Surah Al Anbiya Tafseer
Tafseer of Al-Anbya : 3
Saheeh International
With their hearts distracted. And those who do wrong conceal their private conversation, [saying], "Is this [Prophet] except a human being like you? So would you approach magic while you are aware [of it]?"
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
সূরার নামকরণ:
الْأَنْبِيَاءِ আম্বিয়া শব্দটি নাবী শব্দের বহুবচন। এই সূরাতে একাধিক নাবী ও রাসূলের আলোচনা করা হয়েছে বিধায় একে সূরা আম্বিয়া নামে নামকরণ করা হয়েছে।
সূরাতে কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও মানুষ সে সম্পর্কে গাফেল, নাবীদের বৈশিষ্ট্য, পূর্ববর্তী কয়েকটি অবাধ্য জাতির ধ্বংস, একাধিক মা‘বূদ থাকলে কী সমস্যা হত এবং যে ফেরেশতাদেরকে অনেকে আল্লাহ তা‘আলার কন্যা মনে করে তারা মূলত তা নয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর কয়েকজন নাবীর কাহিনী, তাদের আহ্বানে আল্লাহ তা‘আলার সাড়া দান, ইবরাহীম (عليه السلام)-এর পিতা ও জাতিকে তাওহীদের দাওয়াত, দাওয়াত পেয়ে তাদের অবস্থান এবং সবশেষে জাহান্নামী ও জান্নাতীদের সম্পর্কে আলোচনা নিয়ে আসা হয়েছে।
১-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
(اِقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সতর্ক করছেন যে, তাদের কৃতকর্মের হিসাব নেয়ার দিন তথা কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে। কারণ সময় যাচ্ছে কিয়ামত ঘনিয়ে আসছে, যতই সময় যাবে কিয়ামত ততই কাছে চলে আসবে। এভাবে একদিন কিয়ামত চলে আসবে আর প্রত্যেককে সেদিন ভাল-মন্দ সকল কর্মের হিসাব দিতে হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়ামতের দিন আদম সন্তান পাঁচটি প্রশ্নের জবাব না দেয়া পর্যন্ত এক পাও আগাতে পারবে না (১) জীবন কোন পথে ব্যয় করেছে, (২) তোমার যৌবনকাল কোন পথে ব্যয় করেছে, (৩) সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে, (৪) এবং কোন পথে ব্যয় করেছে, (৫) জ্ঞানানুযায়ী কতটুকু আমল করেছে। (মুসনাদে আবী ইয়ালা হা: ৫২৭১) অথচ মানুষ এসব থেকে উদাসীন রয়েছে। তারা এর জন্য এমন কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করছে না; যা কিয়ামতের দিন উপকারে আসবে। বরং দিন দিন অন্যায় কাজের দিকে বেশি ধাবিত হচ্ছে। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছেন যাতে তারা মন্দ কার্যকলাপ ছেড়ে দিয়ে ভাল কাজের দিকে ধাবিত হয়। কেননা সেদিনের অবস্থা হবে খুবই ভয়াবহ। আল্লাহ তা‘আলা তা‘আলা বলেন:
(اِقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ - وَإِنْ يَّرَوْا اٰيَةً يُّعْرِضُوْا وَيَقُوْلُوْا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ)
“কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে, চন্দ্র ফেটে গেছে, তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলেঃ এটা তো পূর্ব হতে চলে আসা বড় জাদু।” (সূরা ক্বামার ৫৪:১-২)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তাদের কাছে যখন কোন নতুন উপদেশ আসে অর্থাৎ কুরআন যা প্রয়োজন মত অবতীর্ণ হয়। যদিও তা তাদেরই উপদেশের জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে কিন্তু তারা এমনভাবে তা শ্রবণ করে যেন তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা, উপহাস ও খেলা করছে, অর্থাৎ তা নিয়ে তারা কোন চিন্তাভাবনা করে না।
(لَاهِيَةً قُلُوْبُهُمْ)
অর্থাৎ তাদের অন্তর কুরআন থেকে গাফেল, দুনিয়ার বাতিল ও কু-প্রবৃত্তি নিয়ে ব্যস্ত।
মক্কার কুরাইশ কাফিররা গোপনে নিজেদের মাঝে শলাপরামর্শ করল কিভাবে মানুষদেরকে মুহাম্মাদ থেকে দূরে রাখা যায়, তারা চিন্তা করে বলল: মুহাম্মাদ তো তোমাদের মত একজন সাধারণ মানুষ, তার মধ্যে আর তোমাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং সে যে কুরআন নিয়ে এসেছে তা একটি জাদু, তাহলে কিভাবে তার জাদুকে তোমরা মেনে নিয়ে তার অনুসরণ করবে? মক্কার কাফিররা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাদের মত একজন মানুষ বলে প্রত্যাখ্যান করল, নাবী হিসেবে মেনে নিল না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা যত নাবী প্রেরণ করেছেন সকল নাবীই মানুষ ছিলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ إِلَّآ إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَيَمْشُوْنَ فِي الْأَسْوَاقِ)
“তোমার পূর্বে আমি যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছি তারা সকলেই তো আহার করত ও হাটে-বাজারে চলাফেরা করত।” (সূরা ফুরক্বান ২৫:২০)
মানুষকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করার রহস্য হচ্ছে যদি আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ না করে কোন ফেরেশতা বা জিনকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করতেন তাহলে রিসালাতের পরিপূর্ণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হত না। মানুষের পক্ষে ফেরেশতা বা জিনদের কথা বোঝা সম্ভব হত না। মাটির মানুষ যে সকল সমস্যা অনুভব করবে তা নূরের তৈরি ফেরেশতা বা আগুনের তৈরি জিন অনুভব করতে পারবে না। একত্রে চলাফেরা করা কষ্টকর হত। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করেই আল্লাহ তা‘আলা মানুষকেই মানুষের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। যদি পৃথিবীতে ফেরেশতা বসবাস করত তাহলে তিনি ফেরেশতাদেরকেই রাসূল হিসেবে প্রেরণ করতেন। যেহেতু পৃথিবীতে মানুষের বসবাস তাই তিনি মানুষকেই রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন।
(رَبِّيْ يَعْلَمُ الْقَوْل)
যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা আকাশ-জমিনে যত কথা হয় সকল কথা অবগত রয়েছেন সেহেতু হে কাফিররা! তোমরা আমার ব্যাপারে যা কিছু বলছ সব আল্লাহ তা‘আলা শুনছেন, সে হিসেবে তোমাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে। এ কথা বলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সতর্কসাবধান করছেন। অতএব মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপারে যেসব মিথ্যা বলছ সে সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।
(أَضْغَاثُ أَحْلَامٍ)
এমন স্বপ্ন যার কোন ব্যাখ্যা নেই। কেউ বলেছেন, মিথ্যা স্বপ্ন। অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে কুরআন পাঠ করে তা মিথ্যা বা আবোল-তাবোল স্বপ্ন। যখন তারা দেখল বিষয়টি এমন নয় তখন তারা বলল: সে এটা আবিষ্কার করেছে এবং নিজের পক্ষ থেকে উদ্ভাবন করেছে। এ কথা থেকেও ফিরত এসে বলল: না, সে একজন কবি। তাদের এ সকল দাবীর প্রতিবাদ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “এটা কোন কবির কথা নয়; তোমরা অল্পই বিশ্বাস কর, এটা কোন গণকের কথাও নয়, তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। যদি সে নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিত, তবে অবশ্যই আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম, এবং কেটে দিতাম তার হৃৎপিণ্ডের শিরা। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ থাকত না, যে আমার থেকে তাকে রক্ষা করতে পারে।” (সূরা হাক্কাহ ৬৯:৪১-৪৭)
তারা এ দাবী করত, যদি মুহাম্মাদ সত্যবাদী হয় তাহলে তাদের নিকট পূর্ববর্তীদের মত নিদর্শন নিয়ে আসুক। যেমন সালেহ (عليه السلام) উটনী নিয়ে এসেছিলেন, মূসা (عليه السلام) লাঠি নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথা অনুপাতে নিদর্শন অবতীর্ণ করেননি। কারণ আল্লাহ তা‘আলা জানেন যে, তারা নিদর্শন দেখে ঈমান আনবে না। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: ইতোপূর্বে যত জনপদ ধ্বংস করেছি তাদের কেউ ঈমান আনেনি, অতএব এরা কি ঈমান আনবে? কক্ষনো না, এরা পূর্ববর্তীদের অনুগামী।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَاَقْسَمُوْا بِاللہِ جَھْدَ اَیْمَانِھِمْ لَئِنْ جَا۬ءَتْھُمْ اٰیَةٌ لَّیُؤْمِنُنَّ بِھَاﺚ قُلْ اِنَّمَا الْاٰیٰتُ عِنْدَ اللہِ وَمَا یُشْعِرُکُمْﺫ اَنَّھَآ اِذَا جَا۬ءَتْ لَا یُؤْمِنُوْنَ)
“তারা আল্লাহর নামে কঠিন শপথ করে বলে, তাদের নিকট যদি কোন নিদর্শন আসত তবে অবশ্যই তারা তাতে ঈমান আনত। বল: ‘নিদর্শন তো (আসে একমাত্র) আল্লাহর পক্ষ থেকে। তাদের নিকট নিদর্শন আসলেও তারা যে ঈমান আনবে না এটা কিভাবে তোমাদের বোধগম্য করান যাবে?” (সূরা আন‘আম ৬:১০৯)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামত অতি নিকটবর্তী, তাই কিয়ামতের কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মন্দ আমল ছেড়ে দিয়ে সৎ আমল করতে হবে।
২. কুরআন মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে, কৌতুকচ্ছলে নয়।
৩. যুগে যুগে মানুষের মধ্য হতে মানুষকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করার হেকমত জানলাম।
৪. কুরআন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কিতাব, কোন অলীক কাহিনী নয়।
৫. পূর্ববর্তী যাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছে সবাই আল্লাহ তা‘আলার সাথে নাফরমানী করেছে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings