালবাসি'। মদীনা চোখের সামনে পড়লে তিনি বলেনঃ “আল্লাহ! আমি এর দু'ধারের মধ্যবর্তী স্থানকে ‘হারাম’ রূপে নির্ধারণ করছি, যেমন হযরত ইবরাহীম (আঃ) মক্কাকে হারাম’ রূপে নির্ধারণ করেছিলেন। হে আল্লাহ! এর মুদ্দ’, ‘সা’ এবং ওজনে বরকত দান করুন।

হযরত আনাস (রাঃ) হতেই আর একটি হাদীস বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ হে আল্লাহ! মক্কায় আপনি যে বরকত দান করেছেন তার দ্বিগুণ বরকত মদীনায় দান করুন। আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহ! ইবরাহীম (আঃ) মক্কাকে হারাম’ বানিয়েছিলেন, আমিও মদীনাকে হারাম’ বানালাম। এখানে কাউকেও হত্যা করা হবে না এবং চারা (পশুর খাদ্য ) ছাড়া বৃক্ষাদির পাতাও ঝরানো হবে না। এ বিষয়ের আরও বহু হাদীস রয়েছে যদ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, মক্কার মত মদীনাও হারাম শরীফ। এখানে এসব হাদীস বর্ণনা করায় আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মক্কা শরীফের মর্যাদা ও এখানকার নিরাপত্তার বর্ণনা দেয়া। কেউ কেউতো বলেন যে, প্রথম হতেই এটা মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ স্থান। আবার কেউ কেউ বলেন যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর আমল হতে এর মর্যাদা ও নিরাপত্তা সূচীত হয়। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই বেশী স্পষ্ট।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেনঃ 'যখন হতে আল্লাহ তা'আলা নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেন তখন থেকেই এই শহরকে মর্যাদাপূর্ণরূপে বানিয়েছেন। এখন কিয়ামত পর্যন্ত এর মর্যাদা অক্ষুন্নই থাকবে। এখানে যুদ্ধ বিগ্রহ কারও জন্যে বৈধ নয়। আমার জন্যেও শুধুমাত্র আজকের দিনে ক্ষণেকের জন্যে বৈধ ছিল। এর অবৈধতা রয়েই গেল। জেনে রেখো এর কাটা কাটা হবে না। এর শিকার তাড়া করা হবে না। এখানে কারও পতিত হারানো জিনিস উঠিয়ে নেয়া হবে না, কিন্তু যে ওটা (মালিকের নিকট ) পৌছিয়ে দেবে তার জন্যে জায়েযু। এর ঘাস কেটে নেয়া হবে না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি এ হাদীসটি খুত্বায় বর্ণনা করেছিলেন এবং হযরত আব্বাসের (রাঃ) প্রশ্নের কারণে তিনি ইযখার’ নামক ঘাস কাটার অনুমতি দিয়েছিলেন।

হযরত আমর বিন সাঈদ (রাঃ) যখন মক্কার দিকে সেনাবাহিনী প্রেরণ করছিলেন সেই সময়ে হযরত ইবনে শুরাইহ্ আদভী (রাঃ) তাকে বলেনঃ “হে আমীর! মক্কা বিজয়ের দিন অতি প্রত্যুষে রাসূলুল্লাহ (সঃ) যে খুত্ব দেন তা আমি নিজ কানে শুনেছি, মনে রেখেছি এবং সেই সময় আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)কে স্বচক্ষে দেখেছি- আল্লাহ তাআলার প্রশংসার পর তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তাআলাই মক্কাকে হারাম করেছেন, মানুষ করেনি। কোন মুমিনের জন্যে এখানে রক্ত প্রবাহিত করা এবং বৃক্ষাদি কেটে নেয়া বৈধ নয়। যদি কেউ আমার এই যুদ্ধকে প্রমাণরূপে গ্রহণ করতে চায় তবে তাকে বলবে যে, আমার জন্যে শুধুমাত্র আজকের দিন এই মুহূর্তের জন্যেই যুদ্ধ বৈধ ছিল। অতঃপর পুনরায় এ শহরের মর্যাদা ফিরে এসেছে যেমন কাল ছিল। সাবধান! তোমরা যারা উপস্থিত রয়েছ, তাদের নিকট অঅবশ্যই এ সংবাদ পৌঁছিয়ে দেবে যারা আজ এ সাধারণ জনসমাবেশে নেই। কিন্তু আমার এ হাদীসটি শুনে পরিষ্কারভাবে উত্তর দেনঃ ‘আমি তোমার চেয়ে এ হাদীসটি বেশী জানি। 'হারাম শরীফ অবাধ্য রক্ত পিপাসুকে এবং ধ্বংসকারীকে রক্ষা করে না।” (বুখারী ও মুসলিম)। কেউ যেন এ দুটো হাদীসকে পরস্পর বিরোধী মনে না করেন। এ দুটোর মধ্যে সাদৃশ্য এভাবে হবে যে, মক্কা প্রথম দিন হতেই মর্যাদাপূর্ণ তো ছিলই, কিন্তু হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সম্মান ও মর্যাদার কথা প্রচার করেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তো রাসূল তখন হতেই ছিলেন যখন হযরত আদম (আঃ) এর খামির প্রস্তুত হয়েছিল, বরং সেই সময় হতেই তার নাম শেষ নবী রূপে লিখিত ছিল। কিন্তু তথাপিও হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর নবুওয়াতের জন্যে আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা জানিয়ে বলেছিলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! তাদের মধ্যে হতেই একজন রাসূল তাদের মধ্যে প্রেরণ করুন। (২:১২৯) এ প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করেন এবং তকদীরে লিখিত ঐ কথা প্রকাশিত হয়। একটি হাদীসে রয়েছে যে, জনগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বলেন ? ‘আপনার নবুওয়াতের সূত্রের কথা কিছু আলোচনা করুন। তখন তিনি বলেনঃ ‘আমার পিতা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রার্থনা, হযরত ঈসা (আঃ)-এর সংবাদ এবং আমার মায়ের স্বপ্ন। তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, তার মধ্য হতে যেন একটি নূর বেরিয়ে গেল যা সিরিয়ার প্রাসাদগুলোকে আলোকিত করে দিলো এবং তা দৃষ্টিগোচর হতে থাকলো।

মক্কা ও মদীনার মধ্যে বেশী উত্তম কোনটি?

জামহুরের মতে মদীনার চেয়ে মক্কা বেশী উত্তম। ইমাম মালিক ও তাঁর অনুসারীদের মাযহাব অনুসারে মক্কা অপেক্ষা মদীনা বেশী উত্তম। এ দু'দলেরই প্রমাণাদি সত্বরই ইনশাআল্লাহ আমরা বর্ণনা করবো। হযরত ইবরাহীম (আঃ) প্রার্থনা করেছেনঃ “হে আল্লাহ! এই স্থানকে নিরাপদ শহর করে দিন।” অর্থাৎ এখানে অবস্থানকারীদেরকে ভীতি শূন্য রাখুন। আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ যে কেউ তার মধ্যে প্রবেশ করলো সে নিরাপদ হয়ে গেলো। (৩:৯৭) অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ তারা কি দেখে না যে, আমি হারাম’কে নিরাপত্তা দানকারী করেছি? ওর আশ পাশ হতে মানুষকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং এখানে তারা পূর্ণ নিরপত্তা লাভ করছে।' (২৯:৬৭) এ প্রকারের আরও বহু আয়াত রয়েছে এবং এ সম্পর্কীয় বহু হাদীসও উপরে বর্ণিত হয়েছে যে, মক্কা শরীফে যুদ্ধ বিগ্রহ হারাম। হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-আমি রাসূলুল্লাহ

(সঃ) কে বলতে শুনেছিঃ মক্কায় অস্ত্র শস্ত্র উঠাননা কারও জন্যে বৈধ নয়। (সহীহ মুসলিম)' তাঁর এ প্রার্থনা কাবা শরীফ নির্মাণের পূর্বে ছিল, এ জন্যেই বলেছেন, হে আল্লাহ! এই স্থানকে নিরাপত্তা দানকারী শহর বানিয়ে দিন। সূরা-ই- ইব্রাহীমের মধ্যে এ প্রার্থনাই এভাবে রয়েছেঃ (আরবি) (২:১২৬) সম্ভবতঃ এটা দ্বিতীয় বারের প্রার্থনা ছিল, যখন বায়তুল্লাহ শরীফ নির্মিত হয়ে যায় ও শহর বসে যায় এবং হযরত ইসহাক (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন, যিনি হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর তিন বছরের ছোট ছিলেন। এজন্যেই এ প্রার্থনার শেষে তার জন্ম লাভের জন্যেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলার কথা। কেউ কেউ এটাকেও প্রার্থনার অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

তখন ভাবার্থ হবে এইঃ কাফিরদেরকেও অল্প দিন শান্তিতে রাখুন, অতঃপর তাদেরকে শাস্তিতে জড়িত করে ফেলুন। আর একে আল্লাহ তা'আলার কালাম বললে ভাবার্থ হবে এই যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন তাঁর সন্তানাদির জন্যে ইমামতির প্রার্থনা জানালেন এবং অত্যাচারীদের বঞ্চিত হওয়ার ঘোষণা শুনলেন। ও বুঝতে পারলেন যে, তার পরে আগমনকারীদের মধ্যে অনেকে অবাধ্যও হবে, তখন তিনি ভয়ে শুধুমাত্র মুমিনদের জন্যেই আহার্যের প্রার্থনা জানালেন। কিন্তু আল্লাহ পাক জানিয়ে দিলেন যে, তিনি ইহলৌকিক সুখ সম্ভোগ কাফিরদেরকেও দেবেন। যেমন অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ আমি তোমার প্রভুর দান এদেরকেও দেবো এবং ওদেরকেও দেবো, তোমার প্রভুর দান কারও জন্যে নিষিদ্ধ নয়। (১৭:২০) অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “নিশ্চয় যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয় তারা মুক্তি পায় না, তারা দুনিয়ায় কিছুদিন লাভবান হলেও আমার নিকট যখন তারা ফিরে আসবে তখন আমি তাদেরকে কুফরীর প্রতিফল স্বরূপ কঠিন শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো।

অন্যস্থানে বলেনঃ “কাফিরদের কুফরী যেন তোমাকে দুঃখিত না করে, আমার নিকট তাদেরকে ফিরে আসতে হবে, অতঃপর যে কাজ তারা করেছে তার সংবাদ আমি তাদেরকে দেবো, নিশ্চয় আল্লাহ অন্তর্নিহিত বিষয়সমূহ পূর্ণ অবগত আছেন। আমি তাদেরকে সামান্য সুখ দেয়ার পর ভীষণ শাস্তির মধ্যে জড়িয়ে ফেলবো।” অন্যস্থানে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “যদি এটা না হতো যে, (প্রায়) সমস্ত মানুষ একই পথাবলম্বী (কাফির) হয়ে যাবে, তাহলে যারা দয়াময় (আল্লাহ)-এর সাথে কুফরী করে, আমি তাদের জন্য তাদের গৃহসমূহের ছাদ। রৌপ্যের করে দিতাম এবং সিঁড়িগুলোও (রৌপ্যের করে দিতাম), যার উপর দিয়ে তারা আরোহণ করে; এবং তাদের গৃহের দরজাগুলো ও আসনগুলোও (রৌপ্যের করে দিতাম), যার উপর তারা হেলান দিয়ে বসে আর (এসব) স্বর্ণের ও (করে দিতাম), এবং এগুলো শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের ক্ষণস্থায়ী ভোগ বিলাসের উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়, (শেষে সবই বিলীন হয়ে যাবে) এবং আখেরাত তোমার প্রভুর সমীপে মুত্তাকির জন্যে রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা আরও বলেছেন :অতঃপর আমি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির মধ্যে জড়িত করে ফেলবো এবং ওটা জঘন্য অবস্থান স্থল। অর্থাৎ তাদেরকে অস্থায়ী জগতে সুখে শান্তিতে রাখার পর ভীষণ শাস্তির দিকে টেনে আনবো। এবং এটা অত্যন্ত জঘন্য অবস্থান স্থল।' এর ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে দেখছেন এবং অবকাশ দিচ্ছেন, অতঃপর তিনি তাদেরকে কঠিনভাবে পাকড়াও করবেন। যেমন তিনি বলেছেন। (আরবি) অর্থাৎ বহু অত্যাচারী গ্রামবাসীকে আমি অবকাশ দিয়েছি, অতঃপর পাকড়াও করেছি, শেষে তো তাদেরকে আমারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (২২:৪৮)

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে যে, কষ্টদায়ক কথা শুনে আল্লাহ অপেক্ষা বেশী ধৈর্য ধারণকারী আর কেউই নেই। তারা তার সন্তানাদি সাব্যস্ত করছে অথচ তিনি তাদেরকে আহার্যও দিচ্ছেন এবং নিরাপত্তাও দান করেছেন। অন্য সহীহ হাদীসেও রয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা অত্যাচারীকে ঢিল দেন, তৎপর হঠাৎ তাদেরকে ধরে ফেলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেন- (আরবি)

অর্থাৎ তোমার প্রভুর পাকড়াও এরকমই যে, যখন তিনি কোন অত্যাচারী গ্রামবাসীকে পাকড়াও করেন, তখন নিশ্চয়ই তার পাকড়াও কঠিন যন্ত্রণাদায়ক। (১১:১০২) এই বাক্যকে হ্যরত ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রার্থনার অন্তর্ভুক্ত করার পঠন খুবই বিরল এবং তা সপ্ত পাঠকের পঠনের বিপরীত। রচনা। রীতিরও এটা উল্টো। কেননা (আরবি) ক্রিয়া পদের (আরবি) টি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তিত হচ্ছে, কিন্তু এ বিরল পঠনে এর কর্তা ও উক্তিকারী হযরত ইবরাহীমই (আঃ), হচ্ছেন এবং এটা বাক্যরীতির সম্পূর্ণ উল্টো (আরবি) শব্দটি এর বহুবচন (আরবি) এর অর্থ হচ্ছে থামের নিম্নতল এবং ভিত্তি। আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবীকে (সঃ) বলেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! তুমি তোমার কওমকে হযরত ইবরাহীমের (আঃ) ভিত্তির সংবাদ দিয়ে দাও।' একটি কিরআতে (আরবি)-এর পরে (আরবি) ও রয়েছে। ওরই প্রমাণ রূপে পরে (আরবি) শব্দটিও এসেছে।

আন্তরিক প্রার্থনা

হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও ইসমাঈল (আঃ) শুভ কাজে লিপ্ত রয়েছেন এবং তা গৃহীত হয় কি না এ ভয়ও তাঁদের রয়েছে। এ জন্যেই তারা মহান আল্লাহর নিকট এটা কবুল করার প্রার্থনা জানাচ্ছেন। হযরত অহীব বিন অরদ (রঃ) এ আয়াতটি পাঠ করে খুব ক্রন্দন করতেন এবং বলতেন :‘হায়! আল্লাহ তা'আলার প্রিয় বন্ধু এবং গৃহীত নবী হযরত ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর কাজ তাঁর হুকুমেই করছেন, তাঁর ঘর তাঁরই হুকুমে নির্মাণ করছেন, তথাপি ভয় করছেন যে, না জানি আল্লাহর নিকট এটা না মঞ্জুর হয়। মহান আল্লাহ মু'মিনদের অবস্থা এরকমই বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ তারা সৎ কার্যাবলী সম্পাদন করে এবং দান খয়রাত করে অথচ তাদের অন্তর আল্লাহর ভয়ে কম্পিত থাকে (এই ভয়ে যে, না-জানি আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় কি না!)' (২৩:৬০) যেমন সহীহ হাদীসে এসেছে, যা হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, অতি সত্বরই তা নিজ স্থানে আসছে। কোন কোন মুফাসির বলেছেন যে, ভিত্তি উত্তোলন করতেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) এবং প্রার্থনা করতেন হযরত ইসমাইল (আঃ)। কিন্তু সঠিক কথা এই যে, উভয়ই উভয় কাজে অংশীদার ছিলেন। সহীহ বুখারী শরীফের একটি বর্ণনা এবং অন্যান্য আরও কয়েকটি হাদীসও এ ঘটনা সম্পর্কে এখানে বর্ণনা করা যেতে পারে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, স্ত্রী লোকেরা কোমর বন্ধনী বাধার নিয়ম হযরত ইসমাঈলের (আঃ) মাতার নিকট হতেই শিখেছে। তিনি ওটা বেঁধে ছিলেন যাতে তার পদচিহ্ন মিটিয়ে যায়, ফলে যেন হযরত শারিয়া (রাঃ) তার পদচিহ্ন দেখতে না পান। হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁকে এবং তার কলিজার টুকরা একটি মাত্র সন্তান হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে নিয়ে বের হন। সেই সময় এই প্রাণপ্রিয় শিশু দুধ পান করতো। এখন যেখানে বায়তুল্লাহ শরীফ নির্মিত রয়েছে সে সময় তথায় একটি পাহাড় ছিল এবং বিজন মরুভূমি রূপে পড়েছিল। তখন তথায় কেউই বাস করতো না। এখানে মা ও শিশুকে বসিয়ে তাদের পার্শ্বে সামান্য খেজুর ও এক মশক পানি রেখে যখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) পিট ফিরিয়ে চলে যেতে আরম্ভ করেন, তখন হযরত হাজেরা (রাঃ) তাঁকে ডাক দিয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহর বন্ধু! এরকম ভীতিপ্রদ বিজন মরুভূমির মধ্যে যেখানে আমাদের কোন বন্ধু ও সাথী নেই, আমাদেরকে ফেলে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? কিন্তু হযরত ইবরাহীম (আঃ) কোন উত্তর দেননি, এমনকি ঐ দিকে ফিরেও তাকাননি। হযরত হাজেরা (রাঃ) বারবার বলার পরেও যখন তিনি কোন ক্ষেপ না করেন তখন তিনি বলেন, হে আল্লাহর প্রিয়! আমাদেরকে আপনি কার নিকট সমর্পণ করে গেলেন?' হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলেন, আল্লাহ তা'আলার নিকট।' তিনি বলেন, হে আল্লাহর দোস্ত! এটা কি আপনার উপর আল্লাহর নির্দেশ?' হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলেন, 'হা, আমার উপর আল্লাহ তাআলার এটাই নির্দেশ। একথা শুনে হযরত হাজেরা (রাঃ) সান্ত্বনা লাভ করেন এবং বলেন ? তাহলে আপনি যান। আল্লাহ আমাদেরকে কখনও ধ্বংস করবেন না। তাঁরই উপর আমরা নির্ভর করছি এবং তিনিই আমাদের আশ্রয়স্থল।' হযরত হাজেরা (রাঃ) ফিরে আসেন এবং স্বীয় প্রাণের মণি, চক্ষের জ্যোতি, আল্লাহর নবীর পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে ক্রোড়ে ধারণ করে ঐ জনহীন প্রান্তরে, সেই আল্লাহর জগতে বাধ্য ও নিরুপায় হয়ে বসে পড়েন। হযরত

ইবরাহীম (আঃ) যখন সানিয়া নামক স্থানে পৌঁছেন এবং অবগত হন যে, হযরত হাজেরা (রাঃ) পিছনে নেই এবং ওখান হতে এখন পর্যন্ত তার দৃষ্টিশক্তি কাজ করবে না, তখন তিনি বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে মুখ করে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করেন :“হে আমার প্রভু! আমার সন্তানাদিকে আপনার পবিত্র ঘরের পার্শ্বে একটি অনাবাদী ভূমিতে ছেড়ে এসেছি। যেন তারা নামায প্রতিষ্ঠিত করে, আপনি মানুষের অন্তর ওদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং ওদেরকে ফলের আহার্য দান করুন। সম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। হযরত ইবরাহীম (আঃ) তো প্রার্থনা করে আল্লাহ তাআলার নিদের্শ পালন করতঃ স্বীয় সহধর্মিনী ও ছেলেকে আল্লাহর নিকট সমর্পণ করে চলে যান, আর এদিকে হযরত হাজেরা (রাঃ) ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার সাথে শিশুকে নিয়েই মনে তৃপ্তি লাভ করছিলেন। ঐ অল্প খেজুর ও সামান্য পানি শেষ হয়ে গেল। এখন কাছে না আছে এক গ্রাস আহার্য বা না আছে এক ঢাকে পানি। নিজেও ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর এবং শিশুও ভুক ও তৃষ্ণায় ওষ্ঠাগত প্রাণ। এমন কি সেই নিস্পাপ নবী পুত্রের ফুলের ন্যায় চেহারা মলিন হতে থাকে। মা কখনও নিজের একাকিত্বের ও আশ্রয় হীনতার কথা চিন্তা করছিলেন, আবার কখনও নিজের একমাত্র অবুঝ শিশুর অবস্থা দুশ্চিন্তার সাথে লক্ষ্য করছিলেন এবং সহ্য করে চলছিলেন। এটা জানা ছিল যে, এরকম ভয়াবহ জঙ্গলের ভিতর দিয়ে মানুষের গমনাগমন অসম্ভব। বহু মাইল পর্যন্ত আবাদী ভূমির চিহ্নমাত্র নেই। খাবার তো দূরের কথা এক ফোঁটা পানিরও ব্যবস্থা হতে পারে না। তিনি উঠে চলে যান। নিকটবর্তী, সাফা পাহাড়ের উপর আরোহণ করেন এবং প্রান্তরের এ নিক্ষেপ করেন যে, কোন লোককে যেতে আসতে দেখা যায় কি না। কিন্তু দৃষ্টি নিরাশ হয়ে ফিরে আসে। সুতরাং তিনি সেই পাহাড় হতে নেমে পড়েন এবং অঞ্চল উঁচু করে মারওয়া পাহাড়ের দিকে দৌড়াতে আরম্ভ করেন। ওর উপর চড়েও চতুর্দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। কিন্তু কাউকে না দেখে পুনরায় সেখান হতে অবতরণ করেন। এভাবেই মধ্যবর্তী সামান্য অংশ দৌড়িয়ে অবশিষ্ট অংশ তাড়াতাড়ি অতিক্রম করেন। আবার সাফা পাহাড়ের উপর চড়েন। এভাবে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করেন, প্রত্যেক বার শিশুকে দেখেন যে, তার অবস্থা ক্রমে ক্রমেই মন্দের দিকে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, হাজীরা যে, ‘সাফা' ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়িয়ে থাকেন তার সূচনা এখান থেকেই হয়। সপ্তম বারে যখন হাজেরা (রাঃ) মারওয়ার উপর আসেন তখন একটা শব্দ তার কানে আসে। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তিনি এই শব্দের দিকে মনোযোগ দেন। আবার শব্দ তার কানে আসে এবং এবারে স্পষ্টভাবে শুনা যায়। সুতরাং তিনি শব্দের দিকে এগিয়ে যান এবং এখন যেখানে যমযম কূপ রয়েছে তথায় হযরত জিবরাঈল (আঃ) কে দেখতে পান। হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ আপনি কে? তিনি উত্তর দেনঃ আমি হাজেরা, হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ছেলের মা। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করেনঃ হযরত ইবরাহীম (আঃ) আপনাকে এই নির্জন মরুপ্রান্তরে কার নিকট সপর্দ করেছেন?' তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা'আলার নিকট। তখন ফেরেশতা বলেনঃ “তা হলে তিনিই যথেষ্ট। হযরত হাজেরা (রাঃ) বলেন, “হে অদৃশ্য ব্যক্তি! শব্দ তো আমি শুনলাম। এটা আমার কোন কাজে আসবে তো?'

যমযম্ কূপ

হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁর পায়ের গোড়ালি দিয়ে মাটির উপর ঘর্ষণ করা মাত্রই তথায় মাটি হতে একটি ঝরণা বইতে থাকে। হযরত হাজেরা (রাঃ) তার হাত দ্বারা পানি উঠিয়ে তার মশক ভর্তি করে নেন। পানি চতুর্দিকে ব্যাপ্ত হয়ে পড়বে এ চিন্তা করে ঝরণার চার দিকে মাটির বেষ্টনি দিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর মায়ের উপর সদয় হউন, যদি তিনি এভাবে পানি আটকিয়ে না রাখতেন তবে যম কূপের আকার বিশিষ্ট হতো না, বরং প্রবাহিত নদীর রূপ ধারণ করতো। তখন হযরত হাজেরা (রাঃ) নিজেও পানি পান করেন এবং শিশুকেও পান করিয়ে দেন। অতঃপর শিশুকে দুধ পান করাতে থাকেন। ফেরেশতা তাঁকে বলেছিলেন, 'আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আল্লাহ তা'আলা আপনাকে ধ্বংস করবেন মহান আল্লাহ এখানে এ ছেলে ও তার পিতার দ্বারা তাঁর একটা ঘর নির্মাণ করাবেন।' হযরত হাজেরা (রাঃ) এখানেই বাস করতে থাকেন, যম্ম্ কূপের পানি পান করেন আর শিশুর মাধ্যমে মনোরঞ্জন লাভ করেন। বর্ষাকালে বন্যার পানিতে চার দিকে প্লাবিত হয়ে যেতো। কিন্তু এই জায়গাটি উচু ছিল বলে পানি এ দিক ওদিক দিয়ে বয়ে যেতো এবং এ স্থানটি নিরাপদ থাকতো।

জনহীন উপত্যকায় ‘জারহাম' গোত্রের আগমন

কিছুদিন পর ঘটনাক্রমে ‘জারহাম’ গোত্রের লোক ‘কিদার’ পথে যাচ্ছিল। তারা মক্কা শরীফের নিম্নাংশে অবতরণ করে। একটি পানির পক্ষীর প্রতি তাদের দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হওয়ায় তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ এটা পানির পাখি এবং এখানে পানি ছিল না আমরা কয়েকবার এখান দিয়ে যাতায়াত করেছি। এটাতো শুষ্ক জঙ্গল ও জনহীন প্রান্তর। এখানে পানি কোথায়? তারা প্রকৃত ঘটনা জানবার জন্যে লোকে পাঠিয়ে দেয়। তারা ফিরে এসে সংবাদ দেয় যে, তথায় বহু পানি রয়েছে। তখন তারা সবাই চলে আসে এবং হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর মায়ের নিকট আরয করেঃ আপনি অনুমতি দিলে আমরাও এখানে অবস্থান করি। এটা পানির জায়গা।' তিনি বলেনঃ ‘হা, ঠিক আছে। আপনারা সাগ্রহে অবস্থান করুন। কিন্তু পানির উপর অধিকার আমারই থাকবে।' রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ ‘সঙ্গী সাথী জুটে যাক, হযরত হাজেরা (রাঃ) তো তাই চাচ্ছিলেন। সুতরাং এই যাত্রী দল এখানেই বাস করতে থাকে। হযরত ইসমাঈল (আঃ) বড় হন। ঐ সব লোকের সাথে তাঁর খুবই ভালুবাসা হয়। অবশেষে তিনি যৌবন প্রাপ্ত হন এবং তাদের মধ্যে তার বিয়েও অনুষ্ঠিত হয়। তাদের কাছে তিনি আরবী ভাষা শিখে নেন। হযরত হাজেরা (আঃ) এখানেই মৃত্যুবরণ করেন।

প্রিয় পুত্রের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ

মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর প্রিয় পুত্রের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে তথায় আগমন করেন। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে, তাঁর এ যাতায়াত বুরাকের (স্বর্গীয় বাহন) মাধ্যমে হতো। সিরিয়া হতে তিনি আসতেন এবং আবার ফিরে যেতেন। এখানে এসে তিনি দেখেন যে, হযরত ইসমাঈল (আঃ) বাড়িতে নেই। পুত্রবধূকে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘সে কোথায় রয়েছে? উত্তর আসেঃ তিনি পানাহারের খোঁজে বেরিয়েছেন। অর্থাৎ শিকারে গেছেন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমাদের অবস্থা কি?' সে বলেঃ ‘অবস্থা খারাপ, বড়ই দারিদ্র্য ও সংকীর্ণতার মধ্যে দিন যাপন করছি।' তিনি বলেনঃ * তোমার স্বামী বাড়ী আসলে তাকে আমার সালাম জানাবে এবং বলবে যে,সে যেন তার দরজার চৌকাঠ পরিবর্তন করে।' হযরত যাবীহুল্লাহ (আ) ফিরে এসে যেন তিনি কোন মানব আগমনের ইঙ্গিত পেয়েছেন, তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এখানে কোন লোকের আগমন ঘটেছিল কি? স্ত্রী বলে, “হাঁ, এরূপ এরূপ আকৃতির একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এসেছিলেন। তিনি আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে আমি বলি যে, তিনি শিকারের অনসুন্ধানে বেরিয়েছেন। তার পরে জিজ্ঞেস করেন, দিন যাপন কিভাবে হচ্ছে' আমি বলি যে, “আমরা অত্যন্ত সংকীর্ণ ও কঠিন অবস্থায় দিন যাপন করছি।” হযরত ইসমাঈল (আঃ) বলেনঃ ‘আমাকে কিছু বলতে বলেছেন কি? স্ত্রী বলেঃ হাঁ, বলেছেন যে, যখন তোমার স্বামী আসবে তখন তাকে বলবে যে, সে যেন তার দরজার চৌকাঠ পরিবর্তন করে। হযরত ইসমাঈল (আঃ) তখন বলেনঃ “হে আমার সহধর্মিনী! জেনে রেখো যে, উনি আমার আব্বা। তিনি যা বলে গেছেন তার ভাবার্থ এই যে, (যেহেতু তুমি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে) আমি যেন তোমাকে পৃথক করে দেই। যাও, আমি তোমাকে তালাক দিলাম। তাকে তালাক দিয়ে তিনি ঐ গোত্রেই দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

দ্বিতীয় বার সাক্ষাতের চেষ্টা

কিছুদিন পর হযরত ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহ তা'আলার অনুমতিক্রমে পুনরায় এখানে আসেন। ঘটনাক্রমে এবারও হযরত ইসমাঈল যাবিহুল্লাহর (আঃ) সাথে সাক্ষাৎ হয়নি। পুত্রবধূকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন যে, তিনি তাদের জন্যে আহার্যের অনুসন্ধানে বেরিয়েছেন। পুত্রবধূ বলেঃ আপনি বসুন যা কিছু হাজির রয়েছে তাই আহার করুন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ বলতো তোমাদের দিন যাপন কিভাবে হচ্ছে এবং তোমাদের অবস্থা কিরূপ? উত্তর আসেঃ “আলহামদু লিল্লাহ! আমরা ভালই আছি এবং আল্লাহর অনুগ্রহে সুখে-স্বচ্ছন্দে আমাদের দিন যাপন হচ্ছে। এজন্য আমরা মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।' হযরত ইবরাহীম (আঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ 'তোমাদের আহার্য কি? উত্তর আসেঃ ‘গোশত।' জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা পান কর কি?” উত্তর হয়ঃ ‘পানি।' তিনি প্রার্থনা করেন, হে প্রভু! আপনি তাদের গোশত ও পানিতে বরকত দিন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ যদি শস্য তাদের নিকট থাকতো এবং তারা এটা বলতো তবে হযরত ইবরাহীম খালীল (আঃ) তাদের জন্যে শস্যেরও বরকত চাইতেন। এখন এই প্রার্থনার বরকতে মক্কাবাসী শুধুমাত্র গোশত ও পানির উপরেই দিন যাপন করতে পারে, অন্য লোক পারে না।' হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলেনঃ “আচ্ছা, আমি যাচ্ছি, তোমার স্বামীকে আমার সালাম জানাবে এবং বলবে যে, সে যেন তার চৌকাঠ ঠিক রাখে। এর পরে হযরত ইসমাঈল (আঃ) এসে সমস্ত সংবাদ অবগত হন। তিনি বলেনঃ উনি আমার সম্মানিত আব্বা ছিলেন। আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, আমি যেন তোমাকে পৃথক না করি (তুমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারিণী)। আবার কিছু দিন পর হযরত ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহ তা'আলার অনুমতি লাভ করে এখানে আসেন। হযরত ইসমাঈল (আঃ) যমযম কূপের পাশ্বে একটি পাহাড়ের উপর তীর সোজা করছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত ইবরাহীম (আঃ) তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। হযরত ইসমাঈল (আঃ) পিতাকে দেখা মাত্রই আদবের সাথে দাড়িয়ে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন।

কাবা শরীফের নতুন নির্মাণ

পিতা-পুত্রের মিলন হলে ইবরাহীম (আঃ) বলেনঃ “হে ইসমাঈল! আমার প্রতি আল্লাহ তা'আলার একটি নির্দেশ হয়েছে।' তিনি বলেনঃ “যে নির্দেশ হয়েছে তা পালন করুন আব্বা।' তিনি বলেনঃ “হে আমার প্রিয় পুত্র! তোমাকেও আমার সাথে থাকতে হবে।' তিনি আরয করেনঃ “আমি হাযির আছি আব্বা!” তিনি বলেনঃ “এ স্থানে আল্লাহ তা'আলার একটি ঘর নির্মাণ করতে হবে।' তিনি বলেনঃ “খুব ভাল কথা, আব্বা!, এখন পিতা ও পুত্র মিলে বায়তুল্লাহ শরীফের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং উঁচু করতে আরম্ভ করেন। হযরত ইসমাঈল (আঃ) পাথর এনে দিতেন এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ) তা দিয়ে দেয়াল গাঁথতে থাকতেন। দেয়াল কিছুটা উঁচু হলে হযরত যাবিহুল্লাহ (আঃ) এই পাথরটি অর্থাৎ মাকামে ইবরাহীমের পাথরটি নিয়ে আসেন। ঐ উঁচু পাথরের উপর দাঁড়িয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ) কাবা শরীফের পাথর রাখতেন এবং পিতা-পুত্র উভয়ে এই দু'আ করতেনঃ ‘প্রভু হে! আপনি আমাদের এই নগণ্য খিদমত ককূল করুন, আপনি শ্রবণকারী ও দর্শনকারী।' এই বর্ণনাটি অন্যান্য হাদীসের কিতাবেও রয়েছে। কোথাও বা সংক্ষিপ্তভাবে এবং কোথাও বা বিস্তারিতভাবে। একটি বিশুদ্ধ হাদীসে এটাও রয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন বায়তুল্লাহর নিকটবর্তী হন তখন তিনি তাঁর মাথার উপরে মেঘের মত একটি জিনিস লক্ষ্য করেন। ওর মধ্য হতে শব্দ আসছিলঃ “হে ইবরাহীম (আঃ)! যত দূর পর্যন্ত এই মেঘের ছায়া রয়েছে তত দূর পর্যন্ত স্থানের মাটি তুমি বায়তুল্লাহর মধ্যে নিয়ে নাও। কম বেশী যেন না হয়। ঐ বর্ণনায় এও আছে যে,বায়তুল্লাহ নির্মাণের পর হযরত ইবরাহীম (আঃ) তথায় হযরত হাজেরা ও হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে ছেড়ে চলে আসেন। কিন্তু প্রথম বর্ণনাটিই সঠিক। আর এভাবেই সামঞ্জস্য হতে পারে যে, পূর্বে ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, কিন্তু নির্মাণ করেছিলেন পরে, এবং নির্মাণ কার্যে পিতা-পুত্র উভয়েই অংশ নিয়েছিলেন। যেমন কুরআনের শব্দগুলোও এর সাক্ষ্য বহন করে। হযরত আলী (রাঃ) বায়তুল্লাহ নির্মাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন আল্লাহর ঘর নির্মাণ করেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন যে, ঐ ঘর কোথায় নির্মাণ করতে হবে এবং কত বড় করতে হবে ইত্যাদি। তখন ‘সাকীনা অবতীর্ণ হয় এবং তাকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, যেখানেই ওটা থেমে যাবে সেখানেই ঘর নির্মাণ করতে হবে। এবার ঘরের নির্মাণ কার্য আরম্ভ করেন। হাজরে আসওয়াদের নিকট পৌছলে তিনি হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে বলেনঃ বৎস! কোন ভাল পাথর খুঁজে নিয়ে এসো।' তিনি ভাল পাথর খুঁজে আনেন। এসে দেখেন যে,তার আব্বা অন্য পাথর তথায় লাগিয়ে দিয়েছেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘আব্বা! এটা কে এনেছে?' তিনি বলেনঃ “আল্লাহর নির্দেশক্রমে হযরত জিবরাঈল (আঃ) এ পাথর খানা আকাশ হতে নিয়ে এসেছেন।

হযরত কা'বুল আহবার (রঃ) বলেন যে, এখন যেখানে বায়তুল্লাহ রয়েছে পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে তথায় পানির উপর বুন্ধুদের সাথে ফেনা হয়েছিল, এখান হতেই পৃথিবী ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) বলেন যে, কাবা ঘর নির্মাণের জন্য হযরত ইবরাহীম (আঃ) আরমেনিয়া হতে এসেছিলেন। হযরত সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) হাজরে আসওয়াদ' ভারত হতে এনেছিলেন। সেই সময় ওটা সাদা চকচকে ‘ইয়াকুত' (মণি) ছিল। হযরত আদম (আঃ)-এর সাথে জান্নাত হতে অবতীর্ণ হয়েছিল। পরবর্তীকালে মানুষের পাপপূর্ণ হস্ত স্পর্শের ফলে ওটা কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে। এক বর্ণনায় এটাও রয়েছে। যে, এর ভিত্তি পূর্ব হতেই বিদ্যমান ছিল। ওর উপরেই হযরত ইবরাহীম (আঃ) নির্মাণ কার্য আরম্ভ করেন। মুসনাদে আবদুর রাযযাকের মধ্যে রয়েছে যে, হযরত আদম (আঃ) ভারতে অবতরণ করেছিলেন। সেই সময় তার দেহ দীর্ঘ ছিল। পৃথিবীতে আগমনের পর ফেরেশতাদের তসবীহ, নামায দু’আ ইত্যাদি শুনতে পেতেন। যখন দেহ খাটো হয়ে যায় এবং ঐ সব ভাল শব্দ আসা বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিনি হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। তাঁকে মক্কার দিকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি মক্কার দিকে যেতে থাকেন। যেখানে যেখানে তাঁর পদচিহ্ন পড়ে সেখানে সেখানে জনবসতি স্থাপিত হয়। এখানে আল্লাহ তা'আলা বেহেশত হতে একটি ইয়াকুত অবতীর্ণ করেন এবং বায়তুল্লাহর স্থানে রেখে দেন, আর ঐ স্থানকেই স্বীয় ঘরের জায়গা হিসাবে নির্ধারণ করেন। হযরত আদম (আঃ) এখানে তওয়াফ করতে থাকেন এবং এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। হযরত নূহ (আঃ)-এর প্লাবনের যুগে এটা উঠে যায় এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর যুগে পুনরায় নির্মাণ করিয়ে নেন। হযরত আদম (আঃ) এ ঘরটিকে হেরা, তুর, যীতা, ভূরে সাইনা এবং জুদী এই পাঁচটি পাহাড় দ্বারা নির্মাণ করেন। কিন্তু এই সমুদয় বর্ণনার মধ্যেই স্পষ্টভাবে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে,পৃথিবী সৃষ্টির দু'হাজার বছর পূর্বে বায়তুল্লাহর নির্মাণ করা হয়েছিল। বায়তুল্লাহর চিহ্ন ঠিক করার জন্য হযরত জিবরাঈল (আঃ) হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সঙ্গে গিয়েছিলেন। সেই সময় এখানে বন্য বৃক্ষাদি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। বহু দূরে আমালিক সম্প্রদায়ের বসতি ছিল। এখানে তিনি হযরত ইসমাঈল (আঃ) ও তার মাকে একটি কুঁড়ে ঘরে রেখে গিয়েছিলেন। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, বায়তুল্লাহর চারটি স্তম্ভ আছে এবং সপ্তম জমি পর্যন্ত তা নীচে গিয়েছে। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, যুলকারনাইন যখন এখানে পৌঁছেন এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে বায়তুল্লাহ নির্মাণ করতে দেখেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি এটা কি করছেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ ‘মহান আল্লাহর নির্দেশক্রমে আমি তার ঘর নির্মাণ করছি।' যুলকারনাইন। জিজ্ঞেস করেন :এর প্রমাণ কি আছে?' হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলেনঃ “এই নেকড়ে বাঘগুলো সাক্ষ্য দিবে।' পাঁচটি নেকড়ে বাঘ বলেঃ আমার সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এরা দুজন নির্দেশ প্রাপ্ত। যুলকারনাইন এতে খুশী হন এবং বলেনঃ “আমি মেনে নিলাম।' ‘আরযাকীর তারীখ-ই মক্কানামক পুস্তকে রয়েছে যে, যুলকারনাইন হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর সঙ্গে বায়তুল্লাহর তওয়াফ করেছেন।

সহীহ বুখারী শরীফের মধ্যে রয়েছে যে, (আরবি) শব্দের অর্থ হচ্ছে ভিত্তি। এটা (আরবি)শব্দের বহুবচন। কুরআন মাজীদের মধ্যে অন্য জায়গায় (আরবি) (২৪:৬০)ও এসেছে। এরও এক বচন হচ্ছে (আরবি) হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বলেনঃ তুমি কি দেখছো না যে, তোমার গোত্র যখন বায়তুল্লাহ নির্মাণ করে, তখন হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তি হতে ছোট করে দেয়। আমি বলিঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনি ওটা বাড়িয়ে দিয়ে মূল ভিত্তির উপর করে দিন।' রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বলেনঃ ‘তোমার কওম যদি নতুন ইসলাম গ্রহণকারী না হতো এবং তাদের কুফরীর যুগ যদি নিকটে না থাকতো তবে আমি তাই করতাম।' হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) এ হাদীসটি জানার পর বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ কারণেই ‘হাজরে আসওয়াদের পার্শ্ববর্তী দুটি স্তম্ভকে স্পর্শ করতেন না। সহীহ মুসলিম শরীফে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে আয়েশা! যদি তোমার কওমের অজ্ঞতার যুগ নিকটে না হতো তবে আমি অবশ্যই কাবার ধনাগারকে আল্লাহর পথে দান করে দিতাম এবং দরজারকে ভূমির সাথে লাগিয়ে দিতাম এবং ‘হাতীম'কে বায়তুল্লাহর মধ্যে ভরে দিতাম।'

সহীহ বুখারী শরীফের মধ্যে এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি এর দ্বিতীয় দরজাও করতাম, একটি আসবার জন্যে এবং অপরটি যাবার জন্যে। ইবনে যুবাইর (রাঃ) তাঁর খিলাফতের যুগে এরকমই করেছিলেন। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, 'আমি একে ভেঙ্গে দিতাম এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তির উপর নির্মাণ করতাম।' আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি একটি পূর্বমুখী করতাম এবং একটি পশ্চিমমুখী করতাম এবং ৬ হাত হাতীম’কে এর মধ্যে ভরে দিতাম যাকে কুরাইশরা এর বাইরের করে দিয়েছে। নবী (সঃ)-এর নবুওয়াতের পাঁচ বছর পূর্বে কুরাইশরা নতুনভাবে কা'বা ঘর নির্মাণ করেছিল। এই নির্মাণ কার্যে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) শরীক ছিলেন। যখন তাঁর বয়স ছিল পঁয়ত্রিশ বছর, সেই সময় করাইশরা কা'বা শরীফকে নতুনভাবে নির্মাণ করার ইচ্ছে করে। কারণ ছিল এই যে, এর দেয়াল ছিল খুব ছোট এবং ছাদও ছিল না। দ্বিতীয়তঃ, বায়তুল্লাহর ধনাগার চুরি হয়ে গিয়েছিল, যা ঐ ঘরের মধ্যে একটি গভীর গর্তে রক্ষিত ছিল। এই চোরাই মাল খাযায়েমা গোত্রীয় বানী মালীহ্ বিন আমরের ক্রীতদাস দুয়ায়েক' নামক ব্যক্তির নিকট পাওয়া গিয়েছিল। সম্ভবতঃ চোরেরা ঐ মাল তার ওখানে রেখেছিল। যাহোক, এই চুরির অপরাধে দুয়ায়েকের হাত কেটে দেয়া হয়। তাছাড়া এই ঘর নির্মাণের ব্যাপারে তারা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা বিরাট সুযোগ লাভ করেছিল। তা এই যে, রোম রাজ্যের বণিকদের একটি নৌকা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জিদ্দার ধারে এসে লেগে যায়। ঐ নৌকায় বহু মূল্যবান কাঠ বোঝাই করা ছিল। এই কাঠগুলো কাবা ঘরের ছাদের কাজে লাগতে পারে এই চিন্তা করে কুরাইশরা ঐ কাঠগুলো কিনে। নেয় এবং কিবতী গোত্রের একজন ছুতারকে কাবার ছাদ নির্মাণের দায়িত্ব অর্পণ করে। এসব প্রস্তুতিতো চলছিল বটে কিন্তু বায়তুল্লাহকে ভেঙ্গে দিতে তারা ভয় পাচ্ছিল। আল্লাহ তাআলার ইঙ্গিতে এরও ব্যবস্থা হয়ে যায়। বায়তুল্লাহর কোষাগারে একটি সাপ ছিল। যখনই কোন লোক ওর নিকটে যেতো তখনই সে হাঁ করে তার দিকে বাধিত হতো। এই সর্পটি প্রত্যহ ঐ গর্ত হতে বেরিয়ে বায়তুল্লাহর দেয়ালে এসে বসে থাকতো। একদা ঐ সাপটি ওখানে বসেই ছিল। এমন সময় আল্লাহ তা'আলা একটা বিরাট পাখী পাঠিয়ে দেন। পাখীটি সাপটিকে ধরে নিয়ে উড়ে যায়। কুরাইশরা এবার বুঝতে পারলো যে, তাদের ইচ্ছা মহান আল্লাহর ইচ্ছার অনুরূপই হয়েছে। কারণ, কাঠও তারা পেয়ে গেছে, মিস্ত্রীও তাদের মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে এবং সাপকেও আল্লাহ তাআলা সরিয়ে দিয়েছেন। এবার তারা কা'বা শরীফকে ভেঙ্গে নতুনভাবে নির্মাণ করার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে।

কা'বা শরীফ নির্মাণ ও অদৃশ্য ইঙ্গিত

সর্বপ্রথম ইবনে অহাব নামক এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে কাবা শরীফের একটি পাথর নামিয়ে নেয়, কিন্তু পাথরখানা তার হাত হতে উড়ে গিয়ে পুনরায় স্বস্থানে বসে যায়। সে সমস্ত কুরাইশকে সম্বোধন করে বলেঃ ‘শুনে রেখো! আল্লাহর ঘর নির্মাণ কার্যে সবাই যেন নিজ নিজ উত্তম ও পবিত্র মালই খরচ করে। এতে ব্যভিচার দ্বারা উপার্জিত সম্পদ সূদের টাকা এবং অত্যাচারের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ লাগানো চলবে না। কেউ কেউ বলেন যে, এ পরামর্শ দিয়েছিল ওলীদ বিন মুগীরা নামক ব্যক্তি। এখন বায়তুল্লাহ নির্মাণের অংশ গোত্র সমূহের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, দরজার অংশ নির্মাণ করবে বানু আবদ-ই-মানাফ ও জুহরা গোত্র, হাজরে আসওয়াদ' ও রুকনে ইয়ামানীর অংশ নির্মাণ করবে বানু মাখযুম গোত্র এবং কুরাইশের অন্যান্য গোত্রগুলোও তাদের সঙ্গে কাজ করবে, কা'বা শরীফের পিছনের অংশ নির্মাণ করবে বানু হামীহ্ ও সাহাম' গোত্র এবং হাতীমের পার্শ্ববর্তী অংশ নির্মাণ করবে আবদুদ্দার বিন কুসাই, বানু আসাদ বিন আবদুল উযযা ও বানু আদী বিন কা'ব। এটা নির্ধারণ করার পর পূর্ব নির্মিত ইমারত ভাঙ্গার জন্যে তারা অগ্রসর হয়। কিন্তু প্রথমে ভাঙ্গতে কেউই সাহস করে না। অবশেষে ওলীদ বিন মুগীরা বলেঃ আমিই আরম্ভ করছি।' এ বলে সে কোদাল নিয়ে উপরে উঠে যায় এবং বলে ‘হে আল্লাহ! আপনি খুবই ভাল জানেন যে, আমাদের ইচ্ছা খারাপ নয়, আমরা অপনার ঘর ধ্বংস করতে চাইনে বরং ওটাকে উন্নত করার চিন্তাতেই আছি।' একথা বলে সে দুটি স্তম্ভের দু'ধারের কিছু অংশ ভেঙ্গে দেয়। অতঃপর কুরাইশরা বলেঃ ‘এখন ছেড়ে দাও। রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করি। যদি এ ব্যক্তির উপর কোন শাস্তি নেমে আসে তবে তো এ পাথর ঐ স্থানেই রেখে দেয়া হবে এবং আমাদেরকে একাজ হতে বিরত থাকতে হবে। আর যদি কোন শাস্তি না আসে তবে বুঝে নিতে হবে যে, এটা ভেঙ্গে দেয়া আল্লাহ তা'আলার অসন্তুষ্টির কারণ নয়। সুতরাং আগামীকাল আমরা সবাই মিলে এ কাজে লেগে যাবো।' অতঃপর সকাল হয় এবং সবদিক দিয়েই মঙ্গল পরিলক্ষিত হয়। তখন সবাই এসে বায়তুল্লাহ শরীফের পূর্ব ইমারত ভেঙ্গে দেয়। অবশেষে তারা পূর্ব ভিত্তি অর্থাৎ ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এখানে সবুজ বর্ণের পাথর ছিল এবং যেন একটির সঙ্গে অপরটির সংযোগ ছিল। একটি লোক দুটি পাথরকে পৃথক করার উদ্দেশ্যে ওতে এতো জোরে কোদাল মারে যে, ওটা আন্দোলিত হওয়ার সাথে সাথে সমস্ত মক্কা ভূমি আন্দোলিত হয়ে উঠে। তখন জনগণ বুঝতে পারে যে, পাথরগুলোকে পৃথক করে ওর স্থানে অন্য পাথর লাগানো আল্লাহ তা'আলার নিকট গৃহীত নয়। কাজেই ওটা তাদের শক্তির বাইরের কাজ। সুতরাং তারা ঐ কাজ থেকে বিরত থাকে এবং ঐ পাথরগুলোকে ঐভাবেই রেখে দেয়। এর পর প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ অংশ অনুযায়ী পাথর সংগ্রহ করে এবং প্রাসাদ নির্মাণের কাজ আরম্ভ হয়ে যায়।

অবশেষে তারা হাজরে আসওয়াদ' রাখার স্থান পর্যন্ত পৌছে যায়। এখন প্রত্যেক গোত্রই এই মর্যাদায় অংশ নিতে চায়। সুতরাং তারা পরস্পরে ঝগড়া:বিবাদ করতে থাকে, এমনকি নিয়মিতভাবে যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। বানু আব্দুদ্দার' এবং বানু আদী’ রক্তপূর্ণ একটি পাত্রে হাত ডুবিয়ে শপথ করে বলেঃ আমরা সবাই কেটে গিয়ে মারা পড়বো এটাও ভাল তথাপি হাজরে আসওয়াদ' কাউকেও রাখতে দেব না।' এভাবেই চার পাঁচ দিন কেটে যায়। অতঃপর কুরাইশরা পরস্পর পরামর্শের জন্যে মসজিদে একত্রিত হয়। আবু উমাইয়া বিন মুগীরা ছিল কুরাইশদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বয়ষ্ক ও জ্ঞানী ব্যক্তি। সে সকলকে সম্বোধন করে বলে, হে জনমণ্ডলী! তোমরা কোন একজনকে সালিশ নির্বাচিত কর এবং সে যা ফয়সালা করে তাই মেনে নাও। সালিশ নির্বাচনের ব্যাপারেও মতবিরোধ সৃষ্টি হতে পারে, সুতরাং তোমরা এ কাজ কর যে, এখানে সর্বপ্রথম যে সমজিদে প্রবেশ করবে সেই আমাদের সালিশ নির্বাচিত হবে। এ প্রস্তাব সবাই সমর্থন করে। সর্বপ্রথম কে প্রবেশ করে এটা দেখার জন্য সবাই অপেক্ষমান থাকে।

‘হাজরে আসওয়াদ' ও আরবের আমীনের (সঃ) মধ্যস্থতা

সর্বপ্রথম যিনি আগমন করেন তিনি হলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ)। তাকে দেখা মাত্রই এসব লোক খুশী হয়ে যায় এবং বলেঃ “তার মধ্যস্থতা আমরা মেনে নিতে রাজী আছি। ইনি তো আমীন! ইনি তো মুহাম্মদ (সঃ)! অতঃপর তারা সবাই তার খেদমতে উপস্থিত হয়ে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে। তিনি বলেনঃ আপনারা একটি বড় ও মোটা চাদর নিয়ে আসুন। তারা তা নিয়ে আসে। তিনি ‘হাজরে আসওয়াদ' উঠিয়ে এনে স্বহস্তে ঐ চাদরে রেখে দেন এবং বলেনঃ ‘প্রত্যেক গোত্রের নেতা এসে এই চাদরের কোণ ধরে নিন এবং এভাবেই আপনারা সবাই হাজরে আসওয়াদ উঠাবার কাজে শরীক হয়ে যান।' একথা শুনে সমস্ত লোক আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় এবং সমস্ত গোত্রপ্রধান চাদরটি উত্তোলন করে। যখন ওটা রাখার স্থানে পৌছে তখন আল্লাহর নবী (সঃ) ওটা স্বহস্তে উঠিয়ে নিয়ে ওর স্থানে রেখে দেন। এভাবে সেই ঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধ বিগ্রহ নিমেষের মধ্যেই মিটে যায়। আর এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূলের (সঃ) হাতে তাঁর ঘরে ঐ বরকতময় পাথরটি স্থাপন করিয়ে নেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর ওয়াহী আসার পূর্বে কুরাইশরা তাঁকে ‘আমীন’ বলতো। এখন উপরের অংশ নির্মিত হয়। এভাবে মহান আল্লাহর ঘরের নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়। ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর যুগে কা’বা আঠারো হাত লম্বা ছিল। ইয়েমেন দেশীয় ‘কবা’ পর্দা তার উপর চড়ান হতো। পরে ওর উপর চাদর চড়ান হতে থাকে। সর্বপ্রথম হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তার উপর রেশমী পর্দা উত্তোলন করেন। কাবা শরীফের এই ইমারতই থাকে। হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের (রাঃ) খিলাফতের প্রাথমিক যুগে ষাট বছর পরে এখানে আগুনে লেগে যায়। এর ফলে কা'বা শরীফ পুড়ে যায়। এটা ছিল ইয়াযিদ বিন মু'আবিয়ার রাজত্বের শেষ কাল এবং সে ইবনে যুবাইর (রাঃ) কে মক্কায় অবরোধ করে রেখেছিল।

কাবা শরীফের ইমারত এবং তার বিভিন্ন যুগের আবর্তন

এই সময়ে মক্কার খলীফা হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ) স্বীয় খালা হযরত আয়েশা সিদ্দিকার (রাঃ) নিকট যে হাদীসটি শুনেছিলেন তারই পরিপ্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মনের কথা অনুযায়ী বায়তুল্লাহকে ভেঙ্গে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তির উপর তিনি ওটা নির্মাণ করেন। হাতীমকে ভিতরে ভরে নেন। পূর্ব ও পশ্চিমে দু'টি দরজা রাখেন। একটি ভিতরে আসার জন্য, অপরটি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। দরজা দু’টি মাটির সমান করে রাখেন। তাঁর শাসনামল পর্যন্ত কা'বা এরূপই থাকে। অবশেষে তিনি যালিম হাজ্জাজের হাতে শহীদ হন। তখন আবদুল মালিক বিন মারওয়ানের নির্দেশক্রমে হাজ্জাজ কা'বা শরীফকে ভেঙ্গে পুনরায় পূর্বের মত করে নির্মাণ করেন। সহীহ মুসলিম শরীফে রয়েছে যে, ইয়াযিদ বিন মু'আবিয়ার যুগে যখন সিরিয়াবাসী মক্কা শরীফের উপর আক্রমণ করে এবং যা হবার তা হয়ে যায়, সেই সময় হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বায়তুল্লাহ শরীফকে এরূপ অবস্থাতেই রেখে দেন। হজ্বের মৌসুমে জনগণ একত্রিত হয়। তারা সব কিছু স্বচক্ষে দেখে। এরপুরে হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) জনগণের সঙ্গে পরামর্শ করেনঃ কা'বা শরীফকে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে কি নতুনভাবে নির্মাণ করবো, না কি ভাঙ্গা যা আছে তাকেই মেরামত করব? তখন হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আমার মতে ভাঙ্গাকেই আপনি মেরামত করে দিন, বাকিগুলো পুরাতনই থাক।' তখন তিনি বলেনঃ ‘আচ্ছা বলুন তো, যদি আমাদের কারও বাড়ি পুড়ে যেতো তবে কি সে নতুন বাড়ি নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতো? তাহলে মহাসম্মানিত প্রভুর ঘর সম্পর্কে এরূপ মত পেশ করেন কেন? আচ্ছা তিন দিন পর্যন্ত আমি ইস্তেখারা (লক্ষণ দেখে শুভ বিচার) করবে, তার পরে যা বুঝবো তাই করবো।' তিন দিন পরে তাঁর মত এই হলো যে, অবশিষ্ট দেয়ালও ভেঙ্গে দেয়া হবে এবং সম্পূর্ণ নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। সুতরাং তিনি এই নির্দেশ দিয়ে দেন।

কিন্তু কা'বা শরীফ ভাঙ্গতে কেউই সাহস করছিল না। তারা ভয় করছিল যে, যে ব্যক্তি ভাঙ্গার জন্যে চড়বে তার উপর আল্লাহর শাস্তি অবতীর্ণ হবে। কিন্তু একজন সাহসী ব্যক্তি উপরে চড়ে গিয়ে একটি পাথর ভেঙ্গে দেয়। অন্যেরা যখন দেখে যে, তার কোন ক্ষতি হলো না তখন তারা সবাই ভাঙ্গতে আরম্ভ করে দেয়। এবং ভূমি পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করে দেয়। সে সময় হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ) চারদিকে স্তম্ভ দাঁড় করিয়ে দেন এবং ওর উপর পর্দা করে দেন। এবারে বায়তুল্লাহ নির্মাণ কার্য আরম্ভ হয়। হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ) বলেন, হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর নিটক হতে আমি শুনেছি তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন-“যদি লোকদের কুফরীর সময়টা নিকটে না হতো এবং আমার নিকট নির্মাণের খরচা থাকতো তবে আমি হাতীম' থেকে পাঁচ হাত পর্যন্ত বায়তুল্লাহর মধ্যে নিয়ে নিতাম এবং কা'বার দুটি দরজা করতাম, একটা আসবার দরজা এবং অপরটি বের হওয়ার দরজা।' হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেনঃ “এখন আর জনগণের কুফরীর যুগ নিকটে নেই, তাদের ব্যাপারে ভয় দূর হয়ে গেছে এবং কোষাগারও পূর্ণ রয়েছে, আমার নিকট যথেষ্ট অর্থ রয়েছে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মনোবাসনা পূর্ণ না করার আমার আর কোন কারণ থাকতে পারে না। সুতরাং তিনি পাঁচ হাত ‘হাতীম' ভিতরে নিয়ে নেন। তখন হযরত ইবরাহীমের (আঃ) ভিত্তি প্রকাশিত হয়ে পড়ে এবং জনসাধারণ তা স্বচক্ষে দেখে নেয়। এরই উপর দেয়াল গাথা হয়। বায়তুল্লাহ শরীফের দৈর্ঘ্য ছিল আঠারো হাত। এখন আরও পাঁচ হাত বৃদ্ধি পায়, ফলে ছোট হয়ে যায়, এজন্যে দৈর্ঘ্যের আর দশ হাত বেড়ে যায়। দু'টি দরজা নির্মিত হয়। একটি ভিতরে আসবার এবং অপরটি বাইরে যাবার। হযরত ইবনে যুবাইরের (রাঃ) শাহাদাতের পর হাজ্জাজ আবদুল মালিকের নিকট পত্র লিখেন এবং তার পরামর্শ চান যে, এখন কি করা যায়? এটাও লিখে পাঠান যে, ঠিক হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তির উপর যে কাবা শরীফ নির্মিত হয়েছে এটা মক্কা শরীফের সুবিচারকগণ স্বচক্ষে দেখেছেন। কিন্তু আবদুল মালিক উত্তর দেনঃ দৈর্ঘ্য ঠিক রাখ কিন্তু হাতীমকে বাইরে করে দাও এবং দ্বিতীয় দরজাটি বন্ধ করে দাও।' হাজ্জাজ আবদুল মালিকের এই নির্দেশক্রমে কাবাকে তেঙ্গে দিয়ে পূর্বের ভিত্তির উপরে নির্মাণ করেন। কিন্তু আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ)-এর ভিত্তিকে ঠিক রাখাই সুন্নাতের পন্থা ছিল। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বাসনা তো এই ছিল। কিন্তু সেই সময় তার এই ভয় ছিল যে, মানুষ হয়তো খারাপ ধারণা করে বসবে। কারণ তারা সবেমাত্র মুসলমান হয়েছে। কিন্তু আবদুল মালিক বিন মারওয়ান এ হাদীসটি জানতেন না। এজন্যেই তিনি ওটা ভাঙ্গিয়ে ছিলেন। কিন্তু যখন তিনি হাদীসটি জানতে পারেন তখন তিনি দুঃখ করে বলেনঃ ‘হায়! যদি আমি ওটাকে ভেঙ্গে পূর্বাবস্থাতেই রাখতাম।'

সহীহ মুসলিমের একটি হাদীসে রয়েছে যে, হযরত হারিস বিন উবায়দুল্লাহ (রাঃ) যখন আবদুল মালিক বিন মারওয়ানের খিলাফত কালে তাঁর নিকট প্রতিনিধি রূপে গমন করেন তখন আবদুল মালিক তাকে বলেন, আমি ধারণা করি যে, আবু হাবীব অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ) এ হাদীসটি (তার খালা) হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে শুনেননি। তখন হযরত হারিস বিন উবাইদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ ‘অবশ্যই তিনি শুনেছেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে স্বয়ং আমিও শুনেছি।' আবদুল মালিক তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, কি শুনেছেন?' তিনি বলেনঃ “আমি শুনেছি-তিনি বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বলেনঃ “হে আয়েশা! তোমার কওম’ বায়তুল্লাহকে সংকীর্ণ করে দিয়েছে। যদি তোমার সম্প্রদায়ের শিরকের যুগ নিকটে না হতো তবে নতুনভাবে আমি এর কমতি পূরণ করতাম। এসো, আমি তোমাকে এর প্রকৃত ভিত্তি দেখিয়ে দেই, হয়তো তোমার গোত্র আবার একে এর প্রকৃত ভিত্তির উপর নির্মাণ করতে পারে। অতঃপর তিনি হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) কে প্রায় সাত হাত দেখিয়ে দেন এবং বলেনঃ “আমি এর দু’টি দরজা নির্মাণ করতাম, একটি আগমনের ও অপরটি প্রস্থানের; এবং দরজা দু'টি মাটির সমান করে রাখতাম। একটি রাখতাম পূর্বমুখী এবং অপরটি রাখতাম পশ্চিমমুখী। তুমি কি জান যে, তোমার কওম' দরজাকে এত উঁচু করে রেখেছে কেন? হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ।' রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, শুধুমাত্র নিজেদের মর্যাদা প্রকাশের জন্যে। যাকে চাইবে প্রবেশ করতে দেবে এবং যাকে চাইবে না প্রবেশ করতে দেবে না। যখন লোক ভিতরে যেতে চাইতো তখন তারা তাকে উপর হতে ধাক্কা দিতো ফলে সে পড়ে যেতো। আর যাকে তারা প্রবেশ করাবার ইচ্ছে করতো তাকে হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যেতো।' আবদুল মালিক তখন বলেনঃ “হে হারিস! আপনি কি স্বয়ং এই হাদীসটি হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে শুনেছেন?' তিনি বলেনঃ হ’ আমি স্বয়ং শুনেছি। তখন আবদুল মালিক কিছুক্ষণ ধরে লাঠির উপর ভর দিয়ে চিন্তা করেন। অতঃপর বলেনঃ যদি আমি একে ঐ রকমই রেখে দিতাম!

সহীহ মুসলিমের আর একটি হাদীসে আছে যে, আবদুল মালিক বিন মারওয়ান একবার বায়তুল্লাহ তওয়াফ করার সময় হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ) কে অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, তিনি এ হাদীসটির ব্যাপারে হযরত আয়েশার (রাঃ) উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন।' তখন হযরত হারিস (রাঃ) তাকে বাধা দেন এবং সাক্ষ্য দেন যে, তিনি সত্যবাদীই ছিলেন। আমিও হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে এই হাদীসটি শুনেছি। তখন আবদুল মালিক আফসোস করে বলেনঃ “আমি পূর্ব হতে অবগত থাকলে কখনও ভাঙ্গতাম না।' কাযী আইয়া এবং ইমাম নববী (রঃ) লিখেছেন যে, খলীফা হারুনুর রশীদ হযরত ইমাম মালিককে (রঃ) জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ “আমি কা'বা শরীফকে পুনরায় ইবনে যুবাইর (রাঃ) কর্তৃক নির্মিত আকারে নির্মাণ করে দেই এর কি আপনি অনুমতি দিচ্ছেন?' ইমাম মালিক (রঃ) বলেন, আপনি এরূপ করবেন না। কারণ এর ফলে হয়তো পবিত্র কাবা বাদশাহদের খেলনায় পরিণত হবে। তারা নিজেদের ইচ্ছামত ওটাকে ভাঙ্গতে থাকবে।' খলীফা হারুনুর রশীদ তখন তার এই সংকল্প হতে বিরত থাকেন। এটাই সঠিকও মনে হচ্ছে যে, কা'বা শরীফকে বার বার ভেঙ্গে দেয়া উচিত নয়।

কাবা শরীফের ধ্বংসলীলা

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ কা'বাকে দু'টি ছোট পা (পায়ের গোছা) বিশিষ্ট একজন হাবশী ধ্বংস করবে।' রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি যেন তাকে দেখতে পাচ্ছি, সেই কৃষ্ণবর্ণের (হাবশী) এক একটি পাথরকে পৃথক পৃথক করে দেবে, ওর আবরণ নিয়ে যাবে এবং এর অর্থ সম্পদও ছিনিয়ে নেবে। সে বাঁকা হাত-পা বিশিষ্ট ও টেকো মাথাওয়ালা হবে। আমি যেন দেখতে পাচ্ছি যে, সে কোদাল মেরে মেরে টুকরো টুকরো করতে রয়েছে। খুব সম্ভব এই দুঃখজনক ঘটনা ইয়াজুজ-মাজুজ বের হওয়ার পরে ঘটবে। সহীহ বুখারী শরীফের একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ ইয়াজুজ-মাজুজ বের হওয়ার পরও তোমরা বায়তুল্লাহ শরীফে হজ্ব ও উমরাহ করবে।' হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাঈল (আঃ) তাদের প্রার্থনায় বলেছেনঃ “আমাদেরকে মুসলমান করে নিন। অর্থাৎ আমাদেরকে অকৃত্রিম, অনুগত, একত্ববাদী করে নিন এবং আমাদেরকে অংশীবাদী ও রিয়াকারী হতে রক্ষা করুন এবং আমাদিগকে নম্র ও বিনয়ী করুন।' হযরত সালাম বিন মুতী (রঃ) বলেন যে, তারা মুসলমান তো ছিলেনই, কিন্তু এখন ইসলামের উপর দৃঢ় ও অটল থাকার প্রার্থনা জানাচ্ছেন। এর উত্তরে মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন (আরবি) অর্থাৎ আমি তোমাদের এই প্রার্থনা কবুল করলাম। আবার তাঁরা তাঁদের সন্তানাদির জন্যে এ দু’আই করছেন এবং তা ককূলও হচ্ছে। বানী ইসরাঈল ও আরব উভয়েই হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মাজীদের মধ্যেও রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ মুসা (আঃ) এর সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি দল হক ও ইনসাফের উপর ছিল।' (৭:১৫৯) কিন্তু রচনা রীতি দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এ প্রার্থনা আরবের জন্যই, যদিও সাধাণভাবে অন্যেরাও জড়িত রয়েছে। কেননা, এই প্রার্থনার পরে অন্য প্রার্থনায় রয়েছে তাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করুন এই রাসূল দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (সঃ)কে বুঝান হয়েছে। এ প্রার্থনাও গৃহীত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ তিনিই এমন যিনি নিরক্ষরদের মধ্য তাদের মধ্য হতেই একজন রাসূল পাঠিয়েছেন।' (৬২:২) কিন্তু এর দ্বারা তাঁর রিসালাত কারও জন্য বিশিষ্ট হচ্ছে না বরং তাঁর রিসালাত সাধারণ। আরব অনারব সবার জন্যেই তিনি রাসূল। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি বল, হে জনমণ্ডলী! আমি তোমাদের সবারই নিকট রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি।' (৭:১৫৮) এ দুজন নবীর প্রার্থনার মত প্রত্যেক খোদা ভীরু লোকেরই প্রার্থনা হওয়া উচিত। যেমন পবিত্র কোরআন মুসলমানকে দু'আ শিখিয়ে দিচ্ছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে আমাদের স্ত্রীগণ এবং আমাদের সন্তানবর্গ হতে চক্ষের শীতলতা (শান্তি) দান করুন এবং আমাদেরকে খোদা ভীরু লোকদের ইমাম বানিয়ে দিন।' (২৫:৭৪) এটাও আল্লাহ তা'আলার প্রেমের দলীল যে, মানুষ কামনা করবে তার মৃত্যুর পরে তার ছেলেরাও যেন আল্লাহ তা'আলার উপাসনায় রত থাকে। অন্য জায়গায় প্রার্থনার শব্দ রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তি পূজা হতে রক্ষা করুন। (১৪:৩৫) রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ 'মানুষ মরে যাওয়া মাত্র তার কার্যাবলী শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি কাজ অবশিষ্ট থাকে। (১) সাদকাহ, (২) ইলম, যদ্বারা উপকার লাভ করা হয়, (৩) সৎ সন্তান, যারা প্রার্থনা করে (সহীহ মুসলিম)। তার পরে হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহ! আমাদেরকে হজুরে আহকাম শিখিয়ে দিন। কাবা শরীফের ইমারত পূর্ণ হওয়ার পর হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে নিয়ে ‘সাফা' পর্বতে আসেন, অতঃপর মারওয়া পর্বতে যান এবং বলেন যে এগুলোই হচ্ছে আল্লাহর স্মৃতি নিদর্শন। অতঃপর তাঁকে মিনার দিকে নিয়ে যান। উকবাহ’র উপরে একটি গাছের পার্শ্বে শয়তানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হযরত জিবরাঈল (আঃ) হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে বলেনঃ “তাকবীর' পাঠ করতঃ তার উপর প্রস্তর নিক্ষেপ করুন। ইবলিস এখান হতে পালিয়ে গিয়ে জামরা-ই-উকবার পার্শ্বে গিয়ে দাঁড়ায়। এখানেও তিনি তাকে পাথর মারেন। এই কলুষ শয়তান নিরাশ হয়ে চলে যায়। হজ্বের আহকামের মধ্যে সে কিছু গোলমাল সৃষ্টি করতে চেয়েছিল কিন্তু সুযোগ পেলো না এবং সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে গেল। এখান হতে হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে মাশআরে হারাম’ নিয়ে যান। অতঃপর আরাফাতে পৌছিয়ে দেন। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাকে তিনবার জিজ্ঞেস করেনঃ “বলুন, বুঝেছেন' তিনি বলেনঃ ‘হ্যাঁ'। অন্য বর্ণনায় শয়তানকে তিন জায়গায় পাথর মারার কথা বর্ণিত আছে। প্রত্যেক হাজী শয়তানকে সাতটি করে পাথর মারেন।

Quran Mazid
go_to_top
Quran Mazid
Surah
Juz
Page
1
Al-Fatihah
The Opener
001
2
Al-Baqarah
The Cow
002
3
Ali 'Imran
Family of Imran
003
4
An-Nisa
The Women
004
5
Al-Ma'idah
The Table Spread
005
6
Al-An'am
The Cattle
006
7
Al-A'raf
The Heights
007
8
Al-Anfal
The Spoils of War
008
9
At-Tawbah
The Repentance
009
10
Yunus
Jonah
010
11
Hud
Hud
011
12
Yusuf
Joseph
012
13
Ar-Ra'd
The Thunder
013
14
Ibrahim
Abraham
014
15
Al-Hijr
The Rocky Tract
015
16
An-Nahl
The Bee
016
17
Al-Isra
The Night Journey
017
18
Al-Kahf
The Cave
018
19
Maryam
Mary
019
20
Taha
Ta-Ha
020
21
Al-Anbya
The Prophets
021
22
Al-Hajj
The Pilgrimage
022
23
Al-Mu'minun
The Believers
023
24
An-Nur
The Light
024
25
Al-Furqan
The Criterion
025
26
Ash-Shu'ara
The Poets
026
27
An-Naml
The Ant
027
28
Al-Qasas
The Stories
028
29
Al-'Ankabut
The Spider
029
30
Ar-Rum
The Romans
030
31
Luqman
Luqman
031
32
As-Sajdah
The Prostration
032
33
Al-Ahzab
The Combined Forces
033
34
Saba
Sheba
034
35
Fatir
Originator
035
36
Ya-Sin
Ya Sin
036
37
As-Saffat
Those who set the Ranks
037
38
Sad
The Letter "Saad"
038
39
Az-Zumar
The Troops
039
40
Ghafir
The Forgiver
040
41
Fussilat
Explained in Detail
041
42
Ash-Shuraa
The Consultation
042
43
Az-Zukhruf
The Ornaments of Gold
043
44
Ad-Dukhan
The Smoke
044
45
Al-Jathiyah
The Crouching
045
46
Al-Ahqaf
The Wind-Curved Sandhills
046
47
Muhammad
Muhammad
047
48
Al-Fath
The Victory
048
49
Al-Hujurat
The Rooms
049
50
Qaf
The Letter "Qaf"
050
51
Adh-Dhariyat
The Winnowing Winds
051
52
At-Tur
The Mount
052
53
An-Najm
The Star
053
54
Al-Qamar
The Moon
054
55
Ar-Rahman
The Beneficent
055
56
Al-Waqi'ah
The Inevitable
056
57
Al-Hadid
The Iron
057
58
Al-Mujadila
The Pleading Woman
058
59
Al-Hashr
The Exile
059
60
Al-Mumtahanah
She that is to be examined
060
61
As-Saf
The Ranks
061
62
Al-Jumu'ah
The Congregation, Friday
062
63
Al-Munafiqun
The Hypocrites
063
64
At-Taghabun
The Mutual Disillusion
064
65
At-Talaq
The Divorce
065
66
At-Tahrim
The Prohibition
066
67
Al-Mulk
The Sovereignty
067
68
Al-Qalam
The Pen
068
69
Al-Haqqah
The Reality
069
70
Al-Ma'arij
The Ascending Stairways
070
71
Nuh
Noah
071
72
Al-Jinn
The Jinn
072
73
Al-Muzzammil
The Enshrouded One
073
74
Al-Muddaththir
The Cloaked One
074
75
Al-Qiyamah
The Resurrection
075
76
Al-Insan
The Man
076
77
Al-Mursalat
The Emissaries
077
78
An-Naba
The Tidings
078
79
An-Nazi'at
Those who drag forth
079
80
Abasa
He Frowned
080
81
At-Takwir
The Overthrowing
081
82
Al-Infitar
The Cleaving
082
83
Al-Mutaffifin
The Defrauding
083
84
Al-Inshiqaq
The Sundering
084
85
Al-Buruj
The Mansions of the Stars
085
86
At-Tariq
The Nightcommer
086
87
Al-A'la
The Most High
087
88
Al-Ghashiyah
The Overwhelming
088
89
Al-Fajr
The Dawn
089
90
Al-Balad
The City
090
91
Ash-Shams
The Sun
091
92
Al-Layl
The Night
092
93
Ad-Duhaa
The Morning Hours
093
94
Ash-Sharh
The Relief
094
95
At-Tin
The Fig
095
96
Al-'Alaq
The Clot
096
97
Al-Qadr
The Power
097
98
Al-Bayyinah
The Clear Proof
098
99
Az-Zalzalah
The Earthquake
099
100
Al-'Adiyat
The Courser
100
101
Al-Qari'ah
The Calamity
101
102
At-Takathur
The Rivalry in world increase
102
103
Al-'Asr
The Declining Day
103
104
Al-Humazah
The Traducer
104
105
Al-Fil
The Elephant
105
106
Quraysh
Quraysh
106
107
Al-Ma'un
The Small kindnesses
107
108
Al-Kawthar
The Abundance
108
109
Al-Kafirun
The Disbelievers
109
110
An-Nasr
The Divine Support
110
111
Al-Masad
The Palm Fiber
111
112
Al-Ikhlas
The Sincerity
112
113
Al-Falaq
The Daybreak
113
114
An-Nas
Mankind
114
Settings