Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 10
Saheeh International
In their hearts is disease, so Allah has increased their disease; and for them is a painful punishment because they [habitually] used to lie.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
‘পীড়া’ শব্দের অর্থ
ব্যাধির অর্থ এখানে সংশয় ও সন্দেহ। (তাফসীর তাবারী ১/২৮০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ), ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) এবং অন্যান্য কয়েকজন সাহাবী (রাঃ) থেকে এটাই বর্ণিত আছে। মুজাহিদ (রহঃ), ইকরামাহ (রহঃ), হাসান বাসরী (রহঃ), আবুল ‘আলিয়া (রহঃ), রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) এবং কাতাদাহ (রহঃ)-এরও এটাই অভিমত। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৪৮) ইকরামাহ (রহঃ) এবং তা‘উস (রহঃ)-এর তাফসীর করেছেন ‘রিয়া’ বা কৃত্রিমতা আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে এর তাফসীর ‘নিফাক’ বা কপটতাও বর্ণিত হয়েছে। যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) বলেন যে, এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্মীয় রোগ বা ব্যাধি, শারীরিক রোগ নয়। ইসলাম সম্পর্কে তাদের সংশয় ও সন্দেহজনিত একটা বিশেষ রোগ ছিলো, মহান আল্লাহ তাদের সেই রোগ বাড়িয়ে দিলেন। (তাফসীর তাবারী ১/২৮০) যেমন কুর’আন মাজীদে আছেঃ
﴿فَاَمَّا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ اِیْمَانًا وَّ هُمْ یَسْتَبْشِرُوْنَ وَ اَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا اِلٰى رِجْسِهِمْ﴾
‘অবশ্যই সে সব লোক ঈমান এনেছে, এই সূরাহ্ তাদের ঈমানকে বর্ধিত করেছে এবং তারাই আনন্দ লাভ করছে। আর যাদের অন্তরসমূহে রোগ হয়েছে, এই সূরাহ্ তাদের মধ্যে তাদের কলুষতার সাথে আরো কলুষতা বর্ধিত করেছে।’ (৯ নং সূরাহ্ তাওবাহ, আয়াত নং ১২৪-১২৫) অর্থাৎ তাদের পাপ গোমরাহী আরো বেড়ে যায় এবং এই প্রতিদান তাদের কাজের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই তাফসীরই উত্তম। এই ফরমানটি ঠিক এরই মতোঃ ﴿وَ الَّذِیْنَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَّ اٰتٰىهُمْ تَقْوٰىهُمْ﴾
‘যারা সৎ পথ অবলম্বন করে মহান আল্লাহ তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং তাদেরকে মুত্তাক্বী হওয়ার শক্তি দান করেন।’ (৪৭ নং সূরাহ্ মুহাম্মাদ, আয়াত নং ১৭)
কারীগণ یَكْذِبُوْنَ ইয়াকযিবূনকে یُكَذِّبُوْنَ ইউকায্যিবূনা-ও পড়েছেন। মুনাফিকদের মধ্যে এই বদ অভ্যাস ছিলো যে, তারা মিথ্যা কথাও বলতো এবং অবিশ্বাসও করতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুনাফিকদেরকে চেনা সত্ত্বেও তাদেরকে হত্যা করেননি। এর কারণ এই যে, সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমার (রাঃ)-কে বলেনঃ أُكْرِهُ أَنْ يَّتَحَدَّثَ الْعَرَبُ أَنَّ مُحَمَّدًا يَقْتُلُ أَصْحَابَهُ.
‘মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথীগণকে হত্যা করে থাকেন এ চর্চা হওয়াটা আমি আদৌ পছন্দ করি না।’ (সহীহুল বুখারী, হাদীস ২৪৯৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪/৬৩, ১৯৯৮, ১৯৯৯, তাফসীরে কুরত্ববী ১/২১৬) ভাবার্থ এই যে, মুনাফিকদেরকে তাদের অন্তরের কুফরীর জন্যে হত্যা করা হলে আশে পাশের মরুচারী বেদুঈনদের এটা জানা থাকবে না। তাদের দৃষ্টি তো শুধু বাহ্যিকের ওপরই থাকবে। সুতরাং যখন তাদের মধ্যে এ সংবাদ প্রচারিত হবে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের সাথীদেরকে হত্যা করেছেন তখন তারা হয়তো ভয়ে ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে।
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, আমাদের ‘আলিমদেরও এটাই অভিমত। ঠিক এভাবেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুআল্লাফাতে কুলুব তথা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে ধন-সম্পদ দান করতেন। যদিও তাদের খারাপ ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে অবহিত থাকতেন। ইমাম মালিক (রহঃ)ও মুনাফিকদের হত্যা না করার কারণ এটাই বর্ণনা করেছেন। যেমন মুহাম্মাদ ইবনু জাহাম, কাযী ইসমা‘ঈল এবং আবহারী (রহঃ) নকল করেছেন। ইবনু মাজেশুনের কথায় একটি কারণ এও নকল করা হয়েছে। যাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মাত জানতে পারে যে, বিচারক নিজের অবগতির ওপর ফায়সালা করতে পারেন না। মুনাফিকদেরকে হত্যা না করার এটাও ছিলো অন্যতম কারণ।
অন্যান্য ধর্মীয় নীতির ক্ষেত্রে ‘আলিমদের মধ্যে মতভেদ বিদ্যমান থাকলেও এ বিষয়ে সবাই একমত যে, বিচারক শুধু নিজের অবগতির ওপর ভিত্তি করে কাউকে হত্যা করতে পারেন না। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) আরো একটি কারণ বর্ণনা করেছেন, তা হলো, মুনাফিকরা নিজেদের ঈমানের কথা মুখে প্রকাশ করতো বলেই মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে হত্যা করা থেকে বিরত ছিলেন। যদিও তিনি জানতেন যে, তাদের অন্তর এর বিপরীত। কিন্তু এ প্রকাশ্য কথাই হত্যা করার সিদ্ধান্তকে দূরে সরিয়ে রাখতো। একথার সমর্থনে সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসও পেশ করা যেতে পারে।
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ فَمَنْ قَالَ لَا إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ فَقَدْ عَصَمَ مِنِّى مَالَهُ وَنَفْسَهُ إِلاَّ بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ.
‘আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশিত হয়েছি, যতোক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, মহান আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার রাসূল। আর সালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত আদায় করে। তারা যদি এগুলো করে, তবে আমার পক্ষ থেকে তাদের জান ও মালের ব্যাপারে নিরাপত্তা লাভ করলো; অবশ্য ইসলামের বিধান অনুযায়ী যদি কোন কারণ থাকে, তাহলে স্বতন্ত্র কথা। আর তাদের হিসাবের ভার মহান আল্লাহর ওপর অর্পিত। (সহীহুল বুখারী হাদীস নং ২৫, ৩৮৫, ১৩৩৫, ২৭৮৬, ৬৫২৬, ৬৮৫৫, সহীহ মুসলিম হাঃ ১৩৩, ১৩৪, ১৩৫, ১৩৬, ১৩৭, ১৩৮, ১/৮ হাঃ ২২; আ.প্র. হাঃ হাঃ ২৪, ই.ফা. হাঃ ২৪) উদ্দেশ্য এই যে, এ কালিমা বলার সাথে সাথে তাদের ওপর ইসলামের প্রকাশ্য আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়ন করা চালু হয়ে যাবে। অতএব তাদের আন্তরিক বিশ্বাসও যদি এর অনুরূপ হয়, তাহলে এটা আখিরাতে তাদের মুক্তির কারণ হবে, নচেৎ এটা সেখানে কোন উপকারে আসবে না। কিন্তু দুনিয়ার বুকে তাদের ওপর অন্যান্য মুসলমানের আইন চালু থাকবে। এসব লোকের নাম এখানে যদিও মুসলমানের নামের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু আখিরাতে ঠিক পুলসিরাতের ওপর মুসলমানদের মধ্য হতে তাদেরকে দূরে পৃথক করে দেয়া হবে। তখন তারা অন্ধকারে বিচলিত হয়ে উচ্চ শব্দে মুসলমানদের ডাক দিয়ে বলবেঃ
يُنَادُونَهُمْ أَلَمْ نَكُنْ مَعَكُمْ قَالُوا بَلَى وَلَكِنَّكُمْ فَتَنْتُمْ أَنْفُسَكُمْ وَتَرَبَّصْتُمْ وَارْتَبْتُمْ وَغَرَّتْكُمُ الْأَمَانِيُّ حَتَّى جَاءَ أَمْرُ اللهِ.
‘তারা মু’মিনদের ডেকে বলবে- ‘আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না?’ তারা উত্তর দিবে, ‘হ্যাঁ, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদে ফেলে দিয়েছো, তোমরা অপেক্ষা করেছিলে আমাদের ধ্বংসের জন্য। তোমরা সন্দেহে পতিত ছিলে, আর মিথ্যা আশা-আকাক্সক্ষা তোমাদের প্রতারিত করেছিলো। শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ্র হুকুম এসে গেলো। (৫৭ নং সূরাহ আল হাদীদ, আয়াত নং ১৪)
মোটকথা, আখিরাতেও মুনাফিকরা মুসলমানদের পিছনে থেকে তাদেরকে জড়িয়ে থাকতে সচেষ্ট হবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদেরকে আলাদা করে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে। তাদের এবং তাদের আশা আকাঙ্খার মাঝে বাধার প্রাচীর সৃষ্টি হয়ে যাবে। আর তারা মুসলমানদের মাঝে সাজদায় পড়ে যাবে। কিন্তু তারা সাজদাহ করতে সক্ষম হবে না। যেমনটি বিভিন্ন হাদীসে বিস্তারিত বর্ণনা হয়েছে। কোন কোন বিশ্লেষণকারীর মতে তাদেরকে হত্যা না করার কারণ ছিলো এই যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থাকাবস্থায় তাদের দুষ্টুমি মারাত্মক ধরনের কোন ক্ষতির কারণ ছিলো না। কেননা মহান আল্লাহ ওয়াহীল দ্বারা মুসলমানদেরকে তাদের দুষ্টুমি থেকে রক্ষা করেতেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরে আল্লাহ না করুন , যদি এরূপ লোক থাকে যাদের কপটতা প্রকাশ পেয়ে যায় আর মুসলমানগণ ভালোভাবে জানতে পারে, তবে তাদেরকে হত্যা করাই উচিত হবে।
ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে নিফাক বা কপটতা ছিলো মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে। কিন্তু বর্তমানে তা ‘যিনদিকাহ’ বা ধর্মহীনতা এবং মহান আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসহীনতা। ‘যিনদিক’ বা মহান আল্লাহর একত্ববাদে অবিশ্বাসীদের সম্বন্ধে ‘আলিমগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে যে, তাদের কুফরী প্রকাশ পেলে তাদেরকে হত্যা করা যাবে কি-না? আর যে ‘যিনদিক’রা অন্য মানুষকে তার শিক্ষা দিয়ে থাকে এবং যারা শিক্ষা দেয় না তাদের মাঝে পার্থক্যের কোন সীমারেখা টানতে হবে কি? এই কুফরী একাধিকবার প্রকাশ পেলেও কি এই নির্দেশ? কিংবা একবার হলেও কি এই নির্দেশ? আবার এ ব্যাপারেও মতভেদ আছে যে, এই ইসলাম গ্রহণ বা এই কুফরী হতে প্রত্যাবর্তন স্বয়ং তাদের পক্ষ থেকে হলে বা তাদের ওপর বিজয় লাভের পর হলে কি এই নির্দেশই বহাল থাকবে? মোটকথা, এসব বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু ঐ গুলো বর্ণনার জায়গাহ হলো আহকামের কিতাবসমূহে, তাফসীরের কিতাবে নয়। সুতরাং আমরাও তা আর বর্ণনা করতে চাচ্ছি না।
চৌদ্দজন প্রধান ও কুখ্যাত লোকের ‘নিফাক’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চিত রূপেই জানতেন। এসব কলুষিত লোক তারাই ছিলো যারা তাবূকের যুদ্ধে পরস্পরের সুপরিকল্পিত পরামর্শক্রমে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো যে, তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে প্রতারণা করবেই।
তারা তাঁকে হত্যা করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র এঁটেছিলো যে, রাতের দুর্ভেদ্য অন্ধকারে যখন তিনি অমুক খাদের নিকটবর্তী হবেন তখন তাঁর উষ্ট্রিকে তারা তাড়া করবে। এর ফলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদের মধ্যে পড়ে যাবেন। মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ওয়াহীর মাধ্যমে এই জঘন্য কপটতার কথা জানিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুযাইফা (রাঃ)-কে ডেকে এর ঘটনার সংবাদ দেন, এমন কি এক এক করে ঐ কপটদের নাম পর্যন্তও তিনি বলে দেন। তথাপিও তিনি উপরোক্ত কারণে তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ জারী করলেন না। এরা ছাড়া অন্যান্য মুনাফিকদের নাম তাঁর জানা ছিলো না। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ
﴿وَ مِمَّنْ حَوْلَكُمْ مِّنَ الْاَعْرَابِ مُنٰفِقُوْنَ وَمِنْ اَهْلِ الْمَدِیْنَةِۛ۫ مَرَدُوْا عَلَى النِّفَاقِ۫ لَا تَعْلَمُهُمْ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْ﴾
‘আর তোমাদের মরুবাসীদের মধ্য থেকে কতিপয় লোক এবং মাদীনাবাসীদের মধ্য হতেও কতিপয় লোক এমন মুনাফিক রয়েছে, যারা নিফাকের চরমে পৌঁছে গেছে। তুমি তাদেরকে জানো না, আমিই তাদেরকে জানি।’ (৯ নং সূরাহ্ তাওবাহ, আয়াত নং ১০১)
অন্য এক জায়গায় তিনি বলেনঃ
﴿لَىِٕنْ لَّمْ یَنْتَهِ الْمُنٰفِقُوْنَ وَ الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ وَّ الْمُرْجِفُوْنَ فِی الْمَدِیْنَةِ لَنُغْرِیَنَّكَ بِهِمْ ثُمَّ لَا یُجَاوِرُوْنَكَ فِیْهَاۤ اِلَّا قَلِیْلًا مَّلْعُوْنِیْنَۛۚ اَیْنَمَا ثُقِفُوْۤا اُخِذُوْا وَ قُتِّلُوْا تَقْتِیْلًا﴾
‘মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যারা নগরে গুজব রটনা করে, তারা বিরত না হলে আমি নিশ্চয়ই তাদের বিরুদ্ধে তোমাকে প্রবল করবো; এরপর এই নগরীতে তোমার প্রতিবেশী রূপে তারা স্বল্প সময়ই থাকবে অভিশপ্ত হয়ে, তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই ধরা হবে এবং নির্দয়ভাবে হত্যা করা হবে।’ (৩৩ নং সূরাহ্ আহযাব, আয়াত নং ৬০-৬১)
এই আয়াতগুলো থেকে জানা গেলো যে, ঐ মুনাফিকরা কে কে ছিলো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা জানতেন না। তবে তাদের নিন্দনীয় স্বভাবের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছিলো তা যাদের মধ্যে পাওয়া যেতো, তাদের ওপর নিফাক প্রযোজ্য হতো। যেমন এক জায়গায় মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবেই বলেনঃ ﴿وَ لَوْ نَشَآءُ لَاَرَیْنٰكَهُمْ فَلَعَرَفْتَهُمْ بِسِیْمٰىهُمْ١ؕ وَ لَتَعْرِفَنَّهُمْ فِیْ لَحْنِ الْقَوْلِ﴾
আমি ইচ্ছা করলে তোমাকে তাদের পরিচয় দিতাম। ফলে তুমি তাদের লক্ষণ দেখে তাদেরকে চিনতে পারবে, তুমি অবশ্যই কথার ভঙ্গিতে তাদেরকে চিনতে পারতে। (৪৭ নং সূরাহ্ মুহাম্মাদ, আয়াত নং ৩০)
এ কপটচারী মুনাফিকদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ছিলো ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল। যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) তার কপটতাপূর্ণ স্বভাব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে সাক্ষ্য দানও করেছিলেন, যা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে বিবৃত হয়েছে। এ সত্ত্বেও আমরা দেখতে পাই যখন সে মারা যায় তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযার সালাত আদায় করেছেন। অন্যান্য মুসলিম সাহাবীগণের (রাঃ) মতো তিনিও তার দাফন কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। এমন কি ‘উমার (রাঃ) যখন একটু জোর দিয়ে তার কপটতার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, তখন তিনি বলছেনঃ
إِنِّي أُكْرِهُ أَنْ يَّتَحَدَّثَ الْعَرَبُ أَنَّ مُحَمَّدًا يَقْتُلُ أَصْحَابَهُ.
‘আরবের লোক সমালোচনা করবে যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহচরদেরকে হত্যা করে থাকেন, তা আমি চাইনা।’ (সহীহুল বুখারী ৪৯০৫, সহীহ মুসলিম ২৫৮৪) সহীহ হাদীসের বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
إِنِّي خُيِّرْتُ فَاخْتَرْتُ‘আমাকে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বা না করার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।’ কিন্তু আমি ক্ষমা প্রার্থনা করাকেই পছন্দ করেছি।’ (সহীহুল বুখারী ১৩০০, ৪৩৯৪) অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
لَوْ أَنِّيْ أَعْلَمُ لَوْ زِدْتُ عَلَى السَّبْعِيْنَ يَغْفِرُ اللهُ لَهُ لَزِدْتُ.
‘আমি যদি জানতাম যে সত্তরবারের অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে মার্জনা করা হবে তাহলে আমি অবশ্যই তার অধিকই করতাম। (সহীহুল বুখারী ১৩০০, ৪৩৯৪, ফাতহুল বারী ৮/১৮৪, সহীহ মুসলিম ৪/২১৪১, জামি‘তিরমিযী ৫/৩০৯৭, সুনান নাসাঈ ৪/১৯৬৫, মুসনাদ আহমাদ১/১৬/৯৫)
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings