Surah An Nur Tafseer
Tafseer of An-Nur : 36
Saheeh International
[Such niches are] in mosques which Allah has ordered to be raised and that His name be mentioned therein; exalting Him within them in the morning and the evenings
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৩৬-৩৮ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা সেসকল ঘরকে সমুন্নত করতে নির্দেশ দিয়েছেন যে ঘরে তাঁর স্মরণ করা হয়। অর্থাৎ এখানে ঘর দ্বারা মাসজিদ উদ্দেশ্য যা পৃথিবীর বুকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট সব চেয়ে পছন্দনীয় জায়গা। উচ্চ করার অর্থ শুধু ইট-পাথর দিয়ে উচ্চ করা নয়। বরং মাসজিদকে অপবিত্রতা, অসার ও অবৈধ কথা ও কর্ম হতে পবিত্র রাখাও এর মধ্যে গণ্য। শুধু মাসজিদের বিল্ডিংকে আকাশ ছোঁয়া উঁচু করে বানানো উদ্দেশ্য নয়। বরং হাদীসে মাসজিদকে সৌন্দর্যমণ্ডিত ও কারুকার্য খচিত করতে নিষেধ করা হয়েছে। অন্য হাদীসে এমন কাজকে কিয়ামতের আলামত বলা হয়েছে। (আবূ দাঊদ হা: ৪৪৯, সহীহ) এছাড়া মাসজিদে ব্যবসা-বাণিজ্য হট্টগোল করা নিষিদ্ধ। কারণ মাসজিদ তৈরি করা হয়েছে ইবাদতের জন্য। ‘তাঁর নাম স্মরণ’ বলতে ফরয, নফল সালাত, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবীহ তাহলীল ও অন্যান্য যিকির সব শামিল।
উসমান বিন আফফান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে মাসজিদ নির্মাণ করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরী করবেন।” (সহীহ বুখারী হা: ৪৫০, সহীহ মুসলিম হা: ২৫)
আর আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন, মাসজিদে যেন সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ তা‘আলার পবিত্রতা ও মহত্ত্ব ঘোষণা করা হয়। এখানে সকাল-সন্ধ্যা পবিত্রতা ও মহিমা বলতে সালাতকে বুঝানো হয়েছে। যেমনন
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَأَقِيْمُوْا وُجُوْهَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَّادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ৫ ط كَمَا بَدَأَكُمْ تَعُوْدُوْنَ)
“প্রত্যেক সালাতে তোমাদের চেহারা স্থির রাখবে এবং তাঁরই আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁকে ডাকবে। তিনি যেভাবে প্রথমে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমরা সেভাবে (পুনরুত্থানের জন্য) ফিরে আসবে।” (সূরা আ‘রাফ ৭:২৯)
সুতরাং মাসজিদের পবিত্রতা বজায় রাখা, তাতে সালাত কায়েমসহ তাসবীহ, তাহলীল ও অন্যান্য ইবাদত করা মাসজিদকে সমুন্নত রাখার শামিল।
কিন্তু বিভ্রান্ত শিয়া সম্প্রদায় এ আয়াতকে কেন্দ্র করে কবরে সৌধ নির্মাণ করার দলীল গ্রহণ করে থাকে। তাদের দাবী আল্লাহ তা‘আলার ওলীদের কবরের ওপর সৌধ নির্মাণ পবিত্র গৃহসমূহকে সমুন্নত রাখার নির্দেশের শামিল। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে অনুমতি দিয়েছেন যেসকল গৃহে আল্লাহ তা‘আলার নাম স্মরণ করা হয় তা সমুন্নত রাখার জন্য।
এ ভিত্তিতে তাদের দাবী হলন উক্ত আয়াতে গৃহ বলতে শুধু মাসজিদ বুঝানো হয়নি বরং আয়াতের উদ্দেশ্য মাসজিদসহ যে কোন স্থান, যেখানে আল্লাহ তা‘আলার নাম স্মরণ করা হয়। যেমন নাবীগণ ও তাদের স্থলাভিষিক্ত পবিত্র প্রতিনিধিদের গৃহ। তারা বলে: ইমাম বাকের (رحمه الله) বলেনন উক্ত আয়াতে গৃহ বলতে নাবীগণ ও হযরত আলীর গৃহের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। (তাফসীর আল বুরহান)
কিন্তু তাদের এ দাবী সঠিক নয়, এখানে গৃহ বলতে শুধুমাত্র মাসজিদ উদ্দেশ্য যেমনটি উক্ত আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা সেসব মু’মিন পুরুষদের বর্ণনা দিচ্ছেন যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য আল্লাহ তা‘আলার যিকির, সালাত কায়েম, যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। তারা যেখানেই যে অবস্থাতেই থাকুক সর্বদা আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে, সালাত কায়েম করে, সম্পদের ওপর হকের কথা ভুলে যায় না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْآ إِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلٰوةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلٰي ذِكْرِ اللّٰهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ)
“হে মু’মিনগণ! জুমু‘আর দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান (আযান প্রদান) করা হবে তখন তোমরা আল্লাহ তা‘আলার স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর।” (সূরা জুমু‘আ ৬২:৯)
تَتَقَلَّبُ অর্থাৎ কিয়ামতের ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে অত্যন্ত ঘাবড়ে যাওয়ার কারণে তাদের অন্তর ও দৃষ্টি উল্টে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَأَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْاٰزِفَةِ إِذِ الْقُلُوْبُ لَدَي الْحَنَاجِرِ كَاظِمِيْنَ)
“তাদেরকে সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন (কিয়ামত) সম্পর্কে (যেদিন) দুঃখ-কষ্টে তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে।” (সূরা মু’মিন ৪০:১৮) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيْهِ الْأَبْصَارُ)
“নিশ্চয়ই তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৪২) এ কঠিন দিনকে এসব মু’মিন ব্যক্তিরা ভয় করে। তাই তারা শত ব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ, সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করে থাকে। মূলত এসকল মু’মিনদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাদের উত্তম কৃত-কর্মের প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللّٰهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضٰعِفَه۫ لَه۫ٓ أَضْعٰفًا كَثِيْرَةً)
“কে আছে যে আল্লাহকে করজে হাসানা দেবে? পরে তিনি তাকে অনেক গুণে বাড়িয়ে দেবেন।” (সূরা বাকারাহ ২:২৪৫)
সুতরাং প্রতিটি মু’মিন ব্যক্তিকে কর্ম-ব্যস্ততা আল্লাহ তা‘আলার যিকির সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। তারা আখিরাতের শাস্তিকে ভয় করে এবং আশা করে আল্লাহ তা‘আলা তাদের উত্তম আমলের প্রতিদান বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মাসজিদকে সর্বদা পূতঃপবিত্র রাখতে হবে। আর এতে কোন অশ্লীল কথাবার্র্তা বলা যাবে না। এমনকি উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
২. মাসজিদে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত ব্যতীত দুনিয়াবী কোন কাজ করা উচিত নয়।
৩. সালাত কায়েম ও যাকাত আদায় করা মু’মিনের বৈশিষ্ট্য।
৪. দুনিয়ার মোহে পড়ে আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে যাওয়া যাবে না।
৫. কিয়ামত দিবসের শাস্তিকে ভয় করা ঈমানের দাবী।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings