Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 115
Saheeh International
And to Allah belongs the east and the west. So wherever you [might] turn, there is the Face of Allah . Indeed, Allah is all-Encompassing and Knowing.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
অবতীর্ণ হওয়ার কারণ
এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এবং তাঁর সাহাবীবর্গকে (রাঃ) সান্ত্বনা দেয়া হচ্ছে, যাদেরকে মক্কা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ও তাঁর মসজিদে প্রবেশ করা হতে বিরত রাখা হয়েছে। মক্কায় অবস্থান কালে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়তেন। তখন কাবা শরীফও সামনে থাকতো। মদীনায় আগমনের পর ১৬/১৭ মাস পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করেই তারা নামায পড়েন। কিন্তু পরে আল্লাহ পাক কাবা শরীফের দিকে মুখ করে নামায পড়ার নির্দেশ দেন।
কুরআন মাজীদে সর্বপ্রথম রহিতকৃত (মানসূখ) হুকুম
ইমাম আবু আবীদ কাসিম বিন সালাম (রঃ) স্বীয় পুস্তক নাসিখ ওয়াল মানসূখ’ এর মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, কুরআন মাজীদের মধ্যে সর্বপ্রথম মানসূখ হুকুম হচ্ছে এই কিবলাহই অর্থাৎ উপরোক্ত আয়াতটিই। এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়তে থাকেন। অতঃপর নিম্নের আয়াতটি অবতীর্ণ হয়ঃ (আরবি)
অর্থাৎ যেখান হতেই তুমি বাইরে যাবে, স্বীয় মুখ মণ্ডল মাসজিদ-ইহারামের দিকে রাখবে।' (২ ১৪৯) তখন তিনি বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে মুখ করে নামায পড়তে শুরু করেন। মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়তে থাকলে ইয়াহুদীরা খুবই খুশী হয়। কিন্তু কয়েক মাস পরে যখন এই হুকুম মানসূখ হয়ে যায় এবং তার আকাংখা ও প্রার্থনা অনুযায়ী বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে নামায পড়ার জন্যে আদিষ্ট হন তখন ঐ ইয়াহূদীরাই তাঁকে বিদ্রুপ করে বলতে থাকে যে, কিবলাহ্ পরিবর্তিত হলো কেন? তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ ইয়াহুদীদেরকে যেন বলা হচ্ছে যে, এ প্রতিবাদ কেন? যে দিকে আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ হবে সে দিকেই ফিরে যেতে হবে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রঃ) হতে এটাও বর্ণিত আছে যে, এর অর্থ হচ্ছে ‘পূর্ব ও পশ্চিম যেখানেই থাকে না কেন মুখ কাবা শরীফের দিকে কর। কয়েকজন মনীষীর বর্ণনা আছে যে, এ আয়াতটি কাবা শরীফের দিকে মুখ করে নামায পড়ার নির্দেশ দেয়ার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছিল এবং ভাবার্থ এই যে, পূর্ব ও পশ্চিম যে দিকেই চাও মুখ ফিরিয়ে নাও, সব দিকই আল্লাহ তা'আলার এবং সব দিকেই তিনি বিদ্যমান রয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা হতে কোন জায়গা শূন্য নেই। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ ‘অল্প বেশী যাই হোক না কেন, যেখানেই হোক না কেন, আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন।' (৫৮:৭) অতঃপর এই নির্দেশ উঠে গিয়ে কাবা শরীফের দিকে মুখ করা ফরয হয়ে যায়।
এ উক্তির মধ্যে রয়েছে যেঃ “আল্লাহ তা'আলা হতে কোন জায়গা শূন্য নেই’ এর ভাবার্থ যদি আল্লাহ তা'আলার ইলম বা অবগতি হয় তবে তো অর্থ। সঠিকই হবে যে, কোন স্থানই আল্লাহ পাকের ইলম হতে শূন্য নেই। আর যদি এর ভাবার্থ হয় ‘আল্লাহ আ'আলার সত্তা’ তবে এটা সঠিক হবে না। কেননা, আল্লাহ রাব্বল আলামীন যে তাঁর সৃষ্টজীবের মধ্য হতে কোন জিনিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন তা থেকে তার পবিত্র সত্তা বহু ঊর্ধে। এ আয়াতটির ভাবার্থ এও বর্ণনা করা হয়েছে যে, এ নির্দেশ হচ্ছে সফরে দিক ভুলে যাওয়ার সময় ও ভয়ের সময়ের জন্যে। অর্থাৎ এ অবস্থায় নফল নামায যে কোন দিকে মুখ করে পড়লেই চলবে।
হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর উস্ত্রীর মুখ যে দিকেই থাকতো তিনি সেই দিকেই ফিরে নামায পড়ে নিতেন এবং বলতেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিয়ম এটাই ছিল। সুতরাং এ আয়াতের ভাবার্থ এটাও হতে পারে। আয়াতের উল্লেখ ছাড়াই এ হাদীসটি সহীহ মুসলিম, জামেউত তিরমিযী, সুনান-ই- নাসাঈ, মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম, তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই ইত্যাদির মধ্যেও বর্ণিত আছে এবং মূল সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যেও বিদ্যমান রয়েছে। সহীহ বুখারীর মধ্যে রয়েছে যে, হযরত ইবনে উমার (রাঃ) কে যখন ভয়ের সময়ের নামায পড়া সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হতো.তখন ভয়ের নামাযের বর্ণনা করতেন এবং বলতেনঃ ‘এর চেয়েও বেশী ভয় হলে পায়ে চলা অবস্থায় এবং আরোহণের অবস্থায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে নিও-মুখ কিবলার দিকে হোক আর নাই হোক।'
হযরত নাফে' (রঃ) বর্ণনা করেনঃ “আমার ধারণায় হযরত আবদুল্লাহ বিন। উমার (রাঃ) ওটা মারফু রূপে বর্ণনা করতেন। ইমাম শাফিঈর (রঃ) প্রসিদ্ধ উক্তি এবং ইমাম আবু হানীফার (রঃ) উক্তি রয়েছে যে, সফরে সওয়ারীর উপর নফল নামায পড়া জায়েয, সেই সফর নিরাপদেরই হোক বা ভীতি পূর্ণই হোক বা যুদ্ধেরই হোক। ইমাম মালিক (রঃ) এবং তাঁর দল এর উল্টো বলেন। ইমাম আবু ইউসুফ এবং আবু সাঈদ ইসতাখারী (রঃ) সফর ছাড়া অন্য সময়েও নফল নামায সওয়ারীর উপর পড়া জায়েয বলে থাকেন। হযরত আনাস (রাঃ) এটা বর্ণনা করেছেন।
ইমাম আবু জাফর তাবারীও (রঃ) এটা পছন্দ করেছেন। এমনকি তিনি তো পায়ে চলা অবস্থায়ও এটা বৈধ বলেছেন। কোন মুফাসৃসিরের মতে এ আয়াতটি ঐ সব লোকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় যারা কিবলাহ্ সম্পর্কে অবহিত ছিল না এবং নিজ নিজ ধারণা মতে বিভিন্ন দিকে মুখ করে নামায পড়েছিল। এ আয়াতের দ্বারা তাদের নামাযকে সিদ্ধ বলা হয়েছে।
হযরত রাবেআহ্ (রাঃ) বলেন-“আমরা এক সফরে নবী (সঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। এক মনযিলে আমরা অবতরণ করি। রাত্রি অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। জনগণ পাথর নিয়ে নিয়ে প্রতীক রূপে কিবলাহর দিকে রেখে নামায পড়তে আরম্ভ করে দেন। সকাল হলে দেখা যায় যে, কিবলাহর দিকে মুখ করে নামায আদায় হয়নি। আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এটা বর্ণনা করলে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।' এ হাদীসটি জামেউত তিরমিযীর মধ্যে রয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) একে হাসান বলেছেন। এর দু'জন বর্ণনাকারী দুর্বল।
অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, সেই সময় মেঘে অন্ধকার ছেয়ে গিয়েছিল এবং আমরা নামায পড়ে নিজ নিজ সামনে রেখা টেনে দেই যেন সকালের আলোতে জানা যায় যে, নামায কিবলার দিকে হয়েছে কি হয় নি। সকালে জানা যায় যে, আমরা কিবলাহ ভুল করেছি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে ঐ নামায পুনর্বার আদায় করার নির্দেশ দেননি। সেই সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এ বর্ণনাতেও দু’জন বর্ণনাকারী দুর্বল। এ বর্ণনাটি দারকুতনীর হাদীস গ্রন্থে বিদ্যমান রয়েছে। একটি বর্ণনায় আছে যে, তাদের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ছিলেন না। সনদ হিসেব এটাও দুর্বল। এরূপ নামায পুনরায় পড়তে হবে কিনা এ ব্যাপারে আলেমগণের দু'টি উক্তি রয়েছে। সঠিক উক্তি এটাই যে, এ নামায দ্বিতীয় বার পড়তে হবে না। আর এ উক্তিরই সমর্থনে ঐ হাদীসগুলো এসেছে, যে গুলো উপরে বর্ণিত হলো।
কোন কোন মুফাসসিরের মতে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার কারণ ছিলেন নাজ্জাসী। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সাহাবীগণকে (রাঃ) বলেনঃ ‘তোমরা তার গায়েবী জানাযার নামায আদায় কর।' তখন কেউ কেউ বলেন যে, তিনি তো মুসলমান ছিলেন না; বরং খ্রীষ্টান ছিলেন। সেই সময় নিম্নের আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ ‘কোন কোন আহলে কিতাব আল্লাহর উপর ঐ কিতাবের উপর যা তোমাদের উপর (মুসলমানদের) অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা তোমাদের পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছিল (এ সবের উপর) ঈমান এনে থাকে ও আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করে থাকে। তখন তারা বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তিনি তো কিবলার দিকে মুখ করে নামায পড়তেন না। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কিন্তু হাদীসের সংজ্ঞা হিসেবে এ বর্ণনাটি গরীব। এর অর্থ এটাও বলা হয়েছে যে, নাজ্জাসী বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়তেন, কারণ তিনি জানতেন না যে, ওটা মানসূখ হয়েছে।
ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) তার জানাযার নামায পড়েছিলেন। গায়েবী জানাযার নামায পড়া যে উচিত এটা তার একটি দলিল। কিন্তু যারা এটা স্বীকার করেন না তাঁরা এটাকে বিশিষ্ট মনে করে থাকেন এবং এর তিনটি ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। প্রথম এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর জানাযা দেখতে পেয়েছিলেন, কারণ ভূমিকে তার জন্যে গুটিয়ে দেয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় এই যে, তথায় নাজ্জাসীর জন্যে জানাযা পড়ার কোন লোক ছিল না বলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর গায়েবী জানাযার নামায পড়েছিলেন। ইবনে আরাবী (রঃ) এই উত্তরই পছন্দ করেছেন। কুরতুবী (রঃ) বলেন যে, একজন বাদশাহ্ মুসলমান হবে আর তার পাশে তার কওমের কোন লোক মুসলমান থাকবে না, এটা অসম্ভব কথা। ইবনে আরাবী (রঃ) এর উত্তরে বলেন যে, শরীয়তে জানাযার নামাযের যে ব্যবস্থা রয়েছে এটা হয়তো তারা জানতো না। এ উত্তর খুবই চমৎকার। তৃতীয় এই যে, তার গায়েবী জানাযার নামায পড়ায় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উদ্দেশ্য ছিল অন্যদের আগ্রহ উৎপাদন করা এবং অন্যান্য বাদশাহদেরকে ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করা।
তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই এর মধ্যে একটি হাদীস রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ মদীনা, সিরিয়া এবং ইরাকবাসীদের কিবলাহ হচ্ছে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থান। এ বর্ণনাটি জামেউত তিরমিযীর মধ্যেও অন্য শব্দের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। এর একজন বর্ণনাকারী আবু মাশারের স্মরণ শক্তি সম্পর্কে কোন কোন জ্ঞানী ব্যক্তি সমালোচনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) অন্য একটি সনদেও এ হাদীসটি নকল করেছেন এবং একে হাসান সহীহ বলেছেন। হযরত উমার বিন খাত্তাব (রাঃ), হযরত আলী বিন আবি তালিব (রাঃ) এবং হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) হতেও এটা বর্ণিত হয়েছে।
হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলেনঃ যখন তুমি পশ্চিমকে তোমার ডান দিকে ও পূর্বকে বাম দিকে করবে, তখন তোমার সামনের দিকই কিবলাহ্ হয়ে যাবে।' হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতেও উপরের মতই আয় একটি হাদীস বর্ণিত আছে যে, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থান হচ্ছে কিবলাহ্।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতের ভাবার্থ এটাও হতে পারে যে, আল্লাহ পাক যেন বলেছেনঃ “প্রার্থনা জানানোর সময় তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল যে দিকেই করবে সে দিকেই আমাকে পাবে এবং আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করবো।" হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন (আরবি) অর্থাৎ “যখন তোমরা আমার নিকট প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করবো” (৪০:৬০) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, তখন জনগণ বলেনঃ “আমরা কোন্ দিকে প্রার্থনা করবো?” তাঁদের এ কথার উত্তরে (আরবি) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, তিনি পরিবেষ্টনকারী ও পূর্ণ জ্ঞানবান, যার দান দয়া এবং অনুগ্রহ সমস্ত সৃষ্টজীবকে ঘিরে রেখেছে, তিনি সমস্ত কিছু জানেনও বটে। কোন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম জিনিসও তার জ্ঞানের বাইরে নেই।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings