Surah Al Qasas Tafseer
Tafseer of Al-Qasas : 7
Saheeh International
And We inspired to the mother of Moses, "Suckle him; but when you fear for him, cast him into the river and do not fear and do not grieve. Indeed, We will return him to you and will make him [one] of the messengers."
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
৭-৯ নং আয়াতের তাফসীর
বর্ণিত আছে যে, যখন বানী ইসরাঈলের হাজার হাজার পুত্র সন্তানকে হত্যা করে দেয়া হয় তখন কিবতীদের এই আশংকা হয় যে, এভাবে যদি বানী ইসরাঈলকে খতম করে দেয়া হয় তবে যেসব জঘন্য ও নিকৃষ্ট কাজ হুকুমতের পক্ষ হতে তাদের দ্বারা করিয়ে নেয়া হচ্ছে সেগুলো হয়তো তাদেরই দ্বারা করিয়ে নেয়া হবে। তাই দরবারে তারা মিটিং ডাকলো এবং মিটিং এ সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, বানী ইসরাঈলের পুত্র সন্তানদেরকে এক বছর হত্যা করা হবে এবং পরের বছর হত্যা করা হবে না। ঘটনাক্রমে যে বছর হযরত হারূন (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন সেই বছর ছিল হত্যা বন্ধ রাখার বছর। কিন্তু হযরত মূসা (আঃ) ঐ বছর জন্মগ্রহণ করেন যে বছর বানী ইসরাঈলের পুত্র সন্তানদেরকে সাধারণভাবে হত্যা করা হচ্ছিল। স্ত্রী লোকেরা চক্কর লাগিয়ে গর্ভবতী নারীদের খোঁজ খবর নিচ্ছিল এবং তাদের নামগুলো তালিকাভুক্ত করছিল। গর্ভপাতের সময় ঐ মহিলাগুলো হাযির হয়ে যেতো। কন্যা সন্তানের জন্ম হলে তারা ফিরে যেতো। আর পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তারা সাথে সাথে জল্লাদদেরকে খবর দিয়ে দিতে এবং তৎক্ষণাৎ জল্লাদেরা দৌড়ে এসে পিতা-মাতার সামনে তাদের ঐ পুত্র সন্তানকে টুকরো টুকরো করে দিয়ে চলে যেতো।
হযরত মূসা (আঃ)-এর মাতা যখন তাকে গর্ভে ধারণ করেন তখন সাধারণ গর্ভধারণের মত তার গর্ভ প্রকাশ পায়নি। তাই যেসব নারী ও ধাত্রী গর্ভের সত্যতা নির্ণয়ের কাজে নিয়োজিতা ছিল তারা তার গর্ভবতী হওয়া টের পায়নি। অবশেষে হযরত মূসা (আঃ)-এর জন্ম হয়। তাঁর মাতা অত্যন্ত আতংকিত হয়ে পড়েন। তাঁর প্রতি তাঁর মাতার স্নেহ-মমতা এতো বেশী ছিল যা সাধারণতঃ অন্যান্য নারীদের থাকে না। মহান আল্লাহ হযরত মূসা (আঃ)-এর চেহারা এমনই মায়াময় করেছিলেন যে, শুধু তার মা কেন, যেই তাঁর দিকে একবার তাকাতো তারই অন্তরে তার প্রতি মহব্বত জমে যেতো। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি আমার নিকট হতে তোমার উপর ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম।” (২০:৩৯)
হযরত মূসা (আঃ)-এর মাতা যখন তার ব্যাপারে সদা আতংকিতা ও উৎকণ্ঠিতা থাকেন তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাঁকে ইঙ্গিতে নির্দেশ দেনঃ “তুমি শিশুটিকে স্তন্য দান করতে থাকো। যখন তুমি তার সম্পর্কে কোন আশংকা করবে তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করো এবং তুমি ভয় করো না, দুঃখ করো না; আমি তাকে তোমার নিকট ফিরিয়ে দিবো এবং তাকে রাসূলদের একজন করবো।” তার বাড়ী নীল দরিয়ার তীরেই অবস্থিত ছিল। আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ অনুযায়ী হযরত মূসা (আঃ)-এর মাতা একটি বাক্স বানিয়ে নিলেন এবং তাকে ঐ বাসের মধ্যে রেখে দিলেন। তাঁর মাতা তাঁকে দুধ পান করিয়ে দিয়ে ঐ বাকসের মধ্যে শুইয়ে দিতেন। আতংকের অবস্থায় ঐ বাক্সটিকে তিনি সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতেন এবং একটি দড়ি দ্বারা বাক্সটিকে বেঁধে রাখতেন। ভয় কেটে যাওয়ার পর ওটা আবার টেনে নিতেন।
একদিন এমন একটি লোকে তার বাড়ীতে আসলো যাকে তিনি অত্যন্ত ভয় পেয়ে গেলেন। তাড়াতাড়ি তিনি শিশুকে বাসে রেখে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলেন। কিন্তু ভয়ে তাড়াতাড়ি এ কাজ করার কারণে তিনি দড়ি দ্বারা বাক্সটিকে বেঁধে রাখতে ভুলে গেলেন। বাসটি পানির তরঙ্গের সাথে জোরে প্রবাহিত হতে লাগলো এবং ভাসতে ভাসতে ফিরাউনের প্রাসাদের পার্শ্ব দিয়ে চলতে থাকলো। এ দেখে দাসীরা ওটা উঠিয়ে নিয়ে ফিরাউনের স্ত্রীর কাছে গেল। পথে তারা এই ভয়ে বাত্সটি খুলেনি যে, হয়তো বা তাদের উপর কোন অপবাদ দেয়া হবে। ফিরাউনের স্ত্রীর নিকট বাটি খোলা হলে দেখা গেল যে, ওর মধ্যে একটি নূরানী চেহারার অত্যন্ত সুন্দর সুস্থ শিশু শায়িত রয়েছে। শিশুটিকে দেখা মাত্রই তার অন্তর তার প্রতি মহব্বতে পূর্ণ হয়ে গেল। আর তার প্রিয় রূপ তার অন্তরে ঘর করে নিলো। এতে প্রতিপালকের যুক্তি এই ছিল যে, তিনি ফিরাউনের স্ত্রীকে সুপথ প্রদর্শন করলেন এবং ফিরাউনের সামনে তার ভয় আনয়ন করলেন এবং তাকে ও তার দর্পকে চূর্ণ করে দিলেন।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘ফিরাউনের লোকেরা তাকে (শিশুকে) উঠিয়ে নিলো। এর পরিণাম তো এই ছিল যে, সে তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হবে। এতে একটি মজার কথা এও আছে যে, যার থেকে তারা বাঁচতে চেয়েছিল তিনিই তাদের মাথার উপর চড়ে বসলেন। এজন্যেই এর পরই মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘ফিরাউন, হামান ও তাদের বাহিনী ছিল অপরাধী।
বর্ণিত আছে যে, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীয (রঃ) এমন এক কওমের নিকট চিঠি লিখেন যারা তকদীরকে বিশ্বাস করে না, তিনি চিঠিতে লিখেনঃ “আল্লাহ তাআলার পূর্ব ইমেই হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনের শত্রু ও তার দুঃখের কারণ ছিলেন, যেমন আল্লাহ পাক (আরবি)-এই আয়াতে বলেছেন। অথচ তোমরা বলে থাকে যে, ফিরাউন যদি ইচ্ছা করতো তবে সে হযরত মূসা (আঃ)-এর বন্ধু ও সাহায্যকারী হতে পারতো?”
শিশুটিকে দেখা মাত্রই ফিরাউন চমকে উঠলো এই ভেবে যে, হয়তো বানী ইসরাঈলের কোন মহিলা শিশুটিকে নদীতে নিক্ষেপ করেছে এবং হতে পারে যে, এটা ঐ শিশুই হবে যাকে হত্যা করার জন্যেই সে হাজার হাজার শিশুকে হত্যা করেছে, এটা চিন্তা করে সে ঐ শিশুকেও হত্যা করে ফেলার ইচ্ছা করলো। তখন তার স্ত্রী হযরত আসিয়া (রাঃ) শিশুটির প্রাণ রক্ষার জন্যে ফিরাউনের নিকট সুপারিশ করে বললোঃ এই শিশু আমার ও তোমার নয়ন-প্রীতিকর। তাকে হত্যা করো না। সে আমাদের উপকারে আসতে পারে, আমরা তাকে সন্তান হিসেবেও গ্রহণ করতে পারি।' উত্তরে ফিরাউন বলেছিলঃ “সে তোমার জন্যে নয়ন-প্রীতিকর হতে পারে। কিন্তু আমার জন্যে নয়ন-প্রীতিকর হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহর কি মাহাত্ম্য যে, এটাই হলো। তিনি হযরত আসিয়া (রাঃ)-কে স্বীয় দ্বীন লাভের সৌভাগ্য দান করলেন এবং হযরত মূসা (আঃ)-এর কারণে তিনি হিদায়াতপ্রাপ্তা হলেন। আর ঐ অহংকারী ফিরাউনকে তিনি স্বীয় নবী (আঃ)-এর মাধ্যমে ধ্বংস করে দিলেন। ইমাম নাসাঈ (রঃ) প্রমুখের উদ্ধৃতি দ্বারা সূরায়ে ‘তোয়া-হা’-এর তাফসীরে হাদীসে ফুতুনের মধ্যে এই ঘটনাটি সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।
হযরত আসিয়া (রাঃ) বলেছিলেনঃ “সে আমাদের উপকারে আসতে পারে।” আল্লাহ তা'আলা তাঁর এ আশা পূর্ণ করেন। হযরত মূসা (আঃ) দুনিয়ায় তার হিদায়াত লাভের মাধ্যম হন এবং আখিরাতে জান্নাত লাভের মাধ্যম হয়ে যান।
হযরত আসিয়া (রাঃ) আরো বলেনঃ “আমরা তাকে সন্তান হিসেবেও গ্রহণ করতে পারি।” তাদের কোন সন্তান ছিল না। তাই হযরত আসিয়া (রাঃ) শিশু হযরত মূসা (আঃ)-কে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করার ইচ্ছা করলেন। মহামহিমান্বিত আল্লাহ কিভাবে গোপনে গোপনে স্বীয় ইচ্ছা পূর্ণ করতে চেয়েছিলেন তা তারা বুঝতে পারেনি।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings