2:124

وَإِذِ ٱبۡتَلَىٰٓ إِبۡرَٰهِــۧمَ رَبُّهُۥ بِكَلِمَٰتٍ فَأَتَمَّهُنَّ‌ۖ قَالَ إِنِّى جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا‌ۖ قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِى‌ۖ قَالَ لَا يَنَالُ عَهۡدِى ٱلظَّٰلِمِينَ١٢٤

Saheeh International

And [mention, O Muhammad], when Abraham was tried by his Lord with commands and he fulfilled them. [ Allah ] said, "Indeed, I will make you a leader for the people." [Abraham] said, "And of my descendants?" [ Allah ] said, "My covenant does not include the wrongdoers."

Tafsir "Ibn Kathir Partial" (Bengali)

ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন একজন মহান নেতা অত্র আয়াতে মহান আল্লাহ্‌র বন্ধু ইব্রাহীম (আঃ) এর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ তাঁকে তাওহীদের ব্যাপারে পৃথিবীর ইমাম পদে অধিষ্ঠিত করেছেন। যিনি বহু কষ্ট ও বিপদাপদ সহ্য করে মহান আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালনে অটলতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেনঃ ‘হে নবী! যেসব মুশরিক ও আহলে কিতাব ইবরাহীম (আঃ) এর ধর্মের ওপর থাকার দাবী করছে তাদেরকে ইবরাহীম (আঃ) কর্তৃক মহান আল্লাহ্‌র আদেশ পালন ও তাঁর প্রতি আনুগত্যের ঘটনাবলী শুনিয়ে দাও, তাহলে তারা বুঝতে পারবে যে, একমুখী ধর্ম ও ইবরাহীমের আদর্শের ওপর কারা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে; তারা নাকি তুমিও তোমার সহচরবৃন্দ?’ কুর’আন মাজীদের মধ্যে এক জায়গায় ইরশাদ হচ্ছেঃ ﴿وَاِبْرٰهِیْمَالَّذِیْوَفّٰۤى﴾‘আর ইবরাহীমের কিতাব, যে পালন করেছিলো তার দায়িত্ব।’ (৫৩ নং সূরা আন-নাজম, আয়াত নং ৩৭)অন্যত্র মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ﴿اِنَّ اِبْرٰهِیْمَ كَانَ اُمَّةً قَانِتًا لِّلّٰهِ حَنِیْفًا١ؕ وَ لَمْ یَكُ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَۙ۝۱۲۰ شَاكِرًا لِّاَنْعُمِهٖ١ؕ اِجْتَبٰىهُ وَهَدٰىهُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ۝۱۲۱ وَاٰتَیْنٰهُ فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً١ؕ وَاِنَّهٗ فِی الْاٰخِرَةِ لَمِنَ الصّٰلِحِیْنَؕ۝۱۲۲ ثُمَّ اَوْحَیْنَاۤ اِلَیْكَ اَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ اِبْرٰهِیْمَ حَنِیْفًا١ؕ وَ مَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ﴾‘নিশ্চয়ই ইবরাহীম ছিলো এক উম্মাত মহান আল্লাহ্‌র অনুগত, একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ; মহান আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন। আমি তাকে দুনিয়ায় ও আখিরাতে মঙ্গল দিয়েছিলাম। নিশ্চয়ই সে সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম। এখন আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করলাম, তুমি একনিষ্ঠ ইবরাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করো এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। (১৬ নং সূরা আন-নাহল, আয়াত নং ১২০-১২৩) মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ﴿قُلْ اِنَّنِیْ هَدٰىنِیْ رَبِّیْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ١ۚ۬ دِیْنًا قِیَمًا مِّلَّةَ اِبْرٰهِیْمَ حَنِیْفًا١ۚ وَ مَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ﴾তুমি বলোঃ নিঃসন্দেহে আমার রাব্ব আমাকে সঠিক ও নির্ভুল পথে পরিচালিত করেছেন, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দীন এবং ইবরাহীমের অবলম্বিত আদর্শ যা সে ঐকান্তিক নিষ্ঠার সাথে গ্রহণ করেছিলো। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। (৬ নং সূরা আন‘আম, আয়াত নং ১৬১) কুর’আনুল হাকীমের অন্য স্থানে ইরশাহ হচ্ছেঃ﴿مَا كَانَ اِبْرٰهِیْمُ یَهُوْدِیًّا وَّ لَا نَصْرَانِیًّا وَّ لٰكِنْ كَانَ حَنِیْفًا مُّسْلِمًا١ؕ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ۝۶۷ اِنَّ اَوْلَى النَّاسِ بِاِبْرٰهِیْمَ لَلَّذِیْنَ اتَّبَعُوْهُ وَ هٰذَا النَّبِیُّ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا١ؕ وَ اللّٰهُ وَلِیُّ الْمُؤْمِنِیْنَ﴾‘ইবরাহীম ইয়াহুদী ছিলো না এবং খ্রিষ্টানও ছিলো না, বরং সে সুদৃঢ় মুসলিম ছিলো এবং সে মুশরিকদের অর্থাৎ অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। নিঃসন্দেহে ঐ সব লোক ইবরাহীমের নিকটতম যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নবী এবং তাঁর সাথের মু’মিনগণ; এবং মহান আল্লাহ বিশ্বাসীগণের অভিভাবক। (৩ নং আল ‘ইমরান, আয়াত নং ৬৭-৬৮) ابْتِلَاءُ শব্দটির অর্থ হচ্ছে আয্মায়িশ বা পরীক্ষা। ইব্রাহীম (আঃ) এর পরীক্ষা, كَلِمَاةٌ শব্দের তাফসীর এবং পরীক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর কৃতকার্যতার সংবাদ كَلِمَات শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘শারী‘আত’ ‘আদেশ’ ‘নিষেধ” ইত্যাদি। كَلِمَات শব্দের ভাবার্থ كَلِمَات شَرْعِيَة ও হয়। যেমন মারইয়াম (আঃ) সম্বন্ধে ইরশাহ হচ্ছেঃ ﴿وَ تَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَّ عَدْلًا﴾‘আর সে তার রবের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহ সত্য বলে গ্রহণ করেছিলো; সে ছিলো অনুগতদের একজন।’ (৬৬ নং সূরা তাহরীম, আয়াত নং ১২)আবার كَلِمَات এর ভাবার্থ كَلِمَاتشَرْعِيَة ও হয়ে থাকে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ﴿وَتَمَّتْكَلِمَتُرَبِّكَصِدْقًاوَّعَدْلًا﴾‘আর তোমার রবের ‘আদেশ’ সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ।’ (৬ নং সূরা আন‘আম, আয়াত নং ১১৫)এই كَلِمَاة গুলো হয়তোবা সত্য সংবাদ, অথবা সুবিচার সন্ধান। মোট কথা, এই বাক্যগুলো পুরা করার প্রতিদান স্বরূপ ইবরাহীম (আঃ) ইমামতির পদ লাভ করেন। কোন্ কথাগুলি দ্বারা ইবরাহীম (আঃ) পরীক্ষিত হয়েছিলেন মহান আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ) কে কিভাবে পরীক্ষা করেছিলেন সেই বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রেও কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন ‘আবদুর রাজ্জাক (রহঃ) ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে বলেনঃ মহান আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ) কে ধর্মীয় ‘আমল তথা হাজ্জ দ্বারা পরীক্ষা করেছেন। (তাফসীর তাবারী ৩/১৩)আবু ইসহাক (রহঃ) ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (তাফসীর তাবারী ৩/১৩) ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ‘স্মরণ করো, যখন ইবরাহীম (আঃ) এর রাব্ব তাঁকে কয়েকটি বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন’ এর অর্থ হলো মহান আল্লাহ তাঁকে তাহারাত অর্থাৎ পবিত্রতা, ওযূ দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন। পাঁচটি শরীরের ওপরের অংশের এবং পাঁচটি শরীরের নীচের অংশের মাধ্যমে। ওপরের অংশগুলো হলো মোচ কাটা, চুল কাটা, কুলি করা, নাকে পানি দিয়ে তা ফেলে দেয়া এবং মিসওয়াক করা। আর নীচের অংশগুলো হলো নখ কাটা, নাভীর নীচের অংশের লোম কাটা, খাতনা করা, বগলের লোম তুলে ফেলা এবং শৌচক্রিয়া সম্পাদন করা। (মুসনাদে ‘আবদুর রাজ্জাক ১/৫৭)ইবনে আবি হাতিম (রহঃ) বলেন যে, একই বর্ণনা করেছেন সা‘ঈদ ইবনে মুসাইয়িব (রহঃ), মুজাহিদ (রহঃ), শা‘বী (রহঃ), নাখ‘ঈ (রহঃ). আবূ সালিহ (রহঃ) আবূ জাল্দ (রহঃ) এবং অন্যান্যরা। (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/৩৫৯)সহীহ মুসলিমে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ ‘দশটি কাজ হচ্ছে প্রাকৃতিক ও ধর্মের মূলঃ (১) গোঁফ ছাটা, (২) শ্মশ্রু লম্বা করা, (৩) মিসওয়াক করা, (৪) নাকে পানি দেয়া, (৫) নখ কাটা, (৬) আঙ্গুলের মাঝখানের অংশগুলো ধৌত করা, (৭) বগলের লোম উঠিয়ে ফেলা, (৮) নাভীর নীচের লোম কেটে ফেলা, (৯) শৌচ ক্রিয়া সম্পাদন করা; বর্ণনাকারী বলেনঃ ‘দশমটি আমি ভুলে গেছি। (১০) সম্ভবতঃ তা কুলি করা হবে।’ (সহীহ মুসলিম ১/২২৩) সহীহুল বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ‘পাঁচটি কাজ প্রকৃতির অন্তর্গত। (১) খাৎনা করা, (২) নাভির নীচের লোম কেটে ফেলা, (৩) গোঁফ কাটা, (৪) নখ কাটা এবং (৫) বগলের লোম উঠিয়ে ফেলা।’ (ফাতহুল বারী ১০/৩৪৭, সহীহ মুসলিম ১/২২২)ইবনে আবি হাতিম (রহঃ) ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ)-এর একটি সূত্র উল্লেখ করে বলেন, সেই কালিমাগুলো ছিলো দশটি যার ছয়টি ছিলো মানুষের মধ্যে আর চারটি ছিলো ইসলামের শি‘আর এর মধ্যে। যে ছয়টি কালিমা মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট তা হলো ১. নাভীর ও বগলের নীচের চুল কাটা। ২. খাৎনা করা। ৩. নখ কাটা ৪. মোচ খাটো করা। ৫. মিসওয়াক করা। ৬. জুমু‘আর দিন গোসল করা। আর চারটি ছিলো ইসলামের শি‘আর তা হলো, ১. বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা, ২. সাফা মারওয়া পর্বতদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানো। ৩. কংকর নিক্ষেপ করা এবং ৪. তাওয়াফে ইফাযা করা। (সনদ সহীহ। তাফসীর ইবনু আবি হাতিম)‘আবদুল্লাহ বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে পুরো ইসলাম। এর তিনটি অংশ রয়েছে। দশটির বর্ণনা আছে সূরাহ্ বারা’আতের মধ্যে التئبون হতে مومنين পর্যন্ত। অথাৎ তাওবাহ করা, ইবাদত করা, প্রশংসা করা, আল্লাহ্‌র পথে দৌড়ান, রুকূ‘ করা, সাজদাহ করা, ভালো কাজে আদেশ করা, মন্দ কাজ হতে নিষেধ করা, মহান আল্লাহ্‌র সীমার রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং ঈমান আনা। দশটির বর্ণনা রয়েছে সূরাহ মু’মিনূন এর قدافلح হতে يحفظون পর্যন্ত এরই মধ্যে এবং সূরা আল মা‘আরিজ এর মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ বিনয় ও নম্রতার সাথে সালাত আদায় করা, বাজে কথা ও কাজ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়া, যাকাত প্রদান করা, লজ্জা স্থানকে রক্ষা করা, অঙ্গীকার করা, সালাত প্রতিষ্ঠায় মগ্ন থাকা ও তার হিফাযত করা, কিয়ামতের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা, শাস্তিকে ভয় করতে থাকা এবং সত্য সাক্ষ্যের ওপর অটল থাকা। দশটির বর্ণনা সূরাহ আল-আহযাবের أنالمسلمين হতে عظيم পর্যন্ত এর মধ্যে রয়েছে। অথাৎ ইসলাম গ্রহণ করা, ঈমান রাখা , কুর’আন মাজীদ পাঠ করা, সত্য কথা বলা, ধৈর্য ধারণ করা, বিনয়ী হওয়া, সাওম রাখা, ব্যভিচার থেকে বেঁচে থাকা, মহান আল্লাহকে সদা স্মরণ করা। এই এ ত্রিশটি নির্দেশ যে পালন করবে সেই পুরোপুরি ইসলামের অনুসারী হবে এবং মহান আল্লাহ্‌র শাস্তি হতে রক্ষা পাবে।ইব্রাহীম (আঃ) এর كلمات এর মধ্যে তার স্বীয় গোত্র হতে পৃথক হওয়া তদানীন্তন বাদশাহ হতে নির্ভয় হয়ে থাকা ও তাবলীগ করা, অতঃপর মহান আল্লাহ্‌র পথে যে বিপদ এসেছে তাতে ধৈর্য ধারণ করা, তারপর দেশ ও ঘর বাড়ি মহান আল্লাহ্‌র পথে ছেড়ে দিয়ে হিজরত করা, অতিথির সেবা করা, মহান আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জীবনের ও ধন মালের বিপদাপদ সহ্য করা এমনকি নিজের ছেলেকে নিজের হাতে মহান আল্লাহ্‌র পথে কুরবানী করা। (তাফসীরে ‘আব্দুর রাজ্জাক, প্রথম খণ্ড, ৭৬ পৃষ্ঠা, হাদীস ১১৪, তাফসীরে ত্বাবারী ৩/১৯৩৫) মহান আল্লাহ্‌র প্রিয় বান্দা ইব্রাহীম (আঃ) এই সব নির্দেশই পালন করেছিলেন। সূর্য, চন্দ্র, ও তারকারাজির দ্বারা ও তার পরীক্ষা নেয়া হয়েছিলো। (তাফসীরে ত্বাবারী ৩/১৯৩৬) ইমামতি, মহান আল্লাহ্‌র ঘর নির্মাণের নির্দেশ, হাজ্জের নির্দেশাবলী, মাকামে ইবরাহীম, বায়তুল্লাহতে অবস্থানকারীদের আহার্য্য এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তার ধর্মের ওপর প্রেরণ ইত্যাদির মাধ্যমেও তার পরীক্ষা নেয়া হয়েছিলো। ইবনে আবি হাতিম (রহঃ) স্বীয় তাফসীরে একটি সূত্র উল্লেখ করেছেন যে, মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, মহান আল্লাহ তাঁকে বলেন, হে প্রিয় তোমাকে আমি পরীক্ষা করছি, কি হয় তাই দেখছি। তখন তিনি বলেনঃ হে আমার প্রভু! আমাকে জনগণের ইমাম বানিয়ে দিন। এই কা‘বাকে মানুষের জন্য পূর্ণ মিলন কেন্দ্রে পরিণত করুন। এখানকার অধিবাসীদের নিরাপত্তা দান করুন। আমাদেরকে মুসলমান ও অনুগত বান্দা করে নিন। আমার বংশধরের মধ্যে আপনার অনুগত একটি দল রাখুন। এখানকার অধিবাসীদেরকে ফলের আহার্য দান করুন। এই সবই মহান আল্লাহ পুরো করেন এবং সবই তাকে দান করেন। (সনদ সহীহ। তাফসীরে ইবনে আবি হাতিম) শুধুমাত্র তার একটি আশা আল্লাহ তা‘আলা পুরো করেননি। তা হচ্ছে এই যে, তিনি মহান আল্লাহ্‌র নিকট প্রার্থনা জানিয়ে ছিলেনঃ হে মহান আল্লাহ! আমার সন্তানদেরকে ইমামতি দান করুন। এর উত্তরে মহান আল্লাহ বলেন, আমার এ বিরাট দায়িত্ব অত্যাচারীদের ওপর অর্পিত হতে পারে না। كلمات এর ভাবার্থ এর সঙ্গীয় আয়াতসমূহও হতে পারে। মুওয়াত্তা, ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে যে,সর্বপ্রথম খাৎনার প্রচলনকারী, অতিথি সেবাকারী, নখ কর্তনের প্রথা চালুকারী, গোঁফ ছাঁটার নিয়ম প্রবর্তনকারী এবং সাদা চুল দর্শনকারী হচ্ছেন ইব্রাহীম (আঃ)। সাদা চুল দেখে তিনি মহান আল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ হে প্রভু! এটা কি? আল্লাহ তা‘আলা উত্তরে বলেছিলেনঃ এ হচ্ছে সম্মান ও পদমর্যাদা। তখন তিনি বলেন, হে মহান আল্লাহ! তাহলে এটা আরো বেশি করুন। (হাদীসটি সহীহ। তাফসীরে কুরতুবী-২/১০৫ পৃষ্ঠা, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক ২/৪/৯২২) সর্বপ্রথম মিম্বারের ওপর ভাষণ দানকারী, দূত প্রেরণ কারী তরবারি চালনাকারী, মিসওয়াক কারী, পানি দ্বারা শৌচ ক্রিয়া সম্পাদনকারী এবং পায়জামা পরিধানকারীও হচ্ছেন ইব্রাহীম (আঃ)। মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি যদি মিম্বার নির্মাণ করি তবে আমার পিতা ইব্রাহীম (আঃ)তো তা নির্মাণ করেছিলেন। আমি যদি হাতে ছড়ি রাখি তবে এটাও ইব্রাহীম (আঃ) এরই সুন্নাত। (হাদীসটি য‘ঈফ জিদ্দান) তবে এটি একটি দুর্বল হাদীস। মহান আল্লাহই ভালো জানেন। একটি হাদীসে রয়েছে, আনাস (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন, মহান আল্লাহ ইব্রাহীম (আঃ) সম্বন্ধে وابرحيمالذيوفى ‘সেই ইবরাহীম (আঃ) যে বিশ্বস্ততা প্রদর্শন করেছে’ (৫৭ নং সূরাহ আল হাদীদ, আয়াত ৩৭) কেন বলছেন তা তোমাদেরকে বলবো কি? তার কারণ এই যে, তিনি প্রত্যহ সকাল সন্ধ্যায় পাঠ করতেনঃ﴿فَسُبْحٰنَ اللّٰهِ حِیْنَ تُمْسُوْنَ وَحِیْنَ تُصْبِحُوْنَ۝وَ لَهُ الْحَمْدُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ عَشِیًّا وَّحِیْنَ تُظْهِرُوْنَ۝ یُخْرِجُ الْحَیَّ مِنَ الْمَیِّتِ وَیُخْرِجُ الْمَیِّتَ مِنَ الْحَیِّ وَ یُحْیِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا١ؕ وَكَذٰلِكَ تُخْرَجُوْنَ﴾‘অতএব তোমরা মহান আল্লাহ্‌র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো যখন তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হও আর সকালে, আর অপরাহ্নে ও যোহরের সময়ে। আর আসমানসমূহে ও যমীনে প্রশংসা তো একমাত্র তাঁরই। তিনি জীবন্তকে বের করেন মৃত থেকে আর মৃতকে বের করেন জীবন্ত থেকে। যমীনকে তিনি পুনরায় জীবিত করেন তার মৃত্যুর পর, এভাবেই তোমাদের বের করা হবে।’ (৩০ নং সূরা আর রূম, আয়াত ১৭-১৯। তাফসীরে ত্বাবারী ১/১৫/১৯৩৮, মুসনাদ আহমাদ ৩/৪৩৯, সনদ য‘ঈফ)একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি প্রত্যহ চার রাকা‘আত সালাত পড়তেন। (হাদীস য‘ঈফ জিদ্দান। তাফসীরে ত্বাবারী-৩/১৬/১৯৩৯) কিন্তু এ দু’টি হাদীসই দুর্বল এবং এগুলোর মধ্যে কোন কোন বর্ণনাকারী দুর্বল। এগুলো দুর্বল হওয়ার বহু কারণ রয়েছে বরং দুর্বলতার কথা উল্লেখ না করে এগুলোর বর্ণনা করাই জায়িয নয়। রচনারীতি দ্বারাও এগুলোর দুর্বলতা প্রমাণিত হচ্ছে।মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রহঃ) ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ ইব্রাহীম (আঃ) এর كَلِمَات এর মধ্যে তাঁর স্বীয় গোত্র হতে পৃথক হওয়া, তদানীন্তন বাদশাহ্ হতে নির্ভয় হয়ে থাকা ও তাবলীগ করা, অতঃপর মহান আল্লাহ্‌র পথে চলতে গিয়ে যে বিপদ এসেছে তাতে ধৈর্য ধারণ করা, তারপর দেশ ও ঘর-বাড়ি মহান আল্লাহ্‌র পথে ছেড়ে দিয়ে হিজরত করা, অতিথির সেবা করা, ধন সম্পদের বিপদাপদ সহ্য করা এমনকি মহান আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজের জীবন ও ছেলেকে মহান আল্লাহ্‌র পথে কুরবানী করা। মহান আল্লাহ্‌র প্রিয় বান্দা ইবরাহীম (আঃ) এই সমুদয় নির্দেশই পালন করেছিলেন। সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজরি দ্বারাও তাঁর পরীক্ষা নেয়া হয়েছিলো। ইমামতি, মহান আল্লাহ্‌র ঘর নির্মাণের নির্দেশ, হাজ্জের নির্দেশাবলী, মাকামে ইবরাহীম, বায়তুল্লাহয় অবস্থানকারীদের আহার্য এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর ধর্মের ওপর প্রেরণ ইত্যাদির মাধ্যমেও তাঁর পরীক্ষা নেয়া হয়েছিলো। মহান আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ) কে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করার পর এবার এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। মহান আল্লাহ তাঁকে বলেনঃ ﴿اَسْلِمْ١ۙقَالَاَسْلَمْتُلِرَبِّالْعٰلَمِیْنَ﴾‘তুমি আনুগত্য স্বীকার করো; সে বলেছিলো, আমি বিশ্বজগতের রবের নিকট আত্মসমর্পণ করলাম।’ (২ নং সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ১৩১) অন্যায় দ্বারা মহান আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়না ইবরাহীম (আঃ) তাঁর ইমামতির সুসংবাদ শোনা মাত্রই তাঁর সন্তানদের জন্য এই প্রার্থনা জানান এবং তা গৃহীতও হয়। কিন্তু সাথে সাথে তাঁকে বলা হয়ে যে, তাঁর সন্তানদের মধ্যে অনেকে অবাধ্য হবে, তাদের ওপর তাঁর অঙ্গীকার পৌঁছবে না এবং তাদেরকে ইমাম করা হবে না। সূরা ‘আনকাবূতে এ আয়াতের ভাবার্থ পরিস্কার হয়েছে। ইব্রাহীম (আঃ)-এর এ প্রার্থনা গৃহীত হয়। সেখানে রয়েছেঃ ﴿وَجَعَلْنَافِیْذُرِّیَّتِهِالنُّبُوَّةَوَالْكِتٰبَ﴾‘আর তার বংশধরদের জন্য স্থির করলাম নাবুওয়াত ও কিতাব।’ (২৯ নং সূরা আনকাবূত, আয়াত নং ২৭)ইব্রাহীম (আঃ)-এর পরে যতো রাসূল (আঃ) এসেছেন, সবাই তাঁর বংশধর ছিলেন এবং যতো আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে সবই তাঁর সন্তানদের ওপরই হয়েছে। এখানে এটাও সংবাদ দেয়া হচ্ছে যে, তাঁর সন্তানদের মধ্যে অনেকে অত্যাচারীও হবে।ইমাম ইবনে জারীর (রহঃ) বলেন, এ আয়াত থেকে জানা যাচ্ছে যে, অত্যাচারীকে ইমাম নিযুক্ত করা যাবে না। যালিম' এর ভাবার্থ কেউ কেউ মুশরিকও নিয়েছেন। عهد এর ভাবার্থ নির্দেশ। ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যালিমকে কোন কিছুর ওলী ও নেতা নিযুক্ত করা উচিত নয়, যদিও সে ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর হয়। কেননা তার প্রার্থনা তাঁর সন্তানদের মধ্যে হতে সৎ লোকদের ব্যাপারে গৃহীত হয়েছিলো। এর অর্থ এটাও হতে পাবে যে,যালিমের কাছে কোন অঙ্গীকার করলে তা পুরো করা হবে না, বরং ভেঙে দেয়া হয়। আবার ভাবার্থ এটাও হতে পারে যে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ মঙ্গলের অঙ্গীকার তার ওপর প্রয্যেজ্য নয়। দুনিয়ায় সে সুখে শান্তিতে আছে তা থাক, কিন্তু পরকালে তার কোন অংশ নেই।عهد এর অর্থ ধর্মও করা হয়েছে। অর্থাৎ তোমার সমস্ত সন্তান ধর্মভীরু হবে না। কুর’আন মাজীদের মধ্যে অন্য জায়গায় রয়েছেঃ﴿وَبٰرَكْنَا عَلَیْهِ وَعَلٰۤى اِسْحٰقَ وَمِنْ ذُرِّیَّتِهِمَا مُحْسِنٌ وَّ ظَالِمٌ لِّنَفْسِه مُبِیْنٌ﴾ আর আমি বরকত দিলাম তাকে আর ইসহাককে; তাদের দু’জনের বংশধরদের কতিপয় সৎকর্মশীল। আর কতিপয় নিজেদের প্রতি সুস্পষ্ট যুলমকারী।’ (৩৭ নং সূরা আস-সাফফাত, আয়াত:১১৩) ‘আলী ইবনে আবূ তালিব বলেন, لا طاعة إلا في المعروف ‘কেবল কল্যাণমূলক কাজেই আনুগত্য করতে হবে।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী-১৩/১৩০/৭১৪৫, সহীহ মুসলিম-৩/৩৯/১৪৬৯, সুনান আবূ দাউদ-৩/৪০/২৬২৫)ইবনে খুওয়াইয মান্দাদ আল মালিকী (রহঃ) বলেন যে, অত্যাচারী ব্যক্তি খালীফা, বিচারক, মুফতী, সাক্ষী এবং বর্ণনাকারী হতে পারে না।

Arabic Font Size

30

Translation Font Size

17

Arabic Font Face

Help spread the knowledge of Islam

Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.

Support Us