Surah An Nur Tafseer
Tafseer of An-Nur : 63
Saheeh International
Do not make [your] calling of the Messenger among yourselves as the call of one of you to another. Already Allah knows those of you who slip away, concealed by others. So let those beware who dissent from the Prophet's order, lest fitnah strike them or a painful punishment.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৬২-৬৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আলোচ্য আয়াতে মু’মিনদেরকে আল্লাহ তা‘আলা কয়েকটি শিক্ষামূলক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এক. মু’মিনরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কোন সমষ্টিগত বিষয়েন যেমন জিহাদ, পরামর্শ, আলোচনা বৈঠক অনুরূপ ইত্যাদি ব্যাপারে একত্রিত হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুমতি ছাড়া মাজলিস ত্যাগ করবে না। কোন প্রয়োজন দেখা দিলে তাঁর কাছে যথারীতি অনুমতি গ্রহণ করবে। এরকম সমষ্টিগত বৈঠক থেকে প্রয়োজনে অনুমতি নিয়ে যাওয়াকে ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের প্রতি ঈমানদার তারাই এরূপ সমষ্টিগত মাজলিস থেকে অনুমতি নিয়ে বের হয় যা আয়াতের প্রথম শব্দে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং যারা ঈমানদার নয়, অন্তরে নিফাকী রয়েছে কেবল তারাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুমতি না নিয়ে মাজলিস ত্যাগ করে। তাই কেউ এরূপ সমষ্টিগত মাজলিস থেকে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুটি শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ১. যিনি অনুমতি চাচ্ছেন তিনি যদি কোন বিশেষ প্রয়োজনে অনুমতি প্রার্থনা করেন যেমনন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া বা পরিবারের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইত্যাদিন তাহলে অনুমতি দেয়া হবে, বিনা প্রয়োজনে অনুমতি দেয়া যাবে না। ২. তিনি যাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার ইচ্ছা করবেন এবং তাকে অনুমতি দেয়াটাই কল্যাণ হবে বলে মনে করেন। সুতরাং এ দুটি শর্ত সামনে রেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকে মাজলিস ত্যাগ করার অনুমতি দেবেন সে ব্যক্তিই মাজলিস ত্যাগ করতে পারবে, সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ তা‘আলা অনুমতি প্রার্থনাকারী ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ দিচ্ছেন। (তাফসীর সা‘দী) এরূপ সমষ্টিগত মাজলিস থেকে বিনা অনুমতিতে চলে যাওয়া কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাজলিসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, না ব্যাপক? এটা শুধু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাজলিসের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উত্তরাধিকারী আলেম, ইমাম ও আমীরদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সুতরাং কোন আলেম যদি মুসলিমদের নিয়ে সমাবেশ করেন, ধর্মীয় কোন আলোচনা বৈঠক করেন তাহলে সেখান থেকে সে আলেমের বিনা অনুমতিতে চলে যাওয়া বৈধ নয়।
দুই. ‘‘রাসূলের আহ্বানকে” এখানে দুটি অর্থ রয়েছেন
১. اضافة الي الفاعل
আয়াতের অর্থ হলন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ডাকেন তখন একে তোমাদের সাধারণ মানুষের ডাকার মত মনে করো না, যার সাড়া দেয়া, না দেয়া তোমাদের ইচ্ছাধীন নয়। বরং তখন সাড়া দেয়া ওয়াজিব। এমনকি সালাতরত অবস্থাতে থাকলেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডাকে সাড়া দেয়া আবশ্যক।
২. اضافة الي المفعول
আয়াতের অর্থ হলন যখন তোমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন প্রয়োজনে আহ্বান কর অথবা সম্বোধন কর, তখন সাধারণ লোকের ন্যায় তাঁর নাম নিয়ে “হে মুহাম্মাদ, হে মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ” বলবে না। এটা বেআদবী, বরং সম্মানসূচক উপাধি “হে আল্লাহর রাসূল, হে আল্লাহ তা‘আলার নাবী” ইত্যাদি বলে ডাকবে। এরূপভাবে ডাকতে সূরা হুজুরাতেও নিষেধ করা হয়েছে।
التسلل অর্থ বের হয়ে যাওয়া, لواذ কোন কিছু গোপন রাখা যাতে কেউ না দেখে। অর্থাৎ মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বৈঠক থেকে চুপিসারে বের হয়ে যেত যাতে কেউ দেখতে না পায়। এদেরকে আল্লাহ তা‘আলা হুশিয়ারী দিয়ে বলছেন, তোমার যা করছো তা মানুষ দেখতে না পেলেও আল্লাহ তা‘আলা দেখছেন। এর যথার্থ প্রতিদান তিনিই দেবেন।
(عَنْ أَمْرِه۪) “তাঁর আদেশের” তাঁর আদেশ বলতে কার আদেশ বুঝানো হয়েছেন এ নিয়ে দুটি মত পাওয়া যায়। কেউ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলার আদেশ; কেউ বলেছেন, রাসূলের আদেশ। তবে উদ্দেশ্য একটাই, কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার আদেশগুলো পৌছে দেন, তাই রাসূলের আদেশ মানে আল্লাহ তা‘আলার আদেশ। সুতরাং যারা রাসূলের আদেশ অমান্য করে তাদের সতর্ক হওয়া উচিত, রাসূলের আদেশকে অমান্য করার কারণে তাদের ওপর ফেতনা আপতিত হবে অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।
فِتْنَةٌ অর্থাৎ শিরক, অকল্যাণ ও অন্তরের সে বক্রতা আপতিত হবে যা ঈমান থেকে বঞ্চিত করে। আর ঈমান থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলাফল হল জাহান্নাম, যাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশ, সুন্নাত ও আদর্শ বর্জন করার কোন সুযোগ নেই। যে কেউ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশ অমান্য করে সুন্নত বর্জন করে কোন আমল করবে আল্লাহ তা‘আলা তার আমল কবূল করবেন না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে যা আমাদের নির্দেশিত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। (সহীহ মুসলিম হা: ১৭১৮)
এমনকি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথার ওপর কারো কথা প্রাধান্য দেয়া গুরুতর অপরাধ। সে ব্যক্তি যত বড়ই হোক না কেন। ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: আমি আশংকা করছি তোমাদের ওপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষিত হবে। আমি বলছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আর তোমরা বলছ আবূ বকর ও উমার বলেছেন। অর্থাৎ যেখানে আল্লাহ তা‘আলার রাসূলের কথা রয়েছে সেখানে আবূ বকর ও উমারের কথা কিভাবে নিয়ে আসছো?
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেন: আমি ঐ সকল লোকদের ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করি যারা (কোন হাদীসের) সনদ সহীহ হিসেবে জানে তার পরে (তা বাদ দিয়ে) সুফইয়ান সাওরীর কথার দিকে চলে যায়। অর্থাৎ হাদীস সহীহ জানা সত্ত্বেও তা বর্জন করে বিভিন্ন ইমাম সাহেবের কথা গ্রহণ করে। তারপর তিনি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন: তোমরা কি জান ফেতনা কী? ফেতনা হলন শিরক, যদি কেউ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা পাওয়ার পর তা বর্জন করে তাহলে তার অন্তরে এমন বক্রতা সৃষ্টি হবে যা তাকে ধ্বংস করে দিবে।
(أَلَآ إِنَّ لِلّٰهِ)
অর্থাৎ সৃষ্টি, মালিক, পরিচালনাসহ সব কিছুর দিক দিয়ে আকাশ-জমিনের যা কিছু আছে সবই আল্লাহ তা‘আলার। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করা উচিত।
(قَدْ يَعْلَمُ مَآ أَنْتُمْ عَلَيْهِ)
অর্থাৎ আনুগত্য, অবাধ্য বা অন্য যে কোন অবস্থাতে থাক না কেন আল্লাহ তা‘আলা সব জানেন। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ط وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَّرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِيْ ظُلُمٰتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَّلَا يَابِسٍ إِلَّا فِيْ كِتٰبٍ مُّبِيْنٍ)
“জলে ও স্থলে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত, তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অঙ্কুরিত হয় না অথবা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে (লাওহে মাহফূজে) নেই।” (সূরা আন‘আম ৬:৫৯)
সুতরাং যেদিন তোমরা তাঁর কাছে ফিরে যাবে সেদিন তিনি তোমাদেরকে দুনিয়ার আমল সম্পর্কে জানিয়ে দেবেন, আর সে অনুপাতে প্রতিদান দেবেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হল তারা সমষ্টিগত কোন বৈঠকে থাকলে নেতার অনুমতি ছাড়া চলে যায় না।
২. যার নিকট অনুমতি প্রার্থনা করবে সে প্রয়োজন মনে করলে অনুমিত দিবে, অথবা দিবে না।
৩. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাধারণ লোকের মত ডাকতে নিষেধ করা হয়েছে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের নির্দেশের অমান্য করা যাবে না।
৫. সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
৬. আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সকল বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন।
৭. কিয়ামত দিবসে প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের ফলাফল দেয়া হবে।
৮. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল না করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings