Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 109
Saheeh International
Many of the People of the Scripture wish they could turn you back to disbelief after you have believed, out of envy from themselves [even] after the truth has become clear to them. So pardon and overlook until Allah delivers His command. Indeed, Allah is over all things competent.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১০৮ থেকে ১১০ নং আয়াতের তাসফীর:
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাফি বিন হুরাইমালা অথবা ওহাব বিন জায়েদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল: হে মুহাম্মাদ! আকাশ থেকে অবতীর্ণ আমাদের জন্য একটি কিতাব নিয়ে এস যা আমরা পড়ব। অথবা আমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত কর, যার দরুন আমরা তোমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করব এবং তোমার আনুগত্য করব। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৩৩৩, লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযূল, পৃঃ ২৬)
অত্র আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা সম্পর্কিত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। জিজ্ঞাসা দু’উদ্দেশ্যে হতে পারে:
১. জিজ্ঞাসিত ব্যক্তিকে সমস্যায় ফেলা এবং তাকে অমান্য করার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করা থেকে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে নিষেধ করছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَسْئَلُوْا عَنْ اَشْیَا۬ئَ اِنْ تُبْدَ لَکُمْ تَسُؤْکُمْ)
হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন কর না যা তোমাদের নিকট প্রকাশ হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। (সূরা মায়িদাহ ৫:১০১) এরূপ প্রশ্ন করেছিল মূসা (আঃ)-কে বানী ইসরাঈলরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَسْئَلُکَ اَھْلُ الْکِتٰبِ اَنْ تُنَزِّلَ عَلَیْھِمْ کِتٰبًا مِّنَ السَّمَا۬ئِ فَقَدْ سَاَلُوْا مُوْسٰٓی اَکْبَرَ مِنْ ذٰلِکَ فَقَالُوْٓا اَرِنَا اللہَ جَھْرَةً)
“কিতাবীগণ তোমাকে তাদের জন্য আসমান হতে কিতাব অবতীর্ণ করতে বলে; অথচ তারা মূসার নিকট এটা অপেক্ষাও বড় দাবি করেছিল। তারা বলেছিল, আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও।”(সূরা নিসা ৪:১৫৩) হাদীসেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৭২৮৮)
২. কিছু জানার জন্য ও সঠিক পথ পাবার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং তা প্রশংসনীয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاسْأَلُوآ أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ )
“তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞাসা করো।”(সূরা নাহল ১৬:৪৩)
জানার জন্য জিজ্ঞাসা করার প্রতি হাদীসেও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এমনকি বলা হয়েছে অজানা রোগের চিকিৎসা হল জিজ্ঞাসা করা। (আবূ দাঊদ হা: ৩৩৬, ৩৩৭, হাসান) সুতরাং আমাদের উচিত কিছু জানার জন্য আলেমদের জিজ্ঞাসা করা, তাদেরকে সমস্যায় ফেলার জন্য নয়।
(وَدَّ كَثِيْرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: হুহাই বিন আখতাব ও ইয়াসিন বিন আখতাব মুসলিমদের প্রতি সর্বাপেক্ষা বেশি হিংসা পোষণ করত। তারা জনগণকে ইসলাম থেকে সরিয়ে রাখত। তাদের সম্পর্কেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কা‘ব বিন আশরাফ ইয়াহূদীও এ কাজে লিপ্ত থাকত। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
হিংসা সাধারণত দু’প্রকার: প্রথম প্রকার: বৈধ ও প্রশংসণীয়। যেমন হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’টি কাজ ছাড়া কোন কাজে হিংসা করা বৈধ নয়। ১. আল্লাহ তা‘আলা যাকে কুরআনের শিক্ষা দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে তেলাওয়াত করে ও অন্যদের শিক্ষা দেয়। ২. আল্লাহ তা‘আলা যাকে সম্পদ দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে ভাল কাজে সম্পদ ব্যয় করে। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩, সহীহ মুসলিম হা: ৮১৫)
এ প্রকারকে আরবি ভাষায় حسد শব্দ ব্যবহার হলেও তা غبطة প্রতিশব্দ ব্যবহার হয়। যার অর্থ হলো ঈর্ষা করা অর্থাৎ অন্যের কোন ক্ষতি কামনা ছাড়াই তার মত হবার ইচ্ছা পোষণ করা।
দ্বিতীয় প্রকার: অবৈধ ও নিন্দনীয় কোন ব্যক্তি থেকে আল্লাহ তা‘আলার দেয়া নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়ার আকাক্সক্ষা করা। অথবা তার কোন অকল্যাণ হোক তা কামনা করা এবং নিজে ঐ নেয়ামত বা কল্যাণের মালিক হবার আশা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰي مَآ اٰتَاهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِه۪)
“অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের সাথে হিংসা করে?” (সূরা নিসা ৪:৫৪)
আয়াতে দ্বিতীয় প্রকার হিংসার কথা বলা হয়েছে। কারণ ইয়াহূদীরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুআতের সত্যতা জানার পরেও মেনে নেয়নি বরং হিংসার বশবর্তী হয়ে সাহাবীদের কাফির বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছিল।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের হিংসা-বিদ্বেষের সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা মুসলিমদের সাথে কিরূপ হিংসা করে। হিংসা তাদেরকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে যে, তারা চায় তোমরা যদি ঈমান আনার পর কাফির হয়ে যেতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالَتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ اٰمِنُوْا بِالَّذِیْٓ اُنْزِلَ عَلَی الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَجْھَ النَّھَارِ وَاکْفُرُوْٓا اٰخِرَھ۫ لَعَلَّھُمْ یَرْجِعُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল বলে, ঈমানদারদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে দিনের প্রথম ভাগে তা বিশ্বাস কর এবং দিনের শেষ ভাগে তা অস্বীকার কর যাতে করে তারা ইসলাম থেকে ফিরে আসে।”(সূরা আলি-ইমরান ৭২)
এসব তাদের হিংসার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে ক্ষমা ও অনুগ্রহ দ্বারা তাদের হিংসার মোকাবেলা করতে বলেছেন, যাতে সবাই আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে ফিরে আসতে পারে। যদি তারা তাদের স্বীয় অপকর্মে লিপ্ত থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তো আছেন যিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা তাদের হিংসার কথা উল্লেখ করে বলেন:
(وَدَّتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ لَوْ یُضِلُّوْنَکُمْﺚ وَمَا یُضِلُّوْنَ اِلَّآ اَنْفُسَھُمْ وَمَا یَشْعُرُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল তোমাদেরকে গোমরাহ বানাতে চায় কিন্তু তারা নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করে না। অথচ তা অনুভব করে না।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৬৯)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন:
(فَاعْفُوْا وَاصْفَحُوْا حَتّٰي... ) এ আয়াতটি
(فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ)
আয়াত (সূরা তাওবাহ ৯:৫) দ্বারা রহিত হয়ে যায়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সালাত প্রতিষ্ঠার, যাকাত প্রদানের ও কল্যাণকর কাজের নির্দেশ প্রদান করছেন। মু’মিনগণ যত ভাল কাজ করুক না কেন সবকিছুর ফলাফল আল্লাহ তা‘আলার নিকট পাবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অনর্থক প্রশ্ন করা নিন্দনীয়। তবে জানার এবং মানার জন্য প্রশ্ন করা প্রশংসনীয়।
২. কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রাপ্ত নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়া অথবা তার কোন অকল্যাণ কামনা করা হারাম।
৩. ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা জানে মুসলিমরা সত্য ও সঠিক ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই হিংসার বশবর্তী হয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যে, কিভাবে এদেরকে সঠিক দীন থেকে সরিয়ে কাফির বানানো যায়।
৪. অন্যায়কে যথাসম্ভব ক্ষমা ও ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে, তা দ্বারা সম্ভব না হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings