Surah An Nur Tafseer
Tafseer of An-Nur : 32
Saheeh International
And marry the unmarried among you and the righteous among your male slaves and female slaves. If they should be poor, Allah will enrich them from His bounty, and Allah is all-Encompassing and Knowing.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
৩২-৩৪ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে আল্লাহ তা'আলা বহু কিছু হুকুম বর্ণনা করেছেন। প্রথমে তিনি বিবাহের বর্ণনা দিয়েছেন।
আলেম জামাআতের খেয়াল এই যে, যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে তার জন্যে বিয়ে করা ওয়াজিব। দলীল হিসেবে তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিম্নের বাণীটি গ্রহণ করেছেনঃ “হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার ক্ষমতা রাখে সে যেন বিয়ে করে। বিয়ে হলো দৃষ্টিকে নিম্নমুখীকারী এবং লজ্জাস্থানকে রক্ষাকারী। আর যে বিয়ে করার ক্ষমতা রাখে না সে যেন রোযা রাখে। এটাই তার জন্যে হলো অণ্ডকোষ কর্তিত হওয়া।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) তাখরীজ করেছেন)
অন্য একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যেসব স্ত্রীলোক হতে অধিক সন্তান লাভের আশা আছে তোমরা ঐ সব স্ত্রীলোককে বিয়ে কর, যেন তোমাদের বংশ বৃদ্ধি হয়। আমি তোমাদের মাধ্যমে কিয়ামতের দিন অন্যান্য উম্মতের মধ্যে ফখর করবো।” এহদীসটি সুনানে বর্ণিত হয়েছে।
আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এমন কি অপূর্ণ অবস্থায় পড়ে যাওয়া (গর্ভপাত হওয়া) শিশুর সংখ্যা গণনা দ্বারাও আমি ফখর করবো।”
(আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দের বহু বচন। জাওহারী (রঃ) বলেন যে, ভাষাবিদদের মতে বিপত্নীক পুরুষ ও বিধবা নারীকে (আরবি) বলা হয়। সে বিবাহিত হোক অথবা অবিবাহিত হোক। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা আগ্রহ বৃদ্ধির জন্যে বলেনঃ যদি সে দচ্ছি হয় তবে আল্লাহ তাকে স্বীয় অনুগ্রহে সম্পদশালী বানিয়ে দিবেন। সে আবাদই হোক অথবা গোলামই হোক।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেনঃ “বিয়ের ব্যাপারে আল্লাহর আদেশ মেনে চল, তাহলে তিনি তোমাদের কৃত ওয়াদা পুরো করবেন। আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে সম্পদশালী করে দিবেন।”
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, বিবাহে তোমরা ঐশ্বর্য অনুসন্ধান কর। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তারা দরিদ্র হলে আল্লাহ তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন।” (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-ও বর্ণনা করেছে)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তিন প্রকারের লোককে আল্লাহ তা'আলা সাহায্য করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তারা হলো-বিবাহকারী, যে ব্যভিচার হতে বাঁচবার উদ্দেশ্যে বিয়ে করে থাকে, ঐ মুকাতাব গোলাম, যে তার চুক্তিকৃত টাকা আদায় করার ইচ্ছা রাখে এবং আল্লাহর পথের গাযী।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ ব্যক্তির বিবাহ একটি স্ত্রীলোকের সাথে দিয়ে দেন যার কাছে তার একটি মাত্র লুঙ্গী ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এমনকি তার কাছে একটি লোহার আংটিও ছিল না। তার এতো অভাব ও দারিদ্র সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার বিয়ে দিয়ে দেন এবং তার মহর এই ধার্য করেন যে, তার কুরআন কারীম হতে যা কিছু মুখস্থ আছে তাই সে তার স্ত্রীকে মুখস্থ করিয়ে দেবে। এটা একমাত্র এরই উপর ভিত্তি করে যে, মহান আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে তাকে এমন জীবিকা দান করবেন যা তার ও তার স্ত্রীর জন্যে যথেষ্ট হবে।
অধিকাংশ লোক একটি হাদীস আনয়ন করে থাকেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা দারিদ্রের অবস্থাতেও বিয়ে কর, আল্লাহ তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন।” (ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) বলেনঃ সবল সনদে বা দুর্বল সনদেও এ হাদীসটি আমার চোখে পড়েনি। আর এই বিষয়ে এরূপ ঠিকানা বিহীন হাদীসের আমাদের কোন প্রয়োজনও নেই। কেননা, কুরআন কারীমের এই আয়াতে এবং উপরোক্ত হাদীসসমূহে এটা বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)
এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যার বিয়ে করার সামর্থ্য আছে সে যেন বিয়ে করে। বিবাহ দৃষ্টিকে নিম্নমুখী রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে এবং এটাই তার জন্যে খাসসী হওয়া (অণ্ডকোষ কর্তিত হওয়া)।” এই আয়াতটি সাধারণ। সূরায়ে নিসার আয়াতটি এর থেকে খাস বা বিশিষ্ট। ঐ আয়াতটি হলোঃ (আরবি) হতো (আরবি)
অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে কারো স্বাধীনা ঈমানদার নারী বিবাহের সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত ঈমানদার নারীকে বিয়ে করবে; আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরের সমান, সুতরাং তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং যারা সচ্চরিত্রা, ব্যভিচারিণী নয় ও উপপতি গ্রহণকারিণীও নয় তাদেরকে তাদের মহর ন্যায়সঙ্গতভাবে দিবে। বিবাহিতা হবার পর যদি তারা ব্যভিচার করে তবে তাদের শাস্তি স্বাধীনা নারীর অর্ধেক; তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারকে ভয় করে এটা তাদের জন্যে; ধৈর্যধারণ করা তোমাদের জন্যে মঙ্গল।” (৪: ২৫) সুতরাং দাসীদেরকে বিয়ে করা অপেক্ষা ধৈর্যধারণই শ্রেয়। কেননা, এই অবস্থায় সন্তানদের উপর দাসত্বের দাগ পড়ে যায়।
হযরত ইকরামা (রাঃ) বলেন যে, যে পুরুষ লোক স্ত্রীলোককে দেখে এবং দেখার পর তার অন্তরে কাম প্রবৃত্তি জেগে ওঠে, সে যেন তৎক্ষণাৎ তার স্ত্রীর কাছে চলে যায়, যদি তার স্ত্রী বিদ্যমান থাকে। আর যদি তার স্ত্রী না থাকে তবে সে যেন আল্লাহ তা'আলার সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য রেখে ধৈর্যধারণ করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত করেন।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা গোলামদের মালিকদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তাদের দাসদাসীদের কেউ যদি তার মুক্তির জন্যে লিখিত চুক্তি করতে চায় তবে গন্ধ যেন তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, যদি তারা তাদের মধ্যে মঙ্গলের সন্ধান পায়। গোলাম তার উপার্জনের মাধ্যমে ঐ মাল জমা করতঃ মনিবকে দিয়ে দেবে এবং এই ভাবে তারা আযাদ বা মুক্ত হয়ে যাবে। অধিকাংশ আলেম বলেন যে, এ হুকুম জরুরী নয়। এটা ফরযও নয় এবং ওয়াজিবও নয়, বরং মুস্তাহাব। মনিবের এ অধিকার আছে যে, তার গোলাম কোন শিল্পকার্য জানলে যদি তাকে বলে যে, তাকে সে এতো এতো টাকা দিবে এবং এর বিনিময়ে সে তাকে আযাদ করে দিবে। তবে এটা মনিবের ইচ্ছাধীন। ইচ্ছা হলে সে তার সাথে চুক্তি করবে এবং না হলে না করবে। আলেমদের একটি জামাআত আয়াতের বাহ্যিক শব্দের প্রতি লক্ষ্য রেখে বলেন যে, গোলাম যদি তার মুক্তির জন্যে লিখিত চুক্তি করতে চায় তবে তার সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া তার মনিবের উপর ওয়াজিব।
বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার (রাঃ)-এর যুগে হযরত আনাস (রাঃ)-এর সীরীন নামক একজন সম্পদশালী গোলাম তার কাছে আবেদন জানায় যে, তিনি যেন তার সাথে তার মুক্তির জন্যে লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হন। কিন্তু হযরত আনাস (রাঃ) তা প্রত্যাখ্যান করেন। তখন গোলামটি হযরত উমার (রাঃ)-এর কাছে তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ করে। হযরত উমার (রাঃ) তখন হযরত আনাস (রাঃ)-কে ডেকে গোলামের সাথে চুক্তি করতে নির্দেশ দেন। এবারেও হযরত আনাস (রাঃ) অস্বীকৃতি জানান। তখন হযরত উমার (রাঃ) তাঁকে চাবুক মারেন এবং গোলামের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে বাধ্য করেন। অতঃপর তিনি কুরআনে কারীমের এ আয়াতটি তাঁর সামনে তিলাওয়াত করেন। (এটা সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত আতা (রঃ) হতে দু’টি উক্তিই বর্ণিত আছে। ইমাম শাফেয়ী (রঃ)-এর প্রথম উক্তি এটাই ছিল। কিন্তু তাঁর নতুন উক্তি এই যে, চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া মনিবের উপর ওয়াজিব নয়।
ইমাম মালেক (রঃ) বলেনঃ “গোলাম তার মনিবকে তার সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে আবেদন জানালে ঐ চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া মনিবের উপর ওয়াজিব নয়। কোন ইমাম যে কোন মনিবকে গোলামের মুক্তির জন্যে লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হতে বাধ্য করেছেন এটা আমি শুনিনি। আল্লাহ তাআলার এ হুকুম অনুমতি হিসেবে, ওয়াজিব হিসেবে নয়। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) প্রমুখ গুরুজনের এটাই উক্তি। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর মতে ওয়াজিব হওয়াই পছন্দনীয় উক্তি।
(আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিশ্বস্ততা, সত্যবাদিতা এবং মাল উপার্জন করার ক্ষমতা ইদ্যাদি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের যেসব গোলাম তাদের মুক্তির জন্যে তোমাদের সাথে লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হতে ইচ্ছা করে তাহলে তোমরা দেখো যে, তাদের মধ্যে মাল উপার্জনের যোগ্যতা আছে কি না। যদি তাদের মধ্যে তা দেখতে পাও তবে তাদের মনোবাসনা পূর্ণ কর। আর তা দেখতে না পেলে নয়। কেননা, এমতাবস্থায় তারা নিজেদের বোঝা লোকদের উপর চাপিয়ে দেবে।” অর্থাৎ অর্থ যোগাড় করার জন্যে তাদের কাছে ভিক্ষা করবে।
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা হতে তোমরা তাদেরকে দান করবে। অর্থাৎ তার নিকট হতে যে অর্থ আদায়ের চুক্তি হয়েছে তা হতে কিছু ক্ষমা করে দেবে। তা এক চতুর্থাংশ হোক বা এক তৃতীয়াংশ হোক বা অর্ধাংশ হোক অথবা কিছু অংশ হোক। নিম্নরূপ ভাবার্থও বর্ণনা করা হয়েছেঃ তাদেরকে যাকাতের মাল হতে সাহায্য কর। অর্থাৎ তাদেরকে তাদের মনিব এবং অন্যান্য মুসলমান যাকাতের মাল থেকে সাহায্য করবে যাতে তারা চুক্তির অর্থ পূর্ণ করে আযাদ হয়ে যেতে পারে।
পূর্বে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, যে তিন প্রকারের লোককে সাহায্য করার দায়িত্ব আল্লাহ তা'আলা গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে এটাও এক প্রকার। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই প্রসিদ্ধতম উক্তি।
বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার (রাঃ)-এর গোলাম আবূ উমাইয়া তার সাথে মুক্তির চুক্তি করেছিল। সে যখন তার প্রথম কিস্তির অর্থ নিয়ে হযরত উমার (রাঃ)-এর নিকট আগমন করে তখন তিনি তাকে বলেনঃ “যাও তুমি তোমার চুক্তির এ অর্থ পূরণে অন্যদের নিকটও সাহায্য প্রার্থনা কর।” তাঁর এ কথা শুনে গোলামটি বলেঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! শেষ কিস্তি পর্যন্ত তো আমাকেই পরিশ্রম করতে দিন!” জবাবে হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “না, আমার ভয় হচ্ছে বে, না জানি হয়তো আমি আল্লাহ তা'আলার ‘আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা হতে তোমরা তাদেরকে দান করবে এই নির্দেশকে ছেড়ে দেবো।” সুরাং এটা ছিল প্রথম কিস্তী যা ইসলামে আদায় করা হয়। এটা মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে।
বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে উমার (রাঃ) চুক্তিকৃত গোলামকে প্রথম কিস্তির সময় নিজেও কিছু দিতেন না এবং কিছু মাফও করতেন না, এই ভয়ে যে, সে হয়তো শেষ পর্যন্ত এই অর্থ আদায় করতে পারবে না, কাজেই তাঁর প্রদত্ত সাদকা তাঁকেই ফিরিয়ে দেয়া হবে। তবে শেষ কিস্তির সময় তিনি ইচ্ছামত মাফ করে দিতেন।
আল্লাহ পাক বলেনঃ তোমাদের দাসীরা সততা রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করো না।
অজ্ঞতা যুগের জঘন্য পন্থাসমূহের মধ্যে একটি পন্থা এও ছিল যে, তাদের দাসীরা যেন ব্যভিচার করে অর্থ উপার্জন করতঃ ঐ অর্থ মনিবদেরকে প্রদান করে এ কাজে তারা তাদেরকে বাধ্য করতো। ইসলাম এসে এই কু-প্রথার বিলুপ্তি সাধন করে।
বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতটি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সাল্ল মুনাফিকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। সে এ কাজই করতো। তার দাসীর নাম ছিল মুআযাহ। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, তার নাম ছিল মুসাইকাহ। সে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। ইসলাম গ্রহণের পর সে এ কাজে অস্বীকৃতি জানায়। অজ্ঞতার যুগে তার দ্বারা এ কাজ চলতো। এমনকি তার অবৈধ সন্তানাদিও জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর সে এ কাজ করতে অস্বীকার করে। তখন ঐ মুনাফিক তার উপর জোর জবরদস্তি করে। ঐ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
বর্ণিত আছে যে, বদরের এক কুরায়েশী বন্দী আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই-এর নিকট ছিল। সে তার দাসী মুআযার সাথে অবৈধভাবে মিলিত হতে চাচ্ছিল। কিন্তু মুআযা ইসলাম গ্রহণের কারণে এই অবৈধ কাজ হতে নিজেকে বাঁচিয়ে চলছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই-এরও ইচ্ছা ছিল যে, তার ঐ দাসীটি যেন ঐ কুরায়েশী বন্দীর সাথে অবৈধভাবে মিলিত হয়। এ ব্যাপারে সে তার উপর জোর জবরদস্তি ও মারপিট করতো। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।. এটা মুসনাদে আবদির রাযযাকে বর্ণনা করা হয়েছে।
অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, মুনাফিকদের এই নেতা তার ঐ দাসীটিকে তার অতিথিদের সেবার কার্যে পাঠিয়ে দিতে। দাসীটির ইসলাম গ্রহণের পর তাকে আবার এই কাজে পাঠাবার ইচ্ছা করলে সে প্রকাশ্যভাবে অস্বীকার করে এবং হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর কাছে তার এ বিপদের কথা বর্ণনা করে। হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে এ খবর পৌছিয়ে দেন। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে নিষেধ করে দেন যে, সে যেন তার ঐ দাসীকে সেখানে না পাঠায়। ঐ মুনাফিক তখন জনগণের মধ্যে এই গুজব রটিয়ে দেয় যে, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) তার দাসীকে ছিনিয়ে নিচ্ছেন। তার ঐ কথার প্রতিবাদে এই আসমানী হুকুম নাযিল হয়।
আর একটি বর্ণনায় আছে যে, মুসাইকাহ ও মুআযাহ এ দু'জন দু’ব্যক্তির দাসী ছিল। তারা তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করতো। ইসলাম গ্রহণের পর মুসাইকা এবং তার মাতা এসে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ করে। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।
এটা যে বলা হয়েছে যে, যদি এ দাসীরা সততা রক্ষা করার ইচ্ছা করে, এর দ্বারা ভাবার্থ এটা নেয়া চলবে না যে, যদি তাদের সততা রক্ষার ইচ্ছা না হয় তবে এতে কোন দোষ নেই। কেননা, ঐ সময় ঘটনা এটাই ছিল। এ জন্যেই এইরূপ বলা হয়েছে। এটা কোন সীমাবদ্ধতা ও শর্ত হিসেবে বলা হয়নি। এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য ছিল ধন-সম্পদ লাভ করা। আর এ দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য এটাও ছিল যে, তাদের সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং ঐ সন্তানদেরকে তারা তাদের দাসদাসী হিসেবে ব্যবহার করবে। হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সিংগা লাগানোর মজরী, ব্যভিচারের মজুরী এবং গণকের মজুরী গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।
অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, ব্যভিচারের খরচা, সিঙ্গা লাগানো দ্বারা উপার্জন এবং কুকুরের মূল্য কলুষতাপূর্ণ।
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যে ব্যক্তি দাসীদেরকে ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করে, আল্লাহ ঐ দাসীদেরকে তাদের প্রতি জবরদস্তি করার কারণে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু তাদের যে মনিবরা তাদের উপর জোর জবরদস্তি করেছে তাদেরকে তিনি কঠিনভাবে পাকড়াও করবেন। এই অবস্থায় তারাই গুনাহগার হবে। এমনকি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রঃ)-এর কিরআতে (আরবি) পরে (আরবি) এর রয়েছে। অর্থাৎ “ঐ দাসীদের গুনাহ পতিত হবে ঐ লোকেদের উপর যারা তাদেরকে বাধ্য করেছে।”
মারফু হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অল্লিাহ তা'আলা আমার উম্মতের ভুল করা, ভুলে যাওয়া এবং যে কাজের উপর তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে এগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন।”
পরে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি আমার পাক কালাম কুরআন কারীমের এই উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট আয়াত তোমাদের সামনে বর্ণনা করে দিয়েছি। পূর্ববর্তী লোকদের ঘটনাবলীও তোমাদের সামনে বিদ্যমান রয়েছে যে, সত্যের ঐ বিরুদ্ধাচরণকারীদের পরিণাম কি হয়েছে এবং কেমন হয়েছে! ওটাকে একটি কাহিনী বানিয়ে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী লোকদের জন্যে ওটাকে একটা শিক্ষা ও উপদেশমূলক ঘটনা করে দেয়া হয়েছে। যাতে আল্লাহভীরু লোকেরা এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং আল্লাহ তা'আলার বিরুদ্ধাচরণ হতে বেঁচে থাকে।
হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “কুরআন কারীমে তোমাদের মতভেদের ফায়সালা বিদ্যমান রয়েছে। এতে রয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেদের সংবাদ এবং পরে সংঘটিত হবে এরূপ বিষয়ের অবস্থার বর্ণনা। এগুলো বাজে কথা নয়। এগুলোকে যে বেপরোয়াভাবে ছেড়ে দিবে তাকে আল্লাহ তা'আলা ধ্বংস করবেন এবং যে এটা ছাড়া অন্য কিতাব খোজ করবে, আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করবেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings