Surah Al Qasas Tafseer
Tafseer of Al-Qasas : 57
Saheeh International
And they say, "If we were to follow the guidance with you, we would be swept from our land." Have we not established for them a safe sanctuary to which are brought the fruits of all things as provision from Us? But most of them do not know.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৫৬-৬১ নং আয়াতের তাফসীর:
(إِنَّكَ لَا تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ.....) শানে নুযূল:
সাঈদ বিন মুসাইয়্যাব তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চাচা আবূ তালেবের মুমূর্ষু অবস্থায় তার কাছে আগমন করেন। তিনি দেখলেনন আবূ জাহল, আবদুল্লাহ ইবনে উমাইয়া পাশে বসা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: হে চাচা! আপনি বলুন:
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ
“আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন সত্য মা‘বূদ নেই। আমি আপনার জন্য কিয়ামতের দিন এর দ্বারাই সাক্ষ্য দিব। আবূ জাহল, আবদুল্লাহ ইবনে উমাইয়া বলল: হে আবূ তালেব! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্মকে পরিত্যাগ করবে। তারা বার বার এ কথা বলতে লাগল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও বার বার বলতে থাকলেন। পরিশেষে আবূ তালেব বলল: মুত্তালিবের ধর্মের ওপরেই রইলাম। আর সে
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ
বলতে অস্বীকার করল। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আমাকে নিষেধ না করা পর্যন্তঅবশ্যই আমি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। তখন আল্লাহ তা‘আলা
(مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ....)
এ আয়াতটি নাযিল করেন। আর আবূ তালিবের উদ্দেশ্যে
(إِنَّكَ لَا تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ....)
এ আয়াতটি নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৩৮৮৪, সহীহ মুসলিম হা: ২৪)
সূরা ফাতিহাতে উল্লেখ করা হয়েছেন হিদায়াত দু’ প্রকার। একপ্রকার হলন মানুষকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেয়া, অপর প্রকার হলন সঠিক পথে চলার তাওফীক দেয়া। এখানে দ্বিতীয় প্রকার উদ্দেশ্য। সঠিক পথে চলার তাওফীক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা দিতে পারেন, অন্য কেউ পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنْ تَحْرِصْ عَلٰي هُدٰهُمْ فَإِنَّ اللّٰهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ يُّضِلُّ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نّٰصِرِيْنَ)
“যদি তুমি তাদের পথ প্রদর্শন করতে আগ্রহী হও তবুও আল্লাহ তা‘আলা যাকে বিভ্রান্ত করেছেন, তাকে তিনি সৎ পথে পরিচালিত করবেন না এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই।”(সূরা নাহল ১৬:৩৭) এ সম্পর্কে সূরা নাহলের ৩৭ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
এটা মক্কার কুরাইশদের কথা। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: কুরাইশদের মধ্য থেকে হারেস বিন উসমান নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল: আপনি যা বলেন তা যে সত্য সেটা আমরা জানি, কিন্তু আপনার প্রতি ঈমান আনতে ও হিদায়াতের অনুসরণ করতে পারছি না, কারণ যদি আমরা আপনার অনুসরণ করি তাহলে ভয় রয়েছে যে, আরবের লোকেরা আমাদেরকে মক্কা থেকে বের করে দিবে। আর তারা সবাই আমাদের বিরুদ্ধে ঐকমত্য হয়ে যাবে, তাদের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। কুরআনে তাদের এ খোঁড়া অজুহাতের তিনটি জবাব দেয়া হয়েছে:
১. (أَوَلَمْ نُمَكِّنْ لَّهُمْ حَرَمًا اٰمِنًا يُّجْبٰٓي إِلَيْهِ ثَمَرٰتُ كُلِّ شَيْءٍ)
‘আমি কি তাদের জন্য এক নিরাপদ হারাম প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয়’ অর্থাৎ তাদের অজুহাত বাতিল। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বিশেষভাবে মক্কাবাসীর হেফাযতের জন্য একটি স্বাভাবিক ব্যবস্থা পূর্ব থেকেই করে রেখেছেন। তা এই যে, তিনি মক্কার ভূখণ্ডকে নিরাপদ হারাম করে দিয়েছেন। সমগ্র আরবের গ্রোত্রসমূহ কুফর, শির্ক পারস্পারিক শত্র“তা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে একমত ছিল যে, হারামের ভেতরে হত্যা ও যুদ্ধবিগ্রহ ঘোরতর অপরাধ। হারামের ভেতরে পিতার হত্যাকারীকে পেলেও সন্তান চরম প্রতিশোধস্পৃহা থাকা সত্ত্বেও তাকে হত্যা করতে পারবে না। অতএব যে প্রভু নিজ কৃপায় কুফর ও শির্ক সত্ত্বেও তাদেরকে এ ভূখণ্ডে নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছেন, ঈমান কবূল করলে তিনি তাদেরকে ধ্বংস হতে দেবেন তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এছাড়াও আয়াতে হারামের দুটি গুণ বর্ণিত হয়েছেন ১. এটা শান্তির আবাসস্থল। ২. এখানে বিশ্বের প্রতিটি কোণ থেকে সর্ব প্রকার ফল-মূল আমদানী হয়, যাতে মক্কার বাসিন্দারা তাদের প্রয়োজন সহজে মেটাতে পারে। মক্কায় প্রত্যেক প্রকার ফল-মূল আমদানী হওয়া আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ নিদর্শন। সারাবিশ্বে যখন কোন ফল-মূল থাকেনা তখন মক্কায় ফল-মূল থাকে। যখন যে ফলের মওসুম নয় তখনও মক্কায় সে ফল পাওয়া যায়। সুবহানাল্লাহ!
২. এরপর তাদের অজুহাতের দ্বিতীয় জবাব হলন
(وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍۭ بَطِرَتْ مَعِيْشَتَهَا)
‘কত জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি যার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ-সম্পদের অহঙ্কার করত!’ এতে বলা হয়েছে যে, জগতের অন্যান্য কাফির সম্প্রদায়ের অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত কর। কুফর ও শির্কের কারণে তারা কিভাবে নিপাত হয়েছে। তাদের বসত-বাড়ি, সুদৃঢ় দুর্গ ও প্রতিরক্ষামূলক সাজ-সরঞ্জামাদি মাটিতে মিশে গেছে। অতএব কুফর শির্ক হচ্ছে প্রকৃত আশঙ্কার বিষয়। দুটিই ধ্বংসের কারণ হয়ে থাকে। তোমরা এমনই বোকা ও নির্বোধ যে, কুফর ও শির্কের কারণে বিপদাশঙ্কা বোধ কর না। ঈমানের কারণে বিপদাশঙ্কা বোধ কর।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন, তিনি কোন জনপদকে তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত ধ্বংস করেন না। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা সতর্ক করার জন্য সতর্ককারী প্রেরণ করেন যদি তারা সতর্ক না হয় তখন তাদের ওপর শাস্তি অবতীর্ণ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِيْنَ حَتّٰي نَبْعَثَ رَسُوْلًا)
“আমি রাসূল না পাঠান পর্যন্ত কাউকেও শাস্তি দেই না।” (সূরা ইসরা ১৭:১৫)
৩. তৃতীয় জবাব হলন
(وَمَآ أُوْتِيْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا)
‘তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা তো পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা’ এতে বলা হয়েছে; যদি ধরে নেয়া হয় ঈমান আনার ফলে তোমাদের কোন ক্ষতি হয়েই যায় তবে মনে রেখ, তা ক্ষণস্থায়ী।
এ জগতের ভোগ-বিলাস, আরাম-আয়েশ ও ধন-দৌলত যেমন ক্ষণস্থায়ী, কারও কাছে চিরকাল থাকে না তেমনি এখানকার কষ্টও ক্ষণস্থায়ী ও দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায়। তাই বুদ্ধিমানের উচিত, সেই কষ্ট ও সুখের চিন্তা করা যা চিরস্থায়ী ও অক্ষয়। দুনিয়ার চাকচিক্য, সৌন্দর্য সকল কিছু ক্ষণস্থায়ী। আর আল্লাহ তা‘আলার নিকট যা কিছু আছে তা উত্তম ও চিরস্থায়ী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا عِنْدَ اللّٰهِ خَيْرٌ لِّلْأَبْرَارِ)
“আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তা পুণ্যবানদের জন্য বহুগুণে উত্তম।” (সূরা আলি ইমরান ৩:১৯৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْـحَيٰوةَ الدُّنْيَا - وَالْاٰخِرَةُ خَيْرٌ وَّأَبْقٰي)
“কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক। অথচ আখিরাত (জীবন) উত্তম ও চিরস্থায়ী।” (সূরা আলা ৮৭:১৬-১৭)
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলার শপথ! আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার মূল্য এমন যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে একটি আঙ্গুল ডুবিয়ে বের করে নিয়ে দেখুক সমুদ্রের তুলনায় তার আঙ্গুলে কতটা পানি লেগেছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৮৫৮)
অতঃপর যারা আল্লাহ তা‘আলার প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী ভাল আমল করে আর যারা আখিরাতকে অস্বীকার করে তাদের মধ্যে তুলনা দিচ্ছেন যে, তারা কখনো সমান হতে পারে না। বরং যারা অস্বীকার করবে তারা অপরাধী হয়ে আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে উপস্থিত হবে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَفَنَجْعَلُ الْمُسْلِمِیْنَ کَالْمُجْرِمِیْنَﭲﺚمَا لَکُمْ کَیْفَ تَحْکُمُوْنَ)
“আমি কি আত্মসমর্পণকারীদেরকে অপরাধীদের মত করব? কি হয়েছে তোমাদের? তোমরা কেমন ফয়সালা কর?” (সূরা কালাম ৬৮:৩৫-৩৬)
অতএব যারা আখিরাতে বিশ্বাস রেখে সৎ আমল করে আর যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না এবং তার কোন তোয়াক্কা না করে অসৎ আমল করেই যায় তারা কোন দিক দিয়েই সমান হতে পারে না। যারা সৎ তারা জান্নাতী আর যারা অসৎ তারা জাহান্নামী। সুতরাং আমাদের উচিত সর্বদা সৎ আমল করা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. হিদায়াত দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়।
২. কাফির-মুশরিকদের জন্য দু‘আ করা কোন মু’মিন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয়; সে যতই নিকটাত্মীয় হোক না কেন।
৩. মক্কা নগরী পবিত্র, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ।
৫. ঈমান আনার পিছনে ওযর পেশ করা যাবে না।
৬. গর্ব অহঙ্কার করা যাবে না।
৭. আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতসমূহের শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
৮. দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী আর আখিরাত চিরস্থায়ী।
৯. মু’মিন ও কাফির ব্যক্তি কক্ষনো সমান নয়।
১০. আখিরাতে মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট হাজির করা হবে তা নিশ্চিত।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings