20:16
فَلَا يَصُدَّنَّكَ عَنۡهَا مَن لَّا يُؤۡمِنُ بِهَا وَٱتَّبَعَ هَوَٮٰهُ فَتَرۡدَىٰ١٦
Saheeh International
So do not let one avert you from it who does not believe in it and follows his desire, for you [then] would perish.
৯-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর: উক্ত আয়াতগুলোতে মূসা (عليه السلام) মাদইয়ানে দশ বছর অবস্থান করার পর যখন মিসরের উদ্দেশ্যে সস্ত্রীক ফিরে আসছিলেন তখন পথিমধ্যে আল্লাহ তা‘আলার সাথে তাঁর কথোপকথন, রিসালাত প্রাপ্তি ও সংশ্লিষ্ট ঘটনা বর্ণিত হয়েছে যার সারসংক্ষেপ হলো মূসা (عليه السلام) সস্ত্রীক মাদইয়ান থেকে আসতে পথিমধ্যে রাত হয়ে গেল, রাস্তাও ছিল অজানা, রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলেন না, হয়তো কোন দিক নির্দেশনা পেলে রাস্তা পেতেন। কেউ কেউ বলেছেন, স্ত্রীর প্রসবের সময় ছিল আসন্ন, শীতও ছিল কনকনে। সব মিলিয়ে আগুনের প্রয়োজন। যখন তুর পাহাড়ের কাছে আসলেন তখন আগুন দেখতে পেলেন, পরিবারকে বললেন: তোমরা এখানে অবস্থান কর, আমি ঐখানে আগুন দেখতে পাচ্ছি, আগুন নিয়ে আসলে হয়তো শীত কাটানো যাবে অথবা একটা পথ খুঁজে পাব। অতঃপর যখন তিনি ঐ আগুনের নিকট পৌঁছলেন, তখন আওয়াজ এল, হে মূসা! আমিই তোমার পালনকর্তা। অতএব তুমি তোমার জুতো খুলে ফেল। কারণ তুমি পবিত্র তুওয়া উপত্যকায় রয়েছ। আওয়াজটি এসেছিল গাছের আড়াল থেকে, যেমন সূরা ক্বাসাসের ৩০ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। জুতো খোলার নির্দেশ এ জন্য দেয়া হয়েছে যে, এতে বিনয় বেশি প্রকাশ পাবে এবং অধিক সম্মান প্রদর্শন করা হবে।আর আমি তোমাকে রাসূল হিসেবে মনোনীত করেছি। অতএব তোমাকে যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শোন। আমিই আল্লাহ তা‘আলা। আমি ব্যতীত আর কোন সত্যিকার মা‘বূদ নেই। অতএব একমাত্র আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। (وَأَقِمِ الصَّلٰوةَ لِذِكْرِيْ) ‘আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর’ প্রথমে ব্যাপকভাবে ইবাদতের নির্দেশ দেয়ার পর বিশেষভাবে সালাত আদায় করার নির্দেশ দেয়া হল কেন অথচ ইবাদতের মাঝে সালাত শামিল? কারণ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করার যত ইবাদত রয়েছে বা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য হাসিল করার যত ইবাদত রয়েছে সকল ইবাদতের মাঝে সালাত সর্বোত্তম পন্থা। তাছাড়া এভাবে ব্যক্ত করে সালাতের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। (لِذِكْرِيْ) এর একটি অর্থ হল- আমার স্মরণার্থে, অর্থাৎ আমার স্মরণার্থে সালাত আদায় কর। কেননা আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করার প্রধান মাধ্যম হল সালাত। দ্বিতীয় অর্থ হল যখনই আমার কথা স্মরণ হবে তখনই সালাত আদায় কর। অর্থাৎ যদি কোন সময় উদাসীনতায় বা ভুলে অথবা ঘুমে আমার স্মরণ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাও স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই সালাত আদায় কর। যেমন হাদীসে এসেছে: যদি তোমাদের কেউ সালাত আদায় করতে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে যায় তাহলে যখনই স্মরণ হবে তখনই সালাত আদায় করে নেবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: ‘আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর’। (সহীহ বুখারী হা: ৫৯৭, সহীহ মুূসলিম হা: ৬৯৭)তারপর মহান আল্লাহ বলেন: কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, আমি এটা গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেকেই নিজ কর্মানুযায়ী ফলাফল লাভ করতে পারে। সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে না এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সে যেন তোমাকে (কিয়ামত বিষয়ে সতর্ক থাকা হতে) নিবৃত্ত না করে। তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। মূসা (عليه السلام)-কে ঈমানের মূলনীতির বর্ণনা দেয়ার পর কয়েকটি মু’জিযাহর বর্ণনা দিচ্ছেন যাতে তাঁর অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।(هِيَ عَصَايَ) মূসা (عليه السلام)-এর হাতে কী ছিল তা আল্লাহ তা‘আলা ভাল করেই জানেন, তারপরেও জিজ্ঞেস আকারে বলার কারণ হল মূসা (عليه السلام) যেন আল্লাহ তা‘আলার কথা মনযোগসহ শুনেন আর তাঁর প্রতি আল্লাহ তা‘আলা যে নেয়ামত দান করেছেন তার গুরুত্ব তুলে ধরা। মূসা (عليه السلام) ছাগল চরাতেন, ফলে এমন একটি মু’জিযাহ দেয়া হল যা তাঁর ব্যক্তিগত কাজেও উপকারে আসে। তিনি এ লাঠির ওপর প্রয়োজনে ভর দিতেন এবং ছাগলের খাবার পাতা পেড়ে দিতেন। আল্লাহ তা‘আলা মূসা (عليه السلام)-কে কেবল জিজ্ঞেস করেছেন তোমার হাতে কী? কিন্তু মূসা (عليه السلام) এত উত্তর দিলেন কেন! কারণ হল তিনি আল্লাহ তা‘আলার সাথে কথা বলার একটি সুযোগ পেলেন, যে কেউ বড়দের সাথে কথা বলতে ভালবাসে। তাই তিনি এ সুযোগে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অনেক কথা বলে নিলেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে নির্দেশ প্রদান করে বলেন: তুমি তোমার হাত বগলে রাখ। তারপর দেখবে তা বের হয়ে আসবে উজ্জ্বল ও নির্মল আলো হয়ে, অন্য একটি নিদর্শনরূপে। এটা এজন্য যে, আমি তোমাকে আমার বড় বড় নির্দশনাবলীর কিছু অংশ দেখাতে চাই। এটা ছিল মূসা (عليه السلام)-কে দেয়া দ্বিতীয় মু‘জিযাহ।মূসা (عليه السلام)-কে নবুওয়াত ও মু‘জিযাহ প্রদান করার পর আল্লাহ তা‘আলা দাওয়াতী কাজের নির্দেশ দিয়ে ফির‘আউনের কাছে প্রেরণ করলেন। طَغٰي অর্থ সীমালঙ্ঘন করা, অর্থাৎ ফির‘আউন বানী-ইসরাঈলদেরকে দাসে পরিণত করত, নানাভাবে নির্যাতন করত, পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং কন্যাদেরকে জীবিত রাখত। এভাবে সে জমিনে সীমালংঘন করত। মূসা (عليه السلام)-এর মুখে জড়তা ছিল, ভালভাবে কথা বলতে পারতেন না। তাই আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করলেন: হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষ উন্মোচন করে দিন এবং আমার কাজ সহজ করে দিন, আমার মুখের জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। আর আমার পরিবারের মধ্য থেকে আমার ভাই হারূনকে আমার সাহায্যকারী নিযুক্ত করে দিন। তার মাধ্যমে আমার শক্তিকে আরো বাড়িয়ে দিন। আর তাকে নবুওয়াত দিয়ে আমার দাওয়াতী কর্মে অংশীদার করুন। যাতে আমরা বেশি বেশি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করতে পারি এবং অধিক পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি। হারূন (عليه السلام) মূসা (عليه السلام) থেকে তিন অথবা চার বছরের বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন এবং তিন বছর পূর্বেই মারা যান। মূসা (عليه السلام) যখন হারূন (عليه السلام)-এর জন্য দু‘আ করেন তখন তিনি মিসরে ছিলেন। (কুরতুবী) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে একটি বর্ণনা রয়েছে: যখন মূসা (عليه السلام) ফির‘আউনের বাড়িতে ছিলেন তখন একদা ফির‘আউনের মুখে মূসা (عليه السلام) চড় মারেন এবং তার দাড়ি ধরে টান মারেন। ফলে ফির‘আউন রাগান্বিত হয়ে আসিয়াকে বলে: সে আমার শত্র“, জল্লাদদেরকে ডেকে আন, তাকে মেরে ফেলব। আসিয়া বলল: সে তো একটি ছোট বাচ্চা, এর অপরাধের কারণে পাকড়াও করবেন? সে তো ভাল-মন্দ বুঝে না। তারপর পরীক্ষা করার জন্য একটি পাত্রে জ্বলন্ত অঙ্গার অপর পাত্রে মণিমুক্তা নিয়ে আসা হল। মূসা (عليه السلام) মণিমুক্তায় হাত দিতে গেলে জিবরীল (عليه السلام) হাত ধরে ফেলেন, হাতটি নিয়ে আগুনের অঙ্গারে রাখেন, মূসা (عليه السلام) তা থেকে অঙ্গার তুলে মুখে নিয়ে নেন ফলে হাত ও মুখ পুড়ে যায়। এভাবে তিনি তোতলা হয়ে যান। (কুরতুবী) আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. মূসা (عليه السلام) ও হারূন (عليه السلام)-এর নবুওয়াতের সত্যতা ও তাঁদেরকে দেয়া কয়েকটি মু’জিযাহর বিবরণ জানতে পারলাম।২. দাওয়াতী কাজে অন্যের সহযোগিতা নেয়া যাবে।৩. কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় গোপন রাখার হিকমত জানলাম। ৪. ঘুম বা অজান্তে সালাতের সময়-ক্ষণ চলে গেলে স্মরণ হলেই সালাত আদায় করে নিবে। ৫. মুখে জড়তা বা ভাব প্রকাশে সমস্যা হলে এবং জ্ঞান বৃদ্ধির দু‘আ হলرَبِّ اشْرَحْ لِیْ صَدْرِیْﭨﺫوَیَسِّرْ لِیْٓ اَمْرِیْﭩﺫوَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِّسَانِیْﭪﺫیَفْقَھُوْا قَوْلِیْ এবং এ দু‘আ বেশি বেশি পড়তে হবে।
Arabic Font Size
30
Translation Font Size
17
Arabic Font Face
Help spread the knowledge of Islam
Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.
Support Us