Surah An Naml Tafseer
Tafseer of An-Naml : 87
Saheeh International
And [warn of] the Day the Horn will be blown, and whoever is in the heavens and whoever is on the earth will be terrified except whom Allah wills. And all will come to Him humbled.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
৮৭-৯০ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের ভীতি-বিহ্বলতা ও অস্বস্তিকর অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন, যেমন সূরের (সিঙ্গার) হাদীসে রয়েছে যে, হযরত ইসরাফীল (আঃ) আল্লাহ তা'আলার নির্দেশক্রমে সিঙ্গায় ফুৎকার দিবেন। ঐ সময় ভূ-পৃষ্ঠে অসৎ ও পাপিষ্ঠ লোকেরা থাকবে। দীর্ঘক্ষণ ধরে তিনি ফুকরি দিতে থাকবেন যার ফলে সবাই হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে। এইরূপ অস্বস্তিকর অবস্থা হতে শুধুমাত্র শহীদগণ ছাড়া আর কেউই রক্ষা পাবে না, যারা আল্লাহর নিকট জীবিত রয়েছেন এবং তাদেরকে আহার্য দেয়া হচ্ছে।
উরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, তাঁর নিকট একটি লোক এসে তাঁকে বলেঃ “আপনি এটা কি কথা বলেন যে, এরূপ এরূপ সময় পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে?” উত্তরে তিনি সুবহানাল্লাহ বা -ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ অথবা এই ধরনের কোন কালেমা উচ্চারণ করে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং বলেনঃ “আমার ইচ্ছা তো হচ্ছে যে, আমি কারো কাছে কোন হাদীসই বর্ণনা করবো না। আমি এ কথা বলেছিলাম যে, সত্তরই তোমরা বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সংঘটিত হতে দেখবে। বায়তুল্লাহ খারাপ হয়ে যাবে এবং এই হবে, ঐ হবে ইত্যাদি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন: “আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জাল আসবে, অতঃপর চল্লিশ (চল্লিশ দিন, মাস বা বছর) অবস্থান করবে, চল্লিশ দিন, কি চল্লিশ মাস, কি চল্লিশ বছর তা আমার জানা নেই। তারপর আল্লাহ তাআলা হযরত ঈসা (আঃ)-কে নাযিল করবেন। তিনি রূপে ও আকারে হযরত উরওয়া ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর মত হবেন। তিনি দাজ্জালকে খুঁজতে থাকবেন এবং তাকে ধ্বংস করে ফেলবেন। এরপর সাতটি বছর এমনভাবে অতিবাহিত হবে যে, সারা দুনিয়ায় দু’জন লোক এমন থাকবে না যাদের পরস্পরের মধ্যে হিংসা ও বিদ্বেষ থাকবে। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা সিরিয়ার দিক হতে ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহিত করবেন, এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠে যারই অন্তরে অণু পরিমাণও ঈমান রয়েছে সেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে যাবে। এমনকি কেউ যদি কোন পাহাড়ের গর্তেও ঢুকে পড়ে তবে সেই গর্তেও বায়ু প্রবেশ করে তার মৃত্যু ঘটিয়ে দেবে। তখন ভূ-পৃষ্ঠে শুধু দুষ্ট লোকেরাই অবস্থান করবে। তারা পাখীর মত হাল্কা ও চতুষ্পদ জন্তুর মত জ্ঞান-বুদ্ধিহীন হবে। তাদের মধ্য হতে ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা উঠে যাবে। তাদের কাছে শয়তান এসে বলবেঃ “তোমরা এই মূর্তিগুলোর উপাসনা পরিত্যাগ করেছে এতে কি তোমাদের লজ্জা হয় না?” তখন তারা মূর্তিপূজা শুরু করে দেবে। আল্লাহ তাআলা তাদের রিকের ব্যবস্থা করতেই থাকবেন এবং তাদেরকে সুখে-স্বচ্ছন্দে রাখবেন। সুতরাং তারা আনন্দ বিহ্বল থাকবে। এমতাবস্থায় হযরত ইসরাফীল (আঃ)-কে শিংগার ফুকার দেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। যার কানেই এই শব্দ পৌছবে সেই সেখানেই ডানে-বানে ফিরতে থাকবে। সর্বপ্রথম এই শব্দ ঐ লোকটি শুনতে পাবে যে তার উটগুলোর জন্যে হাউ ঠিক ঠাক করার কাজে লিপ্ত থাকবে। এই শব্দ শোনা মাত্রই সে অজ্ঞান হয়ে পড়বে এবং সব লোকই অজ্ঞান হতে শুরু করবে। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা শিশিরের মত বারিবর্ষণ করবেন। ফলে দেহ অঙ্কুরিত বা উখিত হতে লাগবে। এরপর দ্বিতীয়বার শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। এর ফলে সবাই কবর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে। সেখানে শব্দ উচ্চারিত হবেঃ “হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সমীপে চলো এবং তথায় অবস্থান করতে থাকো। তোমাদের সওয়াল-জবাব হবে।” তারপর ফেরেশতাদেরকে বলা হবেঃ “আগুন বা জাহান্নামের অংশকে পৃথক কর।” তাঁরা প্রশ্ন করবেন: “কতজনের মধ্য হতে কতজনকে?” উত্তরে বলা হবেঃ “প্রতি হাযারের মধ্য হতে নয় শত নিরানব্বই জনকে।” এটা হবে ঐ দিন যেই দিন বালককে বুড়ো করে দেবে এবং হাঁটু পর্যন্ত পা উন্মোচিত হয়ে যাবে অর্থাৎ চরম সংকটময় দিন হবে।
প্রথম ফুঙ্কার হবে ভীতি-বিহ্বলতার, দ্বিতীয় ফুকার হবে অজ্ঞানতার ও মৃত্যুর এবং তৃতীয় ফুৎকারের সময় মানুষ পুনরুজ্জীবিত হয়ে জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে হাযির হয়ে যাবেঃ (আরবি)
(সবাই তার নিকট আসবে বিনীত অবস্থায়)-এরঃ (আরবি) টিকে মদ দিয়েও পড়া হয়েছে। সবাই নিরুপায়, অসহায়, অধীনস্থ এবং লাঞ্ছিত অবস্থায় আল্লাহ তা'আলার সামনে হাযির হবে। আল্লাহ পাকের হুকুম টলাবার কারো ক্ষমতা হবে না। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “যেই দিন তিনি তোমাদেরকে আহ্বান করবেন তখন তোমরা তাঁর প্রশংসা করতঃ তাঁর আহ্বানে সাড়া দেবে।” (১৭: ৫২) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “অতঃপর যখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের যমীনের মধ্যে থাকা অবস্থায় আহ্বান করবেন তখন তোমরা তথা হতে বের হয়ে পড়বে।”
সূর বা সিঙ্গার হাদীসে রয়েছে যে, তৃতীয় ফুঙ্কারে আল্লাহ তা'আলার নির্দেশক্রমে সমস্ত রূহকে সিঙ্গার ছিদ্রে রাখা হবে এবং দেহ কবর হতে উদ্গত হতে শুরু করবে। তখন হযরত ইসরাফীল (আঃ) আবার সূরে ফুঙ্কার দিবেন। তখন রূহগুলো উড়তে লাগবে। মুমিনদের রূহ্ জ্যোতির্ময় হবে এবং কাফিরদের রূহ্ অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে। অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলবেনঃ “আমার মর্যাদা ও মাহাত্মের শপথ! অবশ্যই প্রত্যেক রূহ্ নিজ নিজ দেহে ফিরে যাবে।” তখন রূহগুলো তাদের দেহগুলোর মধ্যে এমনভাবে অনুপ্রবেশ করবে যেমনভাবে গরল বা বিষ শিরার মধ্যে অনুপ্রবেশ করে থাকে। অতঃপর লোকেরা তাদের মাথা হতে কবরের মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “সেদিন তারা কবর হতে বের হবে দ্রুত বেগে, মনে হবে যেন তারা। কোন একটি লক্ষ্যস্থলের দিকে ধাবিত হচ্ছে।” (৭০:৪৩)
মহান আল্লাহ বলেনঃ তুমি পর্বতমালা দেখে অচল মনে করছে, কিন্তু সেই দিন ওগুলো হবে মেঘপুঞ্জের ন্যায় চলমান। অর্থাৎ ঐ দিন পর্বতমালাকে মেঘপুঞ্জের ন্যায় এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়তে এবং টুকরা টুকরা হতে দেখা যাবে। ঐ টুকরাগুলো চলতে ফিরতে শুরু করবে এবং শেষ পর্যন্ত চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যেদিন আকাশ আন্দোলিত হবে প্রবলভাবে এবং পর্বত চলবে দ্রুত।” (৫২: ৯-১০) মহামহিমান্বিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। দুমি বলঃ আমার প্রতিপালক তাদেরকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন। অতঃপর তিনি ওকে পরিণত করবেন মসৃণ সমতল ময়দানে। যাতে তুমি বক্রতা ও উচ্চতা দেখবে না।” (২০:১০৫-১০৭)।
মহান আল্লাহ বলেনঃ এটা আল্লাহরই সৃষ্টিনৈপুণ্য, যিনি সবকিছুকে করেছেন সুষম। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে তিনি সম্যক অবগত। তাঁর সর্বক্ষমতার বিষয় মানুষের জ্ঞানে ধরতে পারে না। তিনি তাঁর বান্দাদের ভাল-মন্দ সমস্ত কাজ সম্বন্ধে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। তাদের প্রতিটি কাজের তিনি শান্তি ও পুরস্কার প্রদান করবেন। এই সংক্ষিপ্ত বর্ণনার পর মহান আল্লাহ বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছেন যে, যে কেউ সৎকর্ম করে আসবে, সে উৎকৃষ্টতর প্রতিফল পাবে। একের বিনিময়ে দশটি পুণ্য সে লাভ করবে এবং ঐ দিনের ভীতি-বিহ্বলতা হতে সে নিরাপত্তা লাভ করবে। অন্য লোকেরা সেই দিন হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে এবং শাস্তি ভোগ করবে। অথচ এই ব্যক্তি নিরাপত্তার মধ্যে থাকবে। সুউচ্চ প্রাসাদ এবং আরামদায়ক কক্ষে সে অবস্থান করবে। পক্ষান্তরে যে কেউ অসঙ্কর্ম নিয়ে আসবে, তাকে অধোমুখে অগ্নিতে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল তোমাদেরকে দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ মুফাসসির হতে বর্ণিত আছে যে, অসৎকর্ম দ্বারা শিরুককে বুঝানো হয়েছে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings