Surah Al Anbiya Tafseer
Tafseer of Al-Anbya : 32
Saheeh International
And We made the sky a protected ceiling, but they, from its signs, are turning away.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
৩০-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করছেন যে, তার শক্তি অসীম এবং প্রভূত্ব ও ক্ষমতা অপরিসীম। তিনি বলেনঃ যে সব কাফির আল্লাহ ছাড়া অন্যদের পা করছে তাদের কি এটুকুও জ্ঞান নেই যে, সমস্ত মাখলুকের সৃষ্টিকর্তা হলেন একমাত্র আল্লাহ? আর সব জিনিসের রক্ষক তিনিই? সুতরাং হে কাফিরদের দল! তোমরা তার সাথে অন্যদের ইবাদত করছো কেন? প্রথমে আসমান ও যমীন পরস্পর মিলিতভাবে ছিল। একটি অপরটি হতে পৃথক ছিল না। অল্লিাহ তাআলা পরে ওগুলিকে পৃথক পৃথক করে দিয়েছেন। যমীনকে নীচে ও অসিমানকে উপরে রেখে উভয়ের মধ্যে বিরাট ব্যবধান সৃষ্টি করতঃ অত্যন্ত কৌশলের সাথে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি সাতটি যমীন ও সাতটি আসমান বানিয়েছেন। যমীন ও প্রথম আসমানের মধ্যবর্তী স্থান ফাকা রেখেছেন। আকাশ হতে তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং যমীন হতে ফসল উৎপন্ন করেন। প্রত্যেক জীবন্ত জিনিস তিনি পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। এই সমুদয় জিনিস, যে গুলির প্রত্যেকটি, কারিগরের একচেটিয়া ক্ষমতা ও একত্ব প্রমাণ করে না কি? এ লোকগুলি নিজেদের সামনে এসব কিছু বিদ্যমান পাওয়া সত্ত্বেও এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকারোক্তি করেই শিক পরিত্যাগ করছে না।
(আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেক জিনিসের মধ্যেই তাঁর (আল্লাহর) অস্তিত্বের নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে যা প্রমাণ করছে যে, তিনি এক।"
হযরত ইকরামা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনু আব্বাসকে (রঃ) জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “পূর্বে রাত ছিল, না দিন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ (আরবী) “প্রথমে যমীন ও আসমান মিলিত ও সংযুক্ত ছিল। তা হলে এটাতো প্রকাশমান যে, তাতে অন্ধকার ছিল। আর অন্ধকারের নামইতো রাত। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পূর্বে রাতই ছিল।"
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ পাকের এই উক্তি সম্পর্কে একটি লোক হযরত ইবনু উমারকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে বলেনঃ “এ সম্পর্কে তুমি হযরত ইবনু আব্বাসকে (রাঃ) জিজ্ঞেস কর। তিনি উত্তরে যা বলবেন তা আমাকে জানাবে।” তখন লোকটি হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে। তিনি জবাবে বলেনঃ “যমীন ও আসমান সব এক সাথেই ছিল। না বৃষ্টি বর্ষিত হতো, না ফসল উৎপন্ন হতো। যখন আল্লাহ তাআলা আত্মা বিশিষ্ট মাখলুক সৃষ্টি করলেন তখন তিনি আকাশকে ফেড়ে তা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করলেন এবং যমীনকে ফেড়ে তা হতে ফসল উৎপন্ন করলেন। প্রশ্নকারী লোকটি এটা হযরত ইবনু উমারের (রাঃ) সামনে বর্ণনা করলে তিনি অত্যন্ত খুশী হন এবং বলে ওঠেনঃ “আজকে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হলো যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাসের (রাঃ) কুরআনের জ্ঞান সবারই উর্ধ্বে। মাঝে মাঝে আমার ধারণা হতো যে, হয়তো বা হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) এ ব্যাপারে সাহসিক উদ্যম বেড়ে গেছে। কিন্তু আজ ঐ কুধারণা আমার মন থেকে দূর হয়ে গেল।” (এটা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আল্লাহ তাআলা আসমান ফেড়ে সাতটি আসমান বানিয়ে দেন এবং যমীনকে ফেড়ে সাতটি যমীন বানিয়ে দেন। হযরত মুজাহিদের (রাঃ) তাফসীরে এও রয়েছে যে, এগুলি মিলিত ভাবে ছিল। অর্থাৎ পূর্বে সাত আসমান এক সাথেই ছিল এবং অনুরূপভাবে সাত যমীনও একটাই ছিল। তারপর পৃথক পৃথক করে দেয়া হয়। হযরত সাঈদের (রঃ) তাফসীরে আছে যে, এ দুটো পূর্বে একটাই ছিল, পরে পৃথক পৃথক করে দেয়া হয়েছে। যমীন ও আসমানের মধ্যবর্তী স্থান ফঁকা রাখা হয়েছে। পানিকে সমস্ত প্রাণীর আসল বা মূল করে দেয়া হয়েছে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর নবী (সঃ)! যখন আমি আপনাকে দেখি তখন আমার মন খুব খুশী হয় এবং আমার চক্ষু ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আপনি আমাদেরকে সমস্ত জিনিসের মূল সম্পর্কে অবহিত করুন! তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “হে আবু হুরাইরা (রাঃ)! জেনে রেখো যে, সমস্ত জিনিস পানি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। (এ হাদীসটি মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যখন আমি অপনাকে দেখি তখন আমার প্রাণ খুশী হয় ও চক্ষু ঠাণ্ডা হয়। আপনি আমাদেরকে প্রত্যেক জিনিস (এর মূল) সম্পর্কে খবর দিন।' তিনি বললেনঃ “প্রত্যেক জিনিস পানি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে।” আমি পুনরায় বললামঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন যে, যখন আমি তা করবো তখন আমি বেহেশতে প্রবেশ করবো। তিনি বলেনঃ “লোকদেরকে সালাম দিতে থাকো, (দরিদ্রদেরকে) খাদ্য খেতে দাও এবং রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদের নামায পড় যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণনা করা হয়েছে)
যমীনকে আল্লাহ তাআলা পর্বতরূপ পেরেক দ্বারা দৃঢ় করে দিয়েছেন যাতে তা হেলে দুলে মানুষকে পেরেশান করে না তুলে এবং তাদেরকে প্রকম্পিত না করে। যমীনের তিন ভাগ পানিতে ভোলা আছে, যাতে মানুষে আকাশ ও ওর বিস্ময়কর বস্তুরাজি চক্ষু দ্বারা অবলোকন করতে পারে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় রহমতের গুণে যমীনে রাস্তাপথ বানিয়ে দিয়েছেন। যাতে মানুষ সহজে তাদের সফরের কাজ চালিয়ে যেতে পারে এবং দূর দূরান্তে পৌঁছতে পারে। আল্লাহ তাআলার মাহাত্ম্য দেখে বিস্মিত হতে হয় যে, এক শহর হতে অন্য শহরের মাঝে পর্বত রাজি প্রতিবন্ধক রূপে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং এর ফলে চলাফেরা বাহ্যতঃ কষ্টকর মনে হচ্ছে। কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ স্বীয় ক্ষমতা বলে ঐ পর্বত রাজির মধ্যেও পথ বানিয়ে দিয়েছেন, যাতে এখানকার লোক সেখানে এবং সেখানকার লোক এখানে পৌঁছতে পারে এবং নিজেদের কাজ কারবার চালিয়ে যেতে পারে। তিনি আসমানকে যমীনের উপর ছাদরূপে বানিয়ে রেখেছেন। যেমন- (আরবী) অর্থাৎ “আমি আকাশকে নিজের হাতে সৃষ্টি করেছি এবং আমি প্রশস্ত জ্ঞান ও শক্তির অধিকারী।" (৫১:৪৭) আর এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “শপথ আকাশের এবং যিনি ওটা নির্মাণ করেছেন তার।" (৯১:৫) আরো বলেনঃ (আরবী)
অর্থাৎ “তারা কি তাদের উধ্বস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না, আমি কিভাবে ওটা নির্মাণ করেছি ও ওকে সুশোভিত করেছি এবং ওতে কোন ফাটলও নেই?” (৫০:৬)
(আরবী) বলা হয় ছাদ ও তাবু খাড়া করাকে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইসলামের ‘বেনা বা ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর রাখা হয়েছে।” যেমন পাঁচটি স্তম্ভের উপর কোন ছাদ বা তাঁবু দাড়িয়ে থাকে। অতঃপর এই যে আকাশ, যা ছাদের মত, তা আবার সুরক্ষিত ও প্রহরীযুক্ত, যাতে ওর কোন জায়গায় কোন ক্ষতি না হয়। ওটা সুউচ্চ ও নির্মল।
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক জিজ্ঞেস করেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এই আকাশ কি?" তিনি উত্তরে বলেনঃ “এটা হচ্ছে তরঙ্গ, যা তোমাদের হতে বন্ধ রাখা হয়েছে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে। এর ইসনাদ গারীব)
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ কিন্তু তারা আকাশস্থিত নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “আসমান ও যমীনে এমন বহু নিদর্শন রয়েছে যে গুলি মানুষের চোখের সামনে বিদ্যমান, অথচ তারা সেগুলি হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।" অর্থাৎ তারা মোটেই চিন্তা গবেষণা করে না যে, কত প্রশস্ত, সুউচ্চ ও বিরাট এই আকাশ তাদের মাথার উপর বিনা স্তম্ভে আল্লাহ তাআলা প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন। অতঃপর ওকে সুন্দর সুন্দর তারকারাজি দ্বারা সৌন্দর্য মণ্ডিত করেছেন। ওগুলির কিছু কিছু স্থির আছে এবং কিছু কিছু চলমান। রয়েছে। সূর্যের কক্ষপথ নির্দিষ্ট আছে। যখন ওটা বিদ্যমান থাকে তখন দিন হয় এবং যখন ওটা দৃষ্টির অন্তরালে চলে যায় তখন রাত্রি হয়। এই সূর্য শুধু মাত্র একদিন ও রাতে সারা আকাশকে প্রদক্ষিণ করে। ওর চলন ও তীব্রতা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। শুধু অনুমানের উপর বলা হয়ে থাকে সেটা অন্যকথা।
বর্ণিত আছে যে, বানী ইসরাঈলের আবেদদের মধ্যে কোন একজন আবেদ তার ত্রিশ বছরের ইবাদতের সময় পূর্ণ করেছিলেন। কিন্তু অন্যান্য আবেদদের উপর যেমন ত্রিশ বছরের ইবাদতের পর মেঘের দ্বারা ছায়া করা হতো, তাঁর উপর তা হলো না। তখন তিনি তাঁর ঐ অবস্থার কথা তাঁর মায়ের নিকট বর্ণনা করেন। তখন তাঁর মা বলেন “হে আমার প্রিয় বৎস! হয় তো তুমি তোমার এই ইবাদতের যুগে কোন পাপকার্য করে থাকবে। তিনি বললেনঃ “আম্মা! আমি তো এরূপ কোন কার্য করি নাই।” মা বললেনঃ “তা হলে তুমি অবশ্যই কোন পাপ কার্যের পূর্ণ সংকল্প গ্রহণ করে থাকবে।” তিনি বললেনঃ খুব স তুমি আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করেছে, কিন্তু কোন চিন্তা গবেষণা না করেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছে। আবেদ তখন বললেনঃ “এরূপতো বরাবরই হতে আছে।” মা বললেনঃ “তা হলে কারণ এটাই।”
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর ব্যাপক ক্ষমতার কিছু নিদর্শন বর্ণনা করছেনঃ তোমরা রাত্রি ও অন্ধকারের প্রতি লক্ষ্য কর এবং দিন ও ওর আলোর প্রতি দৃষ্টিপাত কর। তারপর এ দুটোর পুরস্পর ক্রমাগত সুশৃংখলভাবে গমনাগমনের প্রতি লক্ষ্য কর এবং একটি কমে যাওয়া ও অপরটি বেড়ে যাওয়া। দেখো। আরো দেখো সূর্য ও চন্দ্রের দিকে। সূর্যের আলো এক বিশেষ আলো এবং ওর আকাশ, ওর যামানা, ওর নড়াচড়া এবং ওর চলনগতি পৃথক। চন্দ্রের আলো পৃথক ওর কক্ষপথ পৃথক এবং চলনগতি পৃথক। প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনে নিমগ্ন রয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “তিনিই সকালকে উজ্জ্বলকারী, তিনিই রাত্রিকে শান্তিময় করেন, তিনিই সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।”
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings