Surah An Nur Tafseer
Tafseer of An-Nur : 24
Saheeh International
On a Day when their tongues, their hands and their feet will bear witness against them as to what they used to do.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১১-২৫ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
আয়িশাহ (رضي الله عنها) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অভ্যাস ছিল যে, সফরে যাওয়ার সময় তিনি তাঁর স্ত্রীদের নামে লটারী করতেন। লটারীতে যার নাম উঠতো তাকে তিনি সাথে নিয়ে যেতেন। ঘটনাক্রমে তাঁর এক যুদ্ধে গমনের সময় লটারীতে আমার নাম উঠে আসে। আমি তাঁর সাথে গমন করি। আর এটা ছিল পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পরের ঘটনা। আমি আমার হাওদাতে বসে থাকতাম। যখন যাত্রীদল কোন জায়গায় নামতো তখন আমার হাওদা নামিয়ে নেয়া হত। আমি হাওদার মধ্যেই বসে তাকতাম। আবার যখন কাফেলা চলতে শুরু করত তখন আমার হাওদাও উটের ওপর উঠিয়ে দেয়া হত।
এভাবে আমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই। যুদ্ধ শেষে আমরা মদীনায় ফিরতে শুরু করি। আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলে রাতে গমনের ঘোষণা দেয়া হয়। আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পুরণের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়ি এবং সেনা বাহিনীর তাঁবু থেকে বহু দূরে চলে যাই। প্রয়োজন পুরো করে আমি ফিরে এসে গলায় হাত দিয়ে দেখি যে, গলায় হার নেই। তখন হার খুঁজতে পুনরায় সেখানে যাই। আর তখন সেনাবাহিনী যাত্রা শুরু করে দিল। যে লোকগুলো আমার হাওদা উঠিয়ে দিত তারা মনে করল যে, আমি ঐ হাওদার মধ্যেই আছি, তাই তারা আমার হাওদাটি উটের পিঠে উঠিয়ে দিল এবং চলতে শুরু করল। ঐসময় পর্যন্ত স্ত্রীলোকেরা বেশি পানাহার করত না, ফলে তাদের দেহ বেশি ভারী হতো না। তাই আমাকে বহনকারীরা হাওদার মধ্যে আমার থাকা না থাকার কোন টেরই পেল না। তাছাড়া আমি ছিলাম ঐ সময় খুবই অল্প বয়সের মেয়ে। দীর্ঘক্ষণ পর আমি আমার হারানো হারটি খুঁজে পেলাম। সেনাবাহিনীর বিশ্রামস্থলে পৌঁছে সেখানে কাউকে পেলাম না। আমি যেখানে আমার উটটি ছিল সেস্থানে পৌঁছলাম। সেখানে আমি এ অপেক্ষায় বসে পড়লাম যে, সেনাবাহিনী সামনে অগ্রসর হয়ে যখন আমার না থাকার খবর জানবে তখন অবশ্যই এখানে লোক পাঠাবে। এমতাবস্থায় আমি ঘুমিয়ে পড়ি। আর সফওয়ান বিন মুআত্তাল আস-সুলামী আয-যাকওয়ানী যিনি সেনাবাহিনীর পিছনে ছিলেন এবং শেষ রাত্রে চলতে শুরু করলেন সকালে এখানে পৌঁছেন। তিনি একজন ঘুমন্ত মানুষকে দেখতে পেয়ে আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে দেখে চিনতে পারলেন। তার
(إِنَّالِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ)
শব্দ শুনে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠে নিজেকে চাদর দ্বারা সামলিয়ে নেই। তৎক্ষণাৎ তিনি তার উটটি বসিয়ে দেন এবং ওর হাতের ওপর নিজের পা রেখে সওয়ারীর ওপর আরোহণ করি। তিনি উটকে উঠিয়ে চালাতে শুরু করেন। আল্লাহ তা‘আলার শপথ! তিনি আমার সাথে কোন কথা বলেননি এবং আমিও তার সাথে কোন কথা বলিনি। প্রায় দুপুর বেলায় আমরা আমাদের যাত্রীদলের সাথে মিলিত হই। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যুকেরা অপবাদের ঘটনা রটিয়ে দেয়। আর এই افك বা মিথ্যা অপবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সূরা নূরের ১১-২০ নং আয়াত পর্যন্ত নাযিল হয় এবং প্রমাণিত হয় যে, আয়িশাহ সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৫০, সহীহ মুসলিম হা: ২৭৭০)
الْإِفْكِ বলতে সে মিথ্যা অপবাদ রটনার ঘটনাকে বুঝানো হয়েছে, যে ঘটনায় আয়িশাহ -কে অপকর্মের অপবাদ দেয়া হয়েছে।
(عُصْبَةٌ مِّنْكُمْ)
অর্থাৎ যারা এ মিথ্যা অপবাদ দানে জড়িত তারা তোমাদের মধ্যকার একটি জামাত, যারা নিজেদেরকে মু’মিন বলে থাকে। এদের মধ্যে কেউ মুনাফিক, আর কেউ প্রকৃত মু’মিন, কিন্তু মুনাফিকদের প্ররোচনায় সে সব হয়েছে। তারা হলেন হাসসান বিন সাবেত যিনি রাসূলের কবি বলে পরিচিত, মিসত্বাহ বিন আসাসাহ ও হামনাহ বিনতে জাহাশ।
(لَا تَحْسَبُوْهُ شَرًّا لَّكُمْ)
অর্থাৎ এ মিথ্যা অপবাদ রটানোর ঘটনাকে নিজেদের জন্য খারাপ মনে করো না। মান-সম্মানের ব্যাপার বলে যদিও বাহ্যিকভাবে খারাপ দেখা যাচ্ছে, কিন্তু এর মাধ্যমে যাকে অপবাদ দেয়া হয়েছে তাকে অপবাদ থেকে মুক্ত করা হবে, তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়া হবে এবং এর মাধ্যমে এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান দেয়া হবে যা তোমাদের উপকারে আসবে। আর যারা অপবাদ দিয়েছে তাদের মধ্যে কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী এবং কে মূল হোতা তা চিহ্নিত করা হবে।
(وَالَّذِيْ تَوَلّٰي كِبْرَه)
‘এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে’ প্রধান ভূমিকা পালন করেছে মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সুলুল। সে এ অপবাদ রটনার ব্যাপারে অন্যদেরকে প্ররোচিত করেছে।
(لَوْلَآ إِذْ سَمِعْتُمُوْهُ ظَنَّ....)
মু’মিনরা যখন নিজেদের মাঝে এরূপ অপবাদমূলক কথা শুনবে তখন কী করণীয় হবে সে দিক নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা এরূপ অপবাদমূলক কথা শুনলে কেন নিজেদের ব্যাপারে ভাল ধারণা করলে না? তা হলন যে অপবাদ দেয়া হয়েছে তা থেকে তিনি মুক্ত, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অপবাদ। অথচ অপবাদের জন্য চারজন সাক্ষী উপস্থিত করা উচিত তাও তারা করতে পারেনি, তারপরেও তোমরা মিথ্যা বলনি। উক্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হওয়ার পরে হাসসান, মিসত্বাহ ও হামনাহ বিনতে জাহাশকে অপবাদের শাস্তি প্রদান করা হয়। (তিরমিযী হা: ৩১৮১, আবূ দাঊদ হা: ৪৪৭৪, হাসান) কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন উবাইকে শাস্তি দেয়া হয়নি। বরং তার জন্য আখেরাতের শাস্তি প্রস্তুত রাখা হয়েছে, অপর দিকে মু’মিনদেরকে শাস্তি দিয়ে দুনিয়াতেই পবিত্র করা হয়েছে। ফলে আখিরাতে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না।
অর্থাৎ তোমরা যে মিথ্যা অপবাদ রটিয়েছ, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে পাকড়াও করতেন যদি তোমাদের প্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলার রহমত না থাকত।
(إِذْ تَلَقَّوْنَه۫ بِأَلْسِنَتِكُمْ....)
অর্থাৎ তোমরা বিষয়টি সত্য-মিথ্যা না জেনে, না বুঝে মুখে মুখে প্রচার শুরু করছ, আর বিষয়টিকে খুবই তুচ্ছ মনে করছ অথচ এটা আল্লাহ তা‘আলার নিকট খুবই বড় ধরণের অপরাধ। তোমাদের উচিত ছিল প্রচার না করে আল্লাহ তা‘আলার দিকে সোপর্দ করা। যেমন হাদীসে এসেছে: কোন কোন সময় মানুষ আল্লাহ তা‘আলার অসন্তুষ্টির এমন কথা উচ্চারণ করে ফেলে যার কোন গুরুত্ব তার কাছে নেই। কিন্তু ঐ কারণে সে জাহান্নামের এত নিম্নে পৌঁছে যায় যত নিম্নে আকাশ হতে জমিন রয়েছে। এমনকি তার চেয়েও নিম্নে চলে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ৬৪৭৮, সহীহ মুসলিম হা: ২৯৮৮)
(وَلَوْلَآ إِذْ سَمِعْتُمُوْهُ قُلْتُمْ....)
এখানে মু’মিনদেরকে দ্বিতীয়বার শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে যে, যখন তারা এ অপবাদের কথা শুনেছিল তখন এ ব্যাপারে কোন কথা না বলে তাদের এমনটি বলা উচিত ছিল যে, আমাদের এ ব্যাপারে কিছুই বলা উচিত নয়। যখন তারা এমনটি করেনি তখন তাদের প্রথম বারের ঘটনার জন্য সর্তক করে বলা হচ্ছে যে, দ্বিতীয়বার যেন তারা আর এমনটি না করে। মূলত তাদেরকে এ বিষয়ে সর্তক করে হচ্ছে।
(إِنَّ الَّذِيْنَ يُحِبُّوْنَ أَنْ.....)
‘নিশ্চয়ই যারা পছন্দ করে যে, মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার হোক’ এটা তৃতীয় সতর্ক বাণী যে, যারা এ ধরণের কথা শুনবে তার জন্য ওটা ছড়ানো হারাম। কারণ যারা ছড়ায় তাদের মূল উদ্দেশ্য হল মু’মিনদেরকে কষ্ট দেয়া এবং তাদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার করা। যারা এ রকম জঘন্য কথা ছড়িয়ে বেড়ায় তাদেরকে পার্থিব জীবনে শাস্তি (হদ) এবং পরলৌকিক শাস্তি জাহান্নামে দেয়া হবে। হাদীসে এসেছে:
সাওবান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদেরকে কষ্ট দিও না। এবং তাদের গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান করো না। যে তার মুসলিম ভাইয়ের গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান করবে আল্লাহও তার গোপনীয় দোষের পিছনে লাগবেন এবং তাকে এমনভাবে লাঞ্ছিত করবেন যে, তাকে তার বাড়ির লোকেরাও খারাপ দৃষ্টিতে দেখতে থাকবে। (মুসানাদ আহমাদ ৫/২৭৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
كَفَي بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ
একজন ব্যক্তি মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই বলে বেড়াবে। (সহীহ মুসলিম হা: ৫)
الْفَاحِشَةُ শব্দের অর্থ নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা। কুরআনে ব্যভিচার অর্থেও শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। যেমন সূরা বানী ইসরাঈলের ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে। অত্র আয়াতে ব্যভিচারের একটি মিথ্যা খবর প্রচার করাকেও অশ্লীলতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ অপরাধ করা ও অপরাধমূলক কাজে সহযোগিতা করা উভয়ই সমান। সুতরাং শুধু অশ্লীলতার একটি মিথ্যা সংবাদ প্রচার করার কারণে যদি আল্লাহর কাছে এত বড় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়, তাহলে যারা প্রতিনিয়ত সংবাদপত্র, রেডিও, টিভি, ভিডিও, সিডি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে সমাজে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে ও ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে তারা আল্লাহর নিকট কত বড় অপরাধী। এমনিভাবে যারা পরিবারের মাঝে টি-ভি, ডিসের নামে অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দেয় তারাও কম অপরাধী নয়। সুতরাং আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত, আমরা কোন্ দিকে পা বাড়াচ্ছি, আর সমাজকে কোন্ দিকে ঠেলে দিচ্ছি।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আবার মু’মিন বান্দাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কারণ শয়তান কখনো ভাল কাজের দিক-নির্দেশনা দেয় না। সে শুধু অশ্লীল ও মন্দ কাজের দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকেন যার মাধ্যমে সমাজে খারাপ কাজ ছড়ানো যাবে এবং বিশৃংখলা সৃষ্টি করা যাবে ইত্যাদি। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّا ط إِنَّمَا يَدْعُوْا حِزْبَه۫ لِيَكُوْنُوْا مِنْ أَصْحٰبِ السَّعِيْرِ)
“নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্র“, সুতরাং তাকে তোমরা শত্র“রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে শুধু এজন্যই আহ্বান করে, যেন তারা (পথভ্রষ্ট হয়ে) জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।” (সূরা ফাতির ৩৫:৬)
(وَلَوْلَا فَضْلُ اللّٰهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُه)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার রহমত না থাকলে তোমাদের কেউ পাপ থেকে পবিত্র হতে পারত না, শয়তানের অনুসরণ থেকে পবিত্র হতে পারত না। শয়তান যেভাবে খারাপ কাজকে সুশোভিত করে দেয় সেদিকে তোমাদের মন চলে যেত। কেননা মানুষের মন তো খারাপ কাজের দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়, তবে আল্লাহ তা‘আলা যাকে রহম করেন সে ব্যতীত। তাই আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। সেজন্য নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করে বলতেন:
اللّٰهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا
হে আল্লাহ তা‘আলা, আমার মনে তাক্বওয়া দাও, তা পবিত্র কর, কারণ তুমিই তো সর্বোত্তম পবিত্রকারী। তুমি এ মনের মালিক। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭২২) ইফকের ঘটনা বর্ণনা করার পর এ আয়াত নিয়ে আসার উদ্দেশ্য হলন যারা উক্ত মিথ্যারোপে জড়িত হয়নি তাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ রহমত রয়েছে। আর যারা জড়িত হয়েছে তাদের মধ্য হতে যাদেরকে পবিত্র করা হয়েছে তাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ অনুগ্রহ ছিল।
(وَلَا يَأْتَلِ أُولُوا الْفَضْلِ....) শানে নযূল:
আবূ বকর (رضي الله عنه) যখন দেখলেন, মিসতাহ বিন আসাসাহ তার কন্যা আয়িশাহ (رضي الله عنها)-এর নামে মিথ্যা অপবাদ রটনায় জড়িত, তখন তিনি শপথ করলেন, আমি তার জন্য আর কোন কিছুই খরচ করব না। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৫৭, সহীহ মুসলিম হা: ২৪৮৮)
মিসতাহ একজন গরীব মুহাজির সাহাবী ছিলেন। আত্মীয়তার দিক থেকে তিনি আবূ বকর (রাঃ) এর খালাত ভাই ছিলেন। এ জন্য তিনি তার তত্ত্বাবধান ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যখন সে অপবাদের সাথে জড়িত হয়ে যায় তখন আবূ বকর (রাঃ) এ শপথ করে বসেন।
উক্ত আয়াতে মূলত মন্দ কাজে শপথ গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে যে, তোমাদের মধ্য থেকে যারা প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন এমন অঙ্গীকারাবদ্ধ না হয় যে, নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন এবং যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় হিজরত করেছে তাদেরকে কোন কিছুই দান করবে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি আরো সদয় হওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যদি তাদের প্রতি সদয় হও, যদি তাদেরকে ক্ষমা কর তাহলে আল্লাহ তা‘আলাও তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা সতী-সাধ্বী, মু’মিন, অশ্লীলতার ব্যাপারে বেখবর তাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দিবে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে লা‘নতপ্রাপ্ত। যেমনটি অত্র সূরার প্রথম দিকে ৪ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা এরূপ সতী-সাধ্বী স্ত্রীদের নামে অপবাদ রটনা করবে তারা তো অভিশপ্ত, এমনকি তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কাল কিয়ামাতের মাঠে তাদের বিরুদ্ধে এ সকল কাজের জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰٓي أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَآ أَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ)
“আজ আমি এদের মুখে মোহর মেরে দেব, এদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং এদের পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা করত সে সম্পর্কে।” (সূরা ইয়াসীন ৩৬:৬৫)
আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ছিলাম। তখন তিনি হেসে দিলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি জান কিসে আমাকে হাসাল? আমরা বললাম, আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন তিনি বললেন: কিয়ামতের দিনে বান্দা তার রবের সাথে ঝগড়া করবে; এ দৃশ্য আমাকে হাসাল। সে বলবে, হে আমার রব! আপনি কি আমাকে জুলুম হতে বিরত রাখেননি? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, হ্যাঁ। তখন সে বলবে: আমি আমার সাক্ষ্য ব্যতীত আর কারো সাক্ষ্যকে আমার জন্য যথেষ্ট মনে করি না। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আজকের দিনে তোমার সাক্ষ্যই তোমার জন্য যথেষ্ট। তবে সম্মানিত লেখকগণ এ ব্যাপারে সাক্ষী। তখন তার মুখে মোহর মেরে দেয়া হবে। তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে বলা হবে কথা বল, তখন তারা তার সকল কিছুই প্রকাশ করে দিবে। তখন সে বলবে: তোমরা ধ্বংস হও। তোমাদের পক্ষ থেকেই তো আমি বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলাম। (সহীহ মুসলিম হা: ২২৮০)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, সেদিন প্রত্যেককে তার কর্মফল পুরোপুরি দেয়া হবে। কারো প্রতি কোন প্রকার কম করা হবে না। এবং কারো প্রতি কোন জুলুমও করা হবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন বিষয়ে সংবাদ পাওয়া মাত্রই তা রটিয়ে দেয়া যাবে না, বিশেষ করে যদি সেটা কারো জন্য কোন লজ্জাজনক বা অপমানকর বিষয় হয়।
২. মু’মিনগণ সর্বদা নিজেদের ব্যাপারে ভাল ধারণা পোষণ করবে, কারো সম্পর্কে কোন মন্দ ধারণা পোষণ করবে না।
৩. ব্যভিচারের ক্ষেত্রে চারজন সাক্ষী না মিললে ব্যভিচারের অভিযোগ করা যাবে না।
৪. কোন মন্দ কাজের ব্যাপারে শপথ করা যাবে না। যদি করা হয় তাহলে যখনই জানা যাবে যে, এটি ঠিক নয়, তখনই তা থেকে ফিরে এসে শপথ ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে।
৫. কারো দোষ-ত্র“টি অন্বেষণ করা যাবে না এবং তা প্রকাশও করা যাবে না।
৬. শয়তানের অনুসরণ করা যাবে না। কারণ শয়তান কখনো ভাল কাজের নির্দেশ প্রদান করে না।
৭. মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিয়ামতের মাঠে সাক্ষ্য প্রদান করবে।
৮. মানুষের প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।
৯. মানুষ কিয়ামতের মাঠে তাদের রবের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings