Surah Al Anbiya Tafseer
Tafseer of Al-Anbya : 83
Saheeh International
And [mention] Job, when he called to his Lord, "Indeed, adversity has touched me, and you are the Most Merciful of the merciful."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৮৩-৮৪ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তা‘আলা আইয়ূব (عليه السلام)-এর স¤পর্কে আলোচনা করেছেন। আইয়ূব (عليه السلام) ধৈর্যশীল নাবীগণের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় এবং অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন। বিপদে ধৈর্য ধারণ করায় এবং আল্লাহ তা‘আলার পরীক্ষাকে হাসিমুখে বরণ করে নেয়ায় আল্লাহ তা‘আলা আইয়ূব (عليه السلام)-কে ‘ধৈর্যশীল’ ও ‘সুন্দর বান্দা’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন। কুরআনে ৪টি সূরার ৮টি আয়াতে তাঁর কথা উল্লেখ রয়েছে। সূরা নিসার ১৬৩ ও আন‘আমের ৮৪ নং আয়াতে কেবল তাঁর নাম, আর সূরা স্ব-দ-এর ৪১-৪৪ নং আয়াতে কিছু আলোচনা উল্লেখ রয়েছে। তাফসসীরবিদ ও ঐতিহাসিকগণ আইয়ূবের জনপদের নাম বলেছেন ‘হূরান’ অঞ্চলের ‘বাছানিয়াহ’ এলাকা। যা ফিলিস্তিনের দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর দামেস্ক ও আযরূ‘আত-এর মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত।
প্রত্যেক নাবীকেই কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তারা সকলেই সে সব পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করেছেন ও উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু আইয়ূব (عليه السلام)-এর আলোচনায় বিশেষভাবে
(اِنَّا وَجَدْنٰھُ صَابِرًا)
“আমি তাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল পেয়েছি।” (সূরা স্ব-দ ৩৮:৪৪) বলার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে কঠিনতম কোন পরীক্ষায় ফেলেছিলেন। তবে সে পরীক্ষা কী তা কুরআনে উল্লেখ নেই। হাদীসে শুধু এতটুকু এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আইয়ূব (عليه السلام) একদিন নগ্নাবস্থায় গোসল করছিলেন। এমন সময় তাঁর ওপর সোনার টিড্ডি পাখিসমূহ এসে পড়ে। তখন তিনি সেগুলিকে ধরে কাপড়ে ভরতে থাকেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে বলেন: হে আইয়ূব
أَلَمْ أَكُنْ أَغْنَيْتُكَ عَمَّا تَريَ
আমি কি তোমাকে এসব থেকে অমুখাপেক্ষী করিনি? আইয়ূব (عليه السلام) জবাবে বললেন:
بَلَي وَعِزَّتِكَ وَلَكِنْ لَا غِنَي بِي عَنْ بَرَكَتِكَ
তোমার ইযযতের কসম! অবশ্যই তুমি আমাকে তা দিয়েছ। কিন্তু তোমার বরকত থেকে আমি অমুখাপেক্ষী নই। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৯) সুতরাং নাবীর মর্যাদার খেলাফ ও যা ফাসেকদের হাসি-ঠাট্টার খোরাক হয় এমন কথা ও মন্তব্য না করাই শ্রেয়। যেমন বলা হয় তাঁর শরীরের মাংস খসে পড়ে গিয়েছিল, শরীরে পোকা হয়েছিল, পচে-গলে দুর্গন্ধময় হয়ে যাওয়ায় ঘর থেকে বের করে জঙ্গলে ফেলে আসা হয়েছিল, ১৮ বা ৩০ বছর ধরে রোগাগ্রস্ত ছিলেন ইত্যাদি নাবীবিদ্বেষী ও ইসলামের শত্র“দের বানোয়াট গল্পগুজব বৈ কিছুই নয়।
অত্র সূরা ও সূরা স্ব-দ-এর আইয়ূব (عليه السلام)-এর আলোচনার শুরুতেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট আইয়ূব (عليه السلام)-এর আহবানের (اِذْ نَادٰی) কথা বলা হয়েছে। এতে বুঝা যায়, আইয়ূব (عليه السلام) নিঃসন্দেহে কঠিন বিপদে পড়েছিলেন। সেজন্য তিনি আকুতিভরে আল্লাহ তা‘আলাকে ডেকেছিলেন। আর বিপদে পড়ে আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকা ও তাঁর নিকট বিপদ মুক্তির জন্য প্রার্থনা করা নবুওয়াতের শানের বিপরীত নয় বরং তা অনুগত বান্দার পরিচয়। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاذْكُرْ عَبْدَنَا أَيُّوْبَ إِذْ نَادَي رَبَّه۫ أَنِّيْ مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَّعَذَابٍ)
“স্মরণ কর! আমার বান্দা আইয়ূবের কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিল: শয়তান তো আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে।” (সূরা স্ব-দ ৩৮:৪১) যে বিপদ দিয়ে কঠিন পরীক্ষা করেছিলেন তা ছিল দু’ ধরণের ১. بِنُصْبٍ তথা শারীরিক কষ্ট, ২. عَذَابٍ ধন-সম্পদের কষ্ট। এক্ষণে শয়তান তাঁকে কী ধরণের বিপদে ফেলেছিল কেমন রোগে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন, দেহের সর্বত্র কেমন পোকা ধরেছিল, জিহ্বা ও কলিজা ব্যতীত দেহের সব মাংস খসে পড়েছিল ইত্যাদি কাহিনী ইমাম কুরতুবী স্বীয় তাফসীরে অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন যার কোন ভিত্তি নেই বরং তা ইসরাঈলী উপকথা মাত্র।
(فَاسْتَجَبْنَا لَھ۫ فَکَشَفْنَا مَا بِھ۪ مِنْ ضُرٍّ)
‘তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম’ কীভাবে দূর করা হয়েছিল তার চিকিৎসা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তুমি তোমার পা দ্বারা মাটিতে আঘাত কর, ফলে তা থেকে ঠাণ্ডা পানি বের হবে , তুমি তা থেকে পান কর এবং তা দ্বারা গোসল কর এতে তোমার ভেতর ও দেহের কষ্ট দূর হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(ارْكُضْ بِرِجْلِكَ هَذَا مُغْتَسَلٌ بَارِدٌ وَشَرَابٌ)
“(আদেশ করলাম) তোমার পা দিয়ে মাটিতে আঘাত কর। (আঘাত করতেই একটি ঝরণা উৎপন্ন হল) এ হল সুশীতল গোসলের পানি এবং পানাীয়।” (সূরা স্ব-দ ৩৮:৪২)
(وَّاٰتَیْنٰھُ اَھْلَھ۫ وَمِثْلَھُمْ)
‘তাকে তার পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের সঙ্গে তাদের সমপরিমাণ আরো দিলাম’ এখানে পরিস্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি তাঁর বিপদে ধৈর্য ধারণের পুরস্কার দ্বিগুণভাবে পেয়েছিলেন দুনিয়াতে এবং আখেরাতে। বিপদে পড়ে যা কিছু তিনি হারিয়েছিলেন, সবকিছুই তিনি বিপুলভাবে ফেরত পেয়েছিলেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَکَذٰلِکَ نَجْزِی الْمُحْسِنِیْنَ)
“আর আমি এভাবেই সৎ কর্মপরায়ণদেরকে পুরষ্কৃত করি।” (সূরা আন‘আম ৬:৮৪)
(رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِنَا)
‘আমার বিশেষ রহমতরূপে’ অর্থাৎ আইয়ূব (عليه السلام)-কে বিপদ থেকে মুক্তি ও পরিবারবর্গকে ফেরত দেয়া ছিল আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে রহমত। তিনি অনুগ্রহ করে দান করেছেন। আয়াতের এ শব্দটিকে ‘রহীমা’ করে এটিকে আইয়ূব (عليه السلام)-এর স্ত্রীর নাম হিসেবে একদল লোক সমাজে চালু করে দিয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যেন বলছেন যে, আইয়ূবের স্ত্রী রহীমা তার স্বামীকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। পরে আমি তাকে আইয়ূবের কাছে ফিরিয়ে দিলাম। বস্তুত এটি একটি উদ্ভট ব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়। মূলত আইয়ূব (عليه السلام)-এর স্ত্রীর নাম কী ছিল, সে বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য কুরআন ও সহীহ হাদীসে নেই।
আইয়ূব (عليه السلام)-এর অত্র ঘটনা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَذِکْرٰی لِلْعٰبِدِیْنَ)
‘আর এটা ‘ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ’, সূরা স্ব-দ-এ বলা হয়েছে
(وَذِکْرٰی لِاُولِی الْاَلْبَابِ)
‘এবং জ্ঞানীদের জন্য উপদেশস্বরূপ’ অর্থাৎ এতে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলার দাসত্বকারী ব্যক্তিই প্রকৃত জ্ঞানী এবং প্রকৃত জ্ঞানী তিনিই যিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার দাসত্বকারী।
বিশিষ্ট তাবেয়ী মুজাহিদ (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, (১) কিয়ামতের দিন ধনীদের সম্মুখে প্রমাণস্বরূপ পেশ করা হবে সুলাইমান (عليه السلام)-কে, (২) ক্রীতদাসের সামনে পেশ করা হবে ইউসুফ (عليه السلام)-কে এবং (৩) বিপদগ্রস্তদের সামনে পেশ করা হবে আইয়ূব (عليه السلام)-কে । (আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/২০৭, ২১০)
সুতরাং বিপদে, দুঃখে-কষ্টে, রোগে সবার্বস্থায় আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইতে হবে। কোন মাযার বা কবরে শায়িত ব্যক্তিদের নিকট চাওয়া যাবে না। তাহলে শিরক হয়ে যাবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করতে হবে। অধৈর্য হয়ে নিরাশ হওয়া যাবে না।
২. ধৈর্য ধারণ করলে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তাঁর পক্ষ থেকে রহমত দান করেন।
৩. আইয়ূব (عليه السلام) সম্পর্কে যে সকল বানোয়াট কথা বলা হয় তা থেকে সাবধান থাকা উচিত।
৪. প্রকৃত স্ত্রী তিনিই যিনি সর্বাবস্থায় নেককার স্বামীর সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেন। আইয়ূব (عليه السلام)-এর স্ত্রী ছিলেন বিশ্বের পুণ্যবতী মহিলাদের শীর্ষস্থানীয় দৃষ্টান্ত।
৫. প্রয়োজনে স্ত্রীকে শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়ার জন্য মৃদু প্রহার করা যাবে, তবে সীমালংঘন করা যাবে না।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings